![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সহজ মানুষ, ভজে দ্যাখ না রে মন দিব্যজ্ঞ্যানে,পাবি রে অমুল্যনিধি, বর্তমানে, পাবি বর্তমানে।
“আলোর ভিতরেও থাকে ছায়া, আর আধুনিক শহরের ছায়ায় হারিয়ে যায় নদীর ডাক।”
আমরা এক অদ্ভুত দ্বন্দ্বে বসবাস করছি যেখানে লোকসংস্কৃতির অনুরণন আর আধুনিকতার কোলাহল পরস্পরের মুখোমুখি। যখন আমরা আমাদের পরিচয়ের কথা ভাবি, তখন মনে এই এক অদ্ভুত দ্বন্দ্ব জেগে ওঠে। একদিকে রয়েছে আমাদের শিকড়, আমাদের লোকসংস্কৃতির উষ্ণ, মাটির গন্ধে ভরা ঐতিহ্য, গ্রামীণ গীত, পালাগান, পাথরের রূপকথা; যা আমাদের পূর্বপুরুষদের গল্প, গান, নাচ আর কারুকাজে জড়িয়ে আছে। অন্যদিকে রয়েছে আধুনিকতার ঝকঝকে, দ্রুতগতির জগৎ, আধুনিক জীবনের সুবিধা; যেখানে প্রযুক্তির স্বাচ্ছন্দ্য, বিশ্বায়ন আর নগরায়ন আমাদের জীবনের প্রতিটি কোণে প্রভাব বিস্তার করছে। এই দুইয়ের মাঝে আমরা দাঁড়িয়ে, যেন এক নদীর দুই তীরে পা রেখে ভারসাম্য খুঁজছি। এই দ্বন্দ্ব কি আমাদের পরিচয়কে বিভক্ত করে, নাকি এটি আমাদের আরও সমৃদ্ধ করে? আসুন, এই প্রশ্নের গভীরে ডুব দিই।
লোকসংস্কৃতি: আমাদের শিকড়ের গান
লোকসংস্কৃতি আমাদের অতীতের গল্প। লোকসংস্কৃতি শুধু পুরাতন নয়, এটি বেঁচে থাকার ভাষা। এটি মানুষের মৌলিক অনুভূতি, হাসি-কান্না, প্রেম-বিদ্রোহের শিল্পভাষা। একটি ঢোলের শব্দ, একটি বাইনের সুর, একটি ‘আলপনা’র নকশা; সবকিছুই যেন আমাদের অস্তিত্বের ছায়াচিত্র। পল্লীবাংলার গল্প আমাদের শেখায় সময়ের ধৈর্য; লোকগীতি মনকে দেয় আরামের ছায়া, মনে করিয়ে দেয় আমরা কোথা থেকে এসেছি; পুতুলনাচ বা যাত্রাপালা, আড়ালের গল্প খুলে দেয় সাধারণের চোখে। এটি সেই পাল্কির গান, যা গ্রামের পথে পথে বেজে উঠতো; সেই লোককথা, যা ঠাকুমার কোল ঘেঁষে শোনা; সেই মাটির পুতুল, যা হাতে হাতে তৈরি হয়ে আমাদের শৈশবকে রাঙিয়েছে। বাংলার লোকসংস্কৃতি মানে ভাটিয়ালি গানের সুর, পটচিত্রের রঙিন ক্যানভাস, বাউলের আধ্যাত্মিক সন্ধান, আর মেলায় মেলায় ছড়িয়ে থাকা হারিয়ে যাওয়া স্মৃতির ঝাঁপি। এই সংস্কৃতি আমাদের শিকড়, আমাদের মাটির সঙ্গে সংযোগ, আমাদের ‘আমি’ হওয়ার গল্প। এইসব ঐতিহ্য কখনো লেখা হয়নি প্রযুক্তির কোডে, কিন্তু চিরকাল লেখা থাকে হৃদয়ের গোপন স্থানে।
কিন্তু আজ, এই লোকসংস্কৃতি কি ক্রমশ বিবর্ণ হয়ে যাচ্ছে? গ্রামের মাটির পথে এখন কংক্রিটের ছোঁয়া, আর স্মার্টফোনের পর্দায় আমরা বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলছি। আমাদের তরুণ প্রজন্ম কি আর জানে, ভাটিয়ালি গানের সুরে কীভাবে নদীর তীরে সূর্য ডুবে যায়? লোকসংস্কৃতি আমাদের পরিচয়ের একটি অংশ, কিন্তু তা কি আধুনিকতার জোয়ারে ভেসে যাচ্ছে?
আধুনিকতা: শহরের প্রতিচ্ছবি আর বিশ্বের সাথে পা মেলানো
আধুনিকতা এসেছে পরিবর্তনের বার্তাবাহক হয়ে। প্রযুক্তি, গ্লোবাল সংস্কৃতি, শহুরে জীবন; সবই আমাদের নতুন সম্ভাবনার দিক দেখিয়েছে। আমরা আজ AI-চালিত ভবিষ্যৎ ভাবছি, যেখানে গল্প গড়ছে যন্ত্র; সোশ্যাল মিডিয়া আমাদের যোগাযোগের সংজ্ঞা পাল্টে দিয়েছে; নিউরোনের মতো ব্যস্ত জীবন আমাদের ভাবনার সুযোগ কমিয়ে দিয়েছে। আধুনিকতা আমাদের দিয়েছে গতি, সুবিধা, আর সীমাহীন সম্ভাবনা। ইন্টারনেট আমাদের হাতের মুঠোয় পৃথিবী এনে দিয়েছে। আমরা এক ক্লিকে বিশ্বের যেকোনো প্রান্তে পৌঁছে যাই, নতুন ভাষা শিখি, নতুন সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিত হই। আধুনিকতা আমাদের পরিচয়কে বিস্তৃত করেছে; আমরা আর শুধু আমাদের গ্রামের, শহরের বা দেশের মানুষ নই; আমরা বিশ্বনাগরিক।
তবুও প্রশ্ন জাগে, এই পরিবর্তন কি আমাদের পরিচয়কে বিবর্ণ করে দিচ্ছে? এই আধুনিকতার দৌড়ে আমরা কি নিজেদের হারিয়ে ফেলছি? সোশ্যাল মিডিয়ার ঝড়ে আমাদের সংস্কৃতি কি অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছে? পশ্চিমা ফ্যাশন, হলিউডের গল্প, আর ইংরেজি গানের তালে আমরা কি ভুলে যাচ্ছি আমাদের নিজস্ব সুর? আধুনিকতা আমাদের পরিচয়কে নতুন রূপ দিচ্ছে, কিন্তু এই রূপান্তর কি আমাদের শিকড় থেকে দূরে সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে?
দ্বন্দ্বের মাঝে ভারসাম্য
সংস্কৃতির ইতিহাসে দ্বন্দ্ব নতুন কিছু নয়, বরং এটি একটি চিরন্তন স্রোত, যা প্রবাহিত হয়েছে যুগে যুগে, সমাজে সমাজে। লোকসংস্কৃতি ও আধুনিকতা, এই দুই শক্তির মধ্যকার টানাপোড়েন অনেক সময় দ্বন্দ্বের রূপ নেয়, আবার কখনো এক আশ্চর্য সহাবস্থান ও ভারসাম্য সৃষ্টি করে, যা আমাদের চেতনাজগতে নতুন দিগন্ত খুলে দেয়।
প্রকৃতপক্ষে, লোকসংস্কৃতি আর আধুনিকতা একে অপরকে নির্মূল করার জন্য নয়, বরং তারা পরিপূরক হয়ে উঠে যদি আমরা তাদের মধ্যে সেতুবন্ধন নির্মাণ করতে পারি। প্রশ্ন উঠে, কীভাবে এই যুগান্তকারী প্রযুক্তির উত্থানে আমরা আমাদের শিকড়ের সঙ্গে সংযুক্ত থাকি? কীভাবে চিত্র, শব্দ ও রূপকথার ভাষায় আমরা একসাথে অতীত ও বর্তমানকে জড়াই?
ধরুন, বাংলার পটচিত্র। এককালে এটি ছিল গ্রামের মাটির দেয়ালে শিল্পীদের হাতে গড়া কাহিনিচিত্র, যার মাধ্যমে একটি গল্প বলতো পটুয়ার রঙ ও রেখা। কিন্তু আজ এই শিল্পই নতুন প্রাণ পেয়েছে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে। শিল্পীরা তাদের এই ঐতিহ্যকে ওয়েবসাইট, ইন্সটাগ্রাম বা NFT আকারে বিশ্বজুড়ে তুলে ধরছেন, যেখানে পটচিত্র আর শুধু গ্রামীণ নয়, বরং আন্তর্জাতিক শিল্পবোধের অংশ।
এখন দেখুন বাউল গান। সেই হৃদয়ছোঁয়া অনাস্বাদ্বিত সুর, যা একসময় খাস বাংলার মাঠে বাজত, এখন ইউটিউব, স্পটিফাই, এমনকি AI-generated প্লে-লিস্টে জায়গা করে নিচ্ছে। তরুণ প্রজন্ম তাদের স্মার্টফোনে লোকসংগীতের মোহে ডুবে যাচ্ছে, সেখানে তারা খুঁজে পাচ্ছে এক গভীর আত্মিক তৃপ্তি, যা হয়তো কোনো ইলেকট্রনিক বিট বা ডিজিটাল সিন্থেসাইজার দিতে পারে না।
এমনকি লোকগাথা, ছড়ানামা, বিয়ের গান, পুতুলনাচের ছায়া, সবই এখন নিউ মিডিয়ার ভাষায় রিকনফিগারড হচ্ছে। এ এক মহারূপান্তর, যেখানে ঐতিহ্য তার নতুন শরীর খুঁজে পায়, এবং আধুনিকতা তার আত্মা পায় শিকড় থেকে।
এই মিলন কি শুধুই প্রযুক্তির বিজয়, না কি এটি এক গভীর মানবিক সন্ধি? এখানেই আসে “দ্বন্দ্বের মাঝে ভারসাম্য”, যেখানে আমরা বুঝি, যে কোনো সংস্কৃতির পরিপক্বতা আসে দ্বন্দ্ব নয়, বরং মেলবন্ধনের মধ্য দিয়ে।
আমাদের পরিচয়ের নতুন সংজ্ঞা
আমাদের পরিচয় কোনো স্থির ছবি নয়। এটি একটি প্রবাহমান নদী, যে নদী জন্ম নেয় শিকড়ের গভীরতা থেকে, আবার ভেসে চলে ভবিষ্যতের বিস্তৃত অনন্তে। এ নদী পথে পথে নতুন স্রোতের সঙ্গে মিশে, নিজেকে পুনর্গঠন করে, নবতর অর্থে সঞ্চারিত হয়। লোকসংস্কৃতি আমাদের অতীতের কাহিনি, স্মৃতি, ও আবেগের বাহক; আর আধুনিকতা আমাদের সম্ভাবনার দিগন্ত, যেখানে প্রযুক্তি, ভাবনা ও ভাষা এক ভিন্নতর গতি পায়।
এই দুইয়ের মধ্যে দ্বন্দ্ব নয়, বরং একটি আন্তরিক সংলাপের প্রয়োজন; যেখানে আমরা প্রশ্ন করি ‘‘আমি কে?’’ আর উত্তর খুঁজি সেই সেতুবন্ধে, যা অতীত ও বর্তমানের মাঝপথে দাঁড়িয়ে একটি নতুন পরিচয়ের ভাষা তৈরি করে।
একটি পটচিত্র, যা আগে গ্রামের মাটির দেয়ালে শিল্পীর হাতে রচিত হতো, আজ সে ছবি আমরা কিনি মেলায়, আর শেয়ার করি ইনস্টাগ্রামে। এটি শুধু দৃষ্টির বহুমুখিতা নয়, এটি এক বহুস্তরীয় অভিজ্ঞতা, যেখানে আমাদের শিকড় দৃষ্টি পায় ক্লাউড স্টোরেজে, ট্যাগ লাইনের নীচে। বাউল গানের সুরে যখন আমরা নতুন ইলেকট্রনিক বিট জুড়ে দিই, তখন ঐতিহ্য এক নতুন তরঙ্গে ধ্বনিত হয়, যে তরঙ্গ নতুন প্রজন্মকে চুম্বকের মতো আকর্ষণ করে, অথচ হৃদয়ে রেখে দেয় সেই আদিম টান।
পরিচয়ের এই নতুন সংজ্ঞা বাস্তবতাকে ধারণ করে, তাতে আছে ধূলি ও ডিজিটাল, শিকড় ও স্ক্রিন, নৈঃশব্দ্য ও নোটিফিকেশন। আমরা সেই মানুষ, যারা গ্রামের ভাটিয়ালিকে টিকটকে শুনি, আবার চা খেতে খেতে আলপনার ছবি এডিট করি ফটোশপে। আমাদের পরিচয় এখন আর কোনো একমাত্রিক তর্জনী নয়, বরং এটি বহু সুর, বহু রঙ, বহু পথের এক সমবায়ে গড়া।
এই সংজ্ঞা আমাদের শেখায়, চিরায়ত ও নতুনের মাঝে একটি সংলাপ তৈরি করা মানেই আত্মপরিচয়ের নবজন্ম। এর মধ্য দিয়ে আমরা আবিষ্কার করি, কীভাবে আমরা শিকড়ের গভীরতা বজায় রেখেও আধুনিকতার আকাশে ডানা মেলতে পারি।
আমাদের দায়বদ্ধতা
এই যুগান্তকারী দ্বন্দ্বের মাঝে দাঁড়িয়ে, আমরা শুধুই দর্শক নই; আমরা সক্রিয় অংশগ্রহণকারী, দায়িত্বশীল স্রষ্টা। লোকসংস্কৃতি আর আধুনিকতার এই টানাপোড়েনের মাঝখানে আমাদের অবস্থান একটি সেতুর মতো, যা অতীত ও ভবিষ্যতের মধ্যে সংযোগ ঘটায়, কিন্তু ভেঙে পড়ে না।
লোকসংস্কৃতিকে রক্ষা করতে হবে ঠিকই, কিন্তু তা শুধু সংরক্ষণ নয়, প্রাসঙ্গিকতা বজায় রেখে পুনর্জন্মের মাধ্যমে। যদি আমরা ঐতিহ্যকে শুধুই জাদুঘরের প্রদর্শনীতে পরিণত করি, তাহলে তা অচল, অচলিত হয়ে যাবে। বরং দরকার এমন একটি সাংস্কৃতিক পুনঃনির্মাণ, যেখানে লোকসংস্কৃতি জীবন্ত থাকে, সমসাময়িক জীবনের ছন্দে মিশে গিয়ে তার নতুন রূপ খুঁজে পায়।
তাই আমাদের দায়িত্ব:
শিক্ষাব্যবস্থায় লোকসংস্কৃতির অন্তর্ভুক্তি: স্কুলে শিশুদের লোকগান শেখানো মানে শুধু গান শেখানো নয়, এটি তাদের আত্মপরিচয় গঠনের একটি সূক্ষ্ম পথে প্রথম পদক্ষেপ।
স্থানীয় শিল্পীদের ডিজিটাল পরিসরে উন্মুক্ত করা: একটি অনলাইন পোর্টাল, একটি ইউটিউব চ্যানেল, কিংবা একটি ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম; এই উদ্যোগগুলি শিল্পকে বাঁচায়, শিল্পীকে বাঁচায়।
দৈনন্দিন জীবনে লোকচেতনার ছোঁয়া: আমাদের পোশাকে, আমাদের কথায়, ঘরের সাজে বা উৎসব উদযাপনে, সকল ক্ষেত্রে শিকড়ের ছায়া থাকলে তা শুধুই গর্ব নয়, তা হয়ে ওঠে নিত্যকালের এক শিল্পবোধ।
তবে এর বিপরীতে, আধুনিকতাকে ভয়ের প্রতীক বানানো অনুচিত। প্রযুক্তি শুধুই বিভাজন নয়; এটি হতে পারে একটি প্রকাশমাধ্যম, একটি অনুবাদকের ভূমিকায়। AI, social media, AR/VR, এইসব প্রযুক্তি এখন শুধু তথ্য নয়, সংস্কৃতির বাহকও হয়ে উঠছে। যখন আমরা বাউল গানের সুরে ইলেকট্রনিক বিট যোগ করি, তখন আমরা শুধুই পরিবর্তন করি না, আমরা সংরক্ষণও করি, নতুন ভোক্তাকে সুরের ভাষায় টেনে আনি।
আমাদের মূল কাজ হলো:
দুইয়ের মধ্যে ভারসাম্য সৃষ্টি: অতীত আর বর্তমানের মাঝে এমন একটি সংলাপ গঠন করা, যা অতীতকে সমাধিতে নয়, আধুনিকতার শরীরে পুনর্জীবনের সুযোগ দেয়।
সংস্কৃতির বহুমুখিতা স্বীকার করে নেওয়া: লোকসংস্কৃতির স্বর যদি পূর্বের হয়, আধুনিকতা তার প্রতিধ্বনি। এই প্রতিধ্বনিতে যদি আমরা সুর মেলাতে পারি, তবেই হয় একটি পরিপূর্ণ সংস্কৃতির উদযাপন।
দুইয়ের দ্বন্দ্ব নয়, সহাবস্থান হোক
লোকসংস্কৃতি ও আধুনিকতা, দুই বিপরীত স্রোতের মতো মনে হলেও, এই স্রোতদ্বয়ের মিলনস্থলে জন্ম নেয় নতুন চেতনা। এই দ্বন্দ্ব কখনো নিঃশেষ হওয়ার নয়; বরং এটি আমাদের জন্য সহাবস্থানের সম্ভাবনা সৃষ্টি করে, যেখানে শিকড়ের সৌন্দর্য ও প্রযুক্তির গতিময়তা একে অপরকে পরিপূরক করে।
একজন কবি যদি ঢাকাই জামার সূক্ষ্ম নকশা নিয়ে কবিতা লেখেন, তা হয়তো ছাপা হবে নিউ মিডিয়ার সাহিত্যে, ডিজিটাল পোর্টালে, বা স্নিগ্ধ ভিজ্যুয়াল ব্লগে। এখানেই বোঝা যায় যে লোকসংস্কৃতির ভাবনা আধুনিক ক্যানভাসে আঁকা যায়, এবং তার শিল্পমূল্য কমে না, বরং নতুন আঙ্গিকে বিকশিত হয়।
একজন ডিজাইনার লোকশিল্পের মোটিফকে ফিউশন ফ্যাশনের অনুষঙ্গ বানিয়ে শহুরে র্যাম্পে তুলে আনেন। পুতুলনাচ বা আলপনার রঙ তখন ফ্যাশনের রঙতুলিতে ফিরে আসে, বদলে দেয় আধুনিকতার জড়তায় আটকে থাকা ভাষা। এই মেলবন্ধন আমাদের শেখায় লোকঐতিহ্য কেবল অতীত নয়, এটি ভবিষ্যতেরও সংজ্ঞা গড়তে পারে।
বর্তমানে প্রযুক্তির সহায়তায় লোককাহিনি, লোকগীতি এবং প্রান্তিক সংস্কৃতির অনুরণন পৌঁছে যাচ্ছে বিশ্বজুড়ে। বাংলা বাউল গান হয়তো এখন ইউটিউবের এলগরিদমে জায়গা পাচ্ছে, কিংবা কোনো নেটফ্লিক্স সিরিজে উঠে আসছে পালাগানের ছায়া। এটি শুধু সংস্কৃতির ব্যাপ্তি নয়, শিকড়ের জলের মতো তৃষ্ণার্ত অন্তরকে সেচ দেয়, এই জল আজও আধুনিক মানুষ খুঁজে ফেরে, তার অন্তরের তলদেশে।
আধুনিকতা যদি হয় গতি, লোকসংস্কৃতি তার অন্তর্গত ছন্দ। তাই আমাদের উচিত নয় এই দুইয়ের দ্বন্দ্ব বাড়ানো, বরং এমন সহাবস্থান খুঁজে বের করা যেখানে তারা একে অপরকে আলোকিত করে। ঠিক যেমন রাতের নীরবতায় শোনা যায় নদীর কলধ্বনি, আর শহরের কোলাহলে সুরের ছায়া খেলে যায় নিরবে।
শেষকথা: চেতনার এক নতুন ভাষা
লোকসংস্কৃতি আর আধুনিকতার দ্বন্দ্ব আমাদের পরিচয়ের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটি আমাদেরকে প্রশ্ন করতে বাধ্য করে, “আমরা কে? আমরা কোথা থেকে এসেছি, আর কোথায় যাচ্ছি?” এই দ্বন্দ্ব আমাদেরকে শুধু বিভ্রান্ত করে না, বরং আমাদের পরিচয়কে আরও গভীর, আরও বৈচিত্র্যময় করে। আমরা যখন আমাদের শিকড়ের গান গাইব, আর আধুনিকতার ঢেউয়ে ভাসব, তখনই আমরা আমাদের সত্যিকারের পরিচয় খুঁজে পাব, যা একই সঙ্গে স্থানীয় আর বিশ্বজনীন।
আমাদের উচিত লোকসংস্কৃতি আর আধুনিকতার মধ্যকার সেতুবন্ধন রচনা করা। একদিকে শিকড়ের স্বাদ, অন্যদিকে ডানার বিস্তার, এই দুইয়ের মিলনই আসল পরিচয়। পরিচয় জন্ম নেয় যেখানে পল্লীর বাঁশি আর শহরের গিটার একসঙ্গে বাজে, যেখানে আমরা নিজের ভাষায় বিশ্বকে বলি, “এটাই আমি।”
“লোকজ সুরে ভেসে আসে আধুনিক মন, আর হৃদয় জেগে ওঠে তার নিজস্ব অনুরণনে।”
©somewhere in net ltd.
১|
২৯ শে জুলাই, ২০২৫ রাত ৯:১১
কামাল১৮ বলেছেন:
আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম।শাহ আব্দুল করিম।
উগ্র সালাফি মতবাদ প্রচারের পর আমাদের এই গজব অবস্থা।