নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মন্ত্রক

আমি আমার দেশের জন্যে

মন্ত্রক › বিস্তারিত পোস্টঃ

সাংগঠনিক সংকটে দিশেহারা বিএনপি

২৫ শে মার্চ, ২০১৪ সকাল ৮:২১

বর্তমান সরকার ও তৎকালীন মহাজোট সরকার তথা বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অধীন বিএনপি জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করলেও তাদের অধীনেই উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করায় খোদ দলেই দ্বিধাবিভক্তি তৈরি হয়েছে। দলের অভ্যন্তরেই পরস্পর পরস্পরকে দুষছেন। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে না যাওয়া ছিল বিএনপি’র একটি মস্ত বড় ভুলÑ এই ভুলের জন্য বিএনপির তৃণমূল নেতাকর্মীরা এখন প্রকাশ্যেই শীর্ষ নেতৃবৃন্দের সমালোচনা করছে। এটা নিয়ে বিএনপির শীর্ষ নেতৃবৃন্দও আছেন অস্বস্তিতে। এই অস্বস্তি দিনে দিনে আরও প্রকট হচ্ছে। নির্বাচন পরবর্তী অবস্থায় সরকারবিরোধী আন্দোলন প্রশ্নে সরকার এখন অনেকটাই শক্ত অবস্থানে। এ জন্য বিএনপির সুবিধাভোগী নেতারা চিন্তিত। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস ও আবদুস সালাম গ্রেপ্তার হওয়ার পর আদালতের আদেশে যেসব নেতা জামিনে মুক্ত আছেনÑ তারা আরো বেশি চিন্তিত। বিএনপির ওপর দেশি-বিদেশি বহুমুখী চাপ আছে জামায়াতকে জোট থেকে বের করে দেওয়ার জন্য। বিএনপি যখন এ বিষয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে তখন বিএনপির সাথে সাম্প্রতিক সময়ে জামায়াত উল্টো দূরত্ব বজায় রেখে চলেছে। তারা উপজেলা নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত। জামায়াতের অনীহায় জাতীয়ভাবে কোনো কর্মসূচি পালনে বিএনপি সাহস করছে না। এর ওপর ঢাকা মহানগর আহ্বায়ক কমিটি নিয়ে এবং কাউন্সিল আয়োজন নিয়ে পুরো বিএনপি হাইকমান্ডই মহা অস্বস্তিতে। ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের জন্য মাঠ পর্যায়ে নেতাকর্মীরা ছিল স্ট্যান্ডবাই। কিন্তু তাদের ওপর জামায়াতের ইন্ধনে চাপিয়ে দেওয়া আন্দোলনে ৯৫ ভাগ নেতাকর্মীই রাজপথে নামেনি। এমনকি ২৯ ডিসেম্বর ঢাকায় অবরোধ ও অবস্থানের যে কর্মসূচি দেওয়া হয়, সেই কর্মসূচির দিনও খালেদা জিয়ার পাশে দৃশ্যমান কোনো নেতাকর্মীও ছিলেন না। আন্দোলনবিমুখ সংগঠনের নেতাকর্মীরা এখন উপজেলা ভোটে নেমে দুধের স্বাধ ঘোলে মেটাচ্ছেন।

দলের মধ্যে একটি চরম অশান্তির জন্ম দিয়ে সাদেক হোসেন খোকা মহানগর কমিটির আহ্বায়কের পদ থেকে পদত্যাগ করেন। এ সময় তিনি অকপটে বলেন, ‘ঢাকায় আন্দোলন না জমার কারণ তিনি নন, আন্দোলন জমেনি মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর, সালাহউদ্দিন, সালাম প্রমুখের আন্দোলন নিয়ে অনীহার কারণে’। তার ওপর সবাই দোষ চাপিয়ে দিয়েছিলেন। বেগম জিয়াও তার প্রতি রুষ্ট ছিলেন। কেউ কেউ বলেছেন, আন্দোলন না করার জন্য তিনি পুলিশকে মালকড়ি দিয়ে কারাগারে সময় কাটান। এমনকি এমনও বলা হয় যে, খোকা দা-খন্তা-কুড়ালের ডাক দিয়ে পরিস্থিতির সুফল সরকারের হাতে তুলে দেন। এমন সব বক্তব্যের পর খোকা মুক্তি পেলেও বেগম খালেদা জিয়া তাকে ডেকে বিষয়টি জানতে চাননি। তিনিও খোকাবিরোধীদের বক্তব্যের প্রতি বিশ্বাস রেখে ঘোষণা দেন মহানগর কমিটি শুধু ভাঙা নয়, যারা আন্দোলন থেকে দূরে ছিলেন, তাদের দলের কোনো কমিটিতেই রাখা হবে না। এমনি অবস্থায় সাদেক হোসেন খোকা নিজেই সংবাদ সম্মেলন ডেকে বিএনপির মহানগরী প্রধানের দায়িত্ব থেকে ইস্তফা দেন। এরই মধ্যে গুজব রটেছে যে, তিনি ক্ষমতাসীন দলে যোগ দিয়ে টেকনোক্র্যাট কোটায় মন্ত্রী হয়ে যেতে পারেন। পরে হয়ত মেয়র পদে প্রার্থীও হতে পারেন।

বিএনপি হাইকমান্ড বুঝতে পেরেছে দলে বিভাজন ইস্যুতে ওয়ান-ইলেভেন ফ্যাক্টরই অন্যতম কারণ হিসেবে কাজ করছে। এ জন্য দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান লন্ডনে নির্বাসিত তারেক রহমান এসব ঘটনা প্রবাহকে সহজভাবে নিতে রাজি হচ্ছেন না। তিনি দল থেকে সব সন্দেহভাজনদের বের করে দিতে নির্দেশ দিয়েছেন। তার এই তালিকায় ওয়ান-ইলেভেনের সময় যারা খালেদা-তারেক বিরোধী শিবিরে ছিলেন এবং যারা তাদের জেলে পাঠিয়েছেন, তাদের তালিকা করা হয়েছে। এই তালিকার শীর্ষেই আছেন সাদেক হোসেন খোকা, মির্জা ফখরুল, জেনারেল মাহবুবুর রহমান, মেজর হাফিজ, ইনাম আহমেদ চৌধুরী, মোফাজ্জল করিম, জেনারেল জেড এইচ খান, ড. মইন খান, এহসানুল হক মিলন, বরকত উল্লাহ ভুলু, মোর্শেদ খান, আমান উল্লাহ আমান, আবদুল্লাহ আল নোমান, ব্যারিস্টার আমিনুল হক, নাদিম মোস্তফা, আবু হেনা প্রমুখ।

রাজনৈতিক মহল গভীরভাবে বিএনপির বর্তমান সাংগঠনিক সংকট পর্যবেক্ষণে রেখেছেন। এমনি অবস্থায় কর্নেল অলি (অব.) চাচ্ছেন দলে ফিরে আসতে। তবে শর্ত দিয়েছেন তাকে মহাসচিব করার জন্য। আবার খালেদা জিয়া চাচ্ছেন অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরীকে দলে ফিরিয়ে এনে মহাসচিব করতে। জোট এবং দলে মহাপোলারাইজেশন ঘটতে যাচ্ছে, এটা নিশ্চিত। এদিকে তিন বছরেরও অধিক সময় অনেক আগে পেরিয়ে গেলেও দল তাদের জাতীয় কাউন্সিল করতে ব্যর্থ হয়েছে। দল গোছাতে গিয়ে দলের এই হতাশা প্রকট হয়ে ওঠেছে।



বিএনপির তৃণমূল পর্যায়ে ব্যাপক জনপ্রিয়তা থাকলেও দলের নেতৃত্বের মধ্যে বিশাল স্থবিরতা বিরাজ করছে। সাংগঠনিক সংকটতো আছেই। টানা ৫ বছরে জাতীয় সংসদে বিরোধী দলে থাকলেও গুরুত্বপূর্ণ সাংগঠনিক পদ, যা সাংবিধানিক পদও বটে, সেই বিরোধী দলের উপনেতার দায়িত্ব কাউকে দেওয়া সম্ভব হয়নি। বিএনপি’র সংসদ সদস্য সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর যুদ্ধাপরাধের দায়ে ট্রাইব্যুনালে মৃত্যুদ-াদেশ হয়েছে। একই অবস্থা বিএনপির সাবেক মন্ত্রী আবদুল আলিমের। খন্দকার দেলোয়ার হোসেন মারা যাবার পর একটানা তিন বছর মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ভারপ্রাপ্ত হিসেবে কাজ করে আসছেন। জাতীয় নির্বাহী কমিটির মেয়াদ একবছর আগে শেষ হয়ে গেছে। এখনও কাউন্সিল করার মতো সাংগঠনিক অবস্থা দলে নেই। উপজেলা নির্বাচন করতে গিয়ে ডজন ডজন নেতাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। কেউ কাউকে মানতে চায় না। চট্টগ্রাম মহানগরীতে গত তিন বছরে অন্তত ৭ বার তিন গ্রুপের মারামারি, ভাঙচুর ও সংঘর্ষ হয়েছে। রাজধানী ঢাকার মহানগর কমিটির আহ্বায়ক পদত্যাগ করলেন। কিন্তু তিন বছরেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি করা সম্ভব হয়নি। চট্টগ্রামেও একই অবস্থা। যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, শ্রমিক দল, কৃষক দলসহ সব সংগঠনের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে অনেক আগে। এছাড়া কোথাও পূর্ণাঙ্গ কমিটি নেই। এডহক বা আহ্বায়ক কমিটি দিয়ে চলছে সব মেয়াদ উত্তীর্ণ জেলা-উপজেলা বিএনপির কমিটি। খালেদা জিয়া অচল ছাত্রদলের কমিটি নতুন করার কথা বলছেন। ছাত্রদের নিয়ে কমিটি করার কথা বলা হলেও শোনা যায় কেউ দায়-দায়িত্ব নিতে তেমন আগ্রহী নন। পাশাপাশি দলের অভ্যন্তরে গ্রুপিং-কোন্দলতো বরাবরই রয়েছে চরমে।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.