নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মিশু মিলন

মিশু মিলন

আমি বর্তমানে ইস্টিশন এবং সামহোয়্যার ইন ব্লগে লিখি। আমার সকল লেখা আমি এই দুটি ব্লগেই সংরক্ষণ করে রাখতে চাই। এই দুটি ব্লগের বাইরে অনলাইন পোর্টাল, লিটল ম্যাগাজিন এবং অন্য দু-একটি ব্লগে কিছু লেখা প্রকাশিত হলেও পরবর্তীতে কিছু কিছু লেখা আমি আবার সম্পাদনা করেছি। ফলে ইস্টিশন এবং সামহোয়্যার ইন ব্লগের লেখাই আমার চূড়ান্ত সম্পাদিত লেখা। এই দুটি ব্লগের বাইরে অন্যসব লেখা আমি প্রত্যাহার করছি। মিশু মিলন ঢাকা। ৯ এপ্রিল, ২০১৯।

মিশু মিলন › বিস্তারিত পোস্টঃ

জন্মান্তর (উপন্যাস: পর্ব-চার)

১৩ ই জুলাই, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:৫৯

দুই


আজ ক্লাস না থাকায় আলসেমি পেয়ে বসে আর ঘুম থেকে উঠতে বেশ দেরি হয়, মশারিটা খুলে বিছানা গুছিয়ে প্রাতঃকৃত্য সারতে বাথরুমে যাই। আমার বাথরুমটা অ্যাটাচড হওয়ায় বেশ সুবিধা হয়েছে, ঘনঘন সবার সামনে পড়তে হয় না, বাথরুম থেকে বের হতেই বাবার রাগী কণ্ঠস্বর কানে আসে। রাগটা কী আমার ওপর? আমার এই হয়েছে এক সমস্যা, আজকাল বাসায় কেউ একটু রেগে জোরে কথা বললে প্রথমেই আমার মনে হয় যে আমাকে নিয়ে কিছু বলছে! আমি বন্ধ দরজার কাছে এগিয়ে কান পাতি, না, কথাগুলো আমার উদ্দেশে বলা নয়, আওয়ামী লীগ সরকার আর অসাধু ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে। কথাবার্তা শুনে বুঝতে পারি যে বাবা বাজারে গিয়েছিলেন আর দ্রব্যমূল্যের লাগামছাড়া দাম দেখে চটে গেছেন সরকার এবং ব্যবসায়ীদের ওপর। এটা নতুন কিছু নয়, পুরনো চিত্র; প্রত্যেক বছর রোজা এলেই ব্যবসায়ীরা চাহিদার তুলনায় যোগানের স্বল্পতার কথা বলে পণ্যদ্রব্যের দাম বাড়িয়ে দেয়। সরকারের মন্ত্রীরা সিংহের মতো হুঙ্কার ছেড়ে বলেন, ‘পণ্যদ্রব্যের কোনো ঘাটতি নেই, দাম বাড়ালে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এই কথাটা এখন কৌতুকের পর্যায়ে চলে গেছে, বছর বছর সংবাদ সম্মেলনে বাণিজ্যমন্ত্রী এই একই রেকর্ড বাজান, কিন্তু যথারীতি বাজার থাকে সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে!

‘গেল সপ্তায় ত্রিশটাকা কেজি শসা কিনলাম, সেই একই শসা আজ কিনতে হলো একশো কুড়ি টাকা দিয়ে! চিনি ছিল আটচল্লিশ টাকা কেজি, আজকে আনলাম পঁয়ষট্টি টাকায়। বেগুন তো আগুন! এমন কোনো একটা জিনিস নাই বাজারে যার দাম বাড়ে নাই। হারাম রোজগার করতে এদের বিবেকে একটুও বাধে না, ইবলিশের দল সব!’

আমি কিছুক্ষণ বন্ধ দরজার কাছে দাঁড়িয়ে বাবার সংক্ষুব্ধ কথাগুলো শুনি, তারপর হাতের গামছাখানা বারান্দার তারে রেখে দরজা খুলে বের হই। বাবা বাজার থেকে ফিরে ডাইনিংয়ের চেয়ারে বসে আছেন আর মা রান্নাঘরের প্রবেশ পথে বসে ব্যাগের ভেতর থেকে একে একে বের করছেন অতিমূল্যে কেনা দ্রব্যসামগ্রী। বাবার গায়ে একটা সাদা-কালো চেক শার্ট, পরনে প্যান্ট; মাথায় বোধহয় টুপি ছিল, টুপিটা এখন টেবিলের ওপর। আমি বাবার মুখাবয়ব ভালমতো লক্ষ্য করি, কপাল আর দাড়ির ওপরের অনাবৃত চোয়াল ঘামে স্যাঁতসেতে এবং লাল হয়ে আছে। সত্যিকারের রাগ হলে তার মুখ এমন রক্তাভ হয়। আমি ড্রয়িংরুমে গিয়ে সোফায় বসে পত্রিকা হাতে নিয়ে প্রথম পাতায় চোখ রাখি, আজকের সংবাদ শিরোনাম-ঊর্ধ্বমুখী দ্রব্যমূল্য। খবরটা পড়তে শুরু করি, পাতা উল্টে দ্বিতীয় পাতার বাকি অংশও পড়ি। অনেক বড় প্রতিবেদন। কাঁচামরিচ থেকে শুরু করে গরুর মাংস, এহেন জিনিস নেই যার দাম বাড়েনি। সরকার গরুর মাংসের দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে, তারপরও নির্ধারিত দামের চেয়েও চল্লিশ-পঞ্চাশ টাকা বেশি দিয়ে কিনতে হচ্ছে ক্রেতাকে। সরকার কর্তৃক দাম নির্ধারিত পণ্যেরই যখন এই অবস্থা, তখন অন্যান্য পণ্যের দাম যে আরো লাগামছাড়া হবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। ধর্মীয় উৎসবকে কেন্দ্র করে এমন অনৈতিক বাণিজ্য পৃথিবীর আর কোনো দেশে হয় কি না আমি জানি না। অবশ্য সারাবছরই অসাধু ব্যবসায়ীরা তাদের ইচ্ছে মতো পণ্যের দাম বাড়ায়-কমায়। আমি সেই বাল্যকাল থেকেই দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি সম্পর্কে মানুষের অভিযোগ শুনে আসছি। বরাবরই বাজারের ওপর সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। চাহিদার চেয়ে অধিক পণ্য মজুদ থাকা সত্ত্বেও কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে পণ্যের দাম বাড়ানো হয়, কিন্তু সরকারের কর্তাব্যক্তিরা নীরব; কেননা এই রমজানকে কেন্দ্র করে মজুতদার-ব্যবসায়ীরা যে বাড়তি মুনাফা অর্জন করে তার একটা অংশ যায় সরকারের ধার্মিক কর্তাব্যক্তিদের পকেটে। এই যে অসাধু ব্যবসায়ী এবং সরকারের কর্তাব্যক্তি, উভয় শ্রেণির অধিকাংশের কপালেই কিন্তু নামাজ পড়ার সহি দাগ বিদ্যমান!

আমি ড্রয়িংরুমে এসে বসার পর বাবা আর কিছু বলেন না। না বলার কারণ, আমি যদি বলি দেখ ধর্মকে পুঁজি করে ধার্মিকেরাই এই ব্যবসা করছে, কোনো নাস্তিক কিংবা ইহুদি-খ্রিষ্টান পণ্যদ্রব্যের দাম বাড়ায়নি; তাই বাবা এখন চুপ। তবে বাবার এই সংক্ষুব্ধ মুখাবয়ব আমার বেশ ভাল লাগে।

আমি খাওয়ার জন্য ডাইনিংয়ে গিয়ে চেয়ারে বসতেই বাবা উঠে গিয়ে ড্রয়িংরুমের সোফায় বসেন। রোজার মাসে আমার জন্য পাউরুটি আর জেলি রেখে দেয় টেবিলে, আমি নিজের মতো নিয়ে খাই। দুপুরের ভাতটা নিজেই ফুটিয়ে, ফ্রিজের তরকারি গরম করে খাই। আর ক্যাম্পাসে গেলে বা অন্য কোনো কাজে বাইরে থাকলে খেয়ে বাসায় ফিরি। যদিও রোজার মাসে বেশিরভাগ হোটেলেই দিনের বেলা খাবার পাওয়া যায় না।

চার বছর পূর্বে রোজার আগের রাতে আমি যখন মাকে জানাই যে আমাকে সেহেরি খেতে ডেকো না, আমি রোজা রাখবো না। তারপর কারণ জিজ্ঞাসা করায় যখন আমি বলি যে আমি তোমাদের কাল্পনিক আল্লাহ আর তার রীতিনীতিতে বিশ্বাস করি না; তখন বাড়িটা কারবালা হতে বাকি ছিল আর কী! বাবা-মা, বড় আপা আর দাদী শুরুতে আমার কথা শুনে আঁৎকে উঠেছিলেন এই ভেবে যে মুসলমানের ছেলের মুখে এসব কী কথা! তারপর তারা আমাকে নানাভাবে বোঝানোর চেষ্টা করেও যখন ব্যর্থ হন তখন চিৎকার করে ধমকি-ধামকি দিতে শুরু করেন। আমিও আমার জায়গায় অনড়। সবার উচ্চকণ্ঠ শুনে দোতলা থেকে সপরিবারে চাচা, চারতলা থেকে সপরিবারে ফুফু উঠে আসেন। চাচা তো শুনেই আগুন! তাদের মিষ্টি কথা, টক-ঝাল কথা, অগ্নিবাক্যেও যখন আমি টলি না তখন এক পর্যায়ে চাচা ক্ষেপে গিয়ে আমাকে কিল-চড় মারতে থাকেন, আমার ফুফা মার ঠেকানোর জন্য এগোতে গিয়েও কেন যেন দাঁড়িয়ে পড়েন, হয়তো ফুফুর চোখের ইশারায়। আমার ফুফুর চোখের আগুনকে ফুফা ভীষণ ভয় পান! মা গিয়ে ড্রয়িংরুমের মেঝেতে পা ছড়িয়ে এমন ভাবে কাঁদতে থাকেন যেন তার পুত্রবিয়োগ ঘটেছে! যখন বুঝলাম কেউই আমাকে রক্ষা করবে না, তখন নিজেই নিজেকে রক্ষার সিদ্ধান্ত নিয়ে তড়িৎ বেগে চড় মারতে উদ্যত চাচার হাত ধরে ফেলি আমি, ‘আপনার আল্লাহ বলেছে সীমালঙ্ঘনকারীকে সে পছন্দ করে না, আমিও সীমা লঙ্ঘনকারীকে পছন্দ করি না। ধর্ম পালন করা বা না করা মানুষের ব্যক্তিগত ব্যাপার, আমার এই একান্ত ব্যক্তিগত জায়গায় নাক গলাবেন না। আর সবাইকে আপনার অনুগত ভেবে গায়ে হাত তোলা কিংবা ধমকানো আপনার স্বভাব, নিজের সম্মান বজায় রাখতে চাইলে আমার ক্ষেত্রে এই স্বভাবটা আজ থেকে ত্যাগ করবেন।’

তাৎক্ষণিক এই শক্তি আমি কীভাবে সঞ্চয় করেছিলাম জানি না, জীবনে বাবা-চাচার মুখের ওপর কথা বলিনি, সেই প্রথম। বিশ বছরের টগবগে রক্তের উত্তাপে কথাগুলো বলে ফেলে আমি নিজেই অবাক হয়েছিলাম এই ভেবে যে এই কণ্ঠ কী আমার! আমিও এভাবে প্রতিবাদ করতে পারি! আর অন্যরা তো রীতিমতো স্তম্ভিত-স্তব্ধ, তারাও বিশ্বাস করতে পারছিলো না যে আমি চাচার সামনে এই ভাষায় কথা বলতে পারি! সেই স্তব্ধতা ছিল কয়েক মুহূর্তের। তারপরই আমার দাদি তেড়ে উঠেছিলেন, ‘কী কইলি তুই! কী করতে চাস তুই, মারবি আমার পোলারে? মার, মার, মার না দেহি তোর কতো ক্ষ্যামতা! ঘাড় ধইরা রাস্তায় বাইর কইরা দিমু।’

আমার বিশ বছরের গরম রক্ত বাক্য হয়ে ছিটকে বেরিয়েছিল, ‘তুমি তোমার বাপের বাড়ি থেইকা বাড়ি নিয়া আইছিলা মনে অয়! এইটা আমার দাদার বাড়ি, বাড়ির গরম আমারে দ্যাহায়ো না।’

এরপর দাদি কেঁদে-কেটে কী না কী বলতে শুরু করেন আর আমার বাবা আমাকে শাসন করা কর্তব্যজ্ঞান মনে করে আমাকে বেধড়ক পেটান। এক পর্যায়ে আমার ফুফা ফুফুর গরম চক্ষু উপেক্ষা করে বাবার হাত থেকে আমাকে রক্ষা করেন।

অমন ধুন্ধুমার কাণ্ডের পরও ভোরবেলায় বাবা আমাকে সেহেরি খেতে ডাকেন, কিন্তু আমি উঠিনি। আমাকে অনেকবার ডাকার পরও যখন আমি ভেতর থেকে সারা দিই না, বাবা তখন দড়াম দড়াম করে কয়েকবার লাথি মারেন আমার রুমের দরজায়।

তারপর সকালবেলা ঘুম থেকে উঠার পর রোজকার মতো ড্রয়িংরুমে বসে খবরের কাগজ পড়তে পড়তে ভাবছিলাম মা নিশ্চয় আমাকে কিছু খেতে দেবেন। খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে খবরের কাগজ পড়লাম দীর্ঘক্ষণ, তবু মা আমাকে খেতে বলেননি। কী একটা কাজে মা যখন ডাইনিংয়ে এলেন তখন ইচ্ছে করেই মাকে দেখিয়ে ফিল্টার থেকে এক গ্লাস জল নিয়ে ঢকঢক করে পান করলাম। আড়চোখে দেখলাম যে মা একবার আমার দিকে তাকিয়ে নিজের ঘরে চলে গেলেন। বড় আপাও আমার জল পান করা দেখেছিল। কিন্তু কেউ-ই আমাকে খেতে দেয়নি। এরপর আমি নিজের ঘরে ফিরে এসে বসে রইলাম। আমার ভেতরে আশা ছিল যে আমাকে জলপান করতে দেখার পর মা নিশ্চয় কিছু খেতে দেবেন, নিশ্চয় আমার জন্য ভাত রান্না করবেন। কিন্তু আমার ভাবনা মিথ্যে প্রমাণ করে আমাকে কিছু খেতে দিলেন না মা, দুপুরে আমার জন্য ভাতও রান্না করলেন না। প্রত্যেক বছর রোজার সময় যেমন থাকে বাড়ির পরিবেশ, তেমনই রইলো।

দুপুর গড়িয়ে বিকেল হলো, আমি পেটে ক্ষিধে নিয়ে শুয়ে-বসে, বই পড়ে-গান শুনে সময় পার করলাম। বাবা সেদিন অফিসে না গিয়ে বাড়িতেই ছিলেন। দুপুরের আগে বাবা ফাহাদকে সঙ্গে নিয়ে চকবাজারে গেলেন ইফতার কিনতে। প্রতিবছর রোজার প্রথম দিনটায় চকবাজার থেকে বাহারি ইফতার কিনে আনা হয়, এটা আমাদের পরিবারের রেওয়াজ। ক্লাস ফোর-ফাইভে উঠার পর থেকেই ইফতারি কিনতে বাবার সঙ্গে আমিও যেতাম। বাপ-বেটায় ঘুরে ঘুরে একেকবার একেক রকম ইফতারি কিনতাম। তবে ‘বড় বাপের পোলায় খায়’ কিনতাম প্রত্যেক বছরই।

‘বড় বাপের পোলায় খায়

ঠোঙায় ভইরা লইয়া যায়

ধনী-গরিব সবাই খায়

মজা পাইয়া লইয়া যায়।’

এই ছড়া বলতে বলতে বিক্রেতারা ‘বড় বাপের পোলায় খায়’ বিক্রি করতেন। বাবা আমাকে বলতেন, ‘তোর কী কী পছন্দ?’ ছেলেবেলায় বিভিন্ন রকমের অতো খাবার দেখে আমার তো ধাঁধা লেগে যেতো চোখে। কোনটা রেখে কোনটার কথা বলবো! কতো যে বাহারি নাম-‘বড় বাপের পোলায় খায়, শাহী পরোটা, শাহী জিলাপি, খাসির রান, আস্ত মুরগি ফ্রাই, কোয়েল পাখি, চিকেন শাশলিক, সুতি কাবাব, রেশমি কাবাব, টিক্কা কাবাব, কিমা, হালিম, দইবড়া, হালুয়া, জর্দা, লাবাং, বোরহানি, ফালুদা, আরো যে কতো কী! খাসির ইয়া বড় রান দেখে প্রথমবার বাবাকে প্রশ্ন করেছিলাম, ‘আব্বা, এতোবড় খাসির পা কিসে রান্না করে?’ বাবাকে তখন আমি আব্বা বলে ডাকতাম।

বাবা বলতেন, ‘বড় হাঁড়িতে রান্না করে।’

আমি মনে মনে হাঁড়ির একটা মাপ কল্পনা করতাম, ছোট মাথায় বড় হাঁড়ির মোটামুটি একটা আকৃতি ধারণ করার পর এতো এতো খাবারে চোখ বুলাতাম আর ভাবতাম, আচ্ছা এতো খাবার মানুষ খেতে পারে? তারপর পছন্দ মতো খাবার কিনে বাপ-বেটা সিএনজি নিয়ে চলে আসতাম বাড়িতে।

কিন্তু সেবার অনেক বছর বাদে আমাদের অভ্যস্ততায় পরিবর্তন ঘটে, আমি স্বেচ্ছা ঘরবন্দী হয়ে থাকি আর ফাহাদ বাবার সঙ্গে ইফতার কিনতে চকবাজার যায়। এদিকে ক্ষিধেয় আমার কাহিল দশা! ধুন্ধুমার কাণ্ডের পর আগের রাতে না খেয়েই ঘুমিয়েছি। পকেট হাতরে দেখি তেইশ টাকা আছে। আমার কাছে কখনোই বেশি টাকা থাকে না। টাকার প্রয়োজন হলে চাইলেই পাই, তাই টাকা জমিয়ে রাখার প্রয়োজন পড়ে না। টাকা জমানোর স্বভাবও আমার নয়। এই তেইশ টাকা দিয়ে আমি কী খাব? এ দিয়ে তো চা-বিস্কুটের বেশি কিছু হবে না; অথচ পেটে ভাতের ক্ষিধে!

রোদ একটু মরে এলে বাইরে যাবার জন্য জামা-প্যান্ট পরে দরজা খুলে ডাইনিংয়ে যেতেই রান্নাঘরে কর্মরত মা বলেন, ‘যাস কই?’

‘কাজ আছে।’

‘অহন বাইরে যাবি না। তোর আব্বা চকে গেছে ইফতার কিনতে, সবার লগে বইসা ইফতার করবি।’

‘আমি রোজা না, জল খাইছি।’

‘তাও সবার লগে ইফতার করবি।’

দরজা খুলতে খুলতে বলি, ‘দেখি, কাজ হইলে ফিরবো।’

‘খুব বাড়াবাড়ি করতাছিস কিন্তু তুই, অহন বাইরে যাবি না।’

কে শোনে কার কথা! আর কথা না বাড়িয়ে আমি সিঁড়ি দিয়ে নেমে যাই। ক্ষুধার জ্বালায় তখন মেজাজ বিগড়ে গেছে, সারাদিন না খাইয়ে রেখে সন্ধেবেলা দামড়া খাসির ঠ্যাং খাওয়ার আদর! রাস্তায় বেরিয়ে হাঁটি আর ভাবি, কী করবো এখন? তেইশ টাকায় আমার এখনকার ক্ষুধা মিটানো অসম্ভব। ধুর শালা, খাবই না! বাড়ির মানুষের প্রতি রাগ আরো জমাট হয়, আর মায়ের প্রতি তীব্র অভিমান। একদিনের মধ্যেই মা এমন বদলে গেলেন, একদিনের মধ্যেই মাকে কেমন দূরের আর অচেনা লাগে; ধর্মের এতোই শক্তি যে মায়ের কাছ থেকে তার সন্তানকে দূরে ঠেলে দেয়! ধর্মের প্রতি মোহগ্রস্ত থেকে মা তার সন্তানকে এভাবে না খাইয়ে কষ্ট দিতে পারেন! আমি খেতে চাইলে মা প্রায় সঙ্গে সঙ্গে টেবিলে খাবার বেড়ে দেন; আমি যদি মাকে জানাই যে মা আমার অমুক খাবারটা খেতে ইচ্ছে করছে, তাহলে মা সেদিনই আমাকে সেই খাবার বানিয়ে খাওয়ান; সন্ধেবেলা যদি বলি মা বাইরে নাস্তা খাব, মা বিনাবাক্যে আমার হাতে টাকা ধরিয়ে দেন। আমার সেই মা আজ হঠাৎ এমন বদলে গেলেন? আমার চোখ ফেটে জল আসতে চায়। না খেয়ে থাকার জন্য না, আমি আরো দু-দিন না খেয়ে থাকতেও রাজি; আমার কষ্ট হয় মায়ের জন্য, মা যে আমার কাছ থেকে দূরে সরে গেলেন! আমি বাবাকে ভয় করি, বাবা আমার বন্ধু নয়, বাবা কেবলই একজন রাশভারি-বদমেজাজি বাবা। তাই বাবা আমাকে দূরে সরিয়ে রাখলেও খুব একটা কষ্ট পাব না। কিন্তু মা তো আমার বন্ধু; আমার যতো আবদার মায়ের কাছে, আমার যতো দুষ্টুমি মায়ের সাথে; সেই মাকে তার ধর্ম আমার কাছ থেকে দূরে সরিয়ে নিলো! ধর্মের এতো শক্তি যে মা-ছেলের সম্পর্কও তার কাছে পরাজিত হয়! আমি কি আর কখনোই আমার মাকে আগের মতো করে পাব, নাকি কাল্পনিক আল্লাহ এভাবেই দাঁড়িয়ে থাকবে আমার আর মায়ের মাঝখানে?

এইসব কথা ভাবতে ভাবতে মিরপুর-৬ নম্বর বাজার পেরিয়ে প্রশিকা মোড় ছাড়িয়ে যেন অবচেতনে পৌঁছে যাই স্টেডিয়ামের কাছে। এরপর রাস্তা পেরিয়ে ন্যাশনাল বাংলা স্কুলের মাঠে ঢুকে দক্ষিণদিকের গাছের ছায়ায় গিয়ে বসি, তখন ন্যাশনাল বাংলা স্কুলের মাঠের গেট না থাকায় মানুষের প্রবেশ অবাধ ছিল। পা ছড়িয়ে শরীরের ভার পিছনদিকে দু-হাতে রেখে তাকিয়ে থাকি আকাশের দিকে, আকাশে সাদা সাদা মেঘ; কিন্তু আমার দৃষ্টি জুড়ে কেবল সাদাভাত, শুকনো মরিচ দিয়ে মাখানো আলুভর্তা, পটলভাজা আর ডাল! সেই প্রথম অনুভব করি যে আমি ভীষণ নিঃসঙ্গ আর অসহায়!

একবার মনে হয় বন্ধু আদিলের বাসায় যাব, ওর বাসা মিরপুর-২ নম্বরেই, হেঁটে যেতে পাঁচমিনিট সময় লাগবে। পরমুহূর্তেই মনে হয়- না, যাব না। রোজার প্রথম দিনেই অযাচিত অতিথি হয়ে ওদেরকে বিরক্ত করবো না। তারপর মনে হয় পকেটে তেইশটাকা আছে, হাঁটতে হাঁটতে টেকনিক্যাল যাই, তারপর ওখান থেকে বাসে চেপে আমার বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। আমার বন্ধু আবির আর জাহিদ হলে থাকে, আরো অনেক সহপাঠী-ই থাকে। কিন্তু বন্ধু বলতে যা বোঝায় তারা তা নয়, আমার সত্যিকারের বন্ধু আবির আর জাহিদ। অবশ্য জাহিদ তখন হলে নেই, বাড়িতে; আবির আছে।

জাহিদ সংশয়বাদী আর আবির নাস্তিক। দু-জনেরই আছে জীবন, পৃথিবী আর মহাবিশ্ব সম্পর্কে জানার অদম্য কৌতুহল, আছে সংবেদনশীল মন। আমাদের তিনজনের বোঝাপড়া চমৎকার। জাহিদ সংশয়বাদী হলেও আমাদের একসাখে পথ চলতে অসুবিধা হয় না, কেননা ওর আছে যুক্তিকে গ্রহণ করার মানসিকতা।

এর মাঝে ছোট আপুকে ফোন করে জানিয়ে দিই যে, ‘আমি ক্যাম্পাসে যাচ্ছি, আজ আর ফিরবো না। আর আমার ফোনে চার্জ নেই, একটু পরই সেলফোন বন্ধ হয়ে যাবে।’

ফোনে চার্য না থাকার কথাটা ডাঁহা মিথ্যে, মিথ্যে কথা আমি বলি না। কিন্তু এই মিথ্যেটা বলতে পেরে আমার খারাপ লাগে না। কেননা ফোন খোলা রাখলে বাসা থেকে বাবা-মা কল করবে, বাসায় ফিরতে বলবে। কিন্তু তখন আর আমার বাসায় ফেরার মানসিকতা নেই, তাই আপুকে কল করার পরই ফোন বন্ধ করে রাখি।

হাঁটতে হাঁটতে টেকনিক্যাল পৌঁছাই, ওখান থেকে বাসে উঠে সন্ধ্যার মুখে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে পা রাখতেই আযান শুরু হয়। ক্যাম্পাসের রাস্তা ফাঁকা, ইফতারি সামনে নিয়ে মাঠে গোল হয়ে বা মুখোমুখি বসে যারা আযানের অপেক্ষা করছিল খেতে শুরু করে। আমি হাঁটতে হাঁটতে দু-একবার রোজাদারদের দিকে তাকাই, আমাকেও দ্যাখে কেউ কেউ। সবাই ইফতার করছে, কেবল আমিই একা হেঁটে চলেছি রাস্তা দিয়ে। যারা আমার দিকে তাকাচ্ছে কী ভাবছে তারা? নিশ্চয় ভাবছে আমি একটা হিন্দু অথবা খ্রিষ্টান, নাকি একথাও ভাবছে কেউ যে আমি নাস্তিক? ভাবলে ভাবুক, তাতে আমার কিচ্ছু আসে যায় না। আমি গটগট করে হাঁটা শুরু করি আবিরের হলের দিকে।

আবিরকে রুমেই পেয়ে যাই। আমাকে দেখেই ও বলে, ‘কিরে তোর মুখ এমন শুকনো লাগছে কেন? খাসনি কিছু?’

আবির জানে একজন নাস্তিককে সে রোজা রেখেছে কিনা সরারারি তা জিজ্ঞাসা করা অভদ্রতা এবং তাকে অসম্মান করা, তাই ও প্রশ্নটা ঘুরিয়ে করে। ক্ষুধা তাহলে আমার মুখেও ছড়িয়েছে! বলি, ‘বাইরে চল, বলছি।’

আমরা বাইরে এসে পুকুরের পাড়ে বসি। কিছু যে একটা হয়েছে তা আঁচ করতে পেরেছে আবির। বলে, ‘কী হয়েছে তোর বলতো?’

আগের রাত থেকে বাসা থেকে বেরোবার আগ পর্যন্ত যা যা ঘটেছিল সব ওকে বলি।

‘আমাদের বাড়িতেও….।’ ও কিছু বলতে গিয়ে আবার চুপ হয়ে যায়।

‘তোদের বাড়িতেও কী?’

‘না কিছু না।’ ও চেপে যায়।

‘না লুকিয়ে কী বলতে চাইছিলি বল?’

‘পরে বলবো। এখন চল, খাবি কিছু।’

‘না আগে বল।’

আমার জোরাজুরিতে বলতেই হয় ওকে, ‘আমাদের বাড়িতেও নানারকম পূজাপার্বণ হয়, মা তো সব পূজায়ই উপবাস করেন, অন্যরাও উপবাস করে কোনো কোনো পূজায়। মা উপবাস থেকেও আমাদের জন্য রান্না করেন, সবাই উপবাস থাকলেও আমার একার জন্য রান্না করেন। এতে মা’র পূজা-পার্বণে তো কোনো অসুবিধা হয় না। যদিও হিন্দুদের মধ্যেও কেউ কেউ আছে মাছ-মাংস খায় না, কোনো বাড়িতে মাছ-মাংস রান্না করতে দেখলে কিংবা ঘ্রাণ নাকে যাওয়ামাত্র তারা নাকে-মুখে কাপড় চেপে দূরে সরে যায়, নাক-মুখ সিঁটকে কেউ কেউ বলেও ফেলে- “নাড়ে বাড়ির মতো গোন্ধ”! কিন্তু ছোটবেলায় আমি আমার দিদাকে মানে আমার মায়ের মাকে দেখেছি, তিনি সাধু টাইপের মানুষ, মাছ-মাংস খেতেন না, কিন্তু আমাদের বাড়িতে বেড়াতে এলে নিজে মাছ-মাংস রান্না করে সবাইকে খাওয়াতেন। সংযমের কথা যদি ওঠে তবে আমার মা কিংবা দিদার মাছ-মাংস রান্না করে দেওয়াটাই সংযম; যে নাকে কাপড় দিয়ে বলে “নাড়ে বাড়ির মতো গোন্ধ’ কিংবা রোজার মাসে আমাদের দেশে যে বাড়াবাড়িটা হয়, সেটা সংযম নয়। লোক দেখানো সংযম কেবল বিরক্তিকর নয়, কপটতাও।’

আবিরের মা উপবাস থেকেও ওকে রান্না করে দেন শুনে আমি আর নিজেকে সামলাতে পারি না, আমার চোখ স্যাঁতসেঁতে হয়ে ওঠে। বিশ বছর বয়সে রাগ-অভিমান-আবেগ সবই বেশি থাকে। আবির আমার কাঁধে হাত রেখে বলে, ‘প্লিজ, মন খারাপ করিস না। এজন্যই আমি কথাটা এখন তোকে বলতে চাইনি। আমার মা আমাকে রান্না করে দেন, কিন্তু ধর্মে বিশ্বাস করি না বলে আমার বাবা কিন্তু ঠিকই মাকে বলেন- “তোমার ছেলে গোল্লায় গেছে!” আমাদের আরো অনেক কিছু সহ্য করতে হবে বন্ধু। রাজিব, অভিজিৎ, অনন্ত, নিলয়, বাবুর মতো জীবনও দিতে হতে পারে।’

আমি নিজেকে সংযত করি, সংযমের ব্যাপারটা আমার মাথায় ঘুরপাক খেতে থাকে। বলি, ‘তুই সংযমের কথা বললি না? বালের সংযম! মুসলমানরা সংযম সংযম করে মুখে ফেনা তোলে, অথচ এরাই সবচেয়ে বেশি অসংযমী। রোজার মাসে বেশিরভাগ হোটেলে রান্না বন্ধ, রাস্তার টঙ দোকানের সামনে পর্দা ঝোলে। কেন? রোজাদার ব্যক্তিকে যাতে অন্যের খাওয়া দেখতে না হয়। নারীদের বোরকা পরে রাস্তায় বের হতে হবে। কেন? হাটহাজারির শফি হুজুরের মতে মেয়েরা হচ্ছে তেঁতুলের মতো; তেঁতুল দেখলে মানুষের জিভে যেমন জল আসে তেমনি নারী দেখলেও পুরুষের অন্তরে লালা ঝরে! তাই মেয়েদের বোরকা পরে রাস্তায় বের হতে হবে। তাহলে সংযমটা কোথায়? অন্যের খাওয়া দেখে যদি কারো লোভ লাগে, রাস্তায় বেপর্দা নারী দেখলেই যদি কারো অন্তরে লালা ঝরে আর ঈমানদণ্ড দাঁড়িয়ে যায়, তবে সে মানুষ নয়, হিংস্র পশুর চেয়েও অধম! হরিণ দেখলেই বাঘের লালা ঝরে, হামলে পড়ে হরিণের ওপর; ছাগী দেখলেই পাঠার লিঙ্গ দাঁড়িয়ে যায়, লিঙ্গের মাথা দিয়ে ঝোল পড়ে; ওরা হিংস্র পশু, সংযম বোঝে না। মানুষেরও যদি খাবার আর নারী দেখলে একই অবস্থা হয়, তবে সে কীসের মানুষ! অথচ এরাই আবার বলে যে মানুষ হলো আশরাফুল মাখলুকাত; আরে, সৃষ্টির সেরা জীবের খাদ্য আর যৌনতার বিষয়ে সংযম থাকবে না! এদের মুখে সংযমের বুলি কিন্তু বাস্তবে প্যাট আর চ্যাটমুখী! কারো অন্তর যদি সংযমী না হয়, তাহলে কি আর পর্দায় সংযম হয়? যার অন্তর অসংযমী, খাবারের দোকানের সামনে পর্দা দেওয়া থাকলেও ওই পর্দার দিকে তাকালেই তার চোখের সামনে খাবারের ছবি ভেসে উঠবে; নারী বোরকা পরে থাকলেও তার নগ্ন ঊরু, পেট, বুক কল্পনা করতে অসুবিধা হবে না। মুখে বালের সংযম চোদায় সব। সারাদিন না খেয়ে থেকে রাক্ষুসে খাওয়া খাবে সন্ধেবেলা! এই বড় বড় খাসির ঠ্যাং, আস্ত মুরগি, কতো আইটেম আর কী তার বাহারি নাম! এর নাম সংযম? আমাদের বাসায় এই একমাসে খাবার বাবদ যে টাকা ব্যয় হয়, ঈদের পরের দুই মাসেও সেই টাকা ব্যয় হয় না। আমার বালের সংযম!’

‘তুই যে কথাগুলো আমাকে বললি, এই কথাগুলোই যদি আমি আমার মুসলমান বন্ধুদের কাছে বলি কিংবা ফেসবুকে লিখি, তাহলে আমার ওপর সবাই হামলে পড়বে। বলবে, “তুমি শালা মালাউন, ইসলাম ধর্মের কী বোঝো, সারাক্ষণ মুসলমানদের ধর্মের পিছনে লেগে থাকো? নাস্তিকতার ভেক ধরছো, কিন্তু নিজের ধর্মের প্রতি ঠিকই দরদ আছে।” অথচ আমি কিন্তু কোনো ধর্মকেই ছেড়ে কথা বলি না।’

এরপর আবির আমার হাত ধরে টেনে তোলে, ‘চল, আগে কিছু খাবি। কথা বলার জন্য সারারাত পড়ে আছে।’

আমি পরদিনও বাসায় ফিরি না, সেলফোনও বন্ধ থাকে। তার পরদিন সকালে আমি ঘুমিয়ে আছি, তখন নয়টা-দশটা বাজে। আবির আগেই উঠেছে, আমাকে জাগিয়ে বলে, ‘ওঠ, হাত-মুখ ধুয়ে আয়।’

আমি উঠে বাথরুমে যাই, ফ্রেশ হয়ে এলে ও বলে, ‘জামা-প্যান্ট পর, নাস্তা করতে যাব।’

তারপর নিচে নামার সময় বলে, ‘শোন, তোর বাবা আর আপু এসেছেন তোকে নিতে, নিচে দাঁড়িয়ে আছেন। নাস্তা করে ওনাদের সাথে বাসায় যা।’

নাস্তা খেয়ে বাবা আর ছোট আপুর সঙ্গে বাসায় ফিরি। সারা রাস্তায় বাবা আমার সাথে কোনো কথা বলেননি, বাসায় ফিরেও না। রোজা রাখার ব্যাপারে আমাকে আর কেউ জোরাজুরি করেনি, রাগারাগি তো নয়-ই। কেবল দাদি আমাকে শুনিয়ে মাকে বলেছেন, ‘কী আর করবা, সবই নসিব!’

এরপর থেকেই আমার জন্য পা-রুটি এনে রাখে সকালের নাস্তার জন্য। প্রথম প্রথম ছোট আপু কিংবা মা দুপুরে ভাত রান্না করে ফ্রিজের তরকারি গরম করে খেতে দিতো। আমি তাদের বলেছি, ‘তোমাদের ভাত রান্না করে দিতে হবে না, আমি নিজেই রান্না করে নেব।’

তারপর থেকে আমি প্রত্যেক রমজান মাসের দুপুরে বাসায় থাকলে নিজের ভাত নিজেই ফুটিয়ে ফ্রিজের তরকারি গরম করে খাই। তবে তখন থেকেই সম্পর্কের সুতোটা একটু যেন আলগা হয়ে গেছে, আমার দিক থেকে নয়, পরিবারের অন্যদের দিক থেকে। তবে আমি বিশ্বাস করি, বাবা-মা ভেতরে ভেতরে আমাকে আগের মতোই ভালবাসেন, আমার বাসায় ফিরতে দেরি হলে তারা আগের মতোই উদ্বিগ্ন হন। আসলে আমার জন্য সমাজে তাদের মাথা নত হয়েছে, তাই হয়তো তারা কষ্ট পেয়েছেন; এজন্যই সম্পর্কের ওপর অভিমানের একটা বিষাদময় চাদর বিছিয়ে রেখেছেন। গত চার বছর এভাবেই চলছে। প্রত্যেক রমজানের প্রথম দিন সেহেরির সময় বাবা আমাকে জাগিয়ে সেহেরি খাওয়া এবং রোজা রাখার অনুরোধ করেন আর যথারীতি আমি বিনয়ের সঙ্গে তা প্রত্যাখান করি।



(চলবে…..)


মন্তব্য ৮ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ১৩ ই জুলাই, ২০২০ রাত ৯:১০

মোঃ মাইদুল সরকার বলেছেন:
ব্যতিক্রমী ঘটনা আছে কিছুটা পড়তে ভাললাগলো।

১৩ ই জুলাই, ২০২০ রাত ৯:৩৭

মিশু মিলন বলেছেন: ধন্যবাদ।

২| ১৩ ই জুলাই, ২০২০ রাত ৯:১৫

রানা আমান বলেছেন: পর্ব চার দিয়ে পড়া শুরু করেছিলাম , সেখান থেকে পেছনে গিয়ে আগের তিন পর্বও পড়লাম । আপনার লেখায় জোর আছে । লিখুন । পাঠক হিসেবে আমাকে পাবেন ।

১৩ ই জুলাই, ২০২০ রাত ৯:৩৮

মিশু মিলন বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ সাথে থাকার জন্য।

৩| ১৩ ই জুলাই, ২০২০ রাত ১০:২৫

নেওয়াজ আলি বলেছেন: অসাধারণ লেখা । ভালো লাগলো

১৩ ই জুলাই, ২০২০ রাত ১১:২৫

মিশু মিলন বলেছেন: ধন্যবাদ।

৪| ১৪ ই জুলাই, ২০২০ রাত ১:৪৫

রাজীব নুর বলেছেন: আপনি অনেক লিখেন। ভালো লিখেন।

১৪ ই জুলাই, ২০২০ রাত ৩:২২

মিশু মিলন বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.