নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি বর্তমানে ইস্টিশন এবং সামহোয়্যার ইন ব্লগে লিখি। আমার সকল লেখা আমি এই দুটি ব্লগেই সংরক্ষণ করে রাখতে চাই। এই দুটি ব্লগের বাইরে অনলাইন পোর্টাল, লিটল ম্যাগাজিন এবং অন্য দু-একটি ব্লগে কিছু লেখা প্রকাশিত হলেও পরবর্তীতে কিছু কিছু লেখা আমি আবার সম্পাদনা করেছি। ফলে ইস্টিশন এবং সামহোয়্যার ইন ব্লগের লেখাই আমার চূড়ান্ত সম্পাদিত লেখা। এই দুটি ব্লগের বাইরে অন্যসব লেখা আমি প্রত্যাহার করছি। মিশু মিলন ঢাকা। ৯ এপ্রিল, ২০১৯।
তিন
আজকালকার ছেলেমেয়েদের সঙ্গে কথা হলে আমি তাদেরকে বলি- অন্ধভাবে বাবা-মায়ের কথা শুনো না, জীবনটা তোমার নিজের, তাই নিজের বিবেক-বুদ্ধি দিয়ে বিচার করে যা ভালো মনে করবে, তাই করবে। বাবা-মা সবসময়ই সন্তানের ভালো চায়, কিন্তু তারা ভালো চায় তাদের মতো করে। তাদের স্বল্প পরিসরের চেনা-জানা, সুবিধা, স্বচ্ছন্দ গণ্ডির মধ্যেই তারা সন্তানের ভালো চায়। কিন্তু তাদের স্বচ্ছন্দ গণ্ডির বাইরে বিচরণ করলেও যে সন্তানের ভালো হতে পারে অনেক সময় তারা তা বুঝতে পারেন না, বুঝতে চানও না। সন্তান বাবা-মায়ের স্বচ্ছন্দ গণ্ডির বাইরে যেতে চাইলেই বাবা-মা বাধা দেন, সন্তানের ভবিষ্যতের কথা ভেবে তারা শঙ্কিত হন। একবার ভাবুন তো, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর যদি মায়ের কথা শুনতেন, তাহলে কি তিনি বিধবা বিবাহের পক্ষে লড়াই করতে পারতেন? অতগুলো মেয়েদের স্কুল তৈরি করতে পারতেন? পারতেন না। মায়ের কথা শুনলে তিনি ঈশ্বর চন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়-ই থাকতেন, বাঙালি জাতি একজন ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগরকে হারতো। কিংবা রবীন্দ্রনাথের কথাই ধরুন, রবীন্দ্রনাথকে ব্যারিস্টারি পড়তে বিলেতে পাঠিয়েছিলেন পিতা দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর, কিন্তু রবীন্দ্রনাথ ব্যারিস্টারি না পড়ে ফিরে এসেছিলেন। রবীন্দ্রনাথ যদি দেশে ফিরে না এসে ব্যারিস্টারি পড়তেন, তাহলে হয়ত আমরা আজকের এই বহুমুখি প্রতিভার রবীন্দ্রনাথকে পেতাম না।
তাই বাবা-মা সন্তানের ভালো চান একথা ঠিক, কিন্তু কখনো কখনো বাবা-মায়ের অবাধ্য হবার প্রয়োজনও আছে। সেটা আমি গভীরভাবে উপলব্ধি করেছি আমার বিয়ের পর বাবা-মায়ের পছন্দ করা পুত্রবধূর জেদের আঁচে পুড়তে পুড়তে! বাবা-মা চিরকাল বেঁচে থাকেন না, আমার বাবা-মাও থাকেননি, কিন্তু তাদের বাধ্য সন্তান হবার মূল্য আমাকে চুকোতে হয়েছে বিবাহিত জীবনের প্রায় প্রতিটি দিন।
কোনো মানুষকে যদি অর্থ ও ক্ষমতার দম্ভ প্রবলভাবে গ্রাস করে, তাহলে সেই মানুষের মধ্যে তীব্রভাবে জেগে ওঠে আমিত্ব। তার কথাবার্তা-চালচলন সবকিছুর মধ্যেই প্রকটভাবে প্রকাশ পায় আমিভাব। সারাক্ষণ তার মধ্যে মন্ত্রের মতো জপিত হয় আমি আমি! সব ব্যাপারে, সব জায়গায় নিজেকে সে মূখ্য মনে করে এবং অন্যকে নিয়ন্ত্রণ করতে চায়। নিজে যা করতে ভালোবাসে, নিজে যা পছন্দ করে তা অন্যের ওপর চাপিয়ে দেয়। এই ধরনের মানুষ না নিজে সুখী হতে পারে, না কাছের মানুষদের সুখে থাকতে দেয়। এই জায়গায় আমার বাবা আর তপতীর মধ্যে অনেক মিল ছিল! দুজনের মধ্যেই প্রবলভাবে ছিল- আমিভাব।
শৈশব থেকেই তপতী অর্থ আর ক্ষমতার মধ্যে বড় হয়েছিল, কিন্তু এসবের সঠিক ব্যবহার সম্পর্কে কেউ ওকে সু-শিক্ষা দেয়নি। পিতা-মাতার সামর্থ থাকায় যখন যা চেয়েছে, সে পেয়েছে। সে দেখেছে যে- সে যখনই যা চেয়ে জেদ ধরে, তখনই তা পায়। কিন্তু তার বন্ধুরা তার মতো করে পায় না। সে গর্বিত হয়ে তার প্রাপ্য বস্তু নিয়ে বন্ধুদের সামনে জাহির করেছে, আর নিজেকে বন্ধুদের চেয়ে আলাদা, বন্ধুদের মধ্যে সেরা ভাবতে শিখেছে। বাবা-মায়ের একমাত্র মেয়ে, আদরের দুলালী হওয়ায় তার নানান ধরনের আদিখ্যেতা বাবা-মা আরও উস্কে দিয়েছেন। কেউ তাকে বোঝায়নি যে- তোমার অনেক কিছু আছে, কিন্তু তোমার বন্ধুদের নেই, তুমি তোমার সেই অনেক কিছু বন্ধুদের নিকট জাহির কোরো না, তাতে বন্ধুদের খারাপ লাগতে পারে, কোনো বন্ধু হীনমন্যতায় ভুগতে পারে! এই রকম ছোট ছোট নানা বিষয় একত্রিত হয়ে তপতীর ভেতরে মহীরুহের মতো এক আমিত্বের জন্ম হয়। এই আমিত্ব ওর মুক্তির স্বাদ বিনষ্ট করে ওকে এক সংকীর্ণ বৃত্তে বন্দী করে ফেলে, কিন্তু তা সে বুঝতে পারেনি কখনো। বোঝার মতো বোধগম্যতা তার ছিল না। আর জীবনের একটা পর্যায় থেকে তাকে বোঝানোর সাধ্যও কারো ছিল না।
তপতীকে বাসায় নিয়ে আসার পরের মাসেই তিনরুমের একটা বড় বাসায় উঠলাম। ওর আদেশ মতো নতুন বাসা সাজিয়ে তুলতে অনেক কিছু কিনতে হলো। আমার সপ্তায় সপ্তায় বাড়ি যাওয়া বন্ধ হয়ে গেল। প্রতি সপ্তায় দূরের কথা, মাসে একবার বাড়িতে যেতেও রাজি নয় তপতী। আবার ওকে একা বাসায় রেখে আমিও বাড়ি যেতে পারি না। তিন-চার মাস পর পর বাড়িতে যেতাম তপতীকে নিয়ে। তিন-চার মাসের এই ব্যবধানে আমার আর বাড়ির মানুষদের মাঝে একটা অদৃশ্য আগল গড়ে উঠেছিল, সেটা আমি উপলব্ধি করতে পারতাম। আমি সেই আগল তুলে দেবার চেষ্টা করলেও বাড়ির মানুষেরা তাদের আচরণে আগলটা রেখে দিত। আমার কষ্ট হতো খুব।
বাসার বাজার করা থেকে শুরু করে বাইরে হাঁটতে যাওয়া, সব ব্যাপারে তপতী আমাকে নিয়ন্ত্রণ করতে চাইতো। যদি ওর কথা মতো সব কাজ করতাম, তাহলেই সংসারে শান্তি, ওর কথার ব্যত্যয় হলেই অশান্তি। কিন্তু আমি তো একটা আলাদা মানুষ, আমার আলাদা সত্ত্বা, আমার তো কিছু পছন্দ-অপছন্দ আছে, যা প্রত্যেক মানুষেরই থাকে, থাকা উচিতও। কিন্তু আমার পক্ষে স্বাধীনভাবে কিছু করা কঠিন হয়ে ওঠে। ফলে বাধ্য হয়ে অনেক ক্ষেত্রে আমি তপতীকে মিথ্যা বলতাম, বিশেষত বাড়ির বিষয়ে আমি অনেক মিথ্যা বলতাম ওকে। শান্তি বজায় রাখতে এটা আমায় করতে হতো। মিথ্যা বলার অভ্যাস আমার আগে না থাকলেও চেষ্টা করে মিথ্যা বলতে বলতে একটা সময় আমি যেন মিথ্যাকথার শিল্পী হয়ে উঠি! মিথ্যা শুধু তপতীর কাছেই বলতাম, অন্য কারো কাছে নয়।
তখন ফরিদপুর শহরে থাকি, আত্মীয়-স্বজন কিংবা গ্রামের লোকজন ডাক্তার দেখাতে গেলে আমাদের বাসায় উঠত, এক-দুদিন থেকে ডাক্তার দেখানো হলে তারা চলে যেতো। একবার এক আত্মীয়রা চলে যেতেই আমার ওপর আদেশ জারি করল তপতী, ‘এত আত্মীয়-স্বজনের ভাত রান্না করতে পারব না। বাসায় যেন আর কোনো আত্মীয়-স্বজন আর তোমার ওইসব পাড়া-পড়শি না আসে।’
বললাম, ‘এটা কেমন কথা বলছ তুমি! বাসায় যারা আসে তারা তো সাধ করে বেড়াতে আসে না, চিকিৎসা করাতে আসে। তাদের থাকার মতো অন্য কোনো জায়গা নেই বলেই আমাদের বাসায় আসে।’
‘আমি এত কিছু জানি না। আমি বাসায় এত ঝামেলা পোহাতে পারব না।’
কী বিপদ, আমি তাদেরকে বাসায় আসতে কিভাবে নিষেধ করব! যারা বাসায় আসত তারা বাবার কাছ থেকে ঠিকানা নিয়ে সরাসরি বাসায় চলে আসত, তখন তো আর হাতে হাতে মোবাইল ছিল না যে ফোন করে আসবে। বাসায় আসা মানুষকে কী বাসা থেকে তাড়ানো যায়!
বললাম, ‘আমি কাউকে আসতে নিষেধ করতে পারব না।’
এই বিষয়টি নিয়ে আমার সঙ্গে যাচ্ছেতাই ব্যবহার করেছে তপতী! এরপর থেকে যারাই বাসায় আসত তাদের সঙ্গে সে এমন শীতল ব্যবহার আর ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে এমন কথা বলত যে তারা আর দ্বিতীয়বার আমার বাসায় আসত না।
একবার বাড়িতে গিয়ে দুপুরের খাওয়া শেষ করে উঠতে যাব এমন সময় মা আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘তোর বাসায় মানুষ গেলে বৌমা নাকি খারাপ ব্যবহার করে?’
আমি মায়ের দিকে তাকিয়ে রইলাম কিছুক্ষণ, কী উত্তর দেব মাকে? তপতীর পক্ষে মিথ্যে কথা বানিয়ে বানিয়ে বলব? মায়ের কাছে আমি কখনো মিথ্যে কথা বলিনি, মায়েদের কাছে সন্তান মিথ্যে বললেও মায়েরা সন্তানের মুখ দেখে সত্যটা বুঝে নিতে পারেন। মায়েরা হয়ত সত্যটা বুঝেও স্নেহবশত সন্তানের কাছে না বোঝার ভান করেন, সন্তানকে বিব্রত করতে চান না।
আমি মাথা নিচু করে শূন্য থালার দিকে তাকিয়ে বললাম, ‘তুমি তো সবই জানো মা।’
মা আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন, ‘তোর জীবনডা আমরা নষ্ট করে দিলাম বাবা।’
মুখ তুলে মায়ের দিকে তাকিয়ে দেখি- তার চোখ ছলছল করছে। মায়ের জল ছলছল চোখ আমাকেও সংক্রামিত করল।
কয়েক মাস যাবৎ বাসায় মানুষ যাওয়া কমে গিয়েছিল, মায়ের কথা শুনে বুঝলাম যে কেন আগের মতো মানুষ আর আমাদের বাসায় যায় না। এলাকায় রটে গিয়েছিল যে- অমিতাভের বউ একটা দজ্জাল, আর অমিতাভ একটা মেন্দামার্কা ছাওয়াল, বউ কন্ট্রোল করতে পারে না!
এর কিছুদিন বাদে তপতী এমন এক কাণ্ড করে বসল যে এর চেয়ে ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে আমার শরীরটা ছিন্নভিন্ন করে ফেললেও আমি এতটা কষ্ট পেতাম না! আমার আপন ছোট মাসি তার নাতিছেলেকে সঙ্গে নিয়ে এসেছিলেন আমাদের বাসায়, ডাক্তার দেখাতেই এসেছিলেন, ছিলেন চারদিন। মাসি প্রথম আমাদের বাসায় এসেছেন, তাকে একটা শাড়ি না দিলে কেমন দেখায়, তাই মাসির জন্য একটা শাড়ি আর আমার সেই ভাতিজার জন্য একটা শার্ট কিনে আনলাম।
তপতীকে শাড়ি দেখাতেই ও হাতে নিয়ে দেখার পর শাড়িটা ছুড়ে ফেলে দিল ঘরের এক কোনে। আমার বিরুদ্ধে ওর অভিযোগ- আমি কেন এত দামী শাড়ি এনেছি মাসির জন্য, কেন শাড়ি কেনার আগে ওকে বলিনি। ওর বাবার বাড়ির কোনো আত্মীয়-স্বজন এলে আমি নাকি এত দামি শাড়ি দিই না! মুখে যা এলো তাই বলল আমাকে, আমি হাত জোড় করে ওকে চুপ করতে বললাম, কিন্তু ওকে থামায় সাধ্য কার? মাসি পাশের ঘর থেকে সবই শুনেছেন এবং শাড়ি ছুড়ে ফেলার ব্যাপারটিও বুঝতে পেরেছেন। এরপর যে সময়টুকু মাসি বাসায় ছিলেন, তপতী মুখ ভার করে ছিল, মাসির সঙ্গে ভালোমতো কথা পর্যন্ত বলেনি।
পরদিন মাসি যাবার আগে শাড়িটি মাসির দিকে এগিয়ে দিয়ে বললাম, ‘মাসি, এটা পরে যাও।’
মাসি আমার মুখের দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘আমি নতুন শাড়ি না ধুয়ে পরবার পারিনে রে বাবা, খর খর করে।’
আমার বুঝতে অসুবিধা হলো না যে এটা মাসির শাড়ি না নেবার অজুহাত। বললাম, ‘মাসি অনেকবার তুমি আমাদের বাড়িতে বেড়াতে এসে নতুন শাড়ি পরে বাড়ি গেছো।’
আমার বাবা কৃপণ হলেও আমার পিসি আর মাসিরা কোনোদিন আমাদের বাড়িতে এসে পুরোনো শাড়ি পরে ফিরে যাননি, মা তাদেরকে নতুন শাড়ি পরিয়ে দিয়েছেন। এসব ক্ষেত্রে অবশ্য মায়ের অবদানই বেশি ছিল। কিন্তু বাবা কোনোদিন নিষেধ করেননি, টাকা তিনিই দিয়েছেন।
মাসি বললেন, ‘আমার কী আর সেই বয়স আছেরে বাবা, এহন পুরোন শাড়িই সামলাবার পারিনে। শাড়ি থুয়ে দে ঘরে, কেউ আসলি দিস।’
‘মাসি, আমি জানি যে তুমি কেন এই শাড়ি নিতে চাচ্ছো না।’ তারপর মাসির পা জড়িয়ে ধরে বললাম, ‘তোমার পায়ে পড়ি মাসি, তুমি এই শাড়ি পরে যাও, আর যদি না পরে যাও, তাইলে জীবনে আর আমার মুখ দ্যাখবা না।’
মাসি আমার বাহু ধরে টেনে তুলে আমার বুকে মাথা রেখে আমাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেললেন। আমার চোখের জলও বাঁধ ভাঙল। শৈশবে মায়ের চেয়ে মাসি-পিসিদের কোলেই আমি বেশি থাকতাম। আমার পিঠোপিঠি ভাই এবং তারপর বোন থাকায়, মাকে ওদের সামলাতে হতো। শৈশব-বাল্যকালে আমার ঘন ঘন অসুখ হতো, কতবার যে আমাকে কোল বদল করে হাঁটতে হাঁটতে মা আর আমার এই মাসি আমাকে নিয়ে দুই মাইল দূরের ডাক্তারের কাছে গেছেন তার ঠিক নেই! কোলে করে মেলায় নিয়ে গিয়ে মাসি একবার আমাকে একটা কাঠের তিন চাকার গাড়ি কিনে দিয়েছিলেন। আমার সে কী আনন্দ, গাড়িটা বিছানায় নিয়ে ঘুমাতাম, কয়েকটা দিন গাড়ির ঘোরেই কেটে গিয়েছিল আমার! পরবর্তী জীবনে ঢাকায় বসবাসকালে আমি একটা সেকেন্ডহ্যান্ড প্রাইভেট কার কিনেছিলাম, তারপর সেটা বদলে আরেকটা গাড়ি কিনি, কিন্তু সেই তিনচাকার গাড়ি পাওয়ার যে আনন্দ, তা আমাকে প্রাইভেট কার দিতে পারেনি!
মাসির কোলে-পিঠে চড়ে সেই ছোট্ট অমিতাভ যখন বড় হয়েছি, চাকরি করছি, তখন আমার পছন্দ মতো একটা শাড়ি মাসিকে উপহার দিতে ইচ্ছে করবে না? এই রকম একশো শাড়ি কিনে দিলেও মাসির কাছে আমার শৈশবের সেই ঋণ শোধ হবে? কখনোই হবে না। অথচ সেই মাসিকে আমার বাসায় এসে কাঁদতে হলো, আনন্দের কান্না নয়, তীব্র অপমানের। মাসি এই ঘটনা কোনোদিন কাউকে বলেননি, এমনকি আমার মাকেও নয়, বললে আমি কোনো না কোনোভাবে ঠিকই বুঝতে পারতাম, আসলে মাসি অন্যদের কাছে তার আদরের অমিতাভকে ছোট করতে চাননি। এরপর মাসি আরো অনেকবার ফরিদপুর গিয়েছেন ডাক্তার দেখাতে, আমি কেবল শুনেছি, কেননা আর কখনোই মাসি আমার বাসায় আসেননি। মাসি নিরামিষভোজী, তাই কখনো কোনো হোটেলে কিছু খেতেন না। সকালে ফরিদপুরে আসতেন, ডাক্তার দেখিয়ে ফিরে যেতেন বিকেলে। একই শহরে আমি থাকতেও আমার মাসিকে হয়ত দুপুরে অভুক্ত থেকে কিংবা কলা-পাউরুটি খেয়ে গ্রামে ফিরতে হতো। এসব ভাবলেই ব্যথায় বুকটা ভারী হয়ে উঠত আমার। আমি নিজে কোনো অপরাধ না করলেও স্বজনের কাছে আমার অপরাধের বোঝা ক্রমাগত ভারী হয়েছে এমনিভাবে, এই বোঝা বড় যন্ত্রণার!
(চলবে.....)
০৪ ঠা আগস্ট, ২০২৩ রাত ২:২০
মিশু মিলন বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ।
©somewhere in net ltd.
১| ০৪ ঠা আগস্ট, ২০২৩ রাত ১:০৭
রাজীব নুর বলেছেন: সুন্দর ঝরঝরে লেখা।