![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
তীব্র কোলাহলের মাঝে একচিলতে নিরবতা , অনেক রঙের মাঝে একটু খানি বিবর্ণতা , অনেক ভিড়ের মাঝে স্বেচ্ছায় হারিয়ে যাওয়া , চিন্তার ঘূর্ণিপাকের মাঝে বেঁচে থাকা।
অরণীর মেজাজ ভয়াবহ খারাপ , চোখ-মুখ পাকা মরিচের মত লাল
এইমাত্র মায়ের সাথে ঝগড়া করে বের হয়েছে , চোখ ছলছল , কোনমতে জল আটকে রেখেছে
দরদাম না করেই রিক্সায় উঠে পড়ে , ভার্সিটি যাবে , গিয়েই মনটা বিতৃষ্ণা ভরে উঠবে, রেয়ান কে তার ল্যাপি হাতে দেখে , ছেলেটার যে কত ভাব এই সামান্য যন্ত্রটার জন্য , গতকাল একটু দেখতে চেয়েছিল
কাজ আছে বলে এড়িয়ে গেল । মনে মনে ভাবে আগবাড়িয়ে চাওয়াটাই ভুল হয়েছে ......
আর মা টাও যে কি সামান্য একটা ল্যাপটপ সেটা কিনে দিতেও গড়িমসি ...অতচ ফ্রেন্ড মা-বাবা গুলো কত কিছু কিনে দেয়
আজকে এক ঝলক তপ্ত বাক-বিনিময় হল মায়ের সাথে , লাভের লাভ নিজের মন খারাপ
রিক্সা থেকে নামতেই দেখে ক্লাসের সবাই আড্ডা দিচ্ছে , প্রফেসর নাকি অসুস্থ ক্লাস নিবেন না , মেজাজটা আরো বিগরে গেল ।
একটু দূরে গিয়ে বসল , বসতে না বসতেই আরেক যন্ত্রনা এসে হাজির , তবে যন্ত্রনাটা এসে কথা বলছেনা , বোবা কিনা বোঝা যাচ্ছেনা । মেজাজ খারাপ তীক্ষ্ণ স্বরে জিজ্ঞাস করল কি চাস ??
বলেই ছোট ছেলেটার দিকে তাকাল , অদ্ভুত মায়াবি চেহারা , চোখ দুটো বড় , অরনি ভাবে ইসস , এতো সুন্দর যদি আমার চোখ হত!!
নিষ্পাপ চেহারা আর কাচুমাচু অভিব্যক্তি অশান্ত হৃদয়ের ক্ষোভ প্রশমিত করল , অরনি পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকালো , কি চাও ? ভাইয়া বলত ?
আপু , আমার একটু হেল্প লাগত ...
অরণী পরিশালীত উচ্চারণ শুনে কিছুটা থমকে যায় , ছেলেটার পরিধেয় বলে দিচ্ছে এই ছেলে সাধারণ ভিক্ষুক নয়... অরণী বলে “বল ভাইয়া , তুমি কি চাও”
আপু , আপনি যদি আমার সাথে একটু আসতেন ??
অরণীঃ অবাক হয়ে , কোথায় ???
ছেলেটিঃ আমার মা অসুস্থ , ওই সামনেরর বেঞ্চিতে শুয়ে আছেন , একটু যদি দেখতেন , মা অনেক ক্ষন কথা বলছে না ...
অরণী একটু চিন্তিত হয়ে উঠল , মনে ভেসে উঠল প্রতারক চক্র গুলোর কথা , আজকাল নাকি বাচ্চাদের ও ব্যবহার করে এরা , কিন্তু সামনে সত্যি একটা মেয়ে শুয়ে আছে , আপাদমস্তক শাড়ী জরিয়ে
কুঞ্চিত ভঙ্গি দেখে ভাবল , জ্বর এসেছে বোধ হয় ?
ছেলেটির সাথে এগিয়ে গেল অরণী ...... যেতে যেতে জিজ্ঞাস করল ,কেন ঢাকায় এসেছ ??
ছেলেটিঃ আমার আব্বু , একটা গার্মেন্টস এ মেশিন অপেরাটিং এর কাজ করে , গত দু-সপ্তাহ তার খোজ নেই , তাই মায় আর আমি খোজ নিতে আইসি ।
অরণী খেয়াল করল বাবার কথা বলার সময় ছেলেটির চোখে-মুখে দিপ্তি খেলে গেল ...
ছেলেটির মায়ের কাছে পৌঁছে অবাক হয়ে দেখল পরীর মত সুন্দর একটা মেয়ে ,কপালে হাত দিল অরণী
চমকে ঊঠল একদম পাথরের মত ঠান্ডা , সহ্য করতে না পেরে হাত সরিয়ে নিল
ছেলেটি বিমর্ষ জিজ্ঞাসু চোখে তাকাল অরনির দিকে ... অরণী কিছু বুঝে উঠতে না পেরে
তার বন্ধুদের ডাকল , দু-জন বুকে কান ঠেকিয়ে দেখল কোন শব্দ নেই , বেঁচে থাকার সুমধুর ধুপ-ধুপ-ধুপ শব্দ সেখানে অনুপস্থিত ......হসপিটালে নিতেই ডাক্তার অনাকাঙ্ক্ষিত কিন্তু অত্যবশ্যকিয় মৃত্যুঘোষকের দায়িত্ত পালন করল , অরণী বাসন্তী রাঙ্গা শাড়ি দিকে নিরবাক দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে রইল
এরই মাঝে এক বন্ধু , লাশের হাত থেকে দুমড়ানো একটুকরো কাগজ আবিষ্কার করল......
কাগজটি খুলতেই অরনীর পুরো বিশ্ব অন্ধকার হয়ে এল
লাশের হাতে ছিল আরেক লাশের মৃত্যুর সার্টিফিকেট......... তার সোয়ামির মৃত্যুর সার্টিফিকেট , আর তার মৃত্যুর টিকেট......
অরণী নির্বাক চোখে চেয়ে রইল মায়াবি ছেলেটার দিকে ...শুধু চেয়েই রইল......
বাস্তবতা কত নির্মম , যখন আমি-আপনি প্রিয়জনদের কাছ থেকে কিছু আদায়ে মান-অভিমানে ব্যস্ত
তখন হয়ত কেউ প্রিয়জনকে হারিয়ে সর্বস্বান্ত............
১৮ ই মে, ২০১৩ দুপুর ১:০১
দেহঘড়ির মিস্তিরি বলেছেন: ধন্যবাদ চিরকুট
২| ১৮ ই মে, ২০১৩ দুপুর ১:১৭
রায়হান চৌঃ বলেছেন: সকাল সকাল মন টা খুবেই খারাপ করে দিলেন...
এমনি তে টানা ৩৬ টা মাস- মন টা খুবেই খারাপ যাচ্ছে, বহু দুরে আছি মা, বাবা, ভাই-বোন, বন্ধু বান্ধব থেকে...........
১৮ ই মে, ২০১৩ দুপুর ২:১১
দেহঘড়ির মিস্তিরি বলেছেন: স্যরি ভাই , আপনার মন খারাপের জন্য
©somewhere in net ltd.
১|
১৮ ই মে, ২০১৩ সকাল ৯:৪৬
"চিরকুট" বলেছেন: সুন্দর গল্প