নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মন্ত্রক

আমি আমার দেশের জন্যে

মন্ত্রক › বিস্তারিত পোস্টঃ

তারেক জিয়ার মস্তিষ্কের বিকৃতি

০৭ ই এপ্রিল, ২০১৪ সকাল ৭:৫৮

লন্ডনের একটি অনুষ্ঠানে ২৫ মার্চ বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান দাবি করেছেন জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি ছিলেন। তাঁর দাবির পক্ষে প্রথম যুক্তি হচ্ছে ঐ অনুষ্ঠানমঞ্চের ব্যাকড্রপ। তারেক রহমান আলোচনার শুরুতেই সভার ব্যাকড্রপ দেখিয়ে বলেছেন, ‘এইখানে লাল অক্ষরে লেখা আছেÑ বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি এবং স্বাধীনতার ঘোষক জিয়া। স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি ছিলেন আমাদের নেতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান।’ না, এখানেই থেমে থাকেননি তারেক। রীতিমতো গবেষকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন স্বীয় পিতাকে বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য। জিয়াকে প্রথম রাষ্ট্রপতি বলার পেছনে যুক্তিও তুলে ধরেছেন দলের নেতাকর্মীদের কাছে।

বিএনপির নির্বাসিত সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যানের ভাষ্য অনুযায়ী, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি এটাই সত্যি, এটাই ইতিহাস। উনি ১৯৭১ সালে মার্চ মাসে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন, এই যে বাংলাদেশ স্বাধীন আমরা স্বাধীনতা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়লাম। তাঁর মতে, এই ঘোষণা দেওয়া উচিত ছিল তৎকালীন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের। কিন্তু তাঁরা তা দিতে ব্যর্থ হন, এর পাশাপাশি দেশের সাত কোটি মানুষের মনের ভাষা বুঝতেও তাঁরা ব্যর্থ হয়েছিলেন। জিয়া নিজেই স্বাধীনতার ঘোষণা তৈরি করে তা পড়েন বলে দাবি তারেক রহমানের। তিনি স্পষ্টতই বলেছেন, কারও পাঠানো ঘোষণা নয়, বরং নিজের হাতে ঘোষণা ড্রাফট করলেন এবং সেটা জাতির সামনে পড়লেন, বিশ্বের সামনে পড়লেন, যে ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন। শহীদ জিয়া তাঁর ভরাট কণ্ঠের মাধ্যমে, ইথারের মাধ্যমে সবাইকে জানালেন। নিজের কথাকে যৌক্তিক প্রমাণ করতে তারেক রহমান আরও বলেছেন, আজকে আমরা অনেককে বলতে শুনি শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন ৭ মার্চ। এটা কোনো বিতর্কের বিষয় না। এটা হচ্ছে ইতিহাসের ব্যাপার, এভিডেন্সের ব্যাপার। এখানে যারা তরুণ প্রজন্ম আছেন, আমার এই কথা ও তথ্যগুলো বাংলাদেশের মানুষের কাছে, আওয়ামী লীগের কর্মীদের কাছে তুলে ধরবেন। তারেক রহমানের ভাষ্য অনুযায়ী শেখ মুজিব যে স্বাধীনতার ঘোষণা দেননি, এর পক্ষে অনেক প্রমাণ রয়েছে। তিনি ঘোষণা দিয়েছেন, এরকম প্রমাণ কোনো দলিলে নেই। তারেক তাঁর বক্তৃতায় এটাও বলেছেন, আওয়ামী লীগ ছয় দফার জন্য আন্দোলন করেছে, পাকিস্তানের ক্ষমতা ভাগাভাগির জন্য আন্দোলন করেছে তার প্রমাণ আছে, কিন্তু স্বাধীনতার জন্য আন্দোলন করেনি। ইতিহাসে তার কোনো প্রমাণ নেই।

তারেক রহমানের কথা নিয়ে বিতর্ক অবান্তর। তিনি যে প্রমাণের কথা বলেছেন, তা তো লিখিতই আছে। এমনকি তাঁর প্রয়াত বাবা জিয়াউর রহমানের লেখাতেও এর প্রমাণ আছে। তারেক রহমান আজ যা বলছেন, এর ঠিক বিপরীত কথাটি তাঁর বাবা জিয়াউর রহমান নিজেই বলেছেন। দেশের সংবাদপত্র তাঁর সাক্ষী। সে সময়ের সরকারি ট্রাস্টের কাগজ দৈনিক বাংলা ও বিচিত্রায় তা মুদ্রিত হয়েছিল। হাসান হাফিজুর রহমান সম্পাদিত ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ’ দলিলপত্রে বলা হয়েছে, পাকিস্তানি বাহিনী আক্রমণ শুরু করলে ২৫ মার্চ রাত ১২টা ২০ মিনিটে অর্থাৎ ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু ওয়ারলেসের মাধ্যমে চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগ নেতা জহুর আহমেদ চৌধুরীর কাছে স্বাধীনতার ঘোষণার বার্তাটি পাঠান।

‘বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ’ দলিলপত্রকে অস্বীকার করে তারেক রহমান নতুন ইতিহাসের জন্ম দিলেন, আর খালেদা জিয়া তাতে সায় দিলেন। বাংলাদেশে বিএনপির চুরি ও দুর্নীতির ইতিহাস সবাই সম্যক অবগত। এবার মা-ছেলের ইতিহাস চুরির বিষয়ে অবগত হল দেশবাসী।

নয় মাস সশস্ত্র যুদ্ধের পর আসে আমাদের স্বাধীনতা। তারও আগে নিতে হয়েছে দীর্ঘ প্রস্তুতি। সত্তরের নির্বাচনে জাতি রায় দিয়েছিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আওয়ামী লীগকে। তা মেনে নেয়নি পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী। এরই পরিপ্রেক্ষিতে একাত্তরের ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেন ‘যার হাতে যা আছে, তাই নিয়ে ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোল’। ঘোষণা দেন ‘এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ বাঙালির বুকে স্বাধীনতার বীজমন্ত্র বোনা হয়ে যায় সেই দিনই।

২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী কর্তৃক অপারেশন সার্চ লাইটের নামে বাঙালি নিধন শুরু হলেও রুখে দাঁড়ায় বীর বাঙালি। সেই ২৫ মার্চ মধ্যরাতে ২৬ মার্চের সূচনালগ্নে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতা ঘোষণা করেন।

২৬ মার্চ বেলাল মোহাম্মদের নেতৃত্বে চট্টগ্রামের কালুরঘাটে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা হলে প্রথমে আওয়ামী লীগ নেতা এম এ হান্নান স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করেন। এরপর পাঠ করেন আবুল কাশেম সন্দ্বীপ। তৃতীয় ব্যক্তি হিসেবে পরদিন সন্ধ্যা ৭টা ২০ মিনিটে একই ঘোষণা জিয়াউর রহমান পাঠ করেন বলে মুক্তিযুদ্ধের প্রামাণ্য ইতিহাস গ্রন্থে উল্লেখ রয়েছে।

এক্ষেত্রে বেলাল মোহাম্মদের স্মৃতিচারণ প্রণিধানযোগ্য। তিনি একটি সাক্ষাৎকারে উল্লেখ করেছেন, ‘… পটিয়ায় পৌঁছেই দেখা গেল আর্মি গিজ গিজ করছে। এখানে যে আর্মি অফিসার আছে তার নাম মেজর জিয়াউর রহমান। তার সঙ্গে দেখা হলো। তাকে বললাম, আপনি তো এখানে ব্রডকাস্ট শুনেছেন।

তিনি বললেন, আমরা যে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা প্রচার করেছি তা শুনেছেন এবং খুশি হয়েছেন।

আমি বললাম, আপনি যদি দয়া করে আপনার এই ছাউনিটা এখান থেকে সরিয়ে কালুরঘাটে নিয়ে যেতেন তা হলে রেডিও স্টেশনটা প্রটেক্ট হবে। আমরাও ওখানে স্থায়ীভাবে কাজ করতে পারব। স্থায়ীভাবে না থাকতে পারলে কোনো কমিটমেন্ট করা যাবে না। ঠিক টাইমে রেডিওতে প্রোগ্রাম দেওয়া অ্যাডভেঞ্চার নয়। বেশ কিছু লোক লাগে। সব রকমের পয়েন্টে লোক বসে থাকা লাগে।

তারপর উনি আর দেরি করেননি। সৈন্যদেরকে রওনা করিয়ে দিলেন। নিজেও একটা জীপে রওনা হলেন। আমাদের গাড়িটা ওনার গাড়ির পেছনে পেছনে চলল। পথে যেখানেই উনি বেশি মানুষের জটলা দেখেছেন, যারা কর্মস্থল ছেড়ে পোটলাপুঁটলি নিয়ে চলে যাচ্ছে সেখানে তিনি দাঁড়িয়ে একটা বক্তৃতা দিলেন। আপনারা যার যার কাজের জায়গায় চলে যান। ইনশাল্লাহ দু’এক দিনের মধ্যে আমরা পাঞ্জাবীদের খতম করে দেব। উর্দু ভাষায় যারা কথা বলে তারা সব আমাদের দুশমন। তাদেরকে শেষ করে দেন।

এটাই ছিল ওনার বক্তব্য। এই দশ জায়গায় থেমে থেমে যাওয়ার জন্য আমাদের কালুরঘাটে পৌঁছতে সন্ধ্যা হয়ে গেল। গিয়ে দেখলাম কালুরঘাটে পাহারার ব্যবস্থা হয়ে গেছে। হুইসেল পড়ল, একজন সেন্ট্রি হাত বাড়িয়ে দিল। আমাদের দুটো গাড়ি ঢুকল।

আমার সহকর্মী যারা উপস্থিত ছিল, তারা প্রোগ্রাম শুরু করল। এক সময় জিয়াউর রহমান ও আমি একটা রুমে বসেছি। আমার এক সহকর্মী আমাকে কিছু কাগজপত্র দেখাচ্ছে। আমি কী মনে করে বললাম, ‘আচ্ছা মেজর সাহেব, এখানে তো আমরা সবাই মাইনর আপনিই একমাত্র মেজর। আপনি কি নিজের কণ্ঠে কিছু বলবেন?’

উনি বললেন, ‘হ্যাঁ সত্যিই তো, কী বলা যায়?’

একটা কাগজ এগিয়ে দেওয়া হলো। তার প্রতিটি শব্দ তিনিও উচ্চারণ করেছেন এবং আমিও উচ্চারণ করেছি। এইভাবে লেখা শুরু হলো।

‘আই মেজর জিয়া অন বিহাফ অব আওয়ার গ্রেট ন্যাশনাল লিডার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডু হেয়ার বাই ডিক্লেয়ার ইন্ডিপেনডেন্স অব বাংলাদেশ।’ তারপরে লেখা হলো পাঞ্জাবীরা যেসব অস্ত্র ব্যবহার করছে; তাদের দমন করতে আমাদের দুই দিন কি তিন দিনের বেশি সময় লাগবে না। তার পরে শেষ করা হলো খোদা হাফেজ, জয় বাংলা বলে।

এই ঘোষণাটির খসড়াও তৈরি হলো আমার সঙ্গে আলাপ করে। আমি সঙ্গে সঙ্গে অনুবাদও লিখলাম। আর আমার সহকর্মীদের বলে দিলাম একটা ঘোষণা দিতে থাকো, মেজর জিয়াউর রহমান একটি জরুরি ভাষণ দেবেন। জিয়াউর রহমান বলবেন না, মেজর জিয়া বলবেন। কিছুক্ষণের মধ্যে মেজর জিয়া একটা জরুরি ভাষণ দেবেনÑ এভাবে দুই-তিনবার অ্যাডভান্স এ্যানাউন্সমেন্ট করা হলো। তারপর তিনি নিজের কণ্ঠে ইংরেজিটা পড়েছেন। আমার সহকর্মী আব্দুল্লাহ আল ফারুকের কণ্ঠস্বর ভালো, বাংলাটা তাকে দিয়ে শুনিয়েছি। এইভাবেই হলো। কোনো রকম পূর্বপ্রস্তুতি ছিল না, পরিকল্পনা ছিল না এবং এটা স্বাধীনতা ঘোষণা না। এটা হচ্ছে বঙ্গবন্ধুর পক্ষ থেকে একই কথার পুনরুক্তি করা।’

রাষ্ট্রপতি জিয়া কোনোদিন নিজেকে স্বাধীনতার ঘোষক বলেননি। ২৬ তারিখেও বলেননি, উনি সব সময় ২৭ তারিখই বলেছেন। এবং ৭ মার্চের বক্তব্যকে তিনি একটা প্রবন্ধে জাতির জনকের গ্রিন সিগন্যাল বলেছেন। পরবর্তী সময় যে ঘোষকটোষক বলা হয়েছে এগুলো তৈরি করা। রাষ্ট্রপতি জিয়া এগুলো ক্লেম করেননি।

কোন পরিপ্রেক্ষিতে জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন, স্বাধীনতার পর জিয়া যখন রাষ্ট্রক্ষমতায়, তখন এ বিষয়ে অনেক লেখক অনেক প্রবন্ধ লিখেছিলেন। জিয়াউর রহমান তার জীবদ্দশায় এসবে কোনো আপত্তি করেননি। তিনি কখনোই বলার চেষ্টা করেননি যে তিনি স্বাধীনতার ঘোষক। আর নিজেকে প্রথম রাষ্ট্রপতি বলা কল্পনায়ও আনেননি জিয়াউর রহমান। তাহলে কেন নতুন ইতিহাসের জন্ম দিতে চাইছেন তারেক জিয়া? প্রশ্ন হচ্ছে, দেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি কেন স্বাধীনতার পর সেনাবাহিনীর দ্বিতীয় ব্যক্তি হয়ে চাকরি করলেন? প্রশ্ন হচ্ছে, নিজের জীবদ্দশায় কেন তিনি এমন কোনো দাবি করেননি। এমনকি বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের পরও তিনি কেন নিজেকে দেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি হিসেবে দাবি করেননি। বরং মুক্তিযুদ্ধের সময় দেশের রাষ্ট্রপতি ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বেই মুক্তিযুদ্ধ হয়েছেÑ এটা জিয়াউর রহমান দেশে-বিদেশে বহুবার বলেছেন। বিপরীতে লন্ডনে বসে তারেক রহমান স্বীয় পিতাকে নিয়ে শোনালেন বিপরীত গল্প। এই গল্প কি তাঁর মস্তিষ্ক বিকৃতির প্রমাণ, না গোয়েবলসীয় প্রতারণাÑদেশের আপামর জনসাধারণের কাছে এটি এখন এক বিরাট প্রশ্ন।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৭ ই এপ্রিল, ২০১৪ সকাল ৯:৫৪

নিজাম বলেছেন: না, তার মাথাটা ঠিকই আছে। তিনি বুঝতে পেরেছেন বাঙালীকে যা খাওয়ানো যাবে তাই খাবে।

২| ০৭ ই এপ্রিল, ২০১৪ সকাল ৯:৫৫

Eng. Wadud Khan বলেছেন: িনজ+আম বলেছেন: না, তার মাথাটা ঠিকই আছে। তিনি বুঝতে পেরেছেন বাঙালীকে যা খাওয়ানো যাবে তাই খাবে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.