নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মন্ত্রক

আমি আমার দেশের জন্যে

মন্ত্রক › বিস্তারিত পোস্টঃ

শ্রমজীবী মানুষের সুরক্ষায় আপোসহীন সরকার

০৫ ই মে, ২০১৪ সকাল ৮:১২

‘শ্রমিক-মালিক বিভেদ ভুলি, সোনার বাংলা গড়ে তুলি’ মহান মে দিবসের এই প্রতিপাদ্যকে ধারণ করে এবং ‘দুনিয়ার মজদুর এক হও’ স্লোগানে আকাশ-বাতাস মুখরিত করে বাংলাদেশে শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ের এই অবিস্মরণীয় দিনটি শ্রমিকদের বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা ও বিভিন্ন অনুষ্ঠান পালনের মধ্য দিয়ে পালিত হয়েছে। ১২৮ বছর আগে ১৮৮৬ সালের ১ মে আমেরিকার শিকাগো শহরের হে মার্কেটে মকরম্যাক রিপার ওয়ার্কস নামের শিল্পপ্রতিষ্ঠানে ধর্মঘট পালনরত শ্রমিকদের রক্তদানের মাধ্যমে মহান মে দিবসের সূচনা হয়েছিল। এ দিনটি সারা বিশ্বের অগুনতি মেহনতি-শ্রমজীবী মানুষকে শোষণ ও বঞ্চনার বিরুদ্ধে সুদীর্ঘ ঐক্যবদ্ধ সংগ্রাম, রক্তক্ষয়, আত্মত্যাগ ও তাঁদের বিজয়ের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। প্রতিবারের মতো এবারও রাষ্ট্রীয়ভাবে দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদার সাথে পালিত হয়। এ উপলক্ষ্যে বাণী দেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ। রাষ্ট্রপতি তাঁর বাণীতে বাংলাদেশসহ বিশ্বের সকল মেহনতি মানুষকে আন্তরিক অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, মহান মে দিবসে শ্রমিক-মালিক সুসম্পর্ক প্রতিষ্ঠা, শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরি, সুন্দর ও নিরাপদ কর্মপরিবেশ ও তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠাসহ সামগ্রিক উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি পাক, এই প্রত্যাশা করি।

বিশ্বের সকল মেহনতি মানুষকে আন্তরিক অভিনন্দন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী তাঁর বাণীতে বলেন, আমরা দেশের শ্রমজীবী মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন ও কল্যাণে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি। সরকার শ্রমজীবী মানুষের কল্যাণে লাগসই প্রযুক্তির উদ্ভাবন ও ব্যবহার এবং উন্নত ব্যবস্থাপনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে ‘রূপকল্প ২০২১’ বিনির্মাণে বদ্ধপরিকর।

মহান মে দিবসের অনুষ্ঠানে মালিক ও শ্রমিকদের মধ্যে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি তৈরির তাগিদ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মালিক-শ্রমিক পারস্পরিক বিভেদ ভুলে সোনার বাংলা গড়ার লক্ষ্যে একসাথে কাজ করারও আহ্বান জানান তিনি।



শ্রমিক কল্যাণে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবদান

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শ্রমিকদের কল্যাণে ও তাঁদের উন্নয়নে সারা জীবন কাজ করে গেছেন। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর বঙ্গবন্ধু সরকার পহেলা মে’কে জাতীয় ছুটি হিসেবে ঘোষণা করেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সক্রিয় হস্তক্ষেপে বাংলাদেশ ১৯৭২ সালের ২২ জুন ইন্টারন্যাশনাল লেবার অর্গানাইজেশন বা আইএলও’র সদস্য পদ লাভ করে। বঙ্গবন্ধুর সরকার ১৯৭৩ সালে কোনো প্রকার দাবিনামা পেশ করার আগেই শ্রমিক-কর্মচারীদের জন্য স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম মজুরি কমিশন ও বেতন কমিশন গঠন করে শ্রমিক-কর্মচারীদের মজুরি ও বেতন-ভাতাদি পরিশোধ করেন। বঙ্গবন্ধু ছিলেন শ্রমিকের অকৃত্রিম বন্ধু। তাঁর মন-প্রাণজুড়ে ছিল শ্রমিক ও দেশের উন্নয়নের স্বপ্ন। এর প্রমাণ পাওয়া যায় ১৯৭৪ সালের ঈদুল ফিতরে। ঈদের আগে বেতনের সঙ্গে বোনাস প্রদানের দাবিতে আদমজী জুট মিলের শ্রমিক-কর্মচারীরা আন্দোলন শুরু করে। আদমজী কর্তৃপক্ষের কোনো আশ্বাস না পেয়ে আন্দোলনের ব্যাপ্তি ও অসন্তোষ ক্রমেই বাড়তে থাকে। বঙ্গবন্ধুর কানেও আসে আদমজীর শ্রমিক অসন্তোষের কথা। শ্রমিকদের দাবি-দাওয়ার বিষয়ে জানতে বঙ্গবন্ধু আদমজী পাটকলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। এতে বাদ সাধেন বঙ্গবন্ধুর প্রটোকল কর্মকর্তারা। তাদের কথা হলো ব্যাপক শ্রমিক অসন্তোষের মধ্যে বঙ্গবন্ধুর আদমজী যাওয়া ঠিক হবে না। বঙ্গবন্ধু প্রটোকল কর্মকর্তাদের আশ্বস্ত করেন, তিনি সামনে গেলে শ্রমিকরা কোনো ধরণের বিরূপ আচরণ করবে না। বঙ্গবন্ধু আদমজী পাটকলে যান। শ্রমিকদের দাবি-দাওয়া স্বকর্ণে শোনেন এবং ঈদের আগেই শ্রমিকদের উৎসব বোনাস দেওয়ার জন্য আদমজী কর্তৃপক্ষকে তাৎক্ষণিক নির্দেশ দেন। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশানুযায়ী সেদিনই শ্রমিকরা কাজে যোগ দেন এবং উৎসব বোনাস পেয়ে ঈদুল ফিতর উদযাপন করেন। আদমজী কর্তৃপক্ষের ভাষ্য হলো, বঙ্গবন্ধু যদি সেদিন আদমজীতে না যেতেন, তাহলে বোনাস দেওয়া হলেও রক্তক্ষয়ী পরিস্থিতি সৃষ্টি হতো এবং তা সামলানো কষ্টকর হয়ে যেত। আদমজীর কর্মকর্তাদের মতে, একমাত্র বঙ্গবন্ধুর উপস্থিতির কারণেই সেদিন এক রক্তক্ষয়ী পরিস্থিতি এড়ানো সম্ভব হয়েছিল।



শ্রমিক কল্যাণে বঙ্গবন্ধু কন্যা

শেখ হাসিনার অবদান

বঙ্গবন্ধুর মতো বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও বাংলার শ্রমজীবী মানুষের কল্যাণে বিভিন্ন বাস্তবমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। শ্রমিকবান্ধব প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সময়কালে ৩৬টি সেক্টরের নিম্নতম মজুরি পুনঃনির্ধারণ করা হয়েছে। পোশাক শিল্পে দু’বার নিম্নতম মজুরি ঘোষণা করা হয়েছে এবং প্রতি বার প্রায় দ্বিগুণ মজুরি বৃদ্ধি করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে শ্রম আইনকে আরও যুগোপযোগী ও বাস্তবমুখী করা হয়েছে। শ্রমিকদের কল্যাণে প্রধানমন্ত্রীর ঐকান্তিক ইচ্ছায় গঠন করা হয়েছে শিল্প পুলিশ ইউনিট। আমেরিকায় জিএসপি পুনর্বহাল করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় সকল পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। তাছাড়া শ্রমিকদের চাকরির বয়স ৬০ বছরে উন্নীতকরণসহ শ্রমিকদের কল্যাণে নানাবিধ কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। রপ্তানিমুখী শিল্পের জন্য নানাবিধ সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করা হয়েছে।



শ্রমিকদের ক্ষুধায় রেখে বিলাসী জীবনযাপন চলবে না : শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

আন্তর্জাতিক শ্রমিক সংহতি দিবসে সরকারি অনুষ্ঠানের বক্তব্যে অনেকটা কমিউনিস্ট নেতাদের ধাঁচে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘কেউ কেউ বিলাসব্যসনে জীবনযাপন করবে, আর কেউ ধুঁকে ধুঁকে চলবেÑ এই বৈষম্য বাংলাদেশে চলতে পারে না। মানুষ মানুষের জন্য। মানুষ মানুষের অধিকার নিয়েই বাঁচবে। কাজেই আমি মালিকদের বলব, যে বিলাসিতা আপনারা করবেনÑ ওই শ্রমিকের ঘাম, রক্ত ঝরা উপার্জন দিয়েই।’ ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় আয়োজিত মে দিবসের অনুষ্ঠানের বক্তব্যে শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়নের জন্য মালিকদের তাগিদ দেন শেখ হাসিনা। শ্রমিকদের জীবনমানের উন্নয়ন করতে হবে। তাদের দিকে ফিরে তাকাতে হবে। শ্রমিকদের সন্তানদের শিক্ষা, বিনোদন, চিকিৎসা বাসস্থান নিশ্চিত করতে হবে। শ্রমিক কল্যাণে মনোযোগী হলে কারখানার উৎপাদনশীলতা বাড়বে; তাতে মালিকেরও লাভ হবে বলে কারখানা মালিকদের মনে করিয়ে দেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরো বলেন, যদি ভালো কাজ চান, সুন্দর ব্যবহার করে, আদর করে, মাথায় হাত দিয়ে কিন্তু অনেক কাজ করানো যায়। ধমক-ধামক-চাপ না দিয়ে, আন্তরিকতা দিয়ে যদি তাদের সাথে সম্পর্ক গড়ে তোলা যায়, তাহলে অধিক শ্রম পাওয়া যায়।

কারখানার চাকা সচল রাখতে শ্রমিকদের দায়িত্বের কথা মনে করিয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যে শিল্প-কলকারখানা অন্ন জোগায়, জীবন-জীবিকার পথ করে দেয়-সেগুলোর যেন কোনোমতে ক্ষতি না হয়। সেখানে যেন উৎপাদন ব্যাহত না হয়। যৌক্তিক দাবি থাকলে তা নিয়মতান্ত্রিকভাবে উপস্থাপনের পরামর্শ দিয়ে এক্ষেত্রে কারো প্ররোচণায় বিভ্রান্ত না হতে শ্রমিকদের প্রতি আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

শ্রমিক-মালিক সম্পর্কের ওপর গুরুত্বারোপ করে গুজব ছড়িয়ে কলকারখানার যেন ক্ষতি করা না হয়, সে বিষয়ে সচেতন থাকতে উভয়পক্ষকে সতর্ক থাকতে বলেন প্রধানমন্ত্রী।

তাজরীন ও রানা প্লাজা ধসে সহস্রাধিক শ্রমিকের মৃত্যুর বর্ষপূর্তির পর এবারের মে দিবসে শ্রমিক সংগঠনগুলোর স্লোগানে কারখানায় নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিতের দাবি উঠায় রানা প্লাজা ধসের প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দুর্ঘটনা যাতে হ্রাস পায় সেজন্য সরকার সচেষ্ট। রানা প্লাজা ধসে ক্ষতিগ্রস্তদের সহযোগিতার ক্ষেত্রে সরকার পরিকল্পনা করে পদক্ষেপ নিয়েছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। আমরা চেয়েছি, যে সাহায্য করছি, তা যেন কাজে লাগে। একজন মহিলা শ্রমিক মারা গেলে তার স্বামী, তার বাবা-মাকে সাহায্য করেছি, সন্তানদেরকে টাকা দিয়েছি। নাবালক শিশুর জন্য ফিক্সড ডিপোজিট করে দিয়েছি। নইলে ওই নাবালক শিশুকে পরিবারের কেউ দেখবে না।

তাজরীন ফ্যাশনসের নিহত নারী শ্রমিকের স্বামীকে সাহায্যের পর সে তার নাবালক শিশুকে রেখে আরেকটি বিয়ে করার কথাও প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন।

মে দিবসের অনুষ্ঠানে তৈরি পোশাক শিল্পের শ্রমিকদের মজুরি ১ হাজার ৬০০ টাকা থেকে ৫ বছরে দুদফা বাড়িয়ে ৫ হাজার ৩০০ টাকা এবং রাষ্ট্রীয় শ্রমিকদের মজুরি ২ হাজার ৪৫০ টাকা থেকে ৪ হাজার ১৫০ টাকায় উন্নীত করার কথা জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি ভবন ও শ্রমিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গার্মেন্টস শিল্পবিষয়ক মন্ত্রিসভা কমিটি গঠনের কথাও উল্লেখ করেন। শিল্প পরিদর্শন প্রতিষ্ঠানকে শক্তিশালী করার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এর জনবল ৩১৪ জন থেকে ৯৯৩ জনে বৃদ্ধি করা হয়েছে। শিল্প পরিদর্শক নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে।

অনুষ্ঠানের সভাপতির বক্তব্যে শ্রম প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু গৃহকর্মীদের সুরক্ষার জন্য আইন করতে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘বাসায় একটি টিভি বা ফ্রিজ কিনলে সেটা রাখার জায়গা ঠিক করা হয়। কিন্তু বাসায় কাজের লোকের ঘুমানোর জায়গা ঠিক করা থাকে না। কখনো বসার ঘরে, কখনো রান্না ঘরে বা কখনো বাথরুমে ঘুমাতে হয়। এটা চলতে পারে না।’

এই বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অপ্রাতিষ্ঠানিক শ্রমিকদের কল্যাণে কী করা যেতে পারে, সে বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। অনেক নীতিমালা করা হচ্ছে।

শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় আয়োজিত মহান মে দিবসের এ অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে আইএলও’র আবাসিক প্রতিনিধি শ্রীনিবাসন বি রেড্ডি, জাতীয় শ্রমিক লীগের সভাপতি শুক্কুর মাহমুদ, মন্ত্রণালয়ের সচিব মিকাইল শিপার বক্তব্য রাখেন।



কেউ খাবে, কেউ খাবে না, তা হবে না : গাজীপুরের জনসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

মহান মে দিবস উপলক্ষ্যে গাজীপুরের ভাওয়াল বদরে আলম ডিগ্রি কলেজ মাঠে শ্রমিক লীগ আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শ্রমিকদের অধিকার আদায়ের এই দিনে মালিক পক্ষকে ইঙ্গিত করে বলেন, ‘কেউ কেউ কষ্টের জীবনযাপন করবে, অন্য দিকে কেউ বিলাসী জীবনযাপন করবেÑসেটা হতে পারবে না। বাংলাদেশে কেউ খাবে, কেউ খাবে না, তা হবে না। জনগণের ভাগ্য নিয়ে কাউকে ছিনিমিনি খেলতে দেওয়া হবে না।’

বস্তিবাসীদের গ্রামে ফেরানোর কর্মসূচি রয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘গ্রামে ফিরে গেলে তাদের আবাসনের ব্যবস্থা করা হবে।’ সেই সঙ্গে কর্মক্ষেত্রের জন্য বিনা শর্তে ঋণ দেওয়ার কথাও জানান তিনি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে জনসভাস্থলে পৌঁছালে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহম্মেদ, মুক্তিযোদ্ধাবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকসহ গাজীপুরের সাংসদ ও আওয়ামী লীগ নেতারা তাকে স্বাগত জানান। প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষ্যে গাজীপুরকে বর্ণিল সাজে সাজানো হয়। স্থানীয় শ্রমিক, দলীয় নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ জনসভাস্থলে প্রধানমন্ত্রী পৌঁছার পর বিপুল করতালি ও স্লোগান দিয়ে তাকে স্বাগত জানান। সেনাবাহিনী, র‌্যাব ও পুলিশ জনসভাস্থল ঘিরে রাখে। আইনশৃঙ্খলা ও প্রতিরক্ষা বাহিনীর ডগ স্কোয়াড সার্বক্ষণিক মাঠে প্রস্তুত রাখা হয়। জনসভাস্থল ঘিরে আশপাশের এলাকায় নেওয়া হয় বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা। ঢাকা থেকে গাজীপুর পর্যন্ত মহাসড়কে অসংখ্য তোরণ নির্মাণ করা হয়। রাস্তায় রাস্তায় রঙ-বেরঙের ব্যানার ও ফেস্টুন শোভা পায়।

ভাওয়াল বদরে আলম ডিগ্রি কলেজ মাঠে লাখো শ্রমিকের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা শ্রমিক-জনতার কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছি। আমরা শ্রমিকদের শিল্প মালিক বানিয়েছি। তাদের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য মজুরি বৃদ্ধি করেছি। ভবিষ্যতে আরো মজুরি বৃদ্ধি করা হবে।’ তিনি বলেন, ‘পোশাক শিল্পের জিএসপি বাতিলের জন্য বিএনপি নেত্রী আমেরিকার কাছে চিঠি লিখেছিলেন। এতে আমেরিকা জিএসপি বন্ধ করে দেয়। কিন্তু তিনি সংসদের দাঁড়িয়ে তা অস্বীকার করেন।’ বিএনপি নেত্রী প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি চোরাগোপ্তা রাজনীতি করে সরকারের পতন ঘটাতে চাচ্ছে। তাদের চোরাগোপ্তা রাজনীতির কারণে দেশে গুম-অপহরণ-হত্যার ঘটনা ঘটছে। এসব গুম-অপহরণের জন্য বিএনপিই দায়ী। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, জিয়াউর রহমানের আমল থেকেই হত্যার রাজনীতি শুরু হয়। রাজাকার আলবদরদের তিনি ক্ষমতায় বসিয়ে তাদের প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী বানিয়েছেন। তার স্ত্রী খালেদা জিয়া ক্ষমতায় এসেই ধারা অব্যাহত রেখে শহীদদের রক্তভেজা পতাকা রাজাকারের গাড়িতে উঠিয়ে দিয়েছিলেন। আমরা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কাজ শুরু করেছি। তাদের বিচারের রায় বাংলার মাটিতে কার্যকর করা হবে।

বিএনপি ৫ জানুয়ারি নির্বাচন বন্ধ করার জন্য বিদেশি প্রভুদের কাছে নালিশ করেছিল জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নালিশ করে তারা বালিশ পেয়েছে। ভাঙা জুতার বাড়ি খেয়েছে। জনগণ নির্বাচন করে তাদের সেই নালিশের জবাব দিয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপির এক নেতা বলেছেনÑ চোরাগোপ্তা আন্দোলন করবে। চোরাগোপ্তা আন্দোলন করে নাকি সরকারের পতন ঘটাবে। এখন দেশে যে চোরাগোপ্তা হত্যাকা- হচ্ছে এর জন্য তারাই দায়ী।

গাজীপুরে শ্রমিকদের ডরমেটরি, আবাসন ব্যবস্থা, বস্তিবাসীদের জন্য ফ্ল্যাট তৈরি করা এবং গ্রামে ফিরতে আগ্রহী বস্তিবাসীদের পুনর্বাসনের ঘোষণা দিয়ে এবং আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে মেহনতি মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হয় উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের রাজনীতি খেটে খাওয়া মানুষের জন্য। বাংলাদেশের মেহনতি মানুষের ভাগ্যোন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছি। বিএনপি যখন ক্ষমতায় এসেছিল তখন অনেক শিল্পকারখানা বন্ধ করে দিয়েছিল। হাজার হাজার শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছিল। আমরা বন্ধ কারখানা ফের চালু করেছি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, যুদ্ধাপরাধের বিচার আমরা শুরু করেছি। বিচারের রায়ও বাংলার মাটিতে কার্যকর করা হবে।

শ্রমিকদের অভিনন্দন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই গাজীপুর থেকেই মুক্তিযুদ্ধের প্রতিরোধ তৈরি হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধকালীন সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদ, শ্রমিকনেতা ময়েজ উদ্দিন ও আহসানউল্লাহ মাস্টারের অবদানের কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় আসার আগে বলে, বন্ধ কলকারখানা চালু করবে। কিন্তু ক্ষমতায় গিয়ে করে তার উল্টো। তারা আদমজীর মতো বৃহৎ পাটকল বন্ধ করে দিয়েছিল। খুলনা, চট্টগ্রাম, সিরাজগঞ্জ ও গাজীপুরের বিভিন্ন কলকারখানা বন্ধ করে দিয়েছিল। হাজার হাজার শ্রমিক বেকার হয়ে পড়ে তাদের শাসনামলে। অনেক শ্রমিক সে সময় আত্মহত্যা করেন।

খালেদা জিয়ার হাত কৃষক ও শ্রমিকের রক্তে রঞ্জিত উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, খালেদা জিয়ার সময় ন্যায্য শ্রমের দাবিতে রমজান মাসে ১৭ শ্রমিককে গুলি করে হত্যা করা হয়। সরকার পতন আন্দোলনের নামে তিনি বাসের ঘুমন্ত ড্রাইভার ও হেলপার, সিএনজির ড্রাইভারকে পেট্রোল দিয়ে হত্যা করেন, স্কুলছাত্রীকে হত্যা করেন।



মে দিবস ও বাংলাদেশে নারীর অগ্রযাত্রা

ন্যায্য মজুরির দাবিতে ১৮৮৬ সালে শিকাগোর হে মার্কেটে কর্মক্লান্ত শ্রমিকরা বুকের রক্তে রাঙিয়ে যে পতাকা উড়িয়েছিল সে লাল পতাকা আজ শ্রমিকদের চাওয়া-পাওয়ার স্বপ্ন হয়ে উঠছে। বাংলাদেশ শিল্প ক্ষেত্রে এগিয়েছে অনেকদূর। দেশের অন্যতম বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী তৈরি পোশাক শিল্প খাতটি নারী শ্রমিকদের ওপর নির্ভরশীল। তাদের সুনিপুণ দক্ষতায় তৈরি পোশাক খাত বাংলাদেশের সুনামকে বিশ্বজুড়ে বাড়িয়ে তুলেছে বহুগুণে। নারী শ্রমিকরা এজন্য দিন-রাত পরিশ্রম করছেন। দেশের শ্রমবাজারে নারীর অংশগ্রহণ দিন দিন বাড়ছে। পোশাক শিল্পে তাদের সংখ্যা প্রায় ২০ লাখ। তারা ভূমিকা রাখছে জাতীয় অর্থনীতিতে। পোশাক শিল্পে কর্মরত নারী শ্রমিকদের বেতন আগের তুলনায় বাড়ানো হয়েছে; তাতে করে তাদের সংসার চালানো সহজ হয়ে উঠেছে। নারী শ্রমিকরা ঊর্ধŸমূল্যের বাজারে তাদের বেতন বৃদ্ধির ব্যাপারে সরকার ও পোশাক মালিকদের কাছে দাবি জানিয়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নারী শ্রমিকদের এই দাবি পূরণ করার জন্য মালিকপক্ষকে অনুরোধ করে তাদের নিম্নতম মজুরি ৫ হাজার ৩০০ টাকা করার ব্যবস্থা করেন।

তৈরি পোশাক শিল্প ছাড়াও নারীর ক্রমাগত অংশগ্রহণ বাড়ছে কৃষি, নির্মাণ, চাতাল, চিংড়ি চাষসহ অন্যান্য মাধ্যমেও। এসব ক্ষেত্রে নারী শ্রমিকের নিম্নতম মজুরি, কাজের সময়সীমাসহ অন্য কোনো সুযোগ-সুবিধার কোনো নির্দিষ্ট বিধিবিধান না থাকলেও আলোচনার ভিত্তিতে একটা গ্রহণযোগ্য শ্রমমূল্য নিশ্চিত করার বিষয়টি অগ্রাধিকার পাচ্ছে। এসব ক্ষেত্রে নারী শ্রমিকরা তাদের প্রাপ্য মজুরি আদায়ে সোচ্চার। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের সংবিধান, জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতিমালা, আইএলও, সিডিও সনদে নারীদের অধিকার ও দাবিদাওয়ার বিষয়ে বৈষম্যহীন অবস্থানের পক্ষে সুস্পষ্ট বক্তব্য আছে। প্রধানমন্ত্রীর সমর্থন পেয়ে নারী শ্রমিকরা তাদের অধিকার আদায়ে আগের চেয়ে এখন অনেক বেশি সচেতন।



মে দিবস ও মালিকপক্ষ

মালিকপক্ষ শোষক শ্রেণি। তারা সবসময় শ্রমিকের ঘাড়ের উপর কাঁঠাল ভেঙেই খাবেÑ এটাই পুঁজিবাদী সমাজ ব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য। তা খাক। সমস্যা নেই। কিন্তু যার ঘাড়ের ওপর কাঁঠাল রাখবে তাকে তো জীবিত রাখতে হবে। তা রাখার চেষ্টা করে না মালিকপক্ষ। এটাই সমস্যা। এটাই মালিক শ্রেণির দোষ। শ্রমিকের ঘাম ঝরানো পরিশ্রমের ওপর দিয়ে নিজেরা মুনাফা লুটবে, বিত্ত-বৈভব-বিলাসিতায় গা ভাসাবে তাতেও শ্রমিকদের আপত্তি থাকবে না যদি শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত না করা হয়, যদি নিরাপদ কর্মস্থলের নিশ্চয়তা দেওয়া হয়, যদি কর্মস্থলে তাদের লাঞ্ছনা-বঞ্চনা না করা হয়। কিন্তু এ বিষয়ে সতর্ক নয় মালিকপক্ষ। মালিকপক্ষের এ উদাসীনতাই মূল সমস্যা। তবে আশার কথা হলো এবার শ্রমিক মেহনতি জনতার দাবি আদায়ে সোচ্চার হয়েছেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় আয়োজিত অনুষ্ঠানে এবং গাজীপুরের জনসভায় মালিকপক্ষকে উদ্দেশ করে তিনি বলেছেন, ‘শ্রমিকদের ক্ষুধায় রেখে বিলাসী জীবন চলবে না’ এবং ‘কেউ খাবে কেউ খাবে না, তা হবে না’। প্রধানমন্ত্রীর এ ধরণের হুঁশিয়ারির পর শ্রমিকরা আশা করছে, এবার মালিকপক্ষের বোধোদয় হবে। মালিকপক্ষের কাছ থেকে তারা ন্যায্য মজুরি পাবে। কর্মের সময়, পরিবেশ ও নিশ্চয়তা পাবে। প্রধানমন্ত্রীর বক্তৃতার সময়ে শ্রমিকদের চোখে-মুখে আনন্দের যে ঝিলিক দেখা গেছে তাতে প্রতীয়মান হয়, দেশের কোটি কোটি শ্রমিক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কথা, প্রতিশ্রুতি কিংবা আশ্বাসে আস্থাশীল। মহান মে দিবসের সভাস্থলে উপস্থিত জনৈক শ্রমিক নেতা বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ন্যায় বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সকল মেহনতি শ্রমিক জনতা আজ ঐক্যবদ্ধ।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.