নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

লেখকের জন্ম ০৯ অক্টোবর ২০০০ সালে যশোর জেলায়। তিনি ২০১৭ সালে এসএসসি পাস করেন। বর্তমানে তিনি একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদ্যুৎ ও বৈদ্যুতিন প্রকৌশলে অধ্যয়নরত আছেন।

মোবায়দুল সাগর

ম্লেচ্ছ, সন্ন্যাসী, যাযাবর।

মোবায়দুল সাগর › বিস্তারিত পোস্টঃ

চোখের বালি উপন্যাসের গুরত্ব

১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০২১ রাত ১:১২

চোখের বালি তৎকালীন সমাজ সংস্করনের জন্য লেখা হয়েছিল। চোখের বালি পত্রিকায় প্রকাশিত হয় ১৯০১-১৯০২ সালে এবং বই আকারে প্রকাশিত হয় ১৯০৩ সালে। চোখের বালি এবং বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের বিষবৃক্ষের মধ্যে অনেকটা মিল রয়েছে। চেখের বালি মূলত একজন যুবতী বিধবার ইচ্ছা, আকাঙ্ক্ষা, কামনা নিয়ে লেখা হয়েছে। আর রয়েছে মানব সংসারের বিভিন্ন সমস্যাগুলো।

চোখের বালির কেন্দ্রীয় চরিত্র চারটি- বিনোদিনী, বিহারী, মহেন্দ্র ও আশা। এখানে নায়ক কে তা নিয়ে অনেকের মাঝে ভিন্ন মত দেখা যায়। কেউ বলে মহেন্দ্র নায়ক তো কেউ বলে বিহারী। যাই হোক মহেন্দ্র চরিত্রটি আমার কাছে নেতিবাচক বলে মনে হয়েছে। তার দর্শন-চেতনা সকল কিছুই নেতিবাচক। মহেন্দ্রর সাথে বিনোদিনীর বিয়ে দিতে চান মহেন্দ্রর মা রাজলক্ষ্মী। বিনোদিনী যে একজন শিক্ষিত এবং সকল বিষয়ে পরিপক্ক সুন্দরী এক যুবতী। কিন্ত মহেন্দ্র বিনোদিনীকে না দেখেই তাকে বিয়ে করতে নাকচ করে দেয়।

মহেন্দ্র বিয়ে করে তার কাকীমার বোনঝিঁ আশালতাকে। আশালতা যে একজন অনাথ, নিরক্ষর ও সংসার বিষয়ে অপরিপক্ক এক কিশোরী। মহেন্দ্রর কাকীমার অনেকদিনের ইচ্ছা ছিল যে তার বোনঝিঁকে মহেন্দ্রর সাথে বিয়ে দিবে। কিন্তু মহেন্দ্র তার কাকীমার বোনঝিঁকে বিয়ে করতে নারাজ হয় এবং তার বদলে আশালতার সাথে তার শৈশবের বন্ধু বিহারীর বিয়ে দিতে চাই। আশালতাকে যখন তারা দুই বন্ধু দেখতে যায় তখন মহেন্দ্র আশার প্রেমে পড়ে যায় এবং আশাকে বিয়ের করার সিদ্ধান্ত নেয়। শেষে আশালতাকে মহেন্দ্রই বিয়ে করে। আশালতাকে বিয়ে করার পর বিহারীর সাধে সম্পর্কের মহেন্দ্রর অবনতি ঘটে।



এদিকে বিনোদিনীর বিয়ে হয় গ্রামের এক বয়স্ক ব্যক্তির সাথে। বিয়ের কিছুদিন পরেই যে কি-না মারা যায়। স্বামী মারা যাওয়ায় শুরু হয় বিনোদিনীর এক মর্মান্তিক বিধবা জীবন। বিনোদিনী হল মহেন্দ্রর মায়ের একই গ্রামের মেয়ে। একদিন মহেন্দ্রর মা এবং বিহারী উপস্থিত হন সেই গ্রামে। সেখানে গিয়ে তারা উপভোগ করেন বিনোদিনীর এক অকৃত্রিম সেবা। মহেন্দ্রর মায়ের বিনোদিনীকে ভালো লেগে যায় তাই সে বিনোদিনীকে সঙ্গে করে কলকাতায় ফেরে।

বিনোদিনী কলকাতায় এসে তার এক ভিন্ন চরিত্র দেখায়। সে মহেন্দ্র এবং আশার সোনার সংসার দেখে ঈর্ষান্বিত হয়। সে মনে মনে ভাবে আশার সকল সুখ তার প্রাপ্য। মহেন্দ্রর ভালোবাসা, সম্পদ, ঐশ্বর্য সকল কিছুর অধিকার তারই প্রাপ্য বলে সে বিবেচনা করে। সে আশার প্রতি চরম ঈর্ষান্বিত হয়। সে ভাবে সে এক পরিপক্ক, শিক্ষিত নারী সেখানে এক পুতুলকে নিয়ে এরা মেতে আছে। এসব তো আমারই হওয়ার কথা ছিল। মহেন্দ্র তাকে না দেখেই বিয়েতে না করে দেওয়ায় তার উপর রাগ জন্ম নেয়। তাই সে ওদের সোনার সংসার ভেঙে দেওয়ার পরিকল্পনা করে।

শুরু হয় বিনোদিনীার ধ্বংসলীলা। মহেন্দ্র এবং আশার সংসার সে পলকেই ধ্বংস করে দেয়। আর এটা সে করে মহেন্দ্রকে ভালোবাসার ফাঁদে ফেলে। মহেন্দ্র বিনোদিনীর রপ ও গুনের প্রতি প্রেমে পড়ে যায়। সে উন্মত্তের মত বিনোদিনাকে কামনা করতে থাকে। কিন্তু বিনোদিনী তার পরিকল্পনা অনুযায়ী এগোতে থাকে। একপর্যায়ে বিনোদিনীকে নিয়ে মহেন্দ্র দেশান্তরী হয়ে যায়।

বিনোদিনীর পরিকল্পনা সফল হওয়ার এক মাত্র কারণ আশালতার অজ্ঞতা। সে মহেন্দ্রকে বিনোদিনীর হস্তগত করে কাশীতে তার কাকীমার কাছে যায়। একবারও তার সন্দেহ হয় না এমন সুন্দরী নারীর প্রতি তার স্বামী দূর্বল হতে পারেন। অথচ আশা যখন কাশী থেকে ফিরে মহেন্দ্রর জামা থেকে বিনোদিনীর চিঠি পায় তখন সে কেঁদে বুক ভাসায়।

বিনোদিনী মহেন্দ্রর সাথে ছলনা করলেও সে বিহারীকে ভালোবেসে ফেলে। বিহারীকে সে একজন আদর্শ পুরুষ হিসেবে আবিষ্কার করে। তার চিন্তা-চেতনার প্রতি সে আকৃষ্ট হয়ে পড়ে। এদিকে বিহারীও বিনোদিনীকে ভালোবেসে ফেলে। কিন্তু সে মহেন্দ্র এবং বিনোদিনীর পলাতক হওয়ার খবর শুনে বিনোদিনীকে সে ঘৃণা করতে শুরু করে।

কথায় আছে মানুষ ঠেকে শেখে। আশালতা দুঃখ পেতে পেতে হয়ে ওঠে এক পাকা রমনী। তার অপরিপক্কতা, অজ্ঞতা এই দুঃখ পাওয়ার কারণেই শেষ হয়ে যায়।

বিনোদিনী এবং মহেন্দ্রকে খুঁজতে বের হয় বিহারী। বিনোদিনী কখনই মহেন্দ্রকে ধরা দেয়নি। মহেন্দ্র কয়েকবার বিনোদিনীর ভালোবাসার প্রার্থনা করে কিন্তু বিনোদিনী তাতে সাড়া দেয়নি। এতে করে বিনোদিনীর প্রতি মহেন্দ্রর ক্ষোভ জন্মে। সে তার ভূল বুঝতে পারে। বুঝতে পারে বিনোদিনী তার সাথে ছলনা করছে।

শেষে মহেন্দ্র আশালতার কাছে ফিরে আসে। বিনোদিনী বিহারীকে বলে সে নিষ্কলঙ্ক। বিহারী বিনোদিনীর এ কথা বিশ্বাস করে তাকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়। কিন্তু একজন বিধবা হিসেবে এতবড় পাপ করতে বিনোদিনী অস্বীকৃতি জানায়।

সারমর্ম থেকে চোখের বালির কিছুই বোঝা যাবে না। এখানে চোখের বালি হচ্ছে বিনোদিনী। যে বিধবা হওয়ার কারণে সকল সুখ থেকে বঞ্চিত। তাই সে সুখীদের দুঃখী করতে চাই। যৌবনের যে আকাঙ্ক্ষা, প্রেম-ভালবাসা, ,সুখ-তৃপ্তি থাকে সে তার আস্বাদ নেওয়ার জন্যই মহেন্দ্রর সাথে মিথ্য ভালবাসার অভিনয় করে। কিন্তু সত্য ভালবাসাকে সে ধর্ম এবং সমাজের কারণে পরিত্যাগ করে। বা হতে পারে সে মহেন্দ্র এবং আশার সংসার ভেঙে এক শিক্ষা পেয়েছে।

লেখক এখানে একজন যুবতী বিধবার জীবনকে তুলে ধরেছেন। তিনি বোঝাতে চেয়েছেন তার কষ্টকে। বিশেষ করে যৌবন বয়সের কষ্টকে। তার প্রতি সমাজের অবহেলা, সকল অধিকার থেকে বঞ্চিত করা বা বিধবাদেরকে একটি সম্প্রদায়ে অন্তর্ভূক্ত করা ইত্যাদি। বিধবাদের প্রতি সমাজের প্রচলিত কুসংস্কারকে ভাঙার প্রধান লক্ষ্যই ছিল লেখকের।



তবে আমি আরেকটি বিষয় খুব খেয়াল করেছি- ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর যখন বিধবাবিবাহ আইন চালু করলেন বা ব্রাহ্ম ধর্ম প্রতিষ্ঠা করলেন তখন অনেক লেখকরা তার পক্ষ নিয়ে লেখালেখি শুরু করলেন। বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্য়ায় লিখলেন বিষবৃক্ষ। যেখানে এক হিন্দু জমিদারের বিধবাবিয়ে নিয়ে লেখা হয়েছে। লেখক এখানে প্রচলিত প্রথা ভেঙে এক বিধবার সাথে কেন্দ্রীয় চরিত্র যে কি-না বিবাহিত তার বিয়ে দেন। কিন্তু চোখের বালির লেখক একজন ব্রাহ্ম ধর্ম অনুসারী হয়েও বিনোদিনীর সাথে বিহারীর কেন বিয়ে দেননি তা বড়ই আশ্চর্যের বিষয়।

©মোবায়দুল সাগর


মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০২১ দুপুর ২:০৭

মোঃ মাইদুল সরকার বলেছেন:
লেখক বিরহ দেখাবেন নাকি রোমাঞ্চ নাকি ট্রাজেডি সেটা তিনি ঠক করবেন। তবে আলোচনা বেশ হয়েছে ++++

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.