নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ আমার লেখার ও সাহসের ভিত্তি। সাদাকে সাদা, কালোকে কালো বলাই সত্যিকারের দেশপ্রেম মনে করি। সত্যম ব্রুয়ৎ!

মনোয়ার রুবেল

ফ্রিল্যান্স লেখক ও প্রাবন্ধিক

মনোয়ার রুবেল › বিস্তারিত পোস্টঃ

মার্কিন নিষেধাজ্ঞা; তাতে কী? হাতে কী?

২৭ শে মে, ২০২৩ দুপুর ১:৫৩


আপাতত বিএনপি খুশি। শুধু খুশিই না, বহুত খুশি।

এদ্দিন পরে আওয়ামিলীগের মনে অন্তত একটা ভয় ঢুকানো গেলো। মহামান্য যুক্তরাষ্ট্র বলেছেন, নির্বাচন সুষ্ঠু না হলে দায়ীদের ভিসা দিবেননা। বিএনপি বা সতীর্থরা এখন যথেষ্ট আশাবাদী শেখ হাসিনা সরকার বিদায় হয়তো নিয়েই নিচ্ছে। কারণ 'প্রভু' আমেরিকার প্রতি দলগুলোর আস্থা বা বিশ্বাসে কোন কমতি নেই৷

অন্যদিকে আওয়ামিলীগের অবস্থা এখন হরষেবিস্বাদ। এতদিন আনন্দেই ছিলেন তাঁরা। হঠাৎ যুক্তরাষ্ট্রের ঘোষণা কী থেকে কী হতে যাচ্ছে বুঝতে পারছেন না। আবার এটাও সত্যি শেখ হাসিনা স্বয়ং জানতেন এটা যে হতেই যাচ্ছে। তিনি সম্ভবত যুক্তরাষ্ট্র সফরেই এনিয়ে বাকবিতন্ডায়ও ছিলেন। সেখান থেকে ফিরেইতো বিবিসিতে গিয়ে আমেরিকার বিরুদ্ধে তোপ দাগিয়েছিলেন। তিনি এন্টি-আমেরিকা ইমেজও দাঁড় করাতে চেয়েছেন। নিশ্চয়ই আওয়ামিলীগ এতদিনে তার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা করেও ফেলেছেন।

একই সময়ে প্রশ্ন উঠেছে আমেরিকা কেন ইউক্রেনে-রাশিয়া ছেড়ে, কিংবা চায়না-তুরস্ক ছেড়ে হঠাৎ অতিদরিদ্র অগুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্র বাংলাদেশ নিয়ে তাদের সরকারের শীর্ষমহল থেকে এমন কঠোর হলো? প্রশ্ন হচ্ছে, এনিয়ে বিএনপি ও সমমনাদের খুশি হওয়া উচিত কি না? কেননা এই নীতি নতুন কোন সরকার বাংলাদেশে ক্ষমতায় এলে তাদের উপরও যুক্তরাষ্ট্র খাটাবে। যুক্তরাষ্ট্র আজ আওয়ামিলীগকে অপছন্দ করছে, কাল বিএনপিকে অপছন্দ করবেনা তারও কি ঠিক আছে? কার্যত এই নীতিতে বাংলাদেশকে পরোক্ষভাবে যুক্তরাষ্ট্রের সাম্রাজ্যের অধীনস্থ করা হলো। স্বাধীনতা ক্ষুন্নও হলো৷ পরোক্ষ পরাধীনতার শিকল পরানো হলো। যুক্তরাষ্ট্রের পছন্দ না হলে বাংলাদেশের যে কোন সরকারকে তারা নাজেহাল করতে পারবে। এটা একটা শুরু মাত্র। সেই শুরুটা নিজেরাই নিজেদের যথেচ্ছ শাসনের পরাধীনতার।

প্রশ্ন হচ্ছে কেন বাংলাদেশের বিষয়টি ইউক্রেন রাশিয়ার চেয়েও আমেরিকার কাছে বেশি গুরুত্ব পেলো? এর জন্য আপাত কয়েকটি মত আছে।

ক.
যুক্তরাষ্ট্র পৃথিবীর একমাত্র দেশ যেটি কর্পোরেট কোম্পানির টাইপে শাসিত হয়। এখানে লবিস্ট নিয়োগ করে যে কেউ সরকারের মতকে প্রভাবিত করতে পারে। এমনকি লবিস্ট এর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টকে সফর করিয়ে নেয়া যায়। সেখানে বাংলাদেশের আওয়ামিলীগ-বিরোধী একটি লবি বহুদিন কাজ করছিল। তার সুফল এটা হতে পারে। এছাড়া বিএনপি লবিং, ইউনুস সাহেবের লবিং, জামায়াতের লবিং এরা সব মিলিয়েও এফল আসতে পারে।

খ.
বাংলাদেশের সর্বসাম্প্রতিক চায়না-রাশিয়ার প্রতি প্রীতিও এর কারণ হতে পারে৷ যুদ্ধের পরেই বাংলাদেশ প্রকাশ্য রাশিয়াকে সমর্থন দেয়। আবার, ভারত রাশিয়াকে প্রত্যক্ষ ব্যবসায়িক সহযোগ দিচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র অসহায়ের মতো চেয়ে আছে। কাউকে কিছু করতে না পারার দায়ও তাদের আছে। এখানে ঝি কে মেরে বৌকে শেখানোও হতে পারে। বাংলাদেশকে পরাধীন করে অন্য দেশদের লেসন দিতেও পারে।

গ.
আমেরিকা হয়তো সত্যি সত্যিই চায় বাংলাদেশে গণতন্ত্র শক্তিশালী হোক। তাতেও প্রশ্ন থেকে যায়। পাকিস্তানে বা শ্রীলঙ্কায় কেন সেটা চাচ্ছে না৷ কেন বাংলাদেশই? ঘুরেফিরে সেই ক' তেই যেতে হয়। এর উত্তরও লবিস্ট?


এই তিন মত ছাড়াও আরো কিছু গৌণ মতামতও আছে। তবে কোনটিই এখন পর্যন্ত স্বতসিদ্ধ প্রমাণিত নয়৷ অনুমান মাত্র।

এখন প্রশ্ন বাংলাদেশে আওয়ামিলীগ বা সরকার কি এগুলো মানতে বাধ্য? তারা কি মানবে এসব? এরও পূর্বে গুরুত্বপূর্ণ হলো আওয়ামিলীগ নির্বাচনকে প্রভাবিত করার অভিযোগ স্বীকার করে কি? এর উত্তর হচ্ছে, না। যেখানে সব নির্বাচনই সুষ্ঠু তাদের কাছে আবার সুষ্ঠু নির্বাচন দাবী করার কথা বললে তারা অবাকই হবে৷ তারা হয়েছেও।

এমনো প্রশ্ন শুনতে হচ্ছে ভিসা বাতিল করলে কী হবে? কার্যত ভিসা বাতিল করলে আমেরিকা বা কানাডা যাওয়া যাবে না৷ তাতে অবশ্যি সরকার অবৈধ হয়ে যায় না৷ অনেকে বলছেন এই দুই দেশ না গেলেই কি হবে? এটা দামী প্রশ্ন!

আমরা সাধারণ জনগণ যাদের প্রচুর অর্থবিত্তের মালিক মনে করি তাদের সবারই এই দুই দেশে বাড়ি ঘর আছে, ব্যবসা বানিজ্য আছে। তাদের বাচ্চা কাচ্চা সেখানে পড়ে। ফলে তাদের জন্য এটা একটা ঝুঁকিও বটে। নির্বাচন কমিশনার, প্রশাসনিক ব্যক্তি, নেতা যে কাউকে যুক্তরাষ্ট্র এই ঝুঁকিতে ফেলতে পারে। যুক্তরাষ্ট্র ব্যক্তিগত 'কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্ট"এর রাজনীতি খেলেছে।

কেউ আওয়ামিলীগকে পছন্দ করলেও দেখা গেলো বউ-বাচ্চার স্বার্থে পছন্দসই চললেন না। এটিই মূলত আগামী নির্বাচনকে ভারসাম্যহীন করতে পারে। আওয়ামিলীগের পতনও হতে পারে। অন্তত যুক্তরাষ্ট্র এভাবেই ভাবছেন বোধকরি।


আওয়ামিলীগ যদি না থাকে কে আসতে পারে সরকারে, তেমন স্নায়ুউত্তেজক প্রশ্নও ইতিমধ্যে হচ্ছে৷ বিএনপিতে নেতা তারেক জিয়া ১৭ বছর বিদেশ সফর শেষে যদি এসে ক্ষমতায় বসেন সেটিও দেশের জন্য সুখকর হবে না বলে অনেকের ধারণা। গণতন্ত্রে দেড়যুগে তার অবদান কী ছিল তাও ভাবা হচ্ছে। তিনি কার্যত এসময় লন্ডনে অবকাশে ক্ষমতার সুখস্বপ্ন দেখা ছাড়া আর কিছুই করেননি। এরুপ কোন অবদান ছাড়াই ক্ষমতার শীর্ষে আরোহন করলে তিনি হবেন বিশ্বের সবচেয়ে সৌভাগ্যবান অলস নেতা।





আবার তারেক রহমানের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের যথেষ্ট ''এলার্জি'' রয়েছে সেটা বহুবার এর আগে বিভিন্ন দলিলে উঠে এসেছে। বিএনপি ক্ষমতায় যদিও আসে তারেক রহমান ক্ষমতার কেন্দ্রে কতটুকু আসবেন সে আরেক প্রশ্ন। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে যে সংস্কার চাচ্ছেন তাতে তারেক রহমান ক্ষমতার বাইরে থাকার সম্ভাবনাই বেশি। কারণ ইয়াজউদ্দীন সরকারের উপর তার প্রভাব, নির্বাচনকে কলুষিত করা, গনতন্ত্রকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানোর অভিযোগ তার বিরুদ্ধেও এন্তার।

আওয়ামিলীগ এর কর্মকৌশল কি হবে??







শেখ হাসিনা প্রবীণ ও ঝানু রাজনীতিবিদ। তার রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা জো বাইডেনের চেয়েও দীর্ঘ। ফলে তিনি বা তার দল হাত গুঁটিয়ে বসে থাকবেননা সেটি সহজেই অনুমেয়। তার দলকে হয়তো বৃহৎ কোন ত্যাগ স্বীকার করতে হতে পারে যেটি যুক্তরাষ্ট্রের সাথে দরকষাকষির সুযোগ এনে দিবে। কিন্তু কি হতে পারে সেই ত্যাগ? তা আমরা কেউই জানিনা।

ধরুণ, ইজরায়েলের সাথে সুসম্পর্ক তৈরিও হতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের ইজরায়েলি লবির শক্তির কথা কে না জানে!!! সৌদি যুবরাজ সালমানও এই একই কাজটিই করেছেন৷ বাংলাদেশের বর্তমান সরকার পাসপোর্টে "একসেপ্ট ইজরায়েল" শব্দগুলো তুলে দিয়ে বেশ কিছুদিন আগে সুসম্পর্কের ইঙ্গিত দিয়েও রেখেছে৷ ইজরায়েলকে স্বীকৃতি দেয়া আওয়ামিলীগ সরকারের জন্য বিশাল ত্যাগ স্বীকার হবে। এমন নতুন নতুন দরকষাকষির সুযোগ আওয়ামিলীগ খুজবে।

বলছিনা আওয়ামিলীগ এটিই করতে যাচ্ছে বা হতে যাচ্ছে। এটি একটি উদাহরণ হিসেবে ইজরায়েলের নাম বললাম, ত্যাগের ওজন কতটা হতে পারে তা বোঝাতে। এমনরকম ভারি ওজনের ছাড় দিতেও হতে পারে রাজনৈতিক কারণে৷ আমরা আপাতত জানিনা আওয়ামিলীগের প্যান্ডোরার বাক্সে কী আছে।

নিশ্চয়ই কিছু একটা আছে।

#মনোয়ার রুবেল
আজিমপুর রোড।




মন্তব্য ৯ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৯) মন্তব্য লিখুন

১| ২৭ শে মে, ২০২৩ দুপুর ২:০৭

শাওন আহমাদ বলেছেন: বেশ বলেছেন, দেখা যাক কি হয় সামনে।

২| ২৭ শে মে, ২০২৩ দুপুর ২:১৬

মহাজাগতিক চিন্তা বলেছেন: যে কারণেই হোক আমেরিকা মনে করেছে কিছু একটা করা দরকার সেজন্য তারা অনেক ভেবে এ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। তবে শেখের বেটি তাদের এ চালেও উৎরে যেতে পারে।

৩| ২৭ শে মে, ২০২৩ দুপুর ২:৫২

মনোয়ার রুবেল বলেছেন: USA স্বার্থ ছাড়া এমনি এমনি কিছু মনে করে না৷

৪| ২৭ শে মে, ২০২৩ বিকাল ৫:০৯

গেঁয়ো ভূত বলেছেন: বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন ধরনের মতামত প্রকাশিত হয়েছে এবং হচ্ছে, প্রকৃতপক্ষে ওদের মনে কি আছে কিম্বা এইটার প্রভাব কি হবে তা জানতে আামাদের আরও কিছুটা সময় অপেক্ষা করতে হবে।

৫| ২৭ শে মে, ২০২৩ রাত ৮:০২

রাজীব নুর বলেছেন: এত সামান্য বিষয় আওয়ামীলীগ ভয় খাওয়ার দল না।
শেখ হাসিনা অন্য জিনিস। শুধু এটুকু বিশ্বাস করুণ দেশে যা হচ্ছে শেখ হাস্নার ইচ্ছাতেই হচ্ছে।

৬| ২৭ শে মে, ২০২৩ রাত ৮:১৯

মোহাম্মদ গোফরান বলেছেন: শেখ হাসিনা একজন দক্ষ রাজনীতিবিদ। বিম্পি জামাতের খুশি হওয়ার কিছু নেই। তিনি খুব ভালো ভাবেই জানেন কোন পরিস্থিতি কিভাবে মোকাবিলা করতে হয়।

বিম্পি জামাতের জন্য এক বালতি সমবেদনা।

৭| ২৭ শে মে, ২০২৩ রাত ৮:২৬

নতুন বলেছেন: @মোহাম্মদ গোফরান ভাই বিম্পি জামাতের জুজুর ভয় এখন মানুষের ভাঙ্গা উচিত।

আয়ামীলীগ যেই দূনিতি করছে তাতে বিম্পি জামাত যাই আসুক খুব বেশি ক্ষতি হইতো না।

শেখ হাসিনা বিরাট সুযোগ হাত ছাড়া করেছেন, তার যেই ক্ষমতা আছে তাতে তিনি পারতেন দূনিতি মুক্ত বাংলাদেশের শুরুটা করে দিতে। সেটা তিনি বুঝতে পারেছেন না।

৮| ২৮ শে মে, ২০২৩ সকাল ৯:০৬

আমি সাজিদ বলেছেন: দুইটা বিষয়ে বলি-

এক, এই ভিসা নীতি কি সরকারি- বিরোধী- আইন প্রয়োগকারী বাহিনীর সেইসব লোকেদের জন্য যারা নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় না ? নাকি সবার জন্য প্রযোজ্য।
যদি সব নাগরিকের জন্য নয় বরং রাজনৈতিক দল ও অন্যান্যদের, তাহলে এই সমস্যা জাতীয় সমস্যা বলে জাতির কাঁধে চাপিয়ে দেওয়ার কিছু নেই। আমাদের মতো মানুষ কেন প্যানিকড হবো ? যাদের সমস্যা তারা সামলাক। এইটা নিয়ে প্যানিকড হবে রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারা আর তাদের এই দেশীয় চামচারা। আপনি আমি আমরা বিন্দাস ।

দুই, অন্যায়ের প্রতিবাদ না করতে করতে আমাদের মনে ন্যায় অন্যায়ের মাঝে পার্থক্য নাই। বাংলা স্টাইলে গোটা দুনিয়া বিচার করলে তো হবে না।

৯| ২৮ শে মে, ২০২৩ সকাল ১১:০০

রবিন.হুড বলেছেন: সুন্দর বিশ্লেষণ। রাজনীতিতে শেষ কথা বলে কিছু নেই।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.