![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বিভিন্ন কমিটি পুনর্গঠন ও দল গোছাতে গিয়ে বারবারই হোঁচট খাচ্ছে বিএনপি। এ পরিস্থিতিতে সর্বস্তরে কমিটি পুনর্গঠনের কাজ কীভাবে সম্পন্ন হবে তা নিয়ে দলের হাইকমান্ডে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। এ কারণে শিগগিরই বিএনপির জাতীয় কাউন্সিল হওয়ার লক্ষণও দেখা যাচ্ছে না। কিছুদিন ধরে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ দলের সিনিয়র নেতারা বলে আসছেন দল গুছিয়ে তারা সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে যাবেন। এ জন্য হাঁকডাক দিয়ে দল গোছানোর প্রস্তুতিও নেওয়া হয়। এর অংশ হিসেবে প্রথমেই ঢাকা মহানগর শ্রমিক দলের কাউন্সিলের মধ্য দিয়ে নতুন কমিটি গঠনের উদ্যোগ নেয়। ১২ এপ্রিল দুপুরে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপস্থিতিতে ঢাকা মহানগর শ্রমিক দলের কাউন্সিলের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হয়। এ অনুষ্ঠান শেষ করে খালেদা জিয়া বাসায় চলে যাওয়ার পর বিকেলে ঢাকা মহানগর শ্রমিক দলের কর্ম অধিবেশন শুরু হয়। এ অধিবেশনে প্রত্যক্ষ ভোটের মাধ্যমে ঢাকা মহানগর শ্রমিক দলের নতুন কমিটি গঠনের পূর্ব সিদ্ধান্ত থাকলেও দুই গ্র“পের সংঘর্ষের কারণে কাউন্সিল অধিবেশন প- হয়ে যায়। এ কারণে নতুন কমিটি গঠন করতে পারেনি ঢাকা মহানগর শ্রমিক দল।
নতুন কমিটি করতে গিয়ে ঢাকা মহানগর শ্রমিক দলের যে পরিণতি হয়েছে, বিএনপি ও এর ১১ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের যে কোনো স্তরে নতুন কমিটি গঠন করতে গিয়ে একই পরিণতি হবে। বিষয়টি আঁচ করতে পেরে বিএনপি হাইকমান্ড এখন মহা টেনশনে পড়েছে। ঢাকা মহানগর শ্রমিক দলের কাউন্সিল শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হলে শিগগিরই ঢাকা মহানগর বিএনপির কাউন্সিল আয়োজন করা হতো। এরপর ক্রমান্বয়ে অন্যান্য অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের কাউন্সিলসহ দ্রুততম সময়ের মধ্যে সারাদেশে বিএনপির জেলা-উপজেলা কমিটি পুনর্গঠন শেষ করে জাতীয় কাউন্সিলের প্রস্তুতি চূড়ান্ত করা হতো। কিন্তু শুরুতেই হোঁচট খাওয়ায় বিএনপির জাতীয় কাউন্সিলসহ সর্বস্তরের কমিটি পুনর্গঠন কাজ ঝুঁকির মুখে পড়েছে।
বর্তমানে বিএনপির নির্বাহী কমিটিসহ সারাদেশের অধিকাংশ ইউনিট কমিটিই মেয়াদোত্তীর্ণ। এছাড়া বিএনপির ১১ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের কমিটিও মেয়াদোত্তীর্ণ। এগুলো পুনর্গঠনের অংশ হিসেবেই ঢাকা মহানগর শ্রমিক দলের কাউন্সিলের আয়োজন করা হয়েছিল। কিন্তু শুরুতেই হোঁচট খেয়ে হাইকমান্ড টেনশনে পড়েছে। সাংগঠনিক বিশৃঙ্খলার কারণে বিএনপির তৃণমূল পর্যায়ের নেতারা এখন কেন্দ্রীয় নেতাদের কমান্ড মানতে চাচ্ছেন না। সম্প্রতি বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরী সিলেটে সাংগঠনিক সফরে গিয়ে নাজেহাল হন। তার কমান্ড তো কেউ মানেনইনি বরং তার বিরুদ্ধে ঝাড়–মিছিল করেছে স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীরা। ঢাকায় ফিরে শমসের মবিন এ বিষয়টি দলীয় হাইকমান্ডকে জানালেও বাস্তব অবস্থার কথা বিবেচনা করে কোনো ব্যবস্থা নেননি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। দেশের অন্যান্য এলাকায়ও এ ধরনের আরও ঘটনা ঘটেছে। এ পরিস্থিতিতে বিএনপির পরবর্তী জাতীয় কাউন্সিলের ভবিষ্যত কী হবেÑ তা নিয়ে দলের নেতাকর্মীদের মধ্যেই নানা কথাবার্তা হচ্ছে। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পরাজয়ের পর থেকেই বিএনপির সাংগঠনিক অবস্থা বিপর্যস্ত। তাই তখন দলকে নতুন করে ঢেলে সাজানোর চেষ্টা করেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। ২০০৯ সালের ফেব্র“য়ারি মাস থেকে তৃণমূল পর্যায়ে দলের কমিটি পুনর্গঠনের যে উদ্যোগ তিনি শুরু করেন তাতে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে ওঠে। কারণ সারাদেশে জেলা-উপজেলাসহ বিভিন্ন স্তরের তৃণমূল কমিটি গঠন নিয়ে নেতাকর্মীরা দ্বন্দ্বে লিপ্ত হয়ে পড়ে। এর ফলে যে উদ্দেশ্য নিয়ে তৃণমূল পর্যায় থেকে ঘর গোছানোর কাজ শুরু করা হয় সে উদ্দেশ্য ভেস্তে যাওয়ার উপক্রম হয়। পরে ২০০৯ সালের জুনে কেন্দ্র থেকে বিভিন্ন জেলার আহ্বায়ক কমিটি গঠন করে দেন দলের হাইকমান্ড। কিন্তু এই আহ্বায়ক কমিটি নিয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে দ্বন্দ্ব-কোন্দল আরও চাঙ্গা হয়ে উঠলে কাউন্সিলরদের ভোটে প্রথমে উপজেলা কমিটি ও পরে জেলা কমিটি গঠনের নির্দেশ দেন চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। এই পদ্ধতিতে ২০০৯ সালের অক্টোবর মাসের মধ্যে সকল কমিটি গঠনের শেষ সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়। কিন্তু এতে ফল না পেয়ে শেষ পর্যন্ত জেলা-উপজেলায় কমিটি ছাড়াই বিএনপির জাতীয় কাউন্সিল করা হয় ২০০৯ সালের ৮ ডিসেম্বর।
বিএনপির ৫ম জাতীয় কাউন্সিলের আগে ৭৫ সাংগঠনিক জেলার মধ্যে মাত্র ২০ জেলার কমিটি গঠিত হয়। এ পরিস্থিতিতে বাকি ৫৫ জেলা থেকে জাতীয় কাউন্সিলের জন্য কাউন্সিলর ঠিক করে দেওয়া হয় কেন্দ্র থেকেই। এবারের জাতীয় কাউন্সিলের আগে একই অবস্থার পুনরাবৃত্তি হবে বলে দলীয় সূত্র জানিয়েছে। কারণ, জাতীয় কাউন্সিলের বিষয়টি সামনে রেখে দলের সিনিয়র নেতাদের দিয়ে ৫৬ টিম করে বিভিন্ন জেলা সফর করে তৃণমূল পর্যায়ে দলের কমিটি গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। কিন্তু আন্দোলনে ব্যর্থতার জন্য তৃণমূল নেতাকর্মীরা কেন্দ্রীয় নেতাদের প্রতি ক্ষুব্ধ থাকার বিষয়টি প্রকাশিত হওয়ার পর দলীয় হাইকমান্ড ৫৬টিমের জেলা সফর কর্মসূচি স্থগিত করেন। এরপর বিএনপি চেয়ারপারসন নিজেই তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে দল গোছানোর কাজ শুরু করেন।
বিএনপির একাংশ দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার পক্ষে ছিল। সর্বস্তরের নেতাকর্মীর মতামত না নিয়ে জোটের শরিক দল জামায়াতের কথায় দলীয় হাইকমান্ড নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ তাদের সমমনা দলগুলোকে নিয়ে সরকার গঠন করায় বিএনপির তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের মধ্যে চরম হতাশা নেমে আসে। এ কারণে এখন সরকারবিরোধী আন্দোলনও করতে পারছে না দলটি। অপর দিকে কমিটি পুনর্গঠন করে আন্দোলনের কথা বলে দল গোছানোর উদ্যোগ নিয়েও হোঁচট খান বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।
জিয়াউর রহমানকে দেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি ও বঙ্গবন্ধুকে অবৈধ প্রধানমন্ত্রী বলে দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান দলের জন্য আরেক বিপর্যয় ডেকে এনেছেন। দেশের সুশীল সমাজসহ রাজনৈতিক সচেতন মানুষ এতে চরম ক্ষুব্ধ হয়েছেন। এ কারণে বিএনপি সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা জন্মানোর কারণে এখন আন্দোলন কর্মসূচি দিলেও সাধারণ মানুষ তা ভালোভাবে নেবে না বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অভিমত।
৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জনের পর আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে নতুন সরকার গঠিত হওয়ার পর বিএনপি’র সর্বস্তরে চরম হতাশা দেখা দেয়। এ অবস্থায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া দল গুছিয়ে সরকারবিরোধী আন্দোলন চাঙ্গা করার ঘোষণা দেন। এর অংশ হিসেবে দলের জাতীয় কাউন্সিলের উদ্যোগ নিয়েও আবার পিছপা হন তিনি। পরে উপজেলা নির্বাচনের পর সর্বস্তরে দল গুছিয়ে আন্দোলনের ঘোষণা দেন। ফেব্র“য়ারিতে এসে তিনি ঢাকা মহানগর বিএনপিসহ দলের বিভিন্ন ইউনিট, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলো পুনর্গঠনের ঘোষণা দেন। কিন্তু দল গোছানোর ব্যাপারে তার কোনো ঘোষণাই এখন পর্যন্ত বাস্তবায়ন হয়নি। তবে হাইকমান্ডের দল গোছানোর ঘোষণার পর গুরুত্বপূর্ণ পদ-পদবির প্রত্যাশায় বিএনপিতে গৃহবিবাদ মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে।
যখনই বিএনপিতে জাতীয় কাউন্সিল বা বিভিন্ন ইউনিট গোছানোর প্রক্রিয়া শুরু হয় তখনই কিছু নেতা নিজেদের স্বার্থে পরস্পরের সঙ্গে দ্বন্দ্বে লিপ্ত হন। এরই অংশ হিসেবে এবারও কেন্দ্র থেকে শুরু করে সারাদেশের বিভিন্ন পর্যায়ে দলীয় নেতাদের মধ্যে গ্র“পিং-কোন্দল শুরু হয়। তবে এবারের জাতীয় কাউন্সিলের পর পদ-পদবি দেওয়ার ব্যাপারে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান আগে থেকেই নেতাদের অতীত কর্মকা- নিয়ে ফাইল ওয়ার্ক করেছেন বলে জানা যায়।
©somewhere in net ltd.