![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
তানভীরুল হাকিম মিরাজের ব্লগ
হায়দার তার বাবার মাথা কোলে নিয়ে বসে আছে, চারদিকে কান্নার রোল বইছে, তার ডানপাশেই মা অচেতন হয়ে পড়ে আছে, তাকে ঘিরে কিছু প্রতিবেশী পানির ছিট দিচ্ছে। কোথাও থেকে মুনিরার ভেঙ্গে যাওয়া গলার কান্না ভেসে আসছে। সাবাই কাঁদছে, শুধু হায়দার কাঁদছেনা। হায়দার বুঝছে তার কান্না করা উচতি কিন্তু সে একটুও কাঁদছেনা, বাবার মাথাটি শক্তকরে ধরে বসে আছে।
ও জানে তার বাবা আর ফিরে আসবেনা, কালকেও ওকে বলেছিল- বাবা, দেখিস তোকে ঠিকই এবার একটা সাইকেল কিনে দিব, তুই আর হেঁটে কলেজে যেতে হবেনা! হায়দারের কলেজ অনেক দুরে, হেঁটেই কলেজে যায় হায়দার, ও জানে তার বাবা কখনই তাকে সাইকেল কিনে দিতে পারবেনা তবু সে খুশি হয়। বাবা একটু একটু করে টাকা জমায় ওর সাইকেল কিনার জন্য আর হটাৎ ই সেটা কোন জরুরী কাজে খরচ হয়ে যায়।
হায়দারের বাবার যে ছোট্ট টঙ দোকানটি হাঠের কোনায় আছে, বাবা অনেকদিন থেকেই বলছিলো সেই দোকানে বেচা বিক্রি হচ্ছেনা আগের মত। দোকানের সামনের স্কুলঘরটিতে ছাত্রছাত্রী কমছে দিন দিন, বড়বাজারে কি একটা নামী স্কুল হইছে সাবাই এখন সেখানেই ভর্তি হয়। কাগজ খাতা লজেন্স আর আচার বিক্রির এই দোকানই ছিল ওদের আয়ের একমাত্র উৎস। ছাত্রছাত্রীই যদি না থাকে বিক্রি হবে কিভাবে! বাবা বলেছিলো ব্যবসাটা পরিবর্তন করতে চাচ্ছেন কিন্তু টাকার অভাবে তা আর হয়নি।
বাবা তাকে কিছু না বলে হটাৎ ই এভাবে চলে যাবে বুঝতে পারেনি, তবে এটা ঠিকই বুঝতে পারলো- মা আর ছোট দুই ভাই বোনকে নিয়ে ওর জন্য খুব খারাপ দিন অপেক্ষা করছে।
বাবার মৃত্যুর পর আজ প্রথম দোকান খুললো হায়দার…
সারাদিনে ৭১ টাকা বিক্রি হয়েছে, আসার সময় মা বলেছে বাসায় বাজার নেই। কিছু সবজি হলেও নিতে হবে। ও বার বার টাকা গুলো গুনছিল আর ভাবছিল ৭১ মানে জয়! সে প্রথম দিন ৭১ টাকাই বিক্রি করলো !!
কিছুদিন দোকান করেই হায়দার বুঝেগেছে কিছু দিনের মধ্যেই তার দোকান মালামাল শূন্য হয়ে যাবে কারন যা বিক্রি হচ্ছে তার সবই সবার আহার জোগারেই চলে যাচ্ছে।
হায়দার এখন আর কলেজে যায়না, বন্ধুদের সাথে ও দেখা করেনা। এদিকে রোজার মাস চলে আসছে, সামনে ঈদ। গত ঈদে ছোট বোন মুনিরা কত কেঁদেছে একটা নতুন জামার জন্য, বাবা কিনে দিতে পারেনি।
এক সকালে……
রমজানের তখনও এক সাপ্তাহ বাকী, হায়দার দোকানে বসে আছে মন খারাপ করে, সকাল থেকে কিছুই বিক্রি হয়নি। ভদ্রমতন একলোক এসে তার বাবা মনোয়ার আলী কে চাইলেন। ভদ্রলোক নিজেকে বিকাশের একজন অফিসার বলে পরিচয় দিলেন, সাথে এও জানালেন যে- তার বাবা বিকাশের একজন এজেন্ট হওয়ার জন্য আবেদন করেছিলেন, তার আবেদনটি তারা গ্রহন করেছেন এবং তারা এখানে তাদের একজন এজেন্ট দেওয়ার ব্যাপারে আগ্রহী। তিনি রাজী থাকলে তাকে কিছু কাগজ পত্র জমা দিতে হবে।
হায়দার লোকটিকে বসতে দিয়ে জানালো তার বাবা মারা গেছেন এবং এখন সেই এই দোকানের মালিক, এটাও জানালো সে বিকাশের এজেন্ট হতে ইচ্ছুক কিন্তু সে তো কোন টাকা দিতে পারবেনা। হায়দার আরও আগ্রহী হয়ে উটলো যখন জানলো এজেন্ট হতে কোন টাকা লাগেনা শুধু কিছু নগদ অর্থ তাকে হাঁতে রাখতে হবে নিয়মিত লেনদেনের জন্য।
অবশেষে মায়ের গহনা বিক্রি করে তাও ব্যবস্থা হল।
আজ ২৫ রমজান…
ঈদ যত গনিয়ে আসছে হায়দারের লেনদেনও ততই বাড়ছে। কেউ আসছে কেশ আউট করতে কেউ বা কেশ ইন করতে। হায়দার দোকানের প্রথম দিন বুঝতেই পারেনি বিকাশ তার ব্যবসার মোড় এভাবে গুরিয়ে দিবে। তার এখনও প্রথম দিনের সেই ৭১ টাকার কথা মনে পড়ে। সে ওই টাকাটা আলাদা করে রেখেছে!
ঈদের আগের রাতে হায়দার বোনের জন্য লাল টুকটুকে একটা জামা, মায়ের জন্য শাড়ি আর নিজের জন্য একটা পাঞ্জাবী নিয়ে যখন বাসায় ফিরলো তখন ছোট বোন মুনিরা ঘুমিয়ে গেছে।
ঘুমে মুনিরা আজ খুব সুন্দর একটা স্বপ্ন দেখলো। দেখলো – ও লাল টুকটুকে খুব সুন্দর একটা জামা পরে আছে, আম্মু নতুন একটা শাড়ি পরে তাকে পায়েশ খাইয়ে দিচ্ছে। একটু পরেই কোত্থেকে যেন তার ভাইয়া একটা নতুন পাঞ্জাবী পরে এসে তাকে কোলে করে ঈদগা’র দিকে নিয়ে যাচ্ছে।
মুনিরা খুব অবাক হয়ে বলল- ভাইয়া তোমাকে এতো গুলো নতুন জামা কে দিলো!
হায়দার বলল- বিকাশ দিয়েছে।
মুনিরা আবার বলল- তা হলে তুমি তাকে কেন আমাদের বাসায় নিয়ে আসনি !!
বিঃ দ্রঃ আক্ষরিক অর্থে এটা কোন সাহিত্য নয়। বিজ্ঞাপন। বিকাশের জন্য লেখা। তাই ইহাকে কেহ সাহিত্য ভেবে ভুল করবেন না।
©somewhere in net ltd.