নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মিশু মিলন

মিশু মিলন

আমি বর্তমানে ইস্টিশন এবং সামহোয়্যার ইন ব্লগে লিখি। আমার সকল লেখা আমি এই দুটি ব্লগেই সংরক্ষণ করে রাখতে চাই। এই দুটি ব্লগের বাইরে অনলাইন পোর্টাল, লিটল ম্যাগাজিন এবং অন্য দু-একটি ব্লগে কিছু লেখা প্রকাশিত হলেও পরবর্তীতে কিছু কিছু লেখা আমি আবার সম্পাদনা করেছি। ফলে ইস্টিশন এবং সামহোয়্যার ইন ব্লগের লেখাই আমার চূড়ান্ত সম্পাদিত লেখা। এই দুটি ব্লগের বাইরে অন্যসব লেখা আমি প্রত্যাহার করছি। মিশু মিলন ঢাকা। ৯ এপ্রিল, ২০১৯।

মিশু মিলন › বিস্তারিত পোস্টঃ

লৌকিক লোকলীলা (উপন্যাস: পর্ব-নয়)

২৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ দুপুর ১:৪৯

বন্ধুর মুখে সব শুনে ব্যথিত হন তেজরাজ, কিন্তু এত সহজে দমে যাবার পাত্র তিনি নন, আখড়ায় আসা তিনি বন্ধ করেন না, বরং একদিন সাহস করে সরাসরি কথা বলেন দেবী বৈষ্ণবীর সঙ্গে, তাতেও দেবী বৈষ্ণবীর মন গলে না। শেষে তেজরাজ একদিন দুপুরবেলা আখড়ার প্রধান দীনবন্ধু গোঁসাইকে ধরেন, ‘আমি আপনার কাছে দেবীকে ভিক্ষে চাই, দেবীকে আমি বিয়ে করবার চাই, ভগবানের দিব্যি ওরে আমি সুখেই রাখব।’

দীনবন্ধু গোঁসাইও তাকে বোঝানোর চেষ্টা করেন, ‘এ তোমার সাময়িক মোহ। মোহ আর প্রেম-ভালোবাসা এক নয়, সংসার তো নয়ই।’

কিন্তু তেজরাজ অবুঝ! শেষে দীনবন্ধু গোঁসাই বলেন, ‘দেবী মা যদি তোমার সঙ্গে সংসার করবার চায় তাতে আমার আপত্তি নাই। কিন্তু ওরও তো মন আছে, ওর মনের ওপর তো আর জোর করবার পারিনে। আমি ওর সাথে কথা কোয়ে দেখি।’

নানা প্রচেষ্টার পর শেষ পর্যন্ত মন গলে দেবী বৈষ্ণবীর, তেজরাজ বাড়িতে বাবা-মাকে জানান দেবীকে বিয়ে করার কথা। শুনে তেজরাজের বাবা কৈলাশ রুংটার মারোয়াড়ি রক্তের অহংকার চাগাড় দিয়ে ওঠে, তিনি ছেলেকে স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দেন যে তারা হাড়হাভাতে ভিক্ষুকের জাত বাঙালীদের সঙ্গে ব্যবসা করতে সেই যোধপুর থেকে বাংলা মুলুকে এসেছেন, আত্মীয়তা করতে নয়; বাঙালীদেরকে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান কিংবা বাড়ির কাজের জন্য চাকর-চাকরানী করা যায়, বাড়ির বউ কিংবা জামাই নয়। আরো জানান যে তার মুখে তিনি ফের যেন এই কথা না শোনেন, আগামী শীতেই তারা সপরিবারে যোধপুর গিয়ে স্ব-জাতের সু-পাত্রীর সঙ্গে তেজরাজের বিয়ে দেবেন।

শীতের জন্য আর অপেক্ষা করেননি তেজরাজ, আষাঢ়ের এক মেঘগম্ভীর দিনে মন্দিরে গিয়ে দেবী বৈষ্ণবীকে বিয়ে করে বাড়িতে এসে ওঠেন। তেজরাজ ভেবেছিলেন তিনি বাবা-মায়ের জ্যেষ্ঠ সন্তান, বিয়ে করে নতুন বউকে নিয়ে বাড়িতে উঠলে তারা নিশ্চয় মেনে নেবেন; কিন্তু বঙ্গদেশে জন্ম নেওয়া, বঙ্গদেশের মোলায়েম মাটি, জলজ হাওয়ায় আর ভাষা-সংস্কৃতিতে বাড়ন্ত তেজরাজ মরুদেশে বেড়ে ওঠা নিজের বাবা-মায়ের হৃদয়ের কঠিনতা-রুক্ষতা ঠিক মতো চিনতে পারেননি, বুঝতে পারেননি তার বাবা-মায়ের মারোয়াড়ি অহংবোধ কতটা গভীরে প্রোথিত। বাবা-মা তাদের বিয়ে মেনে নেননি, বাড়িতেও তাদের জায়গা দেন নি। বর্ষণমুখর সন্ধ্যায় তেজরাজ নববধু দেবীকে নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান আর গিয়ে ওঠেন বন্ধু মাখনলালের বাড়িতে। তিনি ভেবেছিলেন কিছুদিন পর সব ঠিক হয়ে যাবে, বাবা-মা তার স্ত্রীকে মেনে নেবেন, কিন্তু কিছুই ঠিক হয়নি, তার কারণে মারোয়াড়ি সমাজে বাবা-মায়ের সম্মানহানি হয়েছে, মাথা নত হয়ে গেছে, এই ক্ষতি আর ক্ষত তারা ভুলতে পারেন নি।

কিংকর্তব্যবিমূঢ় তেজরাজ তখন চোখে অন্ধকার দেখতে থাকেন, বাড়ি এবং পৈত্রিক ব্যবসা থেকে তিনি বিতাড়িত, হাতে খুব বেশি টাকা নেই যে তা দিয়ে নতুন করে ব্যবসা করবেন। বন্ধুর বাড়িতে নতুন বউকে নিয়ে তো আর বেশিদিন থাকা যায় না, তাই জামালপুর বাজারেই দুই কামড়ার একটা ঘর ভাড়া নেন। বাঙালী বন্ধুরা সংসারের টুকিটাকি জিনিস যেমন- কেউ বিছানা, কেউ বালিশ, কেউ হাঁড়ি-পাতিল কিনে দিয়ে তার আর দেবীর সংসার গুছিয়ে দেন। তবে তাকেও তো কিছু করতে হবে, কিন্তু কী করবেন তিনি? লেখাপড়া বেশিদূর করেন নি যে বড় কোনো শহরে গিয়ে চাকরির চেষ্টা করবেন। শেষে ভেবে-চিন্তে নিজেই একটা পথ খুঁজে বের করেন, একটা ছোট্ট টিনের বাক্স কেনেন, তারপর পরিচিত এক মারোয়াড়ির দোকান থেকে ধারে শাঁখা, সিঁদূর, আলতা, নীল, ন্যাপথল, সুচ ইত্যাদি কিনে বাক্সে গুছিয়ে মারোয়াড়ি রক্তের সকল অহংকার বিসর্জন দিয়ে ফেরি করে বিক্রি করতে গ্রামের পথে বেরিয়ে পড়েন।

প্রথমে বছর খানেক শুধু পায়ে হেঁটে পণ্য বিক্রি করার পর হাতে কিছু টাকা জমলে একটা ছোট্ট ডিঙ্গি নৌকা কিনে নেন তেজরাজ, চন্দনা নদীর বুকে নিজেই নৌকা বেয়ে বিভিন্ন গ্রামের ঘাটে নৌকা বেঁধে রেখে পায়ে হেঁটে গ্রামে ঘুরে ঘুরে পণ্য বিক্রি করতে শুরু করেন। যা রোজগার হতো তাতে দুজনের সংসার বেশ চলত। এরপর ১৯৪৬ সালে কালুখালী-ভাটিয়াপাড়া লাইনে ট্রেন চালু হলে ট্রেনে ফেরি করে পণ্য বিক্রি শুরু করেন, আবার ট্রেনে চড়ে দূরের কোনো স্টেশনে নেমে পায়ে হেঁটে বিভিন্ন গ্রামেও পণ্য বিক্রি করতে থাকেন। এভাবেই কখনো ট্রেনে চড়ে, কখনো নৌকায় আর পায়ে হেঁটে চলতে থাকে তার ব্যবসা। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের সময় তার পরিবার ভারতে চলে যায়, যাবার আগে তাকে প্রস্তাব দেয়- সে যদি ঐ ভিক্ষুকের জাতের মেয়েটাকে ছেড়ে তাদের সঙ্গে যায় তাহলে তারা তাকে স্ব-জাতের ভালো পাত্রী দেখে আবার বিয়ে দেবেন আর সম্পত্তির ভাগও দেবেন। তেজরাজ সেই লোভনীয় প্রস্তাব প্রত্যাখান করেন, জানিয়ে দেন যে তিনি দেবীকে নিয়ে এখানেই সুখে আছেন, জন্মস্থান ছেড়ে কোথাও যেতে চান না। পরিবারের সঙ্গে তার বন্ধন আগেই ছিঁড়ে গিয়েছিল, পুনরায় মিলনের সম্ভাবনার শেষ সুতোটাও বিছিন্ন হয়ে যায় ১৯৪৭ সালের শেষের দিকে যখন তার পরিবার এখানকার সবকিছু বিক্রি করে ভারতে চলে যায়।

বেশ কয়েক বছর পর হাতে কিছু টাকা জমলে তেজরাজ চন্দনা নদীর পশ্চিম পারের এই গ্রামে জমি কেনেন আর আরো কয়েক বছর পর বাড়ি করে বাজারের ভাড়া বাড়ি ছেড়ে পাকাপাকিভাবে এখানেই চলে আসেন। তেজরাজ আর দেবী দুজন দুজনকে ভালোবাসতেন খুব, তাদের একে অন্যের প্রতি ভালোবাসা-শ্রদ্ধাবোধ আজও সে-কালের মানুষের মনে গেঁথে আছে। দেশভাগের সময় তেজরাজের পরিবার এবং অন্য আত্মীয়রা ভারতে চলে যাওয়ায় এই দেশে তার আপন আত্মীয়-স্বজন কেউ ছিল না, আর দেবীর থাকলেও সেখানে যেতেন না, দুজনের কোনো সন্তান-সন্ততিও ছিল না। তাই কিছুদিন পরপরই বেরিয়ে পড়তেন দুজন, নানা জায়গায় তীর্থ করে ফিরতেন, কখনো কখনো এক-দুই মাস পর বাড়ি ফিরতেন। যতদিন দুজন বেঁচে ছিলেন একটি রাতও দুজন-দুজনকে ছাড়া থাকেননি কোথাও। বৃদ্ধ বয়সেও রাস্তা দিয়ে চলতেন একে-অন্যের হাত ধরে, লোকে মজা করে তাদেরকে বলত- ‘টোনা-টুনি’। বোঁচকা নিয়ে কোথাও যেতে দেখলেই লোকে বলত, ‘ওই টোনা-টুনি চলল গয়া-কাশি-বৃন্দাবনে!’

বৃদ্ধ বয়সে দেবী মারা যাবার পর তেজরাজ ভীষণ নিঃসঙ্গ হয়ে পড়েন, তখন খুব বেশি দূরে পণ্য বিক্রি করতে যেতেন না, আশ-পাশের কয়েকটি গ্রামের মধ্যেই সীমাবন্ধ ছিল তার বেচাকেনা। প্রায়ই জামালপুর শ্মশানে গিয়ে চুপচাপ বসে থাকতেন, যেখানে দেবীকে দাহ করা হয়, ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকতেন একা একা, কী ভাবতেন কে জানে! দেবী মারা যাবার নয় বছর পর তেজরাজ রুংটা মারা যান। বৃদ্ধ তেজরাজ এখনো বিলাসদের স্মৃতিতে অমলিন। মাথা ভর্তি ত্রিবর্ণের উস্কো-খুস্কো চুল, সিঁদূর আর নীল বিক্রি করার পর মাথায় হাত মোছার কারণে সাদা চুলের কিছু কিছু লাল আর নীল বর্ণের হয়ে থাকত। হাতে টিনের বাক্স নিয়ে বৃদ্ধ তেজরাজ ছুটতেন তার মাইজীদের কাছে শাঁখা, সিঁদূর, আলতা, নীল, ন্যাপথল, সুচ ইত্যাদি বিক্রি করতে। মূলত গ্রামের বিবাহিত নারীরাই ছিল তেজরাজের ক্রেতা, তাদেরকে তিনি ‘মাইজী’ বলে সম্বোধন করতেন।

তেজরাজের জীবন মোটেও আড়ম্বরপূর্ণ ছিল না, যে বংশের সন্তান তিনি, তাতে চাইলেই তার জীবন বর্ণাঢ্য-ধন্যাঢ্য হতে পারত, কিন্তু সেই বর্ণাঢ্য-ধন্যাঢ্য জীবনের লালসা পায়ে ঠেলে তিনি এক সাধারণ বাঙালী নারীর আলতা-সিঁদূরের ফেরিওয়ালা সাধারণ স্বামী হয়েই জীবন কাটিয়ে দেন। তিনি যেমনি জানতেন না কোথায় চলে যায় তার পরিবার, তেমনি তার পরিবারও কোনোদিন তার খোঁজ করে নি। তবে অনাড়ম্বর জীবনেও দেবীকে নিয়ে খুব সুখে ছিলেন তেজরাজ, এখনো কুঞ্চিত চর্মের ফোকলা দাঁতের বৃদ্ধরা এক জায়গা হলে পুরনো দিনের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বলেন, ‘আজ-কালকার পোলাপান কী প্রেমের মর্ম জানে? প্রেম কী তা জানত তেজরাজ রুংটা আর দেবী বৈষ্ণবী! অমন খাঁটি প্রেম জীবনে আর চোক্ষে দ্যাকলাম না!’

শূন্য ভিটের দিকে তাকিয়ে বিলাসের মনে হয় তেজরাজের জীবন সত্যিই সার্থক ছিল, তিনি তার ভালোবাসার মানুষকে কাছে পেয়েছিলেন। ইহজগতে ওরা দুজন-দুজনকে খুব ভালোবাসতেন, মৃত্যুর পরও কি ওরা একসাথে আছেন? দুজন কোথায় আছেন এখন? স্বর্গে? স্বর্গেই যেন ওদের ঠাঁই হয়। নাকি এতদিনে ওদের আবার জন্ম হয়েছে? যদি ফের জন্ম হয়, তবে আবারও যেন দুজনের মিলন হয়, জনমে জনমে যেন দুজন-দজুনকে কাছে পায়। বিলাস জন্মান্তরবাদে বিশ্বাস করে, পূর্বজন্ম-ইহজন্ম-পরজন্ম নিয়ে ভাবতে ভালোবাসে। যে ধর্মীয় বৃত্তে ওর জন্ম হয়েছে, যে ধর্মীয় বোধ নিয়ে ও বেড়ে উঠেছে, সেই বোধের বৃত্তের ভেতরেই ওর ভাবনা ঘুরপাক খায়, বৃত্তের বাইরে গিয়ে ও কখনো ভাবার চেষ্টা করে না। শূন্য ভিটেটার দিকে তাকিয়ে হঠাৎ ওর বুকের ভেতর হাহাকার করে ওঠে, কিন্তু কার জন্য এই হাহাকার, শুধুই কি তেজরাজ রুংটা আর দেবী বৈষ্ণবীর জন্য, নাকি আরও একজনের জন্য, যাকে সে জীবনে পায়নি? মনের মানুষকে কাছে পাবার অনুভূতি কী তা সে জানে না, ওর ধারণা মনের মানুষের সঙ্গে সংসার করার অভিজ্ঞতার চেয়ে সুখ আর আনন্দের অভিজ্ঞতা অন্য কিছুতেই হতে পারে না, এই জীবনে সেই সুখ আর আনন্দ থেকে সে বঞ্চিত হয়েছে।

বিলাস পূর্বজন্মে কী ছিল তা জানে না, এই জন্মে পেয়েছে মহামূল্যবান মানব জীবন, কিন্তু ভালোবাসার মানুষকে না পাওয়ায় এই জীবনকে সে ব্যর্থ মনে করে। তাই পরজন্মে আবারও সে মানুষ হয়ে জন্মাতে চায়; তবে পুরুষ নয়, নারী, সুন্দরী নারী হয়ে জন্মাতে চায়!
আশালতা, আশালতা-ই বিলাসের মনে পরজন্মে সুন্দরী নারী হয়ে জন্মানোর এই বাসনার জন্ম দিয়েছে! ওরা যখন কিশোর-কিশোরী, দশম শ্রেণিতে পড়ে, তখন কত রজনী বিলাসের নির্ঘুম কেটেছে আশালতার স্বপ্নে বিভোর থেকে, কিভাবে আশালতাকে প্রেম নিবেদন করবে এই ভাবনায়ই পেরিয়ে গেছে প্রহরের পর প্রহর! সবাই ঘুমিয়ে পড়লে রাত জেগে সে চিঠি লিখেছে, পছন্দ হয়নি বলে বারবার ছিঁড়ে মুখে পুরে চিবিয়ে পিষে ফেলে দিয়ে আবার লিখেছে। তারপর অনেক কসরতের পর এক রাতে সে চূড়ান্ত চিঠিটা লিখে ফেলে- ‘প্রিয়তমা আশালতা’ সম্বোধন করে।

লেখার পর সুঁই দিয়ে বাম হাতের মধ্যমার ডগা ছিদ্র করে তপ্ত রক্ত দিয়ে চিঠির নিচের দিকে হার্টের চিহ্ন এঁকে ভেতরে লেখে- ‘আশা, আমার ভালোবাসা’!

চিঠি তো লেখা হলো কিন্তু কার মাধ্যমে পৌঁছে দেবে আশালতার কাছে? অনেক ভেবে শেষে সিদ্ধান্ত নেয় যে নিজের হাতেই আশালতাকে চিঠিটা দেবে, অন্য কারো হাতে দিলে বিষয়টা সবার কাছে প্রকাশ হয়ে যাবার সম্ভাবনা আছে। ধর্ম বইয়ের পিছন দিকের মলাটের মধ্যে চিঠিটা রাখে সে, অন্যসব বই রেখে ধর্ম বই বেছে নেয় এজন্য যে, ওর মনে হয় ধর্ম বইয়ের মলাটের মধ্যে চিঠিটা রাখলে ভগবান নিশ্চয় খুশি হবেন, খুশি হয়ে ওদের দুজনের প্রেম করিয়ে দেবেন! স্কুলে যাওয়া-আসার পথে সে তক্কে তক্কে থাকে যে কখন আশালতা একা হবে, একা হলেই বইটা আশালতার হাতে দিয়ে ভেতরের রহস্য উন্মোচন করবে। কিন্তু প্রায় প্রতিদিন-ই কোনো না কোনো সহপাঠী কিংবা নিচু ক্লাসের কোনো ছাত্রী আশালতার সঙ্গে স্কুলে যায়-আসে, কিছুতেই সে চিঠিটা দেবার সযোগ পায় না। শেষ পর্যন্ত স্কুল থেকে ফেরার পথে একদিন সেই সুবর্ণ সুযোগ মিলে যায়; আশালতার পাশে হাঁটতে হাঁটতে উত্তেজনায়-শঙ্কায় বুক ধুকপুক করে ওর, এ গল্প-সে গল্প করে বুকের ধুকপুকুনি থামানোর চেষ্টা করে, ঘেমে ওঠে, হাত-পা শক্ত হয়ে আসে। নিজেকে স্বাভাবিক রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করতে করতে এক সময় ধর্ম বইটা আশালতার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলে, ‘বইটা ধর।’

আশালতা বইটা হাতে নিয়ে বিলাসের মুখের দিকে তাকায়, ‘বই নিয়ে কী করব?’
বিলাসের তখনও বুক কাঁপছে, গলা শুকিয়ে আসছে, তবু বলে, ‘বাড়ি যায়ে পিছন দিকের মলাটটা খুলে দেহিস।’
‘এহন খুলি?’
‘না, এহন না।’
আশালতা ওর চোখের দিকে তাকিয়ে ভ্রু উঁচিয়ে অদ্ভুত মুখভঙ্গি করে হেসে বলে, ‘কী এমন মহামূল্যবান সম্পদ আছে মলাটের মদ্দি!’

উত্তরে সে মুখে কিছু না বলে পথ চলতে চলতে মৃদু হাসে আর দুরু দুরু বুকে আশালতার দিকে তাকায় প্রেমমাখা চোখে, বারবার!
সে-রাতে বিলাসের চোখে সহজে ঘুম আসে না, ওর কেবলই মনে পড়ে আশলতার কথা। ভাবে, আশালতা এতক্ষণে নিশ্চয় প্রেমপত্র পড়েছে! পড়ে কী ভাবছে আশালতা? সে কি খুশি হয়েছে? সে-উ কি ওর কথা ভাবছে? ভাবতে ভাবতে চিঠির উত্তর লিখছে? কাল যখন আশালতা বইটা ফেরত দেবে তখন নিশ্চয় মালাটের ভেতর তার লেখা চিঠির উত্তর থাকবে, নিশ্চয় উত্তর হবে ইতিবাচক, ভালোবাসার কথা লিখে জানাবে!

আশালতা যদি ওকে ভালোবাসে তবে কাল থেকে ওর জীবনটাই বদলে যাবে, ও জানে স্কুলের অনেক ছেলেই আশালতার পিছনে লাইন দিয়েছে, তাদের সবাইকে টপকে ও পেয়ে যাবে আশলতাকে, আশালতা কেবল ওর হবে, ওকেই ভালোবাসবে; আর তো মাত্র একটা বছর, তারপর এসএসসি পাশ করে কলেজে ভর্তি হলেই ওরা দুজন চুটিয়ে প্রেম করবে, পাশাপাশি বসে গল্প করবে, কলেজ থেকে পালিয়ে সিনেমা দেখবে, আরো কত কী! স্কুলের এই একটা বছর ওদের দুজনকেই একটু সাবধানে থাকতে হবে, যাতে ওদের সম্পর্কের কথা কেউ জানতে না পারে। এমন হাজারো ভাবনায়, আশায়, আকাঙ্ক্ষায় সেই রাত্রিটা পার করে বিলাস।

পরদিন মহা উৎসাহ-উত্তেজনায় স্কুলের পথে রওনা হয়, মাঝপথে গিয়ে তৃষ্ণার্ত চোখে তাকিয়ে থাকে পথের দিকে, আশালতার জন্য অপেক্ষা করে। কিন্তু আশালতা আসে না, অপেক্ষা করতে করতে আশালতাকে দেখতে না পেয়ে ভাবে, নিশ্চয় আশালতা আজ একটু আগেই স্কুলে চলে গেছে। স্কুলে গিয়ে কমনরুমের দিকে বারবার তাকায়, কিন্তু অনেক মেয়ের ভিড়ে কোথাও আশালতাকে দেখতে পায় না। স্যার ক্লাসে এলে পিছন পিছন অন্য সব মেয়েরাও ক্লাসে আসে কমনরুম থেকে, তাদের মধ্যে আশালতাকে দেখতে পায় না। ওর মাথায় ঘুরপাক খায়, ‘কী হলো আশার?’

প্রথম ক্লাস শেষে আশালতাদের বাড়ির পাশের একটি মেয়েকে জিজ্ঞেস করে জানতে পারে, কাল রাতে আশালতার জ্বর হয়েছে। উহঃ কী দুঃসহ সময়, কাল রাতেই আশালতার জ্বর এলো, আর একটা-দুটো দিন পরে এলে কী ক্ষতি হতো! আবার অপেক্ষা, দুঃসহ অপেক্ষা! ছয়দিন অপেক্ষার পর আশালতা স্কুলে এলে বারবার অকারণে বারান্দা দিয়ে হেঁটে যাবার সময় বিলাস কমনরুমের দিকে তাকায়, ওর দৃষ্টি আশালতাকে খোঁজে, একবার চোখাচোখিও হয়। আশালতা দৃষ্টি নামিয়ে নেয়, মুখের অভিব্যক্তি দেখে বিলাস কিছুই বুঝতে পারে না। আশালতা ক্লাসে এলে বারবার তার দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করে বিলাস, কিন্তু আশালতা একবারও ওর দিকে তাকায় না অথবা আড়চোখে তাকালেও তা দেখতে পায় না ও।

স্কুল থেকে দল বেঁধে ফেরার সময় আশালতা হঠাৎ বিলাসকে ইশারা করে পিছনে থাকার জন্য, আনন্দের জোয়ারে ভেসে যায় ওর বুকের তৃষিত জমিন! আহা, আশা ডেকেছে, তাহলে নিশ্চয় সু-খবর আছে, এখনই বুঝি তাকে ভালোবাসার কথা বলবে! ওরা দুজনই ইচ্ছে করে অন্যদের থেকে পিছিয়ে যায়, আর সুযোগ বুঝে আশালতা বইটা ফিরিয়ে দেয় বিলাসকে। বিলাস মৃদু হাসে, কিন্তু আশালতার মুখে হাসি, আনন্দ, রাগ কিংবা বিরক্তি; কোনো কিছুরই আভাস দেখতে পায় না ও, কিছুই বুঝতে পারে না আশালতার মুখ দেখে। বিলাস বইয়ের মলাটের ওপর হাত রেখে বুঝতে পারে যে ভিতরে কিছু আছে। কী আছে? নিশ্চয় আশালতার উত্তর! আনন্দে তখনই ছুট লাগাতে ইচ্ছে করে ওর, কিন্তু কোনোভাবে নিজেকে সংবরণ করে, আশালতার মুখের দিকে তাকিয়ে হাসে। আশালতাও ওর দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসে, এবার ও নিশ্চিত হয় যে নিশ্চয় আশালতাও ওকে ভালোবাসে, সে-কথাই লিখে জানিয়েছে চিঠিতে।

দারুণ উত্তেজনায় বাড়ি ফেরে বিলাস, ওর নিজের আলাদা কোনো ঘর নেই, বড় দাদার সঙ্গে একই ঘরে থাকতে হয়। ফলে বাড়ি ফিরে জামা-প্যান্ট বদলে না খেয়েই বইটা হাতে নিয়ে তনয়দের বাগানে চলে যায়, গাছের আড়ালে দাঁড়িয়ে সতর্কভাবে চারদিকে দেখে যে কেউ আছে কি না। কাউকে দেখতে না দেখে মলাটের ভেতর থেকে চিঠিটা বের করে। কিন্তু এ কী! ওর নিজের লেখা চিঠিটাই তো! আশালতার চিঠি কোথায়? খামটা অবশ্য ছেড়া। বইটা মাটিতে রেখে দ্রুত খামের ভেতর থেকে চিঠি বের করে, ওর নিজের লেখা চিঠির সঙ্গে বেরিয়ে আসে এক টুকরো কাগজ। দুরুদুরু বুকে, কম্পিত হাতে কাগজখানা খুলে মেলে ধরে চোখের সামনে-‘সম্ভব না। প্লিজ, আর কখনো আমাকে এসব লিখিস না বিলু!’

কেন সম্ভব না? বিলাস প্রশ্ন করে নিজেকে। তারপর উত্তরও খুঁজে পায় নিজের ভেতর থেকেই- আশালতাদের আর্থিক অবস্থা বেশ ভালো, আর সে অত্যন্ত দরিদ্র ঘরের সন্তান, তাই বুঝি আশালতা ওর প্রেমের প্রস্তাব প্রত্যাখান করেছে। বিলাসের মনে হয় যেন ওর জীবনের সবকিছু শেষ হয়ে গেছে, ওর আর বেঁচে থেকে লাভ কী! আত্মহত্যা করার কথাও ভাবে, কিন্তু আত্মহত্যা করতে ভয় পায়, আত্মহত্যার ভাবনা মাথায় আসতেই বিনোদ চক্রবর্তীর সেই বীভৎস চেহারার কথা মনে পড়ে ওর- জিভ বের হওয়া ফোলা একটি মুখ, কোটর থেকে প্রায় বেরিয়ে আসা চোখ, গলায় গভীর কালচে দাগ। বিনোদ চক্রবর্তীর বীভৎস চেহারা মনে পড়ায় আত্মহত্যার ভাবনা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেললেও সারাটি বিকেল না খেয়ে বাগানেই বসে থাকে, লোকনাথ ব্রক্ষ্মচারীর প্রতি তীব্র অভিমানে ওর চোখ ছলছল করে ওঠে, চোখের জল অধর বেয়ে জমা হয় থুতনিতে।

লোকনাথ ব্র‏ক্ষ্মচারীর ওপর অভিমানের কারণ ও চিঠির উপরে লিখেছিল- ‘জয় বাবা লোকনাথ’, অথচ বাবা লোকনাথ কিনা ওর আশা পূর্ণ করলেন না! ভগ্ন হৃদয়ে ও চিঠিটা রেখে দেয় পড়ার টেবিলের অন্যসব বইয়ের নিচের দিকে থাকা পিসতুত দাদার কাছ থেকে উপহার পাওয়া সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের কাকাবাবু সিরিজের ‘সবুজ দ্বীপের রাজা’ বইয়ের ভেতর, এই বইটাকেই ও বেশি নিরাপদ মনে করে, কারণ অন্যসব বই স্কুলে নিয়ে যেতে হয়। কয়েক মাস চিঠিটা গোপনই থাকে, তারপর একদিন স্কুল থেকে বাড়ি ফিরে দ্যাখে ওর বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া মামাত দাদা সুকেশ বেড়াতে এসেছে এবং বিছানায় চিৎ হয়ে শুয়ে পড়ছে- ‘সবুজ দ্বীপের রাজা’ বইটি! দৃশ্যটা দেখা মাত্রই ওর বুকের ভেতর ছ্যাৎ করে ওঠে! চিঠির ব্যাপারটা সুকেশকে জিজ্ঞেস করতেও লজ্জাবোধ করে, কিন্তু ভেতরে ভেতরে উত্তেজনা-শঙ্কায় ছটফট করে। শুকনো মুখে সুকেশের সঙ্গে কুশল বিনিময় শেষে জামা-প্যান্ট ছেড়ে লুঙ্গি পরে মন খারাপ করে টেবিলে বসে। মামাত-মাসতুত-কাকাত-পিসতুত যত দাদা আছে, তাদের মধ্যে ওর সবচেয়ে পছন্দের দাদা সুকেশ। সুকেশের বাড়ি কুষ্টিয়া, সদ্য রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজী বিভাগে ভর্তি হয়েছে, কবিতা আবৃত্তি করতে পারে, সুন্দর করে কথা বলে, ওদের আর্থিক অবস্থাও বেশ ভালো, কিন্তু তবু সুকেশের কোনো অহংকার নেই। বছরে অন্তত দু-বার দরিদ্র পিসির বাড়িতে বেড়াতে আসে, এমন প্রিয় দাদাকে কিছু বলতেও পারে না মুখ ফুটে। সুকেশ মাঝে মাঝে ওর দিকে আড়চোখে তাকায় আর মিটিমিটি হাসে, তারপর বিছানার নিচ থেকে চিঠিটা বের করে ওর দিকে বাড়িয়ে দিয়ে নীরবে তাকিয়ে থাকে প্রতিক্রিয়া দেখার আশায়। বিব্রত বিলাস মাথা নিচু করে চিঠিটা হাতে নিয়ে সঙ্গে সঙ্গে অন্য একটি বইয়ের মধ্যে রেখে দেয়, ও বুঝে উঠতে পারে না যে সুকেশ চিঠিটা পড়েছে কি না। কোনো প্রতিক্রিয়া না পেয়ে আগ বাড়িয়ে সুকেশই প্রশ্ন করে, ‘আশালতা কে?’

বিলাস একবার সুকেশের দিকে তাকিয়েই লজ্জায় দৃষ্টি নামায় মাটির দিকে। সুকেশ আবার বলে, ‘আমার পড়া উচিত হয়নি, কিন্তু কৌতুহল দমন করতে পারলাম না। স্যরি রে ভাই।’

এরপর মৃদু হেসে সুকেশ বলে, ‘পড়ে দেখলাম তোর ভাষাজ্ঞান কেমন! ভাষাজ্ঞান মন্দ না, তবে একটা জায়গায় ঝামেলা করে ফেলেছিস, যার জন্য তোর প্রেম হয়নি!’

বিলাস বুঝতে পারে যে আশালতার লেখা ছোট্ট চিরকুটটাও পড়ে ফেলেছে দাদা। ও মুখ গোমড়া করে বলে, ‘কী ঝামেলা?’
‘হতভাগা, কার কাছে কী চাইতে হয় তাও জানিসনে! লোকনাথ বলেছেন-“রণে, বনে, জলে, জঙ্গলে যখনই বিপদে পড়িবে/ আমাকে স্মরণ করিবে/ আমিই তোমাকে রক্ষা করিবো!” হতচ্ছাড়া, তুই তো রণে যাস নাই, বনে যাস নাই, সমুদ্রে নৌকা ভাসাস নাই, আবার জঙ্গলে বাঘের মুখেও পড়িস নাই! তাইলে তোর লোকনাথের স্মরণাপন্ন হয়ে চিঠির উপরে “জয় বাবা লোকনাথ” লিখবার দরকারটা কী! তুই তো জানিসনে যে পৌরাণিক যুগে দেবতায়-দেবতায় কত হিংসা-বিদ্বেষ ছিল, দেবতাদের মধ্যে ক্ষমতার লড়াই হতো, নারী নিয়ে লড়াই হতো, এমনকি সোমরস নামক মদ নিয়েও লড়াই হতো! ভক্ত কোনো দেবতাকে পূজা করলে অন্য দেবতা ঈর্ষান্বিত হয়ে সেই ভক্তকে বিপদে ফেলত, এসব পুরাণের কথা। যেখানে দেবতায়-দেবতায় লড়াই হতো, সেখানে মানুষ লোকনাথ দেবতা কামদেবের সঙ্গে পারবে কেন! কামদেব কে জানিস?

বিলাস দু-দিকে ঘাড় নাড়ে, ‘না।’

সুকেশ মুখে হাসি ছড়িয়ে বলে, ‘এই জন্যেই তোর প্রেম হয় নাইরে মূর্খ! প্রেমের দেবতা হল কামদেব, আরেক নাম মদনদেব। ওই মদনা-ব্যাটাই তোর প্রেমটা হতে দেয়নি বুঝলি! শোন, কামদেবের হাতে থাকে ইক্ষুনির্মিত ধনুর্বাণ, সেই ধনুকের গুণ হল মৌমাছি; পঞ্চবাণ অর্থাৎ সম্মোহন, উন্মাদন, শোষণ, তাপণ এবং স্তম্ভনে থাকত পঞ্চফুল- অশোক, শ্বেত পদ্ম, নীল পদ্ম, মল্লিকা এবং আম্রমঞ্জরীর সুবাস! এই সুগন্ধী বাণেই তিনি পৌরাণিক যুগের যুবক-যুবতীদের মিলন ঘটাতেন। অথচ সেই কামদেবকে বাদ দিয়ে তুই ব্যাটা নির্বোধ কিনা স্মরণাপন্ন হলি অবিবাহিত প্রেম-কামে অনভিজ্ঞ মানুষ লোকনাথের! প্রেম-কাম দূরে থাক, ও ব্যাটা জীবনে কোনোদিন হস্তমৈথুন করেছে কি না আমার তো তাতেও সন্দেহ আছে!’

বলেই হা হা করে হাসে সুকেশ, পাছে বাড়ির অন্য কেউ তার এই হাসির রহস্য জেনে ফেলে তাই বিলাস চাপা স্বরে বলে, ‘আস্তে, চুপ কর।’

পরে অবশ্য জীবনে নাম না শোনা, ছবি পর্যন্ত না দেখা সেই প্রেমের দেবতা কামদেবের একটি কল্পিত মূর্তি মনের মধ্যে দাঁড় করিয়ে তাঁর কাছে প্রার্থনা করেছিল যাতে আশালতা তাকে ভালোবাসে। কে জানে কামদেব হয়ত কোথাও কামকলায় রত থাকায় তার কথা শোনেনি, তার মনের আশাও পূরণ করেননি!

তারপরও হাল ছাড়েনি বিলাস, কামদেব ওর মনোবাসনা পূরণ না করায় স্মরণাপন্ন হয়েছিল কাদের আলী কালা যাদুকরের, যার আসল নাম কাদের আলী, কিন্তু লোকে তাকে ‘কাদের আলী কালা যাদুকর’ নামে চিনতো, মুখে মুখে এলাকায় ছড়িয়েছিল নামটা; প্রৌঢ় কাদের আলী বশীকরণ মন্ত্র জানতেন, ফল হোক বা না হোক অনেক তন্ত্র-মন্ত্র এবং কালা যাদু বিদ্যায় তিনি পারদর্শী ছিল। কাদের আলী দাবী করতেন যে, বশীকরণ তেল পড়া দিয়ে তিনি অনেক প্রেমিক এবং প্রেমিকাকে তাদের মনের মানুষ পাইয়ে দিয়েছেন; যে সুন্দরী নারী কোনো এক মন্দদর্শন পুরুষকে কোনোদিন পাত্তা দেয়নি, তার মন্ত্রপূত তেলের গুণে সেই মন্দদর্শন পুরুষের প্রেমে দিওয়ানা হয়েছে সেই সুন্দরী নারী এবং সেই মন্দদর্শন পুরুষের সাথে ঘর বেঁধেছে! তখনও পর্যন্ত তিন হাজারের বেশি নারী-পুরুষকে তিনি জুটিবদ্ধ করেছেন বলে প্রচার করতেন! স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে মনের অমিল থাকলে মিল করে দিতেন, কোনো ছেলে বউয়ের বশে থেকে মাকে ভাত না দিলে মা ছেলের বুকের একটা লোম কাদের আলীকে এনে দিলেই কেল্লা ফতে; তিনি এমন যাদু করতেন যে ছেলে মাকে ভাত তো দিতই, বরং ‘মা মা’ বলে মুখে ফেনা পর্যন্ত তুলে ফেলত! তেমনটাই বলতেন কাদের আলী, এ ছাড়াও তিনি দাবী করতেন যে- মানুষের যে কোনো মনোবাসনা তিনি পূরণ করতে পারেন তার মন্ত্র দ্বারা, এবং যে করেই হোক তার এই দাবী তিনি সমাজে প্রতিষ্ঠাও করেছিলেন। ফলে কেবল আশপাশের গ্রামের মানুষ নয়, দূর-দূরান্ত থেকেও অনেকে মনোবাসনা পূরণের আশায় তার কাছে আসত।

আশালতার মন বশ করতে একদিন স্কুল ফাঁকি দিয়ে কাদের আলীর বাড়িতে হাজির হয় বিলাস, কাদের আলী তখন বন্ধ ঘরের মধ্যে তার কালা যাদুবিদ্যা দ্বারা চিকিৎসা দিচ্ছিলেন। ঘরের সামনের চাঙায় বসে ছিল একজন মধ্যবয়সী এবং একজন তরুণ, তাদের কথাবার্তা শুনে বিলাস বুঝতে পারে যে তারাও তারই মতো কোনো মনোবাসনা পূরণ হবার আশায় এখানে এসেছে। লোক দুজন কথা বলছিল আর বন্ধ ঘরের দরজার দিকে তাকাচ্ছিল। অন্য একটি ঘর থেকে মোটা কালো মতো একজন মধ্যবয়সী নারী বেরিয়ে বিলাসের কাছে এসে জানতে চান, ‘এই ছ্যামড়া, কার সাথে আইচো?’

‘কারো সাথে না, আমি একাই আইচি।’

নারী বিলাসকে ভালো মতো দ্যাখেন, আর বিলাস নারীর প্রতি বিরক্ত হয় এজন্য যে নারী হয়ত ওকে নাবালক ভেবেছেন, অথচ ও নিজেকে মোটেই নাবালক ভাবে না, ক্লাস টেন এ পড়ে সে, আর এক বছর পর এসএসসি দেবে, তারপরই পা দেবে কলেজের বারান্দায়, অথচ এই অর্বাচীন নারী ওকে নাবালক ভাবছে!
নারী আবার জানতে চান, ‘কার কাছে আইচো?’
‘কাদের আলী কালা যাদুকরের কাছে।’

নারী মুখ টিপে হেসে বলেন, ‘বুজিছি। তা কাছে একান্ন টাকা আছে?’
বিলাস ঘাড় নেড়ে জানায়, ‘আছে।’
‘তালি বোসো, এই দুইজনের পরে তুমি যাবা।’

বিলাস ধারণা করে এই নারী নিশ্চয় কাদের আলীর বউ। ও চাঙায় বসে অপেক্ষা করতে থাকে। একটু পর ঘরের দরজা খুলে বেরিয়ে আসে একজন নারী। বিলাস খোলা দরজা দিয়ে ঘরের ভেতরে তাকায়, কিন্তু আলোর আভা ছাড়া আর কিছুই দেখা যায় না, অতঃপর ঘর থেকে বেরিয়ে আসা নারীর দিকে তাকয়ে থাকে। বিলাস যাকে কাদের আলীর বউ বলে ধারণা করে, ঘর থেকে বের হওয়া নারী তার সঙ্গে কিছুক্ষণ কথা বলে নিচু স্বরে। চাঙায় বসা মধ্যবয়সী লোকটা ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দেয়। বিলাস অপেক্ষা করতে থাকে, আর ছটফট করে। এক সময় আসে ওর পালা, প্রবল উত্তেজনা নিয়ে ঘরে ঢোকে, কাদের আলীর নির্দেশে ঘরের দরজা বন্ধ করে দেয়।

কাদের আলীর সামনে বেশ বড় একটি জলন্ত মোমবাতি ছাড়া ঘরে আর কোনো আলো নেই, একটি ধোঁয়া ওঠা ধুনুচি, কয়েকটি ধূপকাঠি, একটি বই, খাতা, কলম, কিছু কড়ি, লাল সুতো ইত্যাদি। কাদের আলীর গায়ে কালো পাঞ্জাবী আর পরনে কালো লুঙ্গি, গলায় লাল উত্তরীয় আর বেশ কয়েকটি মালা, দু-হাতে অনেকগুলো তাগা আর দু-হাতের আঙলে নানান রঙের পাথর বসানো ছয়টি আংটি। মাথার চুল কাঁধ সমান লম্বা, বড় বড় দাড়ি-গোঁফ। কাদের আলী মৃদু হেসে হাতের ইশারায় বিলাসকে বসার নির্দেশ দেন। বিলাস ভয়ে ভয়ে ঘরের এদিক-ওদিক তাকায়; আধো আলো-আধো ছায়া ঘর, ধূপ আর ধূপকাঠির গন্ধ, বিলাসের গা কেমন ছম ছম করে। পাটিতে বসে সে কাদের আলীর দিকে তাকায়, কাদের আলী বলেন, ‘কার মন বশ করবার চাস?’

বিলাস অবাক হয়, কাদের আলী কালা যাদুকর কেমনে জানল যে সে কারো মন বশ করতে চায়! কাদের আলী কি মুখ দেখেই মানুষের মন বুঝতে পারে? নিশ্চয় পারে, নিশ্চয় কাদের আলী অলৌকিক শক্তির অধিকারী, এজন্যই মানুষ তার কাছে আসে! কাদের আলীর প্রতি ভক্তিতে গদ গদ হয়ে ওঠে বিলাসের মন। সে আশালতার কাছ থেকে প্রত্যাখ্যাত হবার বিষয়টি খুলে বলে কাদের আলীকে। কাদের আলী তার কথা শুনতে শুনতে খাতায় কিছু লিখতে থাকেন। তারপর খাতা থেকে লেখা পাতাটি ছিঁড়ে ভাঁজ করে বিলাসের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলেন, ‘সোমবার দিবাগত রাত আটটার পর তে-পথে বসে এই মন্ত্রডা মুখস্ত করবি। পারবি?’

ঘাড় নেড়ে জানায় বিলাস, ‘পারব।’
কাগজের ভাঁজ করা পাতাটা হাতে নিয়ে পকেটে রাখে।
‘তে-পথ কী বুঝিস তো?’
‘হ, তিন রাস্তার মোড়।’

‘হুম। আরো কাজ আছে, শনি অথবা মঙ্গলবার দিন কলুরা য্যাহানে সরিষার ত্যাল ভাঙায় স্যাহান তে চার ফোঁটা সরিষার ত্যাল চুরি করে আনবি। কলে ভাঙানোর চেয়ে ঘানিতে ভাঙানো ত্যাল বেশি কাজ দেয়। নটাপাড়া, তারপর কোলারহাটের দিকে কলুরা ঘানিতে ত্যাল ভাঙায়, তুই স্যাহানে যাইতে পারিস। তয় মনে রাহিস চুরি করে আনতি অবি ত্যাল, চায়ে আনলি কিন্তু কাজ অবিনে। পারবি?’
‘পারব।’

‘আমি জানি তুই পারবি। ভালোবাসার মানুষের জন্যে মানুষ পারে না জগতে এমন কোনো কাজ নাই! তোর বয়সে আমিও প্রেম করছিলাম, এহনই তো প্রেমের বয়স! হা হা হা…। শোন, এরপর যা করবি, শনি অথবা মঙ্গলবার দিনের বেলা সেই তে-পথে পূর্বদিকে মুখ দিয়ে বসে তিনবার অই মন্ত্র পড়ে ত্যালের ভিতর ফুঁ দিবি। তারপর ত্যালের এক ফোঁটা তোর কপালে, এক ফোঁটা নাকে, এক ফোঁটা গলায় দেবার পর বাকি এক ফোঁটা ত্যাল তোর মুখমণ্ডলে ভালো করে মালিশ করে এরপর তোর ভালোবাসার মানুষ আশালতার সামনে যাবি। দেহিস আশালতা তোর দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাহায়ে থাকপি, তারপর তোর প্রেমে দিওয়ানা হয়ে সাথে সাথে তোর পিছন পিছন হাঁটা শুরু করবি।’

বিলাস মন দিয়ে কাদের আলীর কথা শোনে, তারপর একান্ন টাকা কাদের আলীর হাতে দিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে বাড়ির পথ ধরে।
কাদের আলীর কথা মতো বিলাস এক সোমবার রাত আটটার পর তে-পথে বসে টর্চ লাইট জ্বালিয়ে চুপি চুপি মুখস্ত করে কাদের আলীর দেওয়া সেই মন্ত্র-
তৈল কহিতে তৈল আনি
কহিতে অর্ধের কাহিনী।
লঙ্কায় আছিল তৈল
দেশে আনলো কে
হনুমান আনলো তা দেশে
পায় তা মানুষে।
ব্রহ্মার আদেশে আমি
এই তৈল পড়ায় করিলাম ভর।
আমার এই তৈল পড়া
মিথ্যা যায় খইসা পড়ে
শিবের জট মা দূর্গার পায়।

কোলারহাটের দিকের এক গ্রামে গিয়ে বিলাস কলুর ঘানি থেকে কৌশলে চুরি করে আনে সরিষার তেল, তারপর এক শনিবার সকালে তে-পথে বসে তিনবার মন্ত্র পাঠ করে তেলে ফুঁ দিয়ে কপালে, নাকে, গলায় এবং মুখমণ্ডলে ভালো করে মেখে স্কুলে গিয়ে আশালতার সমানে গিয়ে দাঁড়ায়। ক্লাসেও বারবার আশালতার দিকে তাকায়, টিফিনের সময় আশালতা মাঠে গিয়ে বসলে সেও সেখানে গিয়ে আশালতার মুখোমুখি বসে, স্কুল থেকে বাড়িও ফেরে একসঙ্গে। কিন্তু আশালতা ওর মুখের দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে না, অন্যদিনের মতোই স্বাভাবিকভাবে মাঝে মাঝে তাকায়; আশালতা ওর প্রেমে দিওয়ানা হয় না, অন্যান্য দিনের মতোই বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ করে; আশালতা ওর পিছু নেয় না, রোজকার মতোই নিজের বাড়ির পথ ধরে।

আশালতা বাড়ির পথ ধরলে, অন্যান্য বন্ধুদের থেকে আলাদা হলে সে কেঁদে ফেলে আশাভঙ্গের হতাশায়, রাতেও শুয়ে শুয়ে কাঁদে আর ঘুমানোর আগে কাদের আলীকে গালি দেয়-‘শালার বিটা শালা জোচ্চর!’

এই জনমে আশালতার কাছে প্রেম নিবেদন করে প্রত্যাখাত হবার ব্যথাই পরজন্মে বিলাসের নারী হয়ে জন্মাবার বাসনা উগড়ে দিয়েছে; নারীর হৃদয় কেমন হয়, সেই স্বাদ পেতে চায় সে! ওর ধারণা নারীরা অহংকারী হয়, বিশেষত অবিবাহিত সুন্দরী কিংবা মোটামুটি সুন্দরী নারীরাও। কেন সুন্দরী নারীরা অহংকারী হয়, পুরুষের কাছে তাদের কদর বেশি বলে? নারী হয়ে জন্মে এই অহংকারের রহস্য ভেদ করতে চায় সে! এই জনমে অনুভব করেছে যে পছন্দের নারীর প্রেম না পাওয়া, নারী কর্তৃক প্রত্যাখাত হওয়ার বেদনা বড় তীব্র, জনমে জনমে বারবার এই তীব্র ব্যথা পেতে চায় না। তার চেয়ে নারী হয়ে জন্ম নেওয়াই ভালো, অনেক পুরুষ প্রেমে পড়বে, তাদের ভেতর থেকে ইচ্ছে মতো একজনকে বেছে নেওয়া যাবে!

এই বাংলাদেশে নারী হয়ে জন্মানোর যে হাজার জ্বালা- পরিবারেই লিঙ্গ বৈষম্যের শিকার হতে হয় পরিচ্ছদ-আহার-বিহারের বিষয়ে, রাস্তাঘাটে চলতে গেলে পুরুষের নানা কটুক্তির শিকার হতে হয়, বাইরের লোক দ্বারা তো বটেই অনেক সময় নিকটাত্মীয়দের দ্বারাও যৌন নিপীড়নের শিকার হতে হয়, শ্বশুরবাড়িতে শারীরিক-মানসিকভাবে নির্যাতিত হতে হয়, সন্তান কর্তৃক অবহেলার শিকার হতে হয়, স্বামীর লাঞ্চনা-গঞ্জনা সহ্য করেও সংসার করতে হয়, কর্মজীবী নারীদের কর্মক্ষেত্রে সহকর্মীর দ্বারা যৌন নিগ্রহের শিকার হতে হয়; এই দেশে প্রতি বছর অসংখ্য নারী ধর্ষণের শিকার হয়, এই দেশে নারীদের বিপদ থেকে রক্ষা পেতে অতি সতর্ক হয়ে পা ফেলতে হয়। এইসব বৃহত্তর সংকটের বিষয়ে কখনো ভাবেনি বিলাস, সে কেবল নিজের পছন্দের মানুষকে না পাবার ক্ষুদ্র এবং একান্ত ব্যক্তিগত সংকটের কথা ভেবেই জন্মান্তরবাদের প্রতি পূর্ণ আস্থা রেখে এই সিদ্ধান্তে এসেছে যে পরজন্মে ওর যদি মানুষ হয়েই জন্ম হয়, তবে পুরুষজন্ম আর নয়, যেন নারী-জন্ম হয়; এমনকি পাখি কিংবা ফড়িং হয়ে জন্মালেও একটা স্ত্রী লিঙ্গ যেন থাকে!

বিলাসের শৈশব-কৈশোর-যৌবন কেটেছে নিদারুণ অভাবে, ওর বাবা যতীন দাস সারাজীবন শরীরের জল নিংড়ে খেটেছেন সংসারের জন্য, মানুষের জমি বর্গা নিয়ে কৃষিকাজ করে এবং বাড়তি রোজগারের জন্য ডুবুরির কাজ করেও কখনো সংসারে স্বচ্ছলতা আনতে পারেন নি। লোকটা সারাজীবন খেটেই গেছেন, সুখ ভোগ করে যেতে পারেন নি। বিলাসরা দুই ভাই যখন সেই অস্বচ্ছল অবস্থা থেকে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে তখনই যতীন ডুবুরি মারা যান। মৃগী রোগ হয়েছিল তার, ফলে রোগ ধরা পড়ার পর তাকে আর ডুবুরির কাজ করতে দিত না পরিবারের লোকজন। পরিবারের সতর্কতার পরও প্রতিবেশীর পুকুরে ডুবে মারা যান যতীন ডুবুরি।

বিলাসদের এককালের নিদারুণ অভাবের সংসারে এখন বেশ স্বচ্ছলতা এসেছে; ওর ছোটভাই পলাশ সরকারী প্রাইমারী স্কুলের সহকারী শিক্ষক, আর ও করছে ব্যবসা। বিলাস, পরিমল আর ওদের অন্য দুই বন্ধু অজিত এবং নয়ন এই অঞ্চলের গৃহস্থবাড়ির অনেকগুলো বড় বড় পুকুর লিজ নিয়েছে। এই পুকুরগুলো দেখভালের দায়িত্ব বিলাসের, ও সারাদিন মোটর সাইকেল চালিয়ে এগ্রামে-ওগ্রামে ঘুরে বেড়ায়; কখন কোন পুকুরের ময়লা-আবর্জনা বা লতাপাতা পরিস্কার করতে হবে, কখন কোন পুকুরে মাছের খাবার দিতে হবে, এসব দেখভাল করে আর শ্রমিক দিয়ে কাজ করায়, প্রায়ই হাটের দিনে জ্বেলেদের দিয়ে মাছ ধরিয়ে পাইকারদের কাছে বিক্রি করে। এছাড়াও ওরা চার বন্ধু মিলে পাটের ব্যবসা শুরু করেছে, হাটের দিন পাট কিনে গোডাউনে রাখে, তারপর সময় বুঝে মিলে চালান করে দেয়; পাটের ব্যবসা দেখভাল করে অজিত আর নয়ন।

বিলাস বিয়ে করেছে, ওর স্ত্রী দেখতে সুশ্রী আর ব্যবহারও ভালো, দুটো ছেলে হয়েছে ওদের, সংসারে অশান্তি কিংবা অভাব কোনোটাই নেই, সব মিলিয়ে ভালোই আছে বিলাস, তবু আজও ভুলতে পারেনি আশালতাকে, আশালতাকে না পাবার যন্ত্রণা বুকের কন্দরে আজও বাজে পাহাড় চূড়ার নির্জন মন্দিরের ঘণ্টার মতো!



(চলবে...)

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ২৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ দুপুর ১:৫৪

নেওয়াজ আলি বলেছেন: বিমোহিত হলাম চয়নে।

২৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ রাত ৯:০২

মিশু মিলন বলেছেন: ধন্যবাদ।

২| ২৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ বিকাল ৪:৪১

রাজীব নুর বলেছেন: এই পৃথিবীর প্রতিটি মানুষ যদি দুবার করে মৃত্যুবরণ করত, তবে পৃথিবী হয়তো বা আরও বাসযোগ্য হত।

২৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ রাত ৯:০৪

মিশু মিলন বলেছেন: কী জানি! হয়তো উপলব্ধি অন্যরকম হতো।

৩| ২৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ রাত ৮:০৬

মনিরা সুলতানা বলেছেন: আশালতা কে বিলাস ও পায়নি !!!

২৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ রাত ৯:০৪

মিশু মিলন বলেছেন: ধন্যবাদ সাথে থাকার জন্য।

৪| ২৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ রাত ১০:১১

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: তেজ-দেবী আর বিলাস আশালতার প্রেম কথা - আহা....
অনুভবতো এমনই হয়....গহন গভীর

বরাবরের মতোই ভাল লাগা

++++

০১ লা মার্চ, ২০২০ রাত ১২:২৫

মিশু মিলন বলেছেন: ধন্যবাদ সাথে থাকার জন্য।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.