![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
তানভীরুল হাকিম মিরাজের ব্লগ
১.
ধরা পড়ার ভয়ে গৃহস্থে চুরি করতে ঢুকা একচোর বাসার খাটের নিছে আশ্রয় নিল।চোর এসেছে বুঝতে পেরে গৃহস্থের লোকজন খুজতে খুজতে অবশেষে খাটের নিছে চোরকে আবিষ্কার করে। সবাই উকিঝুকি মেরে দেখছে। কেউ টর্চের আলো ফেলছে, কেউ লাঠিদিয়ে খোচা মারছে। তবু বেচারা চোর সব সহ্য করে খাটের নিচেই বসে আছে- পাছে, বের হলে উত্তম মধ্যম পড়ে এই ভয়ে
গৃহস্থের একজন বলল – দেখ, দেখ! কেমন ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে আছে, খোচা মেরে চোখ গুলো ফূটো করে দে!
আর তাই শুনে কেউ একজন দিল চোখে খোচা ।
কিন্তু চোর এবার খপ করে লাঠিটা ধরে ফেলল! সাথে চেচিয়ে বলল- সব কিছু নিয়ে ফাজলামো চলে, তাই বলে কি চোখ নিয়েও ফাজলামো নাকি?!!
চোর বুঝলেও আমাদের সরকার এখনো বুঝলোনা, সব কিছু নিয়ে ফাজলামো চলেনা। যে সিরিয়াল কিলিং দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে তাতেও সরকার সমস্যার গভীরে যেতে চায়নি, বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন বিভিন্ন সময় দায় স্বীকার করলেও রাষ্ট্র সবসময়ই এ অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে বরং তারা অন্য যেকোন ইস্যুর ন্যায় এটিকে রাজনীতিকরণ করেছে এবং বিএনপি- জ়ামাতের উপর দায় চাপিয়ে দায়িত্ব শেষ করেছে।নূন্যতম তিনজন মন্ত্রীকে গুলশান হামলার দায় বিএনপি-জামাতের উপর চাপাতে শোনাগেছে। কোন তদন্ত ছাড়া এ দ্বায় চাপানোতে প্রকৃতপক্ষে লাভবান হয়েছে জঙ্গিরা। তারা জেনে গেছে এখানে যে কোন কিছু করে পার পেয়ে যাওয়া সহজ।
তার প্রেক্ষাপটে আমরা গুলশান ও শোলাকিয়ার নারকীয় জঙ্গি ও সন্ত্রাসী হামলা প্রতক্ষ করলাম।
কিন্তু এ নৃশংসতার পরও সরকার নড়েচড়ে বসেছে বলে মনে হয়না। তারা এখনও দেশে আইএস বা আল-কায়দার মত জঙ্গি ও সন্ত্রাসী সংগঠনের অস্তিত্ব বা দেশীয় জঙ্গি সংগঠনগুলোর সাথে আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠনের সম্পর্ক অস্বীকার করে যাচ্ছে। যদি ধরেও নেই, কৌশলগত কারনে সরকার এটি অস্বীকার করছে, তবু সামাধানে কার্যকর কোন ব্যবস্থা গ্রহন দৃশ্যমান হচ্ছেনা।বরং মনে হচ্ছে সরকার বারবারই মেইন ফোকাস থেকে বিচ্যুত হয়ে যাচ্ছে।
প্রতিটা দল এবং গ্রুপকে আলাদাভাবে চিনতে হবে। উদ্দেশ্য, কর্মপন্থা, কর্মী বাচাই প্রক্রিয়া ও দলিয় পরিবর্তনের দিকে গভীর দৃষ্টি দেয়া প্রয়োজন। জামাত, হিজবুত তাহরির, জ়েএমবি বা আনসারুল্লাহ কে এক করে ফেললে চলবেনা। আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠনগুলো নিজের মতাদর্শ বা কর্মপন্তার সাথে সঙ্গতীপূর্ণ স্থানীয় জঙ্গিগুষ্ঠিকে এজেন্ট হিসাবে নিয়োগ করেথাকে।
নতুন আতংকের বিষয় হিসেবে বিবাচনা করা হচ্ছে- দেশের শীর্ষস্থানীয় বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় ও ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলগুলোর মেধাবী শিক্ষার্থীদের এমন সন্ত্রাসী গ্রুপে জড়িয়ে পড়ার কারন কে!
মনেরাখতে হবে, এ অঞ্চলের মানুষ যতটানা ধর্মীয় জ্ঞান প্রবণ, তারচেয়ে অনেক বেশী ধর্মীয় অনুভূতি প্রবণ। আমাদের আধুণিক শিক্ষাব্যবস্থায় সঠিক ধর্মীয় জ্ঞানের অসারতাই এর প্রধান কারণ।দ্বিতীয়ত, প্রতিটি আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন গড়ে উঠার ব্যাকগ্রাউন্ডেই পশ্চিমা আগ্রাসন জড়িত।আফগানিস্থানে সোভিয়েতের আগ্রাসনের প্রতিক্রিয়ায় আমেরিকার সহযোগীতায় তালেবান বা আল-কায়দার জন্ম হয়েছিল, ইরাক যুদ্ধের পরিণতিতে অবলুপ্ত হওয়া ইরাকি সেনাবাহিনী থেকে আইএস এর জন্ম।এছাড়া বিশ্বরাজনীতির ছত্রছায়ায় ফিলিস্থিনের উপর ইসরাইলের যুগ যুগ ধরে চলে আসা আগ্রাসনই এর অন্যতম কারণ। তৃতীয়ত্, ইসলামের স্বাভাবিক চলার গতিকে বাধাদান- দেশীয় জঙ্গিগুষ্ঠি গঠন ও তরুনদের তাতে যোগদানের আরেকটি বড় কারণ। স্বাভাবিক প্রক্রিয়া বাধাপ্রাপ্ত হলেই কট্টরপন্থার সৃষ্টি হয়। পাকিস্থানের প্রেক্ষাপট বিচার করলেও দেখাযায়- পারভেজ মোশাররফের অতি স্যেকুলার নীতি ও আমেরিকার অতি গনিষ্ঠ অনুপ্রবেশই আল-কায়দার উত্তানের কারণ ছিল।
তাই অজ্ঞতার অসারতাকে দূর করতে ইসলামের স্বাভাবিক জ্ঞান ও কর্মকে অবমুক্ত করতে হবে। কোন তদন্ত ও অভিযোগ ছাড়াই ডাঃ জাকির নায়েকের পিস টিভি বন্ধ এ কট্টরপন্থাকে আরও উস্কেদিবে বলে মনে করি! জঙ্গিবাদের চেয়ে রাজনৈতিক ইসলাম অনেক বেশী শ্রেয়।
২.
এবারের সন্ত্রাসী হামলায় পুলিশের সামর্থ্যের বিষয়ে গভীর প্রশ্ন তোলার অবকাশ থেকে যাচ্ছে। এ ধরনের সন্ত্রাসী হামলা মোকাবেলার জন্য পর্যাপ্ত প্রশিক্ষন, প্রস্তুতি, জ্ঞানের অভাব স্পষ্ট হয়ে উঠে। বিগত হামলা গুলো ঘটনা পরম্পরায় সাজালে দেখাযায় প্রায় কোন ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটন ও প্রকৃত আসামীদের গ্রেপ্তার করতে পুলিশ সমর্থ্য হয়নি।
এটা বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে যে, আমাদের পুলিশ ও ইন্টেলিজেন্স পোর্সগুলোর সামর্থ্য নেই। তারা ইতিপূর্বে এর চেয়েও জটিল রহস্যের সমাধান করেছে। কিন্তু আলোচিত তনু হত্যা, সিরিয়াল হত্যাকান্ড, এস পি বাবুলের স্ত্রী মাহমুদা খানম (মিতু) হত্যা, গুলশান-শোলাকিয়া হত্যাযজ্ঞের রহস্য আমরা জানতে পারিনি। এটা তাদের পেশাদারী ব্যর্থতাকেই ফুটিয়ে তুলেছে।
বিগত ৭-৮ বছরে এ বাহিনীগুলো বিরোধীদল দমনে এতটাই ব্যস্ত ছিল যে, চোখের সামনে দিয়ে কিভাবে এ সন্ত্রাসী গ্রুপগুলো বেড়ে উঠলো, শক্তি সঞ্চয় করলো তা দেখার কেউ ছিলনা। আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা সবকিছুতে বিরোধী নেতাকর্মীদের খোজেন। কিছু বিরোধী দলের নেতা কর্মীর বাড়ী ও আস্তানা চিনে নিয়েছে। তাদের বিরোধী দল দমন করতে বললেও সেখানে হানা দেয়, সন্ত্রাসী, চাদাবাজ, মাদকব্যবসায়ী ধরতে বললেও তাদেরই ধরে আনে! এমন কি জঙ্গি নিধণ অভিযানেও তাদেরই গ্রেপ্তার করেছে। তাছাড়া দ্বিতীয় কিছু তারা চিন্তা করতে পারছেনা! সবকিছুতেই তারা বিরোধীমত কে দেখছে, বিরোধীমত ফোবিয়ায় ভুগছে।
ভঙ্গুর এ বাহীনি ও প্রশাসন এমন একটি স্পর্শকাতর সমস্যা মোকাবেলা করার জন্য যথেষ্ট নয়।
৩.
সবচেয়ে আতংকের ব্যাপার হল- অন্য যে কোন পশ্চিমা রাষ্ট্রে এ ধরনের হামলা হলেও কোন নাগরিকে তা সমর্থন করতে দেখা যায় না। আক্রমণকারি ব্যাক্তি বা গোষ্ঠী ছাড়া সাধারণ নাগরিক সর্বদা ঐক্যবদ্ধ থাকলেও আমাদের দেশের প্রেক্ষাপট ভিন্ন। সমাজে এমন অনেক নাগরিকই আছেন যারা মনের অজান্তেও এদের সাপোর্ট করেন। এমন রাজনৈতিক দল ও সন্ত্রাসী সংগঠন আছে যারা এদের স্থানীয় এজেন্ট হয়ে কাজ করতে আগ্রহী।এ সংখ্যাটা ৫% থেকে ১০% এর কম নয়!
আমারা যদি এখনই এর বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে নাপারি তবে সব অর্জণই ম্লান হবে সন্ত্রাসের আড়ালে। আমাদের রাজনৈতিক নেতাদের মনে রাখা উচিত এটি দোষ চাপানোর সময় না, এটি রাজনৈতিক বা ক্ষমতার ইস্যু নয়। আমাদের জাতীয় নিরাপত্তার ইস্যু, স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্বের ইস্যু। দেশ না বাচলে আমারা কেউই বাচবোনা। এটা খোচানোর বিষয় নয়। সার্বিক পদক্ষেপ গ্রহনের বিষয়।
©somewhere in net ltd.
১|
১৫ ই জুলাই, ২০১৬ দুপুর ১:২৭
প্রবালরক বলেছেন: যারা সন্ত্রাসের জন্মদাতা তাদেরও বোধোদয় হোক যে terrorism is no more affordable.