নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মন্ত্রক

আমি আমার দেশের জন্যে

মন্ত্রক › বিস্তারিত পোস্টঃ

আসন্ন বাজেট ও কিছু প্রস্তাব

১৯ শে জুন, ২০১৪ সকাল ৮:৪১

দেশের প্রথম শ্রেণির দৈনিক প্রত্রিকাগুলোতে প্রাক-বাজেট নিয়ে প্রবন্ধ, আলোচনা, গোল টেবিল বৈঠকের সুপারিশমালা অব্যাহত রয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের বাজেট শাখা এরই মধ্যে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের চাহিদা সংগ্রহের কাজ অব্যাহত রেখেছে এবং আশা করা যায় আগামী জুন মাসের প্রথম সপ্তাহেই জাতীয় বাজেট বক্তৃতা শোনার জন্য আধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে সকলে। এখন প্রশ্নটি হলো বাজেট আসবে বাজেট যাবে এই গতানুগতিক ধারায় বাজেট কি কেবল সরকারের ব্যয় ও আয়ের আর্থিক হিসাব বলে বিবেচিত? অবিশ্য নয় বিধায় বাজেট প্রক্রিয়া একটি সরকারের অর্থনৈতিক রাজনৈতিক দর্শনেরও প্রতিফলন যার মাধ্যমে সম্পদের সৃষ্টি ও প্রবৃদ্ধি একটি উল্লেখ্যযোগ্য বিষয় এবং সুশাসন তথা জবাবদিহিতা মাধ্যমে মানবকল্যাণসহ সমৃদ্ধি সংগঠিত হয়ে থাকে।



এখন বাংলাদেশে সুশাসনের বিষয়টি একটি দুর্বল বস্তু বলে বিবেচিত বিধায় স্থানীয় সরকার কিংবা জাতীয় সরকারই বলুন সকলই কেহই সাধারণের কথা না ভেবে স্থানীয় ভাবে সম্পদ সৃষ্টি বৈষম্য সমভাবে অবদান রেখে চলেছে। ফলে বাজেটের যে মূল লক্ষ্য যথাক্রমে প্রবৃদ্ধি ,সম্পদের সুষম বণ্টন ,মুদ্রাস্ফীতি হরাস ,দারিদ্র্য বিমোচন,কর্মসংস্থান, আয় বৃদ্ধি ইত্যাদি কেবলই কথার কথা বলে বিবেচিত হয়ে আসছে বার বার। তাই জন অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার স্বার্থে খসড়া বাজেট অন্তত তিন মাস আগে উন্মুক্ত করার দাবি জানিয়েছে বাজেট বিষয়ক নাগরিক মোর্চা ।এই জোট মনে করে বাজেট প্রণয়ন প্রক্রিয়াকে বিকেন্দ্রীভূত করে জেলা বাজেট ব্যবস্থা মাধ্যমে বাজেটে অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর চাহিদার প্রতিফলন ঘটাতে হবে এবং ধনী ক্ষমতাবানদের স্বার্থে অনুত্পাদনশীল খাতে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বরাদ্দ না দিয়ে দারিদ্র্য নিরসনে গণমুখী বাজেট প্রণয়ন করতে হবে তার মধ্যে রয়েছে জেলা বাজেট প্রণয়নের জন্য প্রয়োজনীয় আইন সংশোধন ও কাঠামোগত সংস্কার ,কৃষকদের জন্য শস্যবীমা চালু, প্রতি ইউনিয়নে একটি করে শস্য ব্যাংক, শ্রম আদালতগুলোকে সক্রিয় করা, পিছিয়ে পড়া প্রতিবন্ধী ও ক্ষুদ্র নৃ- জনগোষ্ঠীর নাগরিক জীবনমান উন্নয়নে বিশেষ বরাদ্দের আওতা বাড়ানো ইত্যাদি। আমরা যদি চলতি বছরের অর্থনীতির দিকে তাকাই তা হলে দেখা যাবে যে বাজেটের জি.ডি.পি-এর টার্গেট ৭.২ শতাংশ ধরা হলেও দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির কারণে তা ৫.৭ শতাংশের বেশি অর্জিত হবে না বলে পূর্বাভাস দিয়েছে বিশ্বব্যাংক,এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকসহ দেশীয় বেসরকারি সংস্থাসমূহ অথচ এই মহাজোট সরকারের প্রথম চার বছর গড়ে প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছিল ৬.৩ শতাংশর বেশি অথচ গত দুই বছরে প্রবৃদ্ধি ভাটা পড়ে তা নেমে আসে ৬.১৮ শতাংশে। তার একটি বড় কারণ হলো বিনিয়োগ তথা ব্যবসা বাণিজ্যে স্থবিরতা,পুঁজি পণ্যের আমদানি হরাস, সম্পদ তথা ব্যক্তিজীবনের নিরাপত্তাহীনতা,আর্থিক. প্রাতিষ্ঠানিক ও রাজনৈতিক ব্যবস্থার দুর্বলতা ইত্যাদি। এখানে উল্লে¬খ্য যে প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধি ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা জিডিপির প্রবৃদ্ধির অন্যতম শর্ত যা নিশ্চিত হলে বিনিয়োগ আকৃষ্ট করা সম্ভব হবে । শিল্প খাতে গত বছর প্রবৃদ্ধি ছিল ৯ শতাংশ যা বর্তমান বছরে কম হবে বলে অনুমান করা হচ্ছে যার প্রধান কারণসমূহ হলো প্রতিনিয়ত বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি, অবকাঠামো অপ্রতুল, অনুন্নয়ন ব্যবস্থাপনা,সীমিত ও সংকুচনমূলক বাজার ,শিল্প উদ্যোগক্তাদের অনীহা ইত্যাদি ।



অপর দিকে গত পাঁচ বছর ধরে ক্রমাগত ভাবে কৃষিখাতে প্রবৃদ্ধি কমে সর্বশেষ ১.২৮ শতাংশতে দাঁড়িয়েছে অথচ এই সময়টাতে কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ কিংবা মানুষের সৃষ্ট দুর্যোগ কৃষি খাতকে প্রভাবিত করেনি। এই বিপর্যয়ের কারণ হিসাবে উল্লে¬খ্য করা যায় কৃষি খাতে বাজেট বরাদ্দ কমে যাওয়া, কৃষিপণ্যের সঠিক মূল্য থেকে বঞ্চিত কৃষক পরিবার, ভতুর্কির সুষ্ঠু বিতরণ ও ব্যবহার, দক্ষতার অভাব,গবেষণায় গবেষকদের অনীহা ,এডিপিভুক্ত কৃষি প্রকল্প বাস্তবায়নে মানব সম্পদের অপ্রতুলতা, কৃষিপণ্য বিপণনের অসংগঠিত বাজার ব্যবস্থা ইত্যাদি। বিষয়টি এখানে শেষ নয়, যাতে দেখা যায় সেবা খাতের প্রবৃদ্ধি যেখানে গত বছরছিল ৫.৭ শতাংশ যা কমে ৫.৫ শতাংশে নেমে এসেছে। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হলে মূল্যসফীতি কমে যাবে এটাই স্বাভাবিক কিন্তু বাংলাদেশের ক্ষেত্রে তা হয়নি এবং যা হয়েছে তাহলো মূল্যস্ফীতির হার প্রবৃদ্ধির হারের চেয়ে বেশি যা বর্তমানে ৭.৬ শতাংশে রয়েছে। আবার খাদ্য মূল্যস্ফীতির হার প্রায় দুই অংকের কাছাকাছি চলে এসেছে যা সরকারের জন্য এক বিব্রতকর অবস্থা। সম্প্রতি ঢাকায় অনুষ্ঠিত সার্ক ফাইন্যান্স কর্মশালায় বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক উপস্থাপিত একটি গবেষণায় দেখা যায় যে ২০১৩ আর্থিক বছরে ট্রেড সমতা (-৭০৫৬.৬) মিলিয়ন মার্কিন ডলার, বৈদেশিক বিনিয়োগ-এর প্রবাহ ১৭৩০.৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, রেমিটেন্স-এর প্রবাহ ১৪৪৬১.২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, বৈদেশিক রিজার্ভ ২০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার,সার্বিক বিশ্বায়ন ৭৮৯৮৯.২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ,চলতি হিসাবের সমতা ২৫২৫.০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, বৈদেশিক ঋণ জিডিপি এর ১৭.৫ শতাংশ এবং বর্তমান বাজার মূল্য জিডিপি দাঁড়াল ১২৯৮৬২.০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ( উত্স বাংলাদেশ ব্যাংক, এপ্রিল ২০১৪)। এই যদি হয় বাংলাদেশের অর্থনীতির উদারীকরণের চালচিত্র তাহলে এটি বলতে দ্বিধা নেই যে উদ্যোক্তারা যদি সহায়ক পরিবেশ পায় তাহলে অর্থনীতির চেহারাটা বদলে দিতে পারে যদিও অনেক চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে এবং সরকারের অর্থবিষয়ক মন্ত্রণালয় যারা বাজেট প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত তারা এ বিষয়গুলো অবগত আছেন। যদি তাই সত্যি হয় তবে আসন্ন বাজেটের জাতীয় সর্বস্তরের প্রত্যাশার প্রতিফলন ঘটবে এটাই স্বাভাবিক ।



সে যাই হোক না কেন সার্বিক বিবেচনায় আসন্ন ২০১৪-২০১৫ বাজেট প্রসংগে কিছু কিছু বাস্তবধর্মী প্রস্তাব কর্তৃপক্ষের কাছে রাখা হলো যথা: প্রথমত: ব্যক্তির সঞ্চয়ী স্থায়ী আমানতের সুদ আয়ের উত্স কর প্রত্যাহার বা সহনীয় পর্যয়ে নিয়ে আসা; দ্বিতীয়ত: দেশীয় পণ্য ও আমদানি করা একই পণ্যের কর পার্থক্য যৌক্তিক ভিত্তিতে ধার্য করা; তৃতীয়ত: কর্পোরেট কর কমানোই যথেষ্ট নয় যদি না বিনিয়োগের বৃদ্ধির জন্য অবকাঠামো ও পরিবেশ সৃষ্টি না হয় ; চতুর্থত: বিশেষ ক্ষেত্রে যেমন কৃষিতে ভর্তুকি অব্যাহত রাখতে হবে খাদ্য নিরাপত্তার স্বার্থে ও দারিদ্র্য বিমোচনে , পঞ্চমত: কর অবকাশ প্রদানে সুবিধা কেবল মাত্র কর প্রদানকারী সকল উদ্যোক্তাদেরকে দিতে হবে, ঢালাও ভাবে নয় , যষ্ঠত: করের আওতা সমপ্রসারণের মাধ্যমে কর সংগ্রহ বৃদ্ধি করতে হবে এবং পুঁজি বাজার থেকে আয় আবাসন খাত, বাণিজ্যিক কৃষিখাত করের আওতায় আনতে হবে, সপ্তমত: যে সমস্ত টিনধারী আয় করসহ রিটার্ন জমা দেয় না তাদের বিরুদ্ধে আয়কর আইনে ব্যবস্থা নিতে হবে এবং পাশাপাশি উদ্বুদ্ধমূলক কর্মসূচি অব্যাহত রাখতে হবে, অষ্টমত: আসন্ন বাজেটে জনগুরুত্বপূর্ণ খাত যেমন কৃষি গবেষণা, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী, দারিদ্র্য বিমোচন, ব্যবসা বাণিজ্য সহায়ক প্রণোদনা, পোশাক কারখানা ও শ্রমিকদের ভাগ্য উন্নয়ন,পরিবেশ সুরক্ষা, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নয়ন ইত্যাদিতে বিশেষ বরাদ্দ রাখতে হবে; দশমত: অবকাঠামোগত উন্নয়ন যেমন যোগাযোগ, বিদ্যুত্, শিক্ষা, স্বাস্থ্য সেবা ,পানিবণ্টন,দুর্নীতি দমনসহ সেবা খাতের গুরুত্ব প্রদান এই লক্ষ্যে বাজেট বিশেষ বরাদ্দ রাখা ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পদক্ষেপ নেয়া জরুরি ।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.