![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন আল-কায়েদার বাংলাদেশে ঘাঁটি না থাকলেও কয়েকটি উগ্রবাদী সংগঠনের সঙ্গে ‘গোপন নেটওয়ার্ক’ রয়েছে বলে মনে করছেন গোয়েন্দারা। নিষিদ্ধ ঘোষিত জেএমবিকে আর্থিক সহযোগিতা প্রদান এবং আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সঙ্গে তাদের যোগসূত্রের ব্যাপারে যথেষ্ট প্রমাণ রয়েছে। সে বিষয় এর আগে একাধিক গোয়েন্দা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে নতুন করে কেউ আল-কায়েদার সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করেছে কি না সে বিষয়ে নিশ্চিত নন গোয়েন্দারা। একই সঙ্গে সদ্য প্রচারিত আল-কায়েদার ভিডিওবার্তার নেপথ্য কারণ ও ‘সঠিকতা’ যাচাই চলছে।
গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আল-কায়েদা নেতা আয়মান আল জাওয়াহিরির সম্প্রতি প্রকাশিত ভিডিওবার্তায় তাঁরা উদ্বিগ্ন। প্রাথমিকভাবে ভিডিওবার্তাটি শীর্ষ আল-কায়েদা নেতার বক্তব্য বলেই মনে করছেন তাঁরা। আল-কায়েদার ইয়েমেন শাখার সঙ্গে আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের যোগসূত্রের কথা এর আগে স্বীকার করেছেন দলটির তাত্ত্বিক নেতা মুফতি জসীমউদ্দীন রাহমানী। কারাবন্দি এ নেতাকে জিজ্ঞাসাবাদের প্রস্তুতি নিচ্ছেন গোয়েন্দারা। দেশে আফগানফেরত জঙ্গিদের সঙ্গে আল-কায়েদার যোগাযোগ থাকতে পারে বলেও ধারণা করা হচ্ছে। সার্বিকভাবে গ্রেপ্তার হওয়া জঙ্গিদের কাছ থেকে তথ্য যাচাই-বাছাই করে ভিডিওবার্তার সত্যতা খোঁজা হচ্ছে।
ব্যাপক আলোচিত ভিডিওবার্তা প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামাল গতকাল রবিবার বলেছেন, বিষয়টি খতিয়ে দেখছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (জেসি) মনিরুল ইসলাম বলেন, যতক্ষণ না প্রমাণিত হবে ওই ভিডিওবার্তাটি অন্য কারোর, ততক্ষণ পর্যন্ত ধরে নিতে হবে সেটি আল-কায়েদার শীর্ষ নেতার বক্তব্য। এক প্রশ্নের জবাবে মনিরুল ইসলাম বলেন, ইতিহাস বলে বাংলাদেশে জঙ্গিরা ‘ডমেস্টিকভাবে’ সংগঠিত। তবে তারা বিদেশি জঙ্গিদের মদদে জিহাদ বা বড় ধরনের নাশকতা ও ভবিষ্যতে মাথাচাড়া দিয়ে যে উঠবে না, তা সুনির্দিষ্ট করে বলা মুশকিল। এ কারণে শীর্ষ আল-কায়েদা নেতার জিহাদের ঘোষণা প্রকাশিত হওয়ার পর থেকেই সতর্ক রয়েছেন তাঁরা। র্যাবের মিডিয়া উইং পরিচালক কমান্ডার এম হাবিবুর রহমান জানিয়েছেন, আল-কায়েদার জিহাদের ঘোষণার ভিডিওবার্তাটি তাঁরা সংগ্রহ করেছেন। এর উৎস ও অন্যান্য দিক তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। এই আহ্বানের পেছনে আরো কোনো উদ্দেশ্য আছে কি না তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। দেশে জঙ্গিরা আর আগের মতো সংগঠিত নয় দাবি করে তিনি বলেন, শীর্ষ জঙ্গি নেতাদের বেশির ভাগ এখন কারাগারে। এখন পর্যন্ত সুনির্দিষ্টভাবে বাংলাদেশে আল-কায়েদার উপস্থিতি পাওয়া যায়নি।
নিরাপত্তা বিশ্লেষক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবদুর রশীদ (অব.) কালের কণ্ঠকে বলেন, আল-কায়েদা সরাসরি বাংলাদেশে কাজ না করলেও তাদের আদর্শের অনুসারী জঙ্গি সংগঠন বাংলাদেশে আছে। শীর্ষ আল-কায়েদা নেতার আহ্বানে তারা যে উজ্জীবিত হবে তা বলা যায়। ইসলামপন্থী ছোট ছোট জঙ্গি সংগঠনগুলো জিহাদের ঘোষণায় উদ্বুদ্ধ হয়ে বড় ধরনের নাশকতা চালাতে পারে বলেও তিনি মনে করছেন। তবে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ তাদের জিহাদের ঘোষণায় উদ্বুদ্ধ হবে না বলেই তিনি মনে করেন। তিনি আরো বলেন, ‘আল-কায়েদা আমাদের মুক্তিযুদ্ধকেও অপমান করেছে। তবে স্বাধীনতা বিরোধীরা তাদের সঙ্গে অনেক আগে থেকেই একাত্মতা ঘোষণা করেছে। আর স্বাধীনতা বিরোধীরাই যে এসব জঙ্গির মদদদাতা তা নিয়ে কোনো সন্দেহ থাকার অবকাশ নেই বলেও তিনি মনে করেন।’
বাংলাদেশে নেটওয়ার্ক : সশস্ত্র বিপ্লবের প্রস্তুতি নিয়ে রিসার্চ সেন্টার ফর ইউনিটি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (আরসিআইডি) নামের একটি এনজিওর মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহ করে জঙ্গিদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিম। পলাতক সেনা কর্মকর্তা মেজর জিয়াউল হক ও দলের অন্যতম প্রধান ইজাজ হোসেন আল-কায়েদার সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে। এর মধ্যে ইজাজ হোসেন বর্তমানে পাকিস্তানে রয়েছেন। জিয়া তিন মাস আগেও দেশে ছিলেন। বর্তমানে তিনি কোথায় তার তথ্য নেই। আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের তাত্ত্বিক নেতা হিসেবে পরিচয়দানকারী মুফতি জসীমউদ্দীন রাহমানীকে গ্রেপ্তার করে কয়েক দফা রিমান্ডে নিয়ে এসব তথ্য জানতে পারে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। আবার জেএমবির সাবেক আমির সাইদুর রহমানও গ্রেপ্তার হওয়ার পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জিজ্ঞাসাবাদে আল-কায়েদার সঙ্গে যোগাযোগ ও আর্থিক সহযোগিতার কথা স্বীকার করেন। এর আগে সন্ত্রাসবাদী হামলার পরিকল্পনার অভিযোগে যুক্তরাজ্যে গ্রেপ্তার হওয়া ব্রিটিশ এয়ার ওয়েজের সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার বাংলাদেশি যুবক রাজীব করিম ও তাঁর ছোট ভাই তেহজীব করিম একই মাসে ইয়েমেনে গ্রেপ্তার হন। তাঁদের বিরুদ্ধে আল-কায়েদা সম্পৃক্ততার অভিযোগ ওঠে। এই দুই ভাইয়ের সঙ্গে আল-কায়েদার শীর্ষ নেতার যোগাযোগ ছিল। এ ছাড়া আল-কায়েদার সঙ্গে যোগাযোগ থাকার অভিযোগে আরো বেশ কয়েকজন বাংলাদেশি ইয়েমেনে গ্রেপ্তার হয়।
গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, আনসারুল্লাহর প্রধান হিসেবে মুফতি জসীমউদ্দীনকে মনে করা হলেও তিনি মূলত সংগঠনের পাঁচজন শুরা সদস্যের একজন মাত্র। গোয়েন্দারা অন্য চার শুরা সদস্য সম্পর্কেও জানতে পেরেছেন। বর্তমানে আনসারুল্লাহর আমির হিসেবে দায়িত্ব পালন করছে ইজাজ হোসেন।
ইজাজের ভাই নাঈম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘কয়েক মাস আগে ইজাজ সর্বশেষ পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশে এসেছিল। এ সময় ১৫ মিনিটের জন্য একবার সে তাদের কলাবাগান প্রথম লেনের বাসায় যায়। সেখানে চার ভাই ও মায়ের সঙ্গে কথা বলে সে বাসা থেকে বেরিয়ে যায়। এরপর সে আর বাংলাদেশে আসেনি।’ তবে আল-কায়েদার সঙ্গে তার যোগাযোগ আছে বলে মনে করেন নাঈম।
গোয়েন্দা সূত্র জানায়, পাকিস্তানে আত্মগোপনে থাকা হরকাতুল জিহাদ, জামায়াতুল মুসলেমিন ও আল-কায়েদা মতাদর্শের কয়েকজন জঙ্গি নেতার কাছ থেকে ‘বিশেষ বার্তা’ পেয়ে মুফতি জসীম মাঠে নামেন। মুফতি আবদুল হাকিম, সাইদুর রহমান সাঈদ, মুফতি সিরাজুল ইসলাম সিরাজ, সানাউল্লাহ ও ল্যাংড়া সালামের সঙ্গে শায়খ রাহমানীর পুরনো শিষ্যদের বৈঠকের তথ্য মিলেছে। রাহমানীর এই শিষ্যরা মাস চারেক আগেও দেশে অনলাইনে জিহাদের ফতোয়া প্রচার করে আসছিল। আর তাদের প্রধান সংগঠন হচ্ছে বাব-উল ইসলাম। এর আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয় ২০১২ সালের ৯ মার্চ।
আল-কায়েদার অর্থে পাহাড়ে জমি কেনার অভিযোগও রয়েছে জেএমবির বিরুদ্ধে। রিসার্চ ফর ইউনিটি ডেভেলপমেন্টর (আরসিইউডি) এর মাধ্যমে আল-কায়েদার সঙ্গে জেএমবির সম্পর্ক গড়ে উঠে। প্রায় দুই বছর আগে জেএমবি নেতা সাইদুর রহমান গ্রেপ্তার হওয়ার পর ইয়েমেনভিত্তিক আল-কায়েদার সঙ্গে যোগাযোগের কথা স্বীকার করেন। ২০০৮ সালের শেষের দিকে ঢাকায় আহমেদ নামে ইয়েমেনের এক ব্যক্তি আল-কায়েদার পক্ষ থেকে জেএমবিকে সহযোগিতার প্রস্তাব দেন। ওই প্রস্তাবে মিয়ানমারের আরাকানভিত্তিক রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে সংগঠিত করা এবং জেএমবিকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার পরিকল্পনা নেয় আল-কায়েদা। এর পাশাপাশি জেএমবিকে শহুরে এলাকা ছেড়ে দুর্গম পাহাড়ি এলাকা, গহীন জঙ্গল ও সমুদ্রের তীরবর্তী এলাকায় জমি কিনে সাংগঠনিক কার্যক্রম চালানোর আশ্বাস দেয় আল-কায়েদা।
র্যাব সূত্র জানায়, ২০০৯ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়ির পাহাড়ে অভিযান চালিয়ে জঙ্গিদের একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র আবিষ্কার করে সেখান থেকে রহিম নামে জিএমবির এক সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরদিন ২৭ সেপ্টেম্বর ওই জঙ্গিকে ঢাকায় এনে সংবাদ সম্মেলন করা হয়। রহিম সে সময় সংবাদ সম্মেলনে বলেছিল, জেএমবির সে সময়ের আমির সাইদুর রহমানের নির্দেশে শুরা সদস্য শাহেদ ওরফে ওসমানের তত্ত্বাবধানে ওই জমি কেনার পর প্রশিক্ষণ ক্যাম্প করা হয়।
আরসিইউ এনজিও সম্পর্কে ঢাকা মহানগর পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (ডিবি) মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘উগ্রবাদের মাধ্যমে আনসারুল্লাহ বাংলা টিম দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের চেষ্টা করে আসছে। বিভিন্ন ইসলামী দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে তাদের অনেক আগ থেকেই যোগাযোগ আছে। ২০০৭ সাল পর্যন্ত ঢাকা ও সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে এই এনজিওর আড়ালে জঙ্গি কার্যক্রম শুরু করে তারা। একই সময়ে তারা জামায়াতুল মুসলেমীন নামে জর্দানভিত্তিক একটি জঙ্গি সংগঠনের কার্যক্রমের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে। তবে ২০০৯ সালের আগে ওই এনজিওর কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। এরপর থেকে জামায়াতুল মুসলেমীনের কার্যক্রম বন্ধ করে আনসারুল্লাহ বাংলা টিম নামে জঙ্গি তৎপরতা শুরু করেন দলের শীর্ষ নেতারা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় করে আরো কঠোর জঙ্গি অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তথ্যসূত্র: কালেরকণ্ঠ
©somewhere in net ltd.