নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মিশু মিলন

মিশু মিলন

আমি বর্তমানে ইস্টিশন এবং সামহোয়্যার ইন ব্লগে লিখি। আমার সকল লেখা আমি এই দুটি ব্লগেই সংরক্ষণ করে রাখতে চাই। এই দুটি ব্লগের বাইরে অনলাইন পোর্টাল, লিটল ম্যাগাজিন এবং অন্য দু-একটি ব্লগে কিছু লেখা প্রকাশিত হলেও পরবর্তীতে কিছু কিছু লেখা আমি আবার সম্পাদনা করেছি। ফলে ইস্টিশন এবং সামহোয়্যার ইন ব্লগের লেখাই আমার চূড়ান্ত সম্পাদিত লেখা। এই দুটি ব্লগের বাইরে অন্যসব লেখা আমি প্রত্যাহার করছি। মিশু মিলন ঢাকা। ৯ এপ্রিল, ২০১৯।

মিশু মিলন › বিস্তারিত পোস্টঃ

গাওয়াল (উপন্যাস: পর্ব-চৌদ্দ)

১২ ই আগস্ট, ২০১৮ দুপুর ১:১৩

শোভনের দেওয়া একটি ম্যাগাজিন উল্টে-পাল্টে দেখছে নীলু। বিভিন্ন দেশের ভাস্কর্য এবং চিত্রকর্ম বিষয়ে ইংরেজি ভাষার বেশ মোটা একটি ম্যাগাজিন। শোভন নীলুকে ম্যাগাজিনটা দিয়েছে পড়ার উদ্দেশে নয়, ছবি দেখার জন্য, যাতে ভাস্কর্য বিষয়ে নীলুর জ্ঞান আরো বিস্তৃত হয়। অসংখ্য ভাস্কর্য এবং চিত্রকর্মের ছবি আছে ম্যাগাজিনটাতে। নীলু পাতা উল্টে-পাল্টে ছবি দেখছে আর ভেতরের লেখা পড়ার চেষ্টাও করছে, কিন্তু শক্ত শক্ত ইংরেজির মানে বুঝতে পারছে না সে। তার ইংরেজির দৌড় খুব বেশি দূর নয়। এই ইংরেজির জন্যই তো সে মাধ্যমিক পাশ করতে পারেনি!

ম্যাগাজিনের কিছু কিছু ছবি তার পরিচিত, যেমন- গৌতম বুদ্ধ-গণেশসহ ভারতীয় উপমহাদেশের দেব-দেবীর মূর্তির ছবি। অনাথ সরকারের পুকুর কাটতে গিয়ে কষ্টি পাথরের বড় বিষ্ণু মূর্তি পেয়েছিল। সেই রকম মূর্তির ছবিও আছে। পাথরে খোদাই করা নাচের বিভিন্ন মুদ্রা প্রদর্শনরত, কামকলায় রত প্রাচীন ভারতীয় সভ্যতার নারী-পুরুষের নগ্ন মূর্তির ছবিও আছে। প্রাচীন ভারতীয় সভ্যতা ছাড়াও গ্রীক, রোমান, মিশরীয় ইত্যাদি সভ্যতার আবৃত-অনাবৃত মূর্তি থেকে শুরু করে হাল আমলের শিল্পীদের শিল্পকর্মের ছবিও আছে।

ম্যাগাজিনটা প্রথম দেখেই নীলু এক কাণ্ড ঘটিয়ে ফেলেছে। শোভন যাবার সময় ম্যাগাজিনটা নীলুকে দিয়ে যেতে ভুলে গিয়েছে। কিন্তু ম্যাগাজিনটা বাড়িতে শোভনের ঘরেই ছিল। শোভন ফোন করে নীলুকে বলেছে বুকশেলফ থেকে ম্যাগাজিনটা নিয়ে নিতে।
নীলু ম্যাগাজিনটার প্রথম কয়েকটি পাতা উল্টে দেখলো নগ্ন নারী-পুরুষের ছবি। তাদের গায়ের রঙ ধবধবে সাদা। ছবিগুলো দেখেই নীলুর মনে হলো ঐ হতচ্ছাড়া ব্যাটা-বেটিগুলো বিদেশী। দেশি হলে গায়ের রঙ অমন সাদা হতো না, আর অমন রাখঢাকহীন ন্যাংটাও থাকতো না! ন্যাংটা হওয়া কেবল বিদেশীদের পক্ষেই সম্ভব! ওদের লাজ-লজ্জা বলে কিছু নেই! বেহায়া ধরনের। তবে শাড়ি পরা বিদেশীদেরও সে দেখেছে। মায়াপুরের ইস্কন মন্দিরে।

নীলু সাথে সাথে শোভনকে ফোন দিলো। ভাবলো শোভন হয়তো ভুল করে এই বইয়ের নাম বলেছে। ফোনে শোভনকে বললো, ‘এইডে কী বই রে, এতে তো খালি বেহায়া বিদেশীগের ন্যাংটা ছবি!’
নীলুর কথা শুনে হো হো করে হাসলো শোভন।
‘তুই হাসতেছিস ক্যান!’

তবু শোভনের হাসি থামেই না। নীলু বিরক্ত। হাসি থামিয়ে শোভন বললো, ‘নীলুদা, তুমি বেহায়া বিদেশী পেলে কই, ওগুলো বিভিন্ন সভ্যতার দেব-দেবীর ছবি!’
‘দেব-দেবীর ছবি এমন ন্যাংটা!’
‘তুমি গ্রীস-ইতালির নাম শুনেছো?’
‘হ শুনছি তো, বিশ্বকাপে ফুটবল খ্যালে।’
‘ওগুলো ঐ গ্রীস-ইতালি আর অন্যান্য দেশের প্রাচীন সভ্যতার দেব-দেবীর ছবি। এছাড়া পৃথিবীর বিখ্যাত শিল্পীদের শিল্পকর্মের ছবিও আছে। লাখ লাখ মানুষ টাকা খরচ করে ঐসব ভাস্কর্য আর ছবি দেখতে ছুটে যায়। শোন, শিল্পীদের অতো বেশি লাজ-লজ্জা করলে শিল্প হয় না। ওখান থেকে তোমার যেটা ভাল লাগে তুমি সেটাই বানাও। দেখবে মানুষ লুফে নেবে। এতে দোষের কিছু নেই। ওগুলো মহৎ শিল্প।’

নীলু চুপ করে শুনলো। শোভন আবার বললো, ‘কেন আমাদের কালীও তো ন্যাংটা। তবু তো মানুষ নতজানু হয়ে তার সামনে পুজো দিচ্ছে। কেউ তো লজ্জা পাচ্ছে না। আবার শিবলিঙ্গও তো মানুষ পূজা করছে! আর বইয়ের পিছনদিকে দেখ, ভারতীয় সভ্যতার দেবদেবীর নগ্ন মূর্তির ছবিও আছে।’

নিজের নির্বুদ্ধিতার জন্য লজ্জা পেয়েছে নীলু। নিজেকে হাবাগঙ্গারাম মনে হয়েছে! আফসোস করেছে, কেন যে শুধু শুধু বোকার মতো শোভনকে প্রশ্ন করতে গেলাম! শোভন যেহেতু দিয়েছে, বইটা খারাপ হতে পারে না। অথচ সে কী ভেবেছিল? ক্লাস নাইন-টেনে পড়ার সময় তার সহপাঠী হাবিব যে রকম বাংলা চটি বই স্কুলে নিয়ে আসতো, এটাও ইংরেজি ভাষার সেই রকম বই! সেই বইতেও তো বিদেশী ন্যাংটা ব্যাটা-বেটিদের ছবি থাকতো, আর কী রগরগে বর্ণনা! শুনলে কান গরম হয়ে যেতো, তলপেটের নিচে সিরসির করতো, নিশ্বাস-প্রশ্বাস ঘন হতো, লিঙ্গ দাঁড়িয়ে যেতো! ছিঃ! শোভনের সম্পর্কে এমনটা ভাবা তার ঠিক হয়নি। তাছাড়া খারাপ বই হলে কী আর গনেশ, বুদ্ধ, বিষ্ণু মূর্তির ছবি থাকতো!

ছেলেবেলা থেকেই নীলু জেনেছে একটা বয়সের পর ন্যাংটা হওয়া অশালীন। ওদের গ্রামের মধ্যপাড়া আর পশ্চিমপাড়ার বড়লোকের ছেলেরা সিডি ভাড়া করে এনে ন্যাংটা মানুষের যৌনতা দেখতো। গ্রামের অনেকেই এটা জানতো। ওসব ছেলেরা খারাপ কাজকর্ম করে বেড়াতো। নীলু ওদের খারাপ চোখেই দেখেছে সবসময়। ঐ সমাজে থেকে নগ্নতা সম্পর্কে খারাপ ধারণা নিয়েই সে বড় হয়েছে। কিন্তু নগ্নতাও যে কখনো কখনো শিল্প হয়ে ওঠে তা সে এই প্রথম জানলো!

নীলু পাতা উল্টে একের পর এক ছবিগুলো দেখছে। ছবির নিচের ক্যাপশন পড়ছে। বেশকিছু ছবি ভাল লাগলেও একটি ছবি তার ভীষণ ভাল লেগেছে। ছবিটা মনে ধরেছে খুব, বিস্মিত হয়েছে, আবার খারাপও লেগেছে ছবির মানুষটির জন্য। এক নারীর ভাস্কর্যের ছবি। কী চমৎকার তার দেহবল্লরী! কী অদ্ভুত সুন্দর তার চুল, কপাল, চোখ, মুখ! কী চমৎকার তীক্ষ্ণ তার নাক আর ধারালো ব্যক্তিত্ব; পরিমিত বুক আর কোমর! এমন সুন্দর দেবী অথচ তার হাতদুটো কাটা! নীলুর মায়া হলো এই দেবীর প্রতি। সে ভাবতে শুরু করলো এ কিসের দেবী? তাদের যেমন বিদ্যার দেবী সরস্বতী, ধনসম্পদ এবং ঐশ্বর্যের দেবী লক্ষ্মী, শক্তির দেবী দূর্গা। তেমনি গ্রীস দেশের মানুষ এই দেবীকে কেন পুজো করে? আর এই দেবীর হাতই বা কাটলো কীভাবে? নিশ্চয় কোনো অসুর কেটে দিয়েছে! দেবী দূর্গার হাতের শূলবিদ্ধ অসুরের কথাই তার প্রথম মনে এলো। কিন্তু দেবীর সঙ্গে যুদ্ধে অসুর কেন জিতবে সে ভেবে পেলো না! এই দেবীর ছবির নিচে ইংরেজীতে লেখা Venus de Milo। এরপর সে নিচের বর্ণনা ঘেঁটে-ঘুটে এই সিদ্ধান্তে পৌঁঁছলো যে এই দেবীর নাম ভেনুস, এবং এই দেবীকেই সে সর্বপ্রথম বানাবে!
পরদিন সকাল থেকেই কাজ শুরু করলো সে। প্রায় দুই ফুট উচ্চতার একটা কাঠ বেছে নিয়ে খোদাই করতে শুরু করলো। দেড় দিনেই বেশ দাঁড়িয়ে গেল তার পছন্দের দেবী ভেনুস! এবার ঘষে-মেজে অবয়ব নিখুঁত করার পালা।

আকাশে পূর্ণিমার চাঁদ। প্ল্যাটফর্ম জুড়ে শুয়ে আছে জ্যোৎস্না। ঘরের সামনেও ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে শিমুলের শাখা-পাতার ফাঁক গলে, তবে বারান্দার লাইটের আলোর অহংকারে তা কিছুটা ম্রিয়মান। আজ তার গান গাইতে ইচ্ছে করছে। চারিদিকে খাঁ খাঁ করা জ্যোৎস্না। এমনি দিনেই কণিকা তার কাছে আসে, সাদা থান পরে। নিজেই মোড়া টেনে বসে। আজ কণিকা এলো না, রঙাবউও না। মিতেও নেই যে তাকে গান শোনাবে।

বারান্দায় বসে নীলু গুনগুন স্বরে গান গাইছে আর শিরীষ কাগজ দিয়ে ঘষছে তার ভেনুস। সে যেমন চেয়েছিল, তেমনই নিখুঁত হয়েছে। একদম খাড়া নাক, মুখ, বুক! বুকের কাছটা শিরীষ কাগজ দিয়ে ঘষছে আর আঙুলের মাথা দিয়ে কাঠের গুঁড়ো পরিষ্কার করছে। হঠাৎ-ই ডানহাতের মাঝখানের তিন আঙুলের মাথা থমকে গেল ভেনাসের বুকের ওপর। আঙুলের আলতো পরশ বুলালো ভেনাসের শক্ত স্তনে, তারপর গলায় এবং মুখে । অনুভব করলো তার ভেতরে কী যেন হচ্ছে, বুকের হাপরে কিসের যেন উত্তাপ! লোহিত স্রোতধারায় আচমকা হড়কা বানের উত্তাল ঢেউ উঠে ধাবিত হলো মস্তিষ্ক থেকে বুক এবং তলপেট হয়ে আরো নিচের দিকে! উপরের দিকে তাকিয়ে চোখ বুজে লম্বা শ্বাস নিলো সে। কয়েক মুহূর্ত পর ঘরে গিয়ে শেলফ থেকে বাঁশের মোথা দিয়ে বানানো মুখাবয়বটি নিয়ে বাতি দুটো বন্ধ করে এসে বারান্দার দক্ষিণ দিকে পা ঝুলিয়ে বসলো। দু’হাতের আঁজলায় এক নারীর মুখাবয়ব, নাক আর ঠোঁটের ওপর একফাঁলি জ্যোৎস্না হাসছে। নীলু মুখাবয়বটি নিজের মুখের কাছে নিয়ে কপালে, গালে, চিবুকে চুমু খেলো; ঠোঁট দিয়ে চেপে ধরলো জড় নারীর চঞ্চু! তার প্রাণবন্ত চুম্বনের লালায় নিষ্প্রাণ-নিরুত্তাপ চঞ্চু সিক্ত হলো। বাঁশের মোথায় তৈরি বলে চুম্বনের শোষণে সুক্ষ্ম ছিদ্রগুলো দিয়ে অল্প পরিমাণে হলেও অক্সিজেন আসায় চুম্বন ঘনিষ্ঠ হয়, মুখে যে স্বাদ পাওয়া যায় তা না নোনা না মধুর না তেতো! তবু সেই স্বাদেই সে ডুবে থাকলো কিছুক্ষণ। অতঃপর বাঁ হাতে মুখাবয়বটি ধরে ডান হাত দিয়ে লুঙ্গি তুলে মুঠোয় চেপে ধরলো পুরুষাঙ্গ। শ্বাস-প্রশ্বাস ঘন হলো, তার শরীরের ভেতর এখন প্রবল উষ্ণ রক্তোচ্ছ্বাস!

তার শরীরের আকৃতি ছোট কিন্তু মন ছোট নয়; কামনা-বাসনা, ক্ষুধা-তৃষ্ণা ছোট নয়। শরীর ক্ষুদ্র বলে জৈবিক ক্ষুধাও সীমিত নয়। শরীর শরীর চায়, বিপরীত লিঙ্গের শরীরের উত্তাপে সেঁকে নিতে চায় রক্ত-মাংস!

গাছের পাতার ফাঁক দিয়ে পূর্ণিমার চাঁদ উকি দিচ্ছে। হেসে গড়িয়ে পড়ছে জ্যোৎস্না। গায়ে জ্যোৎস্না মেখে সে আত্মরতির পঙ্খিরাজ ঘোড়ায় চেপে ভেসে গেল কণিকার কাছে!

রাঙাবউ এলে নীলু তাকে ভেনাসের ভাস্কর্য দেখিয়ে বললো, ‘দ্যাহ তো রাঙাবউ, ভেনুসের ভাস্কর্যডা কেমন অইচে?’
রাঙাবউয়ের কানে ধাক্কা লাগলো। সে ভেনাসের দিকে তাকিয়ে বললো, ‘ভেনুসের ভাস্কর্য!’

নীলু বেশ গর্বের সাথে বললো, ‘হ ভেনুস। তুমি নাম শোনো নাই? গ্রীস-ইতালি অইসব দেশের দেবী ভেনুস। শোভন আমারে যে বইডা দিছে, সেই বইতে ভেনুসের ছবি আছে। আরো অনেক দেব-দেবীর ছবি আছে। বেশির ভাগ দেব-দেবী’ই ন্যাংটা। এতে লজ্জার কিছু নাই। দোষেরও কিছু নাই। আমাগের মহাদেবও তো ন্যাংটা হয়ে পথে-ঘাটে পড়ে থাকতো। কালীও তো ন্যাংটা। শুনছি, ভারতে নাকি কুম্ভ মেলা হয়। সেই মেলা নাকি খালি ন্যাংটা সাধুদের মেলা। দাঁড়াও তোমারে বইডা দ্যাহাই।’

রাঙাবউ মনে মনে হাসলো। সখা আগে তার চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলতে পারতো না, আর এখন ন্যাংটা দেব-দেবী নিয়েও তার সাথে সাবলীলভাবে কথা বলে! সখার এই আত্মবিশ্বাস রাঙাবউয়ের ভাল লাগে। আর সে বেশ মজা পায় ভেনাসের নাম তার সখার মুখে ‘ভেনুস’ শুনে। সখা ভেবেছে যে, সে ভেনাসের নাম কখনো শোনেনি। মামাতো ভাইয়ের কল্যাণে শিল্প-সাহিত্য সম্পর্কে তার সামান্য ধারণা আছে, একথা সখা জানলেও সাত সমুদ্দুর ওপারের প্রাচীন রোমান সভ্যতার প্রেমের দেবী ভেনাস কিংবা গ্রীক রতিদেবী আফ্রোদিতির নামও যে সে জানে, এটা সখা ভাবতেই পারেনি। সখা আরো জানে না যে সে উচ্চ মাধ্যমিক পাস। এটা সে ইচ্ছে করেই গোপন করেছে সখার কাছে। যাতে সখা তার সাথে সহজভাবে মিশতে পারে। নিজেকে গুটিয়ে না রাখে।

উচ্চ মাধ্যমিকে সে এ মাইনাস পেয়েছে। এক সময়ে মধ্যম মানের ছাত্রী থাকলেও যতো উপর ক্লাসে উঠেছে ততো তার অবনতি হয়েছে। বাড়ির মানুষ, পাড়ার মানুষ কখনো ভাবেনি যে সে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করবে। তার নিজের বিশ্বাসও অমনই ছিল। তবু সে পরীক্ষা দিয়েছে এবং পাস করেছে। কিন্তু তারপরে অনার্স দূরে থাক, ডিগ্রিতেও ভর্তি হওয়া হলো না তার। তাদের বাড়ি থেকে নয় কিলোমিটার দূরে ডিগ্রি কলেজ। এর মধ্যে প্রায় দুই কিলোমিটার কাঁচা রাস্তা। তারপর গড়াই নদী পার হতে হয় নৌকায়। বাকি সাত কিলোমিটার যেতে হয় নসিমনে চেপে। এ কারণেই তার ডিগ্রিতে ভর্তি হওয়ার ব্যাপারে আগ্রহ দেখায়নি কেউ। জ্যাঠামশাই অবশ্য বলেছিল, ‘ও যদি পড়তি চায় তো ডিগ্রিতে ভর্তি হোক। মেসে থেকে পড়ুক। খরচ-খরচা যা লাগে আমি-ই দেবোনে।’

কিন্তু তার বাবা-মায়ের একেবারেই অনিচ্ছা ছিল। মেয়ে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেছে এই তো কতো, আর পড়িয়ে কী হবে! তাও যদি মাথাটা ভাল হতো, ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার হতে পারতো সে অন্য কথা। কোনোভাবে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেছে, ডিগ্রি পাস করতে পারবে কি-না তার ঠিক নেই। ওর পরের মেয়ে দুটো মাথা তোলা। তাই লেখাপড়ার ঝামেলায় আর না গিয়ে একটা ভাল ছেলে দেখে বিয়ে দিয়ে দেওয়াই উত্তম। ঠিক ঐ সময়ই ভাল ছেলের সন্ধান নিয়ে এলো বেলা মাসি। বেলা মাসিদের পাশের গ্রামে একটা উপযুক্ত ছেলে আছে। নাম তপন দাস। মাঠে জমি-জমা আছে। মুদি দোকানদার, আবার তেলের ব্যবসাও আছে। সংসারে কোনো ঝক্কি-ঝামেলা নেই। দুটো বোন ছিল বিয়ে হয়ে গেছে। এখন শুধু বুড়ি মা-টা আছে। মা একটু অসুস্থ। তাতে কী! বুড়ি মরলেই ঝাড়া হাত-পা! কবে আবার একটা-দুটো টেপি-টাপা হবে, তাদের নিয়ে সুখে-শান্তিতে সংসার কাটবে। বেলা মাসি সবই বলেছিল। কিন্তু কিছু কথা গোপন রেখেছিল তার দিদি-জামাই বাবুর কাছে। ছেলের বদ স্বভাবের কথাটা। ছেলে বাজারে মদ-জুয়ার আড্ডায় বসে আর অত্যাধিক নারী প্রীতি আছে, এই ব্যাপারটা এলাকার কমবেশি সবাই জানে। বেলা মাসিও জানে। কিন্তু বেলামাসি মানব চরিত্রের এই অধোঃপতনের দিকটা উপেক্ষা করে গেছে ছেলের টাকা-পয়সার জন্য। ভেবেছে কাঁচা বয়সের ছেলের হাতে বিয়ের আগে এমন কাঁচা টাকা থাকলে একটু পাকা স্বভাব তো হবেই! এই বয়সে মন একটু এদিক-সেদিক হয়-ই। বিয়ের আগে বেশিরভাগ পুরুষেরই একটু বাইরে বাইরে মন থাকে, বিয়ের পর ঘরে বউ এসে যখন লাগাম টেনে ধরে তখন আবার ঘরমুখো হয়! পাকা গৃহস্থ হয়। এ চিরকেলে কথা! এমনটাই হয়ে আসছে, দেখে আসছে সবাই। এতে দোষের কিছু নেই। বিয়ের পর বেলা মাসি একদিন বলেছিল, ‘বিয়ে-থা’র ব্যাপারে ছেলের দেখতি হয় ভবিষ্যত আর মেয়ের অতীত।’
সুতরাং বি, এ ভর্তি হওয়া হয়নি রাঙাবউয়ের। বিয়েটাই হয়ে গেছে তপনের সাথে।

সেই বেলা মাসির মেয়ে রুপালী এখন অতীত বিসর্জন দিচ্ছে তার সংসারে আগুন জ্বালিয়ে রেখে। জামাইবাবুর বাড়িতে শ্যালিকা যখন-তখন বেড়াতে আসে। পাড়ার লোকজনও এতে দোষের কিছু দ্যাখে না। বেলা মাসিকে বলেও কোনো লাভ হয় না। কারণ তার সংসার খরচের বড় একটা অংশের যোগান দিচ্ছে তপন। এছাড়াও দোকানের ডাল, তেল-সাবান, মসলাপাতি তো আছেই।

ম্যাগাজিনের পাতায় চোখ বুলিয়ে পুনরায় সখার ভেনুসের প্রশংসা করলো রাঙাবউ। সখার চোখ-মুখে আনন্দের অভিব্যক্তি। এই অভিব্যক্তির ভাষা পড়তে পারে রাঙাবউ। সখার এই অভিব্যক্তি তার দারুণ লাগে! সখার ভুল শুধরে ভেনুসকে আর ভেনাস করতে চায় না সে, তাতে সখার এই অভিব্যক্তি যদি ম্লান হয়ে যায়! যদি সখা লজ্জা পায়! ভেনাস তো সব জায়গায়-ই ভেনাস। সারা পৃথিবীর মানুষের কাছে ভেনাস নামেই অমর হয়ে আছে। থাকুক না একজন মানুষের কাছে আলাদা নামে, ভেনুস হয়ে! বিখ্যাত রোমান প্রেমের দেবী অঁজো পাড়াগাঁয়ের এই অখ্যাত শিল্পীর কাছে, তার সখার কাছে ভেনুস হয়েই থাকুক না, ক্ষতি কী!

ভেনাসের ভাস্কর্য বানানোর সময়ই ভাবনাটা মাথায় এসেছিল আর ভেনাস শেষ করার পর পুরো একটা দিন কোনো কাজে হাত না দিয়ে শুধু ভেবে ভেবেই পার করে দিলো নীলু। তার স্বজন, ভাই, পরম আত্মীয়; অনেককাল আগে শুধুমাত্র তপস্যা করার কারণে রামচন্দ্র যাকে নৃশংসভাবে খুন করেছে, সেই শম্বুকের ভাস্কর্য বানাবে সে। কাল রাত আর আজ সারাদিন সে শম্বুকের সাথে অতিবাহিত করেছে কল্পনার গহীন বনে। রান্না করেছে, বাজারে গেছে, স্নান করেছে, ভাত খেয়েছে কিন্তু সারাক্ষণ তার মনের বনে হেঁটেছে-চলেছে-তপস্যা করেছে শম্বুক। রামায়ণ পড়ার সময় শম্বুকের মুখাবয়ব নিয়ে ভাবার চেয়ে ওকে হত্যার ব্যথাটাই বেশি অনুভব করেছিল সে, আর মনের মধ্যে শম্বুকের যে মুখাবয়ব তৈরি হয়েছিল সেটা ভাসা ভাসা। তাই শিল্প সৃষ্টির তাড়নায় এখন আবার শম্বুককে নিয়ে নতুন করে ভাবতে বসেছে। কল্পনার গহীন বনে শম্বুকের সাথে বাস করতে গিয়ে সে অনেক আত্মপ্রশ্নের মুখোমুখি হয়েছে, কোনো কোনো প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পেয়েছে, আর কোনো কোনো প্রশ্নের উত্তর এখনো সন্ধান করছে। শম্বুকের বয়স কতো ছিল? শম্বুক কি তার মতোই তরুণ ছিল, নাকি মধ্যবয়সী কিংবা বৃদ্ধ? শম্বুক দেখতে কেমন ছিল? তার মতো বামন নিশ্চয় নয়, মাঝারি গড়নের। গায়ের রঙ নিশ্চয় তারই মতো কালো ছিল। মাথায় ঈষৎ কোঁকড়া ঘন চুল, চিকন শরীর আর মুখের গড়নও চিকন ছিল। আচ্ছা ওর মুখে তিল কিংবা শরীরের কোথাও কোনো আঁচিল ছিল? না থাক, তিল দেবার দরকার নেই আর আঁচিল তার ভীষণ অপছন্দের। শম্বুকের মা-বাবা ছিল? ভাই-বোন ছিল? নিশ্চয় ছিলো। আচ্ছা, তার যেমনি কণিকা তেমনি শম্বুকের কোনো মনের মানুষ ছিল না? শম্বুকও কি তাকে পায়নি, তাই বুঝি সব ছেড়ে তপস্যায় মন দিয়েছিল? হতেও পারে আবার নাও পারে। রাম ওকে মেরে ফেলার পর নিশ্চয় ওর বাবা-মা খুব কেঁদেছিলেন, ও যদি কাউকে পছন্দ করতো তবে সে অন্যত্র সংসার করলেও ওর মৃত্যুসংবাদ শুনে নিশ্চয় তারও কষ্ট হয়েছিল খুব। যে অরণ্যে তপস্যা করছিল নিশ্চয় সেই অরণ্যের গাছে গাছে অনেক পাখি ছিল। সেখানে কোনো সরোবর থাকলে নিশ্চয় সেই সরোবরের জলে অপার আনন্দে জলকেলি করছিল বালিহাঁস আর জলপিপির ঝাঁক, হয়তো একটা-দুটো পানকৌড়ি কিংবা ডাহুকও ছিল।

রামচন্দ্র যখন তার খড়গের আঘাতে শম্বুকের শিরোচ্ছেদ করেন তখন গাছের পাখিগুলো এবং সরোবরের বালিহাঁস-জলপিপির ঝাঁক নিশ্চয় আঁৎকে উঠেছিল সেই নৃশংস দৃশ্য দেখে, আতঙ্কে উড়ে গিয়েছিল! তার আগে ওরা হয়তো কোনোদিন অমন পৈশাচিক দৃশ্য দ্যাখেনি!
রাতে ঘুমের মধ্যেও ঘুরে ফিরে এলো শম্বুক, শম্বুকের পরিপূর্ণ অবয়ব এবং ভাস্কর্যের নকশা পুরোপুরি মনের মধ্যে গেঁথে পরদিন সকালেই হাতুরি-বাটালি হাতে নিয়ে আড়াই ফুট উচ্চতার একটা গাছের গুঁড়ি খোদাই করতে শুরু করলো নীলু।

এদিকে রাঙাবউ তার শাশুড়িকে নিয়ে মহাব্যস্ত। শাশুড়ির প্রাণপাখি উড়ে যাবার জন্য একবেলা তল্পিতল্পা গুটায় তো আরেকবেলা তল্পিতল্পা ছড়িয়ে আরো জেঁকে বসে টনটন করে কথা বলে! তার ওপর দুই ননদ ছেলে-মেয়ে নিয়ে তাদের মাকে দেখতে আসায় রাঙাবউয়ের ব্যস্ততা দ্বিগুণ বেড়েছে। একদিকে শাশুড়িকে সামলাতে হয়, আরেকদিকে এতোগুলো মানুষের রান্নাবান্নার কাজ, নাভিশ্বাস উঠে যায় তার। একা হাতে কেমন করে সে এতোসব সামলায় তা ভেবে নিজেই অবাক হয়ে যায়। বাবার বাড়ি যৌথ পরিবার হলেও কোনোদিনও তাকে এমন খাটতে হয়নি, মা-জেঠিরাই সব সামলাতো। সঙ্গত কারণেই রাঙাবউ তার সখার খবর নেবার সময় পায় না, দুই ননদের চোখ ফাঁকি দিয়ে তার কাছে যাবার সাহসও করে না। বেশ কয়েকদিন তাকে না দেখে তার সখাই একদিন এলো, ননদদের দেখে কলতলায় দাঁড়িয়ে ছল করে বললো, ‘বৌদি এট্টা গিলাস দেবেন, এট্টু জল খাব।’

নীলুর মুখে বৌদি সম্বোধন শুনে খুব হাসি পেলো রাঙাবউয়ের। গ্লাস আনার ছুতোয় ঘরে গিয়ে মুখে আঁচল চেপে গোপনে হাসলো কিছুক্ষণ। তারপর গ্লাস নিয়ে গিয়ে নিজেই টিউবয়েল থেকে জল ভরে বাড়িয়ে দিলো তার সখার দিকে। অর্ধেক গ্লাস জল খেয়ে নীলু বললো, ‘বাঁচালেন বৌদি, গিছিলাম মাটিপাড়া, বাপরে রোদ পড়ছে আজ!’
রাঙাবউ মুখ টিপে হাসলো। সে জানে নীলু ডাহা মিথ্যে কথা বলছে। মাটিপাড়া যায়নি, এসেছে তার সঙ্গে দেখা করতে।
‘জেঠিমার শরীর কেমন?’
‘এই ভাল, আবার এই খারাপ।’

বারান্দায় বসে ছোট ছেলেকে ভাত খাওয়াতে থাকা বড় ননদের দিকে তাকিয়ে নীলু বললো, ‘ভাল হলি-ই ভাল। দিদিরা দ্যাখপার আইছে না?’
‘হ।’
বাকি অর্ধেক জল খেয়ে বললো, ‘আর এক গিলাস খাই।’
বলে নিজেই টিউবয়েল থেকে গ্লাস ভরে নিলো। সময় নিয়ে গ্লাসে কয়েকবার চুমুক দিলো। তারপর রাঙাবউয়ের দিকে গ্লাস বাড়িয়ে দিয়ে বললো, ‘যাইগে বৌদি।’

রাঙাবউ গ্লাস হাতে নিতে গিয়ে দেখলো জল ভরা! বুঝলো, কালক্ষেপণ করার জন্যই তার সখার এই ছল! রাস্তায় নেমে বড় ননদের চোখের আড়ালে গিয়ে পিছন ফিরে রাঙাবউয়ের দিকে তাকিয়ে মুখ টিপে হাসলো নীলু। ননদের দৃষ্টিসীমায় থাকায় রাঙাবউয়ের ঠোঁট হাসলো না বটে, তবে হাসলো তার মন আর নয়ন!

রাঙাবউয়ের শাশুড়ির প্রাণপখি যাই যাই করেও এবারের মতো বন্দী-ই রইলো জীর্ণ দেহের খাঁচায়! মায়ের আদর-যত্নে যেন ত্রুটি না হয়, সময়মতো যেন তাকে খাওয়ানো-নাওয়ানো হয়, ওষুধ খাওয়ানোর কথা যেন কখনোই ভুল না হয়, মায়ের বিছানা-কাঁথা যেন ঘন ঘন স্যাভলন দিয়ে পরিষ্কার করা হয় ইত্যাদি বিষয়ে বারবার উপদেশ-আদেশ দিয়ে ননদরা যার যার বাড়ি চলে গেলে প্রায় পনেরদিন পর এক পড়ন্ত বিকেলে রাঙাবউ তার সখার কাছে যাবার জন্য মনস্থির করলো।

নীলু ঘরের মেঝেতে বসে তাকিয়ে আছে শম্বুকের ভাস্কর্যের দিকে। ভাস্কর্যটি আজই শেষ হয়েছে। শম্বুকের ভাস্কর্যের কাজটি সে করেছে সময় নিয়ে নিজের সবটুকু নিঙড়ে দিয়ে। যখন কাজে বসতো তখন যেন বর্তমান সময়ে থাকতো না সে, থাকতো রামায়ণের কালের সেই ঘন অরণ্যে, যেখানে শম্বুক তপস্যা করতো, যেখানে ধারালো খড়গের আঘাতে নৃশংসভাবে তার শিরোচ্ছেদ করেছিলেন রামচন্দ্র। নীলুর নির্মিত ভাস্কর্যটি অভিনব-বেদির ওপর শিকড়সহ একটি বৃক্ষের কাণ্ড, সেই কাণ্ডটিই ক্রমশ সরু হয়ে ডানদিকে ঝুঁকে শাখায় রূপান্তরিত হয়েছে, শম্বুকের ধড়ের নিন্মাংশ অর্থাৎ কোমর পর্যন্ত মিশে আছে কাণ্ড এবং শাখার সাথে, আর উর্ধ্বাংশ শাখা থেকে ঝুলে আছে নিচের দিকে, বাঁ হাতের তালুতে ধরা নিজের ছিন্ন মস্তক, ডান হাত দিয়ে ধরে আছে শাখা; যেন রামচন্দ্রের খড়গের আঘাতে ক্রমশ নিচের দিকে পড়তে থাকা নিজের ছিন্ন মস্তকটি তড়িৎ গতিতে বাঁ হাতে ধরে ফেলেছে ভূপতিত হবার আগেই! আর শাখার আগার দিকে ছোট্ট একটি পাখি উড়ে যেতে উদ্যত হয়েছে।

শম্বুকের ভাস্কর্যটি শেষ করতে পেরে আজ যেমন ভীষণ ভাল লাগছে নীলুর, তেমনি কষ্টও হচ্ছে। বড্ড নিঃসঙ্গ লাগছে তার। মনে হচ্ছে হঠাৎ সে শম্বুকের সঙ্গ থেকে বিছিন্ন হয়ে পড়েছে। কাজটিতে হাত দেবার কয়েকদিন আগে থেকে শম্বুকের সাথে তার বসবাস শুরু হয়েছিল, না ঘুমানো পর্যন্ত শম্বুক তার সাথেই থাকতো। কখনো দু-জনে বারান্দায় কিংবা প্ল্যাটফর্মে পা ঝুলিয়ে বসে গল্প করেছে, আবার কখনো দু-জনে একসাথে ঘুরে বেড়িয়েছে অরণ্য কিংবা সরোবরের পাড়ে, গায়ে জ্যোৎস্না মেখে রাত ভোর করেছে। এখন মনে হচ্ছে ভাস্কর্য শেষ হবার সঙ্গে সঙ্গে শম্বুক হঠাৎ তাকে ছেড়ে চলে গেছে। এখন তার সামনে আছে প্রাণহীন কাঠের শম্বুক! শম্বুকের বিরহে নীলু কেমন আচ্ছন্ন হয়ে বসে আছে ভাস্কর্যের সামনে, দরজায় মানুষের ছায়ার আবির্ভাব বুঝে যতোক্ষণে সে পিছনে তাকালো ততোক্ষণে ঘরে ঢুকে বিছানায় বসে পড়েছে রাঙাবউ, ‘কেমন আছ সখা? ওমা! তোমার চোখে জল ক্যান, কী হয়চে তোমার?’

শম্বুকের কথা ভাবতে ভাবতে নিজের অজান্তে কখন তার চোখে জল চলে এসেছে তা টেরই পায়নি নীলু। কিছুটা লজ্জিত হয়ে চোখ মুছে সে বললো, ‘কিছু না, এমনি।’
‘এমনি এমনি কেউ কাঁদে? কী হয়চে সত্যি কথা বলো তো?’

নীলু শম্বুকের আখ্যান শোনালো রাঙাবউকে। শম্বুকের সঙ্গে তার সখ্যতার কথা, ভাস্কর্য বানানোর কথা বললো। রাঙাবউ শুনতে শুনতে বিস্ময়ে তাকিয়ে রইলো বৃক্ষশাখা থেকে ঝুলে হাতের তালুতে আপন মস্তক ধরে রাখা শম্বুকের দিকে।

(চলবে...


গাওয়াল (উপন্যাস: পর্ব-এক)
গাওয়াল (উপন্যাস: পর্ব-দুই)
গাওয়াল (উপন্যাস: পর্ব-তিন)
গাওয়াল (উপন্যাস: পর্ব-চার)
গাওয়াল (উপন্যাস: পর্ব-পাঁচ)
গাওয়াল (উপন্যাস: পর্ব-ছয়)
গাওয়াল (উপন্যাস: পর্ব-সাত)
গাওয়াল (উপন্যাস: পর্ব-আট)
গাওয়াল (উপন্যাস: পর্ব-নয়)
গাওয়াল (উপন্যাস: পর্ব-দশ)
গাওয়াল (উপন্যাস: পর্ব-এগারো)
গাওয়াল (উপন্যাস: পর্ব-বারো)
গাওয়াল (উপন্যাস: পর্ব-তেরো)








মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১২ ই আগস্ট, ২০১৮ দুপুর ১:১৬

বিজন রয় বলেছেন: আগে পড়িনি।
সময় পেলে পড়বো।

১২ ই আগস্ট, ২০১৮ বিকাল ৩:৩৮

মিশু মিলন বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ।

২| ১২ ই আগস্ট, ২০১৮ বিকাল ৫:২৪

রাজীব নুর বলেছেন: আগের পর্ব গুলো কি আমি পড়েছি?
লিংক গুলো দিয়ে দিলে ভালো হতো।

১৩ ই আগস্ট, ২০১৮ রাত ১:২৪

মিশু মিলন বলেছেন: লিংক দিয়েছি। ২০১১-১২ সালে লেখা উপন্যাস। ২০১৬ সালে ধারাবাহিকভাবে সামুতে প্রকাশ শুরু করেছিলাম। ১৩ পর্ব প্রকাশ করার পর অন্য একটা কাজে এতো ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলাম যে আর প্রকাশ করা হয়নি। ১৪ পর্ব থেকে আবার প্রকাশ শুরু করলাম।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.