নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি বর্তমানে ইস্টিশন এবং সামহোয়্যার ইন ব্লগে লিখি। আমার সকল লেখা আমি এই দুটি ব্লগেই সংরক্ষণ করে রাখতে চাই। এই দুটি ব্লগের বাইরে অনলাইন পোর্টাল, লিটল ম্যাগাজিন এবং অন্য দু-একটি ব্লগে কিছু লেখা প্রকাশিত হলেও পরবর্তীতে কিছু কিছু লেখা আমি আবার সম্পাদনা করেছি। ফলে ইস্টিশন এবং সামহোয়্যার ইন ব্লগের লেখাই আমার চূড়ান্ত সম্পাদিত লেখা। এই দুটি ব্লগের বাইরে অন্যসব লেখা আমি প্রত্যাহার করছি। মিশু মিলন ঢাকা। ৯ এপ্রিল, ২০১৯।
আশ্বিনের শেষ ভাগের গাঢ় অন্ধকার গভীর রাত্রি; অজস্র নক্ষত্রের অলংকার আর শুভ্র মেঘের মিহি কাঁচুলি শোভিত অহংকারী আকাশ চন্দনা নদীকে মোহগ্রস্ত করে রেখেছে, মোহগ্রস্ত ক্ষীণকায় লঘুস্রোতা চন্দনার মৌনতা ভেঙে ছন্দময় ছলাৎ ছলাৎ শব্দ তুলছে ফরিদের সুঠাম হাতের বৈঠা। ফরিদ বছর বাইশের যুবক, হালকা-পাতলা গড়ন, মুখে পাতলা দাড়ি, গোঁফ নেই। সে খেয়া নৌকার মাঝি, এখনো বিয়ে-থা করেনি। আগে স্বাভাবিক তাপমাত্রায় বেশিরভাগ সময়ই খালি গায়ে লুঙ্গি পরে নৌকা বাইতো; গ্রীষ্মের গরমের সময় গায়ে একটা জামা কি গেঞ্জি চড়াতো, শীতের দিনে ওই জামা গেঞ্জির ওপর ছাইরঙা একটা ফুলহাতা উলের সোয়েটার আর মাথায় মাফলার। এখন সবসময়ই গায়ে জামা-গেঞ্জি একটা কিছু থাকেই আর মাথায় থাকে নামাজি টুপি। এখন অবশ্য গায়ে পাঞ্জাবি-পরনে পাজামা। তার নৌকায় এখন চারজন আরোহী; এদের মধ্যে নৌকার সামনের গলুয়ের কাছে যে বসে আছে কেবল সে-ই তার পরিচিত, বাকি তিনজনকে সে কোনোদিন দ্যাখেনি। নৌকার সামনের গলুয়ের কাছে বসে আছে করিম শেখ।
নৌকা কূলে ভিড়লে ‘বিসমিল্লাহ্’ বলে নৌকা থেকে প্রায় লাফিয়ে নামলো করিম শেখ। বিসমিল্লাহ’র কোরাস ধ্বনিত হলো আর পর পর নেমে দাঁড়ালো অন্য তিনজন; সব শেষে ফরিদ হাতের বৈঠা নৌকার পাটাতনে রেখে তীরে নেমে নৌকার দড়ি বাঁধলো পুঁতে রাখা একটা বাঁশের খুঁটির সঙ্গে। ফরিদের দড়ি বাঁধা শেষ হলে সবার আগে হাঁটতে শুরু করলো করিম শেখ। তাকে অনুসরণ করলো অন্য তিনজন এবং সবার শেষে ফরিদ; এক লাইনে হাঁটছে সবাই।
নদীর ঢাল বেয়ে পারের রাস্তায় উঠতে যাবে এমন সময় কানে এলো এবড়ো-থেবড়ো মাটির রাস্তায় চলা সাইকেলের ক্যাঁচর-ম্যাচর শব্দ। আর পর মুহূর্তে রাস্তায় ধাবমান চার্জার লাইটের আলোও চোখে পড়লো। করিম শেখের ইশারায় সবাই তাড়াতাড়ি খাড়া পারের ওপরের রাস্তা লাগোয়া আশশ্যাওড়ার একটা ঝোপের আড়ালে গিয়ে বসে পড়লো। ফরিদ মনে মনে বললো, ‘শালার বিটার সাধন মাস্টের, বাজারে তাস পিটেয়ে আসলো!’
সাধন মাস্টার রাস্তার ওপর চলমান বৃত্তাকার আলোয় দৃষ্টি রেখে গুনগুনিয়ে ভজন গাইতে গাইতে তাদেরকে পেরিয়ে গেলেন, তিনি জানতেও পারলেন না যে তার থেকে মাত্র কয়েক হাত দূরে আশশ্যাওড়ার ঝোপের আড়ালে পাঁচজন মানুষ লুকিয়ে আছে।
ঝোপের আড়াল থেকে বেরিয়ে খানিকটা দক্ষিণে এগিয়ে পরিষ্কার ঢালু জায়গা দিয়ে রাস্তায় উঠে এলো সবাই। রাস্তাটা উত্তরদিক দিয়ে এগিয়ে পশ্চিমদিকের গ্রামে উঠেছে। কিন্তু রাস্তা দিয়ে যাওয়া চলবে না, যেতে হবে সোজা মাঠের মধ্য দিয়ে। করিম শেখ রাস্তা থেকে মাঠের হাতাইলে নেমে হাঁটতে শুরু করলো, তাকে অনুসরণ করে এক লাইনে হাঁটতে লাগলো বাকিরা। হাতাইলের দু-পাশে আউশধানের ক্ষেত, ধানের ভারে হাতাইলের দিকে নুয়ে পড়েছে গাছ। আশ্বিনের শেষ ভাগ হওয়ায় রাতেরবেলা একটু একটু শিশির পড়তে শুরু করেছে, সকালে ভিজে থাকে ক্ষেতের ধান, গাছের পাতা, ঘাস-লতা। হাতাইলে নুয়ে থাকা ভেজা ধানগাছের শিশির আলতোভাবে ছড়িয়ে যাচ্ছে সকলের পাঞ্জাবি-পাজামায়। হাতাইলের ঘাসও ভেজা, একবার পা পিছলে গেছে করিম শেখের। তার পায়ে প্লাস্টিকের কালো জুতো। মাঝের তিনজনের পায়ে কেড্স। আর ফরিদের পায়ে স্যান্ডেল, শিশির সবচেয়ে বেশি অসুবিধায় ফেলেছে তাকে। এখন মনে মনে ভাবছে স্যান্ডেল জোড়া নৌকায় রেখে এলেই ভাল হতো। নৈঃশব্দের মধ্যে হঠাৎ একটা ব্যাঙ ট্যাঁট্যাঁ করে উঠলো ধানক্ষেতের ভেতর থেকে, নিশ্চয় সাপের মুখে পড়েছে।
করিম শেখের বয়স বত্রিশ-তেত্রিশ। দৃষ্টি তীক্ষ্ণ তার, বুদ্ধিও প্রখর। সে ফেরিওয়ালা, গ্রামে গ্রামে ঘুরে ঘুরে সিলভারের হাঁড়ি-পাতিল বিক্রি করে আর সস্তায় ভাঙাড়ি সংগ্রহ করে মহাজনের দোকানে দেয়। তার বাড়ি নদীর ওপারে, গতকাল সে এপারে ফেরি করতে এসে সবকিছু ঠিকঠাক মতো দেখে গেছে। শুধু এ গ্রাম নয়, আশ-পাশের দশ-বিশ গ্রামের আদাড়-বাদাড় পর্যন্ত তার হাতের তালুর মতোই চেনা!
ধানক্ষেতের হাতাইল ছেড়ে তারা এখন পৌঁছেছে পাটক্ষেতে, পাট নেই অবশ্য, পাট কাটা হয়েছে আরো কিছুদিন আগেই। পাট কাটার পর ক্ষেত শূন্য পড়ে আছে, কার্তিক মাসে চাষ করে রবিশস্য বুনবে কৃষক। মাটিটা একটু নরম হওয়ায় পায়ের জুতো মাটিতে গেঁথে যাচ্ছে কিছুটা। ফরিদের স্যান্ডেল একবার গেঁথে গিয়ে পা-ছাড়া হয়েছিল, হাত দিয়ে টেনে তুলেছে। অল্প কিছুদূর এগোতেই পায়ের নিচে শক্ত মাটি অনুভব করলো সবাই। ঘুটঘুটে অন্ধকার, তবু লাইট জ্বালানো চলবে না, অন্ধকারেই যেতে হবে। এদিকটায় নয়টার দিকে কারেন্ট এসে আবার চলে গেছে দশটার দিকে, ভোর কিংবা সকালের আগে আর আসার সম্ভাবনাও নেই, এমনকি কাল দুপুর কি সন্ধেয় আসাটাও অসম্ভব কিছু নয়! চব্বিশ ঘন্টায় তিন-চার ঘন্টার বেশি কারেন্ট থাকে না। অনেক দূরে একটা বাড়িতে আলো জ্বলছে, বোধহয় চার্জার জ্বালিয়ে কেউ পায়খানা-প্রসাব করতে বেরিয়েছে, নইলে এতোরাতে আলো জ্বলবে কেন!
নবীন বিশ্বাসের পোড়ো ভিটেয় এসে দাঁড়ালো সবাই। ছোট-বড় নানান জাতের গাছপালা আর লতা-গুল্মের ঝোপঝাড়ে ভরা ভিটে। এর ভেতর দিয়ে পড়েছে একটি পায়ে চলা পথ। ঝিঁঝিপোকা কানে তালা লাগিয়ে দিচ্ছে। এখন সবদিকেই কেবল অন্ধকার, মনে হচ্ছে যেন হঠাৎ আবিষ্কৃত হওয়া কোনো ভিনগ্রহে এসে পড়েছে, যেখানে এখনো আগুন আবিষ্কৃত হয়নি! কোথাও কোনো আলোর লেশ মাত্র নেই, আছে কেবল জঙ্গলে উড়তে থাকা কিছু জোনাকির আলো, কে জানে এই জোনাকির আলো দেখেই আদিম মানুষের মাথায় আলো জ্বালাবার ভাবনা এসেছিল কি-না! ভিটের পশ্চিমে পাকা রাস্তা, পাকা রাস্তার ওপাশেই তাদের গন্তব্য।
‘ভয় পাবেন না, মনে সাহস রাখবেন। মনে রাখবেন, আল্লাহ্ আমাদের সঙ্গে আছেন। যা করবার আল্লাহ্-ই করছেন, আমরা উছিলা মাত্র! আর একটা কথা স্মরণে রাখবেন, মূর্তিবানিয়ে পূজা করা মালাউনদের উৎসব, আর মূর্তি ভেঙে ধ্বংস করা আমাদের উৎসব!’
এতোক্ষণে মুখ খুললো দলটির নেতা বছর ত্রিশের এক তরুণ মোহাম্মদ ইয়াসিন মোল্লা। ইয়াসিন মোল্লা এখান থেকে পাঁচ মাইল দূরের একটি কওমি মাদ্রাসার শিক্ষক; অন্য দু’জন তার ছাত্র মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান এবং মোহাম্মদ ফিরোজ খান, দু’জনের বয়স ঊনিশ-কুড়ি। গাছপালার ঘন অন্ধকারে কেউ কারো মুখ দেখতে পাচ্ছে না, কেবল কথা শুনতে পাচ্ছে।
হঠাৎ করিম শেখের মোবাইলটা বেজে উঠতেই ইয়াসিন মোল্লা নিচু গলায় ধমকে উঠলো তাকে, ‘মোবাইল সাইলেন্ট করেন।’
করিম শেখ তড়িঘরি মোবাইলটা পাজামার পকেট থেকে বের করে স্ক্রীনের দিকে মূহুর্তের জন্য তাকিয়েই রাগে বউয়ের গলা টিপে ধরার মতো মোবাইলটা বন্ধ করে দিলো, বউ ফোন দিয়েছে। মোবাইলটা পুনরায় পকেটে রাখতে রাখতে ভাবলো, মাগি ফোন দিবার আর সময় পালো না! বারবার ক’য়ে আলাম যে আমতলীতে ওয়াজ শুনবার যাতেছি, তুমি ঘুমাও। চুতমারানি মাগি ঘুম বাদ দিয়ে ভাতাররে ফোন করা চুদাতেছে! নাকি ভাতার বিনে ঘুমায়ে যুত পাতেছে না! আগেরডা তো রুগা ছিল, এইডে তাগড়া দেহে বিয়ে করলাম যাতে সুংসারের কাম করবার পারে। মাগির শরীলি খালি খাই খাই ভাব। দিন নাই রাত নাই এতো ঠাপাই তাও মাগির খায়েশ মরে না! ভিজা কাপড় চিপার মতো মাগি আমার শরীলির রস বাইর করে নেয়। শ্রীপুরির ট্যাবলেট খায়ে ঠাপান লাগবি দেকতেছি!
করিম শেখের বউয়ের নাম আয়েশা, দ্বিতীয় পক্ষ; প্রথম পক্ষ সন্তান হবার সময় মারা গেছে সন্তানসহ। দ্বিতীয় বিয়েটা করার কিছুদিন পর থেকেই তার চেহারা আর বেশভূষায় আকস্মিক পরিবর্তন এসেছে। দাড়ি রেখেছে মুখে, তারের মতো শক্ত ঘন দাড়ি। মাথার চুলও একটু বড় রেখেছে। লুঙ্গির ওপর পাঞ্জাবি আর মাথায় টুপি প’রে ফেরি করতে যায় এখন।
হাবিবুর রহমান এর আগে কয়েকবার অপারেশানে গেলেও ফিরোজ খান আজই প্রথম, তাই সে ভেতরে ভেতরে দারুণ উত্তেজিত; তার ঊনিশ বছরের সুঠাম শরীরের অভ্যন্তরে রক্ত যেন টগবগ করে ফুটছে! হৃদয়পটে ভাসছে তার প্রিয় নবীর মুখ। শুধু কি মুখ? নবীজির মাথার চুল থেকে পায়ের নখ পর্যন্ত যেন সে স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে। মনঃশ্চক্ষে দেখতে পাচ্ছে এমনই অন্ধকার রাতে নবীজি তার অনুসারীদের নিয়ে মরুপথে এগিয়ে চলেছেন মক্কার পথে, নবীজিকে নবী হিসেবে অস্বীকার করায় কোরাইশদেরকে চরম শিক্ষা দিতে, পবিত্র কাবাঘরের দখল নিতে! ফিরোজ মনে মনে নিজেকে প্রশ্ন করছে, ‘আচ্ছা আমরা যে একটি পবিত্র কাজ করতে যাচ্ছি, সাত আসমানের ওপরে বসে আল্লাহ্ কী তা দেখতে পাচ্ছেন? আর নবীজি, নবীজি কী দেখতে পাচ্ছেন?’ পরক্ষণেই তার নিজের ভেতর থেকেই তৈরি হলো উত্তর, ‘নিশ্চয় পরম করুণাময় আল্লাহ্পাক এবং প্রিয় নবীজি বেহেশ্তে বসে সব দেখতে পাচ্ছেন। দেখতে পাচ্ছেন ফেরেশতারাও। তাদের অদেখা কিছু নেই, পৃথিবীতে যেখানে যা হচ্ছে সব তারা দেখতে পাচ্ছেন। এই পবিত্র কর্মটি করার জন্য তারা নিশ্চয় দারুণ খুশি হবেন! আর আমাদেরও অনেক সোয়াব অর্জন হবে। ইনশাল্লাহ্!’
কথাগুলো মনে মনে ভাবলেও ‘ইনশাল্লাহ্’ শব্দটি তার মুখ থেকে উচ্চারিত হলো। ভাবনার ঘোরে থাকায় এতোক্ষণ তার প্রিয় ইয়াসিন হুজুর কি বলেছে কিছুই কানে যায়নি। যাবে কী করে? তার দেহটা এই জঙ্গলে থাকলেও মনটা যে ছিল বহু শতাব্দী আগের মক্কার উপকণ্ঠে!
কথার মধ্যে অকারণে ইনশাল্লাহ বলতে দেখে বিরক্ত হয়ে ইয়াসিন মোল্লা বললো, ‘কথাটা শেষ করতে দাও তার পর ইনশাল্লাহ বলো, কথার মাঝখানে ইনশাল্লাহ বলা আহাম্মকি!’ এরপর সবার উদ্দেশে বললো, ‘ঠিক আছে, আমরা এখন সঠিকভাবে করিম শেখকে অনুসরণ করবো, কেউ ঘাবড়াবো না। মনে রেখো আল্লাহ আছেন আমাদের সঙ্গে, ফেরেশতারা আছেন, প্রিয় নবীজির দোয়া আছে আমাদের ওপর। বিসমিল্লাহ বলে আমরা এখন এগিয়ে যাই।’
বিসমিল্লাহ্’র কোরাস ধ্বনিত হলো। পোড়ো ভিটের পায়ে চলা পথ ধরে করিম শেখকে অনুসরণ করে হাঁটতে লাগলো সবাই। পথের শেষ প্রান্তের কাছাকাছি গিয়ে করিম শেখ অন্যদেরকে অপেক্ষা করতে বলে সামনের রাস্তার দু-দিকে সতর্কভাবে দেখে নিয়ে একাই রাস্তায় গিয়ে উঠলো, বোঝার চেষ্টা করলো আশপাশে কোনো মানুষের উপস্থিতি আছে কি-না। ঘুটঘুটে অন্ধকার ছাড়া তার চোখে আর কিছুই পড়লো না। কয়েক মুহূর্ত পর পাখির মতো মৃদু শিস দিতেই বাকি চারজন তার কাছে গিয়ে দাঁড়ালো, আর সে সতর্ক পায়ে রাস্তা ছেড়ে মন্দিরের সামলের চাতালে পা রাখলো, অন্যরাও তাকে অনুসরণ করলো। কোনোরকম বাধা-বিঘ্ন ছাড়াই দূর্গা মন্দিরের খুব কাছে চলে গেল সবাই। মন্দিরের বারান্দায় নজর বুলিয়ে দেখলো, কোনো মানুষ নেই। একে একে সবাই বারান্দায় উঠে পড়লো। দূর্গা মন্দিরটি স্থায়ী, তিনদিকে ইটের গাঁথুনি আর ওপরে টিন থাকলেও সামনে কোনো গ্রিল বা দরজা নেই, একদম উন্মুক্ত। এখন অবশ্য অস্থায়ী একটা তাঁবু টাঙানো। গতকালই মন্দিরের প্রতিমার রঙ করা শেষ হয়েছে, আগামী পরশু থেকে পূজা। পূজা শুরুর আগে পথ চলতি মানুষ যাতে প্রতিমা দর্শন করতে না পারে সেজন্যই সাময়িকভাবে সামনে একটা তাঁবু বেড়ার মতো করে বেঁধে রেখেছে। করিম শেখ হাতের চাপাতি দিয়ে তাঁবুর কয়েক জায়গা চিঁড়ে ফেললে অন্যরা হাত দিয়ে ছিঁড়ে মন্দিরের ভেতরে প্রবেশ করলো, সকলের শেষে প্রবেশ করলো করিম শেখ।
ঘুটঘুটে অন্ধকার, প্রায় কিছুই দেখা যায় না। ইয়াসিন মোল্লা তার মোবাইলের লাইটটি জ্বালিয়ে উঁচিয়ে ধরলো প্রতিমার দিকে।
সকলের আগে অসুরের মাথাটা দুইহাতে ধরে ছিঁড়ে ফেললো করিম শেখ। তারপর মুণ্ডুকাটা মহিষের গায়ের ওপর উঠে একে একে ভাঙতে লাগলো দূর্গার একেটি হাত। মাটির অভ্যন্তরে খড় আর দড়ির শক্ত বন্ধন থাকায় হাতগুলো দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন হলো না, কিন্তু দুমড়ে-মুচড়ে হাতগুলোর মাটি ঝরিয়ে দড়ি-খড় বের করে ফেললো। তারপর পরনের কাপড় ছিঁড়তে লাগলো।
গণেশ ভাঙছে হাবিবুর। চারহাত আর মাথা ভাঙার পর প্রচণ্ড ক্রোধে সে গণেশের স্থুল পেটে একটা লাথি ঝাড়তেই পায়ের নিচের বেদি আর বেচার ইঁদুরসহ পিছনের দেয়ালের ওপর হেলে পড়লো গণেশ। তাতে প্রত্যাশার চেয়ে একটু বেশি শব্দ হতেই চাপাস্বরে ধমক দিলো ইয়াসিন মোল্লা, ‘আস্তে।’
কাপড় টেনে-ছিঁড়ে সরস্বতীকে একেবারে বিবস্ত্র করে ফেলেছে ফরিদ। এরপর হাত ভেঙে মাথা ধর থেকে আলাদা করে ফেলছে। আর সবার অলক্ষ্যে সরস্বতীর মাথার প্রায় অর্ধেক চুল ছিঁড়ে পাজামার পকেটে ভরেছে। সবার টার্গেট প্রতিমা হলেও ফিরোজের টার্গেট ভিন্ন, সে প্রথমেই ভেঙেছে লক্ষ্মীর বাহন প্যাঁচাকে। প্যাঁচাকে টেনে-হেঁছড়ে কাঠামো থেকে বিচ্ছিন্ন করে মাটিতে ফেলে পা দিয়ে মাড়িয়ে গুড়িয়ে দিয়েছে! একইভাবে সরস্বতীর হাঁসকে গুড়িয়ে দেবার পর সবশেষে সে কার্তিকের ময়ূর নিয়ে পড়েছে। ময়ূরকে কাঠামো থেকে আলাদা করতে না পেরে ঘাড়-মাথা ভেঙে গুড়িয়ে ফেলেছে, লাথি মেরে মেরে চুরমার করেছে দেহ এব পেখম। প্রতিমা ফেলে প্রতিমার বাহন ভাঙার একটা গোপন কারণ আছে যা সে কাউকেই বলেনি। এই অপারেশনের জন্য তাকে নির্বচিত করার পরই সে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল যে করেই হোক পেঁচাটাকে সে ভাঙবেই। এরপর ভাঙবে হাঁস আর ময়ূর। হাঁস আর ময়ূর তার পরের টার্গেট কিন্তু প্রথম টার্গেট ছিল পেঁচা। তার মনোবাসনা অনুযায়ী পেঁচা তো বটেই হাঁস আর ময়ূরকে সে ভাঙতে পেরেছে। এজন্য মনে মনে সে তার আল্লাহ্’র দরবারে লাখ লাখ শুকরিয়া আদায় করেছে। তার ধারণা মূর্তিভাঙার চেয়ে এগুলো ভাঙলেই তার বেশি সোয়াব হবে, বিশেষ করে পেঁচা। কারণ পেঁচা ঘুঘুর মতোই উড়তে সক্ষম। বাড়তি সোয়াবের আশায় সে হাঁস আর ময়ূর ভেঙেছে। সে জানে যে স্বয়ং নবীজি কাবাঘরে রক্ষিত কোরাইশদের দেবতা কাঠের ঘুঘু ধ্বংস করেছিলেন। প্রথমে তার অবশ্য একটু আফসোস হয়েছিল, শালার মালাউনরা কেন যে কাঠের ঘুঘু পূজা করে না! কাঠের না হোক নিদেন পক্ষে মাটির হলেও চলতো, হাঁসের জায়গায় ঘুঘু থাকলে, তাহলে তার সোয়াব আরো বেশি হতো, মনোবাসনা পূর্ণ হতো তার! কিন্তু মালাউনরা যেহেতু ঘুঘু পূজা করে না, তাই দুধের সাধ ঘোলে মিটানোর মতো পেঁচাকেই বেছে নিয়েছে সে।
সবগুলো প্রতিমা ভাঙা হলে শেষবারের মতো মোবাইলের লাইট জ্বালিয়ে দেখলো ইয়াসিন মোল্লা। একটা প্রতিমারও মাথা নেই, মাথাগুলো মেঝেতে ফেলে পা দিয়ে পিষে গুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে; হাতগুলো দোমড়ানো-মোচড়ানো, কোনোটার শরীরে কাপড় নেই, আবার কোনোটার শরীরে ছেঁড়া কাপড় ঝুলছে, চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে দেহগুলোও ক্ষত-বিক্ষত করা হয়েছে। সবগুলো প্রতিমায় দৃষ্টি বুলানোর পর চাপাস্বরে ইয়াসিন মোল্লা বললো, ‘আলহামদুলিল্লাহ্।’
চাপাস্বরে আলহামদুলিল্লাহ্’র কোরাস ধ্বনিত হলো। তারপর ইয়ামিন মোল্লা বললো, ‘চলো সবাই।’
মন্দির থেকে নেমে সবার আগে চাতালে পা রাখলো করিম শেখ। যথারীতি তার পিছনে লাইন দিলো অন্য সবাই।’
সকলে নৌকায় উঠার পর বাঁশের খুঁটি থেকে দড়ি খুলে নৌকাটাকে জলের দিকে ঠেলে দিয়ে নিজে লাফিয়ে উঠলো ফরিদ। বৈঠা হাতে নিয়ে স্বাভাবিক গতিতে বাইতে লাগলো নৌকা। সফল একটি অপারেশনের পর সবার ভেতরের উত্তেজনা আর দুশ্চিন্তা এখন আনন্দে রূপান্তরিত হয়েছে, বিজয়ের আনন্দ! করিম শেখের এখন ইচ্ছে করছে একটা সিগারেট ধরিয়ে টানতে, কিন্তু নৌকায় উপস্থিত বুজুর্গ ব্যক্তিদের সামনে সিগারেট ধরানোর সাহস তার হলো না। ইনারা ধুমপান করা পছন্দ করেন না, ইসলামে ধুমপান করাও নাকি নিষেধ। ধুমপান অবশ্য সে করে তবে বুজর্গ ব্যক্তিদের অলক্ষ্যে, আসলে সেই কৈশোর বয়সের অভ্যাস সে কিছুতেই ত্যাগ করতে পারছে না। সব ব্যাপারেই সে বুজর্গ ব্যক্তিদের কথা মেনে চলে কেবল এই সিগারেটের ব্যাপারটা ছাড়া। বুজর্গ ব্যক্তিদের বিদায় দেবার পর অন্তত দুটো সিগারেট টানবে সে। এই গভীর রাতে সিগারেট টানলে তার আবার অন্য নেশা পায়, তাতে অবশ্য সমস্যা নেই। বউ তার সারাক্ষণ তৈরিই থাকে; দিন-রাতের ঠিক নেই যখন তখন ঘুম ভাঙিয়ে, রান্নাঘর কিংবা গোয়াল ঘরে কর্মব্যস্ত থাকলেও তাকে কেবল ইশারা করলেই এসে কাপড় খুলে বিছানায় শুয়ে পড়ে! এজন্যই মাঝে মাঝে মনে শঙ্কা জাগে যে যখন তার বয়স বাড়বে তখন মাগিকে বাগে রাখতে পারবে তো!
সফলতার এই আনন্দের ভেতরেও একটি আক্ষেপ বুদ্বুদের মতো ঠেলে উঠলো ফিরোজের মনে, যা সে প্রকাশ না করে পারলো না। ইয়াসিন মোল্লার উদ্দেশে বললো, ‘হুজুর, বেয়াদবি না নিলে একটা কথা বলি?’
ইয়াসিন মোল্লা তাকিয়ে ছিল নদীর অপর পারের দিকে। অন্ধকারেও সে দৃষ্টি ফেরালো ফিরোজের ঝাপসা মুখে, ‘বলো।’
‘হুজুর, আমরা এখন অনেক শক্তিশালী, সারাদেশে মাদ্রাসা ছাত্র এককোটির বেশি; তারপরও আমরা কেবল বিধর্মী-কাফেরদের মূর্তি ভাঙছি, কিন্তু তাদেরকে আমরা আমাদের এই পবিত্র জমিন থেকে উৎখাত করছি না কেন?’
‘আলহামদুল্লিাহ্, মোহাম্মদ ফিরোজ খান, তোমার এই প্রশ্ন শুনে আমি দারুণ খুশি হয়েছি; নবী রসুল এবং আল্লাহ্তায়ালা নিশ্চয় আরো কয়েকগুণ বেশি খুশি হয়েছেন! এই যে তোমার মধ্যে এই প্রশ্নের উদয় হয়েছে, তার মানে তোমার মধ্যে দ্বীনের সঠিক আলো জ্বলেছে। তোমার মতো আরো হাজার হাজার আল্লার বান্দার মধ্যে এখন এই পবিত্র আলো জ্বলছে, তারাও ইসলামের জন্য জিহাদ করতে এবং জীবন দিতেও প্রস্তুত, কেবল আদেশের অপেক্ষায় আছে। এবার আমি তোমার প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছি, হ্যাঁ আমরা এখন অনেক শক্তিশালী। কিন্তু সারাদেশে একযোগে কাফেরদের উৎখাত করার সময় এখনো আসেনি, তার জন্য আরো কিছু বছর আমাদেরকে অপেক্ষা করতে হবে।’
ইয়াসিন মোল্লার কথায় করিম শেখের রক্ত টগবগ করে উঠলো, ‘আর কতো অপেক্ষা করবে হুজুর। চোহির সামনে কাফেরগুলো লাফায়ে বেড়ায়। মুসলমানের দেশ, অথচ এহনো কাফেরগের কতো জমি-জমা, ব্যবসা-বাণিজ্য। বাজারের সব বড় ব্যবসায়ীগুলো কাফের। নানান সভা-সমিতিতে মাতব্বরি করে কাফের মালাউনের বাচ্চাগুলো!’
‘ধৈর্য ধরো করিম শেখ। এর যোগ্য জবাব আমরা দেব। এখন বিচ্ছিন্নভাবে নানা জায়গা থেকে কাফেরদের উৎখাত করা হচ্ছে। কিন্তু সারাদেশে একসাথে উৎখাত করতে গেলে মিডিয়া আর আন্তর্জাতিক চাপে কাফেরদের দালাল সরকার আমাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র তাক করবে। আরেকটু শক্তিশালী হয়েই আমরা কাফেরদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়বো। শুধু কাফের নয়, কাফেরদের দালাল আওয়ামীলীগ সরকারকেও উৎখাত করবো। তখন এইসব গণতন্ত্র-ফণতন্ত্র না, আল্লাহ’র আইন কায়েম হবে, শরীয়ত মোতাবেক দেশ চলবে।’
‘হুজুর, আমরা কী কাফেরগের সম্পদ আর স্ত্রীলোক ভোগ করতে পারবো? শুনেছি নবীজি কাফেরদের উৎখাত করার পর তাদের সম্পদ আর স্ত্রীলোক নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নিতেন।’
‘ঠিক-ই শুনেছ। আল্লাহ্’র নির্দেশেই রাসুলুল্লাহ্ গনিমতের মাল, মানে কাফেরদের সম্পদ, মেয়েলোক আর বাচ্চা-কাচ্চার এক পঞ্চমাংশ আল্লাহ্পাক এবং তাঁর নিজের জন্য রেখে অবশিষ্ট অন্য জিহাদীদের মধ্যে ভাগ করে নিতেন। আসলে কাফেরদের সম্পদ, মেয়েলোক আর বাচ্চা-কাচ্চা মহান আল্লাহ্তায়ালা মুসলমানদের জন্যই গচ্ছিত রেখেছেন। সময় হলে এই দেশের মুসলমানরাও তা ভোগ করতে পারবে।'
আলহামদুলিল্লাহ রব উঠলো। ফরিদের চোখে ভেসে উঠলো ননী চক্রবর্তীর কিশোরী মেয়ে নীলার ফর্সা মুখ, হাত, পা। তার বুকে ঝড় তুলে কচি বাছুরের মতো সামনে দিয়ে লাফিয়ে বেড়ায় নীলা। ইচ্ছে করে...!
নৌকা তীরে ভিড়ালো ফরিদ। সে ব্যতিত বাকিরা একে একে নেমে তীরে দাঁড়ালো। ফরিদ অন্যদের সঙ্গে যাবে না, নদীর পারেই তার বাড়ি, নৌকা নিজের বাড়ির ঘাটে ভিড়াবে সে।
করিম শেখ বললো, ‘রোজ সহালে যহন ঘাটে আসিস, কালও তহন এসো। যাতে কেউ সন্দেহ না করে।’
‘ঘাড় নাড়লো ফরিদ, ‘আচ্ছা।’
ইয়াসিন মোল্লা বললো, ‘সাবধানে থেকো ফরিদ, আগামীতে আল্লাহ্পাকের আরো অনেক নির্দেশ আমাদেরকে পালন করতে হবে। আল্লাহ’র পথে তোমার মতো নেক বান্দার খুব প্রয়োজন। আল্লাহ্ হাফেজ।’
‘আল্লাহ্ হাফেজ।’
পারে উঠে সবাই মিলিয়ে গেল অন্ধকারে। ফরিদ যেখানে বসে নৌকা বায়, সেখানেই বসলো পা দুটো সামনে ছড়িয়ে। মৃদুমন্দ শীতল বাতাস, তবু যেন হঠাৎ-ই তার শরীর তপ্ত হয়ে উঠলো। পাজামার পকেট থেকে সরস্বতী প্রতিমার মাথা থেকে ছিঁড়ে আনা চুলের গুচ্ছ বের করে চোখের সামনে উঁচু করে ধরলো।
জিহাদী ভাইয়েরা ভয় দেখানোর জন্য আগুন দিয়েছে কাফের মালাউনদের কয়েকটি বাড়িতে, বাকি মালাউনরা তাদের ঘরবাড়ি ফেলে পালাচ্ছে। জিহাদীরা লুঠপাট করছে করছে মালাউনদের ঘরবাড়ি, খাট-পালঙ্ক, গরু-ছাগল, অন্য অনেক জিনিসপত্র। মালাউন পুরুষগুলোর মাথা তরবারির একেক কোপে ধর থেকে ছিন্ন হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ছে, প্রাণভয়ে দিগ্বিদিক ছুটছে মালাউনের বাচ্চাগুলো! জিহাদী ভাইয়েরা যার যার পছন্দ মতো গণিমতের মাল হিসেবে মালাউনদের মেয়েলোক নিজের কব্জায় নিচ্ছে; একটা, দুইটা, তিনটা...যে যেমন পারছে! সে ছুটছে ননী চক্রবর্তীর বাড়ির দিকে। পথেই তার সঙ্গে দেখা হয়ে গেল ননী চক্রবর্তী আর তার পরিবারের সঙ্গে। তার হাতের রক্তমাখা তরবারি দেখে সবাই থমকে দাঁড়িয়েছে, ভয়ে মাকে জাপটে ধরে আছে নীলা। তরবারির কোপে সে ননী চক্রবর্তীর ধর থেকে মাথাটা আলাদা করে ফেললো, এরপর ননী চক্রবর্তীর যুবক ছেলের মাথাও। মা-মেয়ে এখন একে অন্যকে জড়িয়ে ধরে কাঁপছে। মায়ের কাছে থেকে নীলাকে ছাড়িয়ে নিতে গেলে ওর মা বাঁধা দিলো আর সঙ্গে সঙ্গে গর্জে উঠলো তার তরবারি-‘যা বুড়ি মাগি, তুইও তোর ভাতার আর ছাওয়ালের সাথে দোজখে যা!’ নীলার হাত ধরে টেনে নিয়ে ওদের বাড়িতে গিয়ে উঠলো। না, বাড়িটা এখনো লুঠ হয়নি। বাড়িটা এখন তার, নীলাও। বিরাট একটি পাকা বাড়ি আর ডাগর নীলা; একদম তার, তার নিজের। নীলাকে নিয়ে ঘরে প্রবেশ করলো সে, সাজানো গোছানো ঘর; ধবধরে বিছানা, জীবনেও এমন নরম আর পরিষ্কার বিছানায় শোয়নি সে। এখন থেকে শোবে, রোজ শোবে; রাতে তো শোবেই, দিনেও শোবে; যখন ইচ্ছে তখন শোবে। সে নীলাকে নিয়ে বিছানায় পা ঝুলিয়ে বসলো, নীলা ভয়ে কাঁপছে। ‘কাঁপছো কেন তুমি? তোমার কোনো ভয় নেই, আমি তোমাকে মারবো না; তোমাকে আমি ভালবাসবো, আদর করবো, আমার সন্তানের মা হবা তুমি। অনেক রাত অইছে, আসো আমরা ঘুমাই।’
নীলা ভয় পায়। সে জোর করে নীলার শরীর থেকে কাপড় খুলতে থাকে, একে একে খুলে ফেলে সব। নীলা এখন উলঙ্গ! আহা, কী সুন্দর নীলার শরীর! সবই মহান আল্লাহ্পাকের দান! নীলাকে বিছানায় ফেলে ওর চোখে, কপালে, গালে, ঠোঁটে, গলায়, বুকে উন্মত্ত আদর বুলায় সে!
হালকা বাতাসে সরস্বতী প্রতিমার উড়ন্ত চুলের গুচ্ছের একটা-দুটো নাকের ছিদ্রের ভেতর ঢুকে গেলে প্রবল সুড়সুড়িতে ঘোর কাটে ফরিদের, হাঁচি দেয়। পাঞ্জাবিতে নাক মোছে, বাঁ-হাতের তালুতে ঘষে নাক। তারপর চুলের গুচ্ছ বাঁ-হাতে ধরে পুনরায় মুখের কাছে নেয়, আলতোভাবে ডান হাতের পরশ বুলায়, ঠোঁটের সঙ্গে চেপে ধরে, গন্ধ শোঁকে! বড় করে শ্বাস নেয়। সরস্বতী প্রতিমার চুল কোথায়, এতো নীলার চুল! গর্জনের তেলের কটু গন্ধ হয়ে যায় নীলার চুলের মিষ্টি সুবাস! সে ডান হাত ঢুকিয়ে দেয় পাজামার ভেতরে, হাতে গরম অনুভূত হয়!
দূরে কোথাও শিয়াল ডাকছে; কাদের ছাগল যেন বিলম্বিত স্বরে একটানা ডেকেই চলেছে, হয়তো ডাক উঠেছে। বাঁ-হাতে ধরা চুলের গন্ধ শুঁকেই চলেছে ফরিদ, জিভের ডগা দিয়ে স্পর্শ করছে, মাঝে মাঝে কামড়ে ধরছে; আহা, নীলার চুল! নৌকাটি এখন নড়ছে, ক্রমশ জোড়ে; চন্দনার বুকের মৃদুমন্দ ঢেউ ছাপিয়ে উঠছে দোলায়িত নৌকার ঢেউ!
ফেব্রুয়ারি, ২০১৭।
২| ১৭ ই অক্টোবর, ২০২১ বিকাল ৫:৪২
কামাল১৮ বলেছেন: নির্মম বাস্তবতার একটি সুন্দর গল্প।গল্পের সাথে ভাষার সানজস্য গল্পকে করেছে আরো উজ্জল।ফরিদ একজনকে চেনে বাকিদের চেন না,তারা বহিরাগত।এই বক্তব্যে গল্পকে করেছে আরো যৌক্তিক।গায়ের পাঞ্জাবি তাদেরকে সনাক্ত করে তারা কারা।
১৮ ই অক্টোবর, ২০২১ রাত ১:২৯
মিশু মিলন বলেছেন: ধন্যবাদ।
৩| ১৭ ই অক্টোবর, ২০২১ বিকাল ৫:৪৩
নতুন বলেছেন: যারা এসব করে বেড়ায় তারা ধর্মকে ব্যবহার করে। তারা কখনোই ধামিক না।
আমার মনে হয়না যারা নারী ধর্ষন করতে যায় তারা রাসুল সা: বা গৌতম বুদ্ধা বা রামের কথায় অনুপ্রানিত হয়ে নারী ধর্ষন করে যায়।
কিছু খারাপ মানুষ ধর্মের লেবাস ধরে যাতে সমাজে সুবিধা করতে পারে। তারাই দরকার পড়লে মানুষের উপরে হামলে পড়ে কিন্তু ধর্মের নাম ব্যবহার করে।
কোন ধর্মই আকাজ করতে উতসাহ দেয় না।
গল্পের কাহিনির মতন অপরাধ মানুষ করে কিন্তু মনে হয় না সেটা ধর্মের কথায় অনুপ্রানিত হয়ে মানুষ করে।
৪| ১৭ ই অক্টোবর, ২০২১ বিকাল ৫:৪৪
নতুন বলেছেন: আপনার লেখার হাত ভালো, লেখার দমের জন্যই পুরোটা পড়লাম। বর্ণনার স্টাইল খুবই ভাল লেগেছে। ++
১৮ ই অক্টোবর, ২০২১ রাত ১:৩০
মিশু মিলন বলেছেন: ধন্যবাদ।
৫| ১৭ ই অক্টোবর, ২০২১ সন্ধ্যা ৬:৫৯
চাঁদগাজী বলেছেন:
আমাদের দেশের মগজহীন একটি জল্লাদ গোষ্টীর কাহিনী; তবে, আপনি টেনেটুনে অনেক লম্বা করে ফেলেছেন।
৬| ১৮ ই অক্টোবর, ২০২১ রাত ১২:০৮
রাজীব নুর বলেছেন: খুবই সুন্দর লিখেছেন। এক কথায় অসাধারণ। এরকম গল্প পাঠপুস্তকে থাকলে ভালো হতো।
১৮ ই অক্টোবর, ২০২১ রাত ১:৩১
মিশু মিলন বলেছেন: 'এরকম গল্প পাঠপুস্তকে থাকলে ভালো হতো।'
এই দেশে আগামী তিনশো বছরেও সম্ভব না। ধন্যবাদ।
৭| ১৮ ই অক্টোবর, ২০২১ বিকাল ৩:৫০
রাজীব নুর বলেছেন: আসলেই সম্ভব না।
©somewhere in net ltd.
১| ১৭ ই অক্টোবর, ২০২১ বিকাল ৫:২১
পুকু বলেছেন: পাপে ছাড়ে না বাপে রে।আরেকটি লাইন সংযোজন করলাম আপনার গল্পে।দোয়া যদি আল্লার কাছে পৌছায় তবে মানুষের কান্নাও তাঁর কাছে অবশ্যই পৌছায়।এতে কোনো সন্দেহের অবকাশ নেই।