![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
অবশেষে বহুল আলোচিত রমনা বোমা হামলা মামলার রায় ঘোষিত হয়েছে। গত ২৩ জুন ঢাকার দ্বিতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক রায় ঘোষণা করেন। রমনা বোমা হামলা মামলার রায়ে হরকাতুল জিহাদ নেতা মুফতি হান্নানসহ ৮ জনের ফাঁসি ও ৬ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে রায়ে মৃত্যুদণ্ড ও যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা এবং যাবজ্জীবনপ্রাপ্তদের জরিমানা, অনাদায়ে আরো এক বছর করে কারাদণ্ডাদেশ দেয়া হয়। দীর্ঘ ১৪ বছর পর পাওয়া আদালতের এ রায়ের মাধ্যমে আমাদের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা পূরণ হলো। বহুল প্রতীক্ষিত এ রায়ের মাধ্যমে আমরা বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসার পথেও এগিয়ে গেলাম অনেকটা পথ।
প্রায় এক যুগেরও বেশি সময় পর এসে পাওয়া আদালতের এই রায়ের মধ্য দিয়ে জাতির আকাক্সক্ষাও পূরণ হলো। ২০০১ সালের ১৪ এপ্রিল, বাংলা ১৪০৮ সনের পহেলা বৈশাখ রাজধানীর রমনা বটমূলে ছায়ানটের ঐতিহ্যবাহী বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে বোমা হামলা চালানো হয়। বোমা হামলার সেই ঘটনায় সেদিন ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারিয়েছিলেন ৯ জন এবং পরে হাসপাতালে আরো একজন মৃত্যুবরণ করেন। আর হতাহতের সংখ্যা ছিল অনেক। হতাহতের মধ্যে সেদিন শিল্পী, সাহিত্যিক, সংস্কৃতিকর্মীসহ বর্ষবরণ উদযাপন অনুষ্ঠান উপভোগ করতে আসা মানুষের সংখ্যাই ছিল বেশি। ঘটনার পর পরই রাজধানীর নীলক্ষেত পুলিশ ফাঁড়ির সার্জেন্ট অমল চন্দ্র চন্দ রমনা থানায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুটি মামলা করেছিলেন। সেই মামলার নিষ্পত্তি হলো ২০১৪ সালে এসে। পেছনের দীর্ঘ ১৩ বছর বিচারের বাণী নীরবে নিভৃতে কেঁদেছে। স্বজন হারানো মানুষ বিচার চেয়েছে, হতাহত মানুষ বিচার চেয়েছে, কিন্তু বিচার হয়নি। বিভিন্নভাবে বিলম্বিত করা হয়েছে বিচার প্রক্রিয়া। সাক্ষীর অভাব এবং ঘটনা ভিন্ন খাতে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা থেকেই দীর্ঘদিন থমকে থাকে বিচার প্রক্রিয়া।
ঘটনার মোড় অন্যদিকে ঘুরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করা হয়। মামলার তদন্ত কাজেও বিভিন্নভাবে সময় নষ্ট করা হয়। বিএনপি-জামায়াত জোটের চারদলীয় সরকারের ২০০১ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত সময়ের প্রায় পুরো পাঁচ বছরই স্থগিত রাখা হয় এ মামলার কার্যক্রম। বারবার পরিবর্তন করা হয় তদন্ত কর্মকর্তা। বাধাগ্রস্ত করা হয় তদন্ত কার্যক্রম। ২০০৬ সালের পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে ক্ষমতায় আসে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার। ওই সরকারের আমলেই রমনা বটমূলে ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে বোমা হামলার রহস্য উদ্ঘাটিত হয়। ঘটনার প্রায় ৮ বছর পর ২০০৮ সালের ২৯ নভেম্বর হরকাতুল জিহাদ নেতা মুফতি আব্দুল হান্নানসহ ১৪ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দাখিল করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। ২০০৯ সালের ১৬ এপ্রিল ১৪ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ (চার্জ) গঠন করেন আদালত। পরবর্তীকালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে গঠিত মহাজোট সরকার মামলাটি দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য ঢাকার এক নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠালেও আইনি জটিলতায় মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল থেকে ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতে স্থানান্তরিত হয়। তারপর দীর্ঘ শুনানি প্রক্রিয়া, সাক্ষীদের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে আদালত রায় ঘোষণা করেছেন চাঞ্চল্যকর এই মামলার। এ মামলার অভিযোগপত্রে বলা হয়েছিল, আফগানিস্তানে তালেবানের পক্ষে যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী আধুনিক অস্ত্রশস্ত্র চালানোয় পারদর্শী মুফতি হান্নান মুন্সি, মুফতি শফিকুর রহমান, মাওলানা আবদুর রউফ, মাওলানা শওকত ওসমান ওরফে শেখ ফরিদ, মাওলানা নূর উদ্দিন নুরুল্লাহ, মাওলানা আবু সাঈদসহ কতিপয় ব্যক্তি আফগান যুদ্ধ শেষে বাংলাদেশে ফেরত এসে ‘হরকাতুল জিহাদ বাংলাদেশ’ নামে একটি মৌলবাদী সংগঠন সৃষ্টি করে। এরা বাংলাদেশের অভ্যন্তরে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বোমা বিস্ফোরণের মাধ্যমে লোকজনকে হতাহত করে দেশে অস্থির পরিস্থিতি সৃষ্টি ও তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারকে অস্থিতিশীল করার জন্য কোটালীপাড়ায় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর জনসভায় শক্তিশালী বোমা পেতে রাখা, যশোরে উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর অনুষ্ঠানে বোমা বিস্ফোরণ ঘটানোসহ নানা ধরনের ধ্বংসাত্মক কাজে লিপ্ত হয়। পরবর্তীকালে তারা সিলেটে শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টা, ডা. রিফাতের বাসায় বোমা বিস্ফোরণ, ব্রিটিশ হাইকমিশনারের ওপর গ্রেনেড হামলা, মেয়র কামরান, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, শাহ এমএস কিবরিয়া, জেবুন্নেছা হক এবং ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ঘটনা ঘটায়। রমনা বটমূলে বোমা হামলা মামলার তিনজন আদালতে নিজেদের দোষ স্বীকার করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। আর রায়ের পর্যবেক্ষণে বিচারক বলেছেন, ‘নিছক ত্রাস সৃষ্টি ও দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির লক্ষ্যেই বাঙালি জাতির এ মিলনমেলায় হামলা চালানো হয়েছিল।’ বাঙালি জাতি ধর্ম, বর্ণ, মতাদর্শ নির্বিশেষে চিরন্তনভাবে বাংলা সনের প্রথম দিন পহেলা বৈশাখ পালন করে। দিবসটি ধর্মীয়, গোত্রীয়, সামাজিক-সব সীমা অতিক্রম করে সব বাঙালিকে একই সূত্রে আবদ্ধ করে। ছায়ানট ষাটের দশক থেকে রমনা বটমূলে পহেলা বৈশাখ উদযাপন করে আসছে উল্লেখ করে পর্যবেক্ষণে আরো বলা হয়, ‘এ অনুষ্ঠানের কোন পর্যায়ে কোন ব্যক্তি, গোষ্ঠী, ধর্ম বা রাজনৈতিক মতাদর্শের বিরুদ্ধে কোনো প্রচারণা থাকে না। এটি একটি সর্বজনীন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সুতরাং এ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারীদের সঙ্গে কারো বিরোধ থাকার কথা নয়।’ বিচারক আরো বলেন, ‘সারাদেশে পহেলা বৈশাখ পালিত হলেও রমনা বটমূলে ছায়ানটের বর্ষবরণের আবেদন অনেক বেশি। লোক সমাগমও হয় বেশি।’
রায়ের পর্যবেক্ষণে আরো বলা হয়, ‘বাংলাদেশের বিভিন্ন সময় বোমা হামলা হয়েছে। এর কোনোটির লক্ষ্য ছিল রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, কখনো কূটনৈতিক ব্যক্তিত্ব, কখনো কোনো সরকারি পদস্থ কর্মকর্তা, কখনো বিচারক, আদালত কিংবা আইনজীবী। কিন্তু রমনা বটমূলে বোমা হামলায় কোনো রাজনৈতিক, সামাজিক, ধর্মীয়, আদর্শিক বা ব্যক্তিগত দ্বন্দ্বের বিষয়টি মামলাটির বিশ্লেষণে পাওয়া যায়নি। হামলাকারীরা নিছক ত্রাস সৃষ্টি, জনমনে আতঙ্ক ছড়ানো ও দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির লক্ষ্যেই বাঙালি জাতির এ মিলনমেলায় হামলা করা হয়েছে; যা ছিল নৃশংস, নির্মম, বর্বর, জঘন্য ও ক্ষমার অযোগ্য।’
পর্যবেক্ষণে আরো বলা হয়, ‘এটি একটি সূত্রবিহীন হত্যাকাণ্ড।’ মামলাটি দীর্ঘদিন তদন্ত না হওয়ায় হত্যাযজ্ঞের কোনো রহস্য হয়নি। মওলানা আকবর গ্রেফতার হওয়ার পর মামলার জট খুলতে শুরু করে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা তথা জাতি হত্যাকাণ্ডের মোটিভ সম্বন্ধে ধারণা পায়। এ মামলার অন্যতম আসামি আরিফ হাসান সুমনের বোমা হামলার সঙ্গে সরাসরি জড়িত ছিল মর্মে বক্তব্য পাওয়া যায়। ভবিষ্যতের নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য আদালতের এই পর্যবেক্ষণকে আমাদের গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় আনতে হবে। রমনার বটমূলে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে বোমা হামলা মামলার রায় ঘোষণার পর পরই আসামি পক্ষের আইনজীবী বলেছেন, মামলার রায়ে তারা খুশি নন। এর বিরুদ্ধে তারা আপিল করবেন। অন্যদিকে সরকারি পক্ষের আইনজীবীও ছয়জনকে যাবজ্জীবন দেয়ার ঘটনায় আপিল করবেন বলে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। এ ক্ষেত্রে আমাদেরও কথা রয়েছে। আমরাও এই মামলার আরো অধিকতর তদন্ত আশা করেছিলাম। কারণ যাদের বিরুদ্ধে আদালত রায় দিয়েছেন, তাতে আমরা সন্তুষ্ট। কিন্তু এই হত্যাকাণ্ডের পেছনে যারা ইন্ধন জুগিয়েছে, যারা জঙ্গিবাদকে মদদ দিয়েছে; তাদেরও বিচার হওয়া প্রয়োজন। তাদেরও চিহ্নিত করা প্রয়োজন।
ইতোপূর্বে কোনো কোনো মহল থেকে বলা হয়েছিল, বিভিন্ন সময় জঙ্গিদের বোমা হামলার ঘটনাগুলোর পেছনে আওয়ামী লীগের হাত রয়েছে। তাদের সেই উক্তি যে অন্তঃসারশূন্য এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, রমনার বোমা হামলা মামলার রায়ে তা উদ্ঘাটিত হয়েছে। অনেকটাই স্পষ্ট হয়েছে, কারা এসব জঘন্যতার সঙ্গে জড়িত। কারা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে মামলাগুলো ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করেছিল। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে যে কয়েকটি জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটেছে, তা মূলত সরকারকে বিব্রত করা, সরকারকে চাপে রাখা, সুষ্ঠুভাবে দেশ পরিচালনা করতে না দেয়ার উদ্দেশ্য থেকে করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে অনেকেই বিষয়গুলো বুঝতে পারেননি। অথচ আজ এ কথা স্পষ্ট যে, ১৯৯৬-২০০১ সালে আওয়ামী লীগ সরকার দায়িত্ব পালন করে। ওই সময়ে যখন একটি নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রক্রিয়া শুরু হবে, তখনই পরিকল্পিতভাবে সারাদেশে জঙ্গিদের মদদ দিয়ে সরকারকে বিব্রত করার চেষ্টা করা হয়। ছায়ানটের বর্ষবরণ, সিপিবির সমাবেশে বোমা হামলাসহ বিভিন্ন স্থানে যে হামলাগুলো হয়েছিল তার সবই ছিল পরিকল্পিত। কিন্তু রাজনৈতিক মহল বিষয়টি বুঝতে ভুল করেছিল। আর সেই ভুলের সুযোগ গ্রহণ করে বিরোধীপক্ষ। পরবর্তীকালে ২০০১ সালের অক্টোবরের নির্বাচনের পর যারা রাষ্ট্রক্ষমতায় আসে, তারা পরিকল্পিতভাবেই সমর্থন দিতে থাকে এসব জঙ্গিকে। ফলে ২০০১-২০০৬ সালে রাষ্ট্রের পৃষ্ঠপোষকতায় সেই পরিকল্পিত হামলাগুলোর ধারাবাহিকতা চলতে থাকে। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার শুধু রাজশাহীতেই নয়, সারাদেশেই মৌলবাদী গোষ্ঠীগুলোকে উসকে দিতে থাকে। ফলে রক্তের হোলিখেলা শুরু করে জঙ্গিগোষ্ঠীগুলো। একের পর এক বোমা হামলার প্রাণ হারায় অনেক মানুষ। আদালতের রায়ের মাধ্যমে আমরা রমনার বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে বোমা হামলা মামলার প্রাথমিক ধাপ পার হয়েছি। এখন একই সঙ্গে আমাদের নিশ্চিত হওয়া জরুরি যে, আবহমানকাল থেকে চলে আসা বাঙালি সংস্কৃতির অন্যতম অংশ পহেলা বৈশাখ উদযাপনে কাদের গাত্রদাহ শুরু হয়? কারা আমাদের ইতিহাস-ঐতিহ্যকে মুছে ফেলতে চাইছে? কারা সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প ছড়িয়ে দিতে চাইছে? কারা আমাদের শিকড়ের সঙ্গে সম্পর্ক শেষ করে দিতে চাইছে? কারণ প্রকাশ্য শত্রুর শত্রুতার চেয়ে গোপন শত্রু অনেক বেশি ভয়ঙ্কর। ছায়ানট সেই ষাটের দশক থেকে রমনা বটমূলে বাঙালির বর্ষবরণ উৎসব পহেলা বৈশাখ উদযাপন করছে। এ উৎসব বাঙালির নিজস্ব। এখানে নেই ধর্ম-বর্ণের ভেদাভেদ। সব শ্রেণী-পেশার মানুষের মিলিত অংশগ্রহণের মাধ্যমে পালিত হয় বর্ষবরণ উৎসব। আমাদের সংস্কৃতির এই ধারাবাহিকতাকে কাদের প্ররোচনায় স্তব্ধ করে দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল আর কেনই বা দীর্ঘদিন এই জঘন্য অপরাধের বিচার প্রক্রিয়াকে বিভিন্নভাবে বাধাগ্রস্ত করা হয়েছে, তাও উঠে আসা প্রয়োজন।
একই সঙ্গে আমরা আশা করব, এই মামলার রায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত এবং অন্য যেসব আসামি পলাতক রয়েছে, তাদের অবিলম্বে গ্রেফতার করার উদ্যোগ নিতে হবে। যদি তারা বিদেশে পালিয়ে থাকে, তাহলে তাদের ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নিতে হবে, তারা কোথায় আছে তা শনাক্ত করে তাদের ফিরিয়ে আনার প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। নি¤œ আদালতের এই রায়ের বিরুদ্ধে যেহেতু আসামি এবং রাষ্ট্র উভয়পক্ষ উচ্চ আদালতে আপিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সে ক্ষেত্রে উচ্চ আদালতের বিচারিক প্রক্রিয়া শেষ করে অপরাধীকে তার যথোপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। রমনার বোমা হামলার মতো জঘন্য এবং বর্বরোচিত অপরাধের শাস্তি যত দ্রুত নিশ্চিত করা সম্ভব হবে, তত তা আমাদের জন্য মঙ্গল বয়ে আনবে। কারণ অপরাধীর শাস্তি নিশ্চিত হলে, ভবিষ্যতে এ ধরনের অপরাধ প্রক্রিয়ায় জড়িয়ে পড়ার আগে অপরাধী দ্বিতীয়বার ভাবতে বাধ্য হবে। কোনো বিবেকবান মানুষই চাইবেন না, এ ধরনের নৃশংসতা ও জঘন্যতার পুনরাবৃত্তি হোক। তাই আমাদের বিচারিক ইতিহাসে মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত রমনার বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে বোমা হামলার রায় দ্রুত কার্যকরের উদ্যোগ নিতে হবে। সেই সঙ্গে থমকে থাকা সব বোমা ও গ্রেনেড হামলার বিচার প্রক্রিয়া দ্রুত শেষ করে অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। একই সঙ্গে জঙ্গিবাদ এবং অপরাজনীতির ধারাকে চাঙ্গা করতে যারা এসব অপশক্তিকে বিভিন্ন সময় মদদ দিয়েছে, তাদের পৃষ্ঠপোষকতা করেছে তাদের শিকড়সমেত উপড়ে ফেলতে হবে। জামায়াত-বিএনপি জোট সরকারের সময়ে মৌলবাদী জঙ্গিগোষ্ঠা মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে। অথচ সে সময় এদের শক্ত হাতে দমন না করে বিভিন্নভাবে তাদের সাহায্য-সহযোগিতা করা হয়। বলা হতে থাকে এসব মিডিয়ার সৃষ্টি। বাংলাভাই বা জঙ্গিদের কোনো অস্তিত্ব নেই। আজ এই রায়ের মাধ্যমে যেমন প্রমাণিত হয়েছে জঙ্গিগোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে কাদের সম্পৃক্ততা, তেমনিভাবে এখনই এসব জঙ্গির মূল থেকে নির্মূল করার উদ্যোগ নিতে হবে, অন্যথায় এরা আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে। আজ তো নিশ্চিত জঙ্গিরা পরিকল্পিতভাবেই এ হামলা চালিয়েছিল। আতঙ্ক সৃষ্টির মাধ্যমে বাঙালির ঐতিহ্য-উৎসবের আয়োজন বন্ধ করাই ছিল তাদের উদ্দেশ্য। তাদের সে উদ্দেশ্য সফল হয়নি। রমনার বটমূলে ২০০১ সালের পহেলা বৈশাখে ওই নৃশংসতা আমাদের স্তব্ধ করে দিতে পারেনি। মানুষকে ঘরে আটকে রাখতে পারেনি। এখনো মানুষ প্রতি বছর বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে প্রাণের তাগিদে ছুটে আসে রমনার বটমূলে। তাই আজ আর কোনো দলীয় দৃষ্টিকোণ অথবা রাজনৈতিক কারণে অপরাধীকে ছাড় না দিয়ে বরং বিচারের মাধ্যমে অপরাধীর যথোপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত করার উদ্যোগ নিতে হবে। আর এর মাধ্যমেই কেবল জঙ্গিবাদ এবং সন্ত্রাস নির্মূল করা সম্ভব। ভবিষ্যতের বাংলাদেশকে নিরাপদ রাখতে, আমাদের ইতিহাস-ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতির ধারাকে অব্যাহত রাখতে, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার যে প্রত্যয় মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে আমরা ঘোষণা করেছিলাম, সেই চিন্তা-চেতনাকে সমুন্নত রাখার প্রয়োজনেই আমাদের দৃঢ় হতে হবে। কঠোর হতে হবে শুভবুদ্ধিসম্পন্ন সবাইকে স্বাধীনতা এবং সংস্কৃতির ধারাবাহিকতার কাতারে একত্র করতে হবে। যাতে করে বাঙালির ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিবিরোধীরা আর মাথাচাড়া দিয়ে না উঠতে পারে।
©somewhere in net ltd.
১|
২৬ শে জুন, ২০১৪ সকাল ৯:৫৭
বুড়া শাহরীয়ার বলেছেন: Awami Leaguer sontrashi ar Awami Leaguer Jongi der ke fuler tora diye boron kora hok.