![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ঈদের পর নতুন করে সরকারবিরোধী আন্দোলনের ডাক দিয়েছে বিএনপি। এজন্য নেতাকর্মীদের প্রস্তুত হওয়ার আহ্বানও জানানো হয়েছে দলটির পক্ষ থেকে। বিভিন্ন সভা-সমাবেশে দলটির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ সিনিয়র নেতারা ঈদের পর সরকারবিরোধী কঠোর আন্দোলনের কথা বলে মাঠ গরম করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
গত কয়েক বছর যাবত দলটির নেতারা রোজার আগ থেকেই ঈদের পরে আন্দোলন এমন ঘোষণা দিয়ে আসছেন। কিন্ত ঈদের পরে ঘোষিত সে আন্দোলন আর হয় না। এবারের ঘোষণাকেও স্রেফ সেভাবেই দেখছেন দলীয় নেতাকর্মীরা। অনেকে আবার রহস্য করে বলছেন, কোন ঈদ? ঈদুল ফিতর না ঈদুল আজহা? আওয়ামী লীগের এক নেতা তামাশা করে বলেছেন, এই ঈদের পরও আরো অনেক ঈদ আছে। বিএনপি নেত্রী সেই ঈদের কথা বলেছেন।
অবশ্য বিএনপির এ আন্দোলনের ঘোষণাকে দলীয় নেতাকর্মীদের মতো আমলে নিচ্ছে না শাসক দল আওয়ামী লীগও। আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, এগুলো তাদের বাগাড়ম্বর বা ফাঁকা আওয়াজ। এগুলো লোক দেখানো। আসলে বিএনপির আন্দোলনের কোনো শক্তি নেই। যেটা ইতোপূর্বে প্রমাণিত হয়েছে। বিএনপির অনেক নেতাই ঈদের পর আন্দোলন, এমন ঘোষণা নিয়ে হিসাব মেলাতে পারছেন না। তাদের মধ্যেই প্রশ্নের উদ্রেগ হয়েছে; আন্দোলনের সফলতা নিয়েও রয়েছে সন্দেহ-অবিশ্বাস। তারা বলছেন, আওয়ামী লীগের বিগত সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন ব্যর্থ হয়েছে বিএনপি। এজন্য প্রথম সারির নেতাদের দায়ী করা হয়। দাবি ওঠে, ব্যর্থদের সরিয়ে দেয়ার। যেসব নেতাদের কারণে আন্দোলন ব্যর্থ হয়েছে তাদের নেতৃত্বে রেখে সরকারবিরোধী আন্দোলন কী সফল করা যাবে? এমন প্রশ্ন এখন দলের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে।
এমন প্রেক্ষপটে দলীয় নেতাদের সঙ্গে আলোচনায় খালেদা জিয়া সর্বস্তরে দলের পুনর্গঠনের কথা বলেছিলেন। পুনর্গঠনের পরই আন্দোলন জোরদার করার কথাও বলেছিলেন। এ ব্যাপারে কোনো কোনো ক্ষেত্রে সময় সীমাও নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছিল। কিন্ত দল পুনর্গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হয়ে হঠাৎ করেই থমকে যায়। শুরু হয় বিশৃঙ্খলা। দল এখন রয়েছে অনেকটা হ য ব র ল অবস্থায়।
এ অবস্থায় দল গোছানোর প্রক্রিয়াতেই বেশি জোর দেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। পাশাপাশি কর্মীদের উদ্দীপ্ত করতে আন্দোলন শুরুর বিষয়টি এসেছে বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। আন্দোলন কর্মসূচি সম্পর্কে তিনি বলেন, দমনপীড়নের মধ্যেও সশস্ত্র শক্তির সঙ্গে নিরস্ত্র জনগণ আন্দোলন-সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে। প্রতিনিয়ত জনগণের ওপর গুলিবর্ষণ করা হচ্ছে। সরকারের অন্যায়ের বিরুদ্ধে জনগণের আন্দোলন থেমে নেই।
ফখরুল আরো বলেন, বর্তমান সরকার জনগণের ভোটে নয়, জোর করে ক্ষমতায় বসে আছে। সরকারকে বলব, এখনো সময় আছে, পদত্যাগ করে নির্দলীয় সরকারের কাছে ক্ষমতা ছেড়ে দিন। অন্যথায় যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে, তার দায়ভার আপনাদেরই নিতে হবে। আমরা জনগণকে সম্পৃক্ত করে আন্দোলন তীব্রতর করবো। ঈদের পর আন্দোলনের কর্মসূচি শুরু হবে।
এর আগে গত ২২ জুন জয়পুরহাটের জনসভায় ও গুলশান কার্যালয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যানদের সঙ্গে সাক্ষাতে খালেদা জিয়া ঈদের পর আন্দোলনের ঘোষণা দিয়ে বলেন, গত ৫ জানুয়ারি দেশে কোনো নির্বাচনই হয়নি। দেশের মানুষ ভোট কেন্দ্রে না যাওয়ায় মাত্র ৫ শতাংশ ভোট পড়েছে। তাই এ সরকার অবৈধ। ঈদের পর সরকার পতনের আন্দোলন শুরু করা হবে। আর এক মুহূর্ত সময় নষ্ট না করে অবিলম্বে নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা দিয়ে আওয়ামী লীগকে বিদায় নেয়ার আহ্বান জানান তিনি। তিনি বলেন, বিএনপি গণতন্ত্রে বিশ্বাসী বলেই শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করে এবং করবে। যদি বাধা দেয়া হয় তাহলে হরতাল, অবরোধের মতো কর্মসূচি দিয়ে বর্তমান অবৈধ সরকারকে বিদায় করে দেয়া হবে।
খালেদা জিয়ার এমন ঘোষণার পর সরকারি দলের সঙ্গে সঙ্গে প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে নিজ দল বিএনপিতেও। দলের অনেক নেতাকর্মীকেই বলতে শোনা যাচ্ছে ম্যাডাম আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন। এতে আমরা খুশি। কিন্তু মাঠে থাকবে কারা। আগের মতো আন্দোলনে রাজপথে কাউকেই পাওয়া যাবে বলে মনে হয় না। কারণ এখন যারা কমিটিতে রয়েছেন তারা কেউ আন্দোলনের লোক নয়। টাকার বিনিময়ে কমিটিতে জায়গা পেয়েছেন। অনেকেই সরকারের সঙ্গে লিয়াজোঁ করে চলেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির এক নেতা বলেন, আন্দোলন কর্মসূচি যাই ঘোষণা করা হোক, আসলে এগুলো সরকারকে চাপে রাখার কৌশল। এ বছর কোনো আন্দোলনই হবে না। কেন্দ্রীয় কমিটিসহ ঢাকা মহানগর কমিটি, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলো পুনর্গঠন করতে হবে। কমিটি থেকে সুবিধাবাদী নেতাদের বাদ দিয়ে যোগ্য নেতাদের দিয়ে কমিটি করতে হবে। না করলে আন্দোলনের কোনো কর্মসূচিই কাজে আসবে না।
দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আ স ম হান্নান শাহ বলেন, খালেদা জিয়া ঈদের পরে আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন। আন্দোলন করার মতো ইস্যু আছে, মাঠ পর্যায়ে নেতাকর্মী আছে। শুধু নেতৃত্ব দেয়ার মতো নেতার অভাব।
তিনি বলেন, জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আন্দোলনের মাধ্যমে এ সরকারকে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করতে হবে। জনগণ যখন মাঠে নামবে তখন এসব গুলি, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ রাঙানি কাজে আসবে না। এরশাদ পারেনি এই সরকারও পারবে না।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আন্দোলন ব্যর্থ হয়েছে কথাটি সঠিক নয়। কারণ ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে একমাত্র জাতীয় পার্টি ছাড়া দেশের আর কোনো রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করেনি। এমনকি দেশের জনগণও সেই নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করেছে। তার বড় প্রমাণ ১৫৪ জন সংসদ সদস্যকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ঘোষণা।
দলীয় নেতারা যাই বলুক, তৃণমূলে ঈদের পরে আন্দোলন নিয়ে কোনো উৎসাহ নেই। তারা বিষয়টিকে স্রেফ ঘোষণা হিসেবেই দেখছে। এটা যে নেতাকর্মীদের চাঙ্গা রাখতে বিএনপি নেত্রীর একটি কৌশল, এটা দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের বক্তব্যেও পরিষ্কার হয়েছে। এমনটাই মনে করছেন দলীয় নেতাকর্মীরা।
©somewhere in net ltd.