![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
স্রষ্টা যদি জান্নাতে যাবার অনুমতি দেন, যদি জানতে চান কি চাই আমি, তবে তার কাছে ফেরত চাইব আমার ক্লাশ ফোরে পড়া দিন গুলো। না, দিন ফেরত নিয়ে কি হবে? বরং বলব প্রভু সেই সময় টুকুতে আমায় ফিরিয়ে নিন।
দোচালা টিনের ঘর থেকে সাদা শার্ট প্যান্ট পরে বই হাতে লাল দালানের রেল স্কুলের জন্য পথে নামতাম। আহ! সে কি স্বাধীনতা। মা বলেছেন সাবধানে যাস। উঁচু নীচু পাহাড়ি পথ ইট বিছানো। টিলার পরে ব্রিটিশের রেখে যাওয়া বাংলো। সত্যি কি ওখানে ইংরেজরা থাকত? কেমন ছিল দেখতে? সাদা কালো "নবাব সিরাজুদ্দোউলা"র সেই ইংরেজ দের মত। তখনো যে বাসায় রঙ্গিন টিভি আসেনি। ছোট আমার মস্তিস্কে তাদের আর কোন ছবিও নেই।
বিশাল বিশাল কড়ই গাছ রাস্তার ধারে। কত বয়স তাদের। এদের ডালেই কি বাস করে ডালিম কুমারের সেই রাক্ষস? ওই উঁচু পাহাড় গুলোর অপারে কি? ওখানেই কি থাকে ডাইনী বুড়ি? একদিন দল বেঁধে গিয়েছিলাম সে পাহাড়ের চুড়ায়। না ডাইনি বুড়ির ডেরা নেই। আছে টলমল পানির ঝিল। সবুজ ঢাল মিশে গেছে ঘোলা জলে। একদিকের ঢালে হাজারো পেয়েরা গাছ। ছেলেরা বলত পেয়ারা বন।
সিঙ্গাড়া আর ডালপুরির মনকাড়া গন্ধকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে, আঁচার, আইস্ক্রীম, বাদামের হাতছানি এড়িয়ে ভয়ে ভয়ে স্কুলের ভেতর পা রাখতাম। পকেটে কোনকোন দিন একটাকা থাকত কি থাকত না। থাকলেও ভাগ্য খুলত শুধু বাদামের। একটাকায় এতগুলো আর কোন জিনিসি বা পাওয়া যায়।
ছুটির দিন গুলোর রোদেলা দুপুরে মা রেডিও শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে পড়তেন। অথবা আমায় দুষ্টুমির সুযোগ করে দিয়ে ঘুমের ভান করতেন। এই সব দুপুরে কোন কোন দিন কটকটি ওয়ালার ঘন্টায় প্রান কাড়া ডাক শুনে মন অস্থির হয়ে যেত। ফেলে দেয়া কাচেঁর বোতল গুলো নিয়ে তার কাছে হাজির হতাম। গিয়ে দেখতাম অনেকেই তাদের সংগ্রহশালা নিয়ে উপস্থিত। হাতের তালুতে এক টুকরো কাল কটকটি নিয়ে মহখুশি। ভালো কিছু যোগাড় করতে না পারায় দু একবার খালি হাতে বিষন্ন মনে ফিরতে হয়েছিল।
গ্রীষ্মের ছুটির নোটিশ যেদিন আসত মনে হত কি যে করি। আনন্দ যেন খোলা কোকের বোতলের ভেতর থেকে বুদবুদের মত ঊঠতেই থাকত।বার্ষিক পরীক্ষা শেষ হলে দিন গুলো বদলে যেত। ডিসেম্বার মাস। শীত কাল। দাদা-নানার বাড়ি যেতাম। সারদিন ধুলা মাটি, খড়ের গাদায় খেলা। সন্ধ্যয় কুয়াশা নামত রেল লাইন পার হয়ে ধান ক্ষেতের উপর দিয়ে একেবারে ঊঠানের কাছা কাছি। বিদ্যুৎ বিহীন নানী বাড়িতে সন্ধ্যা নামতেই রাতের খাবারের আয়োজন শুরু হত। আগুনের হলদে শিখা আর উত্তাপ বেশ আরামদায়ক ছিল। মাটির চুলায় যখন রান্না চড়ত , তখন পাশে বসে খড়, লাকড়ি এগিয়ে দেয়া টা খুব বড় কাজ মনে হত। কুপি হারিকেনের আলোয় টুং টাং প্লেট, গ্লা্স , চামচের শব্দ। বড়দের কথা ভাতের সাথে গোগ্রাসে গিলতাম। সেই সব দিন এখন দেয়ালে ঝোলানো ফ্রেমে বাধাঁই করা ছবির মতন।
©somewhere in net ltd.
১|
১৬ ই অক্টোবর, ২০১৪ রাত ১২:২৪
একজন বাংলার ছেলে বলেছেন: আহা কি করলেন,দিলেন তো আবার নস্টালজিক করে,ঠিক এইভাবেই কেটেছিল আমার ছোটবেলাগুলো।ইস টাইম মেশিন যে কবে আবিষ্কার হইব