নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মিশু মিলন

মিশু মিলন

আমি বর্তমানে ইস্টিশন এবং সামহোয়্যার ইন ব্লগে লিখি। আমার সকল লেখা আমি এই দুটি ব্লগেই সংরক্ষণ করে রাখতে চাই। এই দুটি ব্লগের বাইরে অনলাইন পোর্টাল, লিটল ম্যাগাজিন এবং অন্য দু-একটি ব্লগে কিছু লেখা প্রকাশিত হলেও পরবর্তীতে কিছু কিছু লেখা আমি আবার সম্পাদনা করেছি। ফলে ইস্টিশন এবং সামহোয়্যার ইন ব্লগের লেখাই আমার চূড়ান্ত সম্পাদিত লেখা। এই দুটি ব্লগের বাইরে অন্যসব লেখা আমি প্রত্যাহার করছি। মিশু মিলন ঢাকা। ৯ এপ্রিল, ২০১৯।

মিশু মিলন › বিস্তারিত পোস্টঃ

টোকাইদের রফিকুন নবীর ক্যানভাসেই মানায়, শিল্প-সাহিত্য সৃষ্টিতে কিংবা রাষ্ট্রক্ষমতায় নয়

১২ ই এপ্রিল, ২০২৫ ভোর ৫:১১

সাহিত্য, নাটক, সিনেমা, সংগীতকে আমি দেখি সিরিয়াস ধরনের কাজ হিসেবে। কারণ, এসব শিল্প মানুষের মানসপটে খুব প্রভাব ফেলে, একটা সমাজের চরিত্র গঠনে প্রভাব ফেলে। ফলে এসব শিল্পের সঙ্গে তাদেরই যুক্ত হওয়া উচিত যাদের নূন্যতম মূল্যবোধ আছে, সততা আছে, শিকড় ও সংস্কৃতি সম্পর্কে ধারণা আছে, ইতিহাস সচেতনতা আছে, সু-রুচি আছে। কিন্তু আমাদের দূর্ভাগ্য যে নব্বইয়ের দশক থেকে এসবের বিপরীত চরিত্রের লোকেরা আমাদের এই শিল্পমাধ্যমগুলোয় প্রভাব বিস্তার করতে থাকে। এদের মধ্যে অনেকে দেশ-বিদেশের রাশভারি ডিগ্রিধারীও আছে! আমাদের দেশে আবার রাশভারি ডিগ্রিধারীদের মনে করা হয় সর্বকাজের কাজী! কেউ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হলে বা রাশভারী ডিগ্রিধারী হলে আমাদের দেশের সাংবাদিক এবং আমজনতা ভাবে- তিনি পণ্ডিত মানুষ, তিনি যা করেন তাই-ই উৎকৃষ্ট। ফলে তার নিন্মমানের শিল্প-সাহিত্য নিয়ে হাইপ তোলা শুরু হয়। কিন্তু রাশভারী ডিগ্রি যে উন্নত শিল্প-সাহিত্যের মাপকাঠি নয়, এই বোধটা বিরাট সংখ্যাক লোকের মধ্যেই নেই! এই নির্বোধদের কারণে অনেক আগেই জন্ম হয়েছে সাহিত্যের হিরো আলমদের!

বাস্তবতা হলো- আমাদের শিল্প-সাহিত্যে যারা মহীরুহ, তাদের বেশিরভাগেরই রাশভারী ডিগ্রি নেই!

নব্বইয়ের দশকের আগে উপরে উল্লেখিত গুণের বিপরীত চরিত্রের লোকেরা শিল্প-মাধ্যমগুলোর সঙ্গে যুক্ত ছিল না তা নয়, ছিল, কিন্তু তারা কখনওই সামনের সারিতে এসে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারেনি, মিডিয়ার সামনে গলা উঁচু করে কথা বলতে পারেনি। এই প্রবণতা আংশিকভাবে শুরু হয় নব্বইয়ের দশকে, আর মহামারী আকার ধারণ করে এই শতকের প্রথম দশকে। আর এতে বিরাট ভূমিকা রাখে গণমাধ্যম, সামনে থেকে যার নেতৃত্ব দেয় প্রথম আলো। ভাঁড়ামী, চটুলতা, অসভ্যতা-অভব্যতাকে শিল্প হিসেবে প্রচার-প্রচারণা চালায়। নাখাল পাড়ার টোকাইটাকে নিয়ে হাইপ তোলে প্রথম আলো, চ্যানেল আই। পরে তাতে যুক্ত হয় অন্যান্য গণমাধ্যম।

আমি সিনেমা নিয়ে আলাপকালে আমার পরিচিত মহলে সবসময়ই বলেছি, ‘নাখালপাড়ার টোকাইটা সিনেমার গল্প নির্বাচন-ই শেখে নাই! নাটক-সিনেমার নামে সে ফাতরামি করতে আসছে।’

অল্প বয়সে অতিরিক্ত ডান্ডি ও গাঁজা সেবন করে নাখালপাড়া-কারওয়ান বাজারের বস্তি এলাকায় সে যে ধরনের ফাতরামি করে বেড়াত, সে-সব ফাতরামি খুব লঘু উপস্থাপনার মাধ্যমে নাটক-সিনেমায় তুলে ধরে। আর গণমাধ্যমগুলো হাইপ তোলে এইসব ফাতরামিকে নতুন দিনের নতুন মাত্রার শিল্প হিসেবে। হাইপ তোলা গণমাধ্যমের একটা রোগ! কখনও টাকার নেশায়, কখনও উপঢৌকনের নেশায় এবং আরও নানারকম নেশায় এই রোগ হয়। নিজে গণমাধ্যমকর্মী হিসেবে কাজ করে চোখের সামনে দেখেছি কিভাবে ফালতু বিষয় নিয়ে হাইপ তোলা হয়। দেখেছি জার্নালিজম থেকে পাস করা তথাকথিত বড় সাংবাদিকরা ভিউয়ের নেশায় হিরো আলম, সংগীত হন্তারক মাহফুজুর রহমান কিংবা নাখালপাড়ার টোকাইকে অতিথি করার উদগ্র বাসনায় কেমন ছটফট করে! আমি তো গণমাধ্যমের নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ের কেউ ছিলাম না, তাই কেবল দেখে যেতে হয়েছে, মনে মনে থু থু দিয়েছি তথাকথিত বড় সাংবাদিকদের রুচি আর জার্নালিজমের শিক্ষায়, কখনও কখনও সহকর্মীদের কাছে অসন্তুষ্টির কথা বলেছিও।

আজকের যে সামাজিক বিপর্যয়, তার দায় গণমাধ্যম এড়াতে পারে না। এই যে সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক জ্ঞানশূন্য একটা মস্তিষ্কবিকৃত প্রজন্ম গড়ে উঠল, এই প্রজন্ম গড়ে তোলার পিছনে গণমাধ্যমের বিরাট ভূমিকা আছে।

আমাদের শিল্প-সাহিত্য ও রাজনীতির ময়দানে টোকাইরা ঢুকে পড়েছিল অনেক আগেই, টোকাইদের সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছিল, কেউ আমলে নেয়নি, সবাই ভেবেছিল এরা নতুন দিনের আলোর দিশারী। আলোর দিশারী মনে করা টোকাইরা দিনে-দুপুরে ঘনঘোর অন্ধকার নামিয়ে এনেছে দেশে, শিল্প-সাহিত্য ও রাজনীতির ময়দান দখল করে এখন তাদের উন্মাদনার চূড়ান্ত রূপ দেখাচ্ছে।

কেবল একটা সংখ্যা হয়ে বাঁচা লোকেরা কিছুতেই বুঝতে চায় না যে- টোকাইদের রফিকুন নবীর ক্যানভাসেই মানায়, শিল্প-সাহিত্য সৃষ্টিতে কিংবা রাষ্ট্র ক্ষমতায় নয়।


১২ এপ্রিল, ২০২৫

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ১২ ই এপ্রিল, ২০২৫ সকাল ৯:১৬

রাজীব নুর বলেছেন: যুক্তিসঙ্গত লেখা।
আপনার সাথে একমত।

১৩ ই এপ্রিল, ২০২৫ রাত ১২:২৫

মিশু মিলন বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ।

২| ১২ ই এপ্রিল, ২০২৫ সকাল ৯:৫৪

কাঁউটাল বলেছেন: ঠিক বলেছেন। আসলে ক্ষমতায় মানায় শুধু লুটেরা হাউয়ামিলীগ এবং উহাদের দোসরদের।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.