নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মন্ত্রক

আমি আমার দেশের জন্যে

মন্ত্রক › বিস্তারিত পোস্টঃ

উপজেলা নির্বাচনে ফলাফল বিপর্যয়ে কিংকর্তব্যবিমূঢ় বিএনপি

০৯ ই এপ্রিল, ২০১৪ সকাল ৮:০৭



প্রথম দুই দফা উপজেলা নির্বাচনে ভালো ফল করায় বিএনপি উজ্জীবিত হলেও শেষের তিন দফায় ফল খারাপ হওয়ায় কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়েছে দলের সাধারণ নেতাকর্মী-সমর্থকরা। তবে প্রথম দুই দফায় ফল নিজেদের অনুকূলে থাকার পরও সরকার ও নির্বাচন কমিশনকে ধন্যবাদ না দিয়ে তারা উল্টো নির্বাচনে ভোট কারচুপির ঢালাও অভিযোগ করে কঠোর সমালোচনা করে। তাই জিতেও বিএনপির ধারাবাহিক ভোট কারচুপির অভিযোগ সাধারণ মানুষের কাছে হাস্যকর হিসেবে বিবেচিত হয়। আর এই হাস্যকর অভিযোগের কারণে সরকারি দলের নেতাকর্মীরা দলীয় প্রার্থীদের পক্ষে অধিক সক্রিয় হওয়ায় আওয়ামী লীগ শেষের ৩ দফায় বিএনপির চেয়ে অনেক ভালো ফল করে। কিন্তু শেষ ৩ দফায় ফলাফল প্রতিকূলে যাওয়ার পরও আগের মতোই নির্বাচনে ভোট কারচুপির অভিযোগ অব্যাহত রেখে সরকার ও নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করে বিএনপি। সেই সঙ্গে এখন আন্দোলন কর্মসূচি দেওয়ার হুঙ্কার দিচ্ছে। বিএনপির শীর্ষ নেতারা আন্দোলনের হুমকি দিলেও উপজেলা নির্বাচনের মোট ফল নিয়ে হতাশ বিএনপির তৃণমূলের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা। প্রথম দুই দফা নির্বাচনে বিএনপি ভালো ফল করেও সুষ্ঠু নির্বাচন হচ্ছে না বলে ঢালাওভাবে অভিযোগ করায় পরবর্তী ৩ দফা নির্বাচনে ভাল ফল করার ব্যাপারে সরকারি দল উৎসাহী হয়। এর ফলে তারা বিজয়ের ফসল ঘরে তুলতে সক্ষম হয়। তাই ৫ দফা নির্বাচন শেষে বিএনপি আওয়ামী লীগের চেয়ে অনেক পিছিয়ে পড়ে।

বিএনপি তিনটি উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ নেয়। প্রথম উদ্দেশ্যটি ছিল দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের মধ্যে যে হতাশা ছিল, তা কাটিয়ে তুলতে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে নিজ নিজ এলাকায় দলীয় প্রার্থীর পক্ষে প্রচার-প্রচারণা সক্রিয় রেখে হতাশা কাটিয়ে উঠা। দ্বিতীয় উদ্দেশ্য ছিল সরকার ও নির্বাচন কমিশনকে চাপে রেখে বেশি সংখ্যক উপজেলায় দলীয় প্রার্থীদের বিজয়ী করা। আর তৃতীয় উদ্দেশ্যটি ছিল এ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সরকার ও নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে ধারাবাহিক অভিযোগ উত্থাপন করে সরকার ও কমিশনের মাধ্যমে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয় আর এ জন্যই বিএনপি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করেছিল, তা সবাইকে জানিয়ে দেওয়া। উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে বিএনপির এই তিনটি উদ্দেশ্যর একটিও সফল হয়নি বলে মনে করছেন নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা।

উপজেলা নির্বাচন শুরুর পর থেকেই বিএনপি ধারাবাহিকভাবে সরকার ও নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে ভোট কারচুপির অভিযোগ করতে থাকে। তবে কারচুপির অভিযোগ করলেও দুই দফা নির্বাচনে সরকারি দল আওয়ামী লীগের চেয়ে বিএনপিই বেশি উপজেলায় বিজয়ী হয়। নিজেদের বিজয়ের পরও লাগাতার ভোট কারচুপির অভিযোগ করা নিয়ে খোদ দলের ভেতরই প্রশ্ন দেখা দেয়। সেই সঙ্গে উপজেলা নির্বাচনে বিএনপির বিজয়ী প্রার্থীরাও নাখোশ হয়। অভিজ্ঞ মহলের মতে, উপজেলা নির্বাচন চলাকালে প্রতিদিন বিএনপি যেভাবে ভোট কারচুপির অভিযোগ করছে, তা যদি বাস্তবে হতো তা হলে তো এ দলের কোনো প্রার্থীই বিজয়ী হওয়ার কথা নয়। বরং আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের একতরফা বিজয়ী হওয়ার কথা। কিন্তু বিপুলসংখ্যক ভোটারের অংশগ্রহণে প্রথম ২ দফা উপজেলা নির্বাচনেই দেখা গেল বিএনপিদলীয় প্রার্থীরাই আওয়ামী লীগের চেয়ে বেশি বিজয়ী হয়েছেন। আর বিজয়ী উপজেলা চেয়ারম্যানরা সন্তুষ্টির পাশাপাশি নিজ নিজ এলাকার ভোটারদের ধন্যবাদও দিয়েছেন। অথচ কেন্দ্রীয়ভাবে অভিযোগ করা হয়েছে আওয়ামী লীগ নাকি বিএনপি নেতাকর্মীদের ভোট দিতে দেয়নি। বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাঁরা কৌশলগত কারণে উপজেলা নির্বাচনে ধারাবাহিকভাবে ভোট কারচুপির অভিযোগ করছেন। এ কৌশলটি হচ্ছে কারচুপির অভিযোগ অব্যাহত রাখায় সরকার ও নির্বাচন কমিশন চাপের মুখে থাকবে। আর এ কারণে সরকারি দল আওয়ামী লীগ ভোট কারচুপির তেমন সুযোগ পাবে না। তবে প্রথমদিকে এ কৌশল কাজে লাগলেও শেষের দিকে সরকারি দলের নেতাকর্মীরা দলীয় প্রার্থীদের পক্ষে অধিক সক্রিয় হওয়ায় বিএনপির কৌশল আর কাজে লাগেনি।

২৭ ফেব্র“য়ারি দ্বিতীয় দফা উপজেলা নির্বাচনের দিন বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দফায় দফায় সংবাদ সম্মেলন করে দলের যুগ্মমহাসচিব রুহুল কবির রিজভী অভিযোগ করেন, সরকারি দল চর দখলের মতো ভোটকেন্দ্র দখল করেছে। এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের স্বরূপ উন্মোচিত হয়েছে। এ সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না, তা উপজেলা নির্বাচনে প্রমাণিত হয়েছে। নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি অভিযোগ করে তিনি বলেন, ভোট ছিনতাইয়ের বিরুদ্ধে শীঘ্রই উত্তাল আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।

রিজভী বলেন, সরকারদলীয় লোকেরা কেন্দ্র দখলের তা-ব চালিয়েছে। ওপর মহল থেকে পুলিশ ও গণমাধ্যমকে নীরব থাকার জন্য বলা হয়েছে। এভাবে গভীর চক্রান্তের মাধ্যমে ফল একদিকে নেওয়ার চেষ্টা চালানো হয়েছে। সরকার একদিকে যেমন শাসনতন্ত্রকে ব্যবহার করছে, অন্যদিকে দলীয় সন্ত্রাসীদের দিয়ে কেন্দ্র দখলের তা-ব চালিয়েছে। নির্বাচন কমিশনকে বিভিন্ন সময়ে সার্বিক পরিস্থিতি তুলে ধরে বারবার চিঠি দেওয়া হলেও কোনো কার্যকর পদক্ষেপ তারা নেয়নি। বরং নিজেদের চাকরির ভয়ে সাংবিধানিক সত্তা বিসর্জন দিয়ে সরকারের আজ্ঞাবাহী হিসেবে কাজ করছে। এই নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা ক্রীতদাসের মতো। তাই এ মুহূর্তে এই নির্বাচন কমিশনের পদত্যাগ ছাড়া গণতন্ত্রের ন্যূনতম কাঠামো থাকবে না। তিনি বলেন, পুলিশ-র‌্যাব আওয়ামী লীগের ব্যক্তিগত বাহিনী। তাই তারা ব্যক্তিগত বাহিনীর মতো জনগণের রায় ছিনিয়ে নিতে অকাতরে সরকারের পক্ষে কাজ করেছে।

১৫ মার্চ তৃতীয় দফা উপজেলা নির্বাচনের দিনও রুহল কবির রিজভী কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বসে দফায় দফায় সংবাদ সম্মেলন করে ভোট কারচুপির অভিযোগ করেন। তিনি বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর নৃশংস আক্রমণ, লোমহর্ষক খুন ও গুম, ভোটকেন্দ্র দখল, ব্যালট পেপার ছিনতাই, ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে যেতে বাধা প্রদান, জালভোটসহ বিভিন্ন অপকর্মের অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, যে সব জায়গায় বিএনপির শক্ত ঘাঁটি রয়েছে, সে সব এলাকায় সরকার সমর্থকরা বেশি ভোট ডাকাতি করেছে।

২৩ মার্চ চতুর্থ দফা উপজেলা নির্বাচনের দিন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দফায় দফায় সংবাদ সম্মেলন করে রিজভী ভোট কারচুপির অভিযোগ করেন।

৩১ মার্চ পঞ্চম দফা উপজেলা নির্বাচনের দিন বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দফায় দফায় সংবাদ সম্মেলন করে আগের মতোই ভোট কারচুপির ঢালাও অভিযোগ করে। এ দিন রিজভী বলেন, ভোট কারচুপির প্রতিবাদে শিগগিরই যৌক্তিক আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।

শেষ দফা উপজেলা নির্বাচন শেষ হয়েছে সপ্তাহখানেক আগে। রিজভী আহমদের আন্দোলনের হুমকি এখন ডিপফ্রিজে। বিএনপি এখন ব্যস্ত আছে জিয়াউর রহমানকে দেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি প্রমাণে। কিন্তু এই প্রমাণ কর্মকা-ে নেমে বিএনপির শীর্ষ নেতারা নাম লেখাচ্ছেন ইতিহাস চুরির খেরোখাতায়। একদিকে উপজেলা নির্বাচনের শেষ তিনধাপে বিএনপি প্রার্থীদের থেকে সাধারণ ভোটারদের মুখ ফিরিয়ে নেওয়া অন্যদিকে জনসম্পৃক্ততা বজায় রাখার জন্য ইতিহাস চুরির মতো জঘন্য কাজে শীর্ষ নেতাদের অংশগ্রহণ একেবারেই কিংকর্তব্যবিমূঢ় করে দিয়েছে বিএনপির তৃণমূলের নেতাকর্মী-সমর্থকদের।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.