নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মন্ত্রক

আমি আমার দেশের জন্যে

মন্ত্রক › বিস্তারিত পোস্টঃ

সুষমার ঢাকা সফর

০১ লা জুলাই, ২০১৪ সকাল ১০:৪৬

ভৌগোলিকভাবে বাংলাদেশের অবস্থান ভারতবেষ্টিত বলে উভয় রাষ্ট্রের নানা রকমের সুবিধা ও অসুবিধা কণ্ঠলগ্ন বলা যায়। এই সুবিধা-অসুবিধা কিংবা সমস্যার পশ্চাতের ইতিহাসও দীর্ঘদিনের। ‘দীর্ঘদিনের সৃষ্ট সমস্যা সহজেই সমাধান সম্ভব নয়’- এমন প্রশাসনিক বক্তব্য বা প্রেসনোটের সঙ্গেও আমাদের পরিচয়ের ইতিহাস অনেককালের। এ রকম প্রেসনোট বা সরকারি বক্তব্য-ভাষ্য সম্পর্কে মূলত উভয় দেশের জনগণই পরিচিত। বাস্তবত সমস্যার সমাধান জটিল ও কঠিন। কেননা এসব সমস্যার মর্মমূলে বিস্তৃত নানা মাত্রিকতা। সেসবের মূলোৎপাটন সহজসাধ্য নয়। আবার চাণক্য-কৌশলের ‘রাজনীতি’ বাদ দিয়ে মানবিক ও ‘বন্ধুত্ব’সুলভ মনোভাব নিয়ে আলোচনার মাধ্যমে কোনও সমস্যার সমাধান যে একেবারে অসম্ভব তাও নয়। বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের বিদ্যমান সমস্যা সমাধান করতে হলে উভয়পক্ষকেই রাজনীতির ধূম্রজাল থেকে বেরিয়ে এসে বন্ধুত্বপূর্ণ বিশ্বাস ও আস্থাকে প্রাধান্য দিয়ে এক টেবিলে যাকে বলে একেবারে ‘খোলা মন’ নিয়ে আলোচনায় বসতে হবে। আর এ বিষয়ে বৃহত্তম দেশ ও প্রতিবেশী হওয়ায় ভারতের ওপরই নৈতিক দায় বেশি অর্পিত হয়। প্রশাসনিকভাবেও আবার ভারতের জটিলতা বাংলাদেশের প্রশাসন ব্যবস্থাপনা থেকে অনেকটা বেশি। রাজ্য সরকারের সম্মতি-অসম্মতির ওপর সে দেশের কেন্দ্রীয় সরকারের অনেক সিদ্ধান্তই ঝুলে থাকে বছরের পর বছর ধরে। বাংলাদেশ ভারতের কাছ থেকে এ ধরনের আচরণের শিকার হয়েছে বহুবার। ভারতের সদ্য বিদায়ী কংগ্রেস সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্ত পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল রাজ্য সরকার আমলে নেয়নি বলে আওয়ামী লীগের বিগত মেয়াদের শাসনকালে একাধিক চুক্তি ও প্রটোকল কথিত রাজনীতির চাণক্য কৌশলের জন্যই বাস্তবায়নের মুখ দেখতে পারেনি।

ভারতের নতুন সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ ‘বন্ধুত্বের বার্তা’ নিয়ে সম্প্রতি বাংলাদেশ সফর করে গেলেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে সুষমা স্বরাজের এটিই কোনও একক বিদেশ সফর। আর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি প্রতিবেশীর সঙ্গে সুসম্পর্ক রক্ষা ও সম্পর্ক উন্নত করার প্রত্যয়ে প্রথম বিদেশ সফর হিসেবে বেছে নিয়েছেন ভুটানকে। দৃশ্যত মোদি এবং সুষমার বর্ণিত সফর দুটির মধ্যে প্রতিবেশীর প্রতি গুরুত্ব ও প্রতিবেশীকে মর্যাদাদানের বিষয়টি বৃহত্তর রাষ্ট্র ভারত প্রদর্শন করতে সক্ষমতা দেখিয়েছে। সুষমা স্বরাজ স্পষ্টই বলেছেন, বাংলাদেশের সঙ্গে বিদ্যমান চিহ্নিত সমস্যাগুলো সমাধানে তার সরকার আন্তরিক। এই দৃশ্যের অন্তরালে কী আছে জানি না। কেন্দ্রীয় সরকারের আন্তরিকতাকে পশ্চিমবঙ্গের মমতার সরকার আমলে নেবে কি না আমরা তাও জানি না। নির্বাচনের সময় মোদিবিরোধী প্রচারণায় মমতাকে বাংলাদেশিদের প্রতি বন্ধুত্বপূর্ণ ও মমতাময়ী মনে হলেও তিস্তার পানি বণ্টনসহ অনেক বিষয়ে তার মমতাময়ী রূপ আমরা দেখতে পাইনি। অথচ মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার প্রাক্কালে বাংলাদেশের মানুষ তার ওপর অকুণ্ঠ আস্থা ও বিশ্বাস দুই-ই স্থাপন করেছিল। বাংলাদেশের মানুষ দুঃখ পেয়েই সে জায়গা থেকে সরে এসেছে। তাই সুষমা স্বরাজের প্রতিশ্রুতির নেপথ্যে এ দেশের মানুষকে মমতার চাণক্য-নীতির সম্ভাব্য ছায়া কিছুটা হলেও শঙ্কিত করে তুলছে। কারণ কেন্দ্র একা চাইলেও সংশ্লিষ্ট রাজ্যের সীমানা-যুক্ত প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তি বা প্রটোকল বাস্তবায়নে রাজ্যের সদিচ্ছা প্রয়োজন। কংগ্রেস শাসনামলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তা প্রমাণ করে ছেড়েছেন।

দক্ষিণ এশিয়াকেন্দ্রিক মোদির আঞ্চলিক সহযোগিতা, উন্নয়ন ও বন্ধুত্বের বার্তা নিয়ে এসে তিন দিনের সফর শেষে বিদায়ের সময় সুষমা স্বরাজ পারস্পরিক বন্ধুত্ব ও সহযোগিতার ‘চমৎকার সূচনা’ বলে উল্লেখ করেছেন। আবার বিএনপি নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আলোচনা এবং সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার সময়ও অভিজ্ঞ এই মন্ত্রী বলেছেন, তার সরকার কোনও দল বা গোষ্ঠী নয় জনগণের সঙ্গে- তথা সরকারের সঙ্গে সহযোগিতার সম্পর্ক অক্ষুণœ রেখে সামনের দিকে এগোতে চায়। মূলত এ রকম একটি বার্তাও আমরা সুষমার সফর থেকে পাই। আঞ্চলিক যোগাযোগ বৃদ্ধির মাধ্যমে প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর ন্যায়ভিত্তিক অংশীদারিত্ব নিশ্চিত করার বিষয়ে নরেন্দ্র মোদি সরকারের আগ্রহ থেকেই আপাত অর্থে মোদি এবং তার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাম্প্রতিক কালের ভুটান ও বাংলাদেশ সফরকে বিবেচনা করা যেতে পারে।

ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সমস্যাগুলোর সমাধানে ভারতের পক্ষ থেকে সুষমার এই সফরে আমরা পুনরায় আশ্বাস পেলাম। এই আশ্বাস বাস্তবতায় পরিণত করার লক্ষ্যে উভয় সরকারের আন্তরিকতা প্রয়োজন। আমরা আগেই বলেছি, রাজনীতির চুলচেরা বিশ্লেষণ কিংবা কূটবুদ্ধির গভীরতা নিয়ে বিদ্যমান সমস্যা সমাধানে অগ্রগতি লাভ করা যাবে না। খোলা মন নিয়ে আলোচনায় উভয় দেশের বিদ্যমান সংকট থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব। বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষা এবং সম্পর্কের উন্নয়ন তখনই ফলপ্রসূ হবে যখন এ দেশের মানুষের সত্যিকার মর্মবেদনার জায়গাটি ভারত সরকার মনন দিয়ে উপলব্ধির চেষ্টা করবে। প্রতিবেশীর যথাযোগ্য মর্যাদা ও ন্যায়সঙ্গত অধিকার প্রদান করলে ক্ষমতাসীন মোদি সরকার প্রকৃতই আঞ্চলিক সহযোগিতা বৃদ্ধির মাধ্যমে শক্তিশালী দক্ষিণ এশিয়া গড়ে তুলতে সক্ষম হতে পারবে। এ জন্য রাজনীতির চেয়ে বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণই হতে হবে মুখ্য অবলম্বন। প্রতিবেশী সব রাষ্ট্রকে নিয়ে একযোগে এগিয়ে যেতে পারলে ভারতে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে- সেই শান্তির সুবাতাস আশপাশেও ছড়িয়ে পড়বে। শান্তি প্রতিষ্ঠার এই সংগ্রামে ভারতের বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণের দিকেই আমরা তাকিয়ে থাকলাম।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.