নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ আমার লেখার ও সাহসের ভিত্তি। সাদাকে সাদা, কালোকে কালো বলাই সত্যিকারের দেশপ্রেম মনে করি। সত্যম ব্রুয়ৎ!

মনোয়ার রুবেল

ফ্রিল্যান্স লেখক ও প্রাবন্ধিক

মনোয়ার রুবেল › বিস্তারিত পোস্টঃ

আশিকী এবং কিছু কথা...

৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ৯:২৭


সন্ধ্যায় আশিকী দর্শনে মধুমিতায় পা ফেলতেই লোকারন্যে খেই হারিয়ে ফেলছিলাম। ১২০ টাকার ডিসি টিকেট শুক্রবার-শনিবার নয়, মঙ্গলবারের শোতেও যখন ব্ল্যাকে আড়াইশো টাকা হাঁকা হয় তখন আর বলে দিতে হয় না হলঘরের ভিতরের অবস্থা কতটা আকাঙ্খিত। অফিস খোলার দিনে সন্ধ্যার শো এমন রমরমা হয় 'মনের মাঝে তুমি'র পর অনেক দিন আর দেখিনি। হলের ভেতর থেকে শার্ট প্যান্ট পরা ভদ্রলোক যেমন বেরুলো, লুঙি পরা গৃহনির্মান শ্রমিক বেরুলো, জিন্স প্যান্ট পরা তরুনী ব্যাগ হাতে বয়ফ্রেন্ডের সাথে মধুমিতার সিঁড়ি দিয়ে লাফিয়ে লাফিয়ে বিকালের শো শেষে রাস্তায় এসে থামল। দু’ একজন টিভি স্টার দেখলাম বেরিয়ে এদিক ওদিক তাকাচ্ছেন, রিকশা খুজছেন। অন্যদিন হলে রিকশাওয়ালারা তাদের ঘিরে ধরে। আজ তেমন কেউ নাই। সবাই আশিকীযজ্ঞে যেন মোহাবিষ্ট। এর পরের শোয়ের জন্য আরেক দল তরুনী,কিছু লাল ফিতা বাধা কিশোরী, একদল তরুন, শ্রমিক মতিঝিলের রাস্তায় গিজগিজ করছে।
এতটুকু পড়ে কেউ কিঞ্চিৎ আশাহত হতে পারেন লেখার শুরুতেই যদি এমন খুশিতে গদগদ আটখানা হয়, লেখার ভেতরে প্রশংসায় পঞ্চমুখ ছাড়া সমালোচনা কি আর থাকবে? সিনেমার রিভিউ বলতে বাঙালি বোঝে কলমের সূচালো মাথায় সিনেমা পরিচালককে রক্তা রক্তি করে তার পিতা-প্রপিতামহের কুষ্ঠি ঠিকুজি উদ্ধার করা এবং উপসংহারে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বাংলা সিনেমা কতো তলানীতে গেলো, তার থেকে পরিত্রানের কোন উপায় যে নেই সেই বনর্না করা। বাংলা সিনেমার রিভিউ শুধুই একগাল প্রশংসা হতে পারে, এক প্রস্থ সুবচন-সুসমাচার হতে পারে সেটা আমরা মানি না। ইতোপূর্বে 'জিরো ডিগ্রী' নামের একটি সিনেমার আহামরি প্রশংসা করে সামহোয়্যার ইন ব্লগে লেখার পর ব্লগ সাইটের মালিক মিসেস জানা আমার পোস্টে এসে জানতে চান আমি ঐ সিনেমার সাথে কোনভাবে সম্পৃক্ত কিনা, তখন অবাক হতে হয় বৈকি। নিটোল নির্মল প্রশংসা আমাদের সিনেমার ললাটে লিখন হয় না সে আমরা সবাই জানি। রিভিউ ওয়ালারা সেটা করেও না্।
কোন ফিল্ম ভাল না লাগলে তার জন্য মন্দ রিভিউ লেখা আমি সমর্থন করিনা। একটি ফিল্ম বানাতে কোটি টাকা খরচ হয়। প্রযোজক কোটি টাকা বিনিয়োগ করে। আমার মতো ছাপোষা, যার বাপের জন্মেও একসাথে কোটি টাকা দেখা হয়নি, তার কলমের খোচায় কোটি টাকার বাজার মন্দায় ফেলে দিতে পারিনা।তাই নিশ্চুপ থাকি। তবে সিনেমা যদি হৃদয় ছোয়, পর্দার সামনে বসে সিনেমার ৩ টি ঘন্টা যদি জীবনের পার্থিব সব বিষয়াদি ভুলিয়ে রাখতে পারে তবে সেই সিনেমার জন্য আহ্লাদিত হয়ে দু চার লাইন না লেখা কলাকৌশলীদের প্রাপ্য হক হতে বঞ্চিত করা হলো মনে করি। 'আশিকী' তেমন একটি সিনেমা।
এ কথা অস্বীকার করার উপায় নাই কলকাতার সিনেমা গুনে ও মানে বাংলাদেশের চেয়ে অনেক এগিয়ে। ১৯৮৩ সালে জোতির্ময় দত্ত বাংলাদেশের নাটক সিনেমার উন্নতি দেখে ঈর্ষান্বিত হয়ে ছিলেন, এখন তার উলটো পাঠ আমাদের করতে হবে। তাই কলকাতার কলাকৌশলীদের কাছে থেকে ফিল্ম মেকিং শেখার জন্য হলেও তাদের সান্নিধ্য পেতে যৌথ প্রযোজনার সিনেমা আরো হওয়া উচিৎ। দুই বাংলার অভিনেতা অভিনেত্রীদের মাঝে যে আকাশ পাতাল তফাৎ সেটা একই মঞ্চে দুই বাংলার কলাকাররা যখন পারফর্ম করেন তখন তেল জলের মতো আলাদা দেখা যায়। চাপিয়ে দেয়া অভিনয়, জন্মগত প্রতিভার অভাব, কাঁচা কস্টিউম ইত্যাদি মিলিয়ে বাংলাদেশে বানিজ্যিক সিনেমার নামে যা বানানো হয়, তা না হয়ে উঠে যাত্রা পালা, না হয় সঙের কেত্তন। অভিনেত্রী নুসরাত ফারিয়া কলকাতার একটি পত্রিকাকে বলেছে, বাংলাদেশে সিনেমার নামে যা তাকে বড়জোর মিউজিক ভিডিও বলা যায়। মেয়েটার হিম্মত আছে বৈকি। তা না হলে যে কথা আমরা দেশে বসে বলতে জড়তায় আড়ষ্ট হই, সে কথা কলকাতায় বসে অবলীলায় বলে দিল। হিম্মত না থাকলে এমন অপ্রিয় সত্য বলা যায় না। হিম্মত না থাকলে প্রথম সিনেমায় দুর্দান্ত অভিনয়ও সম্ভব হতোনা। অংকুশের সাথে যে দুর্দান্ত অভিনয় করলো। কে বলবে মেয়েটা নতুন!
কলকাতার নায়কদের পাশে এদেশের অন্য কোন নায়িকা এর আগে এত শক্তিশালী হয়ে নিজেকে মেলে ধরতে পারেনি। অংকুশের চেয়ে মাঝে মাঝে পদ্মাপাড়ের নুসরাত ফারিয়াকে বেশি উজ্জ্বল দেখিয়েছে। আশিকীর গানগুলোর চিত্রায়ন ছিল নান্দনিক। অংকুশ এবং রজতাভ দত্ত দুজনেই অনন্য। রজতাভ দত্ত কমেডি চরিত্রের বাইরে সিরিয়াস চরিত্রে অনবদ্য ছিল। গল্পের গাথুনি, চিত্রায়ন, মার্জিত সংলাপ, অভিনয় শৈলী, রস, রঙ, হাসি, আনন্দ, সব যোগ ছিল এতে। গতানুতিক ঢাকাইয়া সিনেমার ফিচফিচ কান্নাকাটি নাই, যাত্রার সংলাপ নাই, রঙ জ্বলা লালচে পর্দা নাই, ডাকাইয়া বস্তির অশুদ্ধ ভাষা নাই।
আশিকী সিনেমার শুরুতেই রজতাভ দত্ত তার পুত্রকে ত্যাজ্য ঘোষনা করেন। মিনিট পরেই পরিচালক আমাদের ৩ বছর এগিয়ে ভারত থেকে লন্ডন নিয়ে যান। সেখানে অংকুশ এবং নুসরাতের “দিলওয়ালে দুলহানিয়া লে জায়েঙ্গে” স্টাইলে প্রেমের আয়োজন করেছেন পরিচালক। “দিলওয়ালে দুলহানিয়া লে জায়েঙ্গে”র হিস্ট্রি রিপিট হচ্ছে ভেবে অংকুশ আহ্লাদে আটখানা। শিক্ষাসফর থেকে ফেরার সময় ভুল করে রেল স্টেশনে নেমে রাত কাটানোর সময় নুসরাত প্রমান করতে মরিয়া অংকুশ শাহরুখ নন, নুসরাত কাজল নন, আশিকী ও “দিলওয়ালে দুলহানিয়া লে জায়েঙ্গে” নয়। হিস্ট্রি রিপিট তকমা ভাংতে অংকুশের হাত থেকে ওয়াইনের বোতন টেনে পান করেন নুসরাত। সেই রাতে দুজনই মাতাল ছিল। সকালে নুসরাতের কান্না দেখে আমরা বুঝতে পারি, রাতে যা হবার হয়ে গেছে। এখান থেকেই গল্পের টার্ন শুরু।

তবে সমালোচনাও করা যায়। এটিতে হিন্দি ডায়ালগ আছে, ইন্ডিয়া আছে, সুইজারল্যান্ড আছে, লন্ডন আছে, কানাডা আছে, বাংলাদেশ নাই। কোথাও বাংলাদেশের নামও নাই। এই সিনেমার বাংলাদেশ ভার্সনে বাংলাদেশ থাকা উচিৎ ছিল। শুনেছি ছবির কলকাতা ভার্সনে পরিচালক হিসেবে আব্দুল আজিজের নাম নেই!বাংলাদেশে বসে সিনেমার নায়ক নায়িকারা বারবার ইন্ডিয়া যাচ্ছে, ইন্ডিয়ার জন্য কান্নাকাটি করছে এটা অসহ্য। বাংলাদেশের নাই, দেশপ্রেমী বাঙালীদের কাছে সেটা খুব একটা ভালো ঠেকেনি।
জাজ মাল্টি মিডিয়ার তরুন স্মার্ট কর্নধার আব্দুল আজিজের বদৌলতে এপারওপার বাংলার যৌথ প্রযোজনায় একটি নির্ভেজাল বিনোদনের চকচকে ঝকঝকে সিনেমা পেয়েছি। তাকে ধন্যবাদ দিতেই হয়। দু দেশে একসাথে কাজ করলে আখেরে আমাদের কলাকৌশলীদেরই লাভ হবে আশা করি
আব্দুল আজিজ ফুল প্যাক বিনোদন নিয়ে আমাদের সামনে হাজির হয়েছেন। তথাকথিত "শিক্ষনীয় বক্তব্য' নেই। ঈশপের নীতিকথা যারা আশা করেন তাদের জন্য এই সিনেমা না । এই সিনেমা শুধু তাদের জন্য, যারা ৩ ঘন্টা প্রান খুলে হাসতে চান,খোশ মেজাজে থাকতে চান,নীট বিনোদন চান,এই সিনেমা তাদের জন্য।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০১ লা অক্টোবর, ২০১৫ রাত ১১:০১

হাসান মাহবুব বলেছেন: একটু বেশিই ইতিবাচক রিভিউ।

২| ০১ লা অক্টোবর, ২০১৫ রাত ১১:০৬

অন্ধবিন্দু বলেছেন:
সিনেমা দেখি নাই। তাই ভাল-মন্দ বলতে পারলেম না। রিভিউ পড়ে যা বুঝলেম- নতুন কিছু নাই, তবে খাওয়া যাইতে পারে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.