নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি বর্তমানে ইস্টিশন এবং সামহোয়্যার ইন ব্লগে লিখি। আমার সকল লেখা আমি এই দুটি ব্লগেই সংরক্ষণ করে রাখতে চাই। এই দুটি ব্লগের বাইরে অনলাইন পোর্টাল, লিটল ম্যাগাজিন এবং অন্য দু-একটি ব্লগে কিছু লেখা প্রকাশিত হলেও পরবর্তীতে কিছু কিছু লেখা আমি আবার সম্পাদনা করেছি। ফলে ইস্টিশন এবং সামহোয়্যার ইন ব্লগের লেখাই আমার চূড়ান্ত সম্পাদিত লেখা। এই দুটি ব্লগের বাইরে অন্যসব লেখা আমি প্রত্যাহার করছি। মিশু মিলন ঢাকা। ৯ এপ্রিল, ২০১৯।
মাথা ছাড়িয়ে যাওয়া পাটক্ষেতে খিচি পাট কেটে ছোট ছোট আঁটি বেঁধে পাটের ফাঁকে ফাঁকে আঁটিগুলো দাঁড় করিয়ে রাখছে মধ্য চল্লিশের নটোবর। তার গামছা বাঁধা মাথার অল্প পাক লাগা ঘন চুলের গোড়া চুইয়ে ঘাড় আর গলা বেয়ে অনবরত ঘাম নেমে যাচ্ছে শরীরের নিচের দিকে। কিছু ঘাম শুষে নিয়েছে জামা, কিন্তু কতো আর তৃষ্ণা মিটাবে সুতির পুরনো পাতলা জামা! ভিজে চপচপ করছে জামাটা, অবশিষ্ট নিন্মগামী ঘাম গড়িয়ে থামছে কোমরের লুঙ্গিতে; হাঁটুর উপরে কাঁছা মারা লুঙ্গি।
আষাঢ় মাসের ভ্যাপসা গরম। সকালে এক পশলা বৃষ্টি সূর্যের আঁতে ঘা মেরেছিল, তাতে যেন আরও তেতে উঠেছে সূর্য। খোলা জায়গার চেয়ে পাটক্ষেতে গরম বেশি, চারদিকের মাথা ছাড়ানো পাটগাছ আর মাথার ওপরের ঘন পাতা ভেদ করে বাতাস ঢুকতে পারে না ভেতরে। অসহনীয় গরম অনুভূত হয় আর অনবরত ঘাম ঝরতে থাকে শরীর থেকে, তবু সইতে হয় নটোবরকে, নটোবরদেরকে।
এমনিতেই গরম, তার ওপরে কোন হতচ্ছাড়া যেন তার ক্ষেতেই পায়খানা করেছে। কাঁচা পায়খানা সকালের বৃষ্টির বদান্যতায় উথলে উঠেছে, ভোজের উপাদান পেয়ে গুয়ে পোকা থিকথিক আর মাছি ভনভন করছে! হলুদ বিছা পাটের ডগায় উঠে পাতা খায়, পাতা খেতে খেতে অসতর্কতায় অথবা হঠাৎ আসা উটকো বাতাসের ঝাপটায় পাটের ডগার পাতা থেকে টুপ করে পড়ে যায় নিচে। তেমনই একটি পড়েছে গুয়ের মধ্যে, আথিবিথি বেরোবার পথ খুঁজছে। ভীষণ দূর্গন্ধ নাকের ছিদ্র দিয়ে ঢুকে পেটে পাঁক দিচ্ছে নটোবরের। কিন্তু উপায় নেই, খিচি কাটতেই হবে। গুয়ের গন্ধকে আমলে নিয়ে তার মতো কৃষকের বসে থাকা চলে না, কাজ বাসি করলে কাজ বাড়ে, এমনিতেই উদয়াস্ত খেটেও সময়ের সাথে কুলিয়ে ওঠা যায় না। কামলা নেয় না সে, তার সাধ্যে কুলোয় না। পাট কাটার মৌসুমে একটা কামলার মজুরি আর তিনবেলার খোরাকির মূল্য আধমণ পাটের মূল্যের চেয়েও বেশি। ফলে খুব দরকার পড়লে সে কারও বেগার খাটে, বদলে বেগার খাটায়।
মাত্র সাড়ে তিন পাখি ফসলি জমি নটোবরের। দুই পাখি ধানি জমি, আর দেড় পাখিতে পাট এবং রবিশস্য জন্মে। সতীশ রায়ের কাছ থেকে বর্গা নিয়েছে আরও চার পাখি; তিন পাখি ধানি, এক পাখি পাটের জমি। বর্গা না নিলে সারা বছরের খোরাকি জোটে না। তপন কিংবা নারায়ণের মতো বাবুগিরি করে চাল কিনে খাবার মতো কাঁচা রোজগারের পথ তার নেই। তাই তাকে উদয়াস্ত গায়ে খাটতে হয়, শরীরের ঘাম নিঙড়ে দিতে হয় জমিতে, তবেই জমি তার খোরাকি জোটায়।
তপন এবং নারায়ণ একসময় তার সমান দরের মানুষই ছিল, তার মতো ওদেরও রোদ-বৃষ্টি মাথায় করে মোটা ভাত-মোটা কাপড়ের জন্য মাটির সাথে জুঝতে হতো উদয়াস্ত। কিন্তু হঠাৎ করেই ওরা তার চেয়ে আলাদা এবং উঁচু দরের মানুষ হয়ে গেল! তপনের ছেলে বাদল ঢাকায় একটা ওষুধের দোকানে আর নারায়ণের ছেলে শ্যামল নামী এক মিষ্টির দোকানে চাকরি পেয়েছে। ওরা দুজনই কাঁচা টাকা পাঠায় বাড়িতে। তাতেই তো তপন আর নারায়ণের নাচন বেড়েছে, ওদের ঠাট-ঠমক আর আদিখ্যেতায় পাড়া-পড়শিদের টিকে থাকা দায় এখন! তিন বছর আগেও তারা মালকোঁচা দিয়ে একে অন্যের বেগার খেটেছে, অথচ ওরা এখন কোঁচার কাপড় তুলে হাঁটে, আফজালের দোকানে বসে পায়ের ওপর পা তুলে চা খায়। জমিজমা কিছু বর্গা দিয়েছে, আর কিছু কামলা খাটিয়ে চাষ করে। বাজার থেকে বড় মাছ কিনে একহাতে কোঁচার লুঙ্গি আরেক হাতে মাছ ঝুলিয়ে ফেরার পথে দেখা হলে ওরা একবার তার মুখের দিকে তাকায় তো আরেকবার মাছের হাঁ করা মুখ থেকে লেজের ডগা পর্যন্ত চোখ বুলায়!
অতো ঠাট-ঠমক যে কিসে তা সবাই জানে! ওষুধ আর মিষ্টির দোকানে কতোই বা বেতন, তাতে অমন ফুটানি মারানো যায়! নির্ঘাত চুরি করে, মুখ ফুটে সামনে কেউ বলতে না পারলেও আড়ালে সবাই এমনটাই বলাবলি করে। চুরি না করলে অমন ফুটানি মারানো যায় না! আগে ওরা তার মতোই ডি-গ্রেডে পূজার চাঁদা দিতো, এখন দেয় বি গ্রেডে। এক লাফে দুই ধাপ এগিয়েছে। তাতেই সমাজের মানুষ এখন ওদেরকে মান্য করে, পূজার মিটিং এ সামনের সারিতে বসে মতামত দেয় ওরা, সবাই ওদের মুখের দিকে তাকিয়ে কথা শোনে, ওদের কথায় সমর্থন দেয়; আর সে কর্মক্লান্ত দেহে পিছনের সারিতে বসে তার দরের মানুষদের সাথে ভাগাভাগি করে বিড়ি ফোঁকে, নয়তো ঝিমাতে থাকে। ওরা এখন তাকে পাত্তাই দেয় না, তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে কথা বলে।
চোখের সামনে তপন এবং নারায়ণ বাবু বনে গেল, আর সে এখনও উদয়াস্ত খেটে মরে, তবু যদি একটু ভাল খাওয়া-পরা জুটতো! তবে সে-ই শেষ, তার বংশে সে-ই কৃষিকাজকে সমাধি দেবে। মনে মনে সংকল্প করেছে, তার বাবার মতো সে আর একই ভুল করবে না, নিজের ছেলে দুটোকে মাঠে খাটিয়ে হাড়-মাংস জ্বালিয়ে-জিইয়ে মারবে না। বড়ো ছেলেটা এইটে পড়ছে, পড়ায় তেমন ভাল না। এস, এস, সি পাস করে কলেজে পড়তে পারলে ভাল, নইলে কারো হাতে-পায়ে ধরে ঢাকায় কোনো একটা কাজে ঢুকিয়ে দেবে। তারপর ছোটটাকেও পাঠিয়ে দেবে বড়োটার কাছে। এরপর সে-ও তপন আর নারায়ণের মতো কোঁচার কাপড় তুলে হাঁটবে, পায়ের ওপর পা তুলে আফজালের দোকানে বসে চা খাবে। প্রথম সন্তানটা যদি মেয়ে না হয়ে ছেলে হতো, তাহলে সেও এতোদিন ওদের মতো পায়ের ওপর পা তুলে চা খেতে পারতো! আর এখন চায়ের পয়সাটা তিলে তিলে করে জমিয়েও মেয়েটাকে একটা ভাল ছেলের সাথে বিয়ে দিতে পারছে না। মেয়েটাকে দুটো ডাল-ভাত খাওয়াতে পারবে এমন ছেলে যদিবা মেলে, তাদের পণের চাহিদার সাথে তার সামর্থ মেলে না।
রাগ হচ্ছে নটোবরের, একে তো গুয়ের গন্ধ আর গরম তায় মনের বেদন। খিচির সাথে বড়ো পাট কেটে গেল কয়েকটা। রাগলে নিজেরই ক্ষতি। কার ওপর রাগ করবে সে? কাকে দোষ দেবে? নিজেকেও দোষ দেয় না, কেননা সে তো পরিশ্রম কম করেনি। কিন্তু হাজার পরিশ্রম করেও বাপ তার জন্য যে সাড়ে তিন পাখি ফসলি জমি রেখে মরেছিল, তারপর আর এক শতাংশ জমিও কিনতে পারেনি সে। চেষ্টা কম করেনি, তবু পারেনি। খেয়ে-প’রে দু-চার পয়সা ডানে রাখলেও জমির দাম বাড়তে বাড়তে তার নাগালের বাইরেই থেকেছে। ডানের টাকা খরচ হয়েছে বাঁয়ে, বউয়ের অসুখের পিছনে। বউটাও তেমনি, বিয়ের পর থেকে অসুখ লেগেই আছে। তিনটে বিয়োনোর পর আরও কাহিল দশা। তপন, যতীন, অনাথের বউ চার-পাঁচবার বিয়োলেও এখনও কী ডাগর স্বাস্থ্য! একহালি পুরুষের যৌবন নিঙড়ে ছিবড়ে করে ছেড়ে দিতে পারে! এখনও সাপের ফণার মতো বুক, নিতম্বে বর্ষার বান! আর তার বউ? হাড্ডিসার শরীর! শরীরের সুখটাও দিতে পারে না মন ভরে। মনে হয় যেন রাতভর একটা কঙ্কাল জড়িয়ে ধরে শুয়ে থাকে!
এই যে জীবনের অপ্রাপ্তি-অতৃপ্তি, কাকে দোষ দেবে সে? দোষ এখন দেয় তার নিজের কপালের। কপালে তার আয়েশ নেই, সুখ নেই; থাকলে তো প্রথম সন্তানটা মেয়ে না হয়ে ছেলেই হতো!
কাশির শব্দে কান খাড়া করলো নটোবর। আবার কাশির শব্দ হলো। প্রথমবার বুঝতে না পারলেও এবার বুঝতে পারলো কাশির উৎস।
দেখতে না পেলেও হাঁক দিল নটোবর, ‘কিডা, জিতে কা নাকি?’
‘হ।’
‘কী করো?’
‘হাগতেছি।’
‘আমার ক্ষ্যাতে তুমি হাগিছো, না?’
‘মা কালির কিরে আমি তোর ক্ষ্যাতে হাগি নেই!’
‘চোত্তির মাসে তুমার ছাওয়াল-বৌমা অতো টাহা খরচ করে বাড়ি পাকা ল্যাপটিন দিয়ে দিলো, তাও মাঠে-ঘাটে হাগো?’
‘ল্যাপটিনি বসলি আমার হাগা অয় না রে বাপু! ল্যাপটিনে ঢুকলি দম আটকে আসে, প্যাটের মইদ্যে মোচড় পারে কিন্তুক হাগা বাইর অয় না।’
‘ছাওয়াল চাকরি করে, আবার চাকরে বউ আনলে, এহন মাঠে-ঘাটে হাগলি মানুষ কী কবেনে?’
‘বুঝিসনে মেলাদিনের অব্বেস! ল্যাপটিন অলো বাবু মানষির জন্যি, আমি চাষাভুষো মানুষ, আমার জন্যি মাঠ-ঘাট-ই ভাল। খিচি কাটা কদ্দুর তোর?’
‘আর কালকের দিন লাগবেনে।’
‘বিড়ি আছে রে?’
‘আছে।’
কিছুক্ষণ পরই প্লাস্টিকের বদনা হাতে আলপথ ধরে হেঁটে এসে আলপথের ওপর দু-আঁটি খিচি পাট ফেলে তার ওপর বসলো জিতেন।
‘দে এট্টা বিড়ি দে।’ নাক ঝেড়ে বাম হাত প্রথমে আলপথের ঘাসে তার পর নিজের পরনের লুঙ্গিতে মুছলো।
হাতের পাটগুলো আঁটি বেঁধে, আরেকটি আঁটি তুলে নিয়ে নটোবরও আলপথে বসলো দু-আঁটি পাটের ওপর। কাঁচি রেখে মাথার গামছা খুলে ঘাম মুছতে মুছতে বললো, ‘বেজায় গরম।’
‘হ।….খিচি কয় মন পাবেনে?’
‘মন তিনেক পাবার পারি।’
কোমরে গুঁজে রাখা পলিথিনের ভেতর থেকে বিড়ি-ম্যাচ বের করলো নটোবর। একটা জিতেনকে দিয়ে আরেকটা নিজের ঠোঁটের ফাঁকে রাখলো। তারপর নিজের বিড়িটায় আগুন দিয়ে সেটা বাড়িয়ে দিলো জিতেনের দিকে। নাক-মুখ দিয়ে ধোঁয়া বের করে নটোবরকে বিড়িটা ফেরত দিয়ে জিতেন বললো, ‘খান সাহেবের পাটকলে তো বিলাসের চাকরি অয়ে গেল।’
নটোবর এবং জিতেন দুজনেরই পড়শি নির্মলের ছেলে বিলাস। নটোবর দীর্ঘশ্বাসের সাথে ধোঁয়া ছেড়ে বললো, ‘শুনলাম!’
কথায়, গল্পে আর নটোবরের দীর্ঘশ্বাসে বেশ কিছুক্ষণ কাটলো, দুজনের হাতের বিড়ি ফুরলো, বদনার কান ধরে ফিরে গেল জিতেন; তবু বসেই রইলো নটোবর। মানুষের উত্তরণ আর সুখের গল্প বলে নটোবরের বুকটা আরও ভারী করে দিয়ে গেল জিতেন।
এই যে খান সাহেব আজ পাটকল দিয়েছে, চানাচুর-বিস্কুটের কারখানা দিয়েছে; এই খান সাহেবের বাবা লোকের বাড়িতে কামলা দিতো আর খান সাহেব আটার মিলে কাজ করতো, খান সাহেবের নাম তখন আইনুল খান। তারপর অনেকদিন কোথায় যেন ছিল আইনুল এবং ফিরে এসে হঠাৎ করেই আঙুল ফুলে কলাগাছ না, রীতিমতো তালগাছ হয়ে গেল; আর আইনুল খান হলো খান সাহেব! কোথায় পেলো এতো টাকা? লোকে বলে মাটির নিচে টাকার মাইট পেয়েছে, কেউ বলে কার নাকি কালো টাকা রাখার জায়গা নেই তাই খান সাহেবকে দিয়েছে ব্যবসার জন্য। নানা কথা ভাসে বাতাসে। এক সময় যারা আইনুল খানকে আটার মিলে কাজ করতে দেখেছে, তাদের ভাঁজ পরা কপালে আরও ভাঁজ পড়ে খান সাহেবের বিত্ত-বৈভবের ছড়াছড়ি দেখে!
বাতাসে যে কথাই ভাসুক, আর যার কপালে যতো পুরু ভাঁজই পড়ুক, বাস্তবতা হলো খান সাহেব এখন অঢেল টাকা, বিপুল সম্পদ আর সম্মানের মালিক। আজকাল সম্মানও হয়েছে বড় ছেনাল, জ্ঞান-গুণ ছেড়ে টাকার সাথে তার যতো সখ্যতা! খান সাহেবের বিত্ত-বৈভব আর সুখের বিপুলতা-গভীরতার কথা চিন্তা করে থৈ খুঁজে পায় না নটোবর। খান সাহেবের সুখ তার মনের অসুখ বাড়ায়। জীবনের প্রতি চরম বিতৃষ্ণা নিয়ে আবার খিচি কাটা শুরু করে। কিন্তু মনের অসুখ নিরাময় হয় না, বরং সংক্রমণ ছড়ায়। খান সাহেবকে সে কখনও দেখেনি, কেবল তার অতীত-বর্তমানের গল্প শুনেছে। গল্প শুনেই সে মনে মনে খান সাহেবের মোটামুটি একটা অবয়ব দাঁড় করিয়েছে; মুখটি স্পষ্ট কল্পনা করার চেষ্টা করলেও কিছুটা ঝাপসা-ই রয়ে গেছে, তবে ধড়টা দীর্ঘ এবং বিপুল আয়তনে ধরা দিয়েছে! প্রথমে কল্পিত খান সাহেব; তারপর একে একে তার মনের পর্দায় তপন, নারায়ণ, নির্মলসহ আরও অনেক স্বচ্ছল মানুষের মুখ ভেসে উঠলে ভীষণ বিপন্নবোধ করে সে।
সর্বশেষ তার মনে পড়ে এরশাদুল মিয়ার কথা, সন্ধ্যা উতরে গেলেও নিজের জমিতে লোকে তাকে কোদাল দিয়ে আল কোপাতে দেখেছিল। পরদিন সকালেই তার জমিতে দেখা গেল মাটি দিয়ে বুজিয়ে রাখা পাশাপাশি দুটো গর্ত আর গর্তের পাশে মাটির নতুন দুটো সরায় কলা আর শুকিয়ে যাওয়া দুধের চিহ্ন! অবশ্য কিছু পাওয়ার কথা বরাবরই অস্বীকার করেছে এরশাদুল মিয়া কিন্তু লোকে যা বুঝার বুঝে গেছে কয়েক মাস ঝিম মেরে থাকার পর এরশাদুল মিয়া যখন বাড়িতে বিল্ডিং তুলেছে আর মাঠে একের পর এক জমি কিনেছে। নটোবর রাতে বিছানায় শুয়ে শুয়ে নিজের কপালে হাত রেখে এরশাদুল মিয়ার কপালের কথা ভেবেছে আর ডুবে গেছে কল্প রাজ্যে, দুটো না হোক অন্তত একটা কলসও যদি সে পেতো, অথবা সরকারদের পুরনো পুকুরের পাড় দিয়ে হেঁটে আসার সময় যদি পেতো গড়গড় শব্দ করে পুকুরের তলদেশ থেকে পাড়ে উঠে আসা একটা টাকার মাইট! অমন একদিন কেন, সারা জীবন সে নতুন সরায় দুধ-কলা দিতো মা মনসাকে! ঘুম ভাঙলে নটোবর আবিষ্কার করেছে টাকার মাইটের বদলে তার মুখের কাছে মৃদু চুপসানো বেলুনের মতো বউয়ের মাই!
আমাদের সমাজে সকল শ্রেণির অধিকাংশ মানুষের মধ্যে অপরের সুখ দেখে নিজের অসুখ বাড়িয়ে তোলার যে মানসিক রোগ বিরাজমান, সেই রোগ দ্বারা নটোবরও সংক্রামিত, রোগ নিরাময়ের দাওয়াই জানা নেই তার। সেই শিক্ষাও তার নেই। তাই বলে অন্যের খারাপ চায় না সে কিংবা কারো ক্ষতিও করে না। ক্ষতি যা করার করে নিজের। স্ত্রী-সন্তানের ভরণ-পোষণের নূন্যতম প্রয়োজন আর তার সামর্থের মাঝে সমন্বয়হীনতার অভাবে প্রায়ই যখন মেজাজ বিগড়ে যায়, তখন খুব তুচ্ছ কারণেও স্ত্রী-সন্তানদের পিটায়!
পাড়ার লোকে নটোবরের বউ পিটানো দেখে বলে, ‘অই যে আজ আবার নটা ক্ষেপছে, বউ ঠাপাতেছে!’ এরা বউকে প্রহার আর বউয়ের সাথে যৌনসঙ্গম উভয়কেই ঠাপানো বলে!
খিচি পাট কাটতে কাটতে চৈত্রের মরা খালের মতো তৃষ্ণায় শুকিয়ে এলো নটোবরের বুক। শুকনো ঢোক গিলতে গিলতে একসময় তার মনে হলো এবার একটু জল খাওয়া দরকার। গরমে সিদ্ধ শরীরটাকে ছায়ায় রেখে একটু শীতল করাও দরকার। ছড়ানো ষোলটি আঁটি গুছিয়ে বোঝা বেঁধে বাকি এগারোটি আঁটি গুনে আলপথ ধরে হাঁটতে শুরু করলো। পাটক্ষেত থেকে বেরিয়ে সতীশ বাবুর বাড়ির আমগাছের ছায়া আর একপশলা বাতাসের স্বাদ পেতেই সারা শরীরে প্রশান্তি ছড়িয়ে পড়লো। ঘামে ভেজা জামাটা রোদে শুকোতে দিয়ে মাথার গামছা খুলে ঘাম মুছলো। টিউবয়েলের শীতল জলে হাত-মুখ-পা ধুয়ে টিউবয়েলের মুখে মুখ লাগিয়ে পেট ভরে জল পান করলো, তারপর আমগাছের ছায়ায় পা ছড়িয়ে বসে জলে ভেজা হাত-মুখ মুছতে লাগলো গামচা দিয়ে। আমগাছের ছায়া আর হালকা বাতাস শরীরে প্রশান্তি আনলেও উত্তরের মাঠের পাটের মাথায় ঢেউ খেলানো রোদ্দুরের দিকে তাকিয়ে মনে স্বস্তি এলো না। আবার মনে পড়লো তপন-নারায়ণদের কথা, ওরা নিশ্চয় এখন গাছের ছায়ায় পাটি পেতে দিব্যি দিবানিদ্রা দিচ্ছে, নয়তো সোহাগদের কাছাড়ি ঘরে বসে সৌখিন খিস্তি করতে করতে তাস খেলছে আর গালগল্প করছে। হাতের কাঁচি দিয়ে মাটিতে দাগ কাটতে লাগলো সে, প্রথমে খাড়াভাবে, তারপর তেড়ছাভাবে দাগের ওপর দিয়ে দাগ কাটলো, এরপর এলোমেলোভাবে চালাতে লাগলো কাঁচির আগা।
সতীশ বাবুর রান্নাঘর থেকে ইলিশ মাছ ভাজার গন্ধ ভেসে এলো নটোবরের ঘ্রাণেন্দ্রিয়ে। ঘাড় বামে ঘুরিয়ে করুণ চোখে সতীশ বাবুর ভেতর বাড়ির রান্নাঘরের টিনের চালার দিকে তাকালো, রান্নাঘরের ঊর্ধ্বমুখী ধোঁয়া জামগাছের পাতা ছুঁয়ে মৃদু বাতাসে মিলিয়ে যাচ্ছে। তার মনে পড়লো গত বছর পাট বেচে একটা ইলিশ কিনেছিল। ছেলে দুটো আর মেয়েটা খুশি মনে খেয়েছিল মজা করে। সে নিজেও ইলিশ মাছের তেল আর তেলে অল্প ভাজা কাঁচামরিচ দিয়ে খেয়েছিল এক থালা ভাত। তারপর আর ইলিশ কেনা হয়নি, এমনকি মাঘ মাসে নতুন ইলিশও ঘরে তোলা হয়নি।
নটোবরের মনে পড়লো তার ছেলেবেলার কথা। তার ছেলেবেলা যে খুব স্বচ্ছলতায় কেটেছে তা নয়, তাই বলে বছরে একটা ইলিশ খাওয়ায়নি তার বাবা। প্রথম খিচি পাট হাটে বিক্রি করে বাবা তিলেখাজা আর বাতাসা কিনে আনতো তুলসীতলায় হরিলুট দেবার জন্য, ধুপকাঠি-ধুনুচি জ্বালিয়ে হরিলুট দেবার পর ভাই-বোনেরা সবাই ভাগ করে খেতো হরিলুটের তিলেখাজা-বাতাসা। বাবা হয়তো তার ঈশ্বরের কাছে আকুতি জানাতো যাতে পাটের রঙ ভাল হয়, এখনকার মতো পাটে রঙ দেবার প্রচলন শুরু হয়নি তখন; পাটের রঙ নির্ভর করতো বৃষ্টির জল আর বর্ষার পোয়াতি হড়াই নদীর বুক উপচে উত্তরের বিল কতোটা যৌবনবতী হয় তার ওপর। কারো পাটের রঙ সোনালি হলে তার মুখে হাসি ফুটতো ঘর আলোকিত করে থাকা দুধে-আলতা কন্যার গর্বিত পিতার মতো, আর পাটের রঙ কালো হলে কালো মেয়ের পিতার মতোই মৌন ব্যথায় ভারী হয়ে থাকতো বুক।
বড়ো পাট কাটা-ধোঁয়া হলে বাবা প্রথম হাটে পাট বিক্রি করেই একটা ইলিশ আঙুলে ঝুলিয়ে বাড়ি ফিরতো। সে নিজে যেদিন বাবার সাথে হাটে যেতো পাট বিক্রি করতে, সেদিন ফেরার সময় তার হাতে থাকতো ইলিশ। দু-দিন ধরে ইলিশ খেতো, থালা-বাসনে ইলিশের গন্ধ থাকতো আরও একদিন! আড়াইশো-তিনশো টাকা মণ ছিল পাট, ইলিশের কেজি ত্রিশ-চল্লিশ টাকা। আর এখন, এক মন পাটের টাকায়ও এক কেজির একটা ইলিশ হয় না! পাট বেচে একটা-দুটো জাটকা এনে রাতে খেলে সকালেই তার গন্ধ উবে যায়!
বাবার সময়েও সাড়ে তিন পাখি জমি ছিল, বাবা বর্গা চাষ করতো, কিন্তু জীবনযাত্রার মান এখনকার চেয়ে বেশ ভাল ছিল তখন। সে তার সন্তানদেরকে বছরে একটা কিংবা দুটো ইলিশের বেশি খাওয়াতে পারে না, এর বেশি খাওয়াতে গেলে অন্যদিকে টান পড়ে। কিন্তু তার বাবা তাদেরকে বছরে অন্তত আট-দশটা ইলিশ খাওয়াতো। মাঘ মাসে নতুন ইলিশ ঘরে তোলা হতো। মা ইলিশের মাথায় আর বাস্তুখামে তেল-সিঁদুর পরিয়ে উলুধ্বনি দিতে দিতে ধান-দূর্বা দিতো, তারপর ইলিশের আঁশ ছাড়িয়ে বাস্তুখামের গোড়ার মাটি খুঁড়ে পুঁতে রাখার সময় মা বলতো, ‘কার বিয়ের টাহা গাড়বো?’
মায়ের শেখানো মতো সে বলতো, ‘দিদির বিয়ের।’
এভাবে পরপর তিনবার বলার পর মা আঁশগুলো পুঁতে ঝুরো মাটিতে জল ঢেলে লেপে রাখতো জায়গাটা। তারপর তেল, হলুদ, মরিচ ছাড়া সেই মাছ রান্না করতো লাউয়ের ডাটা-পাতা দিয়ে। পুকুরের জলের মতো পাতলা ঝোল, অথচ কী তার স্বাদ!
মাঘ মাসে ধানক্ষেতের সার-ওষুধ কেনার ধকল সামলে নতুন ইলিশ কেনার টাকা আর তার হাতে অবশিষ্ট থাকে না, উপরন্তু ফাল্গুন-চৈত্রের দিকে ঘরের ধান ফুরিয়ে গেলে পিঁয়াজ বেচে চাল কিনতে হয় নতুন ধান না ওঠা পর্যন্ত। জোড়াতালির সংসার তার, এটা বেচে সেটা করতে হয়, সেটা বেচে ওটা করতে হয়। ফলে বেশিরভাগ বছরই সে তার সন্তানদেরকে বঞ্চিত করে নতুন ইলিশের স্বাদ থেকে।
ইলিশের ঘোরে ডুবে যায় নটোবর। ইলিশের ঘোর বাবা হিসেবে তার অক্ষমতা এবং দৈন্যতার প্রতিবিম্বের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেয় তাকে। এই বিষয়ে সে নিশ্চিত হয় যে দুজনেরই ব্যর্থতা থাকা সত্ত্বেও বাবা হিসেবে তার চেয়ে তার বাবার সফলতা ছিল অনেক বেশি। সময়ের বিচারে একজন ব্যর্থ বাবা সে, স্বামী হিসেবেও তাই। ছেলে-মেয়েদের স্বাদ-আহ্লাদ প্রায় কিছুই সে পূরণ করতে পারে না, কিন্তু তার বাবা তাদের স্বাদ-আহ্লাদ অনেকটাই পূরণ করতে পেরেছিল। অথচ দুজনই কৃষক, দুজনই সাড়ে তিন পাখি ফসলি জমির মালিক এবং দুজনই বর্গাচাষী। পার্থক্য শুধু সময়ের, এই সময়ের মাঝে ঘটে গেছে অনেক কিছু। বাবার সময়ে কাদা ভেঙে পায়ে হেঁটে হাট-বাজারে যেতে হতো, এখন পাঁচ টাকায় পাকা রাস্তায় অটোয় চেপে দশ মিনিটে বাজারে যাওয়া যায়; বাবার সময়ে সন্ধ্যা নামলেই ভূতুরে অন্ধকার নামতো গ্রামে, এখন অবস্থাপন্ন গৃহস্থবাড়ির উঠোনে সারারাত বিজলি বাতি জ্বলে; বাবার সময়ে সারা গ্রামে তিনটে রেডিও ছিল, এখন তিন ডজনের বেশি টেলিভিশন গ্রামে; বাবার কাছে বড় মামার চিঠি আসতে পাঁচদিন লাগতো, এখন মামাতো ভাইয়ের সাথে চাইলেই যখন তখন কথা বলা যায় ফোনে। বাবা তাদের অনেক আব্দার পূরণ করেছে, মেলায় নিয়ে পেট ভরে খাইয়েছে, মেলা থেকে তার পছন্দ মতো মাটির-কাঠের নানান রকম খেলনা কিনে দিয়েছে। কিন্তু সে নিজে তার ছেলের পছন্দ মতো খেলনা কিনে দিতে পারে না, ব্যাটারি চালিত বাহারি গাড়ি, হেলিকপ্টার কিংবা নকল বন্দুক কিনে দেবার সামর্থ তার নেই। দুলাল মেকারের দোকান থেকে ভ্যানের পুরনো বিয়ারিং কিনে বাবা তাকে গাড়ি বানিয়ে দিয়েছিল, রাস্তায় ধুলো উড়িয়ে গাড়ি চালাতো সে গাড়ি চালাতো সতীশবাবুর মেজোছেলে রাজন এবং তার অন্যান্য বন্ধুদের সঙ্গে, আর এখন তার ছোট ছেলে পাকা রাস্তায় সতীশবাবুর নাতির যান্ত্রিক চার চাকার গাড়ি চালানো দেখে হ্যাংলার মতো তাকিয়ে থাকে। ছেলের মুখ দেখে তার পিতৃ হৃদয়ে ঘা লাগে, ছেলের কাছ থেকে নিজেকে লুকিয়ে রাখতে চায় সে কিন্তু তার ভেতরের হাহাকার লুকোতে পারে না, বউয়ের চোখে ধরা পড়ে।
সতীশ বাবুর নাতি-নাতনিরা গ্রামের প্রাইমারী স্কুলে পড়ে না। প্রাইমারী স্কুলের পড়ালেখা নাকি ভালো না! বাজারের কাছে যে নতুন কিন্ডার গার্টেন হয়েছে, ওখানকার পড়ালেখা নাকি ভাল। ওই স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীরা নাকি বুদ্ধিমান, ওদের নাকি অনেক অনেক বই পড়ানো হয়। একই ক্লাসের পড়ালেখার আবার ভালমন্দ কী তা নটোবরের মাথায় ঢোকে না। তবে একটা পার্থক্য তার চোখে ধরা পড়ে, ওখানকার ছাত্র-ছাত্রীরা ভাল জামা-প্যান্ট, জুতো-মোজা প’রে ফিটবাবু সেজে স্কুলে যায়, স্কুলের ভ্যান এসে বাড়ি থেকে তাদের নিয়ে যায় আবার দিয়েও যায়। তারও ইচ্ছে করে ছোট ছেলেটাকে অমন ফিটবাবু সাজিয়ে কিন্ডার গার্টেনে পাঠাতে, কিন্তু তার ইচ্ছে আর সামর্থের মাঝখানে বিস্তর ফারাক! সে মনোকষ্টে ভোগে, অথচ তার বাবাকে কখনো এমন মনোকষ্টে ভুগতে হয়নি। কেননা সে আর সতীশ বাবুর মেজোছেলে রাজন বিয়ারিং দিয়ে বানানো গাড়ি নিয়ে একই সঙ্গে খেলছে, দুজনে একই প্রাইমারি স্কুলে পড়েছে ক্লাস ফাইভে উঠে সে পড়া ছেড়ে দেবার আগ পর্যন্ত। তার বাবা ছিল কৃষক আর সতীশবাবু ছিলেন কলেজের শিক্ষক কিন্তু শৈশবে সে আর রাজন অনেকটা কাছাকাছি সুযোগ-সুবিধার মধ্য দিয়ে বেড়ে উঠেছিল; সে যেমনি তার বাবার মতো কৃষক, তেমনি রাজনও ওর বাবার মতো শিক্ষক; অথচ আজ তার সন্তান আর রাজনের সন্তানের বেড়ে ওঠার মাঝে বিস্তর সামাজিক-অর্থনৈতিক তফাৎ; অথচ সময়ের ব্যবধান মাত্র ত্রিশ-পঁয়ত্রিশ বছরের!
টিভিতে বাহারি পণ্যের ঝা চকচকে বিজ্ঞাপন দেখায়, পরদিনই বাজারে কিংবা তাদের পাড়ার আফজালের দোকানে বাহারি পণ্যের মোড়ক তার দিকে তাকিয়ে উপহাসে হাসে! রাজন, তপন কিংবা নারায়ণদের বাড়ির মানুষকে এসব পণ্য ভোগ করতে দেখে পিতা হিসেবে, স্বামী হিসেবে বড় অসহায়বোধ করে সে। চটকদার ভোগ্যপণ্য যেমন বেড়েছে, তেমনি বেড়েছে তার দাম; কিন্তু এসব পণ্যের সাথে কৃষিজাত দ্রব্যের দামের সঠিক সমন্বয় হয়নি। সমন্বয় হয়নি কৃষিজাত দ্রব্যের উৎপাদন ব্যয় আর বিক্রয় মূল্যের। তার ওপর আছে সার-ওষুধের সংকট।
এতো কিছু বোঝে না নটোবর কিন্তু পরিবর্তনটা বুঝতে পারে, যে পরিবর্তনে ক্রমাগত ক্ষত-বিক্ষত হয় তার হৃদয়।
তাই জেদ চেপেছে নটোবরের মনে, নিজের ছেলে দুটোকে কোনোভাবেই কৃষিকাজের সাথে সম্পৃক্ত করবে না। খাটবে সে, ছেলে-মেয়ের জন্য শরীর নিঙড়ে ঘাম ঝরাবে, কিন্তু ছেলেদের পায়ের ছাপ পড়তে দেবে না জমিতে, নইলে ওদের জীবন হয়তো তার চেয়েও খারাপ হবে। সে অথবা তার মতো অসংখ্য নটোবর জীবন নিঙড়ে দেয় ফসলের জন্য; বারো তালি নয়, শততালি দিয়ে চলে তাদের গেরস্থালি; তবুও জীবনের নূন্যতম চাহিদা তাদের পূরণ হয় না। নটোবরের সকল ক্ষোভ আর অভিমান গিয়ে পড়ে সিরাজ মেম্বার, নাজির চেয়ারম্যান, এমপি জলিল মোল্লা আর দেশের প্রধানমন্ত্রীর ওপর, নির্বাচনে সে যাদেরকে ভোট দিয়েছে!
ইলিশের ঘ্রাণ বাতাসে মৌ মৌ করছে। হেলে পড়া ছায়ার দিকে নজর পড়তেই উঠলো নটোবর। ঘামে ভেজা জামা রোদে শুকিয়ে গেছে, জামাটা গায়ে দিয়ে কাঁচি নিয়ে আমগাছের ছায়া থেকে বেরিয়ে আবার রোদ মাথায় করে আলপথ ধরে হাঁটা শুরু করলে ইলিশের ঘ্রাণও তার পিছু নেয়, সতীশবাবুর বাড়ির রান্নাঘরের সাথে ক্রমশ ব্যবধান বাড়লেও ইলিশের ঘ্রাণ তার পিছু ছাড়ে না কিছুতেই!
ঢাকা।
নভেম্বর, ২০১৫।
২৯ শে জুন, ২০১৯ রাত ১:০৪
মিশু মিলন বলেছেন: ধন্যবাদ।
২| ২৮ শে জুন, ২০১৯ রাত ১০:৫২
আহমেদ জী এস বলেছেন: মিশু মিলন,
সুন্দর লিখেছেন । জীবন যুদ্ধে ক্লান্ত আর পরাজিত এক কৃষকের কাহিনীর ভেতর দিয়ে বাংলার কৃষকদের হাভাতে অবস্থা ফুটিয়ে তুলেছেন দারুন। এসব চিত্রই এখন বাস্তব। কালের যাত্রায় বাংলার কৃষকরা এখন বিলুপ্তির পথের একটি প্রজাতি।
২৯ শে জুন, ২০১৯ রাত ১:০৫
মিশু মিলন বলেছেন: আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
৩| ২৯ শে জুন, ২০১৯ সকাল ৮:০২
রাজীব নুর বলেছেন: চমৎকার গল্প।
আপনার গল্প আগেও পড়েছি।
৪| ০৪ ঠা জুলাই, ২০১৯ রাত ১০:১৮
মিশু মিলন বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ। ভালো থাকবে।
©somewhere in net ltd.
১| ২৮ শে জুন, ২০১৯ রাত ৯:২৮
চাঁদগাজী বলেছেন:
ভালো প্লট, ভালো লেখা; পায়খানার ব্যাপারটা অপ্রয়োজনীয়