![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
রাজশাহী জেলার প্রত্যন্ত গ্রাম বাজিতপুরের দরিদ্র শামসুল হকের ছেলে জিয়াউল হক। পারিবারের আর্থিক সংকট এবং নিজের শারীরিক প্রতিবন্ধিতায় এসএসসি পাসের পর আর পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি তার। একটি সড়ক দুর্ঘটনায় হাত এবং পায়ের মারাত্মক ক্ষতি হলে ৩২ বছরের তরুণ জিয়াউল হকের জীবনের শুরুটাই চরম অনিশ্চয়তায় পড়ে। ভবিষ্যৎ জীবন নিয়ে হতাশ এ যুবক স্থানীয় হুজুরীপাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফার সহায়তায় ইউনিয়ন তথ্য ও সেবা কেন্দ্রে উদ্যোক্তা হিসেবে কাজ শুরু করে মোড় ঘুরিয়ে ফেলেন। ২০১২ সালের নভেম্বর থেকে কাজ শুরু করার পর জিয়াউল হক এখন আর হতাশ বেকার যুবক নয়। সে এখন এই এলাকার তরুণ যুবাদের আদর্শে পরিণত একজন। শুধু জিয়াউল হক নয়, দেশের প্রতিটি ইউনিয়নে এমন হাজারো তরুণ তরুণী উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। একই সঙ্গে সরকারের সব সেবাকে পৌঁছে দিয়েছেন জনগণের দোরগোড়ায়। জনগণের সব ধরনের নাগরিক সেবা পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে মাত্র সাড়ে চার বছর আগে সরকার শুরু করে একসেস টু ইনফরমেশন প্রকল্প (এটুআই)। ইউনিয়ন তথ্য ও সেবাকেন্দ্র থেকে শুরু এ প্রকল্পের কার্যক্রম এখন উন্নয়নশীল বিশ্বের দেশসমূহের জন্য উদাহরণ। অনলাইনের মাধ্যমে ইউনিয়ন পর্যায় থেকে প্রশাসনের সর্বোচ্চ দফতরসমূহের সেবার পরিধি বাড়ানো, মাল্টিমিডিয়া শ্রেণীকক্ষসহ সকল স্তরের শিক্ষা ব্যবস্থার আধুনিকায়নসহ নানা পদক্ষেপে প্রতি মূহূর্তে বদলে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এটুআইর কর্মসূচির ধারাবাহিক সাফল্যে কার্যক্রমের বৈশ্বিক স্বীকৃতি হিসেবে ২০১৪ সালে ইন্টারন্যশনাল টেলিকমিউনিকেশন্স ইউনিয়নের ওয়ার্ল্ড সামিট অন ইনফরমেশন সোসাইটি অ্যাওয়ার্ড লাভ করে বাংলাদেশ।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আওতাধীন এটুআই প্রকল্পের দাফতরিক তথ্যানুযায়ী, ২০১০ সালের ১১ নভেম্বর দেশের সব ইউনিয়ন পরিষদে (৪৫৪৭) চালু করা হয়েছে ইউনিয়ন তথ্য ও সেবাকেন্দ্র (ইউআইএসসি)। প্রতি মাসে গড়ে ৪০ লাখ মানুষ এসব কেন্দ্র থেকে সরকারি-বেসরকারি ও বাণিজ্যিক তথ্য ও সেবা নিচ্ছে। সেবা প্রদান করে ইউআইএসসি উদ্যোক্তাদের এ পর্যন্ত আয় ১৪০ কোটি টাকার ওপর। গত সাড়ে চার বছরে এসব তথ্য ও সেবাকেন্দ্র থেকে এ পর্যন্ত সাড়ে ১১ কোটি (৭ কোটি অনলাইন জন্ম নিবন্ধন) সেবা প্রদান করা হয়েছে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. প্রদীপ কুমার পান্ডের মতে, স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রমগুলোকে গতিশীল করার পাশাপাশি গ্রামীণ দরিদ্র জনগোষ্ঠীর ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে ইউনিয়ন তথ্যসেবা কেন্দ্র গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। তবে একে আরো অধিক কার্যকরী করার জন্য গ্রামীণ জনগোষ্ঠীকে সচেতন করা দরকার। এক্ষেত্রে গণমাধ্যমসহ জনপ্রতিনিধিরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারেন।
এটুআই প্রকল্প সংশ্লিষ্ট তথ্যমতে আরো জানা গেছে, গ্রামীণ জনগোষ্ঠী ইউনিয়ন তথ্যসেবা কেন্দ্রে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, চিকিৎসা, কৃষি আইনগত সেবাসহ নানা ধরনের সেবা পাচ্ছে। এসব কেন্দ্রে কম্পিউটার কম্পোজিং থেকে শুরু করে সরকারি, বেসরকারি বিভিন্ন বিদ্যালয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি সংক্রান্ত তথ্যাদি, জন্ম নিবন্ধন, পাসপোর্ট ও ভিসা আবেদন, জীবন বীমা, মোবাইল ব্যাংকিং, মাটি পরীক্ষা ও সারের সুপারিশ, বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ, অভিজ্ঞ ডাক্তারি পরামর্শসহ দৈনন্দিন নানা সেবা পাওয়া সম্ভব হচ্ছে।
রাজশাহী জেলার পবা উপজেলা নির্বাহী অফিসার রাজ্জাকুল ইসলাম বলেন, উপজেলা পর্যায়ের সেবা সম্পর্কিত অনেক তথ্য এখন ইউনিয়ন পরিষদের তথ্য কেন্দ্র থেকে পাওয়া যাচ্ছে যা জনগণের কাজে লাগছে। আমার উপজেলায় হুজরীপাড়াসহ বড়গাছি, দামকুড়া ও হড়গ্রাম ইউনিয়ন পরিষদ নাগরিক সেবায় মডেল হয়ে উঠেছে।
এটুআই প্রকল্পের সহায়তায় সারাদেশে প্রায় ৩০ হাজার মাল্টিমিডিয়া শ্রেণীকক্ষে ডিজিটাল ডিভাইসের মাধ্যমে পাঠদানে সহায়তা করা হচ্ছে। এ ব্যবস্থার সঙ্গে শিক্ষার্থীরা অভ্যস্ত হয়ে পড়ায় শিক্ষার্থীদের ফলাফলও ভালো হচ্ছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
১৯২৮ সালে প্রতিষ্ঠিত রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনে অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী সরকারি পিএন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য পরিচালিত হচ্ছে ৪টি মাল্টিমিডিয়া শ্রেণীকক্ষ। মাল্টিমিডিয়া পদ্ধতিতে পাঠদানের কারণে শিক্ষার্থীদের কি সুবিধা হচ্ছে এমন প্রশ্নে এ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীর ছাত্রী মুসফিকা বিনতে আমিন বলেন, মাল্টিমিডিয়া ক্লাসে যত দ্রুত পাঠের বিষয় বোঝা যায়, একই বিষয়ের সাধারণ ক্লাসে তেমনটা বোঝা যায় না। যেমন জীববিজ্ঞানের মাল্টিমিডিয়া ক্লাসে প্রাণীকোষ পড়ানো হলে শিক্ষক বিভিন্ন ধরনের কোষের ত্রিমাত্রিক ছবি দেখাতে পারেন। প্রয়োজনে ভিডিও কনটেন্ট বা কোষের গঠন প্রকৃতির চলচ্চিত্র দেখাতে পারেন। ফলে একটি বা দুটি ক্লাসে কোষ নিয়ে শিক্ষার্থীদের যে ধারণা হবে, তা সাধারণ ক্লাসে দেয়া সম্ভব নয়।
তবে এক্ষেত্রে কিছু সীমাবদ্ধতার কথা জানালেন এই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা সাহারা খানম। তিনি জানান, পূর্বের পাঠদান পদ্ধতির চাইতে স্বাভাবিকভাবেই মাল্টিমিডিয়া শ্রেণীকক্ষের পাঠদান পদ্ধতি শিক্ষক এবং শিক্ষার্থী বান্ধব। কিন্তু এই পদ্ধতিতে কিছু সীমাবদ্ধতাও রয়েছে। বাকি সবকিছু মোটামুটি ঠিক থাকলেও ইন্টারনেটের গতি (স্পিড) কম থাকায় কাজের ক্ষেত্রে সমস্যায় পড়তে হয় বলে জানালেন তিনি।
এদিকে আগে ১ মাস থেকে ৬ মাস বা ততোধিক সময় লাগলেও বর্তমানে জাতীয় ই-তথ্য সেবার মাধ্যমে মাত্র তিনদিনেই জমির পর্চা পাচ্ছেন রাজশাহী জেলার সাধারণ নাগরিকরা। পরীক্ষামূলক পর্যায়ে সারাদেশের পাঁচটি বিভাগীয় দফতরে এ সেবা চাল রয়েছে। এই সেবাটি পর্যায়ক্রমে দেশের সব জেলা-উপজেলায় প্রবর্তিত হওয়ার প্রক্রিয়ায় রয়েছে। একসেস টু ইনফরমেশন প্রোগ্রামের (এটুআই) যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ হাসান বেনাউল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এটুআই পরিচালিত জাতীয় ই-সেবা সিস্টেমের আওতায় এ সেবা নিশ্চিত করা হবে।
©somewhere in net ltd.