নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মিশু মিলন

মিশু মিলন

আমি বর্তমানে ইস্টিশন এবং সামহোয়্যার ইন ব্লগে লিখি। আমার সকল লেখা আমি এই দুটি ব্লগেই সংরক্ষণ করে রাখতে চাই। এই দুটি ব্লগের বাইরে অনলাইন পোর্টাল, লিটল ম্যাগাজিন এবং অন্য দু-একটি ব্লগে কিছু লেখা প্রকাশিত হলেও পরবর্তীতে কিছু কিছু লেখা আমি আবার সম্পাদনা করেছি। ফলে ইস্টিশন এবং সামহোয়্যার ইন ব্লগের লেখাই আমার চূড়ান্ত সম্পাদিত লেখা। এই দুটি ব্লগের বাইরে অন্যসব লেখা আমি প্রত্যাহার করছি। মিশু মিলন ঢাকা। ৯ এপ্রিল, ২০১৯।

মিশু মিলন › বিস্তারিত পোস্টঃ

সাইকেলে পথে পথে: শেরপুর থেকে বিরিশিরি

২৫ শে মার্চ, ২০২৫ রাত ১০:০৯




১৯ মার্চ শেরপুর শহর থেকে সাইকেল যাত্রা শুরু, সীমান্ত সড়ক ধরে আশ্চর্য সুন্দর সব জনপদ আর বিচিত্র মানুষ দেখতে দেখতে ২৪ মার্চ রাতে যাত্রা শেষ হয় বিরিশিরিতে। ইচ্ছে ছিল টাঙ্গুয়া হাওরে শেষ করার। কিন্তু একটু গ্রামে যাওয়া দরকার, ক্যামেরার দুটো মেমোরি কার্ড শেষ আর নিজের বিছানাটাও কেমন যেন টানছিল, তাই এবারের মতো যাত্রা শেষ করলাম। প্রথম দু-দিন খুব কষ্ট হচ্ছি, তারপর অভ্যস্ত হয়ে গেছি। কোনো ধরনের বিপদের সম্মুখীন হতে হয়নি। শুধু হোটেলের রুমে হাতের ধাক্কায় সাইকেলটা পড়ে গিয়ে মোবাইল স্ট্যান্ডটা ভেঙে যাওয়ায় খুব টেনশনে পড়ে গিয়েছিলাম। কারণ, বারবার পকেট থেকে মোবাইল বের করে গুগল ম্যাপ দেখলে সময়ক্ষেপণ হয়। পরদিন খুঁজতে খুঁজতে নালিতাবাড়িতে মোবাইল স্ট্যান্ড পেয়েছিলাম।

বিশ বছর পর গজনীতে গিয়ে মনে পড়ছিল বন্ধু ফুয়াদ, তানভীর, জাহাঙ্গীর, রনির কথা। ছাত্রজীবনে আমরা ঘুরতে গিয়েছিলাম। পাহাড়ের দিকে একটা কুয়োর জলে তৃষ্ণা নিবারণ করেছিলাম। জনপদ বদলে গেছে অনেক, কুয়োটা খুঁজে পাইনি, সেই বাড়িও নয়।

কী যে অদ্ভুত সুন্দর এই দেশটা! দেশের দক্ষিণাঞ্চল সুন্দর, কিন্তু উত্তর-পূর্বাঞ্চল যেন মায়ায় জড়িয়ে রাখে! আমার খুব আফসোস হচ্ছিল- প্রকৃতি প্রদত্ত এই সৌন্ধর্য আমরা কাজে লাগাতে পারলাম না, পর্যটনের বিকাশ ঘটাতে পারলাম না। মেঘালয়ে লক্ষ লক্ষ বিদেশী পর্যটক আসে, তাদের একটা অংশ আমাদের এখানেও আসত, যদি আমরা সেই পরিবেশ তৈরি করতে পারতাম। আমার কেবলই মনে হচ্ছিল- আহারে, মৌলভীবাজার থেকে পঞ্চগড় পর্যন্ত সীমান্ত সংলগ্ন একটা ট্রেনলাইন, পর্যাপ্ত হোটেল এবং নিরাপদ পরিবেশ যদি থাকত, লক্ষ লক্ষ মানুষ আসত এই পথের সৌন্ধর্য দেখতে, নানা ভাষার নানা জাতির মানুষ ও সংস্কৃতি দেখতে!

উল্টো আমরা পর্যটনের জন্য প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেছি। একটার পর একটা, মহামারির মতো মাদ্রাসা! একটা যদি স্কুল দেখি ৮-১০টা দেখি মাদ্রাসা। ভয়ংকর অবস্থা! জনমানবহীন শালবনের মধ্যেও গাছে গাছে লেখা আল্লাহু আকবার, আলহামদুলিল্লাহ এবং জীবনযাপনের নানা তরিকা। এই বৈরি পরিবেশে পর্যটনের বিকাশ সম্ভব নয়। কারণ পর্যটনের জন্য, স্বাধীনভাবে চলাফেরার জন্য মাদ্রাসার জনগোষ্ঠী অনিরাপদ। প্রকৃতি ও মানবজাতির জন্যও। মনে আছে কয়েক বছর আগে কক্সবাজারে এক হোটেল ম্যানেজার অথবা মালিককে উপর থেকে ছুঁড়ে ফেলে মেরে ফেলেছিল।

গহীন অরণ্যে বাড়ি চোখে পড়ে না, অথচ সেখানেও বন কেটে রাস্তার পাশে গড়ে উঠেছে মসজিদ। অন্যদিকে আদিবাসীদের বসতি সংকুচিত করা হয়, কখনও কখনও উচ্ছেদ। শেরপুরের কালাকুমায় মাদ্রাসার দুটো বাচ্চা ছেলের সাথে কথা বলেছি, এখনও কী নিষ্পাপ, কী সরল! আপনি ওদেরকে সাংস্কৃতিক পরিবেশে নিয়ে আসুন, ওরাই কেউ হয়ে উঠবে ভবিষ্যতের এস এম সুলতান, ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ। ওরা কাঁচা মাটির মতো, আপনি পতুল গড়তে পারবেন, আবার গুলতির গুলিও বানাতে পারবেন। দুর্ভাগ্য ওদের, দূর্ভাগ্য জাতির, ওরা বড় হয়ে পুতুল নয়, গুলতির ভয়ংকর গুলি হয়ে উঠবে!

অথচ নানা জাতি-গোষ্ঠীর সমন্বয়ে এই অঞ্চলে কালচারাল হাব গড়ে উঠতে পারত। সেই সম্ভাবনার মৃত্যু হয়েছে। এখন তেমন কিছু করতে গেলে তৌহিদী জনতা হুঙ্কার ছাড়বে, অথচ তারা ধর্ষণ করবে, গোপনে ৫০১ এ যাবে।

রোজার মাসে কোথাও কোথাও খাবারের দোকান বন্ধ, কোথাও দোকানের সামনে পর্দা দেওয়া। আবার কোথাও উন্মুক্ত দোকানে বসে মানুষ খাচ্ছে, বিশেষত ছোট ছোট বাজারে। আমি বহুবার বাজারে দাঁড়িয়ে জল খেয়েছি, কখনও সামনে বসা কোনো মুরুব্বীকে বলেছি, কাকা, একটু জল খাই?

প্রত্যেকেই সম্মতি দিয়েছেন। আবার পরিস্থিতি বোঝার জন্য জিজ্ঞাসা না করেই খেয়েছি, কেউ কিছু বলেনি। কেবল একটা জায়গায় রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে কলা খাচ্ছিলাম, ‘এক কিশোর জোরে বলে উঠেছিল, রোজার মইদ্যে খাইতাছে।’

এই সাইকেল যাত্রায় ধুরন্ধর মানুষ যেমনি দেখেছি, তেমনি সুন্দর মনের মানুষও দেখেছি। এক দোকান থেকে জল কিনে পান করত করতে কথা বলছিলাম, তিন-চারজন মুরুব্বী বসা ছিল, সকলের মুখেই দাড়ি। আমি একা ঘুরতে গিয়েছি জেনে তারা বিস্ময় প্রকাশ করলেন। কিছুক্ষণ গল্প করে ভুলে জলের দাম না দিয়েই চলে আসছিলাম। সাইকেলের কাছে আসার পর আমার মনে পড়ে যে দাম দিইনি। ফিরে গিয়ে বললাম, ‘কাকা, দাম তো দিইনি। স্যরি আমি ভুলে গেছি। আপনি চাইবেন না!’

বললেন, ‘পানি-ই তো খাইছুইন।’

তিনি আমার কাছে জলের দাম চাইতে বিব্রতবোধ করেছেন, তাই চাননি। এইসব মানুষের জন্য চোখ ভিজে ওঠে। আসলে তৌহিদী জনতা নামক মানবাধিকার বিধ্বংসী জনগোষ্ঠীটি এই সাধারণ মানুষদেরকে ক্ষেপিয়ে তোলে। ওয়াজের মাধ্যমে এদের মধ্যে সাম্প্রদায়িকতার বিষ বপন করে। নইলে এরা মন্দির-মাজার ভাঙার মানুষ নয়। এখন এরা মোবাইলে ওয়াজ শোনে ঠিকই, কিন্তু এরা বেড়ে উঠেছে শাহ আবদুল করিম, আব্বাস উদ্দীনের গান শুনে। পরিকল্পিতিভাবে এদেরকে সংস্কৃতি থেকে বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। নিঃস্বার্থভাবে মানুষকে উপকার করার অন্য একটি ঘটনা ঘটেছে, তা পরে ভিডিওতে তুলে ধরব। কয়লাশ্রমিক সিরু মিয়াকে আমি কোনোদিন ভুলব না।

স্মরণীয় হয়ে থাকবে আমার এই সাইকেল যাত্রা। যাত্রাপথের সৌন্ধর্য ও অভিজ্ঞতার যৎকিঞ্চিত ক্যামেরায় ধারণ করা সম্ভব হয়েছে, সে-সব আস্তে আস্তে ইউটিউবে প্রকাশ করব। সাইকেল যাত্রার নেশা লেগে গেছে আমার, যাত্রা অব্যাহত থাকবে। নইলে যে সিরু মিয়াদের সাথে দেখা হবে না, কিশোর পাথরশ্রমিক কাউয়ুমদের সঙ্গে দেখা হবে না। কিংবা শেরপুরের হানিফ মোড়ের কাছে সরকারি গুচ্ছগ্রামের সেই চাচার সঙ্গে দেখা হবে না, সন্ধ্যা হওয়ায় যিনি তার ঘরে রাত্রিযাপনের আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন, ১৭ কিলোমিটার দূরের নালিতাবাড়িতে পৌঁছতে রাত হয়ে যাবে বলে!



ঢাকা
২৫ মার্চ, ২০২৫




মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৬ শে মার্চ, ২০২৫ সকাল ১০:২৪

রাজীব নুর বলেছেন: দারুন।

আমারও ইচ্ছা ক,অরে একটা সাইকেল নিয়ে পথে নামি। দূর দূরান্তে চলে যাই। অচেনা কোনো জায়গায়।

২৬ শে মার্চ, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৮

মিশু মিলন বলেছেন: নেমে পড়ুন। চলেন একসাথে ভ্রমণ করি।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.