নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সব চলে গেছে নষ্টদের দখলে , আমিও একদিন নষ্ট হব....

দেহঘড়ির মিস্তিরি

তীব্র কোলাহলের মাঝে একচিলতে নিরবতা , অনেক রঙের মাঝে একটু খানি বিবর্ণতা , অনেক ভিড়ের মাঝে স্বেচ্ছায় হারিয়ে যাওয়া , চিন্তার ঘূর্ণিপাকের মাঝে বেঁচে থাকা।

দেহঘড়ির মিস্তিরি › বিস্তারিত পোস্টঃ

জীবন আপনার , বাঁচুন প্রানভরে

০৩ রা মে, ২০১৩ রাত ১০:৫২

আমাদের এলাকায় এক ভাইয়া ছিলেন , মারুফ ভাইয়া

দেখতে রাজপুত্তর বলতে যা ছিল তিনি তাই,অসাধারন গুনবান লোক ছিলেন অসম্ভব সুন্দর ছবি আকতেন,

হাতের লেখা ছিল রীতিমত টাইপরাইটিং বলতে যা বোঝায় , এই গুনের প্রতি আমার বিশেষ ঈর্ষা ছিল, আমার হাতের লেখা; উনবিংশ শতাব্দীতে ভিঞ্চির অতি উন্নত নকশার মতই দুর্বোধ্য ছিল :P :P

ভাইয়ার গান গাওয়ার গলা ছিল অসাধারণ,ভাইয়ার কাছেই খালি গলায় যখন মান্না দের “কফি হাউস” গানটা শুনে তার ভক্ত হয়ে যাই।



ভাইয়ার রেজাল্ট ঈর্ষনীয় বললেও কম হবে ঢাকা বোর্ডের মধ্যে বিজ্ঞান বিভাগে দ্বিতীয় হয়েছিলেন ...

ভাইদের ফ্যামিলি আমাদের মতই মধ্যবিত্ত ,বৃত্তের বাইরে যাবার সামর্থ্য ছিলনা ...

ভাইয়া ইন্টারমিডিয়েটে নটরডেম ভর্তি হোন ...

একদিন স্কুল থেকে ফিরে দেখি মারুফ ভাইয়ার আম্মু আমাদের বাসায় ,

আম্মুর চোখ ভেজা ,আন্টির চোখ দিয়ে ঝর-ঝর করে অশ্রু ঝরে পড়ছে,একটু ভয় পেলাম

আম্মুকে জিজ্ঞাস করলাম “কি হয়েছে??” ,

আম্মু ঝাড়ি দিয়ে বলল “যা পাকনামো করিস না ,ড্রেস চেঞ্জ কর”

পরে শুনতে পেলাম, কোন এক মেয়ে নাকি মারুফ ভাইয়ার গুণমুগ্ধ ছিল স্কুল থেকেই,

মারুফ ভাইয়া স্বভাবতই সাড়া দেন নি , ওইদিন দুপুরে মেয়ের মা নাকি আন্টিকে ফোন দিছে

মেয়ে নাকি এক-ডজন প্যারাসিটামল সকালের নাস্তা হিসেবে গ্রহন করেছে ,হসপিটালে অ্যাডমিট

এই ধরনের পাগলামি যাতে আর না করে তাই আন্টি আর মেয়েটার মার অনুরোধে মারুফ ভাই মেয়েটার সাথে রেগুলার বন্ধুত্বপূর্ণ মেলা-মেশা শুরু করেন ... বয়েজ স্কুল আর বয়েজ কলেজ ,আর পরিবারে একা হবার কারনে স্বভাবতই

এক বছরের মধ্যে মেয়েটার প্রতি অনেক ডিপেন্ডেন্ট হয়ে যান। টেস্টের আগে মেয়েটাকে ভাল-লাগার কথা জানিয়ে দেন ...এবার মেয়েটা পালটি দিল ,তার নাকি এখন আর ভাইয়াকে ভাল লাগেনা ,ভাইয়া নাকি অনেক বোরিং ব্লাহ ব্লাহ... ভাইয়ার টেস্টে দুই-বিষয়ে ফেল দেখে সবাই সবাই চমকে উঠে

আর ভাইয়ার মত নক্ষত্র দের পতন দেখে অনেক স্পেস ডাস্টের পিতামাতা গণ নানা উস্কানিমূলক গল্প ছড়ানো শুরু করল,আন্টি ভাইয়াকে জিজ্ঞাস করল কি হয়েছে ভাইয়া ওই মেয়ের ব্যাপার খুলে বলল

আন্টি এবার গেলেন ওই মেয়ের বাসায় ,এবার মেয়ের মা-মেয়ে দুইজন তাদের কুৎসিত রুপ দেখাল।



ভাইয়া ওইবার এক্সাম আটেন্ড করতে পারলেন না ,আরো বেশি ডিপ্রেসড হয়ে গেলেন সিগারেট ধরলেন

আন্টি এত কিছু দেখে ভাইয়াকে আর কিছু বলতে সাহস করেন নি।

ছয় মাসের মধ্যে ভাইয়া গাঁজা,চরস এ এতই মুগ্ধ হলেন যে বাসার ছোট ছোট জিনিসপাতি গায়েব হওয়া শুরু করল, এর সাথে গুনানুপাতে বাড়ল আন্টির চোখে অশ্রু...

মাঝখানে কাদের সাথে মারামারি করে তিন দিন জেলে কাটিয়েছেন,সুন্দর চেহারায় কারা যেন ছুরির কোপ বসিয়ে দিল ,হসাপাতালে একমাস ,চোখের এক পাশের পাতা এখন অনড়

উপায় না দেখে আন্টি ভাইয়াকে রিহ্যাব এ দিয়ে আসলেন ,

ভাইয়ার মনের বহিরভাগে পচন শুরু করলেও ভেতরে সেই হীরক ই ছিল

মানুষ হবার ইচ্ছা তার মাঝে বর্তমান ছিল

ছয় মাস রিহ্যাব এ কাটানোর পর আন্টি তাকে বাহিরে পাঠিয়ে দেন ...জার্মানিতে তার মামার কাছে



অনেক দিন খবর ছিলনা ,মাস কয়েক আগে ঢাকায় দেখা ,আমি চিনতে পারিনি

ভাইয়া এসে জরিয়ে ধরলেন “কিরে তুই এত মোটকু হলি কিভাবে ??”

আগের সেই দৈহিক সৌন্দরয নেই কিন্তু আগের চেয়ে তার হৃদয়ের শুদ্ধতা বৃদ্ধি পেয়েছে ভাইয়ার সাথে পাচ মিনিট কথা বলেই বুঝতে পারলাম :) ভাইয়ার সুন্দর পুতুলের মত দেখতে একটা মেয়েও আছে ছবি দেখালেন,নাম নাকি পুতুল :P :P

ভাইয়া কথা বলতে বলতে হঠাত করে অতীতে ভ্রমন করা শুরু করলেন...

ভাইয়ার একটা কথা খুব ভাল লাগল “দেখ ,তোর কাউকে ভাল লাগতেই পারে ,তোর মনে হতেই পারে তাকে ছাড়া তোর জীবন চলবেনা, এগুলো সবই সাময়িক মায়া,মোহজাল ।জীবনে একটা দরজা বন্ধ হলে আরো দুটো খোলে, শুধু জীবন সমুদ্রে সাতরে যেতে হয়,জীবনকে ব্যর্থ ভাবার একটা কারন থাকলেসফল করার শত উপায় আছে”

আমি মুগ্ধ ভাবে তাকিয়ে রইলাম ভাইয়ার দিকে ,আহ সেই পুরনো ভাইয়া



এই লেখাটা আমার বন্ধুদের জন্য যারা বয়ফ্রেন্ড-গার্লফ্রেন্ড দের সাথে সামান্য ঝগড়া হলেই হাতের রগ কেটে নিজেদের বীরবাহাদুর প্রমাণ করতে ঝাপিয়ে পরেন,হারপিক খেয়ে নিজেদের ডাইজেস্টিভ সিস্টেমের অসামান্যতার পরিচয় দিতে গর্ববোধ করেন,প্যারাসিটামলের কেজি কত জানতে উৎসুক হয়ে উঠেন

এসব করার আগে আপনার মায়ের মুখটা একটু কল্পনা করেন,ভাইয়ের সাথে দুষ্টুমি ,বোনের সাথে খুনসুটি কথা একটু মনে করবেন,বাপির সাথে খেলার কথা একটু ভাববেন,বন্ধুদের সাথে কাটানো অসামান্য মুহূর্তগুলো স্মরণ করবেন

জীবন হয়ত ফেয়ার না ,সবাই সমান ভাবে ট্রিট হউ না ,তাই বলে জীবনের প্রতি হতাশ হতেই পারেন, হতাশা কাটানোর মাঝেই রোমাঞ্চ

পরকালে পাড়ি দেবার মধ্যে নয় ।

আসুন বাঁচি কবিতার ছন্দে,শিরায় নিকোটিনের বিষের পরিবর্তে

থাকুক স্বাধীনতার কাব্য,আসুন সুখ খুজি জীবন উপন্যাসের পাতায় পাতায়,প্রতিটি ছন্দে।

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ০৩ রা মে, ২০১৩ রাত ১১:০৭

আরিফ আহমেদ বলেছেন: শুধু জীবন সমুদ্রে সাতরে যেতে হয়,জীবনকে ব্যর্থ ভাবার একটা কারন থাকলেসফল করার শত উপায় আছে”

০৩ রা মে, ২০১৩ রাত ১১:২৭

দেহঘড়ির মিস্তিরি বলেছেন: :) :)

২| ০৩ রা মে, ২০১৩ রাত ১১:১৩

প্রত্যাবর্তন@ বলেছেন: উদ্দীপ্ত করবার মতন লেখা

০৩ রা মে, ২০১৩ রাত ১১:২৮

দেহঘড়ির মিস্তিরি বলেছেন: ধন্যবাদ , ভাই :)

৩| ০৩ রা মে, ২০১৩ রাত ১১:১৭

জাহাঙ্গীর জান বলেছেন: অনেক সুন্দর এবং বাস্তবে নিজের চোখে দেখা গটনা ।

০৩ রা মে, ২০১৩ রাত ১১:২৯

দেহঘড়ির মিস্তিরি বলেছেন: আমরা দেখি ,তবুও সহজে শিখিনা ,এই গত পরশুদিন আমার এক বন্ধু হসপিটালে গেছে নিজের হাতের রগ কেটে :(

৪| ০৩ রা মে, ২০১৩ রাত ১১:২৬

ইমাম হাসান রনি বলেছেন: জীবনে একটা দরজা বন্ধ হলে আরো দুটো খোলে,[/sb

এই কথার মধ্য একটা শক্তি আছে (উদ্দীপনা)

০৩ রা মে, ২০১৩ রাত ১১:৩০

দেহঘড়ির মিস্তিরি বলেছেন: জী ভাই ,আমার ও তাই মনে হয় :)

৫| ২৯ শে মে, ২০১৩ দুপুর ১২:৪১

কান্ডারি অথর্ব বলেছেন:

ভাল লিখেছেন

২৯ শে মে, ২০১৩ বিকাল ৩:২৮

দেহঘড়ির মিস্তিরি বলেছেন: ধন্যবাদ :) পড়ার জন্য :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.