![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
চেয়ারটা ভেঙে দুই খন্ড হয়ে পড়ে আছে, সামনের পায়া দইটা সীটসহ পিছনের অংশ হতে একেবারে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। ভেঙে যাওয়া এই অংশে অনেক আগে থেকেই যায় যায় অবস্থা ছিলো।
প্রথম যেদিন চেয়ারটা আনা হলো সেদিন কী আনন্দ ছিলো হাসুর। তার পুরু নাম হাসিবুল ইসলাম। সবাই হাসু বলে ডাকলেও কেউ ওর নাম জিজ্ঞাস করলে বলতো আমার নাম হাসিবুল ইসলাম। চেয়ারটার গায়েও খোদাই করে লেখা। ও নিজে নিজেই তা করেছে। তবে অসুন্দর হয়নি। যত্ন করে লেখা।
তখন হাসু ক্লাস সেভেনে পড়ে। ওদের ঘরে তখনো ইলেক্ট্রিসিটি আসেনি। হারিকেনের আলোতে ও আর ওর ছোটো বোন খাটের উপর উপুড় হয়ে পড়তে বসতো। ঠিক খাটের উপর না। চৌকির উপর। কিছুক্ষণ পড়তে না-পড়তেই ঘুম এসে পড়তো। চেয়ারটা আনার পরে চৌকির সাথে লাগিয়ে পড়তে বসতো। তখন থেকেই হাসুর পড়াশোনায় অনেক উন্নতি দেখা দেয়। তাই ক্লাস এইটে উঠার পরপরই ওর জন্যে একটা টেবিল কিনে আনে। যদিও টেবিলটা পুরনো। তবুও টেবিলটা নিয়ে হাসুর তেমন আনন্দ ছিলো না যেমনটা ছিল চেয়ারের বেলায়।
ঘরের কোণায় নতুন টেবিল। ডাইনিং টেবিলের চেয়ারগুলো একেবারে নতুন। তবু সেখান থেকে চেয়ার এনে পড়তে বসার ইচ্ছা হাসুর নেই। হাসু যখন কলেজে ওঠে তখনই ওদের অবস্থার পরিবর্তন হয়ে গেছে। এক সময় ওর বাবা ঢাকায় একটা প্রেসের সাধারন কর্মচারি ছিল। তারপর সেই প্রেসের ম্যানেজার হয়। তার কর্ম দক্ষতার জন্যে একদিন তার মালিক নারায়ণগঞ্জের নয়ামাটিতে নতুন একটা প্রেসে পার্টনার হিসেবে নেয়ার প্রস্তাব রাখে। তাই কলেজে ওঠার পর ওদের আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।
হাসু এখন বুয়েটে পড়ে। কোয়ান্টাম মেকানিক্সের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। প্রতিদিন ফতুল্লা থেকে ট্রেনে যাওয়া আসা করে। ঢাকা কালেজে পড়ার সময়ও বাড়ি থেকেই যাওয়া আসা করতো। অনেক পরিশ্রম হতো। তবূও ওর উপায় ছিলো না।
©somewhere in net ltd.