নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মিশু মিলন

মিশু মিলন

আমি বর্তমানে ইস্টিশন এবং সামহোয়্যার ইন ব্লগে লিখি। আমার সকল লেখা আমি এই দুটি ব্লগেই সংরক্ষণ করে রাখতে চাই। এই দুটি ব্লগের বাইরে অনলাইন পোর্টাল, লিটল ম্যাগাজিন এবং অন্য দু-একটি ব্লগে কিছু লেখা প্রকাশিত হলেও পরবর্তীতে কিছু কিছু লেখা আমি আবার সম্পাদনা করেছি। ফলে ইস্টিশন এবং সামহোয়্যার ইন ব্লগের লেখাই আমার চূড়ান্ত সম্পাদিত লেখা। এই দুটি ব্লগের বাইরে অন্যসব লেখা আমি প্রত্যাহার করছি। মিশু মিলন ঢাকা। ৯ এপ্রিল, ২০১৯।

মিশু মিলন › বিস্তারিত পোস্টঃ

দেবদ্রোহ (উপন্যাস: পর্ব- আটত্রিশ)

২৬ শে নভেম্বর, ২০২২ সকাল ১১:৪৮

একত্রিশ

রাত্রে সভাগৃহে বহির্ষ্মতীর বীর যোদ্ধা ও ঘনিষ্ঠ সখাদের সঙ্গে বৈঠকে বসে নৃপতি বেণ খুঁটিতে হেলান দিয়ে জলভরা উদাসীন চোখে বলেন, ‘সঞ্জয়।’

হাত বাড়িয়ে সকলের মাঝখানের জলন্ত প্রদীপের সলতে বাড়াতে থাকা সঞ্জয় বেণের দিকে না তাকিয়েই বলেন, ‘বলো সখা?’
‘শেষ পর্যন্ত আমরা কি হেরে যাবো সখা, আমাদের লড়াই কি বৃথা যাবে?’ হতাশা ঝরে পড়ে বেণের কণ্ঠ থেকে।

সলতে বাড়ানোর পর তৈলাক্ত আঙুল ভূমিতে মুছে সঞ্জয় বলেন, ‘তুমি ভেঙে পোড়ো না সখা, এই প্রদীপের মতোই আমাদের জ্বলে উঠতে হবে।’

মাধব বলেন, ‘তুমি শক্ত থাকো সখা, তুমি শক্ত থাকলে কেউ আমাদের হারাতে পারবে না।’

বেণের বুক চিড়ে যেন হাহাকার বের হয়, ‘আমার হৃদয় ভেঙে চুরমার হয়ে যাচ্ছে সখা মাধব, কুথানের শূন্যতা আমি সহ্য করতে পারছি না। আমার প্রাণপ্রিয় সখাকে ওরা ধাতুর ছুরি দিয়ে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা করেছে, না জানি সখা আমার কী তীব্র যন্ত্রণা পেয়ে এই ধরিত্রী থেকে বিদায় নিয়েছে!’

কয়েক নিমেষের জন্য থামেন বেণ, যেন শবদেহের বক্ষের ন্যায় নীরবতা বিরাজ করে সভাগৃহে, তারপর মাধবের দিকে চেয়ে আর্তনাদের মতো পুনরায় উচ্চারণ করেন, ‘আজ আমি কুথানকে হারিয়েছি, কাল যদি তোমাকে হারাই, পরশু যদি সঞ্জয়-অরুণ কিংবা দনুকে হারাই; আমি কাদের নিয়ে বেঁচে থাকব, কাদের নিয়ে লড়াই করব! কিংবা ধরো আমিও যদি কুথানের মতো খুন হয়ে যাই!’

‘এমন কথা বোলো না সখা। তোমার মনোবল ভেঙে গেলে আমরা যে দিশেহারা হয়ে পড়ব।’ অরুণ বলেন।

‘কুথানের মৃত্যু আমাকে হীনবল করে দিয়েছে সখা, তোমরা তো জানো যে আমার জীবনে কুথানের গুরুত্ব কতটা। কুথান আমাকে তৃতীয় নয়ন দিয়েছে, ওর কারণেই আমি ধরিত্রীকে ভিন্ন চোখে দেখতে শিখেছি, বুঝতে শিখেছি। আমাদের দুটি দেহ হলেও আত্মা ছিল অভিন্ন, কুথান ব্যতিত আজ আমি অর্ধমানব!’

অরুণ বলেন, ‘আমরা তা জানি সখা। কুথানকে হারিয়ে আমরাও তোমারই মতো শোকাহত। শুধু আমরা নই; দেবগণ, ঋষিগণ, ব্রাহ্মণগণ আর তাদের অনুগত কিছু বিপথগামী মানুষ ব্যতিত ব্রহ্মাবর্তের আর্য-অনার্য সকলেই আজ শোকাহত। আর এই দুঃসংবাদ যখন অতল, বিতল, পাতালের অনার্যরা শুনবে তারাও কুথানের জন্য হাহাকার-আর্তনাদ করবে।’

বেণ বলেন, ‘এই যে আজকে ব্রহ্মাবর্তে আর্য এবং অনার্যদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ বন্ধ হয়েছে, এর পদক্ষেপ আমি নিয়েছি ঠিকই, কিন্তু এই ভাবনার বীজ আমার মধ্যে রোপণ করেছিল প্রিয় সখা কুথান। যদি কোনো কারণে আমরা পরাজিত হই আর আমাদের আদর্শ-দর্শন বিনষ্ট হয়, যদি দেবতা-ঋষি-ব্রাহ্মণদের মনোনীত কোনো পুতুল মানব ব্রহ্মাবর্তের নৃপতির আসনে অধিষ্ঠিত হয়ে দেবতা-ঋষি-ব্রাহ্মণদের অঙ্গুলি হেলনে সমাজ পরিচালিত করে, তাহলে মানব সভ্যতার বড় ক্ষতি হয়ে যাবে! অনন্তকালের জন্য ধর্মের অন্ধকারে নিমজ্জিত হবে মানব সমাজ, ধর্মপতিদের দ্বারা শোষিত-নিপীড়িত হবে মানুষ। অব্রাহ্মণদের ঘাম আর শ্রমের অন্ন বিনাশ্রমে বসে বসে আহার করবে ব্রাহ্মণরা। ব্রাহ্মণদের এই ফাঁদ থেকে সহজে মুক্তি মিলবে না মানবজাতির।’

দনু বলেন, ‘তোমার ধারণা অমুলক নয় সখা। আমাদের পরাজয় হলে দেবতা আর ব্রাহ্মণরা ধর্মের ফাঁদে মানবজাতিকে আষ্টে-পৃষ্ঠে বেঁধে রাখতে চাইবে। তুমি যে সাহস দেখিয়ে দেবতা ও ব্রাহ্মণদের থাবা থেকে ব্রহ্মাবর্তকে পৃথক করেছে, ওরা যদি পুনরায় ব্রহ্মাবর্তকে ওদের করতলে নিতে পারে, তাহলে ওরা অধিক সতর্ক হয়ে যাবে, কখনোই চাইবে না যে তোমার মতো আর কোনো বেণের জন্ম হোক ব্রহ্মাবর্তে।’

অরুণ বলেন, ‘তা তো বটেই, ব্রহ্মাবর্ত স্বাধীন হবার পূর্বে আমাদের জীবনযাত্রার মান যে-রূপ ছিল, এখন তার চেয়ে অধিক উত্তম অবস্থায় আছি আমরা। অন্যদিকে ব্রাহ্মণরা ক্ষুধার্ত বাঘের ন্যায় হিংস্র হয়ে আছে! সুযোগ পেয়েই আমাদের সখা কুথানের ওপর থাবা বসিয়েছে।’
বেণ বলেন, ‘হিংস্র তো হবেই, ওরা সুদীর্ঘকাল কোনো কর্ম না করে আমাদের ঘাড়ে বসে করে আহার করেছে, আর এখন ওদের কর্ম করে খেতে হয়। নিজেদের গবাদীপশু নিজেদেরকেই চরাতে হয়, নিজেদেরকেই ভূমিকর্ষণ করে ফসল উৎপাদন করতে হয়, পশু শিকার করতে হয়। ব্রহ্মাবর্তের কেউ কি স্বপ্নেও ভাবতে পেরেছিল যে প্রবল প্রতাপশালী পুরোহিত উদয়গিরির পুত্ররা কখনো চারণভূমিতে গবাদীপশু চরাতে যাবে? কিংবা অরণ্যে যাবে পশু শিকার করতে? ওদের এখন তাই করতে হচ্ছে বলে ওরা এখন সুযোগ খুঁজছে। ওদিকে দেবতাদেরও ব্রহ্মাবর্তের কর বিনা পূর্বের মতো আর তিনবেলা ভরপেট আহার জুটছে না!’

পথের দিকে হঠাৎ কারো পায়ের শব্দে সকলেই সতর্ক দৃষ্টিতে তাকায়, কেউ বর্শা, কেউবা তরবারি হাতে তুলে নেয়। হালকা জ্যোৎস্নায় দেখা যায় সদর দ্বারের বাইরে কালো চাদরে শরীর-মাথা মুড়ে কেউ দাঁড়িয়ে আছে।

নিমেষের মধ্যে উঠে দাঁড়িয়ে সেদিকে বর্শা তাক করেন বেণ বলেন, ‘কে ওখানে? একদম নড়বে না, নইলে আমার হাতের বর্শা তোমার বক্ষ খুঁজে নেবে।’
‘আমি উইয়ের ঢিবি থেকে উড়ে এসেছি!’

বেণ বর্শা এবং অরুণ তরবারি নামিয়ে রাখলেও অন্যরা তাদের অস্ত্র তাক করেই থাকে, দনু বলেন, ‘কে? তোমাদের পরিচিত?’

অরুণ বলেন, ‘উইয়ের ঢিবি থেকে আমাদের পরিচিত উইপোকা এসেছে।’ তারপর বেণের উদ্দেশে বলেন, ‘তুমি বোসো সখা, আমি দ্বার খুলে দিচ্ছি।’

অরুণ গিয়ে দ্বার খুলে দিলে চাদরে মোড়া মানুষটি আঙিনায় প্রবেশ করেন আর অরুণ আবার দ্বার রুদ্ধ করে পূর্বের জায়গায় এসে বসেন। চাদরে মোড়া মানুষটি দনুর পাশে বসে মাথা থেকে চাদরের ঘোমটা খুলে ফেললে সকলেই তাকে চিনতে পারেন, তার মাথার দীর্ঘ কেশ চূড়ো করে বাঁধা, মুখে লম্বা দাড়ি-গোঁফ, ঋষির বেশ।

বেণ বলেন, ‘পথে কোনো অসুবিধা হয়নি তো হরিশ?’
‘না, অসুবিধা আর কী!’
‘সর্প না নকুল দেখে এলে?’
‘সর্প, একেবারে জাত গোখরো, ফণা তুলে আছে বিষ ঢালার জন্য!’
‘বলো শুনি।’
‘বলছি, বড্ড তেষ্টা পেয়েছে, আগে একটু জল পান করে নিই।’
বলেই কাঁধের চাদর নামিয়ে রেখে, বাম কাঁধ থেকে চামড়ার থলেটা হাতে নিয়ে ছিপি খুলে ঢক ঢক করে জল পান করেন হরিশ।

হরিশ নৃপতি বেণের গুপ্তচর, বয়স সাতাশ-আটাশ বৎসর। তিনি একজন ছদ্মবেশী ঋষি। তিনি যে বেণের নিযুক্ত গুপ্তচর তা বেণের কাছের মানুষদের অনেকেই জানে না। বেণ ব্যতিত অরুণ জানেন, আর জানতেন কুথান। উইয়ের ঢিবি থেকে উড়ে আসার কথাটা সাংকেতিক, এই সাংকেতিক ভাষা কেবল তারা কয়েকজনই জানেন। উই মানে হচ্ছে দেবতা, ঋষি আর ব্রাহ্মণগণ; আর ঢিবি মানে হচ্ছে সম্মেলন; অর্থাৎ উইয়ের ঢিবি মানে হচ্ছে ঋষি সম্মেলন। হরিশ উইয়ের ঢিবি থেকে উড়ে এসেছেন মানে হচ্ছে স্বর্গের ঋষি সম্মেলন থেকে এসেছেন গোপন সংবাদ নিয়ে।

হরিশ অনেকটা জল পান করার পর থলের মুখে ছিপি লাগিয়ে থলেটা ভূমিতে রেখে বলেন, ‘সকলে কুশলে আছেন তো?’
সকলে নীরবে চেয়ে থাকেন হরিশের দিকে। হরিশ বলেন, ‘আপনারা কথা বলছেন না যে? কী হয়েছে?’
অরুণ বলেন, ‘আমাদের সখা কুথানকে হত্যা করেছে।’

‘উঃ ভ্রাতাশ্রী!’ আর্তনাদ করে উঠে নিজের মুঠো করা হাত কপালে ঠেকান হরিশ।

হরিশ অরুণের মুখে দৃষ্টি স্থির রেখে তাকিয়ে থাকেন। হরিশ কুথানের ভগিনীপতি, কুথানের ছোট ভগিনীকে তিনি বিবাহ করেছিলেন। দু-বৎসর সংসার করার পর তার স্ত্রী-বিয়োগ ঘটে সন্তান জন্মের সময়, পরে আর বিবাহ করেননি। ভগিনীর মৃত্যু হলেও কুথান তাকে অত্যন্ত স্নেহ করতেন। হরিশ কয়েক বৎসর যাবৎ বহির্ষ্মতীর বাইরে নিজের গড়া একটি আশ্রমে থাকেন, আহারাদির যোগান দেন বেণ। কুথানের পরামর্শেই বেণ হরিশকে গুপ্তচরের কাজে নিয়োগ করেন।

জলভরা চোখে মাথা তোলেন হরিশ, ‘কবে, কী করে হলো?’

কবে, কোথায়, কিভাবে কুথানকে হত্যা করা হয়েছে তা জানেন না কেউ; দেবায়ণীর আশ্রমের উদ্দেশ্যে কুথানের বহির্ষ্মতী ত্যাগ আর কয়েকদিন পর সরস্বতী নদীতে তার শবদেহ পাবার কথা সঞ্জয় সংক্ষেপে বলেন হরিশকে।

বেশ কিছুক্ষণ পর নীরবতা ভেঙে হরিশ বলেন, ‘আপনাদের সবাইকেই খুব সাবধানে থাকতে হবে। ওরা গোখরোর মতো ফুঁসছে, ছোবল মারার অপেক্ষায় আছে!’

সবাই তীব্র কৌতুহলে হরিশের দিকে তাকান ঋষি সম্মেলনের কথা শোনার জন্য। হরিশ বলেন, ‘এবার স্বর্গের ঋষি সম্মেলনে স্মরণকালের সবচেয়ে বেশি ঋষির সমাবেশ ঘটে, প্রবীণ ঋষিদের সংখ্যা ছিল অবাক করার মতো। স্বর্গের দূর্গম যাত্রাপথের বিপদ ও কষ্ট উপেক্ষা করে বিপুল সংখ্যক ঋষি এবারের সম্মেলনে যোগ দেন শুধুমাত্র এই কারণে যে তারা দেবপতি ইন্দ্র এবং অন্যান্য দেবগণকে বার্তা দিতে চেয়েছেন- ব্রহ্মাবর্তে আপনার শাসন ব্যবস্থায় তারা খুব কষ্টে আছে, মানবেতর জীবনযাপন করছে, শীঘ্রই যেন ইন্দ্র আপনার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। দেবগণ এবং ঋষিগণ আপনার প্রতি ভীষণ ক্ষুব্ধ। সভামঞ্চে ঋষিগণ যখন বক্তৃতা দেন, তখন তাদের বক্তৃতায় শাস্ত্রের কথা, ধর্মীয় আচার-আচরণ বা বিধিবিধানের কথা খুব কমই ছিল। সকলের বক্তব্য জুড়ে ছিল কেবল তাদের বর্তমান জীবনযাপনের চিত্র; তারা কতটা কষ্টে আছেন, আপনি তাদের প্রতি কতটা অমানবিক, সেই চিত্র তারা তুলে ধরার চেষ্টা করেছে। সকলেই আপনার প্রতি তীব্র উষ্মা প্রকাশ করেছেন। বক্তৃতা দেবার সময় তাদের চোখ থেকে ঠিকরে বেরোচ্ছিল অগ্নি, যে অগ্নিতে তারা আপনাকে ভস্ম করতে চান। আপনার শাসনের বিধিবিধান বা আইন কতটা ধর্মবিরোধী, বেদ, ব্রাহ্মণ ও দেববিরোধী এসবই ছিল তাদের আলোচনার প্রধান বিষয়। যে করেই হোক তারা আপনার উৎখাত চান। সম্মেলনের সময় সর্বত্র ছিল আপনার এবং আপনার কর্মের সমালোচনা। এমনকি আপনার জন্মের ইতিহাসও ছিল প্রচুর চর্চার বিষয়। তাদের বক্তৃতার বেশ বড় অংশ জুড়ে ছিল ভ্রাতাশ্রী কুথানের কথা, ভ্রাতাশ্রীকে তারা মূল ষড়যন্ত্রকারী হিসেবে চিহ্ণিত করেছেন।’

এই পর্যন্ত বলে থামেন হরিশ। চিন্তিত বেণ বলেন, ‘ইন্দ্র কি বার্তা দিলেন ঋষিদের?’

‘ইন্দ্র ঋষিদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে ধর্ম, শাস্ত্র, দেবতা, ঋষি ও ব্রাহ্মণদের মঙ্গলের জন্য শীঘ্রই তিনি কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন। তাদের মঙ্গলের জন্য প্রয়োজনে নিজের জীবনও উৎসর্গ করবেন! ইন্দ্রের প্রতিশ্রুতিবদ্ধ প্রতিটি বাক্যের শেষে ঋষিরা জয়ধ্বনি দিয়েছেন। সম্মেলন মঞ্চে ইন্দ্র যে বক্তব্য দিয়েছেন তা ছিল সকল ঋষিদের জন্য, কিন্তু এর বাইরে পাঁচজন প্রবীণ এবং পাঁচজন তরুণ ঋষির সঙ্গে ইন্দ্রের গোপন বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে, আমি অত্যন্ত দুঃখিত যে সেই বৈঠকের কোনো তথ্য আমি জানতে পারিনি। বস্তুত, ওই দশজন ঋষির বাইরে আর কোনো ঋষি-ই সেই গোপন বৈঠকের আলোচনার বিষয়বস্তু সম্পর্কে জানেন না। আমার ধারণা দেবপতি ইন্দ্র দেবসৈন্য নিয়ে আমাদের ওপর অতর্কিত আক্রমণ করতে পারেন। আপনাকে লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে নৃপতি।’

বেণ ঘাড় নাড়েন, ‘তা তো বটেই, প্রস্তুত আমাদের হতেই হবে। তুমি যা শোনালে তা মোটেই শ্রুতিসুখকর নয়। দেবসৈন্য এবং ঋষিরা আমাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরতে পারে, সুতরাং যুদ্ধের জন্য আমাদের তৈরি হতে হবে। পর্যাপ্ত অস্ত্র সংগ্রহ করে রাখতে হবে। অরুণ, মাধব, সঞ্জয়, দনু; তোমরাই আমার শক্তি, তোমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে। তোমাদের প্রত্যেকের বাহিনীতে সৈন্য সংখ্যা আরো বাড়াতে হবে। তোমরা দু-একদিনের মধ্যেই আমাদের মিত্র গোত্রগুলোতে যাবে, গোত্রপতিদের বলবে বেছে বেছে কিছু যুবককে তোমাদের হাতে তুলে দিতে, যাতে তোমরা তাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে উপযুক্ত সৈন্য হিসেবে গড়ে তুলতে পারো।’

অরুণ বলেন, ‘তুমি ঠিকই বলেছ সখা, এখন আমাদের দক্ষ সৈন্য সংখ্যা পর্যাপ্ত নয়।’
‘তোমরা দিনে এবং রাত্রে বহির্ষ্মতীর সদরদ্বারে পাহাড়াদার বাড়িয়ে দাও। এমনকি বহির্ষ্মতীর চারপাশেও কিছু সংখ্যক পাহাড়াদার রাখো। আর আমাদের আরেকটি নতুন কৌশল নিতে হবে।’
‘কী কৌশল?’ বলেন সঞ্জয়।

‘আমার শ্যালক, মানে কেশিনীর মামাতো ভ্রাতার বিবাহ উপলক্ষে কয়েকদিন পর আমি নিষাদপল্লীতে যাব। আমি নিষাদ সর্দারের সঙ্গে আলোচনা করে আসব একটি যৌথ সৈন্য বাহিনী গড়ে তোলার ব্যাপারে। একই উদ্দেশ্যে ওখান থেকে আমি পণিপল্লীতে যাব। বিবাহ অনুষ্ঠান থেকে ফিরে এসে কিরাত প্রধান, রাক্ষস আর নাগ সর্দারের সঙ্গেও এই বিষয়ে আলোচনা করব। মানব, রাক্ষস, নিষাদ, পণি, কিরাত এবং নাগ যুবকদের নিয়ে একটি শক্তিশালী যৌথবাহিনী গড়ে তুলব আমরা; যারা ব্রহ্মাবর্তের সব গোষ্ঠীকে নিরাপত্তা দেবে। তোমরা এই যুবকদের প্রশিক্ষণ দিয়ে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত করবে।’

‘এটা করতে পারলে দারুণ ব্যাপার হবে সখা! তোমরা কী বলো?’ অন্যদের মুখের দিকে তাকান সঞ্জয়।
সকলেই এই কৌশলের ব্যাপারে একমত হলে বেণ আবার বলেন, ‘আমাদের বোধহয় আরো আগেই এটা করা উচিত ছিল, দেবতা এবং ঋষিরা এতটা আগ্রাসী হয়ে উঠবে আমি বুঝতে পারিনি। কিন্তু আর বিলম্ব করা চলবে না, শীঘ্রই আমাদের যৌথ সৈন্যবাহিনী গঠনের কাজ শুরু করতে হবে।’

মাধব বলেন, ‘মানব, রাক্ষস, নিষাদ, পণি, কিরাত এবং নাগদের নিয়ে একটা শক্তিশালী সৈন্যবাহিনী গড়ে তুলতে পারলে দেবসৈন্য আর ব্রাহ্মণরা আমাদের কিছুই করতে পারবে না, আমরা হয়ে উঠব অজেয়।’

দনু বলেন, ‘আমাদের একটি সমৃদ্ধ অস্ত্রভাণ্ডারও গড়ে তুলতে হবে, বিভিন্ন প্রকার অস্ত্র সেখানে গচ্ছিত রাখতে হবে।’

বেণ বলেন, ‘সে-কথা আমিও ভেবেছি, এ ব্যাপারে আমি পণি অস্ত্রবণিকদের সঙ্গে কথা বলব, যাতে শীঘ্রই তারা আমাদেরকে আরো অস্ত্র সরবরাহ করে।’

রাত্রি গভীর হয়; কিন্তু অস্ত্র আর যৌথ সৈন্যবাহিনী গঠনের বিষয়ে এবং দেবসৈন্য আক্রমণ করলে তা প্রতিরোধ করার উপায় নিয়ে আলোচনা চলতেই থাকে বৈঠকে।



(চলবে......)

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২৬ শে নভেম্বর, ২০২২ দুপুর ১২:০৪

রাজীব নুর বলেছেন: আমাদের একজন ব্লগার মারা গেছেন। গতকালই আমরা তা জানতে পারি। ব্লগার নুরু সাহেবের সাথে আমার সুসম্পর্ক ছিলো।

২৬ শে নভেম্বর, ২০২২ দুপুর ১২:১৯

মিশু মিলন বলেছেন: বলেন কী! খুবই দুঃখজনক।

২| ২৬ শে নভেম্বর, ২০২২ দুপুর ১:৩১

সাহাদাত উদরাজী বলেছেন: বই আকারে প্রকাশ করুন।

২৬ শে নভেম্বর, ২০২২ দুপুর ২:১৯

মিশু মিলন বলেছেন: এবারের একুশে বইমেলায় পেন্ডুলাম প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত হবে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.