নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি বর্তমানে ইস্টিশন এবং সামহোয়্যার ইন ব্লগে লিখি। আমার সকল লেখা আমি এই দুটি ব্লগেই সংরক্ষণ করে রাখতে চাই। এই দুটি ব্লগের বাইরে অনলাইন পোর্টাল, লিটল ম্যাগাজিন এবং অন্য দু-একটি ব্লগে কিছু লেখা প্রকাশিত হলেও পরবর্তীতে কিছু কিছু লেখা আমি আবার সম্পাদনা করেছি। ফলে ইস্টিশন এবং সামহোয়্যার ইন ব্লগের লেখাই আমার চূড়ান্ত সম্পাদিত লেখা। এই দুটি ব্লগের বাইরে অন্যসব লেখা আমি প্রত্যাহার করছি। মিশু মিলন ঢাকা। ৯ এপ্রিল, ২০১৯।
সুজিত সরকার বাঙালী, বলিউডের একজন মেধাবী চলচ্চিত্র পরিচালক। অস্কারে পাঠানোর জন্য সারা ভারত থেকে যে চৌদ্দটি সিনেমা নির্বাচন করা হয়েছিল তার মধ্যে সুজিতের ‘সর্দার উধম’ চলচ্চিত্রটি ছিল। দর্শক-সমালোচকের প্রশংসা পেয়েছে সর্দার উধম। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ‘সর্দার উধম’ মনোনীত হয়নি, মনোনীত হয়েছে তামিল ছবি ‘কুঝাঙ্গাল’।
সর্দার উদম সিং ছিলেন ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামী, ভগৎ সিংয়ের সহযোগী ছিলেন তিনি। তিনি ব্রিটিশদের জালিয়ানওয়ালাবাগ গণহত্যার প্রতিশোধ নিতে এই গণহত্যার নির্দেশদাতা কর্নেল রেজিনাল্ড ডায়ারকে হত্যা করেছিলেন।
১৯১৯ সালের ১৩ এপ্রিল পনের-বিশ হাজার ভারতীয় একত্রিত হয়েছিলেন পাঞ্জাবী নববর্ষ পালন করতে, যাদের অধিকাশই ছিলেন শিখ। তাদের উদ্দেশ্য ছিল নববর্ষ পালনের পাশাপাশি ব্রিটিশদের দমন-পীড়নমুলক ‘রাওলাত’ আইনের বিপক্ষে প্রতিবাদ জানানো; যে আইনের মাধ্যমে খর্ব করা হয়েছিল গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, শুরু হয়েছিল বিনা পরোয়ানায় গ্রেয়তার। এছাড়াও জাতীয় দুই নেতা সত্য পাল এবং ড. সাইফুদ্দিন কিশ্লের নির্বাসন আদেশ প্রত্যাহার করার দাবি জানিয়েছিলেন তাঁরা।
একারণেই কর্নেল রেজিনাল্ড ডায়ারের নির্দেশে পঞ্চাশ জন সেনা বাগানে ঢুকে মানুষের বের হবার সব পথ বন্ধ করে দেন এবং এলোপাথারি গুলি ছুড়তে শুরু করেন। ১৬৫০ রাউন্ড গুলিবর্ষণ করে সৈন্যরা। ব্রিটিদের হিসেবে ৪০০ জন আর ভারতীয়দের হিসেবে প্রায় ১০০০ মানুষ নিহত হন। আহত হন অগণিত। এই হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ব্রিটিশের দেওয়া ‘নাইটহুড’ উপাধি ফিরিয়ে দিয়েছিলেন।
নাইটহুড গণতহ্যার কুখ্যাত খলনায়ক কর্নেল রেজিনাল্ড ডায়ারকে হত্যা করেছিলেন স্বাধীনতা সংগ্রামী সর্দার উদম সিং, তাঁর সেই বীরত্বগাঁথা নিয়েই সুজিত সরকার নির্মাণ করেছেন ‘সর্দার উধম সিং’ চলচ্চিত্রটি।
অস্কারের সিনেমা বাছাইয়ে যে বিচারকমণ্ডলী ছিলেন, তার মধ্যে দুজন ছিলেন বাঙালী- একজন ইন্দ্রদীপ দাশগুপ্ত, অন্যজন সুমিত বসু। সম্প্রতি এক সংবাদ মাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ইন্দ্রদীপ দাশগুপ্ত বলেন, ‘সর্দার উধম ছবিতে ব্রিটিশদের প্রতি বিদ্বেষ দেখানো হয়েছে। যা এই বিশ্বায়নের যুগে মোটেও ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি নয়। এছাড়াও, ছবিটা খুবই দীর্ঘ। জালিয়ানওয়ালাবাগের অংশ দীর্ঘ করে দেখানো হয়েছে। তবে হ্যাঁ, এই ছবির সিনেমাটোগ্রাফি সত্যিই আন্তর্জাতিক মানের।’ -সংবাদ প্রতিদিন
কী আশ্চর্য, বিশ্ব চলচ্চিত্র কি তবে এখনো ব্রিটিশের পরাধীন? ব্রিটিশরা হত্যা, লুণ্ঠন, ধর্ষণ, গণহত্যা করতে পাবে; কিন্তু তা নিয়ে কেউ চলচ্চিত্র বানাতে পারবে না? বানালেই তা ব্রিটিশের প্রতি বিদ্বেষ হয়ে যাবে? এই বিশ্বায়নের যুগে শিল্পের পায়ে শিকল পরিয়ে সত্য ইতিহাসকে মাটিচাপা দিতে হবে? ব্রিটিশের অপরাধ চলচ্চিত্রে তুলে ধরা যদি ব্রিটিশের প্রতি বিদ্বেষ হয়, তবে তো ইতিহাস চর্চা, চলচ্চিত্র নির্মাণ, উপন্যাস লেখা এসব বাদ দিতে হবে। কেননা তাতে কোনো না কোনো শ্রেণি-পেশার-স্বভাবের মানুষ আহত হবে!
এই অর্বাচীন বক্তব্যের মাধ্যমে ইন্দ্রদীপ ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের স্বাধীনতা সংগ্রামীদের অপমান করেছেন। তাঁদের কর্মকাণ্ডকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন। তাঁরা কি ব্রিটিশ বিদ্বেষী ছিলেন? মোটেও না। বিদ্বেষ আর প্রতিবাদ এক নয়। তাঁরা অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছিলেন; পরাধীনতা থেকে মুক্তি পেতে অন্যায়কারীদের হত্যা করেছিলেন, সাধারণ ব্রিটিশ নাগরিকদের নয়।
না কি এর আড়ালে আছে বাঙালীর প্রতি বাঙালীর ঈর্ষা? আমি পারছি না, আমি কোনোদিনও পারব না, তোমাকে কেন পারতে দেব!
কানাঘুষায় শুনতে পেলাম, দুই বাঙালী বিচারক মার্কসবাদী। মার্কসবাদের প্রতি আমার কোনো বিদ্বেষ নেই, বিকৃত মার্কসবাদী অপছন্দ করি, এরা মুখে মার্কসবাদী, জীবনাচারে সাম্রাজ্যবাদী। বাঙালীর হাতে পড়ে মার্কসবাদ, লেনিনবাদ, গণতন্ত্র সবেরই করুণদশা! বাঙালী জগাখিচুরী মার্কবাদীরা এখন বিলুপ্তপ্রায় প্রাণি, তারা বিনোদনের খোরাক যোগায়, এই দুটো মার্কসবাদী বাঙালী বিচারককে খাঁচায় পুড়ে পাশ্চাত্যে পাঠালে পাশ্চাত্যবাসীরা সার্কাসের আনন্দ পাবে বোধ করি।
বিশ্বায়নের এই যুগে বিদ্বেষ তত্ত্ব বা অনুভূতিতে আঘাত তত্ত্বের কারণেই বাঙালীরা ইতিহাসের অনেক অধ্যায় নিয়ে শিল্প সৃষ্টি করে না। বখতিয়ারের বাংলা আক্রমণ, নালন্দা, বিক্রমশীলা বিহার ধ্বংস নিয়ে কোনো শিল্প সৃষ্টি হয় না কেউ আঘাত পাবে বলে! কেউ আঘাত পাবে বলে সুলতান মাহমুদের ভারত আক্রমণ নিয়ে শিল্প সৃষ্টি হয় না! সুলতান কিংবা মোগল শাসনের নিপীড়নের ইতিহাস নিয়ে কোনো শিল্প সৃষ্টি হয় না অনুভূতিতে আঘাত লাগবে বলে! অনুভূতি আহত হবে বলে ১৯৪৬ সালের নোয়াখালি হিন্দু গণহত্যা নিয়ে কোনো শিল্প সৃষ্টি হয় না! ১৯৯২ সালের হিন্দু নিপীড়ন, ২০০১ সালের হিন্দু নিপীড়ন, রামু, নাসিরনগর, সাঁথিয়া, রংপুর, কুমিল্লার হামলা নিয়ে কোনো শিল্প সৃষ্টি হয় না কারো অনুভূতিতে আঘাত লাগবে বলে!
ইতিহাসের আরো পিছনে যাওয়া যায়, কারো অনুভূতিতে আঘাত লাগবে বলেই গেলাম না।
অক্টোবর, ২০২১
৩১ শে অক্টোবর, ২০২১ রাত ২:৪৫
মিশু মিলন বলেছেন: এসব নিয়ে আপনি লিখুন, আপনার কলম কে থামিয়ে রেখেছে! ওখানে তবু দাঙ্গাটা হয়, এখানে হয় একতরফা হামলা।
২| ৩১ শে অক্টোবর, ২০২১ বিকাল ৩:৩০
রাজীব নুর বলেছেন: সামু ব্লগের আপনি একজন শক্তিশালী ব্লগার।
০৫ ই নভেম্বর, ২০২১ রাত ৮:০২
মিশু মিলন বলেছেন: কতোটুকু শক্তিশালী জানি না, তবে লেখার ক্ষেত্রে সৎ থেকে নিজের সর্বোচ্চ দক্ষতা কাজে লাগিয়ে লিখতে চেষ্টা করি।
©somewhere in net ltd.
১| ৩১ শে অক্টোবর, ২০২১ রাত ১:৪৭
*আলবার্ট আইনস্টাইন* বলেছেন: প্রিয় ভ্রাতা মিশু মিলন, ভারতের উত্তর প্রদেশে হাশিমপুর মুসলিম গনহত্যার কথা মনে আছে???
হাশিমপুরা গণহত্যা হল ১৯৮৭ সালের মিরাট সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার সময় ভারতের উত্তর প্রদেশ রাজ্যের মিরাটের কাছে ২২ মে ১৯৮৭ বা তার কাছাকাছি সময়ে সশস্ত্র বাহিনী দ্বারা ৫০ জন মুসলিম পুরুষকে গণহত্যার একটি ঘটনা।
ভারতে মুসলিমদের বিরুদ্ধে সহিংসতার আরও উদাহরণ দিচ্ছি…
১৯৪৮ হায়দারাবাদ গনহত্যা
১৯৬৯ গুজারাট দাঙ্গা ও হত্যাকান্ড
১৯৭০ ভিওয়ান্ডি দাঙ্গা
১৯৮০ মোরাদাবাদ দাঙ্গা
১৯৮৩ নেল্লি গনহত্যা
১৯৮৫ গুজারাট দাঙ্গা
১৯৮৭ হাশিমপুরা মুসলিম গনহত্যা
১৯৮৯ ভাগলপুর সহিংসতা ও হত্যাকান্ড
১৯৯২ বোম্বে দাঙ্গা
১৯৯৩ পাঙ্গাল গণহত্যা
২০০২ গুজারাট দাঙ্গা
২০০৬ ম্যালেগাও বোমা হামলা
২০১৩ মুজাফফারনগর দাঙ্গা
২০১৪ আসাম সহিংসতা ও মুসলিম নিপীড়ন
২০২০ দিল্লী দাঙ্গা ও মুসলিম হত্যাকাণ্ড
এসব নিয়ে সিনেমা হওয়ার দরকার কিনা?? অন্ধ হলে প্রলয় তো আর বন্ধ থাকে না।