নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি বর্তমানে ইস্টিশন এবং সামহোয়্যার ইন ব্লগে লিখি। আমার সকল লেখা আমি এই দুটি ব্লগেই সংরক্ষণ করে রাখতে চাই। এই দুটি ব্লগের বাইরে অনলাইন পোর্টাল, লিটল ম্যাগাজিন এবং অন্য দু-একটি ব্লগে কিছু লেখা প্রকাশিত হলেও পরবর্তীতে কিছু কিছু লেখা আমি আবার সম্পাদনা করেছি। ফলে ইস্টিশন এবং সামহোয়্যার ইন ব্লগের লেখাই আমার চূড়ান্ত সম্পাদিত লেখা। এই দুটি ব্লগের বাইরে অন্যসব লেখা আমি প্রত্যাহার করছি। মিশু মিলন ঢাকা। ৯ এপ্রিল, ২০১৯।
কার্তিকের হালকা কুয়াশা-মাখা বিকেল। পূর্ব পৃথিবীর সূর্য এখন অন্তিমলগ্নের মুমূর্ষু মানুষের মতো রৌদ্রের জিভ বাড়িয়ে শেষবারের মতো লেহন করছে পুকুরের পূর্বদিকের জল, পশ্চিম অংশে পড়েছে গাছের ঘন ছায়া। নীলু এবং ডালিম দু-জনে পুকুরের পূর্বদিকের রোদ্দুরমাখা অংশে ডিঙ্গি নৌকায় ভাসছে।
নীলুর মাথায় মাঝে মাঝে অদ্ভুত খেয়াল চাপে। আর সেই খেয়াল থেকেই স্টেশন মাস্টারের অনুমতি নিয়ে কিনেছে একটা ডিঙ্গি নৌকা। ছেলেবেলায় নৌকায় চড়ার ভীষণ সখ ছিল তার। কিন্তু ইচ্ছে মতো সখ পূরণ করতে পারতো না। কখন গগন মাঝি ঘাটে নৌকা রেখে বাড়ি কিংবা হাটে যাবে সেই সুযোগের অপেক্ষায় ওৎ পেতে থাকতো। একদিন বিকেলে সুজিত আর সে নৌকার দড়ি খুলে বৈঠা দিয়ে নৌকা চালাতে লাগলো। তখন বর্ষাকাল। কুমার নদে প্রচুর স্রোত। আর তাদের বয়সও তখন দশ-এগার বছর। দশ-এগার বছরের দুটি ছেলে কী করে অমন স্রোতে নৌকা সামলাবে! নৌকা স্রোতে ভেসে যেতে লাগলো। তারা প্রাণপণ চেষ্টা করেও নৌকা কূলে ভেড়াতে পারলো না। তখন ভয়ে দু-জনেই চিৎকার করে কাঁদতে শুরু করলো। ততোক্ষণে তাদের নৌকা অনেক দূরে চলে গেছে। শেষে বেদে বহর থেকে একটি নৌকা এসে তাদের নৌকা থামালো। বেদে দলের একজন তাদের নৌকা বেয়ে যথাস্থানে দিয়েও গেল। তবু তাদের শেষ রক্ষা হলো না। কারো কাছে হয়তো তাদের নৌকায় ভেসে যাওয়ার খবর গগন মাঝি শুনেছিল। পরে একদিন গগন মাঝি তাদের দু-জনকে রাস্তায় পেয়ে কান মলে দিয়েছিল।
মিতে এলে রাতেবেলা নৌকায় ভাসতে ভাসতে দু-জনে গান গাইবে। বর্ষাকালে প্রবল বৃষ্টিতে ছাতা মাথায় দিয়ে নৌকায় বসে থাকবে। ছাতার উপরে বৃষ্টির ফোঁটার শব্দ শুনতে শুনতে একসময় ছাতা উল্টো করে ভাসিয়ে দেবে পুকুরের জলে। পুকুরের জলে ছোট বড় অসংখ্য বৃষ্টির ফোঁটা ফুলের মতো ফুটবে। বৃষ্টির ফুল! ভিজতে ভিজতে দু-জনে ফুল ফোটার মিষ্টি শব্দ শুনবে। ডালিম এমনিতেই বলে, ‘বুঝলে মিতে আমি হলাম বৃষ্টির ফুল। গন্ধ-বাসনা কিছু নাই, আবারও ফল অয় না। এমনি এমনি আইছি, আবার এমনি এমনি-ই চলে যাব।’
রাঙাবউকে নিয়েও নৌকায় ভাসতে ইচ্ছে করে নীলুর। কিন্তু সাহসে কুলোয় না, যদি কেউ দেখে ফেলে! এইসব কিশোরসুলভ আবেগে ভেসে আর ছেলেবেলার সেই অপূরণীয় সাধ পূরণ করতেই নৌকা কিনেছে নীলু।
স্টেশন মাস্টারের বাড়ি থেকে বেরিয়ে পুকুরের পূর্বপাড় ধরে দুলকি চালে যাবার সময় ওদেরকে নৌকায় দেখে থমকে দাঁড়ালো ভুলু। ওদের দু-জনের মুখের দিকে তাকিয়ে কয়েক মুহূর্ত কী ভাবলো কে জানে! তারপর বার দুয়েক নিজের ঠোঁট চেটে ধীর লয়ে হাঁটতে হাঁটতে গিয়ে বসলো স্টেশন ঘরের বারান্দায়। বিকেল রাঙিয়ে ডালিম গাইছে গান-
‘মনের মানুষ পাইলে সই গো
খাইয়া ভাবের তাড়ি
চুল ছাড়িয়া তার নাওয়ে
পাল উড়াইতে পারি।
মনের মানুষ বোঝে সই গো
মনের গোপন আঁচ
মনের মানুষ চেনে সই গো
মনের আনাচ-কানাচ।
মনের মানুষ থাকলে কাছে
সকাল-সন্ধ্যা আড়ি
মনের মানুষ গেলে দূরে
খাঁ খাঁ করে মনবাড়ি।’
গানের ভেতরই মাইকের ঘোষণা কানে আসছিল। এখন আরো কাছে এসেছে। গান শেষ হতেই মাইকের ঘোষণায় কান পাতলো ডালিম-‘ভাইসব, ভাইসব, হই হই কাণ্ড আর রই রই ব্যাপার! যাত্রা, যাত্রা, যাত্রা...। অদ্য রাত্রি দশ ঘটিকায় বাজার প্রাঙ্গণে অভিনীত হইবে সুদূর যশোর মনিরামপুর থেকে আগত প্রখ্যাত আনন্দ অপেরার বিখ্যাত ঐতিহাসিক যাত্রাপালা সোহরাব-রুস্তম, সোহরাব রুস্তম, রুস্তম... রুস্তম....রুস্তম...। সঙ্গে থাকছে কোকিলকণ্ঠী গায়িকার সংগীত পরিবেশনা আর একঝাঁক উড়ন্ত বলাকার দূরন্ত নৃত্য। অদ্যরাত্রে যাত্রা প্যান্ডেলে ঝংকার তুলবেন আপনার স্বপ্নের রানি, কোটি কোটি দর্শকের মন মাতানো, হৃদয় দোলানো ড্যান্সার প্রিন্সেস আনিকা, আনিকা, আনিকা....। হ্যাঁ ভাই, প্রিন্সেস আনিকা, যেন স্বর্গ থেকে নেমে আসা এক নর্তকী! ভাইসব, দলে দলে চলে আসুন বাজার প্রাঙ্গণে। আর উপভোগ করুন মনোরম যাত্রাপালা এবং ধবল বলাকা প্রিন্সেস আনিকার মন মাতানো নৃত্য! ভাইসব, ভাইসব, হই হই কাণ্ড আর রই রই ব্যাপার, যাত্রা যাত্রা যাত্রা......!’
প্রতি বছর এই সময়টায় বাজারে যাত্রাদল আনে বাজার কমিটি। ঘোষণা শুনে ডালিমের ভেতর যাত্রা দেখার বাসনা চাগাড় দিয়ে উঠলো। সোহরাব-রুস্তম যাত্রপালার কথা সে ছোটবেলা থেকেই শুনে আসছে। কিন্তু দেখা হয়নি কখনো। ছোটবেলায় যখন সে বাড়িতে বাবা-মা’র কাছে থাকতো, যখন সে হাসান ছিল, তখন বাড়ির বড়দের মুখে, পাড়া-পড়শিদের মুখে সোহরাব-রুস্তম যাত্রাপালার কথা অনেক শুনেছে। আরেকটু বড় হয়ে স্কুলের সহপাঠীদের মুখেও শুনেছে। খুব ছোটবেলায় একবার সে বাবা-মা, চাচা-চাচীদের সঙ্গে যাত্রা দেখতে গিয়েছিল। কখনো মায়ের কোলে, কখনো চাচীর কোলে, আবার কখনো চাচার কাঁধে চড়ে দেড় মাইল পথ পাড়ি দিয়ে তবেই পৌঁছেছিল যাত্রা
প্যান্ডেলে। সেই যাত্রাপালার নাম মনে রাখার মতো বয়স তখন তার নয়। কাহিনীও মনে নেই। শুধু মনে আছে ইয়া মোটা-লম্বা এক রাজা ছিলেন। তার গায়ে ছিল ঝকমকে পোশাক, গলায় মালা, মাথায় মুকুট আর কোমরে তরবারি। সেই তরবারি তিনি একজনের পেটে ঢুকিয়ে দিয়েছিলেন। আহত লোকটা পেটে হাত দিয়ে কাতরাতে কাতরাতে চলে গিয়েছিল মঞ্চ ছেড়ে। খুব ভয় পেয়েছিল সে। চাচার কোলে বসেই বারবার তাকিয়েছিল মঞ্চের পিছনদিকে। ভেবেছিল লোকটা মরে গেছে। তারপর বড় হয়ে বার দুয়েক যাত্রা দেখেছে সে। দুটোই সামাজিক যাত্রাপালা। সোহরাব-রুস্তম অদেখাই রয়ে গেছে। তাই মাইকে ঘোষণা শুনে ইচ্ছে এবং পুরনো স্মৃতি দুটোই জেগে উঠলো তার। খুব উচ্ছ্বাস নিয়ে নীলুকে বললো, ‘অনেক দিন যাত্রা দেহিনে। চলো মিতে আজকে যাত্রা দেহি।’
নীলু যেন চমকে উঠলো, ‘এহন কী যাত্রা অয় যে তুমি দ্যাকপা! শুনলে না ধবল বলাকা প্রিন্সেস আনিকা...!’
‘গোল্লায় যাক পিনছেস-ফিনছেস! আমরা দ্যাকপো যাত্রা। সোহরাব-রুস্তম যাত্রাপালার কতা কতো শুনছি কিন্তু দ্যাহা হয় নাই। আমার খুব ইচ্ছে দ্যাহার। তুমি না কোরো না মিতে। চলো যাই।’
নীলু নাক সিটকে বললো, ‘সাত-আট বছর আগে আমি একবার যাত্রা দ্যাকপার গিছিলাম। সে কী উদ্দাম নাচ রে বাবা! আমি তো এহেবারে বেকুব বনে গেলাম। কী দ্যাখপার আসে কী দেহি! শরমে আর বাঁচিনে। দোষ অবশ্য দর্শকেরই। এক অঙ্ক নয় অতি-ই নাচের জন্যে চিল্লায়।’
‘নাচের সময় শরম লাগে তো তুমি প্যন্ডেলের বাইরে চলে আসো। আবার যাত্রা শুরু অলি ভিতরে যায়ো। আমার জান, সোনা। চলো ডার্লিং। টিকিট আমি কাটপানে।’
ডালিমের বলার ধরন দেখে নীলু হেসে ফেললো। বললো, ‘আচ্ছা যাবানে তোমার যহন এতো সখ হইছে। তয় টিকিট কিন্তু আমি কাটপো।’
ডালিম হাসলো, ‘সে দ্যাহা যাবেনে। আগে যাই তো।’
ডালিম সে-ই যে বৃষ্টির রাতে বিধ্বস্ত অবস্থায় এসেছিল, চলে গিয়েছিল পরদিন বিকেলেই। সে রাতে বড় আঘাত নিয়ে এসেছিল ডালিম। আঘাতের ক্ষত শুকানোর জন্য সে যতো ছটফট করছিল, ক্ষতস্থান থেকে ততোই রক্ত ঝরছিল। তাই পরদিন বিকেলেই জোর করে বেরিয়ে পড়েছিল সে।
সে রাতে ডালিম এক বাড়িতে গায়েহলুদের অনুষ্ঠানে নেচে নীলুর কাছে আসছিল ইউনিয়ন পরিষদ অফিসের সামনে দিয়ে। হঠাৎ জোরে বৃষ্টি আসায় দৌড়ে ইউনিয়ন পরিষদ অফিসের বারান্দায় আশ্রয় নিয়েছিল। অফিসে তখন ছিল নবিয়াল মেম্বার আর তার দুই সাগরেদ ফারুক এবং সুজন। তিনজনে মদ আর গাঁজার আসর বসিয়েছিল। তারা ডালিমকে দেখে ভেতরে ডেকে বসিয়ে তার দিকে বাড়িয়ে দিয়েছিল মদের গ্লাস।
‘আমি খাব না মেম্বার সাব।’ অনিচ্ছা প্রকাশ করে ডালিম।
‘আরে খা না, খা। খাইলে এই বৃষ্টির মধ্যে শরীরে জোশ আসপেনে, খা।’ বলে নবিয়াল মেম্বার।
ডালিম যে একেবারেই মদ্যপান করে না তা নয়, মাঝে মধ্যে পান করে। মেম্বার এবং তার সাগরেদদের জোরাজুরিতে সে গ্লাসে চুমুক দেয়। বাইরে তখন অঝোর ধারায় বৃষ্টি পড়ছে। প্রথমটা শেষ হলে মেম্বার দ্বিতীয় পেগ এগিয়ে দেয় তার দিকে। না, না, করেও ডালিম পুনরায় গ্লাসে চুমুক দেয় মেম্বারের জোরাজুরিতে। দু-পেগেই ডালিমের বেশ নেশা হয়। কারণ মেম্বার কৌশলে তার পেগ বড় দেয়। সাগরেদ ফারুক ততোক্ষণে গাঁজা ধরিয়েছে। সুজনের হাত ঘুরে গাঁজা গেল মেম্বারের হাতে। মেম্বার দু’টান দিয়ে গাঁজা বাড়িয়ে দেয় ডালিমের দিকে। ডালিম গাঁজা খায় না। কিন্তু মেম্বার নাছোড়বান্দা, দুটো টান তাকে দেওয়াবেই। বাধ্য হয়ে গাঁজায় দুটো টান দিতেই মদের নেশার সাথে গাঁজার নেশার সঙ্গমে ডালিম যেন শূন্যে ভাসতে থাকে! চেয়ারের হাতল ধরে রাখে শক্ত করে।
মেম্বার উঠে এসে ডালিমের পাশে দাঁড়িয়ে তার কানের পাশের চুলের সরু গোছা নিজের ডানহাতের তর্জনীর মাথায় জড়াতে থাকে। উত্তপ্ত নিশ্বাস ফেলে নেশায় শিথিল ডালিমের কপালে, কপোলের ডান পাশে। তারপর দরদ মাখানো গলায় বলে, ‘তোর ভেতরে আগুন আছে ডালিম, তুই মিয়ামানুষ অলি এলাকার তামাম বিটামানুষ তোর আগুনে পুড়ে মরতো! এই জন্যেই আল্লায় তোরে মিয়ামানুষ বানায় নাই!’
ঘোরের মধ্যেও ডালিম মেম্বারের উদ্দেশ্য বুঝতে পেরে হাত সরিয়ে দিয়ে শান্ত গলায় রসিকতার ঢংয়ে বলে, ‘মেম্বারসাবের মনে তো অনেক রঙ! এই রঙ অজায়গায় খরচ না করে ভাবির জন্যে রাহে দ্যান।’
মেম্বার ডালিমের কানের লতিতে সুরসুরি দিতে থাকে। ফারুক আর সুজন তা দেখে হাসে আর সিগারেটের ধোঁয়ার রিং ভাসিয়ে দেয় ডালিমের দিকে।
‘আমি আসি মেম্বারসাব।’ বলেই চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ায় ডালিম। হেঁচকা টানে ডালিমকে আবার চেয়ারে বসিয়ে দেয় নবিয়াল, ‘বস, কই যাবি? বাইরে তো বৃষ্টি!’
ডালিম আবার উঠতে গেলে বিরক্ত হয় নবিয়াল, ‘আহ্! বস না। বৃষ্টির রাত, কেমন ঠাণ্ড ঠাণ্ডা। তোর আগুনে এট্টু হাত-পা ছেঁকি আমরা!’
ফারুক আর সুজন শব্দ করে হাসলে মেম্বার ধমকায় ওদের। ডালিম পুনরায় জোর করে উঠে চেয়ার সরিয়ে বাইরে যাবার উদ্যোগ করতেই ফারুক এবং সুজন দু-দিক থেকে ডালিমকে চেপে ধরে। প্রায় উঁচু করে তাকে নিয়ে যায় ভেতরের ঘরে। ওদের পিছন পিছন যায় নবিয়াল।
তখনও বাইরে অঝোর ধারায় বৃষ্টি পড়ছে, ক্ষ্যাপা ষাঁড়ের মতো গজরাতে গজরাতে চোখ রাঙাচ্ছে আকাশ। প্রকৃতিতে শীতল আবেশ আর ভেতরের ঘরে ডালিমের শরীরের উত্তাপে নিজেদের হাত-পা এবং শরীর ছেঁকতে থাকে একজন জনপ্রতিনিধি এবং তার দুই চ্যালা।
অনেকক্ষণ পর ডালিমকে ধাক্কাতে ধাক্কাতে ভেতরের ঘর থেকে নিয়ে আসে ওরা। সুজন টেবিলে থাকা মদের গ্লাস হাতে নিয়ে একটা চুমুক দিয়ে বাকিটা ছুড়ে দেয় ডালিমের মুখে, ডালিমকে ভেতরের ঘরে নিয়ে যাবার সময় ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে ডালিম সজোরে একটা চড় কষেছিল ওর গালে।
বিধ্বস্ত ডালিম নেশায় টলতে থাকে। প্রতিবাদের শক্তি নেই, প্রতিরোধের বাঁধ ভেঙেছে আগেই। তবু সে ওদেরকে দেখে নেবার হুমকি দেয়। এরপর ধাক্কাতে ধাক্কাতে তাকে বারান্দায় নিয়ে আসে সুজন আর ফারুক। ঘটনা চেপে যাবার জন্য তাকে শাসায়, ভয় দেখায়। ওদের চোখ রাঙানির পাল্টা জবাবে খিস্তি করলে ওরা পাছায় লাথি মেরে বারান্দা থেকে ডালিমকে নামিয়ে দেয় বৃষ্টিভেজা অন্ধকারে।
নীলুর কাছ থেকে ডালিম যেদিন চলে যায় তার সপ্তাহ খানেক পরেই ধুন্ধুমার কাণ্ড ঘটে বাজারে। নবিয়াল মেম্বার গণেশ ময়রার দোকানে বসে চা খাচ্ছিল শুক্রবার হাটের দিন বিকেলবেলা। সঙ্গে সুজন এবং আরো কয়েকজন, ফারুক ছিল না। চলছিল তাদের রাজনৈতিক আলাপ- ‘আবুলের সাথে তমিজের জমি নিয়ে মামলার বিষয়টা ফয়সালা করা দরকার’; ‘হান্নান তার দুই নম্বর বউডারে তালাক দিছে, কিন্তু কাবিনের টাহা এহনও শোধ করে নাই, ব্যাপারডা নিয়ে দুই পক্ষের সাথে বসা দরকার, দুই পক্ষের কাছ থেকেই কিছু টাহা খসানোও দরকার;’ ‘নিজাম আলীর মেজো মিয়াডার প্যাট বাঁধাইছে আশরাফের ছাওয়াল মামুন, চোতমারানীর পুত কামডাও ঠিক মতোন করবার পারে না, এই কেসটা ঝুলায়ে রাখতি হবি আশরাফের ট্যাক খালি না হওয়া পর্যন্ত’; এই সব আলোচনার ভেতরেই বাইরের ভিড় ঠেলে গণেশ ময়রার দোকানের দিকে এগিয়ে এলো আট-নয়জন বৃহন্নলা, যাদের নেতৃত্বে ডালিম। ডালিম আর অন্য দুইজন বৃহন্নলা ব্যতিত বাকিদের এই এলাকার মানুষ কোনোদিন দ্যাখেনি। নবিয়াল তাদেরকে দেখে বিপদ আঁচ করতে পেরেই দৌড়ে দোকান থেকে বের হয়ে যায়। একজন বৃহন্নলা তার জামা টেনে ধরলে জামা ছিঁড়ে যায়, কিন্তু বেরিয়ে যায় নবিয়াল, হাটের ভিড় ঠেলে একে-তাকে ধাক্কা মেরে দৌড়তে থাকে। তাকে তাড়া করে চার-পাঁচজন বৃহন্নলা। আর ডালিম এবং কয়েকজন মিলে সুজনকে দোকানের মধ্যেই ধরে ফেলে। কলার ধরে দোকানের বাইরে নিয়ে আসে সুজনকে। কিল-ঘুষি মারতে মারতে নবিয়াল যে দিকে দৌড়ে গেছে সেদিকে যেতে থাকে। হাটের লোকজন কেউ অবাক হয়, কেউ মজা দেখতে থাকে; আবার কেউ কেউ খুশিও হয়, কারণ নবিয়াল এবং তার সাগরেদদের দাপট কমানো দরকার বলে তারা মনে করে। কিন্তু তারা কেউ বুঝতে পারে না, বৃহন্নলারা কেন সুজনকে পিটাচ্ছে আর কেনই বা নবিয়াল মেম্বারকে দাবড়ে নিয়ে গেল।
ওদিকে বাজারের মাঝখানে বটগাছের নিচের পানের দোকানগুলোর কাছে এসে দশরথ বারুইয়ের মজা সুপারির হাঁড়ির ওপর হুমড়ি খেয়ে পড়লে, হাঁড়ি উল্টে মজা সুপারি ছড়িয়ে গেলে, সেখানেই বৃহন্নলারা ঘিরে ধরে নবিয়ালকে, মাটিতে ভূপাতিত অবস্থাতেই এলোপাথারি কিল-ঘুষি, লাথি মারতে থাকে। নবিয়াল তাদের কাছে যতোই মাফ চায়, যতোই তার কৃতকর্মের জন্য ভুল স্বীকার করে, ততোই লাথি-ঘুষি এসে পড়ে তার মুখের উপর। এরই মধ্যে সুজনকে নিয়ে আসে ডালিমরা। দু-জনকে এক জায়গায় ফেলে এলোপাথারি মারতে থাকে। বৃহন্নলাদের উদ্দাম মারপিট আর তাদের হাততালির শব্দে বিস্মিত-তটস্থ মানুষ। বৃহন্নলারা বাচ্চা নাচায়, বিয়েতে-গায়েহলুদে নাচে, তাদের নিয়ে মানুষ হাসি-তামাশা করে; কিন্তু তাদের এই রুদ্রমূর্তি এই এলাকার কেউ কোনোদিন দ্যাখেনি। বাজারের মানুষ দেখলো বৃহন্নলারা কেবল নাচতে-গাইতে জানে না, দরকারে মারতেও জানে। বাজারের মানুষ অবাক হয় ডালিমকে দেখে! ভদ্র-শান্ত ডালিম, কোনোদিন কারো সাথে ওর লাগেনি; বাচ্চা নাচিয়ে গৃহস্থরা ওকে ঠকালেও খুব বেশি জোরাজুরি করেনি, বড়জোর তামাশার ছলে দুটো বাঁকা কথা শুনিয়েছে। অথচ সেই ডালিমের আজ একি রুদ্রমূর্তি! বাজারের মানুষ বিস্ময়ে কেবল দেখে যায়, কিন্তু কেউ-ই নবিয়াল মেম্বার আর সুজনকে রক্ষার জন্য এগিয়ে আসে না।
দু’জনকে পিটিয়ে আধমরা করে, রক্তাক্ত অবস্থায় ফেলে এক সময় চলে যায় ডালিম আর তার সঙ্গীরা। এরপর থেকে নবিয়াল এবং সুজনকে আর আগের মতো বাজারে দেখা যায় না। বিশেষ করে নবিয়ালের মান-ইজ্জত তলানিতে যতোটুকু ছিল, তার সবটুকুই হাটের মানুষের মাঝে খোয়া গেছে। মানুষের মুখে মুখে এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে যে নবিয়াল মেম্বার হিজড়াদের হাতে মার খেয়েছে। কেন মার খেয়েছে, সেদিন হাটের মানুষ সেকথাও জেনেছে নাবিয়ালকে প্রহার রত ডালিমের সই তামান্নার উত্তেজিত বয়ানে, ‘খানকির পুত হিজড়ার গায়ে হাত তুলিস, হিজড়া চুদতে চাস, চুদতে চাস তো বিয়ে করে ঘরে নিয়ে যায়ে যেমন খুশি চোদ! মাঙনা চুদতে চাস ক্যান? হিজড়া দেকলি মাঙনা চোদনের লাগি তিন ঠ্যাঙের নাচন ওঠে না, আজ দেব তোর তিন ঠ্যাং নুলা বানাইয়া!’
শান্তিপ্রিয় মানুষ খুশি হয়েছে। নবিয়াল মেম্বারের বিপক্ষ শক্তি হাততালি বাজিয়েছে; ঘটনা যতোটুকু ঘটেছে, ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে তিনগুন করে জনতার কানে ছড়িয়ে দিয়েছে তারা। যার ব্যাপক প্রভাব পড়বে আগামী ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে। এমনিতেই গত নির্বাচনে মাত্র একশো চুয়াল্লিশ ভোটে জিতেছে নবিয়াল, তাও ভোট চুরির অভিযোগ আছে। এ কারণেই আপাতত খোলসের মধ্যে গুটিয়ে আছে সে। হয়তো প্রতিশোধ নেবার পন্থাও খুঁজছে। নবিয়াল মেম্বার এতো সহজে হেরে যাবার লোক না, জানে সবাই। নবিয়ালের বিরোধী শিবির ডালিমদের সংবর্ধনা দিতে চেয়েছিল, ডালিমরা থু থু ছিটানোর মতো তা প্রত্যাখান করেছে!
এই ঘটনার কয়েকদিন পরই নবিয়াল মেম্বারের সাগরেদরা এসে নীলুকে শাসিয়ে গেছে, তার এখানে যেন ডালিম না আসে। কিন্তু নীলু কী করে প্রাণের মিতেকে তার কাছে আসতে নিষেধ করবে! দরকার হলে সে অন্য কোথাও চলে যাবে, তবু মিতেকে সে তার কাছে আসতে নিষেধ করতে পারবে না। ঐ ঘটনার পর অবশ্য এই প্রথম এসেছে ডালিম।
রাতে খাওয়া-দাওয়া সেরে দু-জনে বেরিয়ে পড়লো। হেঁটে গেলে স্টেশন থেকে বাজার তিন মিনিটের পথ। তবু একটু আগেই বের হলো তারা। ঘুটঘুটে অন্ধকার। নীলু টর্চের আলো ফেলে হাঁটছে। তার ডানপাশে ডালিম। ডালিমের গা থেকে সেন্টের সুগন্ধ ভেসে আসছে নীলুর নাকে। আজ একটু সেজেছে ডালিম। কোনো অনুষ্ঠান ছাড়া ডালিম তেমন সাজে না। গায়ে হলুদ কিংবা বিয়ে বাড়িতে নাচতে গেলে সাজে। অন্যসময় সে একেবারে সাধারণ থাকে। খুব বেশি হলে ঠোঁটে হালকা রঙের লিপস্টিক দেয়। বিশেষ উপলক্ষ্য ছাড়া মেক-আপ একেবারেই ব্যবহার করে না। তবে প্রায় সময়ই সে খোঁপায় একটা ফুল গুঁজে রাখে। ফুলের প্রতি তার ভীষণ দূর্বলতা। পথ চলতে কারো বাড়ির বাগানে একটা কাঠগোলাপ, রক্তজবা, বেলি কিংবা গাঁদা পেলো তো তুলে খোঁপায় নয়তো কানে গুঁজে রাখলো।
অনেক দিন পর আজ যাত্রা দেখতে যাচ্ছে। তাই আজ সেজেছে ডালিম। মেক-আপ নিয়েছে। গাঢ় লিপস্টিক দিয়েছে ঠোঁটে। এমনিতেই ডালিম ফর্সা। সাজার পর আরো ফর্সা লাগছে। নিজের গায়ে তো সুগন্ধি মেখেছেই, জোর করে নীলুর গায়েও খানিকটা মাখিয়ে দিয়েছে। তবু নীলুর মনে হচ্ছে ডালিমের গা থেকেই সেন্টের গন্ধ ভেসে আসছে। গন্ধটা বেশ মিষ্টি, উগ্র নয়। মিতেকে আজ খুব সুন্দর লাগছে দেখতে! এক মাথা ঘন কালো চুল ছড়িয়ে দিয়েছে পিঠে। চট করে দেখে কেউ তার আসল পরিচয় বুঝতে পারবে না। কী হতো যদি মিতে মেয়ে হয়ে জন্মতো! তাহলে হয়তো মিতে এখন তার সঙ্গে হেঁটে যাত্রা দেখতে যেতো না। তাতে কী! জীবনে কতো মানুষকেই তো সে হারিয়েছে। যার জন্য তার ভেতরটা উতলা হয়ে যেতো, সেই কণিকাকেও তো সে পায়নি। এতো না পাওয়ার ভিড়ে না হয় আরেকজন মানুষের বন্ধুত্ব না পেতো। কিন্তু মিতে মেয়ে হয়ে জন্মালে সংসার পেতো, স্বামী পেতো, ঘর আলো করে থাকতো সন্তান! এই ছন্নছাড়া জীবনতরীর বিবাগী বৈঠা তো বাইতে হতো না মিতেকে।
‘কী গো মিতে চুপ মারে গিলে যে?’ ডালিমের কথায় নীলুর ভাবনায় ছেদ পড়লো।
‘ভাবতেছি কতোদিন পর যাত্রা দ্যাখপার যাতেছি।’
নিজের ভাবনা নিজের কাছেই রেখে দিলো নীলু, মিতেকে জানালো না। কথায় কথায় বাজারে পৌঁছলো ওরা। বাজারের বেশিরভাগ দোকানপাট বন্ধ হয়ে গেছে। গণেশ ময়রার দোকান এখনো খোলা। যাত্রা উপলক্ষে বাইরের খোলা জায়গায় অস্থায়ী দোকান বসেছে। জিলাপির দোকানে গরম গরম জিলাপি ভাজা হচ্ছে। আছে পিঁয়াজু-পাপড় থেকে শুরু করে চুড়ি-ফিতা-খেলনার দোকান পর্যন্ত। এছাড়া বাদামওয়ালা, পান-সিগারেটওয়ালা, ঝালমুড়িওয়ালা তো আছেই। লোক সমাগমও অনেক। লোকজন আস্তে আস্তে আরো বাড়ছে। বেশিরভাগই তরুণ।
ডালিম আর নীলু গিয়ে কাউন্টার থেকে টিকিট কাটলো। টিকিটের টাকা ডালিম দিতে গেল, কিন্তু জোর করে নীলু’ই দিলো টিকিটের দাম। যাত্রা শুরু হবে এগারটায়। এখনও বেশ দেরি। ডালিম নীলুকে ঠেলে নিয়ে এলো জিলাপির দোকানে। গরম জিলাপি কিনে খেতে লাগলো দু’জনে। আশ-পাশের লোকজন তাদের দিকে তাকাচ্ছে। অনেকেই তাদের দু-জনকে চেনে। কিন্তু দু-জনকে একসঙ্গে যারা দ্যাখেনি, তারা কৌতুহলী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। কেউ কেউ মিটি মিটি হাসছে। তাদের বেশির ভাগেরই চোখ ডালিমের দিকে। কারণ ডালিমকে দেখতে খুব আকর্ষনীয় লাগছে আজ। জিলাপি খেতে খেতে ডালিম তার পিঠে কারো হাতের আঙুলের আলতো স্পর্শ টের পেল। চিবোনো বন্ধ করে সচেতন হতেই তার অনুভূতি আরো প্রখর হলো। কেউ তার পিঠে সুরসুরি দিচ্ছে! জিলাপির অবশিষ্ট টুকরোটুকু মুখে পুড়ে, নীলুর হাতে ধরা ঠোঙার কাগজে আঙুল মুছে মুহূর্তের মধ্যে ঘুরে দাঁড়িয়ে বাঁ হাতে সুরসুরি প্রদানরত লোকটার হাত আর ডান হাতে তার কলার চেপে ধরলো ডালিম। কিন্তু লোক কোথায়, এতো নিতান্ত কিশোর! বয়স পনের-ষোল। ডালিমের আকর্ষিক এই আক্রমণে ছেলেটা চমকে গেছে। এমনটা হবে ছেলেটা তা ভাবতেই পারেনি। সে হয়তো ভেবেছিল পিছন থেকে সুরসুরি দিয়ে ইঙ্গিত দেবে। তারপর অন্ধকারে নিয়ে গিয়ে একটু ঝাঁপটা-ঝাঁপটি করে হাতে ধরিয়ে দেবে পঞ্চাশটি টাকা। ফুলেল স্পর্শ পাক বা না পাক, এমন ছোবল প্রত্যাশা করেনি ছেলেটি!
‘খানকির পুত, সুরসুরি দেওয়া মারাতেছো! এহনো তো দুধির দাঁত পড়ে নাই, তিন ঠ্যাঙের নাচন শুরু হয়ে গেছে! তোর বাপের নাম কী? বাড়ি কনে?’
ছেলেটি ভয় পেয়েছে। বাবার নাম কিংবা ঠিকানা কোনোটাই বলছে না। এরই মধ্যে ভিড় জমে গেছে। লজ্জায় মাথা নিচু করে আছে ছেলেটি।
ডালিম শাসালো, ‘ক, নইলে কিন্তু নাকে খত দেওয়াবো মানষির সামনে।’
ছেলেটি ভীত হয়ে বললো, ‘আমি মামাবাড়ি বেড়াবার আইছি। মাটিপাড়ার কাজল আমার মামা।’
‘তোর মা’র নাম লিলি?’
হ্যাঁ-সূচক মাথা নাড়লো ছেলেটি। ডালিম বললো, ‘হায়, পোড়া কপাল আমার! তোর জন্ম তো মামাবাড়ি। তোরে আমি কোলে তুলে নাচাইছি। কচি হাতে থুত্তুরি দিয়ে প্রাণ ভরে আশির্বাদ করছি যাতে কারো নজর না লাগে, রোগ-বালাই না হয়। আর তুই....!’
ডালিম ছেলেটির মাথায় স্নেহের হাত বুলিয়ে আবার বললো, ‘যা বাবা যা, হাট-বাজারে আর এমন করিসনে! শরীলের মইদ্যে বেশি উসখুশ করলি বাপ-মা’র কাছে বিয়ের আবদার করবি! যা, যা...।’
ডালিমের শেষ কথায় মজা দেখতে থাকা কয়েকজন হেসে উঠলো। লজ্জিত ছেলেটি পড়ি-মরি করে ভিড়ের মধ্যে হারিয়ে গেল। ভিড় করা ছেলেগুলোকে ডালিম ধমকালো, ‘কী দেখতেছ তোমরা? দ্যাহার মতো কিছু হয় নাই। যাও, যা দ্যাকপার আইছো, তাই দ্যাহ গে।’
যাত্রা প্যান্ডেলে দ্বিতীয় শ্রেণিতে গিয়ে বসলো ওরা। সামনে থেকে তিনটা সারি পর। নীলু সুবিধা মতো জায়গায় চেয়ারটা ফেলে নিলো যাতে দেখতে অসুবিধা না হয়। সামনের দিকের চেয়ারগুলো ভরে গেছে। তার সামনে খাটো মতো একজন লোক বসেছে, খুব নড়াচড়া না করলে দেখতে অসুবিধা হবার কথা নয়।
কনসার্ট বাজতেই পাকা বড়ইগাছে ঝাঁকি দিলে যেমন ঝঙ্কার ওঠে, তেমনি ঝঙ্কার উঠলো নীলুর মনের ভেতর। যাত্রার কনসার্ট তার খুব ভাল লাগে। শরীরে অদ্ভুত এক শিহরণ জাগে, লোহিতসমুদ্রে বয়ে যায় অতুল উচ্ছ্বাসের ঢেউ! অনুভূতিটা ঠিক বলে বোঝানো শক্ত।
ডালিম পান চিবোচ্ছে, বেশ উৎফুল্ল দেখাচ্ছে তাকে। আশ-পাশের লোকজন তাকিয়ে দেখছে তাকে কিন্তু কারো দৃষ্টিকেই পাত্তা দিচ্ছে না সে, বারবার তাকাচ্ছে সাজঘরের দিকে। দেশাত্মবোধক গান শেষ হলে বেশ স্থুল শরীরের এক তরুণী মঞ্চে উঠে হিন্দী গান গাইতে শুরু করলো। গান তো নয় যেন শ্রবণ দরজায় ধুপধাপ ধাক্কা মারছে! গলা দিয়ে নয়, যেন শরীর দিয়ে গান গাইছে তরুণী! জেলেরা কারেন্ট জাল দিয়ে মাছ ধরার সময় প্রাণ ভয়ে আতঙ্কিত মাছগুলো যেমনি লাফায়, তেমনি লাফাচ্ছে; গান যেন শোনার বিষয় নয়, কেবল দেখার! তাতেই লোকে সিটি বাজাচ্ছে, তালি দিচ্ছে। পর পর দুটো গান গেয়ে স্টেজ ছাড়লো মেয়েটি। নীলু ডালিমের দিকে হেলে কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিস ফিস করে বললো, ‘ও মিতে, মনে অয় কালকে কানের ডাক্তারের কাছে যাওয়া লাগবেনে!’
ডালিম হাসলো। মিতে মন্দ বলেনি। বলতে না বলতেই মাইকে ঘোষণা করলো চিত্রা নামের একজন শিল্পীর নাম। পরমুহূর্তেই একজন মধ্যবয়সী নারী মঞ্চে উঠে গাইতে শুরু করলেন ভূপেন হাজারিকার বিখ্যাত গান-‘বিমূর্ত এই রাত্রি আমার একটি রঙিন চাদর...।’
কিছু মানুষ গান শুনে উসখুস করলেও নীলু মুগ্ধ হয়ে শুনলো। দারুণ সুরেলা গলা! চিত্রা নামের এই শিল্পীর সাথে আগের জনের কোনো তুলনাই চলে না! চিত্রা দ্বিতীয় গান শুরু করতে চাইলেও কিছু দর্শকের অনিচ্ছা এবং দুয়ো শুনে সাজঘরে ফিরতে হলো চিত্রাকে। নীলুর ভীষণ মেজাজ খারাপ হলো!
এরপর শুরু হলো নাচ। নাচ-গানের পর্ব চুকতে পঁচিশ-ত্রিশ মিনিট কেটে গেল। এরপর শুরু হলো যাত্রাপালা সোহরাব-রুস্তম। কিন্তু এক অঙ্ক শেষ না হতেই কিছু দর্শক নাচের জন্য পাগল হয়ে গেল, নায়েক পার্টির সদস্য মনসুর দাঁড়িয়ে বললো, ‘ড্যান্সাররা কী ঘুমায় নাকি! ড্যান্স দ্যান।’
অতিরিক্ত দর্শক টানার পৈশাচিক লালসায় স্থুল বিনোদন প্রদর্শনের মাধ্যমে এই নায়েক পার্টি-ই যাত্রাকে ডোবালো। উদ্দাম নাচ ছাড়া যেন যাত্রা হয় না! ভাল অভিনয়শিল্পী নয়, কোন দলে ভাল ড্যান্সার আছে তা দেখেই আজকাল নায়েক পার্টি দল বায়না করে। তাই নায়েক পার্টির চাহিদার কথা মাথায় রেখে বাধ্য হয়েই যাত্রাদলের অধিকারীকে মোটা টাকা খরচ করে ভাল ড্যান্সার রাখতে হয় দলে। যেমন-তেমন অভিনয়শিল্পী দিয়ে দল চালানো যায় কিন্তু ভাল ড্যান্সার ছাড়া যেন দল কানা! তাই মৌসুম শেষ হতে না হতেই টাকার তোড়া নিয়ে ড্যান্সারের পিছনে ছোটে দলগুলো।
শুরু হলো নাচ। এক অঙ্ক যেতে না যেতেই আবার নাচ। বোঝা দায় যে যাত্রার ফাঁকে ফাঁকে নাচ, না নাচের ফাঁকে ফাঁকে যাত্রা। অনেকটা আমাদের দেশের টিভি চ্যানেলগুলোর মতো। অনুষ্ঠানের ফাঁকে ফাঁকে বিজ্ঞাপন, না বিজ্ঞাপনের ফাঁকে ফাঁকে অনুষ্ঠান, তা বোঝা যায় না। অপসংস্কৃতি যখন প্রভাব বিস্তার করে তখন তার হিংস্র থাবা থেকে কোনো কিছুই রেহাই পায় না। সংস্কৃতির শিকড়ে বিষ ছড়িয়ে দেয়। আর সেই বিষ হাজার বছরের শিকড়ে পচন ধরায়। চিন্তায়-চেতনায়, সৃজনে-মননে পচন ধরায়। সাহিত্য, নাটক, সিনেমা, নৃত্য, সঙ্গীত, যাত্রা সব কিছুতেই পচন ধরায়। সংস্কৃতির খোলসে ঢুকে, সংস্কৃতির নামে অপসংস্কৃতি-ই প্রতিষ্ঠা পেয়ে যায়।
নীলু ডালিমকে খোঁচা দিল, ‘ও মিতে, টিভিতে ধারাবাহিক নাটক দেখছি। কিন্তু ধারাবাহিক যাত্রা এই প্রথম দেখতেছি। যে গতিতে আগাতেছে সাত রাতের আগে তো শ্যাষ হবেন না!’
নীলুর ডানে বসা এক লোক বললো, ‘ভাই এহন কী আর যাত্রা দ্যাকপার আসে মানুষ! দ্যাহেন মাঝের তে কয় অঙ্ক ফ্যালায়ে দেয়!’
ডালিম তার পুরনো স্মৃতির দরজায় টোকা দিলো। না, আগে তো এমন ছিল না। তাদের পরিবারের সবাই মিলে যাত্রা দেখতে যেতো। যাত্রা প্যান্ডেলে মোটামুটি একটা ভদ্রস্থ পরিবেশ বজায় থাকতো। ভদ্র পরিবারের মহিলারা-মেয়েরা সাজগোজ করে এসে সামনের দিকের চেয়ারগুলোতে বসে যাত্রা দেখতো। তখন মানুষ মন্ত্রমুগ্ধের মতো অভিনয় দেখতো। অভিনয় দেখতে দেখতে কাঁদতো, হাসতো, আবার কাঁদতো। হঠাৎ নামগুলোও মনে পড়ে গেল তার- অমলেন্দু বিশ্বাস, জ্যোৎস্না বিশ্বাস, স্বপন কুমার। অমলেন্দু বিশ্বাসের অভিনয় অবশ্য সে দ্যাখেনি। অমলেন্দু বিশ্বাস যখন মারা যান, তখন সে অনেক ছোট। বড়দের মুখে সে অমলেন্দু বিশ্বাসের কথা শুনেছে। তখন যাত্রা দেখার পর অভিনয়শিল্পীদের নিয়ে পাড়ায় কয়েকদিন ধরে আলোচনা চলতো। অখিল স্যারের মুখে অমলেন্দু বিশ্বাসের মাইকেল মধুসূদন দত্ত’র চরিত্রে অভিনয়ের কথা সে শুনেছে। স্যার যখন ক্লাসে মাইকেল মধুসূদন দত্ত’র কবিতা পড়াতেন, তখন অমলেন্দু বিশ্বাসের কথা বলতেন তিনি। অমলেন্দু বিশ্বাসের অভিনয়ের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করতেন। কয়েকটা সংলাপও বলতেন তিনি। স্যারের দরাজ গলায় সংলাপ শুনে গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠতো।
আগে যাত্রা ছিল লোকশিক্ষার গুরুত্বপূর্ণ এক মাধ্যম। সামাজিক যাত্রাপালা যেমনি হতো, তেমনি ঐতিহাসিক-পৌরাণিক যাত্রাপালাও হতো। ফলে স্কুল-কলেজে না যাওয়া গ্রামের একজন অশিক্ষিত লোকও ইতিহাস এবং পুরাণ সম্বন্ধে জানতে পারতো, ইতিহাস ও পুরাণের গল্প ও চরিত্র নিয়ে নিজেদের মধ্যে আলাপ করতো, সঙ্গত কারণেই লেখাপড়া না জানলেও তদের মধ্যে ইতিহাস ও পুরাণের চর্চা হতো। তাদের চেতনা প্রোথিত থাকতো নিজের শিকড়ে। সঠিক পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে যাত্রার সেই সুদিন আর নেই। বাণিজ্যিক টেলিভিশন সস্তা ও স্থুল বিনোদনের মাধ্যম হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়ে গেছে, যেখানে ঐতিহ্য-সংস্কৃতি ব্যাপকভাবে উপেক্ষিত; যে কারণে লোকশিক্ষার জায়গায় শূন্যতা তৈরি হয়েছে। যার ফলে আজকের শিক্ষিত প্রজন্মের একটা বড় অংশ নিজেদেরকে অর্থ রোজগারের কারিগর হিসেবে তৈরি করলেও ঐতিহ্য-সংস্কৃতি, ইতিহাস-পুরাণ সম্পর্কে অজ্ঞ; যা মানবিক মানুষ তৈরির ক্ষেত্রে অন্তরায়। ফলস্বরূপ সংস্কৃতিবিমুখ উন্মুল এক প্রজন্ম বেড়ে উঠেছে।
রাতের অনেকটাই পেরিয়ে গেছে। ক্ষীণকায় একটি মেয়ে মঞ্চে উঠে হিন্দী গানের সাথে নাচতে শুরু করতেই থার্ডকাস থেকে চিৎকার শুরু হলো, ‘ভুয়া...ভুয়া...ভুয়া...!’
এরপর শুরু হলো প্রিন্সেস আনিকার নাম ধরে চিৎকার, ‘আনিকা...আনিকা...আনিকা...!’
প্রিন্সেস আনিকার নাচ দেখার জন্য দর্শক উন্মুখ হয়ে আছে। দর্শক ধরে রাখার জন্য সবচেয়ে কাক্সিক্ষত ড্যান্সারের ড্যান্স হয় শেষ দিকে। কিন্তু দর্শকের আর তর সইছে না। চিৎকার যেন স্লোগানে রূপান্তরিত হয়েছে এবং ক্রমে তা থার্ডকাস থেকে সেকেন্ড কাস-ফার্স্ট কাসে ছড়িয়ে পড়েছে। বৈরী মঞ্চে কিছুক্ষণ নেচে ক্ষীণকায় মেয়েটি নিরুপায় হয়ে প্রস্থান করলো। নতুন উদ্যমে ব্যান্ডের বাজনা বেজে উঠলো। নড়েচড়ে বসলো দর্শক।
কচি কলাপাতা রঙের টপস আর স্কার্ট পরিহিত প্রিন্সেস আনিকা তীরের বেগে ছুটে এসে ধনুকের মতো বেঁকে দাঁড়ালো মঞ্চে, তারপর শরীরে যৌনতার স্ফুলিঙ্গ ছড়িয়ে মঞ্চের চারিদিকে ঘুরে ঘুরে দু-হাতে অসংখ্য উড়ন্ত চুম্বন ছুড়ে দিলো দর্শকের উদ্দেশে! দর্শকের মধ্যে শোরগোল উঠলো, বিশেষ অঙ্গভঙ্গির মাধ্যমে কেউ কেউ প্রিন্সেস আনিকার ছুড়ে দেওয়া উড়ন্ত চুম্বন লুফে নিলো, সিটি বাজালো, ফেনিল উল্লাস উগড়ে দিলো। ব্যান্ডের বাজনা থেমে গেল হঠাৎ, বেজে উঠলো হিন্দী গান। মিউজিকের তালে তালে প্রিন্সেস আনিকা শঙ্খরত নাগিনীর মতো ঢেউ তুলো শরীরে। বিশেষ কায়দায় স্কার্টের বাম দিকের একমাত্র দরজা দিয়ে প্রায় উরুর শীর্ষদেশ পর্যন্ত অনাবৃত বাঁ পা সামনের দিকে বাড়িয়ে দিতেই দর্শক হইহই করে উঠলো! নানান রঙের আলোর রোশানাইয়ে প্রিন্সেস আনিকার একই অঙ্গে যেন বহুরূপ! এবার আর নাগিনীর মতো নয়, তার জড়তাহীন আকর্ষনীয় শরীরে জোরকাটালের উল্লোল উঠলো; প্রচণ্ড তার গতি, প্রখর তাল জ্ঞান; দৃষ্টি আর চিত্তের সম্মিলিত সুখে প্লাবিত দর্শকের বাড়ানো হাতে ক্ষণে ক্ষণে রঙ বদলাচ্ছে চকচকে নোট! প্রিন্সেস আনিকা মেছো ঈগলের মতো ছোঁ মেরে দর্শকের হাত থেকে টাকা নিয়ে রাখছে বুকের উষ্ণ সরোবরে!
একজন তরুণ মঞ্চে উঠে প্রিন্সেস আনিকার সঙ্গে নাচতে শুরু করলো। আনিকাও স্বচ্ছন্দে নাচতে লাগলো তরুণের সঙ্গে। কিন্তু বেশিক্ষণ নাচার সৌভাগ্য হলো না তরুণের, নায়েক পার্টির কয়েকজন নেতা ধমকে নামিয়ে দিলো তাকে। বেচার! গান শেষ হতেই স্পিকারে একজন ঘোষণা করলো, ‘কেউ মোবাইলে ভিডিও করবেন না। দয়া করে কেউ মোবাইলে ভিডিও করবেন না।’
এবার স্পিকারে বেজে উঠলো, ‘টিপ টিপ বরসা পানি...!’ আবারও দর্শক হই হই করে উঠলো। কার্তিকের এই কিশোরী কুয়াশামাখা রাত্রে আলোর রোশনাই ছড়ানো মঞ্চে সত্যি সত্যি বর্ষাগম হলো! কৃত্রিম ঝর্ণার বর্ষণমন্দ্রিত মঞ্চে প্রথমে হালকা সবুজ রঙের বর্ষাতি হাতে নিয়ে নাচতে লাগলো প্রিন্সেস আনিকা। তারপর বর্ষাতি ছুড়ে ফেলে দু-হাত প্রসারিত করে বর্ষণে ভিজতে লাগলো! জলের লহর তার স্ব-স্বভাবে প্রিন্সেস আনিকার মাথা, গলা, বুক, উন্মুক্ত পেট, সচেতন নিতম্ব আর উরু ও পা বেয়ে লুটিয়ে পড়ছে মঞ্চের পাটাতনে! দর্শকের ভিড় থেকে কেউ একজন চেঁচালো, ‘ঐ খোল...খোল....!’
প্রিন্সেস আনিকার সারা শরীর ভিজে একাকার। অকালের বর্ষণ আর গানের সাথে একাত্ম হয়ে সমানে নেচে যাচ্ছে। কিন্তু অবাক হওয়ার এখনো অনেক কিছু বাকি! ভেজা টপস খুলে দর্শকের উদ্দেশে উঁচু করে ধরে ছুড়ে দিল মঞ্চের একপাশে। একইভাবে স্কার্টটিও খুলে ফেললো। এখন শরীরের ঊর্ধ্বাঙ্গে আব্রু বলতে কচি কলাপাতা রঙের অন্তর্বাস আর পরনে অতি সংক্ষিপ্ত শর্টস! উপর থেকে অবিরাম জল পড়ছে শরীরে। স্বল্প বসন শরীরে এই শীতের মধ্যে ভিজছে অথচ মনেই হচ্ছে না তার শীত লাগছে, উদ্দাম নেচে চলেছে। খবির মহুরি টাকা দিয়ে প্রিন্সেসের সাথে হাত মেলালো। বাজারের ব্যবসায়ী সুভাস সাহার ছোট ছেলে সরজ সাহা প্রিন্সেসের হাতে টাকা দিয়ে বৃষ্টিস্নাত হলো। অতি আগ্রহী কেউ কেউ হাতের টাকা প্রিন্সেসের অন্তর্বাসের মধ্যে ঢুকিয়ে দিতে চাইছে। কিন্তু চতুর প্রিন্সেস বাড়ানো হাত থেকে ছোঁ মেরে টাকাটা নিয়েই দূরে সরে যাচ্ছে। নাভির কাছে আঁজলা পেতে জল নিয়ে মঞ্চের চারদিকে ছুড়ে মারছে। তার এই জল ছোড়ার ভঙ্গিটি অদ্ভুত আবেদনময়, হয়তো শীলিত; যেন জল নয়, দেহ নিংড়ে ছুড়ে দিচ্ছে গুপ্ত লুব্ধ লৌকিক লোবান!
মঞ্চের পূর্বদিকে জল ছুড়তে ছুড়তে এক মুহূর্ত স্থির হয়েই আবার উত্তর দিকে জল ছুড়তে লাগলো প্রিন্সেস। ডালিম মিটি মিটি হাসছে। পাথর হয়ে বসে আছে নীলু। এক পর্যায়ে সে ভেবেছিল উঠে চলে যাবে। কিন্তু পারেনি উঠতে। প্রথমে দেখেই বুকের ভেতরটা ছ্যাৎ করে উঠেছে তার। পরক্ষণেই আবার মনে হয়েছে তার ভুল হচ্ছে কোথাও। কিন্তু সেই কোমর ছোঁয়া চুল, সেই মুখ, সেই কপাল, সেই চোখ-নাক! ভুল হবে কী করে! উজ্জ্বল শ্যামবর্ণ গায়ের রঙ আরো উজ্জ্বলতর হয়েছে, চিকন শরীরে জৌলুস বেড়েছে, ভ্রু যতোই সরু করে চাছা হোক, গালের টোল হারাবে কোথায়! আর হাসি? যদিও কায়দা করে রপ্ত করা মেকি হাসির বর্ষণে দর্শক হৃদয় হরণ করছে কিন্তু তারই মাঝে ক্ষণে ক্ষণে বিদ্যুৎ চমকের মতো বের হচ্ছে সেই পুরনো সহজাত হাসি। চেনা হাসি চেনা মানুষের চিনতে ভুল হবার কথা নয়!
সোহরাব-রুস্তমের শেষ অঙ্ক- রুস্তম এখন পুত্র সোহরাবকে তলোয়ারের আগায় বিঁধে ফেলেছে। হায় হতভাগ্য পিতা! নিজ সন্তানের রক্তে হাত রাঙিয়ে বীরত্ব জাহির করছো! আবার পিতা-পুত্রের পরিচয় উন্মোচন হতেই মৃত্যু যন্ত্রণায় কাতর পুত্র সোহরাবকে বুকে জড়িয়ে হাহাকার করছে রুস্তম। কাঁদছে ডালিম। নীলুর দু-চোখ বেয়ে জলের ধারা নেমে জমা হচ্ছে থুতনিতে। কার জন্য কাঁদছে নীলু? সোহরাব নাকি রুস্তমের জন্য! কণিকা নাকি প্রিন্সেস আনিকার জন্য!
(চলবে
১৩ ই আগস্ট, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:০০
মিশু মিলন বলেছেন: ধন্যবাদ। শুভেচ্ছা.....
২| ১৩ ই আগস্ট, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:০৮
রাজীব নুর বলেছেন: আপনাকে অনুরোধ করেছিলাম আগের পর্বের লিংক দিয়ে দিতে।
১৩ ই আগস্ট, ২০১৮ রাত ১১:৩১
মিশু মিলন বলেছেন: প্লিজ, ১৩ নং পর্বটি দেখুন। আপনার কথামতো ১৪ নম্বর পর্বে পূর্বের সব পর্বের লিংক দিয়েছি। ধন্যবাদ। ভাল থাকবেন।
©somewhere in net ltd.
১| ১৩ ই আগস্ট, ২০১৮ দুপুর ১২:৫৭
বিজন রয় বলেছেন: কিছুটা পড়লাম।