নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি বর্তমানে ইস্টিশন এবং সামহোয়্যার ইন ব্লগে লিখি। আমার সকল লেখা আমি এই দুটি ব্লগেই সংরক্ষণ করে রাখতে চাই। এই দুটি ব্লগের বাইরে অনলাইন পোর্টাল, লিটল ম্যাগাজিন এবং অন্য দু-একটি ব্লগে কিছু লেখা প্রকাশিত হলেও পরবর্তীতে কিছু কিছু লেখা আমি আবার সম্পাদনা করেছি। ফলে ইস্টিশন এবং সামহোয়্যার ইন ব্লগের লেখাই আমার চূড়ান্ত সম্পাদিত লেখা। এই দুটি ব্লগের বাইরে অন্যসব লেখা আমি প্রত্যাহার করছি। মিশু মিলন ঢাকা। ৯ এপ্রিল, ২০১৯।
চৌদ্দ
প্রায় প্রতি বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বাঁধন আসে গোধূলিবাড়ি’তে, চলে যায় শনিবার বিকেলে। ও এলেই সব রুমে গিয়ে সবার খোঁজখবর নেয়, কার শরীর কেমন, ওষুধ ঠিক মতো খাচ্ছে কি না, কারো কিছু প্রয়োজন কি না তা জানতে চায়। সেদিন সবার রুমে রুমে গিয়ে অনুরোধ করলো রাতে খাবার পর আমরা যেন সবাই হলরুমে যাই, সবার সঙ্গে জরুরি কথা বলতে চায়। কী জরুরি কথা কে জানে, গোধূলিবাড়ি বন্ধ হয়ে যাবে নাকি? ওর কি ফান্ড পেতে সমস্যা হচ্ছে? এখানে বেশ আনন্দেই কাটছে দিন, গোধূলিবাড়ি বন্ধ হয়ে গেলে আবার কি ধানমন্ডির ফ্ল্যাটে খাঁচাবন্দী পাখির মতো জীবনে ফিরতে হবে? যাইহোক, আমার মনে এরকম কুচিন্তা এলেও খাবার পর গেলাম হলরুমে। হলরুমে কোনো চেয়ার বা বেঞ্চ নেই, কার্পেট পাতা, আমরা সবাই যে যার মতো কার্পেটে বসে পড়লাম। সবাই এলে বাঁধন বলল, ‘একটা নতুন উদ্যোগ নিতে চাচ্ছি, তার জন্য আপনাদের সহযোগিতা প্রয়োজন। এই উদ্যোগের বাস্তবায়ন নির্ভর করছে আপনাদের ওপর। আপনারা চাইলে হবে, না চাইলে হবে না। আমি বিশ্বাস করি যে-কোনো উদ্যোগের জন্য বয়স কোনো বাধা নয়, আমৃত্যু স্বপ্ন দেখা যায়, আমৃত্যু নতুন নতুন বিষয়ের সঙ্গে নিজেকে যুক্ত করা যায়।’
বীরেন রোজারিও বললেন, ‘আবার কি ফুটবল খেলতে হবে?’
সবাই হেসে উঠলেন। বাঁধনও হেসে বলল, ‘খেলতে হবে কাকু, আপনি তো ভালো মিডফিল্ডার।’
বীরেন রোজারিও উৎসাহ পেয়ে বললেন, ‘শোনো, যৌবনকালে আমি ফুটবল তো বটেই, হাডুডুও ভালো খেলতে পারতাম। গাসসির দিন সকালে আমার খেলা দেখার জন্য মানুষ হুমরি খেয়ে পড়ত আমাদের গ্রামের ছোটন মেম্বারের উঠোনে। দু-পায়ে দুটোকে টেনে নিয়ে নিজের কোর্টে ফিরতে পারতাম! দ্যাখো না, এখনো কতগুলো ভাত খাই!’
সবাই হেসে উঠলেন। বাঁধন বলল, ‘তাই নাকি! তাহলে তো হাডুডু’র একটা ম্যাচ আয়োজন করে দেখতেই হয়!’
হাসি-তামাশা, পুরোনোকালের গল্প চলল কিছুক্ষণ। তারপর বাঁধন আসল কথায় ফিরল, ‘গোধূলিবাড়ি’তে আপনারা যারা আছেন, প্রায় প্রত্যেকেই প্রতিভাবান, প্রত্যেকেই কোনো না কোনো কাজে দক্ষ। যেমন- বেণু মাসিমা, আলপনা মাসিমা আর পরান কাকু, ভালো গান গাইতে পারেন। রাবেয়া খালা খুব সুন্দর কাঁথা সেলাই করতে পারেন। আয়েশা খালা ভালো রান্না পারেন, লক্ষ্মী খালা বিভিন্ন প্রকার আচার বানাতে পারেন। মিনতি মাসিমা আলপনা আঁকায় দক্ষ। হারুন চাচা দক্ষ শরীরচর্চায়, অমিতাভ কাকুর আগ্রহ গাছপালার পরিচর্যায়, তাছাড়া তিনি ভালো কবিতা আবৃত্তি করতে পারেন। ইয়াসিন চাচা ফটোগ্রাফিতে দূর্দান্ত। এছাড়া সব নারী সদস্যই কমবেশি ভালো রান্না করতে পারেন। আমার সৌভাগ্য যে আমি আপনাদের মতো প্রতিভাবান মানুষদের সেবা করার সুযোগ পাচ্ছি। তাই আমি চাই আপনাদের এই প্রতিভাকে মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে। আপনাদের যদি কারো আপত্তি না থাকে তাহলে আমরা একটা ইউটিউব চ্যানেল আর একটা ফেইসবুক পেজ খুলতে পারি, আপনাদের এইসব কর্মকাণ্ড ভিডিও করে আপলোড করতে পারি সেখানে। এতে করে আপনাদের বয়সী যারা আছেন, শুধু আপনাদের বয়সী মানুষ নয়, আমি মনে করি অনেক তরুণও আপনাদের দেখে উদ্বুদ্ধ হবে, নতুন কিছু করতে উৎসাহ পাবে। ইউটিউব চ্যানেল এবং ফেইসবুক থেকে আমরা যদি টাকা রোজগার করতে পারি, তাহলে সেই টাকা আমরা ব্যয় করতে পারব গোধূলিবাড়ি’র উন্নয়নে। আর টাকা রোজগার করতে না পারলেও কোনো অসুবিধা নেই, আপনাদের কাজগুলো ইউটিউব-ফেইসবুকে থাকবে, আপনাদের দেখে কেউ কেউ উদ্বুদ্ধ হবে, এই-বা কম কী। তবে আমি আশাবাদী যে আমরা আমাদের চ্যানেল থেকে টাকা রোজগার করতে পারব। কেননা কন্টেন্ট বানানোর মতো যথেষ্ট প্রতিভা যেমনি আপনাদের আছে, তেমনি আছে বিষয়বৈচিত্র্য। এখন আপনাদের মতামত জানতে চাই।’
আমি হাততালি দিয়ে বললাম, ‘অসাধারণ আইডিয়া বাবা! এতে আমরাও ব্যস্ত থাকতে পারব। মন ভালো থাকবে। নতুন অভিজ্ঞতা হবে আমাদের। আমাকে তুই যে দায়িত্ব দিবি, আমি তাই-ই পালন করতে রাজি।’
গোধূলিবাড়ি’তে আসার পর থেকে বাঁধনকে আমি ‘বাবা’ সম্বোধন করি, আর ‘তুমি’র বদলে ‘তুই’। বাবার মতোই ও আমাদের মাথার ওপর ছায়া দিয়ে রেখেছে।
বেণুদি বললেন, ‘খুবই ভালো উদ্যোগ, আমি যত খুশি গান গেয়ে দেব, আলপনা আর পরানদাকে দিয়েও গাইয়ে নেব।’
বাঁধন বলল, ‘তাহলে আমরা এগোবো?’
সবাই সম্মতি দিলেন। আয়েশা বেগম বললেন, ‘আমি তো এসব ইউটিউব-ফেসবুক বুঝিনে, কিন্তু রান্নায় আমার কোনো ক্লান্তি নেই। আমি রেঁধে দিতে পারব।’
‘প্রতিদিন রান্না করতে হবে না খালা। সপ্তাহে খুব বেশি হলে দুটো পদ। কর্মীরা সব গুছিয়ে দেবে, আপনি শুধু রান্না করবেন আর কী কী উপাদান দিচ্ছেন সেগুলো বলবেন ক্যামেরার সামনে। পারবেন না?’ বলল বাঁধন।
‘তা পারব।’
বাঁধন আবার বলল, ‘বেশ আমরা তাহলে আগামীকাল থেকেই ভিডিও ধারণ শুরু করে দেব। আমি প্রত্যেক বৃহস্পতিবার চলে আসবো। শুক্র-শনি দুই দিন আমি ভিডিও করতে পারবো। বাকি দিনগুলোয় কিছু কিছু ভিডিও ধারণ আপনাদেরই করতে হবে। ইয়াসিন কাকু যেহেতু ভালো ফটোগ্রাফার, তাই ভিডিও ধারণের দায়িত্ব আপনি নিলেই ভালো হয়।’
ইয়াসিন শেখ বললেন, ‘আমি রাজি। এতদিনে একটা মনের মতো কাজ পাওয়া গেল!’
বাঁধন বলল, ‘গান বাদে অন্যসব পর্বে, যেমন- রান্না করা, আলপনা আঁকা, আচার তৈরি ইত্যাদি পর্বে একজন উপস্থাপক থাকবেন। তিনি রন্ধনশিল্পী বা আলপনাশিল্পীর সঙ্গে দর্শকদের পরিচয় করিয়ে দেবেন এবং শিল্পীর সঙ্গে কথপোকথন চালাবেন। উপস্থাপনার দায়িত্ব আমি, অমিতাভ কাকু আর আলপনা মাসিমা সামলাবো। একেক পর্ব একেকজন উপস্থাপনা করব।’
আমি বললাম, ‘কোনো অসুবিধা নেই, আমি পারব।’
আলপনাও সম্মতি জানালেন উপস্থাপনার ব্যাপারে।
বাঁধন বলল, ‘আগামীকাল সকালে শরীরচর্চার আর বিকেলে বেণু মাসিমা, আলপনা মাসিমা ও পরান কাকার একটা করে গানের ভিডিও ধারণ করবো। আপনারা গান নির্বাচন করে রাখুন। গানের ভিডিও প্রত্যেক সপ্তাহেই ধারণ করা হবে। আয়েশা খালা দুটো রান্নার পদ ঠিক করে ফেলুন, পরশুদিন রান্নার ভিডিও ধারণ করব। বাজার থেকে কী কী আনতে হবে ম্যানেজারকে বলে দেবেন। লক্ষ্মী খালা, আপনি আচার তৈরির জন্য আম, গুড় এবং আরও যা যা লাগে ম্যানেজারকে বলে দেবেন। তারপর কর্মীদের সহায়তায় আচারের জন্য আম প্রস্তুত করবেন আর ইয়াসিন কাকু সব ভিডিও করে রাখবেন। আপাতত আমাদের পরিকল্পনা এটাই, এগুলো দিয়েই শুরু করি, তারপর আস্তে আস্তে বাকি পরিকল্পনা ঠিক করব। আর আপনাদের কারো মাথায় কোনো আইডিয়া আসলে আমাকে বলারও দরকার নেই, নিজেদের মতো করে ভিডিও করে আমাকে দেবেন।’
বাঁধনের এই উদ্যোগ আমাকে এতটাই উদ্দীপ্ত করল যে অনেক রাত পর্যন্ত আমার চোখে ঘুম এলো না, শুয়ে শুয়ে পরানের সঙ্গে আলাপ করতে লাগলাম ইউটিউব চ্যানেল নিয়ে। কিভাবে উপস্থাপন করব, বাচনভঙ্গী কেমন হবে এসব নিয়েও ভাবলাম।
পরিকল্পনা মতো পরের দু-দিন ভিডিও ধারণ করে নিয়ে গেল বাঁধন। ঢাকায় বসেই সম্পাদনা করে ফেলল, আর পোস্টার তৈরি করে ফেইসবুক পেইজে প্রচার শুরু করল। পরের শুক্রবার সন্ধ্যা সাতটায় কেক কেটে আমাদের ইউটিউব চ্যানেলের যাত্রা শুরু হলো। প্রথম ভিডিও আপলোড করা হলো শাহ আব্দুল করিমের লেখা আর পরান বাউলের গাওয়া গান-
‘কেনো পিরিতি বাড়াইলা রে বন্ধু
ছেড়ে যাইবা যদি।’
(চলবে......)
২২ শে আগস্ট, ২০২৩ দুপুর ২:১৮
মিশু মিলন বলেছেন: আমার যোগাযোগের অভাব, বিচ্ছিন্নতা। অনেক ধন্যবাদ।
©somewhere in net ltd.
১| ২২ শে আগস্ট, ২০২৩ দুপুর ২:১০
রাজীব নুর বলেছেন: সুন্দর একটা ধাবাহিক। অথচ লোকজন পড়ছে না, মন্তব্য করছে না। এর কারন কি?