নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মন্ত্রক

আমি আমার দেশের জন্যে

মন্ত্রক › বিস্তারিত পোস্টঃ

জাতির জনকের জন্মদিন...

১৮ ই মার্চ, ২০১৪ সকাল ৮:৩৫

১৭ মার্চ, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৯৫ তম জন্মদিন। ১৯২০ সালের এই দিনে তিনি প্রাচীনতম ‘বঙ্গ’ জনপদে জন্ম গ্রহণ করেছিলেন। নেতাদের মধ্যে শেরে বাংলা ও বঙ্গবন্ধু এই জনপদে জন্ম লাভ করেন। প্রাচীন ‘বঙ্গ’ জনপদ প্রথম দিকে ফরিদপুর, বরিশাল, ময়মনসিংহ ও ঢাকার কিছু অংশ নিয়ে গঠিত হয়েছিলো, এই নিরিখে তাজউদ্দীন আহমদও এই জনপদে জন্মেছিলেন হয়তো।

বলা হয়ে থাকে ৭ম শতাব্দীতে রাজা শশাঙ্ক বাংলাদেশের খন্ড খন্ড প্রাচীন জনপদগুলোকে একত্রিত করে ঐক্যবদ্ধ বাঙালি জাতি গঠনে প্রাথমিক দায়িত্ব পালন করেছিলেন। কিন্তু সুপন্ডিত, বিদ্বান-লেখক ড. সৈয়দ আকরম হোসেন একটি প্রবন্ধে বলেন, “ঐতিহাসিকগণ সিদ্ধান্তে এসেছেন, সপ্তম শতকের প্রথমার্ধে বঙ্গরাষ্ট্র স্বাধীন ছিল এবং ভদ্র বংশের রাজাগণ কর্তৃক শাসিত হয়েছে। ভদ্র বংশের রাজন্যবর্গের আর কোন বিস্তৃত পরিচয় জানা যায়নি। ভদ্র বংশের রাজত্ব কালেই রাঢ়ের সামন্ত শশাঙ্ক গুপ্তবংশীয় নৃপতি মহাসেনগুপ্তকে পরাজিত করে গৌড় রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন। তার রাজ্যসীমা অঙ্গ ছাড়িয়ে মগধের কিছু অংশ পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছিল। দক্ষিণে উড়িষ্যার বেশ কিছু অংশ তার পদানত ছিল। শশাঙ্কের সময় পুন্ড্র নগর রাজধানী পরিত্যক্ত হয় এবং বর্তমান মুর্শিদাবাদের কর্ণ সুবর্ণে গৌড় রাজ্যের রাজধানী স্থাপন করেন। শশাঙ্কের বঙ্গ অধিকারের কোন প্রমাণ নেই।”

(মনসুর মূসা সম্পাদিত ‘বাঙলাদেশ’ গ্রন্থে ‘বাঙলাদেশ’ প্রবন্ধ, বাংলা বিভাগ-ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়-১৯৭৪)।

আমি বলতে চাচ্ছি যে, বাংলাদেশের মূল ভূখন্ডে জন্ম গ্রহণ করেছিলেন শেরেবাংলা ও বঙ্গবন্ধু। এ জন্য বঙ্গবন্ধু শহীদ সোহরাওয়ার্দীর শিষ্য হলেও শেরে বাংলার সঙ্গেই তার ঐতিহাসিক ভূমিকার মিল অধিকতর। রাজনীতির প্রথম জীবনে তিনি শেরেবাংলা, সোহরাওয়ার্দী দু’জনেরই দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। শেরেবাংলার সঙ্গে ছিলো বঙ্গবন্ধুর ‘নানা-নাতির সম্পর্ক’।

বুদ্ধদেব বসু রবীন্দ্র প্রতিভা সম্পর্কে বলেছেন, “এক জীবনে, কিন্তু ধীরে। মনে রাখতে হবে রবীন্দ্রনাথ ‘প্রডিজি’ গোছের জীব ছিলেন না, মধুসূধনের মতো চমক লাগাননি কখনো, যেহেতু তাকে বহুদূরে যেতে হবে, তাই অতি ধীরে ধীরে এগিয়েছেন। জীবদেহের মত মন্থর তার পরিণতি, বনস্পতির বেড়ে ওঠার মতো; তার স্বভাবে বিপ্লবী বৃত্তি ছিলো না, ছিলো বিনয়, নিয়ম নিষ্ঠা- যার অর্থ ডিসিপ্লিন। ..... তার পথ নিশ্চিত বিবর্তনের, ঐতিহ্যের অনুসরনে; আগ্রজের অনুকরণে তার পদক্ষেপ।” (প্রবন্ধ সম্ভার- রবীন্দ্রনাথ, বাংলাবিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, ১৯৮৯)।

বুদ্ধদেব বসুর কথাগুলো বঙ্গবন্ধুর বেলায়ও হুবহু প্রযোজ্য। রাজনৈতিক জীবনের গোড়া থেকে বঙ্গবন্ধু তার লক্ষ্যবিন্দু ঠিক করে সেই পথে দৃঢ় ভাবে হেঁটে গেছেন, মৃত্যুর পূর্বেও লক্ষ্যচ্যুত হননি। তিনি গোড়াতেই বুঝেছিলেন পাকিস্তান রাষ্ট্রের কাঠামোর মধ্যে থেকে বাঙালির ভাগ্য নির্ধাতির হবে না, বাঙালির অধিকার প্রতিষ্ঠা পাবে না। এও মনে রাখার মত ব্যাপার যে, তিনি কিন্তু শহীদ সোহ্রাওয়ার্দী ও আবুল হাশিমের যুক্ত বাংলা আন্দোলনের উৎসাহী সমর্থক ছিলেন। ৫০ এর দশকে মওলানা ভাসানীর নেতৃত্বে তিনি চীন সফরে গিয়ে ঔপন্যাসিক মনোজ বসুর কাছে বলেছিলেন যে তিনি পূর্ববাংলাকে একটি স্বাধীন-সেক্যুলার স্টেটে রূপ দেবেন। (আহমদছফা-জাগ্রত বাংলাদেশ)। যুক্তবাংলার আন্দোলন ব্যর্থ হওয়ার পর বঙ্গবন্ধু পূর্ব বাংলায় চলে আসেন। ভাষা আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েন। ভাষা ভিত্তিক আন্দোলনকে তিনি একটু একটু করে দেশ ভিত্তিক আন্দোলনে পরিণতি দান করেন। তিনি মহাত্মা গান্ধীর মত ডোমিনিয়ন স্ট্যাটাস টাইপের আন্দোলন করেন নি, পূর্ণাঙ্গ স্বাধীনতার লক্ষ্য পাশ কাটিয়ে কোনো রাজীনিতি তিনি করেন নি। এতবড় ভয়ঙ্কর পদক্ষেপ নিতে বঙ্গবন্ধু দীর্ঘ সময় পর্যন্ত কোনো সহযোগী, সহযোদ্ধা পাননি। একাই হেঁটেছেন দুর্গম পথে। অমর কথা শিল্পী শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচিত ‘পথের দাবী’ উপন্যাসে অপূর্ব সব্যসাচী সম্পর্ক যে দীপ্তবাণী উচ্চারণ করেছে তা বঙ্গবন্ধুর বেলায়ও প্রযোজ্যঃ

“মুহূর্ত পরে তোমার হাতে শৃঙ্খল পড়িবে, কৌতুহলী নর-নারী তোমার লাঞ্ছনা ও অপমান চোখ খুলিয়া দেখিবে, তাহারা জানিতেও পারিবে না তাহাদের জন্য তুমি সর্বস্ব ত্যাগ করিয়াছ বলিয়াই তাহাদের মধ্যে আর তোমার থাকা চলিবে না। ........... তুমিত আমাদের মত সোজা মানুষ নও, তুমি দেশের জন্য সমস্ত দিয়েছ তাইত দেশের খেয়াতরী তোমাকে বহিতে পারে না। সাঁতার দিয়া তোমাকে পদ্মা পার হইতে হয় তাইত দেশের রাজপথ তোমার কাছে রুদ্ধ, দুর্গম, পাহাড়-পর্বত তোমাকে ডিঙাইয়া চলিতে হয়, কোন বিস্মৃত অতীতে তোমারই জন্য প্রথম শৃঙ্খল রচিত হইয়াছিল, কারাগারত শুধু তোমাকে মনে করিয়াই প্রথম নির্মিত হইয়াছিল, সেইত তোমার গৌরব। তোমাকে অবহেলা করিবে সাধ্য কার।” (মাহমুদুর বাসার-সিরাজউদ্-দৌলা থেকে শেখমুজিব- পৃঃ৯১)।

অবশ্যই তিনি আন্ডারগাউন্ডের শ্রেণী শত্র“ খতমের নকশালী নেতা ছিলেন না। ‘ইয়ে আজাদী ঝুটা হ্যায়’ ধরনের হাওয়াই বুলি আওড়াননি কখনো। নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতির প্রতিভূ ছিলেন। তার ভেতরেই সশস্ত্র যুদ্ধের পরিকল্পনা তার মাথায় ছিলো। ষাটের দশকের প্রথম দিকে পন্ডিত জহর লাল নোহরুর কাছে প্রস্তাব পাঠিয়েছিলেন ভারতের বাঙালি রাষ্ট্রদূত শশাঙ্ক শেখর ব্যানার্জীর মাধ্যমে যে, যদি তিনি স্বাধীনতা যুদ্ধ ঘোষণা করেন, তাহলে যেনো ভারত তাকে অস্ত্র সহযোগিতা দেয়। বঙ্গবন্ধুর এ প্রস্তাবে পন্ডিতজী সম্মত হন নি। বলেছিলেন, মুজিবকে বলবেন, কারো ব্যক্তিগত অনুরোধে অস্ত্র সাহায্য দেয়া যায় না। যদি মুজিব এমন রাজনীতি করতে পারেন যে, প্রতিটি বাঙালি বলে আমরা পাকিস্তানি নাগরিক থাকতে চাই না, স্বাধীন বাংলাদেশ চাই, তাহলে আমরা পাশে দাঁড়াতে পারবো। (আবদুল মতিন-বিজয় দিবসের পর বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ)।

বঙ্গবন্ধু সে পথেই হেঁটেছিলেন। কবি অন্নদা শঙ্কর রায় বলেন, “আমার এক বন্ধুপুত্র ইন্ডিয়ান পুলিশ সার্ভিসে কাজ করতেন। কিছুকাল তাকে ঢাকায় ভারতের হাই কমিশনে নিযুক্ত থাকতে হয়। সেখান থেকে বদলী হয়ে এসে আমাকে তিনি বলেন, শেখ মুজিব ভারতের কাছে অস্ত্র চেয়েছিলেন। আর মুক্তি সৈনিকদের ভারতের মাটিতে তালিম। পন্ডিত নেহেরু সম্মত হন নি।’

‘আমি তা শুনে তাজ্জব বনে যাই।’ (মিনার মনসুর সম্পাদিত- শেখ মুজিব একটি লাল গোলাপ-পৃঃ২৫)।

শ্রী রায়ের কথা থেকে এটা বোঝা যায় যে, বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার জন্য কতটা ঝুঁকি নিয়েছিলেন। ৬ দফা পেশ করার আগেই ষাটের দশকে ঢাকার কোন এক গুপ্তস্থানে এক গোপন বৈঠক বসেছিলো। সেখানে উপস্থিত ছিলেন বঙ্গবন্ধু, কমরেড খোকা রায়, কমরেড মনি সিংহ, তাফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া, জহুর হোসেন চৌধুরী। বিষয় ছিলো, আইয়ুব বিরোধী আন্দোলনে সম্মিলিত মোর্চা গঠন করা।

“কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃদ্বয়ের সঙ্গে শেখ মুজিব ও মানিক মিয়ার মোট ৪টি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম বৈঠকে তারা আইয়ুব শাহীর প্রতিক্রিয়াশীল নীতির বিরুদ্ধে গণআন্দোন গড়ে তোলা প্রয়োজন এবং দেশ আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত বলে একমত হন। দ্বিতীয় বৈঠকে খোকা রায় বলেন, সামরিক শাসন প্রত্যাহার ও রাজ বন্দীদের মুক্তিসহ মোট ৪টি জনপ্রিয় দাবীর ভিত্তিতে আন্দোলন গড়ে তোলা সম্ভব বলে তাদের পার্টি মনে করে। শেখ মুজিব বলেন ঃ এসব দাবী দাওয়া কর্মসূচীতে রাখুন, কোন আপত্তি নেই। কিন্তু দাদা, একটা কথা আমি খোলাখুলি বলতে চাই। আমার বিশ্বাস, গণতন্ত্র স্বায়ওশাসন এসব কোন দাবীই পাঞ্জাবীরা মানবে না। কাজেই স্বাধীনতা ছাড়া বাঙালীর মুক্তি নেই। স্বাধীনতার দাবীটা আন্দোলনের কর্মসূচীতে রাখা দরকার।” (আবদুল মতিন-বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবঃ কয়েকটি প্রাসঙ্গিক বিষয়- পৃঃ ১৭৬)।

আবদুল মতিন কিন্তু বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন। তার ‘জেনেভায় বঙ্গবন্ধু’ বইটি পড়লে প্রমাণ পাওয়া যাবে। বঙ্গবন্ধু যখন ১৯৫৮ সালে গৃহবন্দী তখন জনাব মতিনকে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘আইয়ুবকে আমি পরোয়া করি না, আমি জনগণের মনের কথা জানি।’

বাংলাদেশের স্বাধীনতার এজেন্ডা ছাড়া বঙ্গবন্ধু দ্বিতীয় কোনো মিশন নিয়ে রাজনীতি করেন নি। জীবনের সর্বোচ্চ ঝুঁকি নিয়ে তিনি স্বাধীনতাকে অনিবার্য করে তুলেছিলেন। বার বার তিনি অকুতভয়ে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করেছিলেন। তিনি শধু একটি দেশেরই প্রতিষ্ঠাতা নন, তিনি একটি দর্শনেরও প্রতিষ্ঠাতা- সেটা হলো বাঙালি জাতীয়তাবাদী দর্শন। যে দর্শনের মধ্যে ধর্মনিরপেক্ষতা, অসাম্প্রদায়িকতা, মানবতা, সাপ্রাজ্যবাদ বিরোধিতা, আন্তর্জাতিকতার উপাদান নিহিত আছে। এই দর্শনের ভিত্তিতে তিনি বাঙালি জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে ছিলেন। ১৯৭০ সালে অনেকে বলেছিলেন, ‘ভোটের আগে ভাত চাই।’ একমাত্র বঙ্গবন্ধুর চাপে ১৯৭০ সালে নির্বাচন সম্ভব হয়েছিলো, যে নির্বাচন আমাদের স্বাধীনতা এনে দিয়েছিলো।

১৯৭১ সালে তিনি ছিলেন ১০০০ হাজার মাইল দূরে। কিন্তু তার নামে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালিত হয়; তার নামে সরকার গঠিত হয়, তার নামে দেশের রাজধানীর নামকরণ করা হয়। তিনি ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের মূল প্রেরণার প্রতীক।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর বঙ্গবন্ধুকে ঐতিহাসের পৃষ্ঠা থেকে পত্রপাঠ বিদায় দেবার অনেক চেষ্টা হয়েছে, কিন্তু তা সম্ভব হয়নি।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.