![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি ছিলেন বলে দাবি করেছেন তার ছেলে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান। অর্থাৎ স্বয়ং জিয়াউর রহমান কোথাও দাবি করেননি যে তিনি বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি। এখন তারেক রহমানের এ অদ্ভুত দাবির পেছনে নিশ্চয়ই রাজনৈতিক মরতবা লুকিয়ে আছে। বর্তমান সরকারের পতন ঘটানোর জন্য তারা দেশবাসীকে অনেক আহ্বান জানিয়েছিলেন, দেশবাসী কর্ণপাত করেনি। দেশের মানুষকে ডাক দিয়েছিলেন তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে, ডাক দিয়েছিলেন যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া বন্ধ করার জন্য, সর্বশেষ ডাক দিলেন ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বন্ধ করার জন্য। ২৯ ডিসেম্বর দলের কার্যালয়ের সামনে মহাসমাবেশ ডেকেছিলেন বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া। তাতেও কর্ণপাত করেনি জনগণ। তত্ত্বাবধায়ক হলো না কিন্তু কাদের মোল্লার ফাঁসি হলো, মহাসমাবেশ হলো না কিন্তু নির্বাচন হয়ে গেল, আমাদের আব্বা হুজুরও (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র) প্রসন্ন কণ্ঠে স্বীকৃতি দিলেন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ১৫৭টি আসন পাওয়া সরকারকে। এতে বিপন্ন হওয়ারই কথা তারেক রহমানদের। তারা বেশ বেকায়দায়ই পড়েছেন। আমি এ কথা বলব না যে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর আওয়ামী লীগ যতটা বিপদে পড়েছিল, জেলখানায় চার জাতীয় নেতাকে হত্যার পর যতটা বিপদে পড়েছিল, বিএনপি ততটা বিপদে পড়েছে। তবে বিপদে পড়েছে এতে কোনো সন্দেহ নেই। এ চলমান সঙ্কট থেকে উত্তীর্ণ হওয়ার জন্য তারেক রহমান ইতিহাসকে হাতিয়ার করেছেন তার বিকৃতি ঘটিয়ে কোনোরকম তীরে উঠতে। তা কি সম্ভব হবে? আন্দোলনও যুক্তি ও সততার ওপর মেরুদ- সোজা করে দাঁড়িয়ে সামনে অগ্রসর হয়। এর ব্যতিক্রম হলে আন্দোলন জমে না। আমাদের স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাস তো সে কথাই বলে। ওইসব আন্দোলন তো সিভিল সমাজের নেতাদের ত্যাগের বিনিময়ে গড়ে উঠেছিল। তারা এত ছোট সাইজের নেতা ছিলেন না যে তাদের ইতিহাস দখলের প্রয়োজন হয়েছিল। শেরেবাংলা, সোহরাওয়ার্দী, মওলানা ভাসানী, কমরেড মণি সিংহ, অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ কেউ কারো ইতিহাস দখলের চেষ্টা করেননি। কেউ কাউকে ছোট করেননি। কেউ কাউকে ল্যাং মারেননি। স্বাধীনতা আন্দোলনের ধারাবাহিকতার ধাপে এদের প্রত্যেকের অবদান আছে। এদেরই ত্যাগী অবদান কাজে লাগিয়ে, এদেরই পদক্ষেপ অনুকরণ করে এক পর্যায়ে নিজেই সঠিক-সাহসী সিদ্ধান্ত নিয়ে, জীবনের সর্বোচ্চ ঝুঁকি নিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন করে ফেলেছেন বঙ্গবন্ধু। রবীন্দ্র-পরবর্তী বাংলা ভাষার কবি-সাহিত্যিকরা কোনো না কোনোভাবে রবীন্দ্রনাথের দ্বারা প্রভাবিত। তাই যখন পাকিরা রবীন্দ্রনাথকে অপমান করত, তখন তাবৎ রবীন্দ্রউত্তর কবি-সাহিত্যিকদের অপমান করা হতো। সুতরাং যখন বঙ্গবন্ধুকে তারেক রহমানরা অপমান করেন, খাটো করেন তখন প্রত্যেক জাতীয় নেতাকে অপমান করেন বলেই ধরে নিতে হবে। জাতীয় নেতাদের ত্যাগ ও স্বপ্ন বঙ্গবন্ধুর মাধ্যমে সফল হয়েছে_ স্বাধীনতার ১৪ খ- দলিল এ কথারই সাক্ষ্য দেয়, যা জিয়ার আমলে সংগ্রহ ও সম্পাদনা করেছিলেন কবি হাসান হাফিজুর রহমান। ২০০১ সালের ১ অক্টোবরের পর খালেদা জিয়ার তাঁবেদাররা এ দলিল বিকৃত ও সংশোধন করেছিলেন। ইতিহাস থেকে বঙ্গবন্ধুকে বিদায় দিয়ে জিয়াকে ঘোষক বানাতে চেয়েছিলেন। ২৭ মার্চের পরিবর্তে ২৬ মার্চ প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন জিয়াকে ঘোষক বানানোর স্বার্থে। এটাকে ইতিহাস দখলের হীনচেষ্টা ছাড়া আর কী বলা যেতে পারে? জিয়াউর রহমানেরই লেখা প্রবন্ধ 'একটি জাতির জন্ম', সেখানে তিনি দাবি করেননি তিনি বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি, দাবি করেননি যে তিনি ২৬ মার্চ বেতারে কোনো কিছু ঘোষণা দিয়েছেন, দাবি করেননি স্বাধীনতা আন্দোলনে বা মুক্তিযুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর কোনো অবদান নেই। তিনি তো বললেন, 'বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ ছিল আমাদের জন্য গ্রিন সিগন্যাল'। তিনি যখন ক্ষমতায় তখনো তো বলেছিলেন এক সাংবাদিকের কাছে, 'তিনি আমাদের মহান নেতা'। ২৭ মার্চ বেতারে ঘোষণা পাঠ করার সময়ও তো বললেন, 'বঙ্গবন্ধু আমাদের মহান নেতা, তিনি সরকার গঠন করেছেন, তার সরকারই বৈধ সরকার'। তার প্রবন্ধে আরো বলেছেন, 'তারপর এলো ১ মার্চ। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উদাত্ত আহ্বানে সারাদেশে শুরু হলো ব্যাপক অসহযোগ আন্দোলন'। (কামরুজ্জামান লিটন সম্পাদিত বঙ্গবন্ধু স্মারকগ্রন্থ, পৃ. ১৭৩)। জিয়াউর রহমান তার প্রবন্ধেও কিন্তু স্বাধীনতা আন্দোলনের একটি ধারাবাহিকতার রূপরেখা দিয়েছেন। তিনি ইতিহাস টানার সময় '৭১ সালের ২৭ মার্চ থেকে শুরু করেননি। তিনিও বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক অসহযোগ আন্দোলনের গুরুত্ব স্বীকার করেছেন। 'জাতির পিতা' কাকে বলা হয়? যার নেতৃত্বে দেশ স্বাধীনতা লাভ করে তাকেই বলা হয়। এ কথা জেনেই জিয়া বঙ্গবন্ধুকে 'জাতির পিতা' বলেছিলেন। থুক ফেলে সেই থুক মুখে ফিরিয়ে নেয়া যায় না। এটা ইতিহাস বিকৃতকারীদের বেশি করে মনে রাখা দরকার। তারেক রহমান এবং তার মা, সাদেক হোসেন খোকা নতুন করে 'ঘোষক' বিতর্কের সঙ্গে 'প্রথম রাষ্ট্রপতি' বিতর্ক জুড়ে দিয়ে রাজনীতির বাজারে কুতর্কের জন্ম দিলেন। এতে তাঁবেদারদের, টকশোওয়ালাদের লাভ হতে পারে, সুস্থধারার রাজনীতির কোনো উপকার হবে না। খোদ জিয়া ও তার বিএনপির কোনো উপকার হবে না। জিয়া প্রথম ঘোষণায় নিজেকে সুপ্রিম কমান্ডার ঘোষণা দিয়েছিলেন। চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগের নেতারা তার ওপর প্রবল চাপ সৃষ্টি করলে তিনি বলেছিলেন, 'দেশ-বিদেশের কাছে গুরুত্ব পেতে হলে এই দাবি প্রয়োজন'। এর উত্তরে প্রবীণ রাজনীতিক এ কে খান বলেছিলেন, 'বিনা পটভূমিতে অনুরূপ প্রাধান্য দাবি করা বিপজ্জনক। আর স্বাধীনতা ঘোষণার দায়ভাগ বহনের ক্ষমতা সে মুহূর্তে শেখ মুজিব ছাড়া আর কারো ছিল না।' (ড. মজহারুল ইসলাম- বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব - আগামী সংস্করণ, পৃ. ৬৫৬)। এ কে খানের কথার পরিপ্রেক্ষিতে জিয়া উক্ত কথাটি প্রত্যাহার করে তৃতীয় ঘোষণায় কয়েকবার বঙ্গবন্ধুর নাম ঘোষণা করেন। কবে হলেন তিনি রাষ্ট্রপতি? তখন কে বা কারা, কোথায় কোন পরিবেশে জিয়াকে রাষ্ট্রপতি হিসেবে নাম প্রস্তাব করেছেন এবং সমর্থন করেছেন? তা বেতারে প্রচারিত হলো না কেন? রাষ্ট্রপতি হলে তিনি মুজিবনগর সরকারের অধীনে কাজ করলেন কীভাবে? তিনি জেড ফোর্সের অধিনায়ক হয়ে মুক্তিযুদ্ধ করেছিলেন মুজিবনগর সরকারেরই অধীনে। স্বঘোষিত রাষ্ট্রপতি ইতিহাসে পাত্তা পাবেন না। '৭১-এর ১৭ এপ্রিলের প্রণালিবদ্ধ, সুষ্ঠু, গণতান্ত্রিক বিধিসম্মত ইতিহাস পালটাতে পারবেন না তারেক রহমানরা। অতএব সাধু সাবধান!
২| ১৩ ই এপ্রিল, ২০১৪ দুপুর ১২:৪৫
জহির উদদীন বলেছেন: ইংরেজ চিন্তাবিদ ডঃ স্যামুয়েল জনসন(১৭০৯-১৭৮০) ঠিকই বলেছেন...তার বিখ্যাত উক্তি- "Patriotism is the last refuge of a scoundrel" বা শয়তানের নিরাপত্তার শেষ ভরসা হচ্ছে মানুষকে দেশপ্রেমে উদ্ধুদ্ধ করা....
©somewhere in net ltd.
১|
১৩ ই এপ্রিল, ২০১৪ সকাল ১০:০০
রিয়াজ৩৬ বলেছেন: ইতিহাসের অনেক ফাকঁফেকড় আছে। যেমন: ২৭ মার্চ থেকে ৯ এপ্রিল রাষ্ট্রপতি= জিয়া (যেহেতু তিনি বলেছেন ''at the direction of Bango Bondhu Mujibur Rahman, hereby declare that the independent People’s Republic of Bangladesh has been established"" এবং নিজেকে temporary head of the republic দাবি করেছেন)
অপরপক্ষে ১০ এপ্রিল (শপথ ১৭ এপ্রিল) থেকে বাংলাদেশের প্রথম সরকারের রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিব।
দেখেন কে কি রকম ফাঁক বের করে। তাহলে ২৬/২৭ মার্চ থেকে ১০/১৭ এপ্রিল পর্যন্ত বাংলাদেশের দায়িত্বে কে ছিল?? এটাই ফাঁক!