নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ভবঘুের একজন

উন্মাদ

ভবঘুের একজন › বিস্তারিত পোস্টঃ

ধমকে ভাইটামিন আছে

২৪ শে মার্চ, ২০১৫ বিকাল ৪:৫৯

অফিস থেকে ফিরছি, আজ একটু দেরীই বুঝি হয়ে গেল। সাড়ে সাতটা বেজে গেছে!! দুরু দুরু বুকে প্যাডেল মারছি পঙ্খিরাজের, কখন ফোনটা আসে আমার বাপজান এর- কোথায় তুমি, এত দেরী কেন। ইদানীং বাবার চেয়ে ছেলের কাছেই ধমক খাই বেশি আমি। ভালো লাগে। এই ধমকে সত্যিই ভাইটামিন আছে।



নিকুঞ্জ পার হতেই দেখি জ্যাম। এত জ্যাম তো পড়েনা এসময়ে এখানে!! কারন খোজার টাইম নাই। সাইক্লিস্ট রা জ্যাম এর আওতামুক্ত। আইল্যান্ড আর ফুটপাত দিয়ে চালিয়ে অনায়াসে পৌছে গেলাম এয়ারপোর্ট চত্বর। এতোক্ষণে মনে পড়লো - আরে আজ এই সময়েই না টাইগার্স দের ফেরার কথা!! এই সন্ধ্যায় ও এয়ারপোর্টে হাজির হয়েছে হাজার কয়েক মানুষ- হাতে ব্যানার, প্ল্যাকার্ড আর পতাকা। হরতাল অবরোধ আটকাতে পারেনি আবেগী বাঙালি-কে। প্রিয় ব্যাঘ্র শাবকেরা স্বর্নালী সাফল্য নিয়ে ফিরেছে, পৃথিবীকে জানান দিয়ে এসেছে- যেকোন দিন যে কাউকে এখন "ধইরে দিবানি"। ওদের কে অকুন্ঠ্য ভালোবাসা জানাতে তাই নেমেছে মানুষের ঢল। চরম নিরাপত্তার চাদরে মোড়া চারধার, তবু "বাংলাদেশ", "বাংলাদেশ" মুহুর্মুহু গর্জন, উদ্বেলিত পতাকা, "ম্যারি মি রুবেল/ তাসকিন" লেখা প্ল্যাকার্ড হাতে তরুণী আর উদ্বেলিত লাল সবুজ পতাকা। মনে পড়ে গেল ১৯৯৭ এর আইসিসি ট্রফি'র ফাইনাল এর কথা। আমরা তখন আন্ডারগ্র্যাড এর মাঝামাঝি সময়ে। সেসব দিনে ঐ খেলা টিভিতে খুব সুলভ ছিলো না। খুব সম্ভবত আজমত আরা (AAA) ম্যাডাম এর সাইকোলজি ক্লাস ছিলো সেদিন, ক্লাসের মধ্যেই লুকিয়ে হেড ফোন লাগিয়ে চৌধুরী পরচুল্লা শরাফতের ধারাভাষ্য শুনছি পকেট রেডিওতে। ম্যাডাম টের পেয়ে গেলেন কিভাবে যেন, জিঙ্গাইলেন, কি শুনি, বল্লাম "ক্রিকেট"। পরের প্রশ্ন- কোনটা বেশি জরুরী ক্লাস না ক্রিকেট? আমার উত্তর ছিলো "ক্রিকেট"!! ম্যাডাম সেদিন ছুটি দিয়েছিলেন পুরো ক্লাস। মনস্তত্বের শিক্ষিকা ঠিক বুঝেছিলেন যে আমাদের আর আটকে রাখা যাবেনা, বড় বেশি আবেগী যে আমরা!! SPZ এর নিচে তখন ছোট ছোট জটলা, প্রতিটা জটলায় একটা করে পকেট রেডিও। ম্যাচ প্রায় শেষ পর্যায়ে, মেয়েদের অনেকে চোখ বুজে দোয়া দরুদ পড়ছে, মোনাজাত করছে, চারদিকে শুনশান নিরবতা। হঠাতই হৈ হৈ হৈ!! বাংলাদেশ আইসিসি ট্রফি চ্যাম্পিয়ন!! সেদিন বড় আনন্দ হয়েছিল। চোখ ভিজে যাচ্ছিলো বারবার। রঙে সয়লাব হয়ে গেছিল চারপাশ, চারপাশের সবাই। আনন্দ চারপাশে, এমন নিখাদ আনন্দ যে বড় কম আসে আমাদের জীবনে। আহা, প্রায় ১৮ বছর আগে চলে গিয়েছিলাম। তাসকিন বোধহয় তখন কোলের শিশু, হাঃহাঃ। আজ ওর জন্য প্ল্যাকার্ড এ লেখা থাকে "ম্যারি মি"। মনে পড়তে মনে মনে খুব একচোট হেসে নিলাম। একটা প্রজন্ম চলে গেলো এই খেলায় মুন্সিয়ানা আনতে। ভাবনা আমার শিমুল ডালে লালচে আগুন জ্বালে।



কখন যে দাঁড়িয়ে গেছি রাস্তায়, জানি না। ম্যাস গ্যাদারিং এর একটা নিজস্ব শক্তি আছে, স্টেডিয়ামে গেলে বোঝা যায়। ঠিক তেমন একটা শক্তি চারপাশে। গায়ের লোম দাড়িয়ে গেল। এই বিশ্বকাপে টাইগার্সদের সাহসী পদচারনা এবার হানা দিল স্মৃতির জায়ান্ট স্ক্রিনে। আফগানবধ, অসি দের কাছে বৃষ্টির কারণে ১ পয়েন্ট খোয়ানো (!?!), লঙ্কার কাছে হার, স্কচদের চেখে দেখা, ইংরেজদের ঝেটিয়ে বিদায়, কিউইদের সাথে লড়াকু আউটিং!! আহ্ মন ভরিয়ে দিয়েছে ওরা কানায় কানায়। বুকটা আধ হাত ফুলে উঠেছিলো কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত করা ম্যাচ শেষে কাপ্তান মাশরাফির মাথায় সবুজ-লাল পতাকা বাধা দেখে। আমাদের ছেলেরা বুকে দেশটা নিয়ে খেলে, নিজের সবটুকু উজাড় করে খেলে। কোয়ার্টার ফাইনাল ম্যাচ টা আসলে ছিলো পরোক্ষ স্বীকৃতি- তোমরা এখন বড় বেশি বিপজ্জনক, ১১ জন দিয়ে তোমাদের হারানো সত্যি এখন কঠিন!!



আমার আর সহসাই বাড়ি ফেরা হলোনা। পঙ্খিরাজ নিয়ে রাস্তায় দাড়িয়ে অপেক্ষায় থাকলাম। বুকের ভেতর হাতুড়ির বাড়ি, গলার কাছে দলামতো কি যেন, জাতীয় সংগীত আর "আমরা করবো জয়" গাইছি আশেপাশের ক'জনার সাথে গলা মিলিয়ে। অবশেষে ফুরালো অপেক্ষার পালা। টাইগার্স রা বের হলো এয়ারপোর্ট থেকে, ফুলেল শুভেচ্ছা আর ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে, এক দঙ্গল আবেগী মানুষের চোখ ভিজিয়ে। ওদের জন্য বুকের গভীর থেকে দোয়া এল- বড় হও, আরও বড় হও। দেখিয়ে দাও দুনিয়াকে - আমরা কতটা লড়াকু।



ভিড় ভাঙ্গে একসময়। বাসার পথে পঙ্খিরাজের প্যাডেল মারতে মারতে খেয়াল হয় আজ প্রচুর ভাইটামিন পাওনা হয়েছে। চোখের কোনা মুছে ভাবি, কি আর করা, সোনার টুকরো ছেলেগুলা যে মন জয় করে নিয়েছে।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.