![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আহ্ কী গণতন্ত্র!!!
সাংবিধানিক নাম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ। দেশের নামের সাথেই গণতন্ত্র’র ছোঁয়া আছে। আমার প্রশ্ন গণতন্ত্রের দোহাই দিয়ে যা হচ্ছে, আশলেই কি সেটা গণতন্ত্র?
গণতান্ত্রিক দেশে, দেশের প্রাপ্ত বয়স্ক জনগোষ্ঠীর সংখ্যা গরিষ্ঠদের সমর্থিত এক জন নেতা নির্বাচিত হবে। যিনি দেশের মানুষের সেবায় নিয়জিত থাকবেন, দেশের উন্নয়নে কাজ করবেন এবং দেশের ভাল মন্দের ভার গ্রহণ করবেন। গণতান্ত্রিক উপায়কে সরলই করন করলে এমনটাই বোঝায়।
তবে দেশের সংখ্যা গরিষ্ঠ জনগণ দেশ পরিচালনার দায়িত্ব কার হাতে তুলে দেবে, সেটা যাচাই বাছাই করার জন্য গণতান্ত্রিক দেশ গুলোয় ভো-টিং পদ্ধতি গ্রহণ করা হয়।
এখানে ভোট হল গণতন্ত্রর মূল ভিত্তি।
তাহলে আমরা ৫ জানুয়ারী, ২০১৪ কী দেখলাম? ২৮ এপ্রিলই বা কী দেখতে পেলাম?
আওয়ামীলীগ গণতন্ত্রর দোহায় দিয়ে, সংবিধানের দোহায় দিয়ে নির্বাচন করল, বি এন পি-এ নির্বাচনকে একতরফা, জনসমর্থন-হীন আখ্যা দিয়ে তা প্রতিহত করলো। এই নির্বাচন করা এবং প্রতিহত করার খেলায় ৫ জানুয়ারীর আগে ও পরে শত শত সাধারণ মানুষ মরলো। শুধু তফসিল ঘোষণার পর ৪১ দিনে মারা যায় ১২৩ জন। বাড়িতে বাড়িতে সামরিক অভিযান চল্লো, রাস্তা ঘাট কাটা হল, গাছ কাটা হল, যান বাহন পোড়ানো হল, স্কুল মাদ্রাসা পোড়ানো হল, সংখ্যালঘুদের বাড়িতে হামলা, ভাংচুর, লুটপাট চালানো হল। মামলা হামলা, আর হয়রানি করে জেলখানা মানুষে পরিপূর্ণ করা হল। গুম খুন, বন্দুক যুদ্ধের বলি হল অনেকে। আজো তা বহমান........
কথা হচ্ছে এতে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে কারা? সাধারণ মানুষ, আমরা। আমাদের ক্ষতিগ্রস্থ পরিবার গুলো প্রতিদিন গুমরে গুমরে কাঁদে। সৃষ্টীকর্তার কাছে বিচার দেয়, বিচার চায়। যাদের অধিকার আদায়ের কথা বলে এই দুই বড় দলের বিবাদ।
তারা যে করেই হোক আমাদের সেবা করবেনই...... কেননা, ৫ বছরের জন্য আমাদের ও দেশের সেবা করার সুযোগ পেলে, সম্পদ দ্বিগুণ করা যাবে। মাসে মাসে বিদেশ সফর করা যাবে। বড় বড় হোটেলে থাকা যাবে, বিলাস বহুল বাড়ি হবে, গাড়ি হবে।
আসলে এসব ভন্ড নেতারা আমাদের দেশটাকে অবাধ দুর্নীতি করার অভয় আশ্রম হিসাবে দেখে। আর এ সুযোগ পাওয়া যাবে সুধুই দেশের নেতৃত্ব নিতে পারলেই। তাই বড় দুই দল নেতৃত্ব নিয়ে এত মরিয়া। যে করেই হোক, যা কিছুর বিনিময়েই হোক নেতৃত্বর চেয়ারটা লাগবে। এতে কার কী ক্ষতি হল বা দেশের কী ক্ষতি হল, এতে তাদের কোন যায় আশে না।
গত ২৮ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঢাকা ও চট্টগ্রাম সিটিক্রপোরেশন নির্বাচন উপহার দিল। তার সাথে উপহার দিল বস্তহীন নগ্ন গণতন্ত্র। অবশ্য তার কাছ থেকে এর চেয়ে ভাল নির্বাচন আশাও করা যায় না। কারন, সে নিজেইতো অবৈধ ও অগণতান্ত্রিক উপায়ে ক্ষমতা দখল করে আছে। যে নিজেই অগণতান্ত্রিক তার কাছে কিভাবে গনতান্ত্রিক সুস্থ নির্বাচন আশা করা যায়?
৫ জানুয়ারী সারা দেশের ৩০০টি আসনের মধ্যে ১৫৩টি আসনে ভোট হয়নি। ১৪৭টি আসনের মধ্যে ভোট পড়েনি ৪৩টি কেন্দ্রে, ১টি কেন্দ্রে ১টি ভোট পড়েছে। দেশের মোট ভোটার সংখ্যা ৯,১৯,৫৬.৯৭৭ হলেও ভোট দেওয়ার সুযোগ পয়েছে ৪,৩৯,৩৮,৯৩৮জন। এই ৪,৩৯,৩৮,৯৩৮ জনের মাএ ৫শতাংশ ভোট পড়েছে বলে দাবি বিএনপি’র। বাংলাদেশ মানবাধিকার সংস্থা বলছে ০-১০ শতাংশ ভোট পড়েছে, ফেয়ার ইলেকশন মনিটারিং অ্যালায়েন্স(ফেমা) বলছে ১০ শতাংশ ভোটের বেশি পড়ে নাই। কারো বিশ্লেষণেই ১০ শতাংশর বেশী ভোট পড়েনি...........
এশিয়ান হেউম্যান রাইটস কমিশন এর মতে ‘জালিয়াতির সাধারণ নির্বাচন’। তাহলে শেখ হাসিনার প্রধানমন্ত্রীত্ব কিভাবে বৈধ হল? জনগণতো তার উপর দায়িত্ব দেয়নি, তিনি গায়ের জোরে নিয়ে নিয়েছে।
পুলিশ বাহিনী সরকারি গোলাম হয়ে গেছে। বিচার বিশ্লেষনের প্রয়োজন নাই, সরকার টিকিয়ে রাখতে জনগণের উপর যে কোন অত্যাচার করতে তারা প্রস্তুত। বলা হয়ে থাকে আওয়ামীলীগ সরকার টিকেই আছে পুলিশ বাহিনীর উপর ভর করে। এখানে পুলিশ বাহিনীর স্বার্থ কী?
তাদের বড় বড় কর্মকর্তা কী তাহলে হাজার কোটি টাকার মালিক হয়ে গেছে? তারা কি এখন টাকার বিনিময়ে সরকার পাহারা দেওয়ার কাজ নিয়েছে? হয়ত তাই......
রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ’র একটা কবিতার অংশ মনে পড়ে গেল-
দাঁড়াও, নিজেকে প্রশ্ন করো- কোন পক্ষে যাবে?
সীমান্ত রক্ষার নামে তৈরি করা হয়েছে তোমাকে,
সার্বভৌমত্বের নামে অস্ত্র দেয়া হয়েছে তোমাকে ।
শৃঙ্খলা রক্ষার নামে তৈরি করা হয়েছে তোমাকে,
আইন রক্ষার নামে অস্ত্র দেয়া হয়েছে তোমাকে ।
সীমান্ত রক্ষা ও নয়, সার্বভৌমত্ব ও নয়, শুধুমাত্র পুঁজি,
শুধুমাত্র পুঁজিবাদ রক্ষাই তোমাদের মৌল কাজ ।
তোমরা এখন বিত্তের পাহারাদার, বিত্তবানের প্রহরী,
বিত্তবান তোমাকে ব্যবহার করছে তার বিত্তের স্বপক্ষে ।
বিত্তের বিরদ্ধে তাই যখন শ্লোগান ওঠে শহরে ও গ্রামে,
যখন মিছিল নামে রাজপথে মানুষের দাবির মিছিল,
যখন মিছিল নামে রাজপথে মানুষের ক্ষুধার মিছিল-
তখন তোমার হাতে গর্জে ওঠে তীক্ষ্ম রাইফেল,
তুমি ব্যবহৃত হও, নিরুপায় ব্যবহৃত হও ।
বিচার বিভাগের এখন আর কোন কাজ নাই। কার বিচার কি হবে, কে ছারা পাবে, কে পাবে না। এটা বুঝতে যখন সরকারের ভাব মূর্তির দিকে চেয়ে থাকতে হয়, তখন বিচার বিভাগকে আমি কিভাবে স্বাধীন বলবো। বিচার বিভাগ সরকার নিয়ন্তন করছে।
জনগণ সবশেষে আস্থা-রাখে দেশের সেনাবাহিনীর উপর। যাদের সব সময়ই রিজার্ভ থাকার কথা। দেশের ক্রন্তিকালে এদেরকে পাশে পাবে বলে আশা করে জনগণ কিন্তু অবাক চোখে দেখতে হয় আর্শ্চাযজনক নিরাবতা! সেনাবাহিনীর প্রথম সারির ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তা সহ ৭৪ জন কে হত্যা করা হলেও কি আশ্চার্য নিরাবতা তাদের!
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এখন ডেভোলাপার কোম্পানির মত হয়ে গেছে। তাদের কাজ এখন বিল্ডিং, রাস্তাঘাট, সেতু নির্মণ করা।
গণমাধ্যম, বিচার বিভাগ, থানা, স্কুল-কলেজ, হাসপাতাল, ব্যাংক, মসজিদ-মন্দিরে পর্যন্ত নোংরা রাজনীতি প্রবেশ করেছে। সমাজের এমন কোন স্তর নেই, যে স্তর এখনো সুস্থ এবং নিজেস্ব গতি নীতিতে চলছে। এ এক ঘুণে ধরা সমাজ ব্যবস্থা। সমাজের নিয়ম নীতি গলে পচে গন্ধ বের হচ্ছে।
যে দেশের প্রধানমন্ত্রী, বিরধী দলীয় নেত্রী সহ বড় বড় দলের দায়িত্ব শীল ব্যক্তিরা হরহামেষে মিথ্যা বলেন। দেশের মানুষকে বোকা নাদান ভাবেন, সে দেশ কোন দিকে যাচ্ছে তা জনার জন্য দূরদর্শিতার প্রয়োজন হয় না।
সাধারণ মানুষ কথা বলতে চায়, তারা প্রতিবাদ করতে চায় কিন্তু ঝামেলায় পড়তে চায় না। নিজেকে দুর্বল ভেবে সব কিছু মুখ বুজে সয়ে নেয়।
মানুষ এখন গতানুগতিক রাজনৈতিক ধারার বাইরে যোগ্য একজন নেতা, একটা দল খুজে পেতে চায়। তার প্রমাণ শাহাবাগের আন্দোলন, হেফাজতের আন্দোলন। শাহাবাগকে মানুষ সাধারণ মানুষের আন্দোলন ভেবেই ডাকে সারা দিয়েছিল, বুকে সাহস পেয়েছিল কিন্তু কিছু রাজনৈতিক দল পরিকল্পিত ভাবে এ আন্দোলনকে ধংস করে। কেননা এখান থেকে নতুন শক্তির উদ্ভব হওয়ার সম্ভাবনা ছিল।
মানুষ যখন সমাজের বিভিন্ন বিশৃঙ্খলায়, সমস্যায় জর্জরিত। যখন দেশের প্রতিটা স্তর থেকে ন্যায় নীতি উঠে গেছে, দুই দলের মারামারিতে দেশ অচল, ঠিক তখন ডাক দিল হেফাজতে ইসলাম। দেশের আলেম সমাজ, ধর্ম প্রাণ মানুষ সে ডাকে সারা দিল। আমি জোর দিয়ে বলতে পারি, হেফাজতের আন্দোলনের উপর দেশের অধিকাংশ সাধারণ মানুষের সমর্থন ছিল। কারন, দেশের এত নীতিহিনতা, অবনতি, মানুষ আর সইতে পারছিল না। দ্বিতীয়ত তাদের কারো নামে ঘুষ, দুর্নীতি, সুদ, নেশা, টেন্ডার বাজি, চাঁদা বাজি, জমি দখল বা মার্ডারের কোন অভিযোগ ছিলনা। সেটা-কেউ বিতর্কৃীত করার জন্য একটি মহল নড়ে চড়ে বসে। তা-নাহলে নিজেদের ক্ষমতা হারানোর ভয় ছিল।
এখন আমাদের সময়, সাধারণ মানুষের সময়। আসুন ভাল মন্দকে গুলিয়ে না ফেলে, ভালকে ভাল আর মন্দকে মন্দ বলি। মুখ খুলে কথা বলি আর হাত উঁচিয়ে প্রতিবাদ করি।
বি.দ্র: আমার লেখাটি কাউকে ছোট বা বড় করার জন্য না। যেটা সত্য সেটা বলার চেষ্টা করেছি। মতের অমিল হওতেই পারে, গঠন মূলক সমালোচনা চাই। বাজে মন্তব্য করবেন না।
মো: সরোয়ার সরদার (রকি)
E-mail: [email protected]
©somewhere in net ltd.