নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

হাসান

- confusing character

মনপুরা হাসান

বয়স বেশি হয় নি। তবে এই ছোট জীবনেই জীবনের অনেক কিছুই দেখে ফেলছি। সফলতা, ব্যার্থতা, সফলতার পর সবার অভিনন্দন ,ব্যার্থতার পর সবার ব্যাবহার এসব বিষয় গুলো খুব ভালভাবে দেখছি। অনেক কিছু উপলব্ধিও করছি ।\nএকটা কথা জোর দিয়ে বলতে পারি সেটা হল দুনিয়াতে স্বার্থ ছাড়া কেউ এক পা এখন আর ফেলে না। এখন সবাই স্বার্থপর । তাই স্বার্থপর হওয়ার চেষ্টায় আছি ।।

মনপুরা হাসান › বিস্তারিত পোস্টঃ

সুনামগঞ্জের একজন বিখ্যাত ব্যক্তির সংক্ষিপ্ত জীবনী

০৬ ই জুলাই, ২০১৫ রাত ১১:৩৪

মুক্তিযুদ্ধের সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদের সদস্য সচিব ছিলেন আলফাত উদ্দিন আহমেদ, লোকে তাকে মোক্তার সাব বলে চিনত।
খেটে খাওয়া দিন মজুর ও রিক্সা শ্রমিকদের উন্নয়নে তিনি জীবনভর কাজ করে গেছেন। তাদের অধিকার আদায়ে সোচ্চার ছিলেন তিনি।
সুনামগঞ্জের দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার শিমুলবাঁক ইউনিয়নের মুক্তাখাই গ্রামের হাজী বাড়ীর হাজী আশকর আলীর নাতি এবং হাজী আব্দুস সামাদ ও জমিলা খাতুনের ছেলে আলফাত উদ্দিন আহমদ। ১৯৩১ সালের ২১ জুন তিনি জন্মগ্রহণ করেন।
১৯৪৬-৪৮ সালে মুসলিম ছাত্র ফেডারেশনের কর্মী হিসাবে পাকিস্তান আন্দোলনে অংশগ্রহণের মাধ্যমে রাজনৈতিক জীবনের সূচনা হয় তাঁর। ১৯৭১ সালের
স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় তিনি সর্বদলীয় সংগ্রাম কমিটির সুনামগঞ্জ মহকুমা শাখার সদস্য সচিব
নিযুক্ত হন। প্রাথমিক পর্যায়ের প্রতিরোধ যুদ্ধেও পর তিনি ভারতে গিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের রিক্রুট, ট্রেনিংসহ মুক্তিযুদ্ধের একজন সফল সংগঠক হিসাবে ও স্বাধীনতার পর প্রত্যাগতদের পুনর্বাসনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেন।
এর আগে ৭ই মার্চ বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণের পর সারা দেশের ন্যায় সুনামগঞ্জেও স্বাধীন বাংলা সংগ্রাম কমিটি গঠিত হলে তাকে সদস্য সচিব করা হয়। সেই থেকে সংগ্রাম কমিটির নির্দেশে প্রশাসন চলতে থাকে এবং মোক্তার সাব এই দায়িত্ব সুচারূরূপে পালন করেন। অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ, ইপিআর, আনসার, ছাত্রদের সংগঠিত করে পিটিআইতে ক্যাম্প স্থাপন করে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেন এবং ডেমি রাইফেল ব্যবহার করা হয় প্রশিক্ষণে। পৌরসভা কার্যালয়ে স্থাপন করা হয় সংগ্রাম কমিটির কার্যালয়, এখান থেকে সুনামগঞ্জ মহকুমার সমস্ত কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়।
২৭ শে মার্চ পাক সেনাদের একটি দল সুনামগঞ্জ শহরে প্রবেশ করে প্রথমে থানায় গিয়ে শহরে কারফিউ দিয়ে জনসাধারণের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টির উদ্দেশ্যে বাজারে ঢুকে জনসাধারণকে বেধম পিটাতে শুরু করে। ছাত্রজনতা বিক্ষুব্ধ হয়ে সম্মিলিতভাবে কারফিউ ভঙ্গ করে পাকসেনাদেরকে চতুর্দিক থেকে ঘেরাও করে। পাকবাহিনী অনন্যোপায় হয়ে সার্কিট হাউসে (পুরাতন) আশ্রয় নেয়।
২৫ শে মার্চ ঢাকায় ক্রেকডাউনের পর সংগ্রাম কমিটির অনেকে শহর ছেড়ে নিরাপত্তার কারণে ভারতে চলে গেছেন অথবা কেউ কেউ গ্রামে আশ্রয় নিয়েছেন। শুধু ২জন সার্বক্ষণিক ছিলেন। এর মধ্যে একজন মোক্তার সাব, অন্যজন হোসেন বখত।
ছাত্র জনতা সিদ্ধান্ত নিলেন, পাকসেনাদের সুনামগঞ্জ থেকে বিদায় করতে হবে। আনসার ক্লাবের রাইফেল দেওয়ার জন্য এস.ডি.ও’র বাসা ঘেরাও করে হোসেন বখত সাহেবের নেতৃত্বে একরকম জোর করেই আদায় করে নিলেন ৫০টি রাইফেল। আনসার এ্যাডজুডেন্ড উল্লেখিত সংখ্যক হাতিয়ার ও এক বাক্স গুলি দিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগিতা করেন। এক্ষেত্রেও মোক্তার সাব হোসেন বখতকে সহযোগিতা করেছেন। প্রশিক্ষনপ্রাপ্ত আনসারদের মধ্যে রাইফেল এবং গুলি বিতরণ করা হয়।
জনাব হোসেন বখত ছিলেন সুনামগঞ্জের এক অনন্য ব্যক্তিত্ব, মুক্তিযুদ্ধে ছিল অবিস্মরণীয় ভূমিকা। মুক্তিযোদ্ধা ও ছাত্রজনতার সম্মিলিত আক্রমণের মুখে দুইজন সহযোদ্ধাকে রেখে পাক সেনারা পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। এর মধ্যে সুনামগঞ্জের মুক্তিযুদ্ধে শহীদের খাতায় নাম যোগ হল আনসার কমান্ডার আবুল হোসেন, ইপিআর এর সৈনিক আঃ হালিম ও রিক্সাড্রাইভার গণেশদাস-এর। ২৭, ২৮ ও ২৯ মার্চ প্রতিরোধ যুদ্ধের সময় মোক্তার সাব নিজে আহার নিদ্রা ত্যাগ করে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিটি অবস্থানে খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত করেছেন।
২৯ শে মার্চ পাক হানাদার বাহিনী সুনামগঞ্জ ত্যাগ করার পর সমস্ত প্রশাসন যন্ত্র অচল হয়ে গেলে সেই দায়িত্ব পালন করতে হয় সংগ্রাম কমিটির। সেক্ষেত্রে কমিটির সদস্য সচিব মোক্তার সাব সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করে প্রতিটি সেক্টরে শৃঙ্খলা বজায় রাখতে সক্ষম হন। বিশেষ করে ন্যাশনাল ব্যাংকে ট্রেজারির নিরাপত্তা কর্মীরা পালিয়ে গেলে, অচিন্তপুরের আনসারদের একটি দলকে পাহারায় নিয়োজিত করে চাবিটি নিজের হাতে রেখে এই রাষ্ট্রীয় সম্পদ রক্ষায় অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন আমাদের মোক্তার সাব। কয়েকবার চেষ্টা হয়েছে লুট করার, এতদসত্ত্বেও নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত আনসার বাহিনী সততা ও নিষ্ঠার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। কোন ভয়ভীতির কাছে তারা মাথা নত করেনি। শহরের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি রক্ষায় পাহারার ব্যবস্থা করে টেলিফোন, টেলিগ্রাফ, পোস্ট অফিস সচল রাখার ক্ষেত্রে সুচারুরূপে দায়িত্ব পালন করেন। এসময় আমবাড়ি, ওয়েজখালী ডিফেন্সে এবং পিটিআই ক্যাম্পে প্রত্যহ খাবার সরবরাহ করার ক্ষেত্রে কোন ত্রুটি পরিলক্ষিত হয় নাই।
মে মাসে পাকসেনাদের অত্যাচারে হাজার হাজার শরণার্থী ভারত সীমান্তে আশ্রয় নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করতে থাকে। এ অবস্থা দেখে মোক্তার সাবের মন কেঁদে উঠল। তিনি লঙ্গরখানা খুলে স্বাধীনতার পক্ষের স্থানীয় লোকদের কাছ থেকে খাদ্যসামগ্রী সংগ্রহ করে এদের একবেলা খাওয়ার ব্যবস্থা করলেন। পরে ভারত সরকার শরণার্থীদের জন্য খাদ্য সরবরাহে এগিয়ে আসে। শরণার্থীদের মধ্যে রিলিফ বিতরণ, চিকিৎসা সেবা, শরণার্থী ক্যাম্পে ডায়রিয়া দেখা দিলে শত শত মৃত দেহ স্বেচ্ছাসেবকদের মাধ্যমে সৎকারের ব্যবস্থা করেন। সে থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত একটার পর একটা গুরুদায়িত্ব কাঁধে নিয়েছেন স্বেচ্ছায়। মইলাম মুক্তিযোদ্ধা রিক্রুট ক্যাম্পে কামাল রাজার সাথে দায়িত্ব নিয়ে হাজার হাজার মুক্তিযোদ্ধাকে সংগঠিত করে প্রশিক্ষণে পাঠিয়েছেন।

১৬ ই ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বাধীন হলেও সুনামগঞ্জ শত্রুমুক্ত হয় ৬ই ডিসেম্বর। সুনামগঞ্জ মুক্ত হওয়ার সাথে সাথে শরণার্থীরা ঘরে ফেরার জন্য ব্যাকুল হয়ে উঠে। মোক্তার সাব প্রতিটি শরণার্থী পরিবার নিজ নিজ বাড়িতে পৌঁছার ব্যবস্থা করেন। পান্ডার খাল বাঁধ নির্মাণে মোক্তার সাবের ভূমিকা ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পেশাগত দায়িত্ব ছেড়ে ফেব্রুয়ারি, মার্চ, এপ্রিল এই তিন মাস পান্ডার খালের পাশে অবস্থান করে সততা ও নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করেন। মোক্তার সাব দেশপ্রেমে টুইটুম্বুর ছি ১৯৮০ সালে আওয়ামী লীগে যোগদান করেন। মৃত্যুও পূর্ব পর্যন্ত আওয়ামী লীগের সুনামগঞ্জ জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন।
তাঁর চরিত্রে কোন ক্লেদ ছিল না। সম্মোহনী শক্তি ছিল তাঁর, চরিত্রে ছিল পবিত্রতা। বরুণ রায়ের ভাষায়, “ মানবমুক্তির অভিযাত্রায় এক আদর্শ পুরুষ হিসেবে সুনামগঞ্জের জনজীবনের ইতিহাসকে তিনি সমৃদ্ধ করেগেছেন।” আর সুরঞ্জিত সেন বলেন,“ আমি প্রতিকূল উজান বেয়ে বড় হয়েছি, রাজনৈতিকভাবে এতবড় হওয়ার পিছনে তাঁর অবদান রয়েছে। আমরা তাঁর স্নেহধন্য ছিলাম। শাসকগোষ্ঠী মজুতদার সুদখোর-ঘুষখোরদের বিরুদ্ধে তিনি ছিলেন স্বোচ্চার। প্রতিটি আন্দোলনে -সংগ্রামে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন তিনি।”
সুনামগঞ্জের এই সরল বিদ্রোহী মোক্তার সাহেব ১৯৯৫ সালের ২৩ মে সিলেটের আজিজ মেডিক্যাল সেন্টারে ৬৪ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন

মন্তব্য ১ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ০৬ ই জুলাই, ২০১৫ রাত ১১:৪৫

প্রামানিক বলেছেন: শ্রোদ্ধা জানাই এই মুক্তিযোদ্ধাকে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.