নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ছায়াসঙ্গি

মুহাম্মদ খোরশেদ আলম

মুহাম্মদ খোরশেদ আলম

চাইল্ড সাইকোলজিস্ট, শিশু বিকাশ কেন্দ্র, এস,এস,এম,সি মিটফোর্ড হাসপাতাল।

মুহাম্মদ খোরশেদ আলম › বিস্তারিত পোস্টঃ

রাগ নিয়ে ভাবনা (পর্ব-১)

৩০ শে অক্টোবর, ২০১৩ রাত ৮:২৮

রাগ অপ্রয়োজনী বা অস্বাভাবিক কিছু নয়, বরং রাগ হবে এটাই স্বাভাবিক। তবে এই স্বাভাবিক রাগ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে নিমিষেই সব কিছুকে অস্বাভাবিক করে তুলতে পারে। ঘটে যাতে পারে সম্পর্কের ছাড়াছাড়ি বা অনাকাঙ্ক্ষিত কোন ঘটনা যা আমাদের প্রত্যাশিত নয়। তাই সব কিছু শেষ হবার আগেই আমাদের জানতে হবে রাগ হওয়ার পেছনের কারণ গুলো সম্পর্কে। যার সাহায্যে আমরা আমাদের রাগ টিকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারব, ব্যবহার করতে পারব প্রয়োজনীয় কাজে (আমরা সবাই জানি, কিছু কিছু ক্ষেত্রে রাগ ছাড়া কাজ হয় না) সে কারণে আমাদের শিক্ষতে হবে রাগের ইতিবাচক ব্যবহার, নেতিবাচক ভাবে নয়। আসুন আমরা আজকে জেনে নেই – রেগে যাওয়ার অনেকগুলো কারণের মধ্যে অন্যতম একটির কথা, আর সেটি হল "প্রত্যাশা"।



প্রত্যাশাঃ

প্রত্যাশাকে রাগের অন্যতম কারণের মধ্যে একটি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কি কারণে - আসুন আমরা সবাই একটু ভেবে দেখি আমাদের জীবনে যে রাগ গুলো করেছি, প্রত্যাশার সাথে তা সম্পর্কযুক্ত ছিল কি না!

০ বন্ধুর আব্বু প্রতিমাসে বন্ধুকে নিয়ে ঘুরতে বের হয়/ বই, খাতা, কলম প্রভৃতি হারিয়ে ফেললেও কিছু বলে না/ বনভোজনে যাওয়ার অনুমতি দেয়/ সারাদিন ঘুরে বেড়ালে কিছু বলে না/ বেশি করে খরচ দেয়/ রাতে দেরি করে বাসায় ফিরে আসলেও কিছু বলে না ইত্যাদি। তাই আমরাও আমাদের বাবা-মায়েদের কাছে তাই প্রত্যাশা করেছিলাম। বাবা-মা যখনই প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ হয়েছেন; তখন আমরা রাগ করেছি বাবা অথবা মায়ের উপর, তাই নয় কি।

০ পরিচিত বা প্রতিবেশী বাড়ির ছেলে-মেয়েরা এতো লক্ষ্মী/ বুদ্বিমান/ খুব’ই ভাল রেজাল্ট করে/ বাবা-মায়েরা যা বলে, যেভাবে বলে তাই শুনে-তাই করে ইত্যাদি। আমার সন্তানটি কেন পাশের বাসার ছেলেটির মত নয়?, যাই বলি তাই কেন করেনা? বা পারেনা?; সন্তানের প্রতি পিতা-মাতার প্রত্যাশা। আর প্রত্যাশা পূরণে সন্তানেরা ব্যর্থ হলেই তাদের প্রতি দেখানো হয় রাগ।

০ আশেপাশের বন্ধু-বান্ধবী/প্রেমিক-প্রেমিকা অথবা স্বামী-স্ত্রী’রা তুলনা করে তার দেখা ভাল একটি জুটির সাথে। অন্যেরা একে অন্যকে কত ভালবাসে, কথা শুনে, সময়কে মূল্য দেয়, খুশি করার জন্য কত কিছু করে প্রভৃতি। তবে কেন আমার ভালবাসার মানুষটি এমন? কেন প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ?

এমনিভাবে চারপাশে ঘিরে থাকে আমাদের প্রত্যশা, প্রত্যাশা আর অফুরন্ত এবং অত্যাধিক প্রত্যাশা। প্রত্যাশা পূরণ না হলেই আসে হতাশা এবং রাগ। তাহলে দেখাই যাচ্ছে, রাগের সৃষ্টি হতে পারে আমাদের করা কিছু প্রত্যাশা থেকে।

তাই রাগ থেকে বাঁচতে প্রত্যাশার পরিমাণ কতটুকু রাখবেন একটু ভেবে দেখেন।



লক্ষণীয়ঃ

একটু লক্ষ্য করুন, শুধুমাত্র অন্যের আচরণ দেখে সৃষ্টি হওয়া বা বাস্তববর্জিত প্রত্যাশার কারণে আমি কেন হতাশা এবং রাগের শিকার হব?

আমাকে বুঝতে হবে যে - আমি যা প্রত্যাশা করছি, যার কাছে করছি - তার কাছে তা প্রত্যাশিত নাও হতে পারে। সে কারণে – অপ্রত্যাশিত কোন কিছু পূরনে আপনি, আমি অর্থাৎ কেউ নিশ্চয়ই সচেষ্ট হব না।

হ্যাঁ, আমরা প্রত্যাশা করব। তবে আমাদের প্রত্যাশা হবে বাস্তবের সাথে মিল রেখে। অথবা যার কাছে প্রত্যাশা করছি তার যোগ্যতা/ ক্ষমতা বা ইচ্ছার সাথে মিল রেখে বা সে যতটুকু পারবে তার চেয়ে একটু কমিয়ে। কেননা, প্রত্যাশার বাইরে কিছু পেলে দেখবেন তা দিবে অপ্রত্যাশিত আনন্দ।

তাই আসুন আমরা আমাদের আপনজনদের এবং অন্যের প্রতি প্রত্যাশা কমিয়ে রাখি।



রাগের সময় করণীয়ঃ

ধরি, যে কোন কারণেই, আপাতত আমি রেগে গিয়েছি এবং আপনি জানেন আপনার রাগ ক্ষতিকর বা ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম চালিয়ে যায় আপনার জীবনে, তখন আপনি কি করবেন?

আমরা জানি একটাই মাত্র উপায় - সেই ক্ষতিকর এবং ধ্বংসাত্মক রাগটিকে নিয়ন্ত্রণ। কিন্তু কিভাবে?

তাহলে শুনুন, রাগ নিয়ন্ত্রনের জন্য অনেক ধরনের কলা কৌশল রয়েছে। আপনাকে আয়ত্ব করতে হবে সেগুলো। সে সমস্ত কলা কৌশলের মাঝ থেকে আমি আজ এখানে একটি কৌশল সংক্ষেপে তুলে ধরছি।



* কৌশল> আত্ম-কথাঃ

০ যখন’ই বুঝতে পারব আমি রেগে গিয়েছি বা যাচ্ছি, সাথে সাথে নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করব এই বলে, “আমি রেগে গিয়েছি বা যাচ্ছি” (এটাকে বলা হয়, রাগ নিয়ন্ত্রণের প্রথম ধাপ)

০ পরবর্তীতে আমরা ১০০০ থেকে ১ পর্যন্ত উল্টোদিকে গণনা শুরু করতে পারি বা বিপরীত কোন চিন্তা করতে পারি। যেমন, রেগে যাওয়ার বিপরীত চিন্তা – আমি শান্ত আছি বা আমার মন ভাল আছে বা আমি শান্ত আছি এই ধরনের কিছু কথা। রাগ কমে না যাওয়া পর্যন্ত এভাবে বলতে থাকব। বেশ কয়েকবার বলার পর আশা করা যায় আপনার রাগটি পূর্বের তুলনায় কমে আসতে শুরু করবে। কারণ, রেগে যাওয়ার সময় শরীরের যে হরমোনগুলো আপনাকে রাগ বাড়াতে যে শক্তি প্রদান করেছে তা বিপরীত চিন্তার কারণে হ্রাস পেতে শুরু করবে (রাগ নিয়ন্ত্রণের দ্বিতীয় ধাপ)



০ এভাবে ক্রমশ রাগটি কমে আসতে শুরু করলে আমি তখন ভেবে দেখব, আমি কেন রেগে গিয়েছিলাম?

নিজেকে শান্ত রাখার জন্য ঐ মুহূর্তে রেগে না গিয়ে ঠিক কি করলে ভাল হত বা রেগে না গিয়ে আর কি কি করা যেত (রাগ নিয়ন্ত্রণের তৃতীয় ধাপ)

# এমন ভাবনা এবং তদানুযায়ী কাজ করতে পারলে যেমনটি আমার বর্তমান রাগ যাবে কমে যাবে ঠিক তেমনিভাবে ভবিষ্যতের রাগ আসবে আপনার নিয়ন্ত্রণে।



কিছু চিন্তাই যদি হয় একটি সুস্থ জীবনের প্রধান নিয়ামক, তাহলে আসুন প্রত্যাশার বিপরীতে চিন্তা করতে শিখি।

ধন্যবাদ সবাইকে।



©মুহাম্মদ খোরশেদ আলম,

প্রশিক্ষনরত এডুকেশনাল সাইকোলজিস্ট,

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।


মন্তব্য ৫ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ০১ লা নভেম্বর, ২০১৩ সকাল ১০:১২

মুহাম্মদ খোরশেদ আলম বলেছেন: রাগ নিয়ে অ্যানি বাড়ৈ'র একটি লেখা আমার কাছে খুব ভাল লেগেছে। সময় থাকলে আপনি একটু দেখে নিতে পারেন।
Click This Link

২| ০৩ রা নভেম্বর, ২০১৩ রাত ১০:৩২

অ্যানি বাড়ৈ বলেছেন: ধন্যবাদ :) আপনার লেখাটাও ভালো লেগেছে। আরও প্রত্যাশা থাকল।

০৩ রা নভেম্বর, ২০১৩ রাত ১০:৪৯

মুহাম্মদ খোরশেদ আলম বলেছেন: ধন্যবাদ, অ্যানি বাড়ৈ।
আপনি হয়তো জানেন না, আপনার লেখা দেখেই আমার কিছু লিখতে মনে চাইল। যার ফলাফলে আমার এই লেখা।
দুআ করবেন যেন আপনার অনুসারি হতে পারি।

৩| ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১৩ রাত ১:০৩

জুয়েল০০১ বলেছেন: রাগের সময় করণীয় ধাপগুলো কাজ করে কি?????? :(

০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১২:২৮

মুহাম্মদ খোরশেদ আলম বলেছেন: জ্বি জনাব, ধাপগুলো কাজ করে বলেই অনুসরণের জন্য তুলে ধরা হয়েছে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.