![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
শাপলা চত্বর ও নির্বাচনী ইস্যুতে ভাঙন ধরেছে হেফাজতে ইসলামে। দলের নীতিনির্ধারকদের অনেকে নির্বাচনে আগ্রহী হয়ে ওঠায় হেফাজতে ইসলামের আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফীর সঙ্গে সৃষ্টি হয়েছে দূরত্ব।
হেফাজত বলছে, নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে চাইলে ছাড়তে হবে দল। কিন্তু হেফাজতের নেতারা তা মানতে নারাজ। তাই হেফাজতে ইসলামে সৃষ্টি হয়েছে স্পষ্ট বিভক্তি।
এরই অংশ হিসেবে নবগঠিত শূরা কমিটি ও নির্বাহী কমিটি থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে হেফাজতের দুই যুগ্ম মহাসচিব মঈনুদ্দিন রুহী ও মুফতি ফয়জুল্লাহকে।
এদের একজন হাটহাজারী থেকে এবং অন্যজন রাঙ্গুনিয়া থেকে নির্বাচন করার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন।
শনিবার হেফাজতে ইসলামের নবগঠিত ২০১ সদস্যের শূরা কমিটি ও ২৫ সদস্যের নির্বাহী কমিটির কোনোটিতেই স্থান হয়নি তাদের।
এদিকে, ১৩ দফার আন্দোলনকে চাঙ্গা করতে ফের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে হেফাজতে ইসলাম।
ফটিকছড়ির জামিয়া আজিজুল উলুম বাবুনগর মাদ্রাসায় অনুষ্ঠিত ওলামা-মাশায়েখ সম্মেলনে তারা সাত দফা কর্মসূচি ঘোষণা করেন। এবার সচিবালয় ঘেরাওয়ের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে হেফাজতে ইসলাম।
এর আগে শানে রেসালাত সম্মেলন করবে দেশের ৬৪ জেলার প্রতিটিতে।
এ জন্য আগামী মাসের মধ্যে দেশের প্রতিটি ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যন্ত হেফাজতের কমিটি গঠন করতে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ২৫ সদস্যের নির্বাহী কমিটিকে।
নীতিনির্ধারক কমিটি থেকে বাদ দেওয়া হলো রুহী ও ফয়জুল্লাহকে।
হেফাজতে ইসলামের সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল হক ইসলামাবাদী বলেন, ‘এতদিন ১০০ সদস্যের শূরা কমিটি দিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করছিল হেফাজতে ইসলাম। শনিবার ফটিকছড়ির সম্মেলন থেকে এ শূরা কমিটির সংখ্যা ২০১ বলে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
আবার ১৩ দফার আন্দোলন বেগবান করতে গঠন করা হয়েছে ২৫ সদস্যের একটি নির্বাহী কমিটি। এ কমিটিকে সাত দফা কর্মসূচি ও আট দফা দাবি বাস্তবায়নের প্লাটফর্ম তৈরি করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে তিনি আরো জানান।
নতুন এ কমিটিতে চট্টগ্রাম মহানগর হেফাজতে ইসলামের সভাপতি মঈনুদ্দিন রুহী ও যুগ্ম মহাসচিব মুফতি ফয়জুল্লাহ নেই বলে স্বীকার করেন তিনি।
হাটহাজারী প্রতিনিধি মনসুর আলী জানান, ২৫ সদস্যের নির্বাহী কমিটিতে দলের আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফী, মহাসচিব জুনায়েদ বাবুনগরী, নায়েবে আমির মাওলানা হারুন, মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী, মুফতি জসিম উদ্দিন, মাওলানা ওবায়দুর রহমান (বরিশাল), মাওলানা আবদুল জব্বার (রাজশাহী), মাওলানা মোস্তাক (খুলনা), মাওলানা ইদ্রিস (নাজিরহাট মাদ্রাসা), মাওলানা সলিমুল্লাহ (নাজিরহাট মাদ্রাসা), মাওলানা ইলিয়াস ওসমানী (আন্দরকিল্লা শাহি জামে মসজিদ), মাওলানা হাবিবউল্লাহ (ফটিকছড়ি), মুফতি হারুন ইজহার (লালখান বাজার মাদ্রাসা), আজিজুল হক ইসলামাবাদী, মাওলানা লোকমান (মোজাহেরুল উলুম মাদ্রাসা), মুফতি মোজাফফর (পটিয়া মাদ্রাসা), মাওলানা এনামুল হক (চকরিয়া), নায়েবে আমির মাওলানা নূর হোসাইন কাশেমী (ঢাকা), মাওলানা মুফতি আবুল হাসান (রংপুর), মাওলানা জাফরউল্লাহ খান (ঢাকা), আনাস মাদানী, মাওলানা তোফাজ্জেল হক (হবিগঞ্জ), মাওলানা সালাউদ্দিন (নানুপুর মাদ্রাসা) ও মাওলানা আবদুল হামিদ পীরসাহেব (মধুপুর) রয়েছেন।
হেফাজতে বিভক্তির নেপথ্যে
আসন্ন সংসদ নির্বাচন ও গত ৫ মে শাপলা চত্বরের সমাবেশকে কেন্দ্র করে হেফাজতে দেখা দেয় বিভক্তি। অরাজনৈতিক সংগঠনের ইমেজ ধরে রাখতে আন্দোলন শুরুর আগেই দলের নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে কথা বলেন হেফাজতে ইসলামের আমির আহমদ শফী।
ঢাকা ঘেরাও কর্মসূচির সময়ও এ সিদ্ধান্তে অটল ছিলেন হেফাজতের আমির। কিন্তু লংমার্চ কর্মসূচিতে ব্যাপক লোকসমাগম হওয়ায় হেফাজত নেতাদের একটি অংশ সরকারবিরোধী আন্দোলনে শরিক হতে চাপ দিতে থাকে আহমদ শফীকে। এদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন ইসলামী ঐক্যজোট একাংশের চেয়ারম্যান মুফতি ইজহারুল ইসলাম চৌধুরী, তার ছেলে হেফাজতের প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক হারুন ইজহার, হেফাজতের মহানগর সভাপতি মঈনুদ্দিন রুহী ও দলের যুগ্ম মহাসচিব মুফতি ফয়জুল্লাহ।
এরা প্রত্যেকে আবার আসন্ন সংসদ নির্বাচনেও প্রার্থী হওয়ার তোড়জোড় শুরু করেছেন। তাই দলের একটি অংশ বিতর্কিতদের নীতিনির্ধারক কমিটিতে না রাখতে আহমদ শফীকে চাপ দেয়। দু’দিন আগে মঈনুদ্দিন রুহীর বিরুদ্ধে মাদ্রাসার ছাত্ররা লিফলেটও বিতরণ করেন।
শনিবার তারপরও হাটহাজারীর দারুল উলুম মাদ্রাসায় আহমদ শফীর সঙ্গে দেখা করতে যান মাওলানা রুহী। কিন্তু মাদ্রাসা ছাত্ররা ঐক্যবদ্ধ হয়ে সেখান থেকে বের করে দেন রুহীকে। জনরোষ বাড়তে থাকায় তাই শেষ পর্যন্ত নীতিনির্ধারণী কমিটিতে রাখা হয়নি রুহী ও ফয়জুল্লাহকে। তবে মুফতি ইজাহার ও তার ছেলে হারুন ইজহার নীতিনির্ধারক কমিটিতে স্থান পাওয়ায় চাপা ক্ষোভ রয়ে গেছে দলের একাংশে।
এবার ঘেরাও হবে সচিবালয়
ফটিকছড়ি প্রতিনিধি ইকবাল হোসেন মঞ্জু জানান, ফটিকছড়িতে অনুষ্ঠিত ওলামা-মাশায়েখ সম্মেলনে সচিবালয় ঘেরাও করার কর্মসূচি ঘোষণা করেছে হেফাজতে ইসলাম।
এ জন্য সাত দফা দাবি পেশ করেছে তারা। এসব দাবির মধ্যে রয়েছে-কওমি মাদ্রাসার স্বকীয় বৈশিষ্ট ধ্বংস ও সরকারি নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা কর্তৃপক্ষ আইন, ২০১৩ বিল সংসদে পাস করার সরকারি চেষ্টা অবিলম্বে বন্ধের দাবিতে ২৫ সেপ্টেম্বর বুধবার দুপুর ১২টায় সারাদেশে একযোগে স্থানীয় জেলা প্রশাসক ও নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর বরাবর স্মারকলিপি প্রদান।
আগামী ৩০ অক্টোবরের মধ্যে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের যেসব জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন কিংবা ওয়ার্ড কমিটি গঠিত হয়নি, সেসব শাখায় কমিটি গঠন করে এ তালিকা কেন্দ্রে সাংগঠনিক সম্পাদক বরাবর প্রেরণ করা।
১৩ দফা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে আগামী ১৫ থেকে ৩০ নভেম্বররের মধ্যে ঢাকা, সিলেট, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল ও রংপুর বিভাগে ওলামা, সুধী সমাবেশ ও পেশাজীবী সংলাপের আয়োজন করা।
আগামী ১২ ও ১৩ ডিসেম্বর চট্টগ্রামে দু’দিনব্যাপী ইসলামী সম্মেলন আয়োজন করা।
১ ডিসেম্বর থেকে ৩১ জানুয়ারির মধ্যে প্রতিটি জেলায় শানে রেসালাত সম্মেলন করা। শহীদদের কবর জিয়ারত ও শহীদ পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে প্রয়োজনীয় তথ্যাবলি কেন্দ্রে প্রেরণ করা এবং হেফাজতে ইসলামের ১৩ দফা দাবি এর মধ্যে না মানলে সচিবালয় ঘেরাওসহ বিভিন্ন কর্মসূচি দিয়ে সরকারকে দাবি মানতে বাধ্য করা।
ফটিকছড়িতে হেফাজতের শোডাউন
ফটিকছড়ির জামিয়া আজিজুল উলুম বাবুনগর মাদ্রাসায় ওলামা-মাশায়েখ সম্মেলন করে শোডাউন দিয়েছে হেফাজতে ইসলাম।
শনিবার দুই অধিবেশনের প্রথমটিতে দলের সিনিয়র নায়েবে আমির আল্লামা শাহ মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী ও দ্বিতীয় অধিবেশনে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফী সভাপতিত্ব করেন।
সম্মেলনে আহমদ শফী বলেন, বাংলাদেশ থেকে ইসলামকে সমূলে উৎখাতের হীন ষড়যন্ত্র লিপ্ত হয়েছে একটি প্রভাবশালী ইসলামবিদ্বেষী চক্র। বস্তুতপক্ষে তারা এ দেশ থেকে ইসলাম নিমূর্লের নীলনকশা বাস্তবায়ন শুরু করেছে।
ওলামা-মাশায়েখ সম্মেলনে হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী শাপলা চত্বরে হাজার হাজার আলেম আহত, পঙ্গু ও চিরদিনের জন্য অন্ধ হয়ে যান বলে মন্তব্য করেন।
©somewhere in net ltd.