![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
জাতীয় রাজনীতির কেন্দ্রস্থল ঢাকার রাজপথে অনেক দিন ধরেই নেই প্রধান বিরোধী দল বিএনপির সরব উপস্থিতি। দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ও এখন নিষ্প্রাণ। ঘরোয়া সভা-সমাবেশের খবর তেমন শোনা যায় না। এমনকি অবরোধ বা হরতাল কর্মসূচিও এখন ডাকা হচ্ছে অজ্ঞাত স্থান থেকে ভিডিও বার্তার মাধ্যমে। আগে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলগুলোর টক শোতে বিএনপিপন্থী অতিথি হিসেবে যাঁদের উপস্থিতি বেশ নিয়মিত ছিল, বর্তমানে তাঁদের অনেককে সেভাবে দেখা যাচ্ছে না। সংবাদপত্রে কলাম লেখার ক্ষেত্রেও এই ঘরানার লেখকদের এক ধরনের অনাগ্রহ দেখা যাচ্ছে।
এদিকে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটের হরতাল, অবরোধসহ সরকারবিরোধী আন্দোলন ইত্যাদি ছাপিয়ে সর্বশেষ তিন-চার দিন ধরে নানা নাটকীয়তার ঘনঘটায় সবার দৃষ্টি আর আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে দেখা যাচ্ছে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে। আরেক দিকে অবরোধে একের পর এক নাশকতা চালানোর অভিযোগে আলোচনায় রয়েছে নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধন বাতিল হওয়া জামায়াতে ইসলামী। তাহলে বিএনপি কোথায়? বর্তমান প্রেক্ষাপটে দেশের প্রধান বিরোধ দল বিএনপির পরিবর্তে রাজপথে যা প্রতিবিম্বিত হচ্ছে তা যেন তাদের ছায়ামাত্র। সবকিছু মিলিয়ে আপাতত আলোচনার ভরকেন্দ্র থেকে কিছুটা হলেও দূরে সরে গেছে বিএনপি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপিসমর্থক একজন লেখকের মন্তব্য, বর্তমান পরিস্থিতি বিএনপিকে রাজনীতির স্বাভাবিক গতিধারায় কিছুটা হলেও 'আইসোলেটেড' করে রাখছে।
এদিকে দলের বর্তমান অবস্থা নিয়ে বিএনপির মাঠপর্যায়ের নেতা-কর্মীদের মধ্যে হতাশা কাজ করছে। আন্দোলনের এই ডামাডোলের মধ্যের শীর্ষ নেতাদের আড়ালে থাকার নেতিবাচক প্রভাব অঙ্গসংগঠনগুলোর ওপরও গিয়ে পড়েছে।
মানিকগঞ্জ জেলা বিএনপির এক নেতা নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে কালের কণ্ঠকে বলেন, 'আমরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মাঠে থাকছি, মিছিল-মিটিং করছি, কিন্তু কেন্দ্রের নেতারা রাজপথে নামছেন না, সভা-সমাবেশ করছেন না। আমরা তো দেখছি এখন মানুষ জাতীয় পার্টি আর জামায়াতের নাম নিয়ে যত আলোচনা-পর্যালোচনা বা জল্পনা-কল্পনা করছে, আমাদের দলের নাম ততই আড়ালে পড়ে যাচ্ছে।'
ওই নেতা ক্ষোভের সঙ্গে আরো বলেন, 'মনে এত ভয় থাকলে তাঁরা কেন্দ্রীয় নেতা হলেন কেন! যাঁরা বাইরে আছেন তাঁরা সবাই একসঙ্গে পথে নামলে সরকার কতজনকে আর ধরবে-মারবে? যদি তারা আড়ালে থাকতে পারেন তবে আমরাই বা কেন ঝুঁকি নিয়ে মাঠে থাকব।'
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক মন্ত্রী মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহম্মদ কালের কণ্ঠকে বলেন, 'সরকারের অত্যাচারের ভয়াবহতার কারণেই আমাদের অনেক নেতা আত্মগোপনে থাকতে বাধ্য হচ্ছেন। সরকার ষড়যন্ত্র করে বিএনপিকে নির্বাচন থেকে সরিয়ে রাখা এবং দৃষ্টির আড়ালে রাখার চেষ্টা করছে। কিন্তু বিএনপি মোটেই দৃষ্টির আড়ালে থাকার দল নয়। বিএনপি এখন ব্যালটের অপেক্ষায় আছে। আমরা ভোটের নাগাল পেলেই দেখা যাবে- দেশের মানুষ কোন দিকে আছে।' তিনি আরো বলেন, 'সারা দেশে বিএনপির নেতা-কর্মীরা সক্রিয় আছেন, কেবল ঢাকায় সরকারের চরম অত্যাচার-নিপীড়ন-নির্যাতনের কারণে নেতারা রাজপথে থাকতে পারছেন না। বিশেষ করে কেন্দ্রীয় সিনিয়র নেতাদের যেভাবে আটকে রাখা হয়েছে তা নজিরবিহীন। তবে এ পরিস্থিতি খুবই সাময়িক, আমরা নির্বাচনের জন্য মুখিয়ে আছি। নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হলেই সব পাল্টে যাবে।'
মেজর (অব.) হাফিজ আরো বলেন, 'ভোটে এ দেশের মানুষ কেবল চায় বিএনপি বনাম আওয়ামী লীগের মোকাবিলা। এই দুই ধারার মধ্যে এখন পুরো দেশ আওয়ামী লীগবিরোধী হয়ে উঠেছে। এ জন্যই তারা নির্দলীয় সরকারের অধীনে না গিয়ে নিজেদের মতো করে ভোট করার ষড়যন্ত্রে মেতেছে। এরই অংশ হিসেবে বিএনপিকে নানাভাবে দমিয়ে রাখার চেষ্টা হচ্ছে। তবে আমরা এখন চুপচাপ থাকলেও যদি সবকিছু উপেক্ষা করে সরকার একতরফা নির্বাচনে যায়, তাহলে আর চুপ থাকব না। যতই নির্যাতন করুক আমরা রাজপথে নামব।'
বিএনপির বর্তমান অবস্থান সম্পর্কে গত শনিবার আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ কালের কণ্ঠকে বলেন, বিএনপি আন্দোলনের নামে জামায়াতের সঙ্গে মিলে সন্ত্রাস, নাশকতা, ধ্বংসাত্মক ও জনবিরোধী কর্মকাণ্ড চালানোর ফলেই আজ এমনভাবে সব দিক থেকে আড়ালে চাপা পড়ছে। তারা যেমন রাজপথে নামছে না, তেমনি আলোচনার কেন্দ্র থেকেও সরে যাচ্ছে। এক কথায় তারা জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে। তিনি আরো বলেন, কোনো গণতান্ত্রিক দলের চরিত্র এমন ধ্বংসাত্মক হতে পারে না। মানুষ পুড়িয়ে মারা ও রেল লাইন উপড়ে ফেলার মতো কাজ কখনোই রাজনীতিতে হতে পারে না। এগুলো মানুষ পছন্দ করে না বলেই তাদের দিক থেকে চোখ ঘুরিয়ে নিচ্ছে।
তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দলের এমনভাবে দৃষ্টির আড়ালে চলে যেতে থাকা গণতন্ত্রের জন্য ক্ষতি ছাড়া মঙ্গল বয়ে আনবে না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহম্মেদ কালের কণ্ঠকে বলেন, যে প্রক্রিয়ায় হোক বিএনপির রাজপথে থাকতে না পারা কিংবা তাদের থাকতে না দেওয়া কিংবা কোনো না কোনো কৌশলে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু থেকে তাদের দূরে রাখা কখনোই গণতন্ত্রের জন্য ভালো হবে না। সরকারি দলের জন্যও এটা ভালো নয়। তিনি আরো বলেন, বিএনপি এখন যেভাবে আড়ালে থেকে ভিডিওর মাধ্যমে বার্তা প্রচার করছে, তা থেকে বহির্বিশ্বে এই সরকার সম্পর্কে খুবই নেতিবাচক ধারণা তৈরি হচ্ছে। সবাই জেনে যাচ্ছে, এ দেশে প্রধান বিরোধী দলকে প্রকাশ্যে রাজনীতি করতে দেওয়া হচ্ছে না। তাই বিএনপি দৃষ্টি বা আলোচনার আড়ালে থাকলে সরকার বা সরকারি দলের কোনো লাভ হবে না।
জাতীয় পার্টি ও জামায়াতে ইসলামীর অবস্থান সম্পর্কে অধ্যাপক ইমতিয়াজ বলেন, জাতীয় পার্টির এভাবেই আলোচনায় থাকার কথা। তারা নিজেদের অবস্থান মানুষের মধ্যে গ্রহণযোগ্য করার কৌশল হিসেবেই হয়তো এমনটা করছে। আর জামায়াত যে নাশকতা করে আলোচনায় থাকছে তাও মিডিয়ার সুবাদে। বলা যায়, মিডিয়াই জাপা-জামায়াতকে বেশি বেশি আলোচনায় নিয়ে আসছে। তাতে আওয়ামী লীগ আপাতদৃষ্টিতে খুশি হলেও প্রকৃতপক্ষে তাদের অনেক বেশি ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে।
সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার কালের কণ্ঠকে বলেন, জাতীয় পার্টির এভাবে আলোচনার কেন্দ্রে উঠে আসা এ দেশের নেতিবাচক রাজনীতিরই একটি নমুনা। তিনি বলেন, আলোচনায় না থাকা কিংবা কর্মসূচি পালন করতে না পারা বিএনপির জন্য নেতিবাচক হবে বলে মনে হয় না। বরং বিএনপির জন্য বেশি নেতিবাচক হয়ে দাঁড়িয়েছে জামায়াতের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকাটা।
এদিকে কালের কণ্ঠের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক জানান, ছাত্রদল সভাপতি আব্দুল কাদের ভুঁইয়া জুয়েলকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে সংগঠনটি দুই দিনের কর্মসূচি দিলেও কোথাও কর্মসূচি পালন করতে দেখা যায়নি সংগঠনের নেতাদের। গত শনিবার দেশের সব জেলা, মহানগর ও বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশের ঘোষণা ছিল, কিন্তু রাজধানীর কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কর্মসূচি পালন করতে পারেনি সংগঠনটি। তবে গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে রাজধানীর বাইরে বিভিন্ন জেলায় কর্মসূচি পালিত হয়েছে বলে জানানো হয়।
- See more at: Click This Link
©somewhere in net ltd.