![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সকল বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা ও গবেষণার পরিবেশ নিশ্চিত করুন।
কয়েক মাস আগে আমার ফেসবুকে মালয়েশিয়া থেকে একজন সুহৃদ ইউটিউব থেকে একটি ভিডিও পাঠিয়ে আমার প্রতিক্রিয়া জানতে চেয়েছিল। ভিডিওটি ছিল নকুল কুমার বিশ্বাসের কুরআন নিয়ে দিগন- টেলিভিশনে গাওয়া একটি গানের।
নকুল কুমার বিশ্বাসকে চিনতাম ১৫-১৬ বছর আগ থেকেই। আমার মরহুম নানা আল্লামা আযীযুর রহমান নেছারাবাদী কায়েদ হুজুরের মাধ্যমে সর্বপ্রথম নকুলের সাথে পরিচয় ঘটে। তিনি নকুলের গানের ক্যাসেট কিনে শিল্পী দিয়ে বাজনা বাদ দিয়ে নকুলের গান রেকর্ড করে শুনতেন এবং আমাদের মুখস' করাতেন। নকুলের ‘ভালো হইতে পয়সা লাগে না’ ‘যদি মসজিদ মন্দিরে জুতা চুরি হয়, দয়াল তোমায় ক্যামনে ডাকি নির্জন নিরালায়’ ইত্যাদি গান এখনো মাঝে মধ্যে বলে উঠি মনের অজানে-ই। একজন অসামপ্রদায়িক আলেমে দ্বীন থেকে আরেকজন অসামপ্রদায়িক গায়কের সন্ধান পাওয়ার পর থেকেই তার ওপর অন্যরকম শ্রদ্ধা পোষণ করতাম। নকুলের কোনো গান পেলে তা শুনতে চেষ্টা করতাম। বিশেষ করে বিটিভির ইত্যাদিতে নকুলের কোনো গানই মিস করতাম না।
কিন' বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়ার পর কর্মব্যস-তা বেড়ে যাওয়ার কারণে আর সময় করে নকুলের গান শোনা হয়নি। এরই মধ্যে নকুলের কুরআন নিয়ে ভিডিও গানটি পেয়ে অত্যন- আনন্দিত হলাম। এক রকম আবেগ নিয়ে গানটি শুনে চোখের পানি আর ধরে রাখতে পারিনি। কুরআন নিয়ে নকুলের অসাধারণ এ গানটি শোনার পরপরই কিছু একটা লেখার সিদ্ধান- নিয়েছিলাম। বিশেষ করে বর্তমানে বাংলাদেশসহ বিশ্বে যেভাবে কুরআনকে অপমান করা হচ্ছে, তখন নকুল কুমারের এই গান কুরআন বিদ্বেষীদের গালে প্রচণ্ড কশাঘাত করবে বৈ কি?
যা হোক, নকুল কুমার বিশ্বাস তার গান দিয়ে সমাজের নানা অপকর্মকে সুনিপুণভাবে তুলে ধরেন মানুষের সামনে। যুক্তরাষ্ট্রের একজন খ্রিষ্টান ধর্মযাজকের কুরআন পোড়ানোর ঘোষণার প্রতিবাদে কুরআনের অবিনশ্বরতা নিয়ে নকুল কুমার বিশ্বাস যে গান গেয়েছেন তা সব বিবেকবান মানুষকে নাড়া দেবে বলে আমার বিশ্বাস। বিশেষ করে আমরা মুসলমান হয়েও কুরআনকে নিয়ে যারা ঠাট্টা-বিদ্রূপ করছি, তাদের চোখে আঙুল দিয়ে নকুল কুমার বিশ্বাস বুঝিয়ে দিয়েছেন কুরআন কী জিনিস। একজন অমুসলিম হয়েও মুসলমানের ধর্মগ্রন' সম্পর্কে তিনি যে অগাধ প্রেম ও বিশ্বাস দেখিয়েছেন তা এক কথায় অপূর্ব।
নকুল কুমার বিশ্বাস এ গানটির প্রেক্ষাপট বর্ণনা করে বলেন, গানের পেছনে এক একটা ঘটনা থাকে। ফ্লোরিডার একজন ধর্মজাযক ঘোষণা দিয়েছেন, ঈদের দিনে তিনি কুরআন পোড়াবেন। এত বড় অপমান সহ্য হওয়ার নয়। আমি ইতিহাসের ছাত্র। মুহাম্মদ সা:-কে প্রচণ্ড ভালোবাসি। আমি একটি টিভিতে লাইভ প্রোগ্রামে ছিলাম। একজন ফোন করে আমাকে বললেন, নকুল ভাই আপনি তো প্রগতিশীল মানুষ। একজন ধর্মজাযক যে কুরআন পোড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে, সে সম্পর্কে আপনার অনুভূতি কী? ওই প্রোগ্রামের এক ঘণ্টার বিরতিতেই আমি এ গানটি লিখে ফেলি। এরপর ওখানেই আমি গানটি গাই। আমার কাছে গানটি খুব ভালো লেগেছিল...
আমি বললাম, শুধু একখানা কুরআন শরিফ কেন বন্ধু-
যদি আগুন লেগে ধ্বংস হয় পৃথিবীর সব বইয়ের দোকান
তবু বিশ্ব থেকে হারাবে না পবিত্র কুরআন
করবে কেমন করে কুরআন ধ্বংস আগুনেরও তেজ
আছে বিশ্ব ভরা লক্ষ লক্ষ কুরআনের হাফেজ
এরপর তিনি আরো বলেন, ‘আমি যেটা বলছি আবেগ দিয়ে নয়। ইসলাম ধর্মে কুরআন হিফজ করার বিধান আছে। একজন কুরআন হাফেজ মানেই চলন- কুরআন। অতএব একজন কুরআনের হাফেজ বেঁচে থাকতে কুরআন হারাবে না। কুরআনের কেউ ক্ষতি করতে পারবে না।
তারা ছাপায়ে আসমানি গ্রন'
বাঁচাবে ইসলামের মান
বিশ্ব থেকে হারাবে না পবিত্র কুরআন।
নকুল কুমার আরো বলেন, “কুরআনের বিরুদ্ধে এর আগে আরো ষড়যন্ত্র হয়েছিল। ভারতে কুরআন নিষিদ্ধ করার জন্য মামলা হয়েছিল। সালমান রুশদী লিখেছিল, ‘স্যাটানিক ভার্সেস’। কিন' কোনো কিছুই কুরআনকে রুখে দিতে পারেনি।”
করল কুরআন নিয়ে কত লোকে আদালতে কেস
লিখল সালমান রুশদী বিদ্বেষপূর্ণ স্যাটানিক ভার্সেস
তবু আল কুরআনের নূরের বাতি
সারাবিশ্বে বিদ্যমান
বিশ্ব থেকে হারাবে না পবিত্র কুরআন
পাকিস-ানের সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউল হক বিমান দুর্ঘটনায় মারা গেছেন। সব পুড়ে গেছে। কিন' তার সাথে থাকা একটি ছোট্ট কুরআন ছিল যা পোড়েনি। আমার কাছে ওই পেপার কাটিং এখনো আছে। ওই কুরআনের গায়ে কোনো আগুন স্পর্শ করেনি। আমি তাই ষড়যন্ত্রকারীদের স্মরণ করিয়ে বলতে চাই
দেখ পাকিস-ানের জিয়া মরল দুর্ঘটনায় ভাই
তার বিমান পুড়ে ছাই হয়েছে কুরআন পুড়ে নাই
যেমন ছিল তেমন আছে একটি সূরাও হয়নি ম্লান
বিশ্ব থেকে হারাবে না পবিত্র কুরআন।
তিনি আরো বলেন,
যারা কুরআন ধ্বংস করতে চায় জানে না তারা
ওই গ্রনে'র প্রতি পাতা ফেরেশতারা সদা দিচ্ছে পাহারা
এ যে আমার বিশ্ব নবীর সাধনার ধন
নকুল কয় রাব্বুলের দান
বিশ্ব থেকে হারাবে না পবিত্র কুরআন।
নকুল কুমার বিশ্বাস একজন অমুসলিম হয়েও অনুধাবন করেছেন যে, কুরআনকে অপমান করা সহ্য হওয়ার নয়। কুরআন আল্লাহর বাণী যা রাসূলের (সা ওপর নাজিল হয়েছে। এ মহাগ্রন'কে আল্লাহই সংরক্ষণের ব্যবস'া করেছেন। এর ক্ষতি কেউ করতে পারবে না। এ সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয় আমি কুরআন অবতীর্ণ করেছি এবং অবশ্যই আমি তা নিজেই সংরক্ষণ করব।’ এ কথার সত্যতা আমরা উপলব্ধি করতে পারি যখন দেখি, অন্য কোনো ধর্মীয় গ্রন' দুনিয়ার বুকে অবিকৃত নেই এবং তা কারো মুখস'ও নেই। শুধু কুরআনই হুবহু দুনিয়ার বুকে টিকে আছে। এর একটি অক্ষরেরও নড়চড় হয়নি। নকুল সত্যই বলেছেন, কুরআন বিদ্বেষীরা যতই ষড়যন্ত্র করুক আল কুরআনের নূরের বাতি কখনো নিভে যাবে না। কুরআন তার আলো কেয়ামত পর্যন- ছড়াবেই। বরং যারা কুরআনকে তুচ্ছজ্ঞান করবে তারাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
নকুল কুমার কুরআন সম্পর্কে তার সত্য উপলব্ধি মানুষের সামনে গানের মাধ্যমে তুলে ধরেছেন। যাদের কুরআনের ব্যাপারে গাত্রদাহ আছে তারা এ গানটি মনোযোগসহকারে শুনলে তাদের বোধোদয় হবে এবং ভ্রানি- দূর হবে বলে আমার বিশ্বাস। ইদানীং আমাদের দেশের কিছু হিন্দু কুরআনকে কটাক্ষ করার চেষ্টা করছে। তারা কারো প্ররোচনায় এ কাজ করছে কি না, তা আমার জানা নেই। আমি তাদের নকুল কুমারের এই গানের মর্মার্থ অনুধাবন করার আহ্বান জানাই। একজন অমুসলিম হয়েও নকুল কুমার যে সত্য তুলে ধরেছেন তার জন্য রইল কৃতজ্ঞতা। আল্লাহ তাকে হেদায়েত কল্যাণ করুন। আমিন।
লেখক : সহকারী অধ্যাপক, আন-র্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম
[email protected]
[ দৈনিক নয়া দিগন্ত, ২৮।০১।২০১২ থেকে]
ভিডিও লিংকঃ
http://www.youtube.com/watch?v=mQM4zlhzqdY
২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১২ রাত ৯:৪৩
বাঙাল শিক্ষক বলেছেন: ধন্যবাদ! চেয়ারম্যান ভাই
©somewhere in net ltd.
১|
৩০ শে জানুয়ারি, ২০১২ বিকাল ৫:৩৮
চেয়ারম্যান০০৭ বলেছেন: খুব ভালো লাগলো ভাই।