নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মিশু মিলন

মিশু মিলন

আমি বর্তমানে ইস্টিশন এবং সামহোয়্যার ইন ব্লগে লিখি। আমার সকল লেখা আমি এই দুটি ব্লগেই সংরক্ষণ করে রাখতে চাই। এই দুটি ব্লগের বাইরে অনলাইন পোর্টাল, লিটল ম্যাগাজিন এবং অন্য দু-একটি ব্লগে কিছু লেখা প্রকাশিত হলেও পরবর্তীতে কিছু কিছু লেখা আমি আবার সম্পাদনা করেছি। ফলে ইস্টিশন এবং সামহোয়্যার ইন ব্লগের লেখাই আমার চূড়ান্ত সম্পাদিত লেখা। এই দুটি ব্লগের বাইরে অন্যসব লেখা আমি প্রত্যাহার করছি। মিশু মিলন ঢাকা। ৯ এপ্রিল, ২০১৯।

মিশু মিলন › বিস্তারিত পোস্টঃ

লৌকিক লোকলীলা (উপন্যাস: পর্ব-বারো)

০৩ রা মার্চ, ২০২০ বিকাল ৩:৩৩

আট

ওরা তিনজনই নেশায় বুঁদ হয়ে কথা বলতে থাকে। পরিমল বলে, ‘শালার বুড়ো মানুষ না জোয়ান মানুষ মরছে কিডা জানে! বুড়ো হলি তো তাড়াতাড়ি পুড়ত।

বিলাস বলে, ‘সুজনের বাবার মড়া পুড়াতি পাঁচ ঘণ্টা লাগছিল, যে লম্বা-চওড়া তাগড়া মানুষ, শালার সহজে কী পোড়ে, তার উপর ছিল মাঘ মাসের শীতের রাত, শীতে কাহিল হয়ে সবার বিরক্ত ধরে গিছিল!’

পরিমল বলে, ‘তাড়াতাড়ি পুড়ছিল শান্তি দাদু, চিতে জ্বালাতি যতক্ষণ, আড়াই ঘণ্টায় পুড়ে শ্যাষ।’
বিলাস বলে, ‘শান্তি দাদুর শরীলি তো কিছু ছিল না, খালি হাড্ডি কয়খান আর চামড়া!’
অমল বলে, ‘শান্তি দাদুর মতো কমেডিয়ান আর পাওয়া যাবি নে, সে যেমন মানুষ হাসাতো, ওরকম আর কেউ পারে না।’
পরিমল বলে, ‘তার চেহারার গঠনই ছিল হাস্যকর, এট্টু মুখ ভ্যাঙচায়ে কথা কইলেই মানুষ হাসতো।’

শান্তিরাম দাস অর্থাৎ অমলদের শান্তি দাদুও ওদের দলের সন্ন্যাসী ছিলেন, বছর পাঁচেক আগে মারা গেছেন। তুখোর রসবোধ সম্পন্ন মানুষ ছিলেন, দরিদ্র ছিলেন, কিন্তু শত অভাব-অনটনের মধ্যেও সারাক্ষণ নিজে হাসি-খুশি থাকতেন এবং অন্যদের হাসাতেন। সহজাত কৌতুক শিল্পী ছিলেন তিনি। আগে গ্রামে নাটক হতো, তিনি কৌতুক অভিনেতা হিসেবে অভিনয় করতেন। তিনি মঞ্চে উঠলেই মানুষ হাততালি দিত, তার মুখভাঙ্গি দেখেই দর্শকদের মধ্যে হাসির রোল উঠত।

মাথা চালানের পর দেইল মন্দিরের সামনের আঙিনায় গভীর রাত অব্দি যে আনুষ্ঠানিকতা হতো, সেখানেও কৌতুক করে আসর জমিয়ে রাখতেন শান্তিরাম দাদু। নৌকা বাইচ হতো, সন্ন্যাসীরা দুই সারিতে চিৎ হয়ে একজনের পেটের ওপর আরেকজন মাথা দিয়ে শুয়ে নৌকার আদল তৈরি করতেন, একজন হাল ধরতেন, একজন গান গাইতেন, যিনি গান গাইতেন তার সাগরেদ হতেন শান্তি দাদু, তার হাতে থাকত ঝাঁজ, তিনি গানের তালে তালে আস্তে আস্তে ঝাঁজ বাজাতেন। যে সন্ন্যাসীরা নৌকা হতেন তারাই গায়কের দাহারকি করতেন, দোহারকি করতে করতে তারা দু-হাত ভর দিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যেতেন।
গায়ক গাইতেন-
‘বাসে টান দাও টান দাও
বাড়ি চলে যাই,
বাড়ি যায়ে বউয়ের হাতে
গুড়-মুড়ি খাই!’

শান্তি দাদু তখন বলে উঠতেন, ‘যাও না বাড়ি, তোমার যে ঝগড়াটে বউ, নাকে বড়শি দিয়ে ঘুরাবেনে!’

শান্তি দাদুর পরিবেশনের ধরনে হাসির রোল উঠত দর্শকদের মাঝে। এভাবেই গানের ফাঁকে ফাঁকে গায়কের সঙ্গে হাস্যরসাত্মক কথা বলতেন তার শান্তি দাদু। মানুষ হাসানোর জন্য একে অন্যকে টেক্কা দিতেন। কিন্তু শান্তি দাদুর সঙ্গে পেরে উঠতেন না গায়ক।
শ্মশান যাত্রীরা আবার ধ্বনি দেয়। বিলাস নিচু স্বরে গেয়ে ওঠে-
‘আমার এই দেহ কী ব্রজে যাবে রে
নিতাই আমার হাত ধরিয়ে লয়ে চলরে।’

অমল শ্মশানের দিকে তাকায়, শ্মশানের উত্তর-পশ্চিমদিকে দাউ দাউ করে জ্বলছে চিতার আগুন, বাঁশ দিয়ে মাঝে মাঝে চিতার কাঠ খুঁচিয়ে দেওয়ায় ফুলকি উঠছে ঊর্ধ্বমুখে। শ্মশানের মাঝখানে শ্মশানযাত্রীদের জন্য বানানো পাকা করা ছাউনির নিচে যেখানে বসে গান গাইছে শ্মশানযাত্রীরা, সেখানে জ্বলছে বৈদ্যুতিক চার্জার লাইটের সাদা আলো, হয়ত একাধিক তাই আলোর ঔজ্বল্য অনেক বেশি। আজকের এই বৈদ্যুতিক বাতির জায়গায় এক সময় জ্বলত হ্যাজাক বাতি। অমলের মনে পড়ে ওর জ্যাঠা তারাপদ দাসের কথা, অদ্ভুত খেয়াল আর বিচিত্র স্বভাবের মানুষটি তিনটে হ্যাজাক বাতির মালিক ছিলেন। তিনি জীবনে প্রথম হ্যাজাকবাতি দ্যাখেন ১৯৭১ সালে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের করিমপুর শরণার্থী শিবিরে থাকার সময়, তখন তার বয়স ছিল পঁচিশ বছর। ১৯৭১ সালের জুন মাসের এক রাতে তিনি বাবা-মা আর ছোট দুই ভাই-বোনের সঙ্গে দেশ ছেড়েছিলেন, তার খুব ইচ্ছে ছিল মুক্তিযুদ্ধ করার, কিন্তু মা নিষেধ করেছিলেন যুদ্ধে যেতে। জুলাই মাসে মা মারা যান কলেরায় আর অক্টোবর মাসে তার বাবা আবার বিয়ে করেন শরণার্থী শিবিরে আশ্রিত এক অনাথ মেয়েকে। মা মারা যাবার পর এমনিতেই তার মনটা বিক্ষিপ্ত হয়ে পড়ে, তার ওপর বিবাহযোগ্য ছেলের বিয়ে না দিয়ে বাবা এক যুবতীকে বিয়ে করায় তিনি সিদ্ধান্ত নেন মুক্তিযুদ্ধে যাবেন। কাউকে কিছু না বলে সোজা চলে যান বালুরঘাটে মুক্তিযোদ্ধাদের ট্রেনিং ক্যাম্পে, ক্যাম্পে ভর্তি হয়ে প্রশিক্ষণ নেওয়া শুরু করেন। প্রশিক্ষণ চলাকালীন সময়ই ১৬ ডিসেম্বর দেশ স্বাধীন হয়ে যায়, তার আর দেশে ফিরে এসে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়া হয় না, গুলি করে পাকিস্থানী সৈন্য মারা হয় না, এটা ছিল তার সারা জীবনের সবচেয়ে বড় আফসোসের বিষয়।
দেশে ফিরে এসে বিয়ে করেন তারাপদ; স্ত্রী, বাবা, সৎ মা আর ছোট ভাই-বোনদেরকে নিয়ে অভাব-অনটনের সঙ্গে লড়াই-সংগ্রাম করে টিকে থাকতে হয় তাকে। মূলত কৃষিকাজই ছিল তার পেশা, পৈত্রিক সামান্য জমিজমা ছিল তাই চাষ করতেন। তাতে সংসারের অভাব ঘুচত না। করিমপুরে শরণার্থী শিবিরে তিনি যখন হ্যাজাক বাতি দেখেছিলেন, তখন এই হ্যাজাক বাতি তার মনে বিস্ময় জাগিয়েছিল, ভালো লেগেছিল। এক সময় কিছু টাকা-পয়সা গুছিয়ে ফরিদপুর থেকে দুটো হ্যাজাক বাতি কিনে এনে নিজ গ্রামে এবং আশপাশের বিভিন্ন গ্রামের বিয়ে, অন্ত্যোষ্টিক্রিয়া, শ্রাদ্ধ, যাত্রাপালা, রামায়ণ পালা, ভাগবত পাঠ, নানা ধরনের পূজা-পার্বণ প্রভৃতি অনুষ্ঠানে ভাড়া দিতেন। নিজেই হ্যাজাক বাতি নিয়ে সব অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতেন, কেননা তাকেই হ্যাজাক বাতি জ্বালাতে হতো, বায়ুর চাপ কমে গেলে মাঝে মাঝে পাম্প করে চাপ বাড়াতে হতো, মেন্টেল কেটে গেলে নতুন মেন্টেল লাগাতে হতো। গ্রামের কোনো ছেলে বা মেয়ের বিয়ে হলেই তার ডাক পড়ত। ছেলের বিয়ে হলে তিনি একটি হ্যাজাক বাতি বহন করে বরযাত্রী দলের আগে আগে হেঁটে যেতেন, অন্য কেউ আরেকটি বহন করত। তেমনি কেউ মারা গেলে শ্মশানযাত্রীদের আগে আগে তিনি হ্যাজাক বাতি নিয়ে হেঁটে যেতেন। হ্যাজাক বাতিকে এই অঞ্চলের মানুষ ‘হ্যাচাক’ উচ্চারণ করায় লোকে তাকে ডাকত ‘হ্যাচাক মাস্টার’ বলে। কোনো বাড়ির কোনো অনুষ্ঠানে বায়ুর চাপ কমার ফলে মেন্টেল একটু নিভু নিভু হতেই লোকে হাঁক ছাড়ত, ‘ও হ্যাচাক মাস্টার, কনে গিলে?’

হ্যাজাক বাতি দুটো ছিল যেন তারাপদ’র প্রাণ! খুব যত্ন করতেন, নষ্ট হলে পার্টস কিনে এনে নিজেই মেরামত করতে শিখেছিলেন, পরে আরো একটি কিনেছিলেন। তিনটি হ্যাজাক বাতি ভাড়া দিয়ে ভালোই রোজগার হতো তার। হ্যাজাক বাতি সম্পর্কে তার জ্ঞানও ছিল বেশ, জার্মানির ম্যাক্স গ্রেটেজ ১৯১০ সালে হ্যাজাক বাতি আবিষ্কার করেন, তাও তিনি জানতেন। ম্যাক্স গ্রেটেজ কে তিনি এতটাই শ্রদ্ধা করতেন যে তার ছবি পেলে হয়ত বাঁধিয়ে ঘরে টাঙিয়ে রাখতেন ফুলের মালা দিয়ে!

যখন কোথাও কোনো অনুষ্ঠান থাকত না, তখন হ্যাজাক বাতি তিনটে ঘরে পড়ে থাকত, এ সময়ই তার মাথায় আরেক খেয়াল চাপে। একদিন ফরিদপুর থেকে একটা এয়ারগান কিনে আনেন, নিজেই একটা বোর্ড বানিয়ে তাতে ছোট ছোট বেলুনের বল সাজিয়ে নলিয়া হরিঠাকুরের মেলায় গিয়ে বসেন। দড়ি দিয়ে ঘেরা ছোট্ট জায়গায় বেলুনের বোর্ড দাঁড় করিয়ে বোর্ডের সামনে এয়ারগান হাতে নিয়ে তারাপদ হাঁক ছাড়তে শুরু করেন-
‘আয়রে আয় ছুটে আয় দূরন্ত সব ছেলে-মেয়ের দল
দেখে যা পাকিস্থানী হায়েনা মারার আজব এক কল
হাতে নিয়ে বন্দুক চটজলদি কর গুলি
উড়িয়ে দে ইয়াহিয়া আর নিয়াজির মাথার খুলি!’

ছেলে-মেয়েরা পয়সা দিয়ে গুলি করে বেলুন ফাটাত। আর তিনি বলতেন, ‘শোন, গুলি করার সময় মনে করবি তোরা বেলুন ফাটাতেছিসনে, ফাটাতেছিস ইয়াহিয়া-নিয়াজির মাথার খুলি, জেনারেল জানজুয়ার মাথার খুলি, রাজাকার গোলাম আজমের মাথার খুলি। কর গুলি; মার রাজাকার, আল-বদর আর পাকিস্তানী সৈন্য!’

তার মুখের ছড়া আর এইসব কথা শুনতে ভিড় লেগে যেত, ছেলে-মেয়েরা খুব মজা পেত, দারুণ উৎসাহে তারা পয়সা দিয়ে গুলি করে বেলুন ফাটাত। সন্ধ্যার পর হ্যাজাক বাতির আলোয় চলত বেলুন ফাটানো। শুধু নলিয়ার মেলা নয়, যেখানেই মেলা হতো সেখানেই বোর্ড বসাতে চলে যেতেন তারাপদ। মেলা ছাড়াও জামালপুর বাজারে তিনি বোর্ড বসাতেন কেবল হাটের দিনে, সন্ধ্যার সময় হ্যাজাক বাতি জ্বালিয়ে দিতেন। যতক্ষণ না মেলা কিংবা হাট ভাঙত ততক্ষণ তিনিও বোর্ড গুটাতেন না, এই খাত থেকেও বেশ রোজগার হতো তার।
তারাপদ’র বয়স যখন পঞ্চাশের ওপর তখন গ্রামে জেনারেটরের ব্যবহার শুরু হয়, বড় কোনো অনুষ্ঠান হলেই স্বচ্ছল পরিবারের মানুষেরা তখন জামালপুর বাজার থেকে জেনারেটর ভাড়া করে আনত, জেনারেটরের আলোয় ঝকঝক করত অনুষ্ঠানবাড়ি। ক্রমশ গ্রামে জেনারেটরের চাহিদা বাড়তে থাকে। আর তখন থেকেই হ্যাজাক বাতির কদর একটু একটু করে কমতে শুরু করে, তবে তখনো পর্যন্ত অস্বচ্ছল পরিবারের অনুষ্ঠানে হ্যাজাক বাতিই আলোর প্রধান উৎস ছিল। পরবর্তীতে যখন গ্রামে বিদ্যুৎ আসে, তখন বাড়িতে ছোট কোনো অনুষ্ঠান হলেও আর্থিকভাবে স্বচ্ছল মানুষেরা বাজার থেকে টিউবলাইট ভাড়া করে এনে সারা বাড়িতে লাগিয়ে অনুষ্ঠানের ঔজ্জ্বল্য বাড়াতে আরম্ভ করে। আর বড় কোনো অনুষ্ঠান হলে তো কথাই ছিল না, সারা বাড়ি যেন হয়ে উঠত আলোর ফোয়ারা! বিয়ে কিংবা কোনো অনুষ্ঠানের আসর থেকে শুরু করে এঁটো থালা-বাসন ধোয়ার জায়গা পর্যন্ত সবখানেই বৈদ্যুতিক আলোর ঝলকানি, এখনকার মতোই তখন জেনারেটর থাকত বিকল্প হিসেবে, বিদ্যুৎ চলে গেলে জেনারেটর চালু হতো। বৈদ্যুতিক বাতির ঝলকানিতে আর্থিকভাবে স্বচ্ছল বাড়িগুলোর দরজা হ্যাজাক বাতির জন্য চিরতরে বন্ধ হয়ে যায়। তখন আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল পরিবারের ছোট-খাটো কোনো অনুষ্ঠানে তারাপদ’র ডাক পড়ত, তাও বিকল্প হিসেবে, বিদ্যুৎ চলে গেলে তখন হ্যাজাক বাতি জ্বালাত। তখন থেকেই বৈদ্যুতিক চার্জার-লাইটের ব্যাপক প্রচলন শুরু হয়, ফলে দিনদিন অবস্থা এমন হয় যে ‘হ্যাচাক মাস্টার’ তারাপদকে কেউ আর ডাকে না। এই ব্যাপারটা তারাপদকে খুব হতাশ করে, তখন তিনি কেবল মেলায় আর হাটে বোর্ড বসিয়ে সন্ধ্যার সময় হ্যাজাক বাতি জ্বালাতেন। তার ছেলেরাও তখন আয় রোজগার করছিল, সংসারে তেমন অভাব ছিল না। কিন্তু ওই যে বিভিন্ন সামাজিক বা ধর্মীয় অনুষ্ঠানে হ্যাজাক বাতির ব্যবহার বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তারও কদর কমে যায়, লোকে তাকে আর আগের মতো ‘হ্যাচাক মাস্টার’ বলে সম্বোধন করে না, এই ব্যাপারটি তিনি মেনে নিতে পারেন নি। তার রাগ গিয়ে পড়ে বৈদ্যুতিক বাতির ওপর, রাতেরবেলা মানুষের বাড়ির বারান্দায় বা বাহির বাড়িতে যেসব বৈদ্যুতিক বাতি জ্বলত, গভীর রাতে দূর থেকে এয়ারগান দিয়ে গুলি করে তিনি সে-সব বাতি ভেঙে ফেলতেন। সারা গ্রামের মানুষের ঘরের বাইরের বৈদ্যুতিক বাতি তিনি এভাবে গুলি করে ভাঙতে শুরু করেন, প্রথম প্রথম মানুষ ভাবত এটা দুষ্টু ছেলেদের কাজ, কেউ কেউ তক্কে তক্কে থাকত ধরার জন্য, কিন্তু সহজে ধরতে পারত না। শেষ পর্যন্ত একদিন রাতে যখন লোকের হাতে ধরা পড়ে যান তারাপদ, তখন সকলের জেরার মুখে তিনি ফাঁস করেন তার এই বৈদ্যুতিক বাতি ভাঙার রহস্য। বৃদ্ধ মানুষ, তার ওপর অনেকদিন তিনি তার হ্যাজাক বাতির আলোয় মানুষের বাড়ির অনুষ্ঠানের ঔজ্জ্বল্য বাড়িয়েছেন, ফলে কেউ তার ওপর রাগ করে না, সবাই তাকে বোঝানোর চেষ্টা করে যে দিন বদলেছে, হ্যাজাক বাতির দিন ফুরিয়েছে, এই পরিবর্তন তার মেনে নেওয়াই উচিত। তবু মাঝে মাঝে যখন কোনো বাড়িতে অনুষ্ঠান হতো, সেই বাড়ি থেকে ব্যান্ডপার্টির বাদ্য ভেসে আসত কানে, বৈদ্যুতিক বাতির ঔজ্জ্বল্য চোখে পড়ত, তখন অস্থির হয়ে পড়তেন তিনি, চুপি চুপি এয়ারগান নিয়ে অন্য কোনো বাড়ির বারান্দা কিংবা উঠোনের বৈদ্যুতিক বাতি ভেঙে ফেলতেন। বাতি ভাঙার পরই তার অস্থিরতা কমে যেত, চুপি চুপি বাড়িতে গিয়ে শুয়ে পড়তেন। তাকে কেউ দেখতে না পেলেও ভুক্তভোগীরা বুঝে যেত যে কে এই কাজ করেছে। প্রথম দু-একবার তারা বিষয়টি মেনে নিলেও পরে অভিযোগ করতে শুরু করে তারাপদ’র ছোট ভাই অর্থাৎ অমলের বাবা অবিনাশ ডাক্তার আর তারাপদ’র ছেলেদের কাছে। বাবার জন্য লোকের কথা শুনতে হয় দেখে তারাপদ’র ছেলেরা তাকে বকাঝকা করত। যাদের বাতি ভাঙত, ছেলেরা তাদের বাতির দাম দিতে চাইত, কেউ নিত, আবার কেউ নিত না। একদিন সন্ধ্যায় অমলের বাবা অবিনাশ ডাক্তার তার দাদাকে নিয়ে বসেন, বোঝানোর চেষ্টা করেন, ‘দাদা, তুমি এট্টু বোঝার চেষ্টা কর। হ্যাজাক বাতি বিজ্ঞানের অবদান, আবার বৈদ্যুতিক বাতিও বিজ্ঞানের অবদান। সমাজে এহন হ্যাজাক বাতির আবেদন শ্যাষ অয়ে গেছে, আবার ভবিষ্যতে কোনোদিন হয়ত আজকের এই বৈদ্যুতিক বাতির আবেদনও শ্যাষ হয়ে যাবার পারে। শ্যাষ না অলিউ হয়ত বৈদ্যুতিক বাতির বিবর্তন ঘটপি, নতুন নতুন বৈদ্যুতিক বাতি তৈরি অবি, নয়ত এমন কিছু অবি যা এহন আমরা ভাববারও পারিনে। এই যে তুমি পুরোনোকে আঁকড়ে ধরে আচো, বিজ্ঞানের নতুন অবদানকে মাইনে নিতে পারতেচ না, তাতে তুমি নিজে যেমনি কষ্ট পাতেচ, তেমনি তোমার জন্য অন্যদের অন্বিষ্ট অতেচে। ধরো- এহন যদি কোনো কুপি বা হারিকেন ওয়ালা তোমার হ্যাজাক বাতি ভাঙে দিয়ে কয় যে কুপি বা হারিকেনই জ্বালাতি অবি, তুমি কি মাইনে নিবা? মানুষের উদ্ভাবন ক্ষমতা কুপি বাতিতে থামে নাই, বৈদ্যুতিক বাতিতে পৌঁছে গেছে। মানুষ পুরাতনকে পিছনে ফেলে নতুনের সন্ধ্যানে ক্রমশ সামনে আগাইচে, এহনো আগাতেচে। মানুষ একসময় গুহায় বাস করত, এহনো কি আমরা তাই করব? আমাগের ছেলেবেলার কথাই ধরো, বাবার আর্থিক সামর্থ্য কম ছিল বলে আমরা ছনের ঘরে বাস করতাম, এহন আমরা মেঝে পাকা করা টিনের ঘরে বাস করতেচি, ভবিষ্যতে আমাগের ছেলে-মেয়েরা যদি উন্নতি করবার পারে তাইলে ওরা হয়ত একদিন দালানে বসবাস করবি। ছোটবেলায় আমরা কোনো আত্মীয়বাড়ি যাবার সময় গরুর গাড়িতে যাতাম, এই বাস-ট্রেন-বিমানের যুগে এহনো কি তাই যাব? যাব না। এইডা মহাকালের স্রোতধারা, এই স্রোতধারায় বাঁধ দিতে চাওয়া বোকামী। মানুষের এই এগোয়ে চলার স্রোতে তোমারেও সামিল অতি অবি, নইলে তুমি কেবল কষ্টই পাবা। এমন কোরো না দাদা। নতুনকে মাইনে নাও, বিজ্ঞানের যে নতুন সৃষ্টি মানুষকে সুবিধা দেয় কিংবা মানুষের কল্যাণ বয়ে আনে তা মাইনে নিতি অয়।’

সেই দিনের পর থেকে আর একটা বৈদ্যুতিক বাতিও ভাঙেন নি তারাপদ, আর কোনোদিন হ্যাজাক বাতিও জ্বালান নি। শারীরিক অসুস্থতার কারণে মেলায় কিংবা বাজারে শুটিং বোর্ড বসানো আরো আগেই ছেড়ে দিয়েছিলেন। তখন মাঝে মাঝে হ্যাজাক বাতি তিনটি বের করে ধুলো মুছতেন, ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকতেন হ্যাজাক বাতিরগুলির দিকে। তারাপদ মারা গেলে অবিনাশ তার দাদার সম্মানে শ্মশানযাত্রায় হ্যাজাক বাতি ব্যবহার করতে বলেছিলেন, অমল নিজে একটা হ্যাজাক বাতি বয়ে এনেছিল শ্মশানে, রাতেরবেলা হ্যাজাক বাতির আলোয় এই শ্মশানেই তারাপদকে দাহ করা হয়েছিল।

হ্যাজাক বাতি তিনটি অমলের জ্যাঠতুতো দাদাদের ঘরে অনেকটা অবহেলায় পড়েছিল, বছর কয়েক আগে চেয়ে নিয়ে এখন সেগুলো যত্ন করে নিজের কাছে রেখেছে অমল। সে বিশ্বাস করে হ্যাজাক বাতিগুলোর বাস্তব মূল্য ফুরিয়েছে, কিন্তু এর ঐতিহাসিক মূল্য আছে। অমলের মধ্যে ইতিহাস সংরক্ষণের এই বিশ্বাস ঢুকেছে অয়নের মাধ্যমে, একদিন অমলের চেম্বারে বসে অনেক কথা হচ্ছিল ওদের মধ্যে, অয়ন তখন বলছিল, ‘দ্যাখো অমলদা, এই যে একবিংশ শতাব্দীতে তোমরা ধর্ম পালন করো, এখন আর এর কোনো প্রয়োজন নেই। আদিম মানুষ যখন প্রকৃতির সঙ্গে লড়াই করতে পারত না, প্রকৃতিকে ভয় পেত, তখনই মানুষের মনের মধ্যে ঈশ্বর-দেবতার সৃষ্টি হয়েছে। সূর্যের তেজ থেকে কিংবা দাবানল থেকে বাঁচার জন্য মানুষ সূর্য পূজা করত, ঝড়-বৃষ্টি থেকে বাঁচার জন্য বরুণ দেবতার পূজা করত, তীব্র তুষারপাত হতো বলে পৃথিবীর কোথাও কোথাও মানুষ বরফের পূজা করত। এভাবেই নানা ধরনের দূর্বলতা থেকে মানুষ কল্পনা করে বিভিন্ন দেবতার সৃষ্টি করেছে, আবার কেউ কেউ কখনো কখনো একটু যাদুবিদ্যা দেখিয়ে নিজেকে দেবতা বলে ঘোষণা করেছে। কালে কালে মানুষ এইসব দেবতার নামে বিশাল বিশাল মন্দির বানিয়েছে, এইসব দেবতাকে পূজা করেছে, প্রকৃতির শক্তির কাছে অসহায় মানুষ এইসব দেবতাকে আঁকড়ে ধরে বাঁচতে চেয়েছে। কিন্তু এখন বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রার ফলে আমরা জেনে গেছি যে মহাবিশ্ব তার আপন গতিতে চলছে, প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ঈশ্বর নামক কোনো শক্তির হাত নেই, আর প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের বিপদও অনেকটাই এখন সামলে উঠতে শিখেছে মানুষ। মানুষের জীবনে এইসব দেবতা বা মন্দিরের কোনো প্রভাব আগেও যেমনি ছিল না, তেমনি এখনো নেই। কিন্তু তাই বলে হযরত মুহাম্মদ কিংবা তার বর্তমান অনুসারী তালেবান অথবা ইসলামিক স্টেট (আইএস) এর জঙ্গিদের মতো হাজার বছর আগের কোনো পুরাকীর্তি বা মন্দির কি আমরা ধ্বংস করে ফেলবো? তা নিশ্চয় নয়। এইসব মন্দিরের নৃতাত্ত্বিক এবং ঐতিহাসিক মূল্য আছে। আমাদের পূর্বপুরুষরা যা যা বিশ্বাস করত, আমরা এখন হয়ত তার অনেক কিছুই বিশ্বাস করি না, কিন্তু সমাজ ও সংস্কৃতির যে বিবর্তনের ভেতর দিয়ে মানুষকে আজ এখানে আসতে হয়েছে, সেই ইতিহাস জানা এবং সংরক্ষণ করা আমাদের দায়িত্ব।’
অয়নের এই কথাগুলো ভালো লাগে অমলের। ঐতিহ্য সংরক্ষণের তাগিদ থেকেই সে জ্যাঠাতুতো দাদাদের কাছ থেকে হ্যাজাক বাতিগুলো চেয়ে নিয়ে নিজের কাছে যত্ন করে রেখেছে। এই হ্যাজাক বাতিগুলো তাদের বংশের অনাগত প্রজন্মের কোনো কাজে লাগবে না, কিন্তু তারা জানবে হ্যাজাক বাতি নামে এক প্রকার বাতি ছিল, তাদের কোনো এক পূর্বপুরুষ এই বাতির ব্যবহার জানতেন।

নয়

শ্মশানযাত্রীরা কখন শ্মশানে এসেছে কিংবা কতক্ষণ আগে চিতা জ্বেলেছে তা জানে না ওরা তিনজন, মৃতদেহ পোড়ানো শেষে শ্মশানযাত্রীদের শ্মশান ছেড়ে যাবার অপেক্ষায় থাকে ওরা। মদ শেষ হলে শূন্য বোতলটি পিছনদিকে ছুড়ে ফেলে দেয় অমল, মদ আর গাঁজার নেশার ঘোরে ওদের তিনজনের মনের আঙিনায় পায়চারি করে আশালতা! কিন্তু ওরা কেউই একবারের জন্যও আশালতার প্রসঙ্গ তোলে না, অথচ সেই সন্ধ্যা থেকেই আলাদাভাবে বারবার ওদের স্মৃতিতে ফিরে এসেছে আশালতা! একই আশালতা ওদের তিনজনের কাছে তিন ধরনের মানুষ, তিনজনের সঙ্গে আশালতার সম্পর্ক তিন রকমের, অনেক যৌথ স্মৃতির ভিড়েও আশালতার সঙ্গে তিনজনেরই রয়েছে কম-বেশি স্বতন্ত্র স্মৃতি। ফলে আশালতা সম্পর্কে ওদের ভাবনা কিংবা স্মৃতিকাতরতাও ভিন্ন ভিন্ন। ওরা আশালতার প্রসঙ্গ না তুললেও তিনজনই নেশার ঘোরে স্বতন্ত্রভাবে আশালতার স্মৃতির বৃত্তে ঘুরপাক খায়।

বিলাসের মনে হয়- ছাই চাপা আগুনের মতো আশালতার চাপা অহংকার ছিল, স্বচ্ছল পরিবারের সুশ্রী কন্যা হওয়াই ওর এই অহংকারের মূল কারণ, ওর অহংকার সহজে সবার চোখে ধরা পড়ত না সুন্দর ব্যবহারের কারণে, কিন্তু অনেকের কাছে প্রকাশ না পেলেও সে ঠিকই আবিষ্কার করতে পেরেছে আশালতার হৃদয়ের এই খুঁত!

অমলের মনে হয়- আশালতার নিরহংকার আর উদারতা ওর হৃদয়ের মহামূল্যবান অলঙ্কার! যারা ওর সঙ্গে গভীরভাবে না মিশেছে বা যারা হৃদয়ের অতলে ডুব দিয়ে কিছু দেখতে জানে না, তারা আশালতার এই মহামূল্য অলঙ্কার দেখতে পায় নি কোনোদিন। আশালতা জীবনকে উপভোগ করতে জানত, নিজে আনন্দে থাকত, আবার অন্যদেরকেও আনন্দে রাখত; এ এক আশ্চর্য গুণ ছিল ওর! একই বয়সের হলেও আশালতা ছিল ওদের সকলের চেয়ে উৎফুল্ল, প্রাণবন্ত, আবার সকলের চেয়ে তীক্ষ্ণ বুদ্ধি সম্পন্ন এবং পরিণত। ওর অহংকার ছিল না ঠিকই, কিন্তু অনার্স শেষ করার পর থেকে, হতে পারে পরিবার এবং পারিপার্শ্বিক চাপে খুব অভিমানী হয়ে উঠেছিল আর সহসাই ভুল বুঝত।

পরিমলের কাছে আশালতার হৃদয় এক রহস্যময় প্রাসাদ; একের পর এক দরজা, সে-সব দরজা দিয়ে ভেতরে ঢোকাও যায়, কিন্তু দরজা যেন শেষ হয় না, প্রাসাদের শেষ প্রান্ত খুঁজে পাওয়া যায় না! আশালতাকে কাছে পেয়েও যেন না পাওয়ার যন্ত্রণায় ছটফট করতে হয়, আশালতা পাশে বসে থাকলেও মনে হয়, ওর চেয়ে ওই দূর আকাশের নক্ষত্র অনেক আপন! ওর হৃদ সরোবরে দীর্ঘক্ষণ সাঁতার কাটার পরও মনে হয় যেখান থেকে সাঁতার শুরু হয়েছিল সেই একই জায়গায় পড়ে আছে, আর সেটা বোঝা পর পরিমলের নিজেকে আহাম্মক মনে হতো!

ওদের তিনজনের থেকে কিছুটা দূরে একটা ব্যাঙ ককিয়ে ওঠে, নিশ্চয় সাপের মুখে পড়েছে, পরিমল বেতের ছড়ি দিয়ে মাটিতে শব্দ করে, ব্যাঙের ককানো থেমে যায়, কিছুক্ষণ পর পুনরায় ব্যাঙের ককানো শোনা যায় আরো কিছুটা দূর থেকে, অর্থাৎ ছড়ির শব্দ পেয়ে সাপটি ব্যাঙ মুখে নিয়ে দূরে সরে গেছে।

হঠাৎ আউলা বাতাসে গাঁজার গন্ধ ম্লান করে মৃতদেহ পোড়া কটু গন্ধ ভেসে আসে ওদের ঘ্রাণেন্দ্রিয়ে। বিলাসের বিশ্রি লাগে, ও ক্ষণিকের জন্য শ্বাস নেওয়া বন্ধ করে, তারপর প্রশ্বাস ছেড়ে পুনরায় শ্বাস নেবার সময় ওর ঘ্রাণেন্দ্রিয় আবারও মৃতদেহ পোড়া কটু গন্ধই পায়। মৃতদেহ পোড়া গন্ধ বিলাসের ভালো লাগে না, পারতপক্ষে সে মৃতদেহ পোড়াতে শ্মশানে যায় না। গ্রামের কোনো মানুষ কিংবা কোনো স্বজন মারা গেলে শ্মশানযাত্রী হয় ওর ছোট ভাই পলাশ। সে যে এতক্ষণ আশালতার স্মৃতির নির্জন পথে বেভুলো পথিকের মতো হাঁটছিল, সে-পথ থেকে ওকে ছিটকে দেয় মৃতদেহ পোড়া কটু গন্ধের ঝাপটা। বিলাস মনে করার চেষ্টা করে যে, শেষ কবে শ্মশানযাত্রী হয়েছিল, ওর মনের আকাশে উঁকি দেয় রবির মুখ, বছর তিনেক আগে ওদের গ্রামের রবি মারা গেলে শ্মশানযাত্রী হয়েছিল। মৃত রবির সেই নিথর নীলাভ মুখ ওর কাছে এখন কেমন ঝাপসা মনে হয়, মনে হয় ওই মুখ রবির নয়, অচেনা কারো। কিন্তু জীবন্ত রবির স্মৃতি এখনো সজীব। রবিকে নিয়ে অনেক স্মৃতির ভিড়ে কৈশোরের একটি দিনের কথা ওর বারবার মনে পড়ে।

ওরা তখন ক্লাস নাইনে পড়ে, তখনও ওরা আদ্যনাথ বালার কাছ থেকে ব্রত গ্রহণ করে শিব পূজার বড় দলের সন্ন্যাসী হয় নি। ওদের গ্রামে ব্রত গ্রহণ করা বড় সন্ন্যাসীদের একটি শিব পূজার দল যেমনি আছে, তেমনি আছে ব্রত গ্রহণ না করা ছোটদের একটি শিব পূজার দল। এই ক্ষুদে সন্ন্যাসীদের পূজার আচারানুষ্ঠান বড়দের মতো কঠোর নয়, অনেকটাই শিথিল; বড়দের মতো উপবাস থাকতে হতো না ওদের, তিনবেলা নিরামিষ ভাত খেত, ফল-জল খেত।

ওই ছোট দলে পূজা করার সময় ভগবতী পূজার দিন অমল শিব আর বিলাস পার্বতী সেজে বেরিয়েছিল মাঙন মাঙতে। অমলের সারা গায়ে খড়িমাটির প্রলেপ, উদোম গা, নগ্ন পা, পরনে হাঁটুর ওপর পর্যন্ত লাল রঙের লালচি, মাথায় নকল চুলের লম্বা লম্বা জটা, গলায় এবং বাহুতে রুদ্রাক্ষের মালা, এক হাতে ত্রিশূল আর আরেক হাতে ডমরু। বিলাসের মুখে আর হাতে গোলাপী আভাময় রঙের প্রলেপ, পরনে লাল শাড়ি, গায়ে লাল ব্লাউজ আর ব্লাউজের ভেতরে নকল স্তন, ঘোমটা দেওয়া মাথার লম্বা কালো পরচুলার কয়েক গোছা বুকের দু-পাশে রাখা, সিঁথিতে সিঁদূর, কপালে সিঁদূরের ফোঁটা, ঠোঁটে লাল লিপস্টিক, চোখে-ভ্রুতে কাজল, পায়ে এবং হাতের তালুতে আলতা। হাতে ধরা ছোট্ট একটি পরাত, পরাতের ওপর একটা সিঁদুরের কৌটা, ধান-দূর্বা, ফুল আর টাকা। নগ্ন পায়ে ওরা গ্রামে গ্রামে আর বাজারে ঘুরে ঘুরে মাঙন মাঙত, লোকে টাকা দিত, চাল-ডাল-তেল-লবণ দিত। চাল-ডাল-তেল-লবণ বহন করার জন্য ওদের সঙ্গে আরো দুই-তিনজন সন্ন্যাসী থাকত।

সে-দিন ওরা ঠিক করেছিল আগে বাজারে যাবে, বাজারের দোকানগুলো থেকে বেশ টাকা পাওয়া যায়, দুই-পাঁচ টাকা করে দিলেও অনেক টাকা হয়, বাজার ঘুরে তারপর অন্যান্য গ্রামে ঢুকবে। তখন সবে চন্দনা নদীর ওপর ব্রিজের নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে, খেয়া নৌকায় নদী পার হয়ে ঢাল বেয়ে বাজারের ইট বিছানো রাস্তায় উঠতে হতো। শিব-পার্বতীরূপী অমল-বিলাস আর ওদের দলের আরো কয়েকজন সন্ন্যাসী নৌকা থেকে নেমে নদীর ঢাল বেয়ে উঠার সময় রবির সঙ্গে দেখা, বাজার থেকে ফিরছিল রবি। রবি ওদের সমবয়সী, ক্লাস ফাইভেই লেখাপড়া ছেড়ে দিয়েছিল। রবির স্বভাব অনেকটাই মেয়েলি ধরনের; কোমর দুলিয়ে হাঁটত, হাত নেড়ে চিকন সুরে টেনে টেনে কথা বলত। বাড়িতে মায়ের রান্না-বান্নার কাজে সাহায্য করা, থালা-বাসন ধোয়া, ঘর ঝাঁট দেওয়া, উঠোন লেপা, ঘাটে বসে কাপড় কাচা, ধান উড়ানোসহ যে-সব কাজকে সমাজের মানুষ সাধারণত মেয়েদের কাজ বলে গণ্য করে, সেইসব কাজে যত আগ্রহ ছিল ওর। ওকে কোনোদিন মাঠে ধান-পাট কাটতে দেখা যায় নি বা মাঠ থেকে ধান বা গমের বোঝা বয়ে বাড়িতে আনতেও দেখা যায় নি। সেদিন রবি এক নজর দেখেই অমলকে চিনতে পারলেও শুরুতে বিলাসকে চিনতে না পেরে প্রায় সুর করে বলে, ‘এ কিডা লো তোর বউ সাজিছে অমল?’

রবির কথা বলার ধরন এমনই ছিল। কী লো, কিডা লো, অ্যা লো, মা লো, ও লো, কনে যাস লো, খাইছিস লো ইত্যাদি ধরনের ভাষা সে ব্যবহার করত। রবি কাছে এসে বিলাসের মুখোমুখি দাঁড়ায়, ভালো মতো দেখে চিনতে পেরে মুখে হাত চাপা দিয়ে হি হি করে হেসে বলে, ‘ওলো লো মা লো মা, এ দেহি আমাগের বিলু, হি হি হি…!’

তারপর ফুলে থাকা বিলাসের নকল স্তনে আচমকা পাঁচ আঙুলের চাপ দিয়ে বলে, ‘এত বড় দুধ বানাইছিস কী দিয়ে লো বিলু হি হি হি….!’

হাসতে হাসতে শরীর বাঁকিয়ে যেন ধুলোয় লুটিয়ে পড়তে চায় রবি! আর প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই পিছন থেকে মেয়েলি কণ্ঠের হাসির শব্দ কানে আসে বিলাসের, ঘাড় ফিরিয়ে দ্যাখে আশালতা, আরেকটি নৌকা থেকে নামার পর রবির কাণ্ড দেখে সে তখন হাসতে হাসতে গড়িয়ে পড়ছে ওদেরই আরেক সহপাঠী বাসন্তীর গায়ে! বিলাস লজ্জা পায়, কিন্তু আড়চোখে তাকিয়ে থাকে আশালতার দিকে, অমলও তাকিয়ে থাকে।

আশালতা আর বাসন্তীর হাসি রবিকে হয়ত আরো উৎসাহিত করে, রবি ওদের উদ্দেশে বলে, ‘ওলো আশা, দ্যাখ দ্যাখ তুরা, বিলুর এত্ত বড়...!’

দুই হাত দিয়ে স্তনের সঠিক আকৃতির চেয়েও অধিক বড় পরিমাপ বুঝিয়ে আবার হাসতে থাকে রবি।

রবির স্বভাব অমনই ছিল, ছেলেদের চেয়ে মেয়েদের সাথে তার সখ্যতা বেশি ছিল। পাড়ার যুবতী মেয়ে কিংবা পাড়াত সম্পর্কে বৌদি অথবা দিদিমারা ছিল তার সবচেয়ে কাছের মানুষ, তাদের সঙ্গে যে-কোনো বিষয় নিয়ে সে অবলীলায় আলাপ করতে পারত, এমনকি নারীর মাসিক কিংবা শরীর বিষয়েও। পাড়ার নারীকুল রবিকে নিজেদের একজনই মনে করত, রবির সামনে মন খুলে কথা বলায় তাদের কোনো লজ্জা বা লুকোছাপা ছিল না।

তারপর শিব পূজার পর্ব শেষ হলে বিলাস যেদিন প্রথম স্কুলে যায়, সেদিন আশালতাসহ অন্যান্য মেয়েরা তাকে নিয়ে সে-কী হাসাহাসি! মেয়েরা হাসতে হাসতে বলে, ‘এই বিলু, তোর ইজ্জত নাকি নষ্ট করছে হাফ-লেডিস রবি!’

এই নিয়ে বেশ কিছুদিন স্কুলের সহপাঠীরা বিলাসের পিছনে লেগে ছিল। তারপর এসএসসি পরীক্ষার পর ব্রত গ্রহণ করে বড় দলের সন্ন্যাসী হয়েও অমল আর বিলাস শিব-পার্বতী সাজত, হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজে পড়ার সময় মাঝে কয়েক বছর শিব পূজায় ছেদ পড়েছিল অমলের, তারপর গ্রামে ফিরে আবার পূজা শুরু করলে ওরা পুনরায় শিব-পার্বতী সাজতে শুরু করে।

শুধু ভগবতী পূজার দিনই নয়, শিব পূজা শুরুর দ্বিতীয় দিন থেকেই ওদের একটা দল কাঠের কালো শিবঠাকুর বা দেইল নিয়ে গ্রামে গ্রামে ঘুরে ঘুরে মাঙন মাঙে, এই দলে থাকে পরিমল। আর আরেকটা দল শিব, দূর্গা, অসুর, কার্তিক, গণেশ, বাঘ ইত্যাদি সেজে মাঙন মাঙতে বের হয়। অমল শিব সাজে আর বিলাস দূর্গা; অন্যান্যরা সাজে কার্তিক, গণেশ, অসুর, বাঘ ইত্যাদি; বাড়ি বাড়ি গিয়ে ঢাক আর ঝাঁজের তালে তালে নাচতে নাচতে দেবী দূর্গার নেতৃত্বে সম্মিলিতভাবে অসুরকে আক্রমণ করে, এক পর্যায়ে দেবী দূর্গার হাতে অসুর বধ হয়। গৃহস্থবাড়ির নারীরা উলুধ্বনি দেয়, ধান-দূর্বা দিয়ে প্রণাম করে। তারপর চাল-ডাল-তেল, টাকা, গাছের ডাব যে গৃহস্থ যেমন পারে দান করে।

মাথা চালানের পরদিন খুব সকালে পুকুরঘাটে বানেশ্বরী পূজা করে সন্ন্যাসীরা, বানেশ্বরী পূজার আগে সকল সন্ন্যাসী পুকুরে স্নান করে, কাঠের শিবঠাকুর বা দেইলকেও স্নান করায়। এই স্নানের আগে পুকুরঘাটে একটা আনুষ্ঠানিকতা থাকে, আপাদমস্তক সাদা কাপড় দিয়ে ঢাকা একজন সন্ন্যাসী মৃত মানুষের ভুমিকায় ঘাটের সিঁড়িতে শুয়ে থাকে এবং আরেকজন শাড়ি পরে মাথায় লম্বা ঘোমটা দিয়ে ওই মৃত মানুষের সদ্য বিধবা স্ত্রীর বেশে পাশে বসে কাঁদে আর আহাজারি করে। এই কান্না দেখতে এদিন পুকুরঘাটে মানুষের ঢল নামে, পুকুরের চারপাশে মানুষের ভিড় জমে যায়, পথ চলতি ভ্যান কিংবা সাইকেলে যাত্রারত মানুষও দাঁড়িয়ে যায় কান্না শুনে। সদ্য বিধবার বেশধারীর কান্না জড়ানো সুরেলা বিলাপের ভাষা মোটামুটি এরকম- ‘ওরে আমার সাধের সোয়ামী রে...আমারে থুয়ে তুমি কনে চলে গিলে রে...কিডা দিবি আমার পান-সুপারি, কিডা দিবি পরনের শাড়ি, ও লো আমার সাধের সোয়ামী রে...; আমার মাথার সিঁদূর মুছে দিবি রে…হাতের শাখা ভাঙে ফেলবি রে…পরানের ভাতার তুমি ক্যান মরে গিলে রে….আমি কার গলা জড়ায়ে ধরে শুয়ে থাকপো রে…; ওরে আমার মা রে...বাবা...তুমাগের জামাই মরে গেছে রে..., জামাই ষষ্টিতি তুমরা কারে নেমতন্ন করবা রে..., কিডা তুমাগের পিন্নাম করে কাপড় দিবি রে..., আর কোনোদিন আদরের জামাই’র মুখ দ্যাকপা না রে বাবা…, ওরে আমার সাধের ভাতার রে….বাবা; ওলো বৌদি তুমার ঠাহুরজামাই আর নাই লো..., তুমারে ধলা বৌদি ক’য়ে ডাহার মতো আর কেউ থাকল না লো..., কারে তুমি ভালো-মন্দ রান্ধে খাওয়াবা, কার পাতে দিবা মাছের বড় মাথাডা, ও লো বৌদি লো… আমার ভাতার নাইলো...; ওরে কার নাগি আমি পথের দিক চায়ে থাকপো রে…, আমার স্নো-পাউডার কিডা কিনে দিবি লো…, ওরে রাত্তিরবেলা গলা জড়ায়ে ধরে কিডা আমারে সুহাগ করবি রে...পরানের ভাতার রে বাবা…, আমার পাঁচ মাসের প্যাটের সন্তান কারে বাপ কয়ে ডাকপি রে…, শাউড়ি ক’বি ভাতারখাকি মাগী, মানষি ক’বি কলঙ্কিনী, ওরে আমার সাধের ভাতার রে বাবা…; ও ভাতার, ভাতাররে… তুমি আমারে ছাড়ে কনে গিলে রে...!’

সদ্য বিধবার বেশধারীর এই কান্না জড়ানো বিলাপ শুনে নেহাত দুধের শিশু ব্যতিত কোনো মানুষের বুকের ভেতর মোচড় দিয়ে ওঠে না, কেউ আবেগাক্রান্ত হয়ে পড়ে না, কারো চোখ ছলছল করে না বা কারো চোখের জল ঝরে পড়ে না! বিলাপের ভাষা শুনে এবং তা প্রকাশের ধরন দেখে সবাই নির্মল আনন্দ পায়, হাসে, কেউ কেউ হাসতে হাসতে একে-অন্যের গায়ে ঢলে পড়ে! মানুষকে বিনোদন দিতেই বিধবার বেশধারী কান্না এবং বিলাপ দীর্ঘায়িত করে, একই কথা বারবার বলে। গলার স্বর কখনো উদারায় নেমে আসে, আবার কখনো এমনভাবে তারায় চড়ায় যে সহজে আর নামতেই চায় না। কান্না জড়ানো বিলাপের সঙ্গে একটু পর পর দুই হাত দিয়ে বুক চাপড়ায়, কপাল চাপড়ায়, সাধের সোয়ামীর বুকের ওপর আছড়ে পড়ে, হাত আর মাথা ঠোকে!

অনেকক্ষণ ধরে এই কান্না পর্ব চলে। তারপর শরীর-মাথা চাদরে ঢেকে একজন আগন্তুক এসে ঘাটের সিঁড়িতে দাঁড়ায় আর সদ্য বিধবাকে এভাবে কাঁদতে দেখে ঘাটের সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে বলে, ‘তুমি কাঁদতেছো ক্যান?’
সদ্যবিধবা বলে, ‘আমার সোয়ামী মরে গেছে গো বাবা।’
‘তোমার সোয়ামী মরে গেছে তাহলে তুমি তারে শ্মশানে নিয়ে না গিয়ে ঘাটে বসে কাঁদতেছো ক্যান?’
‘আমি শুনছি, এই ঘাটে মহাদেব ছিনান করবার আসে। তাই আমি আমার সোয়ামীর দেহ নিয়ে ঘাটে বসে আছি।’
‘ভুল শুনছো তুমি, মহাদেব থাকেন কৈলাসে, তিনি এই ঘাটে কী করবার আসপেন! তুমি মানুষজন ডাহে নিয়ে তোমার সোয়ামীর মৃতদেহ নিয়ে শ্মশানে যাও, দাহ করো।’

‘না, যতক্ষণ মহাদেব না আসপি, ততক্ষণ আমি এই ঘাটের তে সরব না।’
‘আচ্ছা বিপদ তো, আমরা ঘাটে ছিনান করব আর তুমি ঘাট জুড়ে বসে আছো! যাও, ঘাট ছাড়ো।’
‘না, আগে মহাদেব আসপি, আমার মরা সোয়াসীরে তাজা করবি, তারপর আমি ঘাট ছাড়ব।’
‘কেউ তোমারে মিথ্যে কতা কইচে। মরা মানুষ আবার তাজা করা যায় নাকি?’
‘বাবা ভোলানাথ সব পারে গো বাবা।’

এমনিভাবে আগন্তুকের সঙ্গে তর্ক করতে থাকে সদ্য বিধবা, বিধবার নাছোড়বান্দা মনোভাব দেখে আগন্তুক নিজের মাথা-শরীর ঢেকে রাখা চাদর খুলে ফেললে দেখা যায় তার মহাদেবের বেশ, হাতে তার শঙ্খ। মহাদেব বলেন, ‘আমি তোমার পতি নিষ্ঠায় সন্তুষ্ট অইছি। তোমার সোয়ামীরে আমি এহনই তাজা করে দিতেছি।’

এরপর মহাদেব ঘাটের নিচের ধাপে এসে শঙ্খের মধ্যে জল ভরে সেই জল মৃতের ভুমিকায় থাকা মানুষটির মাথা থেকে পা পর্যন্ত ঢালে তিনবার আর মুখে বলেন, ‘ঘাটের মরা ঘাটে যাবি, মরারে তুই তাজা অবি।’

সঙ্গে সঙ্গে মৃতের বেশে শুয়ে থাকা মানুষটি তাজা হয়ে পুকুরে নেমে সাঁতার কাটতে থাকে। এরপর সদ্য বিধবা, বেশধারী মহাদেব এবং অন্যান্য সকল সন্ন্যাসী পুকুরের জলে ঝাপিয়ে পড়ে।

গত পাঁচ বছর ধরে মহাদেবের ভূমিকায় অমল আর সদ্য বিধবার ভূমিকায় বিলাস অভিনয় করে আসছে। এই যে বিলাস সদ্য বিধবার ভুমিকায় এমনিভাবে কাঁদে আর বিলাপ করে, এটা সে শিখেছে রবির কাছ থেকে। বিলাসের আশ্চর্য এক গুণ, সে সহজেই মানুষকে অনুকরণ করতে পারে। রবির ঠাকুমা মারা গেলে রবি ওর দুই পিসির সঙ্গে সমানতালে কেঁদেছিল আর বিলাপ করেছিল। রবির সেই কান্না জড়ানো বিলাপ অনুকরণ করে বিলাস, আর সেই অনুকরণের সঙ্গে নিজের ইচ্ছে মতো ভাষা প্রয়োগের মাধ্যমে আরো অতিরঞ্জিত করে বানেশ্বরী পূজার দিনে তা পরিবেশন করে।

বেচারা রবি, বিয়ে করতে চায় নি, কিন্তু ওর বাড়ির মানুষ জোর করে ওকে বিয়ে দিয়েছিল, বিয়ের এক মাস পর বউ ওকে ছেড়ে চলে যায়। বউ চলে যাওয়ায় নানাজনে নানা কথা বলত ওকে। কেউ কেউ ঠাট্টার ছলে বলত- ‘রবি তো এট্টা মাগি, মাগির কাছে বউ থাহে নাকি!’ কেউ বলত- ‘রবি পারে না, তাই বউ চলে গেছে!’ তারপর থেকেই হাসি-খুশি রবি কেমন যেন হয়ে যায়, মন মরা হয়ে থাকত। এরপর একদিন বিষ পান করে আত্মহত্যা করে, হয়ত হতাশায়, হয়ত কোনো গোপন বেদনায়।

রবি মরে গেছে, কিন্তু বছরে একটি দিন, ওই বানেশ্বরী পূজার দিন সকালে রবি যেন ফিরে আসে বিলাসের মধ্যে, রবির অনুকরণে বিলাস কাঁদে আর বিলাপ করে। হয়ত কোনো কোনো মানুষের ভেতরে রবির স্মৃতি চাগাড় দিয়ে ওঠে; বিলাসের কান্না জড়ানো বিলাপ শুনে মানুষ হাসে, আনন্দ পায়, তবু ওই হাসি-আনন্দের ভেতরেই হয়ত কারো কারো বুকের কন্দরে রবির জন্য একটু ব্যথা চিন চিন করে ওঠে!




(চলবে......)

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ০৩ রা মার্চ, ২০২০ বিকাল ৩:৫৬

রাজীব নুর বলেছেন: আশালতা ভালো থাকুক।
পড়ে ভালো লাগলো।

আমি প্রথম থেকেই আপনার এই ধারাবাহিকের সাথে আছি। শেষ পর্যন্ত থাকবো।

০৩ রা মার্চ, ২০২০ রাত ১১:০১

মিশু মিলন বলেছেন: সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।

২| ০৩ রা মার্চ, ২০২০ বিকাল ৩:৫৭

নেওয়াজ আলি বলেছেন: চমৎকার উপস্থাপন , পাঠে মুগ্ধতা রেখে গেলাম।

০৩ রা মার্চ, ২০২০ রাত ১১:০২

মিশু মিলন বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ।

৩| ০৪ ঠা মার্চ, ২০২০ রাত ৯:০০

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: সনাতনী যাপিত জীবনের খুঁটিনাটি দারুন মুন্সিয়ানায় তুলে ধরছেন উপন্যাসের পর্বে পর্বে...

তবে বেশ কিছূ নতুন নতুন ঠেকে আমার কাছে। আমাদের প্রতিবেশি সনাতনীদের মাঝে এসবের প্রচলন খূব একটা ছিল না।
শুধু দূর্গাপূজা আর লক্ষী পূজায় বেশ আড়ম্বর হতো। আর স্বরস্বতি পূজারতো কথাই নেই! স্কুল ছুটি থাকতো আর স্কুল মাঠে সারাদিন পূজার অনুষ্ঠান চলতো...

+++

০৪ ঠা মার্চ, ২০২০ রাত ৯:৫২

মিশু মিলন বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই। একই পূজার কিছু কিছু রীতি-পদ্ধতি অঞ্চলভেদে ভিন্নতর হয়ে থাকে। চৈত্র মাসে শিবপূজার এই রীতি প্রচলিত আছে আমাদের রাজবাড়ী-ফরিদপুর অঞ্চলে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.