নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি বর্তমানে ইস্টিশন এবং সামহোয়্যার ইন ব্লগে লিখি। আমার সকল লেখা আমি এই দুটি ব্লগেই সংরক্ষণ করে রাখতে চাই। এই দুটি ব্লগের বাইরে অনলাইন পোর্টাল, লিটল ম্যাগাজিন এবং অন্য দু-একটি ব্লগে কিছু লেখা প্রকাশিত হলেও পরবর্তীতে কিছু কিছু লেখা আমি আবার সম্পাদনা করেছি। ফলে ইস্টিশন এবং সামহোয়্যার ইন ব্লগের লেখাই আমার চূড়ান্ত সম্পাদিত লেখা। এই দুটি ব্লগের বাইরে অন্যসব লেখা আমি প্রত্যাহার করছি। মিশু মিলন ঢাকা। ৯ এপ্রিল, ২০১৯।
এক
‘ঢাকায় বসবাসরত অবসরপ্রাপ্ত সরকারী কর্মকর্তার মেয়ে মাস্টার্স একটি খ্যাতনামা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত; ব্রাহ্মণ নম্র ভদ্র সুন্দরী (৫’-৩”+২৭) পাত্রীর জন্য ডাক্তার/ইঞ্জিনিয়ার/সরকারী-বেসরকারী কর্মকর্তা ব্রাহ্মণ পাত্র চাই। ছবি এবং অন্যান্য তথ্যবলীসহ ই-মেইল করুন। গোপনীয়তা রক্ষা করা হবে। ই-মেইল : [email protected] সি-৪৫৭২১’
শুক্রবারের দৈনিক পত্রিকার অষ্টাদশ পাতার চতুর্থ কলামে ‘হিন্দু পাত্র চাই’ শিরোনামের তৃতীয় বিজ্ঞাপনটি দেখে লালকালির কলম দিয়ে মার্ক করে রাখলেন শিবশঙ্কর চক্রবর্ত্তী। নিচের দিকে আরও কয়েকবার চোখ বোলালেন, কিন্তু ব্রাহ্মণ পাত্র চেয়ে আর কোন বিজ্ঞাপন নেই। এর আগে ‘হিন্দু পাত্রী চাই’ শিরোনামের বিজ্ঞাপনগুলো খুঁটে খুঁটে দেখেছেন, ব্রাহ্মণ পাত্রী চেয়ে একটা বিজ্ঞাপনও তার চোখে পড়েনি। অগত্যা পত্রিকাখানা হাতে নিয়ে ছেলেদের ঘরে গিয়ে ছোটছেলে প্রবীরকে বললেন, ‘ইখানো তর দাদার একখান বায়োডাটা পাটা ছাইন।’
প্রবীর পত্রিকাখানা হাতে নিয়ে বিজ্ঞাপনটা দেখলো, তারপর কম্পিউটারের স্ক্রিনে চোখ রেখে বললো, ‘আইচ্চা পাটাই দিমু।’
‘অখনঅই পাটা।’
‘আইচ্চা, পাটাইমু তুমি জাও।’
শিবশঙ্কর দরজার কাছে গিয়ে কালো চশমার ফাঁক দিয়ে ছেলের দিকে তাকিয়ে আবার বললেন, ‘দেরি করিস না আবার কে কুন দিকে পাটাই দিবো।’
প্রবীর আর কোন কথা বললো না, বাবার দিতে তাকালোও না। ছেলের উপেক্ষায় শিবশঙ্কর নিজের ঘরে গেলেন, যাবার সময় একবার রান্নাঘরে স্ত্রীর দিকে তাকালেন।
শিবশঙ্কর চক্রবর্ত্তী পড়েছেন এক মহা সমস্যায়। চার ছেলে-মেয়ে তার। বড় মেয়েটির বিয়ে হয়েছে। বাকি তিনজন অবিবাহিত। বড় ছেলের বয়স ছত্রিশ, ছোট ছেলের বয়স তেত্রিশ আর ছোট মেয়ের বয়স ঊনত্রিশ। কিন্তু তাদের বিয়ে দেবার জন্য উপযুক্ত ব্রাহ্মণ পাত্র-পাত্রী খুঁজে পাচ্ছেন না। এইতো গত মাসে একজন চাকরিজীবি পাত্রীর সন্ধান পেয়েছিলেন, কিন্তু পিরালি ব্রাহ্মণ। কুলিন হয়ে পতিত পিরালির ঘরে সম্বন্ধ করতে চান না, তাদের বংশে কেউ কোনদিন করেনি।
শিবশঙ্কর ছিলেন দরিদ্র ব্রাহ্মণ। যজমানি করে ছেলে-মেয়েদের পড়িয়েছেন। বড়মেয়েটি অল্পশিক্ষিত। বাকি তিনজনই স্নাতকোত্তর। এখন শিবশঙ্করের দারিদ্র ঘুচেছে। দুই ছেলে ভাল চাকরি করছে, ভাল বেতন পায় তারা। মেয়েটি অবশ্য কিছু করছে না, সে চাকরি খুঁজছে। সারাজীবন তিনি গ্রামে কাটালেও ছেলেদের অনুরোধে স্বস্ত্রীক ঢাকায় চলে এসেছেন পাকাপাকিভাবে। ছেলেরা চায় না তিনি আর গ্রামে গ্রামে ঘুরে যজমানি করে বেড়ান। তাছাড়া বয়সও হয়েছে এখন। আগের মতো আর দৌড়-ঝাঁপ করতে পারেন না।
শিবশঙ্কর একসময় দরিদ্র থাকলেও তার কিছু আত্মীয়-স্বজন কিংবা স্বজনের স্বজন ধনে-মানে-বিদ্যার ভারে রাশভারি। তিনি তাদেরকে নিয়ে বিস্তর গবর্ও করেন। প্রায়ই পাত্র-পাত্রীর সন্ধান চেয়ে তাদের কাছে ফোন করেন। কিন্তু কেউ-ই সুযোগ্য পাত্র-পাত্রীর সন্ধান তাকে দিতে পারছে না। ছেলে-মেয়েদের বিয়ে দিতে না পারায় বড় মনোকষ্টে ভুগছেন তিনি।
দুই
শ্রীমান সুবীর কুমার চক্রবর্ত্তীর জীবন বৃত্তান্ত
ব্যক্তিগত তথ্য
নাম : শ্রীমান সুবীর কুমার চক্রবর্ত্তী
জন্ম তারিখ : ২৩-০৭-১৯৭৯
শিাগত যোগ্যতা : মাস্টার্স (অ্যাকাউন্টিং)
পেশা : ব্যাংক কর্মকর্তা
উচ্চতা : ৫’-৮”
গায়ের রঙ : ফর্সা
গোত্র : শান্ডিল্য
পরিবারিক বৃত্তান্ত
পিতা : শ্রী শিবশঙ্কর চক্রবর্ত্তী, শাস্ত্রজ্ঞ পন্ডিত।
মাতা : শ্রীমতি গোপীবালা চক্রবর্ত্তী, গৃহিনী।
পিতামহ : স্বর্গীয় শ্রী দেবশঙ্কর চক্রবর্ত্তী, শাস্ত্রজ্ঞ পন্ডিত।
মাতামহ : স্বর্গীয় শ্রী ননীগোপাল চক্রবর্ত্তী, শাস্ত্রজ্ঞ পন্ডিত।
ছোট ভাই : শ্রী প্রবীর কুমার চক্রবর্ত্তী, (এম, এ), বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে
কর্মরত।
বড় বোন : বেলা রানী চক্রবত্তী, (বিবাহিত)
ছোট বোন : শিলা রানী চক্রবর্ত্তী , মাস্টার্স
বড় ভগ্নীপতি : শ্রী কমলেশ মুখার্জী, (এম, এ) প্রাইমারী স্কুল শিক্ষক।
ভগ্নীপতির ভাই : ডা. শ্রী বিমলেশ মুখার্জী, ফরিদপুর সরকারী পশু হাসপাতাল।
ভগ্নীপতির ভাইয়ের ছেলে : প্রকৌশলী শ্রী দেবব্রত মুখার্জী, সড়ক ও জনপদ বিভাগ
জ্যাঠা : শ্রী রামশঙ্কর চক্রবর্ত্তী, শাস্ত্রজ্ঞ পন্ডিত।
জ্যাঠার শালা : শ্রী নারায়ণ গোস্বামী, বিশিষ্ট কবিগান শিল্পী এবং শাস্ত্রজ্ঞ পন্ডিত।
জ্যাঠতুতো ভাই : শ্রী নরেশ চক্রবর্ত্তী, আমেরিকা প্রবাসী।
জ্যাঠতুতো ভাইয়ের ভায়রা ভাই : শ্রী ভবতোষ ব্যানার্জী, উপ-সচিব, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়,
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার।
জ্যাঠতুতো ভাইয়ের ভায়রার বোন : অনামিকা ব্যানার্জী, বাংলাদেশ বেতার এবং টেলিভিশনের তালিকাভুক্ত
বিশিষ্ট সঙ্গীত শিল্পী।
জ্যাঠতুতো ভগ্নীপতি : শ্রী সুকেশ চক্রবর্ত্তী, প্রধান শিক্ষক, আমতলী উচ্চ বিদ্যালয়।
মামা : শ্রী অজিতেশ চক্রবর্ত্তী, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী।
মামীর ভাই : শ্রী নীল রতন মুখার্জী, ডেপুটি ম্যানেজার, বেসিক ব্যাংক।
মামীর ভাইয়ের শ্বশুর : অধ্যাপক শ্রী আশুতোষ গাঙ্গুলী
মামাতো ভাই : শ্রী ধীমান চক্রবর্ত্তী।
পিসতুতো ভাই : প্রনব কুমার চক্রবর্তী, ইরাক প্রবাসী।
নিবাস : সিলেট।
বর্তমান ঠিকানা : ২১৮ শান্তিবাগ (২য় তলা), শান্তিনগর, ঢাকা-১২১৭।
যোগাযোগ :
শ্রী শিবশঙ্কর চক্রবর্ত্তী
২১৮ শান্তিবাগ (২য় তলা) ,
শান্তিনগর, ঢাকা-১২১৭।
মোবা : ০১৯১২-৪১১৮৯৮
কন্যার পিতা শৈলেন্দ্রনাথ চক্রবর্ত্তী পাত্রের জীবনবৃত্তান্ত পড়ে শুনিয়ে চিকন সোনালি ফ্রেমের চশমাটা খুলে, দৃষ্টি ট্রলি করে স্ত্রী, পুত্র-কন্যা এবং ভাইয়ের হা করা মুখের দিকে তাকালেন। অতঃপর পুনরায় স্ত্রীর মুখে দৃষ্টি ফিরিয়ে এনে বললেন, ‘জল খাব!’
তিন
পাত্রীপক্ষের ই-মেইল পেয়ে, ই-মেইলটা ওপেন না করেই শিবশঙ্করের ছোট ছেলে প্রবীর খানিকটা আশান্বিত, খানিকটা খুশি এবং খানিকটা উত্তেজিত হয়ে বাবা-মা, বড় দাদা এবং বোনকে ডাকলো। তারাও আশান্বিত, খুশি এবং উত্তেজিত হয়ে ছুটে এলে ই-মেইলটা খুলে তাদেরকে পড়ে শোনাতে লাগলো-
মহাশয়,
আপনার পুত্রের জীবনবৃত্তান্ত পাইয়া আমি যারপরনাই আনন্দিত, চমৎকৃত, বিনোদিত, আহ্লাদিত এবং বিস্ময়াবিভূত! জীবনবৃত্তান্তে উল্লেখিত আপনাদের আত্মীয়-স্বজনের তালিকা অতিশয় ছোট হইয়াছে। আরও বিস্তারিত জানিতে পারিলে ভাল হইতো। যেমন আপনি জানাইয়াছেন, পাত্রের জ্যাঠতুতো ভাইয়ের ভায়রার বোন বিশিষ্ট সঙ্গীত শিল্পী অনামিকা ব্যানার্জীর কথা। আপনি তাহার সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানাইতে পারিতেন। যেমন-তিনি বিবাহিতা না অবিবাহিতা, বিবাহিতা হইলে কাহার সহিত বিবাহ হইয়াছে, তাহাদের সন্তান-সন্ততি আছে কিনা, থাকিলে কতজন, তাহারা কি করে, ইত্যাদি। আবার উল্লেখ করিয়াছেন পাত্রের ভগ্নীপতির ভাইয়ের ছেলে দেবব্রত মুখার্জীর কথা। কিন্তু তাহার সম্পর্কেও বিস্তারিত জানিতে পারিলাম না। সে বিবাহিত না অবিবাহিত, অবিবাহিত হইলে গার্লফ্রেন্ড আছে কিনা, তাহাদের সহিত যোগাযোগের ঠিকানা ইত্যাদি উল্লেখ থাকিলে ভাল হইতো।
তাছাড়া আপনি কেবলমাত্র পাত্রের পিতামহ এবং মাতামহের কথা উল্লেখ করিয়াছেন। এতো অল্প জানিয়া আমি আপনার ছেলের হাতে আমার মেয়ে তুলিয়া দিই কীভাবে বলুন তো! পিতৃ এবং মাতৃ, উভয় কূলের অন্তত সাত পুরুষের বিস্তারিত ইতিহাস না জানিয়া কন্যা তুলিয়া দেওয়া সমীচীন হইবে না এবং ইহা বুদ্ধিমানের কাজও নহে।
ইহার পর আপনি যেখানে আপনার পুত্রের জীবন বৃত্তান্ত পাঠাইবেন, আশারাখি উক্ত ভুলগুলো শুধরাইয়া, আত্মীয়ের আত্মীয় তস্য আত্মীয়ের বৃহৎ তালিকা করিয়া পাঠাইবেন এবং পরলোকগত পিতৃকূল-মাতৃকূলের অন্তত সাত পুরুষের আলাদা আলাদা ঠিকুজি-কুষ্ঠি পাঠাইবেন। তাহা হইলে তাহারা আমার চাইতেও দ্বিগুণ আনন্দিত, চমৎকৃত এবং বিনোদিত হইবেন।
পর সমাচার আমার কন্যার জন্য পাত্র পাইয়াছি। আগামী ২২ জুলাই তাহাদের শুভবিবাহ সম্পন্ন হইবে। তাহাদের জন্য আশির্বাদ করিবেন। আপনার পুত্রের গতি হোক।
ইতি
শৈলেন্দ্রনাথ চক্রবর্ত্তী
আশার বেলুনটা চুপসে গেল। চিঠি পড়ার পর নৈঃশব্দ নেমে এলো ঘরে। কেউ কারো দিকে না তাকিয়ে যার যার ঘরের দিকে পা বাড়ালো।
আগস্ট, ২০১৫
২১ শে আগস্ট, ২০১৫ রাত ৮:৪০
মিশু মিলন বলেছেন: ধন্যবাদ। ভাল থাকুন।
শুভেচ্ছা........
২| ২২ শে আগস্ট, ২০১৫ সকাল ১১:২৯
আমিনুর রহমান বলেছেন:
উত্তরটা চমৎকার ছিলো ... হাসলাম বেশ ...
২২ শে আগস্ট, ২০১৫ বিকাল ৪:১১
মিশু মিলন বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ।
খুব খুব ভাল থাকুন। শুভকামনা রইলো............
৩| ২২ শে আগস্ট, ২০১৫ দুপুর ১:৪০
হাসান মাহবুব বলেছেন: হেহে। মজা পাইলাম।
২২ শে আগস্ট, ২০১৫ বিকাল ৪:১৩
মিশু মিলন বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ।
শুভকামনা সবসময়........
©somewhere in net ltd.
১| ২১ শে আগস্ট, ২০১৫ রাত ৮:৩৭
প্রামানিক বলেছেন: চমৎকার চিঠি। চিঠি পড়ে মনে হলো বাস্তবে ঘটনা ঘটে যাচ্ছে।