নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অথৈ স্বপ্নপাপ

কবিতা ছাড়া অন্য কোনো পাপ পুষি না পরাণে

মমিন মানব

কবিতা ছাড়া আমার কোনো পাপ নাই

মমিন মানব › বিস্তারিত পোস্টঃ

গদ্যকবিতা ও গদ্যভাষা

০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৫৬

সাহিত্য সৃষ্টির শুরু থেকে এর ভাষা নিয়ে বহু পরীক্ষা করেছেন সাহিত্যিকরা। বাংলা সাহিত্যের সেই চেষ্টার ফল হিসেবে শুধু পদ্যে লেখার পরিবর্তে পদ্য গদ্য দু’টাতেই লেখা শুরু হলো। তারপর পদ্যের ভাষা গদ্যের ভাষা নিয়ে শুরু হলো অন্য এক রকম নিরীক্ষা। কেউ কেউ মুখের গদ্যের মতোন বাংলা গদ্যকে সাজাতে চাইলেন। মুখের গদ্যের কাছাকাছি করে গদ্যের ভাষা যারা তৈরি করতে চেয়েছেন তাদের সংখ্যা কম হলেও এখনকার গদ্য থেকে আমরা আমরা বুঝতে পারি না যে, তারাই আমাদেরকে আধুনিক গদ্য দেয়ার চেষ্টা করেছেন? বাংলা ভাষার ইতিহাসে প্রমথ চৌধুরীর ‘সবুজপত্র’ গোষ্ঠি এবং ’ঘরে-বাইরে’ লেখার সময় থেকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর গদ্যের ভাষা হিসেবে চলিত ভাষাকে গ্রহণ করার কারণে বাংলা গদ্যের আরোপিত ভাষারীতি সাধু (যা একমাত্র ’বোদ্ধা পন্ডিতদের’ ভাষা) থেকে মুক্ত করে মুখের ভাষা (বা বাচন) থেকে এর দূরত্ব কমিয়ে এর খুব কাছাকাছি নিয়ে আসা। এ চেষ্টা বিভিন্ন সময়েই হয়েছে। কখনো শব্দের কাঠামোতে, কখনো বাক্যের গঠনে। প্রমথ চৌধুরী ও রবীন্দ্রনাথের কাজ তখন কিছুটা হলেও সফল হয়েছিলো। যদিও তারা তখন শুধু ক্রিয়াপদের ও সর্বনামের কোনো কোনো রূপে মুখের ভাষার কাছাকাছি করতে পেরেছেন। তাহারা, যাহার-এর পরিবর্তে তারা, যারা এবং করিয়াছিলাম, করিতে ছিল-এর পরিবর্তে করেছিল, করছিল ব্যবহারে বাংলা গদ্যে মুখের ভাষা বা বচনের দিকে আসতে শুরু করলো। রবীন্দ্রনাথ এক সময় দেখতে পেলেন যে কবিতার ক্ষেত্র বিস্তৃত হতে চলেছে এবং এই গদ্যেই সম্ভব এই ’বাস্তব জগত্ এবং রসের জগতের সমন্বয় সাধন’।



প্রমথ চৌধুরী ও রবীন্দ্রনাথের এ কাজ শুরু করার আগেই একই উদ্বেগে টেকচাঁদ ঠাকুর লিখেছিলেন ‘আলালের ঘরের দুলাল’। এর ভাষাকে তখন মাইকেল মধুসুদন দত্ত ফিশারম্যানদের ভাষা বলেছেন। সেখানেও গদ্যের ভাষাকে বচনের কাছাকাছি করার একটা চেষ্টা তিনি করেছিলেন। মাইকেলের কথাটা অন্যভাবে সাজালে- ঐ ফিশারম্যানদের বুঝাতে হলে এর ভাষা তাদের মুখের ভাষার (বচনের) কাছাকাছি হতে হবে। এক্ষেত্রে মাইকেলের মন্তব্য যথার্থই ছিলো।



২.

কবিতার মুক্তির জন্যে বাংলাভাষার শিষ্ঠভাষা বা সাহিত্যভাষা (আমাদের বিজ্ঞ সাহিত্যিকদের দেয়া নাম) একটা বিরাট বাঁধা। নদীয়া অঞ্চলের ভাষাকে বাংলা ভাষাভাষি অন্যান্য অঞ্চলের ভাষার চেয়ে সবচাইতে ধ্বনি মাধুর‌্যময়, শ্রুতিমধুর ও কোমল দাবি করে বাংলা ভাষার চলিত ভাষা বা সাহিত্য ভাষা হিসেবে চালানো হলো। নদীয় সহ কলকাতা, হাওড়া, হুগলী, বর্ধমান, বীরভূম, ২৪ পরগনা, মুর্শিদাবাদ, পূর্ব বাঁকুড়া, উত্তর পূর্ব মেদিনীপুরে একই ভাষা (বা উপভাষা) ব্যবহার করা হয়। এ অঞ্চলের ভাষা (উপভাষা) রাঢ়ি। বাংলাভাষায় এই উপভাষা বাদেও আরও চারটি উপভাষা আছে। বঙ্গালি, রাজবংশি বা কামরূপি, বরেন্দ্রি এবং ঝাড়খন্ডি। এই সবগুলোকে উপেক্ষা করে একটি মাত্র উপভাষাকে মান্য চলিত করা কী অন্য উপভাষাভাষিদের ওপর রাঢ়ি উপভাষাকে চাপিয়ে দেয়া হলো না- যা আমদের মাতৃভাষা নয়। আর আমরা এমনভাবেই এর চর্চা করে যাচ্ছি যে এর মাধ্যমে বাংলাভাষাকে জাতে তোলা হয়েছে। আর আমাদের মাতৃভাষা (হয়ত বঙ্গালি, হয়ত বরেন্দ্রি, হয়ত রাজবংশি কিংবা ঝাড়খন্ডি) ব্যবহার করলে আঞ্চলিকতায় আক্রান্ত হয়! আমাদের মধ্যে নিজেদের মাতৃভাষা (বা উপভাষা) ছেড়ে মান্য চলিতরূপি রাঢ়ি ভাষার চর্চা করা একটি বিশেষ গর্বের ব্যপার হয়ে আছে। সাহিত্য সৃষ্টিতে সচেতনভাবে নিজেদের ভাষাকে উপেক্ষা করে অন্য একটি ভাষাকে লালন করছি। এই যে আমাদের ভাষা তথা উপভাষা (যা আমাদের প্রকৃত মাতৃভাষা) এর পরিবর্তে আরোপিত অন্য একটি উপভাষা কী ভাষার উপনিবেশিকতা নয়? বাংলাভাষার মান্য চলিত রূপ কী সবগুলো উপভাষার আদান প্রদানের মাধ্যমে একটি উপনিবেশ মুক্ত গতিশীল ভাষা হতে পারতো না?



ভাষার ক্ষেত্রে এই উপনিবেশ মুক্তির চেষ্ট সাহিত্যে অন্য মাধ্যমগুলোতে করলেও কবিতার ক্ষেত্রে খুব কম জনই তা করেছেন। সৈয়দ শামসুল হকের কবিতায় সেই ইচ্ছাই প্রকাশ পেয়েছে।



কী কামে দুফরবেলা পাতাগুলা উড়ায় বাতাস

আবার কার স্বর মাঠপাড়ে চোপায় এমন

কী কামে আমার চক্ষে পরে খালি মানুষের লাশ

যা দেখার দেইখাছি বাকি আছে আর কী দেখন

সময় দেখায়া গেছে বাল্যকারে আমি-র সুখ আমি

যৈবন অন্যের হাতে যেনে কাঁছের বাসন

দুঃখের পাখিরে আমি দেইখাছি বিয়ায় বিহানে

কীভাবে কালির লেখা হইয়া যায় জলের লেখন

আমারে ছাড়ান দিয়া যায় না সে যেখানেই যাই

দেশ কী বিদেশ কও চিনা অচিনা কও

দুঃখের বাদাম তোলা এই এক নাও সব গাঙে

পালায়া নিস্তার কই সবখানে সেই না শানাই

যেখানেই যাই গিয়া খাড়া দেখি সেই সব পুরান মিস্ত্রি

তারা মনোযোগ দিয়া সব ভাঙে সব ভাঙে







মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.