নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মন্ত্রক

আমি আমার দেশের জন্যে

মন্ত্রক › বিস্তারিত পোস্টঃ

বিএনপি’র নতুন আবিষ্কার

১৫ ই এপ্রিল, ২০১৪ সকাল ৮:৪২

এতোদিন আমরা বাংলাদেশের সচেতন নাগরিকেরা জেনে আসছি যে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা প্রথম রাষ্ট্রপতি। বিগত ২৫ মার্চ বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি তারেক রহমান লন্ডনে তাদের একটি দলীয় সভায় দাবি করলেন ‘জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি ছিলেন’। পরবর্তীতে ২৭ মার্চ বেগম খালেদা জিয়াও একটি অনুষ্ঠানে একই দাবি করলেন। কিন্তু বিএনপির ওয়েবপেইজে এতোদিন জিয়াউর রহমানকে সপ্তম রাষ্ট্রপতি দেখানো হয়েছে। এখন কিসের ভিত্তিতে তারা জিয়াউর রহমানকে বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি দাবি করেছেন সে ব্যাপারে গ্রহণযোগ্য কোনো ব্যাখ্যাও তারা উপস্থাপন করতে ব্যর্থ হয়েছেন। বিএনপি নেতা ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া ব্যাখ্যা দিয়ে বললেন যে, জিয়াউর রহমান ২৭ মার্চ স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন। ১০ এপ্রিল মুজিব নগর সরকার গঠন হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত দেশে কোনো সরকার ছিল না। সেসময় জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেছিলেন। কিন্তু কথা হলো যেখানে কোনো সরকার ছিল না সেখানে জিয়াউর রহমান কি করে রাষ্ট্রপতি হলেন। কেউ নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করলেই রাষ্ট্রপতি হওয়া যায় না। স্বঘোষিত রাষ্ট্রপতি হতে চাইলেও কিছু আনুষ্ঠানিকতা এবং রাষ্ট্রাচার পালন করতে হয়। দেশে সরকার থাকলে রাষ্ট্রপতি থাকতে পারে। তবে তাকে অবশ্যই রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নিয়ে দায়িত্ব গ্রহণ করতে হবে। সরকারের একটি মন্ত্রিসভা বা উপদেষ্টা পরিষদ থাকতে হবে। এ বিষয়গুলো তারেক জিয়া এবং খালেদা জিয়া না বুঝলেও ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়ার জানার কথা। তিনি শুধু জনগণকে বিভ্রান্ত করার উদ্দেশ্যে এ ধরনের ব্যাখ্যা উপস্থাপন করেছেন। তিনি অযথা গোজামিলের একটি যুক্তি উপস্থাপন করে তারেক রহমান এবং খালেদা জিয়ার বক্তব্যকে সমর্থন করেছেন, যা মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়।

বিএনপি এতোদিন জিয়াউর রহমানকে বঙ্গবন্ধুর সাথে সমমানের নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করে আসছে। বঙ্গবন্ধুকে খাট করার উদ্দেশ্যে তারা এতোদিন বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে অনেক মিথ্যা অপপ্রচার চালিয়েছে। এখন বঙ্গবন্ধুর জায়গায় জিয়াউর রহমানকে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা প্রথম রাষ্ট্রপতি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার অসৎ উদ্দেশ্যেই তাদের এ আবিষ্কার। এতে তাদের আত্মতুষ্টি হলেও বাংলার জনগণের কাছে তাদের এ অসৎ অপচেষ্টা কখনো গ্রহণযোগ্য হবে না। বঙ্গবন্ধু আজীবন বাঙালির অধিকার আদায় এবং স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম করেছেন। ’৪৮ সালের মার্চ মাস থেকে যখন ভাষা আন্দোলন শুরু হয় তিনি সে আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। ’৬০-এর দশকের শুরুতে পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর বাঙালি সদস্যরা যখন বুঝতে পারলো যে, পাকিস্তানের সাথে থেকে বাঙালিদের স্বার্থ এবং অধিকার রক্ষা হবে না। তখন কয়েকজন অফিসার সশস্ত্র বিপ্লবের মাধ্যমে পূর্ব পাকিস্তানকে পাকিস্তান থেকে বিচ্ছিন্ন করে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা নিয়েছিলেন। রাজনৈতিক সমর্থনের জন্য তারা ১৯৬২ সালে প্রথম শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে দেখা করে আলোচনা করেছেন। তিনি তখন তাদেরকে সবরকম সহায়তার আশ্বাস দিয়েছিলেন। পরবর্তী সময়েও তারা কয়েকবার বঙ্গবন্ধুর সাথে স্বাধীনতার ব্যাপারে আলোচনা করেছেন। বঙ্গবন্ধু তাদেরকে কয়েকজন বাঙালি সিএসপি অফিসারের নাম দিয়ে তাদের সাথে যোগাযোগ করার পরামর্শ দিয়েছিলেন। যার অর্থ উচ্চপদস্থ বেসামরিক বাঙালি অফিসারদের সাথেও বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিষয় নিয়ে তাঁর আলোচনা হয়েছে।

বাংলাদেশকে স্বাধীন করার লক্ষ্যে রাজনৈতিক কর্মসূচি হিসেবে ১৯৬৬ সালের ফেব্র“য়ারিতে লাহোরে বিরোধী রাজনৈতিক নেতাদের একটি সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু ৬ দফা দাবি উত্থাপন করেছিলেন। ৬ দফা উত্থাপনের পর পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী বলেছিল যে, শেখ মুজিব পূর্ব পাকিস্তানকে পাকিস্তান থেকে বিচ্ছিন্ন করার উদ্দেশ্যেই ৬ দফা দিয়েছে। ১৯৬৭ সালে সশস্ত্র বিপ্লবের পরিকল্পনার বিষয়টি পাকিস্তান গোয়েন্দা সংস্থার নিকট প্রকাশ হয়ে যায়। ১৯৬৮ সালে তাদের ৩৮ জনকে গ্রেপ্তার করে বঙ্গবন্ধুকে প্রধান আসামি করে তাদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা করে। (তথ্য : ব্রিগেডিয়ার খোরশেদ উদ্দিন আহম্মেদের লেখা প্রবন্ধ। তিনি আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় অভিযুক্তদের একজন)। সে মামলার বিচার শুরু হলে বাংলার ছাত্রজনতা সংগ্রাম করে গণঅভ্যুত্থান সৃষ্টি করে। প্রেসিডেন্ট আয়ুব খান মামলা প্রত্যাহার করে নিতে বাধ্য হয়। ২২ ফেব্র“য়ারি ’৬৯ আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার সকল অভিযুক্তকে মুক্ত করে দেওয়া হয়। ২৩ ফেব্র“য়ারি ছাত্রজনতা রেসকোর্স ময়দানে (সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে) ১০ লক্ষাধিক লোকের উপস্থিতিতে শেখ মুজিবুর রহমানকে বঙ্গবন্ধু উপাধি দেয়। সেই থেকে তিনি বঙ্গবন্ধু।

১৯৭০ সালের ৭ ডিসেম্বর এবং ’৭১-এর ১৭ জানুয়ারি পাকিস্তানে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সে নির্বাচনে আওয়ামী লীগ পাকিস্তান জাতীয় সংসদের পূর্ব পাকিস্তানের জন্য নির্ধারিত ১৬২টি আসনের মধ্যে ১৬০টি এবং মহিলা কোটায় ৭টিসহ ১৬৭টি আসনে এবং প্রাদেশিক পরিষদে ৩০০ আসনের মধ্যে ২৬৮টি আসনে বিজয়ী হয়। বাংলার জনগণ বঙ্গবন্ধুকে তাদের অবিসংবাদিত নেতা হিসেবে নির্বাচন করে। পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইয়াহিয়া খান ৩ মার্চ ঢাকায় সংসদের অধিবেশন আহ্বান করেন। কিন্তু কোনো সঙ্গত কারণ ছাড়াই ১ মার্চ ইয়াহিয়া খান ৩ মার্চের অধিবেশন অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করে দেন। বাংলার জনগণ বুঝতে পারে যে, পাকিস্তানিরা বঙ্গবন্ধুর কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করবে না। বাংলার ছাত্রজনতা ক্ষোভে ফেটে পড়ে। শুরু হয় একদফা তথা স্বাধীনতার আন্দোলন। বঙ্গবন্ধু সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেন। ৩ মার্চ থেকে ২৫ মার্চ পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর নির্দেশেই পূর্ব পাকিস্তানের প্রশাসন চলেছে। পাকিস্তান সরকারের কোনো কর্তৃত্ব সে সময় পূর্ব

পাকিস্তানে ছিল না। জেনারেল নিয়াজি তার লেখা ‘বিট্রায়াল অব ইস্ট পাকিস্তান’ বইতেও এ কথা উল্লেখ করেছেন। বঙ্গবন্ধু ১০ এপ্রিল আনুষ্ঠানিকভাবে রাষ্ট্রপতি হওয়ার পূর্বেই বাংলার মুকুটহীন সম্রাট ছিলেন। বাংলার জনগণ তাঁকে সে অবস্থানে নিয়ে এসেছে। বলা যায় তিনি তখন থেকে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপ্রধান ছিলেন। সকল কর্তৃত্ব তার কাছেই ন্যস্ত ছিল।

বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের জাতীয় সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন পেয়ে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেছিলেন। কিন্তু পাকিস্তান হানাদার বাহিনী বঙ্গবন্ধুর হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর না করে ২৫ মার্চ মধ্যরাতে নিরস্ত্র বাঙালিদের ওপর আক্রমণ শুরু করে। বঙ্গবন্ধুকে তাঁর ধানমন্ডি ৩২ নং বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার হওয়ার আগে তিনি তাঁর পূর্ব রেকর্ডকৃত স্বাধীনতার ঘোষণাটি পূর্ব নির্ধারিত জায়গায় পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। যা মগবাজার বেতারকেন্দ্র এবং পিলখানা ইপিআর বেতারকেন্দ্র থেকে দেশের বিভিন্ন জায়গায় বেতার বার্তার মাধ্যমে পাঠানো হয়েছিল। বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা ২৫ মার্চ রাত ১২টার পর প্রচার করা হয়। ২৬ মার্চ পাকিস্তানসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পত্রপত্রিকায় এ তথ্য ছাপা হয়েছে। রেডিও টেলিভিশনে প্রচার হয়েছে। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর তৎকালীন মেজর, পরবর্তীতে ব্রিগেডিয়ার সিদ্দিক সালেকও তার লেখা ‘উইটনেস টু সারেন্ডার’ বইতে এ তথ্য লিপিবদ্ধ করেছে। সিদ্দিক সালেক লিখেছেন, তিনি নিজে শেখ মুজিবুর রহমানের স্বকণ্ঠের স্বাধীনতার ঘোষণা শুনেছেন। তিনি উল্লেখ করেছেন তাঁর ঘোষণাটি সম্ভবত পূর্বে রেকর্ডকৃত ছিল। মেজর জিয়ার স্বাধীনতার ঘোষণার কথা কোথাও কোনো গণমাধ্যমে প্রচার হয়নি। পাকিস্তান বা বিশ্বের কোনো গণমাধ্যমে এমন কোনো তথ্য প্রচার হয়নি যে, জিয়াউর রহমান নামে একজন মেজর বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেছেন। বিএনপি সেটা প্রমাণ করতে পারবে না। কাজেই বিএনপির প্রচারণা ভিত্তিহীন মিথ্যা প্রচারণা ছাড়া কিছুই নয়। অযথা স্বাধীনতার ইতিহাস বিকৃতি করে জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টির উদ্দেশ্যেই তারা এমন বক্তব্য দিয়ে থাকে।

তারেক জিয়া বলেছেন স্বাধীনতার ঘোষণা দেওয়ার জন্য কোনো রাজনৈতিক নেতাকে পাওয়া যায়নি। জিয়াউর রহমান প্রথম স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন। তারেক জিয়ার এ বক্তব্য অসত্য। বঙ্গবন্ধু ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দান থেকে স্বাধীনতার ডাক দিয়েছিলেন। জিয়াউর রহমান তার একটি জাতির জন্ম নিবন্ধে উল্লেখ করেছেন যে, ‘বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ আমাদের জন্য গ্রিন সিগন্যাল ছিল’। বাঙালি জাতি মুক্তিযুদ্ধের জন্য প্রস্তুত ছিল। ২৫ মার্চ মধ্যরাতে যখন রাজারবাগ পুলিশ লাইনস এবং পিলখানা ইপিআর সদর দপ্তর হানাদার বাহিনী আক্রমণ করে তৎক্ষণাৎ পুলিশ এবং ইপিআর প্রাথমিকভাবে প্রতিরোধ যুদ্ধ শুরু করে। ২৬ মার্চ থেকে অনেকেই যার যার অবস্থান থেকে মুক্তিযুদ্ধ শুরু করে দিয়েছিল। ২৬ মার্চ সকাল থেকেই চট্টগ্রাম বেতারকেন্দ্রের কয়েকজন উদ্যোমী বেতারকর্মী বেতারকেন্দ্রটি খুলে ‘বিপ্লবী স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র’ নাম দিয়ে স্বাধীনতার পক্ষে তৎপরতা শুরু করেছিলেন। চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের উদ্যোগে ২৬ মার্চ সকাল থেকেই মাইকযোগে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণাটি প্রচার করা হয়েছিল এবং সাইক্লোস্টাইল করে তা বিলি করা হয়। ২৬ মার্চ দুপুরের মধ্যে চট্টগ্রাম বিপ্লবী বেতারকেন্দ্র থেকে চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগ নেতা এম এ হান্নান বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণাটি প্রচার করেছিলেন। এ তথ্যটি যার নেতৃত্বে এবং উদ্যোগে বেতারকেন্দ্রটি খুলে স্বাধীনতার পক্ষে প্রচারণা শুরু করেছিল সেই বেলাল মোহাম্মদ এবং তাঁর সহকর্মীরা বহুবার গণমাধ্যমে বলেছেন; যা বাংলাদেশের জনগণ দেখেছে এবং শুনেছে। কাজেই স্বাধীনতার ঘোষণা দেওয়ার জন্য কোনো রাজনৈতিক নেতাকে পাওয়া যায়নি তারেক জিয়ার এ বক্তব্য সত্য নয়। জিয়াউর রহমান প্রথম স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন এ তথ্যটিও মোটেই সঠিক নয়। স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত করে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করার উদ্দেশ্যেই তারা এ মিথ্যা অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে।

মেজর জিয়াউর রহমান ২৭ মার্চ ৭.২০ মিনিটে কালুরঘাট বেতারকেন্দ্র থেকে স্বাধীনতা ঘোষণা দেওয়ার পর তার গাড়িতে কেউ স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা দেখেনি বা তিনি রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন সেরকম কোনো তথ্য কোথাও নেই। বিগত ৪৩ বছরেও কেউ সে কথা বলেনি। বিএনপিও এ পর্যন্ত সেরকম কোনো তথ্য দিতে পারেনি এবং পারবেও না। বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা ২৫ মার্চ রাতেই যখন প্রচারিত হয়েছিল, সে সময় জিয়াউর রহমান পাকিস্তানিদের অনুগত একজন সৈনিক ছিলেন। তিনি সোয়াত জাহাজ থেকে অস্ত্র খালাস করার জন্য তার অধিনায়ক লে. কর্নেল জানজুয়ার নির্দেশে চট্টগ্রাম বন্দরের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিয়েছিলেন। রাত সাড়ে ১১টায় যখন চট্টগ্রামে ২০ বালুচ রেজিমেন্ট ইবিআরসির নিরস্ত্র সৈন্যদের ওপর আক্রমণ করে তখন ইবিআরসির কয়েকজন পালিয়ে এসে ৮ বেঙ্গলের সৈন্যদেরকে তাদেরকে বাঁচানোর জন্য অনুরোধ করেছিল। সে অবস্থায় ৮ বেঙ্গলে সৈন্যদের মধ্যে অস্থিরতা দেখা দেয়। তাদেরকে পূর্বেই নিরস্ত্র করা হয়েছিল। ইবিআরসি আক্রমণ হওয়ার পর তারা অস্ত্রাগার খুলে দেওয়ার জন্য ক্যাপ্টেন অলি আহমেদের ওপর চাপ সৃষ্টি করেছিল। তিনি ৮ বেঙ্গলের কোয়ার্টার মাস্টার ছিলেন। অস্ত্রাগার তাঁর অধীনে ছিল। অলি আহমেদ অস্ত্রাগার খুলে সৈন্যদের অস্ত্র দিয়ে দেয়। তিনি জিয়াউর রহমানকে ফিরিয়ে আনার জন্য ক্যাপ্টেন খালেকুজ্জামানকে পাঠান। (তেলডালায় জিয়াউর রহমানের ১ আর্টিলারি ব্রিগেডে থাকার সময় ৮ বেঙ্গলের সদস্যদের কাছে শুনেছি) ক্যাপ্টেন অলি আহমেদ, পরবর্তীতে কর্নেল, এমপি এবং মন্ত্রী, অনেকবার বলেছেন যে, তিনি জিয়াকে রাস্তা থেকে ডেকে এনে মুক্তিযোদ্ধা বানিয়েছেন। তার বক্তব্য গণমাধ্যমে প্রচারিত হয়েছে। ঐ রাতে সাড়ে ৯টায় চট্টগ্রাম ইপিআর এ ক্যাপ্টেন পরবর্তী সময়ে মেজর এমপি এবং মন্ত্রী, ইপিআর-এর অবাঙালি সৈনিকদের গ্রেপ্তার করে পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করেছিলেন। তিনি চেয়েছিলেন পাকিস্তানিরা আক্রমণ শুরু করার পূর্বেই তাদেরকে আক্রমণ করতে হবে। এ ব্যাপারে চট্টগ্রামের বাঙালি সেনা কর্মকর্তাদের মধ্যে কয়েক দফা আলোচনাও হয়েছে। কিন্তু মেজর জিয়া সময়মত বিদ্রোহ করে

পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ যুদ্ধ শুরু করতে ব্যর্থ হয়েছিলেন। তিনি সময়মতো বিদ্রোহ করে পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করলে ইবিআরসির ৫ জন অফিসারসহ দেড় হাজার নিরস্ত্র সৈনিককে জীবন দিতে হতো না। তিনি বাধ্য হয়ে বিদ্রোহ করেছেন। বিদ্রোহ করেও তিনি শহরে পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার কোনো চেষ্টা করেননি। তিনি বিদ্রোহ করার কথা বলে ৮ বেঙ্গলের সৈন্যদেরকে শহরের বাইরে কালুরঘাট ব্রিজ পার হয়ে পটিয়ার দিকে নিয়ে গিয়ে তাদেরকে অকার্যকর করে রেখেছিলেন। ক্যাপ্টেন হারুনের নেতৃত্বে ইপিআর-এর ৬০০ সদস্য চট্টগ্রাম শহরে ক্যাপ্টেন রফিকের সাথে যোগ দিতে এসেছিল। জিয়াউর রহমান তাদেরকে শহরে ঢুকতে দেয়নি। অনেকে মনে করে তিনি পাকিস্তানিদের পরামর্শেই বিদ্রোহের কথা বলে ৮ বেঙ্গলের সৈন্যদের অকার্যকর করে দেওয়ার উদ্দেশ্যে শহরের বাইরে নিয়ে গিয়েছিলেন। এটা পাকিস্তানিদের পক্ষে যায়। মেজর জিয়াউর রহমান নিজেকে রাষ্ট্রপতি দাবি করে স্বাধীনতার ঘোষণাও পাকিস্তানিদের পক্ষে গেছে। পাকিস্তানিদের পক্ষে প্রচারণা চালানোর সুযোগ হয়েছে যে, তারা বাঙালি সেনাবিদ্রোহ দমনের জন্য সেনা অপারেশন চালাচ্ছে।

জিয়াউর রহমান প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন কিনা সে প্রশ্ন যখন উঠে তখন বিএনপির নেতারা এবং তাদের অনুসারী বুদ্ধিজীবীরা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখিয়ে থাকে। কিন্তু কিছু ঘটনা এবং তথ্য প্রকাশ হওয়ার কারণে জিয়াউর রহমান প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন কিনা সেটা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ৭ মার্চের পর চট্টগ্রামের বাঙালি সেনা কর্মকর্তাদের মধ্যে তাদের করণীয় বিষয়ে কয়েক দফা আলোচনা হয়েছে। মেজর রফিক তাঁর ‘লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে’ বইতে এ বিষয়ে উল্লেখ করেছেন। মীর শওকত আলী এবং অলি আহমেদও বিভিন্ন সময় এ বিষয়ে বলেছেন। জিয়াউর রহমানের একটি জাতির জন্ম নিবন্ধেও এটি উল্লেখ আছে। জিয়াউর রহমান লিখেছেন যে, জুনিয়র অফিসার এবং জেসিও এনসিওদের অনেকে তার কাছে এসে বলেছিলেন, ‘স্যার আমাদের কিছু করতে হবে। তা না হলে আমরা আজীবনের জন্য দাসের জাতিতে পরিণত হব’। তিনি জানতেন পাকিস্তানিরা দ্রুত কিছু একটা করতে যাচ্ছে। চট্টগ্রামে পাকিস্তানি কমান্ড বাহিনী এবং বিহারীরা প্রতি রাতে অস্ত্রসহ বাঙালিদের বিভিন্ন পাড়ায় গিয়ে অনেককে হত্যা করেছে। তিনি সেটা জানতেন। ২৪ মার্চ জেনারেল হামিদ চট্টগ্রাম গেলেন। তিনি মধ্যাহ্ন ভোজের সময় ২০ বালুচ রেজিমেন্টের অধিনায়ক লে. কর্নেল ফাতমিকে দ্রুত কাজ শেষ করার নির্দেশ দিলেন। জিয়াউর রহমান পাশে থেকে সেটা শুনলেন (একটি জাতির জন্ম)। জেনারেল হামিদ ঢাকা ফিরে যাওয়ার সময় ব্রিগেডিয়ার মাহমুদুর রহমান মজুমদারকে সাথে নিয়ে গেলেন। তখন চট্টগ্রামে ইবিআরসির প্রধান প্রশিক্ষক লে. কর্নেল মুজিবুর রহমান চৌধুরী এবং তিনি বাঙালিদের মধ্যে সিনিয়র ছিলেন। সিদ্ধান্ত নেওয়ার দায়িত্ব তাদের ছিল। অথচ তারা ২৪ মার্চ সন্ধ্যায় ক্যাপ্টেন রফিকের অফিসে গিয়ে তাকে বাড়াবাড়ি না করার জন্য সাবধান করে আসলেন (লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে)। (চলবে)

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.