নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মিশু মিলন

মিশু মিলন

আমি বর্তমানে ইস্টিশন এবং সামহোয়্যার ইন ব্লগে লিখি। আমার সকল লেখা আমি এই দুটি ব্লগেই সংরক্ষণ করে রাখতে চাই। এই দুটি ব্লগের বাইরে অনলাইন পোর্টাল, লিটল ম্যাগাজিন এবং অন্য দু-একটি ব্লগে কিছু লেখা প্রকাশিত হলেও পরবর্তীতে কিছু কিছু লেখা আমি আবার সম্পাদনা করেছি। ফলে ইস্টিশন এবং সামহোয়্যার ইন ব্লগের লেখাই আমার চূড়ান্ত সম্পাদিত লেখা। এই দুটি ব্লগের বাইরে অন্যসব লেখা আমি প্রত্যাহার করছি। মিশু মিলন ঢাকা। ৯ এপ্রিল, ২০১৯।

মিশু মিলন › বিস্তারিত পোস্টঃ

গাওয়াল (উপন্যাস: পর্ব-চার)

১১ ই এপ্রিল, ২০১৬ রাত ৯:২৩

চৈত্র মাসে ঋষিপাড়ার মানুষের ব্যস্ত সময় কাটে, বাড়িতে বাড়িতে চলে চৈত্র সংক্রান্তি আর বৈশাখীমেলার প্রস্তুতি। কেউ বাঁশ-বেত প্রক্রিয়াজাত করে গৃহসামগ্রী বানায়, কেউবা ছোটদের খেলনা ঢোল-খোল-ডুগডুগি ইত্যাদি বানায়। এসময় একেবারে ছোটরা ছাড়া কেউ-ই বসে থাকে না, সকলেই কোনো না কোনো কাজে হাত লাগায়। বাঁশ-বেত প্রক্রিয়াজাত থেকে শুরু করে মেলায় বিক্রি, সকল কাজেই পুরুষের হাতের ছোঁয়া থাকে; আর মেয়েরা সংসারিক কাজকর্মের ফাঁকে ফাঁকে ডালা-কুলা বোনে, রোদে শুকিয়ে রঙ করে। একেবারে বৃদ্ধ ছাড়া জোয়ান পুরুষদের বাড়িতে থেকে সারাক্ষণ ডালা-কুলা বুনলে চলে না; তারা কেউ কেউ হাঁট-বাজারে জুতা-ব্যান্ডেল সারাইয়ের কাজে বসে, কেউ কেউ ছাতা মেরামতের জিনিসপত্র আর নতুন কিছু ছাতা নিয়ে গাট্টি-বোঁচকা নিয়ে গাওয়ালে বের হয় দূর-দূরান্তে। যারা গাওয়াল করতে যায় তারা একা নয়, কয়েকজন মিলে একসাথে যায়। চেনা-অচেনা নানা জায়গার হাঁট-বাজার, গ্রামে-গঞ্জে ঘুরে ঘুরে ছাতা মেরামত করে বেড়ায়। তাদের বোঁচকার মধ্যে রান্নাবান্নার ছোট হাঁড়ি-পাতিল থেকে শুরু করে শোবার বিছানাপত্রও থাকে। সারাদিন সবাই আলাদাভাবে গ্রামে-গঞ্জে ঘুরে সন্ধ্যায় কোনো স্কুল-কলেজ কি পরিবার-পরিকল্পনা অফিসের বারান্দা নয়তো অন্য কোনো নিরাপদ জায়গায় রাত কাটায়। ইটের ওপর দুটো চাল-ডাল ফুটিয়ে খায়। ফেরে হয়তো পনেরদিন কি একমাস পর, তারপর কিছুদিন বাড়িতে পরিবারের সাথে থেকে আবার গাওয়াল করতে বের হয়।

কার্তিক মাসে শীতের আভাস পেতেই ছাতার ব্যবহার কমে যায়, তখন গৃহস্থের ছাতা গোঁজা থাকে চালের বাতায় কিংবা ঝোলানো থাকে ঘরের বেড়ায়। ছাতার বিশ্রাম বুঝে ইঁদুর কিংবা তেলাপোকায় আশ্রয় খোঁজে ছাতার ভেতর, আর কুটুর কুটুর করে কতো ছাতার কাপড়-ই না কাটে! শীতের শেষে ফাল্গুনের রোদ চড়তে শুরু করলেই ছাতার ব্যবহার বাড়তে শুরু করে, তখন প্রয়োজন পড়ে ছাতার কাপড় বদলানো অথবা একটা দুটো ভাঙা শিক পাল্টানোর। আর এই সময়টাতেই ঋষিপাড়ার কেউ কেউ গাওয়ালে বেরিয়ে পড়ে। এরপর চৈত্রের তাতানো রোদ, বৈশাখের রুদ্র মূর্তি, জ্যেষ্ঠের খরা; তারপর আষাঢ়-শ্রাবণের বর্ষণ, ভাদ্রের তাল পাকানো রোদ আর গরম, আশ্বিনের পর কার্তিকের আগে আর ছাতার বিশ্রাম মেলে না। ঋষিপাড়ার কিছু কিছু পুরুষও এই কয়েকমাস ঘর-বাহির করতে থাকে। তবে সবাই যে গাওয়াল করতে যায় তেমন নয়, কেউ কেউ যায়।

এই গাওয়াল করতে গিয়েও কতো ঘটনা ঘটে, আবার অঘটনও ঘটে। কেউ কেউ মাগুরা, যশোর, রাজবাড়ী কি কুষ্টিয়ার কোনো ঋষি পরিবারের সাথে কুটুম পাতিয়ে আসে, কেউ কেউ পাড়ার বিবাহযোগ্য কোনো যুবক-যুবতী অথবা নিজেরই ভাই-ভাইজি নয়তো ছেলে-মেয়ের জন্য সম্বন্ধের খোঁজ নিয়ে আসে এবং বিয়ে-থা দিয়ে আত্মীয়তার বন্ধনে আবদ্ধ হয়। আবার কেউ হয়তো বলা নেই কওয়া নেই নিজে বিয়ে করে বউ নিয়ে এসে পাড়ার সবাইকে চমকে দেয়। তবে সবচেয়ে বড় চমকটা দিয়েছিল শিবনাথ! ঘরে বউ-ছেলে রেখে ফাল্গুন মাসে গাওয়ালে গেল, এক মাস যায় দুই মাস যায়, শিবনাথ আর ফেরে না। যারা শিবনাথের সাথে গাওয়ালে গিয়েছিল তারা কবেই ফিরে এসেছে, অথচ শিবনাথের দেখা নেই। কেউ কেউ বলাবলি করতে লাগলো যে শিবনাথ বুঝি আর বেঁচে নেই! শিবনাথের বউ রিনা এবাড়ির দাওয়ায় ও বাড়ির গাছতলায় বসে কাঁদে স্বামীর জন্য অথচ কিছুতেই সে বিশ্বাস করে উঠতে পারে না যে শিবনাথ নেই। এরই মধ্যে বৈশাখ মাসের এক ঝড়ের রাতে সবাইকে অবাক করে দিয়ে শিবনাথ ভিজে-টিজে ফিরে এলো নতুন বউ আর খুড়তুতো সম্মুন্ধিকে সঙ্গে নিয়ে। শিবনাথের আগের বউ রিনা ঘরে হত্যে দিলো। পাড়ার মানুষ বুঝিয়ে-সুজিয়ে তাকে ঘর থেকে বের করলো। ঘর থেকে বেরিয়ে রিনা বুক চাপড়ে বলতে লাগলো, ‘আমি বিষ খাব, আগে ছাওয়ালের মুহি বিষ ঢালবো, তারপর নিজি খাব। অই মাগরোর মাগি মানুষটারে ওষুধ করছে। নইলে সে তো এমন মানুষ না! আমি সতীনির ঘর করবার পারবো না।’ এরপর রিনা দুইহাত আকাশের দিকে তুলে বললো, ‘ওরে বাবা, তুমার মিয়ার কপালে কী এই ছিল রে বাবা....! আসে দেহে যাও তুমার মিয়ার কী সব্বনাশ অইচে! আমার আজি ক’তো মাগরোর মাগিরা মন ভুলোনে ওষুধ জানে....পুরষে মানুষ খোঁপায় গুঁজে রাহার মন্তর জানে ওরা। তুমার মিয়ার কপাল পুড়ছে রে বাবা.....মাগরোর মাগি তুমার জামাইরে অষুধ করিছে....ওরে বাবা...!’

শেষ পর্যন্ত অবশ্য ছেলের মুখে বিষ ঢালেনি রিনা, নিজেও বিষ পান করেনি। আর কয়েকদিন পরই জানা যায় এই বিয়ের বৃত্তান্ত। শিবনাথ মাগুরায় গাওয়ালে গিয়ে মিতে পাতিয়েছিল একজনের সঙ্গে, ওদিকে গেলে মিতের বাড়িতেই উঠতো। থাকতে থাকতে মিতের জ্যাঠতুতো বোন যমুনার সাথে গোপন প্রণয় গড়ে ওঠে তার। একদিন রাতে পাড়ার লোক শিবনাথ আর যমুনাকে প্রায় নগ্ন অবস্থায় হাতে নাতে ধরে ফেলে কোনো এক নির্জন জায়গায়, তারপর পাড়ার মুরুব্বীরা শলা-পরামর্শ করে দু’জনের বিয়ে দিয়ে দেয়। একথা শুনে নিজের সন্দেহের ব্যাপারে শতভাগ নিশ্চিত হয়ে পাড়ার লোক দেখলেই রিনা কুক ছেড়ে কাঁদে, ‘কইছিলাম না, মাগরোর মাগি মানুষটারে ওষুধ করিছে! নইলে আমার দুলালের বাপ অমন ধারার মানুষই না!’

প্রথম প্রথম কয়েকদিন স্বামী-সতীনের সাথে কথা বলেনি সে। ছেলেকে নিয়ে নিজের মতো থেকেছে, রান্না করে ছেলেকে খাইয়ে নিজে খেয়েছে। তারপর এক রাতে সারা পাড়া ঘুমিয়ে পড়লে শিবনাথ রিনার হাতে-পায়ে ধরে ক্ষমা চাইলো তার কৃতকর্মের জন্য, স্বামীর বুকে-পিঠে প্রথমে কয়েকটা কিল-চড় আর হাতে কামড় দিলো রিনা, তারপর স্বামীর বুকে পড়ে হাউ হাউ করে কাঁদলো, দৃশ্যটা ঝিমিয়ে পড়তে না পড়তেই শিবনাথের নতুন বউ যমুনা এসে সতীনের পায়ে পড়ে কেঁদে পড়লো, ক্ষামাও চাইলো। যমুনা এমন কায়দা করে পা ধরলো যে চেষ্টা করেও কিছুতেই নিজের পা দুটো কে মাগরোর মাগির কাছ থেকে ছাড়াতে পারলো না রিনা। শেষ পর্যন্ত মাগরোর মাগির কান্নাকাটিতে স্বামীর মতো তাকেও ক্ষমা করতে হলো। আর পরদিন থেকেই পাড়ার লোকে দুই সতীনের গলায় গলায় ভাব দেখে অবাক হয়ে গেল। যমুনা রিনাকে কিচ্ছুটি করতে দেয় না, রিনার হাত থেকে কেড়ে নিয়ে সকল কাজ নিজের হাতে সারে। এমনকি সতীনের ছেলে দুলালকেও নাওয়ায়-খাওয়ায় যমুনা। রিনা কেবল হালকা-পাতলা কাজ করে। কেউ কেউ হাসতে হাসতে রিনাকে বললো, ‘কিলো রিনা, মাগরোর মাগি কী তোরেও ওষুধ করিছে!’ আবার কেউ কেউ আড়ালে বললো, ‘এই পিতলে ভাব দুইদিন, দুই মাগিতি ঠাপাঠাপি লাগলো বলে!’

অবাক কাণ্ড! বছর তিনেক হয়ে গেল কিন্তু আজ অব্দি দুই সতীনকে কোমর পেঁচিয়ে ঝগড়া করতে দেখলো না কেউ! দুই বউকে নিয়ে দারুণ সুখে আছে শিবনাথ, আগের রাত রিনার সঙ্গে শোয় তো পরের রাত শোয় যমুনার সঙ্গে। মাঝে মাঝে নাকি দুই বউ নিয়ে একই বিছানায় শোয়! শিবনাথের বন্ধুরা তার বউভাগ্যকে ঈর্ষা করে। তার বন্ধু মহলে কানাঘুষা হয়, ‘শিবে তো দুই বউ একসাথে লাগায়!’

যমুনারও একটা ছেলে হয়েছে, রিনার আবার হবে। দুই ছেলেকে যমুনা-ই নাওয়ায়-খাওয়ায়। দুই সতীনে যুক্তি করে শিবনাথের গাওয়ালে যাওয়া বন্ধ করেছে। রিনা চায় না আবার কোনো মাগি তার স্বামীকে ওষুধ করুক, যমুনাও চায় না দুই সতীনের সুখের সংসারে আরো সতীন বাড়–ক। শিবনাথ এখন বাজারে দুধপট্টির কাছে জুতা-স্যান্ডেল সারাইয়ের দোকান খুলেছে।

সবচেয়ে বড় চমক বলি আর অঘটন বলি, শিবনাথের ব্যাপারটা ছিল তাই। এছাড়া আর যে কয়েকজন বউ নিয়ে এসেছে তারা ছিল অবিবাহিত। আবার এপাড়া থেকে গাওয়ালে গিয়ে দু’জন মরেও গিয়েছে। একজন মরেছে বহু আগে, আরেকজন মরেছে বছর চারেক হলো। যারা গাওয়ালে যায়, তারা বিভিন্ন জায়গায় ঘোরে, নানান কিসিমের মানুষ দ্যাখে আর বিচিত্র সব অভিজ্ঞতা নিয়ে ফেরে। কারো কারো কাছে গাওয়ালে যাওয়াটা নেশার মতো, পরিবারের মানুষ শত নিষেধ করলেও শোনে না।

ঋষিপাড়ার কেউ কেউ চৈত্র সংক্রান্তি অথবা বৈশাখী মেলায় ঢোল বাজানোর খ্যাপ মারতে যায়। পূজা-পার্বণ কি ছোট-খাটো অনুষ্ঠানে ঢোল বাজানোর খ্যাপ মাঝে মাঝেই পায় কেউ কেউ। কিন্তু এতোসব করেও সারা বছর ভালমতো দুটো ডাল-ভাত খেয়ে, মোটা কাপড় পরে জীবন-যাপনের জন্য মেয়েদেরকে বাড়িতে ডালা-কুলা বুনতে হয়।

চৈত্রের তাতানো দুপুরে এসব কাজের জন্য গাছতলার অপেক্ষাকৃত ছায়া জায়গা বেছে নেয় সবাই। তবু গরমে হাঁস-ফাঁস করে, গালগল্প করে আবার দ্রুত হাতও চালায়। কেননা বৈশাখীমেলাতেই যা একটু বেশি বিক্রি-বাট্টা হবে, হাটে তো খুব বেশি বিক্রি হয় না। তারপর আবার রথের মেলা সেই আষাঢ় মাসে, এরপর আবার অপেক্ষা দূর্গাপূজার। সুতরাং এখন যতো বেশি বানানো যায়, লাভের সম্ভাবনাও ততো বেড়ে যায়।

ভানুমতি এখন নানান অসুখ-বিসুখে আক্রান্ত, সারা শরীরে বাতের ব্যথা, হাত-পা ফুলে গেছে। এক জায়গায় বেশিক্ষণ বসে থাকতে পারে না, হাত-পা ফুলে ঢোল হয়ে যায়। তাই ডালা-কুলা বোনে আর একটু পর পরই উঠে খানিকটা হেঁটে নেয়। এখন তার বুননে ধীরগতি হলেও একসময় এপাড়ার কোনো বউ তার মতো জলদি বুনতে পারতো না। আলাভোলা স্বভাবের হলেও বুননের কাজে বরাবরই সে বেশ দক্ষ। বরাবরই মুখের চেয়ে হাতে-পায়ের কাজে সে পটু। কাজেকর্মে মেনকারও জুড়ি মেলা ভার কিন্তু বড্ড মুখরা। হাত-পা দারুণ চলে কিন্তু মুখ যেন দৌড়োয়!

এসময় নীলুও একেবারে বসে থাকে না, মাঝে মাঝে মা আর বৌদির সাথে কাজে হাত লাগায়। কিন্তু একভাবে বেশিক্ষণ কাজ করতে তার ভাল লাগে না। আর কাজের সময়ও তার মাথায় নানান খেয়াল চাপে। হয়তো একটা বেতের ধামা কি আধলা বানাচ্ছে, কাজে ফাঁকি দিয়ে সে সরু বেত দিয়ে একটা পুতুল বানিয়ে ভাতিজা অর্থাৎ নিখিলের বড় ছেলে পাঁচ বছরের বিনয়ের হাতে দেয়। অমনি সময় এবং বেত নষ্ট করার অপরাধে মেনকার বাঁকা কথা শোনে। তখন তার আরো জেদ চেপে যায়, কাজ ফেলে চুপচাপ একদিকে হাঁটা দেয়। এখন যেমন মেনকার ঠেস পাড়া কথা সইতে না পেরে রোদ মাথায় করে চলেছে হিজলতলার দিকে।

রাস্তা ধরে নীলুকে যেতে দেখে রঘু বললো, ‘কনে যাস?
‘এইতো সামনে।’
রঘু আমগাছের ছায়ায় বসে ঢোলের চামড়া পাল্টাছে। তা দেখে নীলু আবার বললো, ‘বায়না পাইছো নাকি কাকা?’
‘হ।’
‘কনে?’
‘বাগাট।’
‘অদ্দুর বায়না ক্যামনে পালে?’
‘আমার ভায়রা ঠিক করে দিছে।’
‘তয় তো বেজায় দই খাবার পারবানে।’
‘হে, ঢাহিরে বেজায় দই দিয়ে ঠাপাবেনে!’

বাগাটের দই দেশবিখ্যাত। দীর্ঘদিন যাবৎ বংশ পরম্পরায় বাগাটের ঘোষেরা সুনামের সাথে দই উৎপাদন এবং বাজারজাত করে আসছে। তাই পূর্বে যারা বাগাটের দই খেয়েছে বাগাটের নাম শুনলেই তাদের অনেকের জিভটা মুখের মধ্যে নড়েচড়ে ওঠে আর দইয়ের প্রসঙ্গ এসে পড়ে।

আর দাঁড়ালো না নীলু, মাথায় গামছার ঘোমটা তুলে সামনের দিকে হাঁটতে লাগলো।

নদের বুকে চৈত্রের দুপুরটা যেন উপুর হয়ে শুয়ে আছে আর সূর্য রোদের জিভ বাড়িয়ে জল চাটছে। রোদের তেজে মানুষ, গাছপালা, লতা-পাতা তো বটেই নদের জলও যেন হাঁসফাঁস করছে আর আকাশের কাছে আরো জল চাইছে। এখন এখানে কোনো জনমানুষের সাড়াশব্দ নেই। আছে কেবল হিজলগাছে বাসা বাঁধা একটা-দুটো পাখির ডাক, পিছনের মাঠে চরা গাভির কাছ থেকে দূরন্ত বাছুর আপন খেয়ালে খেলতে খেলতে দূরে সরে গেলে সন্তানের দিকে তাকিয়ে চিন্তিত মায়ের থেকে থেকে হাম্বা রব, আর ফাঁকা মাঠ দিয়ে ছাড়া বাছুরের মতো স্বাধীন স্বভাবে দৌড়ে এসে গাছের পাতায় পাতায় চৈত্রের বাতাসের ক্ষণে ক্ষণে আছড়ে পড়ার শব্দ।

নীলু পাতাসহ একটা আসশেওড়ার ডাল ভেঙে পাতার আলগা ধুলো ঝেড়ে হিজলতলায় এসে শুরু করলো মহড়া। পাতাসহ আসশেওড়ার ডালটাকে চামর ভেবে নেয় সে, আর ঘাড়ের গামছা উত্তরীয়। চামরটা এখন হয়ে গেছে ধনুক, নদের ওপারের ঘন জঙ্গল লঙ্কা নগরী, রাবণের রাজপ্রাসাদ! অবিরাম তীর ছুড়ছে সে রাবণের রাজপ্রাসাদের দিকে। যুদ্ধ চলছে রাবণের সাথে, প্রচণ্ড যুদ্ধ! রামের নিক্ষিপ্ত তীরের আঘাতে কাতারে কাতারে রাবণসেনা নিহত এবং আহত হচ্ছে। আহত রাবণসেনার আর্তনাদে ভারী হয়ে উঠছে যুদ্ধক্ষেত্রের বাতাস। ভীত-সন্ত্রস্ত আহত রাবণসেনারা পালিয়ে যাচ্ছে যুদ্ধক্ষেত্র থেকে!

‘ও নীলে... নীলে...। শিগগির এদিক আয় বাবা।’

ডাক শুনে রামরূপী নীলুর যুদ্ধ থেমে গেল। যুদ্ধ থামলেও যুদ্ধের রেশ এখনো রয়ে গেছে। উত্তেজনায় কাঁপছে সে। ঘামে ভিজে গেছে শরীর আর সুতির জামা। মাথার ঘাম গলা-ঘাড় বেয়ে নেমে যাচ্ছে শরীরের নিচের দিকে। থুতনি থেকে ঘাম ঝরে পড়ছে মাটিতে। গামছায় ঘাম মুছলো সে। ততোক্ষণে তাকে ডাকতে ডাকতে কাছে চলে এসেছে কানাইলালের বউ। নীলুর উন্নতি জেঠিমা। ঘাড়ের ঘাম মুছতে মুছতে নীলু বললো, ‘কী অইচে জেঠিমা?’

প্রায় দৌড়তে দৌড়তে এসে হাঁপিয়ে উঠেছে প্রৌঢ়া। হাঁপাতে হাঁপাতেই বললো, ‘তোর জ্যাঠার জম্মের জ্বর আইচে, খালুইতি খাচার মতো খাচতেচে! তুই এট্টু নিমাই ডাক্তাররে ডাহে নিয়ে আয় বাবা। তাড়াতাড়ি যা।’
‘কও কী জেঠিমা! চলো।’

বাড়ি এসে ব্যস্তহাতে গায়ের জামাটা খুলে বারান্দার আড়ে মেলে দিলো নীলু, তারপর ঘরে ঢুকে আরেকটি জামা গায়ে দিয়ে উঠোনে নামতেই ভানুমতি জিজ্ঞেস করলো, ‘কনে যাস?’
‘নিমাই ডাক্তারের বাড়ি।’
‘ক্যা, কার কী অলো?’
‘কানাই জ্যাঠার খুব জ্বর।’

আমতলায় বসে ডালা বুনছে ভানুমতি, তার পাশে বসে বিনয় বাঁশের পরিত্যক্ত সরু ফালিগুলি নিয়ে নিজের মতো করে কিছু একটা বানাচ্ছে; তার নাকের ডান পাশের ছিন্দ্র দিয়ে বেরিয়ে এসেছে তরল-আঠালো বেলুন! কোলের ছেলের মুখে মাই ঠেসে দিয়ে রান্নাঘরের বারান্দায় বসে আছে মেনকা। মেনকা সারাক্ষণ ঠোঁট বেঁকে, কপাল-নাক এমন ভাবে কুঁচকে থাকে দেখে মনে হয় দীর্ঘদিন যাবৎ সে নিরাময়ের অযোগ্য কোষ্ঠকাঠিন্যে ভুগছে! আর সেই কোষ্ঠকাঠিন্য মুখে সে যখন তেতো কথা বলে তখন সেই কথা কান দিয়ে ঢুকে ছুরি হয়ে বেঁধে বুকে। বুকের সাথে লেপটে থাকা দুধপানরত ছেলের মুখ থেকে ডান স্তন ছাড়াতেই ক্যাঁ ক্যাঁ করে উঠলো ছেলেটা। ছেলেকে ঘুরিয়ে বাম স্তন মুখের মধ্যে ঠেসে দিয়ে মেনকা তার স্বভাবের দূর্গন্ধ ছড়ালো, ‘বাবু চললেন বিনে পয়সার মায়েন্দারি করবার!’

ততোক্ষণে নীলু উঠোন ছাড়িয়ে রাস্তায় উঠেছে। হয়তো সে শোনেনি কথাটা। কিন্তু ভানুমতির কানে যেতেই প্রতিবাদ উঠলো, ‘এ আবার কেমন ধারা কতার ছিরি বৌমা?’
‘খারাপ কী কলাম! যা সত্যি, তাই কইচি।’
শান্ত গলায় ভানুমতি বললো, ‘পাড়া-পড়শি নিয়ে বাস। মানষির বিপদে-আপদে পাশে না দাঁড়ালি কী চলে!’
‘হ। মানষির সবরহম বিপদের তে রক্ষা করার জন্যে খালি আপনার ছাওয়াল-ই তো আছে। আর তো কেউ নাই পাড়ায়! কী আমার রক্ষে কর্তা। বাড়ির কামে যুত নাই, পাড়া-পড়শির জন্যে দরদ উথলে ওঠে।’

ভানুমতি আর কথা বাড়ালো না, কথা বাড়ালেই আরো দশ কথা শুনিয়ে দেবে মেনকা। হয়তো রাগের চোটে কোলের ছেলের মুখে এমনভাবে মাই ঠেসে ধরবে যে, হয়তো কচি ছেলের গলায় দুধ আটকে যাবে! এই বউটা কিছুতেই তার মতো হলো না, হলো তার শাশুড়ির মতো! এক কালে শাশুড়ি তাকে জ্বালিয়েছে, এখন ছেলের বউ জ্বালায়। শত চেষ্টা করেও সে মেনকার মুখ থেকে কষা কথা দূর করাতে পারেনি। মানুষের ভাল দিকটা মেনকার চোখে পড়ে না, শুধু কদর্য দিকটাই দেখতে পায়। আর সেই দিকটাতেই সে কষ ঝরায়। ভানুমতি শান্ত স্বভাবের না হয়ে দীপকের মায়ের মতো চড়া স্বভাবের হলে মেনকার সাথে দিনরাত কুরুক্ষেত্র লেগেইে থাকতো। যেমনটা লেগে থাকে দীপকদের বাড়িতে। মা আর বউয়ের মাঝখানে পড়ে বেচারা দীপকের প্রাণটা হাঁসফাঁস করে। মনের দুঃখে দীপক একবার গলায় দড়ি দিতে গিয়েছিল!

হন্ত দন্ত হয়ে হেঁটে যাচ্ছে নীলু নিমাই ডাক্তারের বাড়ির উদ্দেশে। এই আর একজন উদার মনের মানুষ নিমাই ডাক্তার। জাত-পাত ঠিক নাই। ডাক পেলে সবার বাড়িতেই যায়। নিমাই ডাক্তার না থাকলে ঋষিপাড়ার মানুষের কী যে হতো! বাজারে আরো ডাক্তার আছে। রোগী মরণাপন্ন হলেও তারা ঋষিপাড়ায় আসে না, রোগের বৃত্তান্ত শুনে ওষুধ লিখে দেয় নয়তো হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলে। এজন্য ঋষিপাড়ার মানুষ এখন নিমাই ডাক্তার ছাড়া অন্য কারো কাছে যায়ও না। বাজারের দক্ষিণ পাশেই নিমাই ডাক্তারের বাড়ি। দুপুরবেলা তিনি বাড়িতেই থাকেন। অথবা বাইরে কোথাও রোগী দেখতে যান। আর সকাল-বিকাল বসেন বাজারে নিজের চেম্বারে। যদিও বিকেল হতে আর বেশি দেরি নেই। খুব জরুরি না হলে বিকেলবেলা আবার ডাক্তার সাহেব বাইরে রোগী দেখতে যেতে চান না। এজন্য পড়িমরি করে ছুটছে সে। সুনীল কাকার মা গোয়াল ঘরের পাশ থেকে মুখ বাড়িয়ে ডাকলেন, ‘ও নীলে, শোন দাদা, শোন...।’
নীলু কয়েক পা পিছিয়ে বাঁ-দিকে ঘাড় ঘুরিয়ে বুড়ির মুখে দৃষ্টি রেখে বললো, ‘কী কও?’
বৃদ্ধার গলায় মিনতি, ‘তুই বাজারে যাস দাদা?’
‘হ।’
‘আমার পাঁচ গণ্ডা পান আনে দে দাদা। হাটে যাওয়ার সময় কাল পই পই করে সুনীলরে ক’য়ে দিলাম, আমার পান কিন্তু আনিস। ওর খেয়াল নাই। সেই বিয়ানের তে পান না খায়ে আছি। ভাত না খালি আমার চলে রে দাদা, কিন্তু পান না খালি বাঁচিনে।’

এটুকু বলার পর বৃদ্ধা সতর্ক হয়ে কানে কানে কথা বলার মতো ফিসফিসিয়ে বললেন, ‘বউতি বাজারের তে ছাইটুকু আনবার কলি তাও ভোলে না, খালি ভুল অয় আমার পান আনার কতা। মাগিমুহো ছাওয়াল আমার!’

শেষ বাক্যটি বলার সময় বৃদ্ধার গলার স্বর এবং তার মুখভঙ্গি দেখে হাসি পেলো নীলুর, ঠোঁট কিঞ্চিৎ স্ফীত করে হাসলোও। সাদা থানের আঁচলের গিঁট খুলতে খুলতে বৃদ্ধা এবার মুখে বালিকার খুশি ছড়িয়ে স্বাভাবিক গলায় বলতে শুরু করলেন, ‘টাহা আঁচলে নিয়ে সেই বিয়ান বেলার তে বসে আছি কিডা বাজারে যায় তার আশায়। তুই আসে আমার বাঁচালি দাদা।’

বলেই হিহি করে হাসলেন। সামনের দাঁত নেই উপরের পাটির দুটো, নিচের পাটির তিনটে, সারামুখের দাঁত গুনে দেখলে হয়তো সতের-আঠারোটির বেশি হবে না, বয়স গিলে খেয়েছে। হাসলে শিশুর মতো দেখায়।

‘তোমার গিঁট খুলতিই তো বেলা যাবেনে। দ্যাও তাড়াতাড়ি। সময় নাই।’
‘বউ নাই তোর এতো তাড়া কিসির লো ঢ্যামনা! নে, আবার ভুলে যাস নে।’

টাকাটা ছোঁ মেরে নিয়ে আবার হাঁটা শুরু করলো নীলু। পিছন থেকে বৃদ্ধা স্মরণ করিয়ে দিলো, ‘ছাঁচি পান আনিসনে আবার, মিষ্টি পান।’
নিমাই ডাক্তারকে বাড়িতেই পেলো নীলু। কানাইলালের জ্বরের কথা জানিয়ে নিমাই ডাক্তারকে বারবার অনুরোধ করলো চেম্বারে বসার আগেই তার কানাইজ্যাঠাকে দেখে আসার জন্য। ডাক্তার যেতে রাজি হলেন।

ডাক্তারকে খবর দিয়ে বাজার থেকে বের হয়ে আসছে নীলু। পিছন থেকে ডাকলো সন্তোষ কাকা। নীলুর হাতে মাছের ব্যাগ ধরিয়ে দিয়ে বললো, ‘যাবার সময় তোর কাকিমার কাছে মাছ কয়ডা দিয়ে যাস। আমার ফিরতি দেরি অবেনে, ততোক্ষণে মাছ নষ্ট হয়ে যাবেনে।’
চললো নীলু মাছের ব্যাগ নিয়ে। সুনীল কাকার মায়ের পান নিতেও ভোলেনি।

রাতে চারজনে লম্বা লাইনে খেতে বসেছে রান্নাঘরের বারান্দায়; পশ্চিমদিকে সুবোধ, তারপর নিখিল, এরপর নিখিলের বড় ছেলে বিনয়, পূর্বদিকে নীলু। পরিবেশন করছে মেনকা। ছোট নাতি কোলে বারান্দার এক কোনে নীলুর মুখোমুখি বসে আছে ভানুমতি। নিখিল সুবোধের উদ্দেশে বললো, ‘বাবা অ্যাম্বা তো আর চলে না। আমি ভাবতেছি অন্য ব্যবসা করবো।’

সুবোধের হাত থেমে গেল। ভানুমতি নাতির মুখে ফিডার দিতে যাচ্ছিল সে ক্ষণিকের জন্য হাত থামিয়ে বড়ছেলের মুখের দিকে তাকালো। মেনকা তো ব্যবসার কথাটা আগে থেকেই জানে, বউয়ের সাথে শলা-পরামর্শ ছাড়া নিখিল কোনো কাজে নামে না। সুতরাং তার কৌতুহলের কিছু নাই। আর নীলু তো এসব সাংসারিক কথা কখনো গায়েই মাখে না। অতএব সে যেমন খাচ্ছিল তেমনই খেতে লাগলো।
সুবোধ বললো, ‘কী করবার চাস?’

মুখের ভাত গলা দিয়ে নামিয়ে নিখিল বললো, ‘ভাবতেছি ছিট কাপড়ের ব্যবসা করবো। এই ব্যবসায় বেচা-বিক্রিও ভাল, আবার লাভও বেশি। আমি ফরিদপুর তে কাপড় আনবো, নগদ টাহা যা আছে তাই দিয়েই অল্প কাপড় নিয়ে শুরু করি। তারপর চিন-পরিচয় অলি মহাজনের ঘরের তো কিছু বাহি আনা যাবেনে। তুমি কী কও?’

সুবোধ কয়েক মুহূর্ত চুপ করে থাকলো। তারপর বাঁ-হাত দিয়ে গ্লাস তুলে জল খেয়ে ছোট্ট ঢেঁকুর ছেড়ে বললো, ‘যা ভাল মনে অয় কর। আমার কোনো আপত্তি নাই। বাপ-ঠাহুদার পইতিক কর্ম ধরে রাহে তো দ্যাকলাম। অভাব ছাড়ে না, আটালুর মতো গা’র সাথে আঁটে থাহে।’

‘ছিট কাপড়ের ব্যবসা করলি আর দূরি গাওয়ালে যাওয়া লাগবেন না, একখান পুরনো সাইকেল কিনে নিবানে। কাছে-কিনারে গাওয়াল করে দিনের দিন আবার বাড়ি ফিরে আসপো।’

বলেই তৃপ্তির সাথে মুখে আরেকগ্রাস ভাত তুললো নিখিল।

নিখিলের এই নতুন ব্যবসায় নামার খবরে সবচেয়ে বেশি খুশি হয়েছে ভানুমতি; আর মেনকা তো আগে থেকেই মনে মনে খুশি, যদিও তার মুখের অভিব্যক্তিতে খুশির প্রকাশ নেই। ভানুমতি এই জন্য খুশি যে নতুন ব্যবসায় যদি আয়-উন্নতি হয় আর সংসারের শ্রী ফেরে তাতে তো সবারই মঙ্গল। এছাড়াও ভানুমতির খুশির আর এক কারণ হলো, নিখিল বাড়িতে না থাকলে মেনকার বড্ড বাড় বাড়ে। নিখিল যখন টানা পনের-বিশ কি তারও বেশি দিন গাওয়ালে থাকে, তখন ভানুমতির মনে হয় মেনকা যেন ক্ষ্যাপা কুকুর হয়ে থাকে! কারণে-অকারণে অশান্তি করে, কোনো কথা বাতাসে মিলিয়ে যাবার আগেই খ্যাঁক করে ধরে। তুচ্ছ কারণে বড় ছেলেকে মারে, এমনকি কোলেরটাকেও রেহাই দেয় না। ভানুমতি তখন একেবারে চুপ মেরে থাকে, মেনকা চান করতে পুকুরে অথবা অন্য কোথাও গেলে সে একা একা গোবরের লাঠি বানায় নয়তো অন্য কোনো কাজ করতে করতে গজ গজ করে। অথবা নিজেই পাড়ায় গিয়ে সমব্যথি কারো কাছে গিয়ে মনের কথা ভাঙে, ‘মাগি অলো শাইয়োর কামড়ের জ্বালায় অমন করে! ওর শাইয়োর কামড় থামানের মানুষ তো বাড়ি নাই, ভাতার বাড়ি আসলি তয় সেন মাগির শাইয়োর কামড় থামবেনে!’

আর মেনকার খুশির কারণ একে তো বরকে কাছে পাওয়া, আরেক হলো নিজের মানুষ ছিট কাপড়ের ব্যবসা ধরলে তার বাড়তি আব্দার না মিটিয়ে আর পারবে না!

হঠাৎ অন্ধকারে সওয়ার হয়ে উচ্চস্বরে একাধিক নারী কণ্ঠের কান্নার আওয়াজ ভেসে এলো। সবাই কান খাড়া করলো। উত্তর দিক থেকে আসছে কান্নার শব্দ। কিন্তু কোন বাড়ি থেকে তা ঠিক বোঝা যাচ্ছে না। হারুদের বাড়ি থেকে, না কার্তিকদের? শুরুতে দু’জনের কণ্ঠ শোনা গেছে। এখন আরো কণ্ঠ যোগ হয়েছে। হঠাৎ কানাই জ্যাঠার কথা মনে হতেই নীলুর বুকের মধ্যে ছ্যাৎ করে উঠলো! দুপুরে সে নিমাই ডাক্তারকে ডেকে এনেছিল, কানাই জ্যাঠাকে দেখে-শুনে ওষুধ দিয়ে গেছে। গায়ে খুব জ্বর ছিল কানাই জ্যাঠার। শীতে কাঁপছিল। তাই বলে জ্বরের মতো তুচ্ছ অসুখের কাছে হেরে যাবে কানাই জ্যাঠা? এমনটা তার ভাবনায়-ই আসেনি। আজকালকার দিনে জ্বর আবার কোনো অসুখ নাকি! কানাই জ্যাঠা তাকে হাতে ধরে সানাই বাজানো শিখিয়েছে। ভাঙা গলায় গেয়ে বিজয় সরকারের গানের সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে। এখনো সময়-অসময়ে মাঝে মাঝেই সানাই নিয়ে কানাই জ্যাঠার কাছে গিয়ে বসে। নতুন কিছু শেখে। সেই কানাই জ্যাঠা চলে গেল! ওর বাবা ওকে জন্ম দিয়েছে, বাঁচার খোরাক দিয়েছে এবং এখনো দিচ্ছে। কিন্তু কানাই জ্যাঠা দিয়েছে মনের খোরাক। একলা একলা শিল্পের সাথে বাঁচতে শিখিয়েছে কানাই জ্যাঠা। নীলুর ভেতরটা হাহাকার করে উঠলো কানাই জ্যাঠার জন্য। চোখ ঝাপসা হয়ে এলো। খাওয়া ছেড়ে উঠে পড়লো সে। ভানুমতি বললো, ‘উঠলি যে?’
‘দেহি কানাই জ্যাঠার কিছু অলো নাকি!’

চোখের পলকে অন্ধকারে মিলিয়ে গেল নীলু।

(চলবে)

মন্তব্য ২ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১১ ই এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১০:৪৪

প্রামানিক বলেছেন: এ পর্ব ভাল লাগল। ধন্যবাদ

১১ ই এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১১:২৩

মিশু মিলন বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকেও।

শুভেচ্ছা...............

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.