![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি ছিলেন বলে দাবি করেছেন তার ছেলে বিএনপির জ্যেষ্ঠ ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান। স্বাধীনতা দিবসের আগের দিন ২৫ মার্চ লন্ডনে একটি হোটেলে বিএনপি আয়োজিত অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তব্যে তিনি এ দাবি করেন। আলোচনার শুরুতেই সভার ব্যাকড্রপ দেখিয়ে বলেন, এখানে লাল অক্ষরে লেখা আছে, বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি এবং স্বাধীনতার ঘোষক জিয়া। স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি ছিলেন আমাদের নেতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান।
তারেক রহমানের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতির ঠিক দুই দিনের মাথায় তার মা বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া অনুরূপ বক্তব্য দিয়ে পুত্রের সুরে সুর মেলান। ২৭ মার্চ সন্ধ্যায় ইঞ্জিনিয়ারস ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানে খালেদা জিয়া বলেন, ‘বিএনপি মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তি। আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধকে সমর্থন করেছে মাত্র। জিয়াউর রহমান এদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন, সশরীরে রণাঙ্গনে যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছেন। স্বাধীনতার ঘোষক মেজর জিয়ার স্ত্রী হিসেবে আমি গর্ববোধ করি। জিয়া রাষ্ট্রপতি হয়েছেন জনগণের মাধ্যমে। আওয়ামী লীগের অনেক নেতাও স্বীকার করেন, জিয়াউর রহমানই স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন। ইতিহাস থেকে এটি মুছে ফেলা যাবে না। জিয়াউর রহমান শুধু স্বাধীনতার ঘোষকই নন; তিনি মুক্তিযুদ্ধের ঘোষক হিসেবে প্রথম রাষ্ট্রপতিও।’
মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতির কাজে তারেক রহমানের নগ্ন অপচেষ্টার দুই দিনের মাথায় খালেদা জিয়ার একই ধরণের অপচেষ্টায় দেশের মানুষ হতবিহ্বল হয়ে পড়ে। সারাদেশে তীব্র প্রতিবাদের ঝড় বয়ে যায়। অনেকে মন্তব্য করেন, মহান স্বাধীনতা দিবসের প্রাক্কালে ও পরে মা-পুত্রের এমন বক্তব্য আমাদের মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে অস্বীকার করার শামিল। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আত্মত্যাগ ও দেশপ্রেমকে প্রশ্নবিদ্ধ করার নতুন ষড়যন্ত্র।
বঙ্গবন্ধু হত্যাকা-ের পর রাজনৈতিক পটপরিবর্তনে রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়া জিয়াকে স্বাধীনতার ঘোষক না বলতে আদালতের নির্দেশ রয়েছে। একাত্তরে স্বাধীনতা যুদ্ধের ঊষালগ্নে জিয়ার পাঠ করা স্বাধীনতার ঘোষণার বিষয়ে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের স্থপতি বেলাল মোহাম্মদ বলেন, বঙ্গবন্ধুর পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠ করেছেন তৎকালীন মেজর জিয়াউর রহমান। জিয়াকে প্রথম রাষ্ট্রপতি বলার পেছনে যুক্তি তুলে ধরতে তারেক রহমান বলেন, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতিÑ এটাই সত্যি, এটাই ইতিহাস। উনি ১৯৭১ সালে মার্চে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন, এই যে বাংলাদেশ স্বাধীন; আমরা স্বাধীনতা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়লাম। তারেক বলেন, এ ঘোষণা দেওয়া উচিত ছিল তৎকালীন রাজনৈতিক নেতাদের। কিন্তু তারা তা দিতে ব্যর্থ হন। এর পাশাপাশি দেশের সাত কোটি মানুষের মনের ভাষা বুঝতেও তারা ব্যর্থ হয়েছিলেন।
জিয়া নিজেই স্বাধীনতার ঘোষণা তৈরি করে তা পড়েন বলে দাবি করেন তারেক রহমান। তিনি বলেন, কারও পাঠানো ঘোষণা নয়, বরং নিজের হাতে ঘোষণা ড্রাফট করলেন এবং সেটা জাতির সামনে পড়লেন; বিশ্বের সামনে পড়লেন যে, ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন। শহীদ জিয়া তার ভরাট কণ্ঠের মাধ্যমে ইথারে সবাইকে জানালেন। তিনি বলেন, আজকে আমরা অনেককে বলতে শুনি, শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন ৭ মার্চ। এটা কোনো বিতর্কের বিষয় নয়; এটা ইতিহাসের ব্যাপার, এভিডেন্সের ব্যাপার। এখানে যারা তরুণ প্রজন্ম আছেন, আমার এ কথা ও তথ্যগুলো বাংলাদেশের মানুষের কাছে, আওয়ামী লীগের কর্মীদের কাছে তুলে ধরবেন।
হাসান হাফিজুর রহমান সম্পাদিত বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রে বলা হয়েছে, পাকিস্তানি বাহিনী আক্রমণ শুরু করলে ২৫ মার্চ রাত ১২টা ২০ মিনিটে অর্থাৎ ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু ওয়্যারলেসের মাধ্যমে চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগ নেতা জহুর আহমেদ চৌধুরীর কাছে স্বাধীনতা ঘোষণার বার্তাটি পাঠান। ২৬ মার্চ বেলাল মোহাম্মদের নেতৃত্বে চট্টগ্রামের কালুরঘাটে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা হলে প্রথমে আওয়ামী লীগ নেতা এমএ হান্নান স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করেন। এরপর পাঠ করেন আবুল কাশেম সন্দ্বীপ। তৃতীয় ব্যক্তি হিসেবে পরদিন সন্ধ্যা ৭টা ২০ মিনিটে একই ঘোষণা জিয়াউর রহমান পাঠ করেন বলে মুক্তিযুদ্ধের প্রামাণ্য ওই ইতিহাস গ্রন্থে উল্লেখ রয়েছে। তারেক আরও বলেন, শেখ মুজিব যে স্বাধীনতার ঘোষণা দেননি, এর পক্ষে অনেক প্রমাণ রয়েছে। তিনি ঘোষণা দিয়েছেনÑ এ রকম প্রমাণ কোনো দলিলে নেই। আওয়ামী লীগ ছয় দফার জন্য আন্দোলন করেছে, পাকিস্তানের ক্ষমতা ভাগাভাগির জন্য আন্দোলন করেছে, তার প্রমাণ আছে; কিন্তু স্বাধীনতার জন্য আন্দোলন করেনি। ইতিহাসে তার কোনো প্রমাণ নেই। তারেক বলেন, আমরা সবাই জানি, শেখ মুজিবের বাড়ি ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে। স্বাধীনতার সময় হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল (বর্তমানে রূপসী বাংলা হোটেল)-এ প্রচুর বিদেশি সাংবাদিক ছিলেন। আওয়ামী লীগের নেতারা বলে থাকেন, শেখ মুজিব চিরকুটের মাধ্যমে ওয়্যারলেস করে নাকি চট্টগ্রামে স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠিয়েছিলেন। কাছের হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে চিরকুট না পাঠিয়ে উনি কেন তা ২০০ মাইল দূরে চট্টগ্রামে পাঠালেন?
১৯৭১ সালের ২৬ মার্চের ইত্তেফাকের একটি সংখ্যা হাতে নিয়ে তারেক জিয়া বলেন, এখানে শেখ মুজিবের একটি বিবৃতি দেওয়া আছে। এটি তিনি একটি ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে দিয়েছেন। সেটি হলো ২৪ মার্চে আন্দোলনরত জনতার সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংঘর্ষে চারজন নিহত হন। শেখ মুজিব এই বার্তা পাঠান ২৫ তারিখ। তারেক জানান, ইত্তেফাক বিবৃতিটির একটি হেডিং করল এবং একটি সাবহেডিং করল। যে ইম্পর্ট্যান্ট পয়েন্টটি হেডিং করল, এ গণহত্যা বন্ধ কর; আর সাবহেডিংটি ছিল, ২৭ শে মার্চ সমগ্র বাংলাদেশে সর্বাত্মক ধর্মঘট। অথচ আওয়ামী লীগ বলে, শেখ মুজিব ৭ মার্চ নাকি স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন। তারেক বলেন, ৭ মার্চ দেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করে ২৭ মার্চ শেখ মুজিবের ধর্মঘট ডাকার বিষয়টি হাস্যকর। তারেক বলেন, আপনাদের কি মনে হয়, আপনারা এ পয়েন্টগুলো মনে রাখতে পারবেন? ইতিহাস সম্পর্কে তারা জাতিকে মিথ্যা তথ্য দেবে এটা আমরা মেনে নেব না।
তারেক রহমান ও খালেদা জিয়া মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতির যে মিশনে নেমেছেন তা তরুণ প্রজন্মকে বিভ্রান্ত করার নতুন নীলনকশা বলে মন্তব্য করেছেন বিশিষ্টজনরা। এ নিয়ে সারাদেশে তীব্র ক্ষোভ ও প্রতিবাদের ঝড় বইছে। বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ শান্তিপূর্ণ নানা কর্মসূচি পালনের মাধ্যমে খালেদা-তারেক রহমান কর্তৃক মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতির প্রতিবাদ জানাচ্ছে। তাদের মতে, তরুণ প্রজন্ম যখন মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস, স্বাধীনতা ও স্বাধীনতার ঘোষক সম্পর্কে মিথ্যা তথ্যের বেড়াজাল থেকে বেরিয়ে আসছিল, ঠিক সেই সময়ে মা-পুত্রের বিকৃত ইতিহাসের অবতারণা একটি সুদূরপ্রসারি ষড়যন্ত্রের অংশ। তারা এই ষড়যন্ত্র নস্যাতে আওয়ামী লীগকে আরও সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দেন। নতুন প্রজন্ম যাতে মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা, স্বাধীনতার স্থপতি ও স্বাধীনতার ঘোষক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সম্পর্কে বিভ্রান্ত না হয় সে বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও আওয়ামী লীগ সরকারকে সতর্ক থাকার তাগিদ দেন।
©somewhere in net ltd.