![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
একুশ শতকের বিশ্বে অনেক দেশই তাদের অর্থনীতিকে প্রযুক্তিনির্ভর করে গড়ে তুলেছে। বাংলাদেশও তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক সমাজ গড়ে তুলতে হাইটেক পার্ক নির্মাণ করছে। প্রধানমন্ত্রীর তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় এ বিষয়ে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখছেন। হাইটেক পার্কের খোঁজখবর নিতে সজীব ওয়াজেদ জয় একাধিকবার গাজীপুরের কালিয়াকৈরে গিয়েছেন। হাইটেক পার্কের আয়তন বাড়াতে তিনি কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। হাইটেক পার্কের ভূমি উন্নয়নের জন্য আগামী তিন মাসের মধ্যে দরপত্র আহ্বান করা হবে। মাটির উন্নয়ন শেষ হলে প্রকল্পের ভেতরের রাস্তাঘাটসহ নানা অবকাঠামো তৈরি করা হবে। দেশি-বিদেশি কোম্পানিগুলোর কাছে পার্কের ৫ কাঠা থেকে এক বিঘা পর্যন্ত প্লট বরাদ্দ করা হবে। বড় কোনো কোম্পানি যদি এরচেয়ে বেশি জায়গা চানÑ তাদের বড় জায়গা দেওয়ার বিধান থাকবে। এ কাজ এ বছরের শেষদিকেই শেষ হবে বলে প্রকল্পের পিডি শফিকুল ইসলাম জানিয়েছেন। তিনি আশা প্রকাশ করেন, ভূমি উন্নয়নের পরে হাইটেক পার্ক চালু করতে খুব বেশি সময় লাগবে না। হাইটেক পার্কের উন্নয়ন কাজ শেষ হলে গড়ে তোলা হবে আইটিসি বিশ্ববিদ্যালয়। এ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সৃষ্টি হবে দক্ষ জনবল, আইটি বিশেষজ্ঞ, প্রযুক্তি সংস্কৃতির প্রসার, দেশীয় শিল্পের দ্রুত বিকাশ, দক্ষ জনশক্তি তৈরি।
হাইটেক পার্কের অবকাঠামো তৈরি করতে ১ হাজার ৩০০ কোটি টাকা খরচ হবে। সরকার প্রথমত চিন্তা করছে পিপিপির (পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ) মাধ্যমে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে। এজন্য হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষ করা প্রয়োজন। পিপিপি মডেলে হাইটেক পার্ক তৈরি করার জন্য ইতোমধ্যে কয়েকটি প্রস্তাব এসেছে। কোরিয়ান একটি কোম্পানি ইতোমধ্যে বিনিয়োগের জন্য প্রস্তাব দিয়েছে। বিশ্বমানের একটি তথ্যপ্রযুক্তি গবেষণা কেন্দ্র হাইটেক পার্কে স্থাপনের জন্য বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়। কম্পিউটার সমিতি, কোরিয়ার সরকার ও স্যামসাংয়ের অর্থায়নে এটি প্রতিষ্ঠিত হবে।
১৯৯৯ সালে রাজধানীর অদূরে গাজীপুরের কালিয়াকৈরে প্রথম হাইটেক পার্ক স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এরপর ২০০৪ সালে তালিমাবাদ ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্রসংলগ্ন ২৩১ দশমিক ৬৮৫ একর জমি হাইটেক পার্কের জন্য অধিগ্রহণ করা হয়। বর্তমানে সেখানে একটি প্রশাসনিক ভবন, সৌরবিদ্যুৎ ও জেনারেটর বসানো হয়েছে। এ বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে আংশিকভাবে চালু হচ্ছে হাইটেক পার্ক। তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হিসেবে আইটি পার্ক বা হাইটেক পার্ককে বিবেচনা করা হবে। ১৯৯৯ সালে দেশের একমাত্র হাইটেক পার্ক তৈরির প্রকল্প হাতে নিয়ে জমির অধিগ্রহণ করতে সময় লেগে যায় প্রায় ১০ বছর। শেষ পর্যন্ত গত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে এটিকে অবৈধ দখলদারমুক্ত ও দেওয়াল তৈরি করে প্রশাসনিক ভবন তৈরি করা হয়।
সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বুয়েটের বিআরটিসিকে বাংলাদেশে হাইটেক পার্ক প্রতিষ্ঠার জন্য একটি রিপোর্ট জমা দিতে দায়িত্ব দেয়। বিআরটিসি ২০০১ সালে অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরীকে প্রধান করে একটি টিম করে। তারা ভারত, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া ঘুরে হাইটেক পার্কের পরিকল্পনা, অপারেশনের দিকসমূহ এবং ব্যবস্থাপনার ধ্যান-ধারণা কী হতে পারে তার ওপর ২০০২ সালে একটি ধারণা দেন। এই হাইটেক পার্ক প্রকল্প নির্মাণের জন্য সরকার তখন আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দাতা খুঁজতে শুরু করে। কিন্তু তৎকালীন সরকার এক্ষেত্রে তেমন কোনো উদ্যোগ নেয়নি। পরে ২০০৪ সালে সরকার সিদ্ধান্ত নেয় হাইটেক পার্কের কিছু অবকাঠামো নির্মাণ করার। যাতে থাকবে একটি প্রশাসনিক অফিস, বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানির ব্যবস্থা ও প্রয়োজনীয় কিছু রাস্তা ইত্যাদি। মাস্টার প্ল্যানে হাইটেক পার্কের জমিকে পাঁচটি ব্লকে ভাগ করা হয়। বিভিন্ন স্তরে উন্নয়ন করার কাজ হাতে নেওয়া হয়। ব্লক-এক এ রয়েছে প্রশাসনিক অফিস এবং ইউটিলিটি সার্ভিস। প্রথম স্তরের কাজ হিসেবে প্রশাসনিক ভবন নির্মাণ করা হয়। বেসিক অবকাঠামো প্রকল্পের অধীনে আরও নির্মিত হবে ৭ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে সীমানা নির্ধারণী প্রাচীর; যা ২৩১ দশমিক ৬৮৫ একর জমি ঘিরে হবে। প্রকল্পটি শেষ করতে ২০০৭ এর ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় নির্ধারিত হলেও নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রকল্পটি আলোর মুখ দেখেনি। এ প্রকল্প বাস্তবায়নে ধীরগতি, কখনও সময় বৃদ্ধি এসব নানা সমস্যার বেড়াজালে আটকে রাখা হয়েছিল। কিন্তু সব বাধা ছিন্ন করে বর্তমানে হাইটেক পার্ক প্রকল্পটি আলোর মুখ দেখতে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় পূর্ণাঙ্গ হাইটেক পার্ক গড়ে তোলার দায়িত্ব নিয়েছেন।
হাইটেক পার্ক শুধু জাতীয় পর্যায়ে তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পে প্রতিনিধিত্বই করবে না, এটি সরকারের দারিদ্র্য বিমোচন কৌশলপত্রেরও (পিআরএসপি) একটি অংশ। সেখানে এ পার্ককে বিভিন্ন খাতে ব্যবহারের প্রস্তাবনা রয়েছে, সফটওয়্যার এবং আইসিটি সংশ্লিষ্ট শিল্প-কারখানা, পিসিবি সংশ্লিষ্ট পণ্য উৎপাদন, টেলিকমিউনিকেশন, হার্ডওয়্যার এ্যাসেম্বলির ভিএলএসআই ডিজাইন এবং নির্মাণ, অপটো-ইলেকট্রনিক উপকরণ, বায়োটেকনোলজি প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠবে। এ পার্কে একটি হাইটেক বিশ্ববিদ্যালয় করার পরিকল্পনা রয়েছে। টেকনিক্যাল সাপোর্ট দেবে বিদেশি প্রতিষ্ঠান আরএ্যান্ডডি। হাইটেক পার্কে বিনিয়োগকারীরা যেসব খাতে বিনিয়োগ করতে পারবেন এগুলোর মধ্যে কম্পিউটার হার্ডওয়্যার, কম্পিউটার সফটওয়্যার, কমিউনিকেশন হার্ডওয়্যার, কমিউনিকেশন সফটওয়্যার, আইটিভিত্তিক সার্ভিস, ডিজাইন এ্যান্ড কনসালট্যান্সি, বায়োইনফরমেটিকস, হিউম্যান রিসোর্স ডেভেলপমেন্ট ইনস্টিটিউট, ম্যানুফ্যাকচারিং এ্যান্ড এ্যাসেম্বলি প্রোডাক্টস, ডিজাইন অব ইলেক্ট্রনিক প্রোডাক্টস, মার্চেন্ডাইজিং এবং মেশিনারি, মেডিকেল সাপ্লাইস এ্যান্ড ডিভাইসেস, নিউ এ্যান্ড এ্যাডভান্স মেটেরিয়ালস, অটোমোবাইল এ্যান্ড মেটাল ইন্ডাস্ট্রিজ, এগ্রো-বায়ো-টেকনোলজি এ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং ইত্যাদি বিষয় সংশ্লিষ্ট দেশি-বিদেশি যে কোনো প্রতিষ্ঠানই হাইটেক পার্কে বিনিয়োগ করতে পারবে। সরকার হাইটেক পার্কে বিনিয়োগ নীতিমালা তৈরি করবে।
বিশ্বে প্রযুক্তি বাণিজ্যে তুমুল প্রতিযোগিতার যুগে অনেক পরে হলেও দেশে তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক শিল্প-কারখানা স্থাপনের জন্য একটি আলাদা জোন হিসেবে হাইটেক পার্ক স্থাপন কাজ বাস্তবায়ন হচ্ছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে যদি পার্ক স্থাপন সম্পূর্ণ হয় তাহলে ভিশন ২০২১ আগেই বাস্তবায়ন হবে। এমন কথা বলেন, তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা। হাইটেক পার্কের সড়ক, বিদ্যুতের সাবস্টেশন, পানির পাম্প তৈরি সম্পন্ন হয়েছে। সেখানে একটি রেলস্টেশন তৈরিরও চেষ্টা চলছে। এ হাইটেক পার্কে আরও অবকাঠামো তৈরি করা প্রয়োজন। ১ হাজার ৩০০ কোটি টাকার মধ্যে ৭০০ কোটি টাকা খরচ হবে অবকাঠামো খাতে। ৬০০ কোটি টাকা খরচ হবে রক্ষণাবেক্ষণের জন্য। এ হাইটেক পার্কে শুধু সফটওয়্যার, হার্ডওয়্যার, আউটসোর্সিং, বায়োটেকনোলজি প্রভৃতি প্রযুক্তির ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠবে।
প্রধানমন্ত্রীর তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টার ঐকান্তিক আগ্রহ ও প্রচেষ্টায় হাইটেক পার্কের জন্য জমির পরিমাণ যেমন বাড়ানো গেছে, তেমনি এটির নির্মাণকাজ দ্রুত শেষ করার নিশ্চয়তাও পাওয়া গেছে। ভারতের হায়দরাবাদকে এক সময় বলা হতো বস্তির শহর। আর আজ হায়দরাবাদ আইটি সিটি হিসেবে বিশ্বজুড়ে পরিচিত। এটা সম্ভব হয়েছে সেখানে হাইটেক পার্কসহ অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণের ফলে। প্রধানমন্ত্রীর তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা ভারতের হায়দরাবাদ শহরের মতোই একটি শহর গড়ে তুলতে চানÑ যেখানে থাকবে সফটওয়্যার, হার্ডওয়্যার, আউটসোর্সিং ও বায়োটেকনোলজি প্রযুক্তির ব্যবসা। এইসব ব্যবসার জন্য বাংলাদেশের হাইটেক পার্কে বিশ্বের নামিদামি কোম্পানিগুলো করবে লক্ষ লক্ষ ডলার বিনিয়োগ। এসব প্রতিষ্ঠানে কাজের সুযোগ হবে বাংলাদেশি ছেলে-মেয়েদের। সজীব ওয়াজেদ জয়ের প্রচেষ্টায় বাংলাদেশের কালিয়াকৈর হয়ে উঠবে ভারতের হায়দরাবাদ- এ বিশ্বাস এখন অনেকেই রাখেন।
©somewhere in net ltd.