নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মিশু মিলন

মিশু মিলন

আমি বর্তমানে ইস্টিশন এবং সামহোয়্যার ইন ব্লগে লিখি। আমার সকল লেখা আমি এই দুটি ব্লগেই সংরক্ষণ করে রাখতে চাই। এই দুটি ব্লগের বাইরে অনলাইন পোর্টাল, লিটল ম্যাগাজিন এবং অন্য দু-একটি ব্লগে কিছু লেখা প্রকাশিত হলেও পরবর্তীতে কিছু কিছু লেখা আমি আবার সম্পাদনা করেছি। ফলে ইস্টিশন এবং সামহোয়্যার ইন ব্লগের লেখাই আমার চূড়ান্ত সম্পাদিত লেখা। এই দুটি ব্লগের বাইরে অন্যসব লেখা আমি প্রত্যাহার করছি। মিশু মিলন ঢাকা। ৯ এপ্রিল, ২০১৯।

মিশু মিলন › বিস্তারিত পোস্টঃ

একটি চলচ্চিত্রের কাহিনী সংক্ষেপ এবং..........

১৩ ই এপ্রিল, ২০১৬ দুপুর ১২:৩৮

পাঁচ বছর আগে এই গল্পটির একাধিক রকমের স্ক্রিপ্ট করেছিলাম চলচ্চিত্র নির্মাণের জন্য (পরিচালকের চাহিদা অনুযায়ী শ্রেণি পরিবর্তনও করতে হয়েছিল)। একজন নির্মাতা গল্পটি অনেককে বলেছিলেন, একটি চ্যানেলে জমাও দিয়েছিলেন স্ক্রিপ্ট। শেষ পর্যন্ত কাজটি হয়নি চ্যানেলের অনিচ্ছার কারণে এবং আরো পরে পরিচালক আমাকে জানিয়েছিলেন, ভারতের কোন জুরি সদস্য নাকি তাকে বলেছেন ঘুড়ি উড়ানোর অংশটুকু ইরানি চলচ্চিত্র 'কাইট রানার' এর সঙ্গে মিলে যায়। আমি অবশ্য কাইট আজ অব্দি দেখিনি। ভেবেছিলাম যখন বড় পরিসরে উপন্যাস লিখবো, তখন দেখবো। যদি কাইট রানারের সাথে কোনো অংশ মিলে যায় তো বাদ দেব। তাই ফেল রেখেছি। কে জানে এই গল্পের নির্যাস কেউ কাউকে সাপ্লাই দিয়েছে কি-না (পরিচালক দেননি আমি নিশ্চিত, চ্যানেলটিকে আমি বিশ্বাস করি না।)! আর মেধাবী পরিচালক নির্যাস পেলে গল্প ভেঙেচুরে নতুন করে গড়বেন সেটাই তো স্বাভাবিক।
*********
বাংলাদেশের সীমান্তের একটি গ্রাম। দেশ ভাগ হওয়ার সময় গ্রামটিও ভাগ হয়ে যায়। কিন্তু দুই পারের গ্রামের নাম একই থাকে। আত্মীয়-স্বজন দুই দেশের নাগরিক হয়ে যায়। দেশ ভাগ হলেও কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ করা হয় পঁয়ষট্টির পাক-ভারত যুদ্ধের পরে। ততদিন এপারের ছেলে-মেয়েরা ওপারের স্কুলে পড়তো; ওপারের মানুষ এপারের মসজিদে নামাজ পড়তে, মন্দিরে পূজা দিতে আসতো। তারপর একসময় কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ করাা হয়, কাঁটাতারের বেড়া গিয়ে মেশে নদীর সাথে, নদীর সীমানা অরক্ষিত। এই গ্রামেরই বাংলাদেশ অংশে বাড়ি সুনীল রোজারিও’র। বয়স প্রায় চল্লিশ। বৃদ্ধ বাবা, বিধবা বোন আর এগারো বছরের ছেলে দিব্যকে নিয়ে তার সংসার। সুনীলের বোনের বিয়ে হয়েছিল ভারতের অংশে, তার স্বামী মারা যাবার পর নিঃসন্তান বোন শ্বশুর বাড়িতে লাঞ্ছিত হতে থাকে। তখন সুনীলের বাবা তার মেয়েকে নিজের কাছে নিয়ে আসেন। সুনীল উপজেলা শহরে কেরানির চাকরি করে। বাড়ি থেকে সাইকেল চালিয়ে অফিসে যাওয়া-আসা। যাবার পথে ছেলেকে নামিয়ে দিয়ে যায় স্কুলে। ছেলের সঙ্গে তার সম্পর্ক বন্ধুর মতো।

বছরে একবার কালিপূজার সময় সীমান্তের কাছে মেলা হয়। তখন কয়েক ঘন্টার জন্য সীমান্ত খুলে দেওয়া হয়। দুই গ্রামের মানুষ একত্রিত হয়। আত্মীয়-স্বজনের সাথে দেখা-সাক্ষাৎ করে। এই মেলায়ই অলকার সঙ্গে প্রথম দেখা হয়েছিল সুনীলের। দ্বিতীয়বার অলকার সঙ্গে দেখা হয়েছিল ভারতে বোনের বাড়িতে বেড়াতে গেলে। সেই সূত্রেই দুজনের কাছাকাছি আসা, দুজন দুজনকে ভালবেসে ফেলে। এর মধ্যেই সুনীলের জামাই বাবু মারা যায় এবং বোন শ্বশুরবাড়ি থেকে চলে আসে। একমসয় সুনীল এবং অলকা তাদের সম্পর্কের কথা দুই বাড়িতে জানায়, সুনীলের বাবার কোনো আপত্তি না থাকলেও বোন আপত্তি করে। একটি পরিবারেব মানুষের কাছে নির্যাতিত হওয়ায় সে ভারতের সব মানুষকেই অপছন্দ করে। তাছাড়া মেয়েটি হিন্দু। আর অলকার বাড়ির মানুষ এই সম্পর্ক কিছুতেই মেনে নিতে রাজি নয়। দুজনে পালিয়ে বিয়ে করে সুনীলদের বাড়িতে উঠে। সুনীলের বোন অলকাকে বাড়িতে জায়গা দিলেও মন থেকে মেনে নেয় না, তার উপর মানসিক নির্যাতন চালায়। অলকা সব মুখ বুজে সয়ে যায়। তাদের দুটি জমজ ছেলে হয়, দিব্য এবং কাব্য। এক সময় সুনীলের সঙ্গে অলকার দূরত্ব বাড়তে থাকে। একপর্যায়ে তারা আলাদা হয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। দিব্যকে রেখে অলকা কাব্যকে নিয়ে চলে যায় ভারতে তার পরিবারের কাছে। দুই বাড়ির দূরত্ব দুই কিলোমিটারের বেশি নয়।

সুনীলের বাবা ছেলে-বৌমাকে বুঝিয়েছিলেন একসাথে থাকার ব্যাপারে, কিন্তু ফল কোনো হয়নি। তিনি শান্ত স্বভাবের মানুষ, নিজের জগতে ডুবে থাকেন। বই পড়েন, কবিতা ভালবাসেন। বারান্দার এককোনে চেয়ারে বসে কবিতা আবৃত্তি আর ফেলে আসা জীবনের স্মৃতিচারণ করেন। ছেলের ওপর কোনো ব্যাপরেই তিনি জোর খাটান না।

সুনীল এবং অলকা দুজনের কেউ-ই আর বিয়ে করেনি। অলকা এখন ওপারের একটি স্কুলে শিক্ষকতা করে। এই ছয়-সাত বছরে দু-জনের মধ্যে কোনো যোগাযোগ হয়নি।

দিব্য ফাইভে পড়ে। ভীষন দুষ্ট। বাবা তাকে ভীষণ ভালবাসলেও প্রায়ই বকা খায় সীমান্তের ওদিকটায় খেলতে যাওয়ার জন্য। মায়ের কোনো স্মৃতি তার মনে নেই। কিন্তু মায়ের জন্য তার খুব কষ্ট হয়, আশপাশে সবার মা আছে কেবল তার-ই নেই। সে শুনেছে সীমান্তের খুব কাছেই তার মা থাকে। একদিন অন্যদের ঘুড়ি ওড়ানো দেখে হঠাৎ তার মাথায় এক বুদ্ধি চাপে। সে টিফিনের টাকা দিয়ে প্রায়-ই ঘুড়ি কেনে। ঘুড়িতে সে মায়ের কাছে চিঠি লেখে। তারপর সীমান্তের কাছে গিয়ে ঘুড়ি উড়ায়, ঘুড়ি যখন ভারতের অংশে ঢুকে পড়ে তখন সে সুতো কেঁটে দেয়।

এদিকে অলকার বৌদির এক দূসম্পর্কের ভাই অলকাকে বিয়ে করতে চায়। বিয়ে প্রায় ঠিক। অলকা বিয়েতে কিছু স্বত্ব দিয়েছিল। সেই স্বত্ব মেনেই তাকে বিয়ে করতে চেয়েছিল সেই ছেলেটি। বিয়ের দিনক্ষণ ঠিক হয়ে যায়।

এদিকে দিব্য’র ঘুড়ি কোনোদিন গাছের মাথায় বেঁধে থাকে, কোনোদিন পুকুরে পড়ে। একদিন স্কুল থেকে ফেরার সময় কাব্য একটা ঘুড়ি পায়। বাড়ি ফিরে টেবিলের উপর ঘুড়িটা রেখে সে খেলতে চলে যায়। অলকা স্কুল থেকে ফেরার পর ঘর গোছাতে গিয়ে ঘুড়িটি সরিয়ে রাখতে গেলে ঘুড়ির লেখা তার নজরে পড়ে। ঘর থেকে দৌড়ে বেরিয়ে বাড়ি থেকে নেমে আসে সে। তাকিয়ে দেখতে পায় সীমান্তের দিকের গাছে প্রচুর ঘুড়ি আটকে আছে। হাতের ঘুড়িটা বুকে জাড়িয়ে কান্নায় ভেঙে পড়ে সে।
অলকা সিদ্ধান্ত নেয়। সে বাংলাদেশে যাবে। দিব্য’র জন্য শার্ট, জুতা, নানা জিনিসপত্র কেনে।

এদিকে দিব্য রোজই ঘুড়ি উড়াতে থাকে। একদিন তার ঘুড়ি কাঁটাতারে বেঁধে যায়। সে লাঠি দিয়ে ঘুড়িটা নামানোর জন্য বারবার চেষ্টা করে। হঠাৎ গুলি এসে লাগে দিব্য’র বুকে। দিব্য’র আর মাকে দেখা হয় না।








মন্তব্য ১৬ টি রেটিং +৮/-০

মন্তব্য (১৬) মন্তব্য লিখুন

১| ১৩ ই এপ্রিল, ২০১৬ দুপুর ১:১২

হাফিজ বিন শামসী বলেছেন: একটা সুন্দর কাহিনী। বেশ ভাল লেগেছে।

১৩ ই এপ্রিল, ২০১৬ দুপুর ১:১৯

মিশু মিলন বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ।

শুভকামনা...........

২| ১৩ ই এপ্রিল, ২০১৬ দুপুর ১:৫৩

হাসান মাহবুব বলেছেন: বেশ ভালো গল্প। চালিয়ে যান।

১৩ ই এপ্রিল, ২০১৬ দুপুর ২:০৯

মিশু মিলন বলেছেন: ধন্যবাদ প্রিয় হাসান মাহবুব।
এই গল্পটার ব্যাপারে আশাহত হয়ে পড়েছি। চালাতে পারবো কি-না জানি না।

ভাল থাকবেন। শুভকামনা................

৩| ১৩ ই এপ্রিল, ২০১৬ দুপুর ২:০৫

বিজন রয় বলেছেন: অনেক ভাল লেগেছে।
+++

১৩ ই এপ্রিল, ২০১৬ দুপুর ২:১০

মিশু মিলন বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ।

শুভকামনা রইলো............

৪| ১৩ ই এপ্রিল, ২০১৬ দুপুর ২:১৯

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: গল্পটা ভালো।

১৩ ই এপ্রিল, ২০১৬ দুপুর ২:২৬

মিশু মিলন বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই।

অনেক অনেক শুভকামনা............

৫| ১৩ ই এপ্রিল, ২০১৬ দুপুর ২:৩২

পুলহ বলেছেন: "ভারতের কোন জুরি সদস্য নাকি তাকে বলেছেন ঘুড়ি উড়ানোর অংশটুকু ইরানি চলচ্চিত্র 'কাইট রানার' এর সঙ্গে মিলে যায়.."- আমিও দেখি নাই ছবিটা, তারপরো মিল যদি থেকেই থাকে- এ ধরণের কাকতালীয় মিল সাহিত্যে/ শিল্পে হতেই পারে বলে আমি মনে করি ..

আশাহত হবেন না মিলনদা, দিব্যর জন্য হলেও লেখাটা পূর্ণাঙ্গ করুন।
কাটাতারে আটকে থাকা দিব্য'র দুঃখটুকু মুক্ত করে দিন...
শুভেচ্ছা!

১৩ ই এপ্রিল, ২০১৬ দুপুর ২:৩৯

মিশু মিলন বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ সুপ্রিয় পুলহ।

স্ক্রিপ্টটা যে চ্যানেলে জমা দেওয়া হয়েছিল, ওরা গল্পের নির্যাস অন্য একজন নির্মাতাকে দিয়ে ছবি বানিয়েছে, এটা আমার ধারণা।
তবু দেখি..........

ভাল থাকবেন। শুভকামনা..........

৬| ১৩ ই এপ্রিল, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:৪৯

ইয়েলো বলেছেন: ভাল লাগল।

১৩ ই এপ্রিল, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৪২

মিশু মিলন বলেছেন: ধন্যবাদ।

শুভকামনা..............

৭| ১৬ ই এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১১:৩৩

দীপংকর চন্দ বলেছেন: সংবেদনশীলতার স্পর্শ!!!

শুভকামনা অনিঃশেষ সুলেখক।

অনেক ভালো থাকবেন। সবসময়।

১৭ ই এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১২:১৪

মিশু মিলন বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ দাদা।

খুব ভাল থাকবেন।
শুভকামনা সবসময়............

৮| ২৪ শে এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১:৫৬

আহা রুবন বলেছেন: 'এই গল্পটার ব্যাপারে আশাহত হয়ে পড়েছি। চালাতে পারবো কি-না জানি না।'

কোনও কারণ নেই। অত্যন্ত হৃদয়স্পর্শী কাহিনি। জমজ শিশু দুটি কেন কাঁটাতারের দুই পাড়ে? আমাদের রাজনীতিকরা যেমন অহংবোধে দেশের মধ্যে কাঁটা তার বসিয়েছিল, বহু বাবা-মা-ই একমাত্র সেই ইগোর জন্যই শিশুদের স্নেহ-মমতার মধ্যে কাঁটাতারের বেড়া তৈরি করে। শিশুটির অনুভূতি কেমন তা কি একবারও আমরা ভাবি? আপনার ঘুরি ওড়ানোর অংশটুকু অসাধারণ...

২৪ শে এপ্রিল, ২০১৬ বিকাল ৫:৫৪

মিশু মিলন বলেছেন: আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।

ভাল থাকবেন। শুভকামনা নিরন্তর............

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.